অধিকাংশ উলামাদের মত হচ্ছে পুরুষের হাঁটু সতর/আওরাহ এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কেবল থাই/উরু আওরাহ এর অন্তর্ভুক্ত। অনেকের মতে সামনের ও পেছনের লজ্জাস্থান ব্যতীত পুরুষের কোনো সতর নেই।
আমিরুল মুমিনীন ফিল হাদিস ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তার সহীহ বুখারীতে এ সংক্রান্ত একটি باب রচনা করেছেন -
উরু সম্পর্কে বর্ণনা - باب مَا يُذْكَرُ فِي الْفَخِذِ
যার অধীনে তিনি লিখেছেন,
ويروى عن ابن عباس وجرهد ومحمد بن جحش عن النبي صلى الله عليه وسلم الفخذ عورة وقال أنس حسر النبي صلى الله عليه وسلم
ইবন আব্বাস, জারহাদ ও মুহাম্মদ ইব্ন জাহশ (রাঃ) নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, উরু/থাই সতরের অন্তর্ভুক্ত। আর আনাস (রাঃ) বলেনঃ নবী (ﷺ) তাঁর উরু/থাই থেকে কাপড় সরিয়েছিলেন।
অতঃপর তিনি উরু সতরের আওতাভুক্ত নাকি না এই সমন্ধে মত ব্যক্ত করতে যেয়ে মন্তব্য করেছেন:
عن فخذه وحديث أنس أسند وحديث جرهد أحوط حتى يخرج من اختلافهم
সনদের দিক থেকে আনাস (রাঃ)-এর হাদিসটি অধিক সহীহ এবং জারহাদ (রাঃ)-এর হাদিসটি অধিকতর সতর্কতামূলক। এভাবেই আমরা উম্মতের মাঝে মতবিরোধ দূর করতে পারি।
وقال أبو موسى غطى النبي صلى الله عليه وسلم ركبتيه حين دخل عثمان وقال زيد بن ثابت أنزل الله على رسوله صلى الله عليه وسلم وفخذه على فخذي فثقلت علي حتى خفت أن ترض فخذي
আর আবূ মূসা (রাঃ) বলেছেনঃ 'উসমান (রাঃ)-এর আগমনে নবী (ﷺ) তাঁর হাঁটু ঢেকে নেন। যায়িদ ইব্ন সাবিত (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা'আলা তার রাসূল (ﷺ) এর উপর ওহী নাযিল করেছেন এমতাবস্থায় তাঁর উরু আমার উরুর উপর ছিল। আমার কাছে তাঁর উরু এত ভারী মনে হচ্ছিল যে, আমি আশংকা করছিলাম, আমার উরুর হাঁড় হয়তো ভেঙ্গেই যাবে।
দেখুন: সহীহ বুখারী ১/৮৩, ভিন্ন নুসখায় ১/৪৪৫ এবং অন্য নুসখায় ১/১৪৫ (মাক্তাবা শামেলা)। এছাড়াও আল হাদিস অ্যাপ - সালাত অধ্যায় ৮/১২, ৩৭১ নং হাদিসের প্রারম্ভে।
আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত হাদিসটি দেখুন:
عن أنس، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم غزا خيبر، فصلينا عندها صلاة الغداة بغلس، فركب نبي الله صلى الله عليه وسلم وركب أبو طلحة، وأنا رديف أبي طلحة، فأجرى نبي الله صلى الله عليه وسلم في زقاق خيبر، وإن ركبتي لتمس فخذ نبي الله صلى الله عليه وسلم
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ খাইবার অভিযানে বের হয়েছিলেন, তখন আমরা সেখানে খুব অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত আদায় করি। অতঃপর নবী (ﷺ) সওয়ার হলেন। আবু তালহা (রাঃ)-ও সওয়ার হলেন এবং আমি আবূ তালহার পিছনে সওয়ার ছিলাম। নবী ﷺ খাইবারের পথ ধরে দ্রুত এগোলেন। আমার হাঁটু নবী ﷺ এর উরু স্পর্শ করছিল। অতঃপর, তিনি তার উরু থেকে ইযার সড়ালেন। এমনকি আমি তার উরুর শুভ্রতা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছিলাম।
সহীহ বুখারী ৩৭১ ইন্টা:।
এখানে লক্ষ্য করুন, ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন আনাস (রাঃ) এর হাদিসটি তথা উরু উন্মুক্ত থাকার হাদিসটিকে সনদের দিক থেকে অধিক শক্তিশালী বলেছেন। আর হাদিসটি থেকে অনেকে ইস্তিদালাল করেছেন যে যেহেতু রাসূল ﷺ এর উরু খাইবারের যুদ্ধে উন্মুক্ত ছিল তাই উরু আওরাহ নয়। তবুও ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, যেহেতু মতবিরোধ আছে তাই এখানে সতর্কতার স্বরূপ হিসেবে জারহাদ (রাঃ) এর হাদিসটি মেনে চলতে।
ইমাম ইবন হাজার আসকালানী (রাহিমাহুল্লাহ) এই বাব কে ব্যাখা করতে ইমাম কুরতুবির মন্তব্য নকল করে লিখেছেন,
حديث أنس وما معه إنما ورد في قضايا معينة في أوقات مخصوصة يتطرق إليها من احتمال الخصوصية أو البقاء على أصل الإباحة ما لا يتطرق إل حديث جرهد وما معه ; لأنه يتضمن إعطاء حكم كلي وإظهار شرع عام، فكان العمل به أولى. ولعل هذا هو مراد المصنف بقوله وحديث جرهد أحوط.
আনাস (রাঃ) এর হাদিসটি বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য যা জারহাদ (রাঃ) এর বর্ণিত হাদিসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ, জারহাদ (রাঃ) এর বর্ণনাটি একটি সমন্বিত হুকুম ও আম বিধান দিচ্ছে। তাই প্রথম বর্ণনাটির (জারহাদ রাঃ এর বর্ণনাটির) উপর আমল করাই উত্তম। মুসান্নিফ (ইমাম বুখারী) জারহাদ এর হাদিসটিকে সতর্কতামূলক বলে হয়তো এটাই বুঝিয়েছেন। (সংক্ষেপিত)
ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
ذهب أكثر العلماء إلى أن الفخذ عورة، وعن أحمد، ومالك في رواية: العورة القبل والدبر فقط، وبه قال أهل الظاهر وابن جرير، والإصطخري.
অধিকাংশ উলামাগণ এই মতের পক্ষে যে উরু আওরাহ এর অন্তর্ভুক্ত এবং আহমাদ ও মালিক থেকে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েত অনুযায়ী, সামনের ও পেছনের গোপনাঙ্গই কেবল আওরাহ। আর এটি যাহিরীদের, ইবন জারির আত্ব ত্বাবারী এবং আল ইস্তাখরিরও মত।
ইবন জারির এর দিকে দ্বিতীয় মতটি সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে ইমাম নববীর মন্তব্য প্রসঙ্গে ইমাম ইবন হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, ইমাম ইবন জারির তার তাহযিব গ্রন্থে যারা উরু কে আওরাহ হিসেবে মানে না তাদের রদ্দ করেছেন। অর্থাৎ ইবন জারির এর দিকে এই মতটি সম্পৃক্ত করাটা ভুল।
قلت: في ثبوت ذلك عن ابن جرير نظر، فقد ذكر المسألة في تهذيبه ورد على من زعم أن الفخذ ليست بعورة،
ইমাম ইবন হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) যারা উরু কে আওরাহ মানতে চান না তাদের উক্ত মতের পেছনের যুক্তি প্রসঙ্গে বলেছেন,
ومما احتجوا به قول أنس في هذا الحديث وإن ركبتي لتمس فخذ نبي الله صلى الله عليه وسلم إذ ظاهره أن المس كان بدون الحائل، ومس العورة بدون حائل لا يجوز. وعلى رواية مسلم ومن تابعه في أن الإزار لم ينكشف بقصد منه صلى الله عليه وسلم يمكن الاستدلال على أن الفخذ ليست بعورة من جهة استمراره على ذلك ; لأنه وإن جاز وقوعه من غير قصد لكن لو كانت عورة لم يقر على ذلك لمكان عصمته صلى الله عليه وسلم ولو فرض أن ذلك وقع لبيان التشريع لغير المختار لكان ممكنا، لكن فيه نظر من جهة أنه كان يتعين حينئذ البيان عقبه كما في قضية السهو في الصلاة،
আনাস রা: এর হাদিসটিতে উরু উন্মুক্ত হবার বর্ণনা অনুযায়ী অনেকে এটিকে জায়েজ প্রমাণ করতে চায়। কারণ, কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা/পর্দা ব্যতীত আওরাহ তে স্পর্শ লাগা জায়েজ নয়। আর উরু আওরাহ নয় বলেই সাহাবীর উরু রাসূল ﷺ এর উরুকে স্পর্শ করেছে। তবে বর্ণনা অনুযায়ী সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে ছিল না। তাই অনিচ্ছাকৃতভাবে হওয়ায় সেটা জায়েজ। কিন্তু, অনিচ্ছাকৃতভাবে ইযার সড়লেও উরু থেকে ইযার সড়াটা যদি আমভাবে নিষিদ্ধ হতো তবে তিনি তৎক্ষণাৎ এই ব্যাপারে নিষেধ করতেন। যেটা তিনি করেননি। যেমনটা তিনি সালাতের রাকআত সংখ্যার ভুলের ক্ষেত্রে করেছিলেন। (বিস্তারিত জানতে দেখুন সহীহ বুখারী হা/৪৮২)
দেখুন: ফাতহুল বারী ১ম খণ্ড, ৪৮০-৪৮১ পৃষ্ঠা, মাক্তাবা শামেলা।
আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী আল হানাফি (রাহ:) এই ইখতিলাফ প্রসঙ্গে লিখেছেন,
الأصل أنه إذا روي حديثان في حكم أحدهما أصح من الآخر فالعمل يكون بالأصح، فههنا حديث أنس أصح من حديث جرهد ونحوه، فكيف وقع الاختلاف؟ فأجاب البخاري عن هذا بقوله: (وحديث أنس أسند) إلى آخره تقديره: أن يقال: نعم، حديث أنس أسند، يعني أقوى وأحسن سندا من حديث جرهد، إلا أن العمل بحديث جرهد لأنه الأحوط، يعني أكثر احتياطا في أمر الدين، وأقرب إلى التقوى
উসুল হচ্ছে যে যদি বর্ণিত দুটি হাদিসের মধ্যে একটি অন্যটির চাইতে অধিকতর সহীহ হয়, তবে অধিকতর সহীহ হাদিসটির উপরেই আমল করা হবে। তাহলে এখানে আনাস (রা:) এর বর্ণিত হাদিসটি অধিকতর সহীহ হওয়া সত্ত্বেও মতবিরোধ এর উদয় কীভাবে হলো? ইমাম বুখারী এই প্রশ্নের উত্তরই এভাবে দিয়েছেন (সনদের দিক থেকে আনাস (রাঃ)-এর হাদিসটি অধিক সহীহ)। তার বক্তব্যের সারসংক্ষেপ করে বলা যায় যে, হ্যাঁ, আনাস (রাঃ) এর বর্ণিত হাদিসটিই অধিকতর সহীহ তথা সনদের দিক দিয়ে জারহাদ এর হাদিসের চাইতে মজবুত ও উত্তম। তবে জারহাদ (রা:) এর বর্ণিত হাদিসটি আমলের দিক থেকে অধিক বিচক্ষণ। অর্থাৎ দ্বীনের বিধিবিধানের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতামূলক ও তাকওয়ার নিকটবর্তী।
অতপরঃ ইমাম আইনী লিখেছেন,
ولأجل هذه النكتة لم يقل البخاري: باب الفخذ عورة، ولا قال أيضا: باب الفخذ ليس بعورة ، بل قال: باب ما يذكر في الفخذ،
এজন্যই অধ্যায়ের শিরোনাম স্বরূপ "উরুই হচ্ছে আওরাহ" অথবা "উরু আওরাহ নয়" এরকম কিছু ইমাম বুখারী লিখেননি। বরং তিনি অধ্যায়ের শিরোনাম হিসেবে লিখেছেন,
"উরু সম্পর্কে বর্ণনা"।
উমদাতুল কারী ফি শারহি সহীহুল বুখারি, ৪র্থ খণ্ড, ৮০ পৃঃ (মাক্তাবা শামেলা)
যাহিরী মাযহাবের ইমাম ইবনু হাযম (রাহ:) বলেন,
مسألة: والعورة المفترض سترها على الناظر وفي الصلاة -: من الرجل: الذكر وحلقة الدبر فقط؛ وليس الفخذ منه عورة
সালাত আদায়কালীন সালাত আদায়কারী ব্যক্তিকে তার সতর ঢাকতে হবে। পুরুষের ক্ষেত্রে: সামনের এবং পেছনের গোপনাঙ্গ হচ্ছে আওরাহ, পুরুষের উরু আওরাহ নয়।
আল মুহাল্লা, ২/২৪১, মাসআলা নং ৩৪৯
ইমাম ইবনু হাযম (রাহিমাহুল্লাহ) আনাস ইবনু মালিক (রা:) এর হাদিসটিকে এক্ষেত্রে হুজ্জাত হিসেবে নিয়েছেন।
লেখাটি বড় হওয়ায় পরবর্তী পর্বে বাকি দলিলগুলো আলোচনা করবো।
সাফিন চৌধুরী
Facebook: Shafin Chowdhury
আমিরুল মুমিনীন ফিল হাদিস ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তার সহীহ বুখারীতে এ সংক্রান্ত একটি باب রচনা করেছেন -
উরু সম্পর্কে বর্ণনা - باب مَا يُذْكَرُ فِي الْفَخِذِ
যার অধীনে তিনি লিখেছেন,
ويروى عن ابن عباس وجرهد ومحمد بن جحش عن النبي صلى الله عليه وسلم الفخذ عورة وقال أنس حسر النبي صلى الله عليه وسلم
ইবন আব্বাস, জারহাদ ও মুহাম্মদ ইব্ন জাহশ (রাঃ) নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, উরু/থাই সতরের অন্তর্ভুক্ত। আর আনাস (রাঃ) বলেনঃ নবী (ﷺ) তাঁর উরু/থাই থেকে কাপড় সরিয়েছিলেন।
অতঃপর তিনি উরু সতরের আওতাভুক্ত নাকি না এই সমন্ধে মত ব্যক্ত করতে যেয়ে মন্তব্য করেছেন:
عن فخذه وحديث أنس أسند وحديث جرهد أحوط حتى يخرج من اختلافهم
সনদের দিক থেকে আনাস (রাঃ)-এর হাদিসটি অধিক সহীহ এবং জারহাদ (রাঃ)-এর হাদিসটি অধিকতর সতর্কতামূলক। এভাবেই আমরা উম্মতের মাঝে মতবিরোধ দূর করতে পারি।
وقال أبو موسى غطى النبي صلى الله عليه وسلم ركبتيه حين دخل عثمان وقال زيد بن ثابت أنزل الله على رسوله صلى الله عليه وسلم وفخذه على فخذي فثقلت علي حتى خفت أن ترض فخذي
আর আবূ মূসা (রাঃ) বলেছেনঃ 'উসমান (রাঃ)-এর আগমনে নবী (ﷺ) তাঁর হাঁটু ঢেকে নেন। যায়িদ ইব্ন সাবিত (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা'আলা তার রাসূল (ﷺ) এর উপর ওহী নাযিল করেছেন এমতাবস্থায় তাঁর উরু আমার উরুর উপর ছিল। আমার কাছে তাঁর উরু এত ভারী মনে হচ্ছিল যে, আমি আশংকা করছিলাম, আমার উরুর হাঁড় হয়তো ভেঙ্গেই যাবে।
দেখুন: সহীহ বুখারী ১/৮৩, ভিন্ন নুসখায় ১/৪৪৫ এবং অন্য নুসখায় ১/১৪৫ (মাক্তাবা শামেলা)। এছাড়াও আল হাদিস অ্যাপ - সালাত অধ্যায় ৮/১২, ৩৭১ নং হাদিসের প্রারম্ভে।
আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত হাদিসটি দেখুন:
عن أنس، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم غزا خيبر، فصلينا عندها صلاة الغداة بغلس، فركب نبي الله صلى الله عليه وسلم وركب أبو طلحة، وأنا رديف أبي طلحة، فأجرى نبي الله صلى الله عليه وسلم في زقاق خيبر، وإن ركبتي لتمس فخذ نبي الله صلى الله عليه وسلم
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ খাইবার অভিযানে বের হয়েছিলেন, তখন আমরা সেখানে খুব অন্ধকার থাকতেই ফজরের সালাত আদায় করি। অতঃপর নবী (ﷺ) সওয়ার হলেন। আবু তালহা (রাঃ)-ও সওয়ার হলেন এবং আমি আবূ তালহার পিছনে সওয়ার ছিলাম। নবী ﷺ খাইবারের পথ ধরে দ্রুত এগোলেন। আমার হাঁটু নবী ﷺ এর উরু স্পর্শ করছিল। অতঃপর, তিনি তার উরু থেকে ইযার সড়ালেন। এমনকি আমি তার উরুর শুভ্রতা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছিলাম।
সহীহ বুখারী ৩৭১ ইন্টা:।
এখানে লক্ষ্য করুন, ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন আনাস (রাঃ) এর হাদিসটি তথা উরু উন্মুক্ত থাকার হাদিসটিকে সনদের দিক থেকে অধিক শক্তিশালী বলেছেন। আর হাদিসটি থেকে অনেকে ইস্তিদালাল করেছেন যে যেহেতু রাসূল ﷺ এর উরু খাইবারের যুদ্ধে উন্মুক্ত ছিল তাই উরু আওরাহ নয়। তবুও ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, যেহেতু মতবিরোধ আছে তাই এখানে সতর্কতার স্বরূপ হিসেবে জারহাদ (রাঃ) এর হাদিসটি মেনে চলতে।
ইমাম ইবন হাজার আসকালানী (রাহিমাহুল্লাহ) এই বাব কে ব্যাখা করতে ইমাম কুরতুবির মন্তব্য নকল করে লিখেছেন,
حديث أنس وما معه إنما ورد في قضايا معينة في أوقات مخصوصة يتطرق إليها من احتمال الخصوصية أو البقاء على أصل الإباحة ما لا يتطرق إل حديث جرهد وما معه ; لأنه يتضمن إعطاء حكم كلي وإظهار شرع عام، فكان العمل به أولى. ولعل هذا هو مراد المصنف بقوله وحديث جرهد أحوط.
আনাস (রাঃ) এর হাদিসটি বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য যা জারহাদ (রাঃ) এর বর্ণিত হাদিসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ, জারহাদ (রাঃ) এর বর্ণনাটি একটি সমন্বিত হুকুম ও আম বিধান দিচ্ছে। তাই প্রথম বর্ণনাটির (জারহাদ রাঃ এর বর্ণনাটির) উপর আমল করাই উত্তম। মুসান্নিফ (ইমাম বুখারী) জারহাদ এর হাদিসটিকে সতর্কতামূলক বলে হয়তো এটাই বুঝিয়েছেন। (সংক্ষেপিত)
ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
ذهب أكثر العلماء إلى أن الفخذ عورة، وعن أحمد، ومالك في رواية: العورة القبل والدبر فقط، وبه قال أهل الظاهر وابن جرير، والإصطخري.
অধিকাংশ উলামাগণ এই মতের পক্ষে যে উরু আওরাহ এর অন্তর্ভুক্ত এবং আহমাদ ও মালিক থেকে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েত অনুযায়ী, সামনের ও পেছনের গোপনাঙ্গই কেবল আওরাহ। আর এটি যাহিরীদের, ইবন জারির আত্ব ত্বাবারী এবং আল ইস্তাখরিরও মত।
ইবন জারির এর দিকে দ্বিতীয় মতটি সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে ইমাম নববীর মন্তব্য প্রসঙ্গে ইমাম ইবন হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, ইমাম ইবন জারির তার তাহযিব গ্রন্থে যারা উরু কে আওরাহ হিসেবে মানে না তাদের রদ্দ করেছেন। অর্থাৎ ইবন জারির এর দিকে এই মতটি সম্পৃক্ত করাটা ভুল।
قلت: في ثبوت ذلك عن ابن جرير نظر، فقد ذكر المسألة في تهذيبه ورد على من زعم أن الفخذ ليست بعورة،
ইমাম ইবন হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) যারা উরু কে আওরাহ মানতে চান না তাদের উক্ত মতের পেছনের যুক্তি প্রসঙ্গে বলেছেন,
ومما احتجوا به قول أنس في هذا الحديث وإن ركبتي لتمس فخذ نبي الله صلى الله عليه وسلم إذ ظاهره أن المس كان بدون الحائل، ومس العورة بدون حائل لا يجوز. وعلى رواية مسلم ومن تابعه في أن الإزار لم ينكشف بقصد منه صلى الله عليه وسلم يمكن الاستدلال على أن الفخذ ليست بعورة من جهة استمراره على ذلك ; لأنه وإن جاز وقوعه من غير قصد لكن لو كانت عورة لم يقر على ذلك لمكان عصمته صلى الله عليه وسلم ولو فرض أن ذلك وقع لبيان التشريع لغير المختار لكان ممكنا، لكن فيه نظر من جهة أنه كان يتعين حينئذ البيان عقبه كما في قضية السهو في الصلاة،
আনাস রা: এর হাদিসটিতে উরু উন্মুক্ত হবার বর্ণনা অনুযায়ী অনেকে এটিকে জায়েজ প্রমাণ করতে চায়। কারণ, কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা/পর্দা ব্যতীত আওরাহ তে স্পর্শ লাগা জায়েজ নয়। আর উরু আওরাহ নয় বলেই সাহাবীর উরু রাসূল ﷺ এর উরুকে স্পর্শ করেছে। তবে বর্ণনা অনুযায়ী সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে ছিল না। তাই অনিচ্ছাকৃতভাবে হওয়ায় সেটা জায়েজ। কিন্তু, অনিচ্ছাকৃতভাবে ইযার সড়লেও উরু থেকে ইযার সড়াটা যদি আমভাবে নিষিদ্ধ হতো তবে তিনি তৎক্ষণাৎ এই ব্যাপারে নিষেধ করতেন। যেটা তিনি করেননি। যেমনটা তিনি সালাতের রাকআত সংখ্যার ভুলের ক্ষেত্রে করেছিলেন। (বিস্তারিত জানতে দেখুন সহীহ বুখারী হা/৪৮২)
দেখুন: ফাতহুল বারী ১ম খণ্ড, ৪৮০-৪৮১ পৃষ্ঠা, মাক্তাবা শামেলা।
আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী আল হানাফি (রাহ:) এই ইখতিলাফ প্রসঙ্গে লিখেছেন,
الأصل أنه إذا روي حديثان في حكم أحدهما أصح من الآخر فالعمل يكون بالأصح، فههنا حديث أنس أصح من حديث جرهد ونحوه، فكيف وقع الاختلاف؟ فأجاب البخاري عن هذا بقوله: (وحديث أنس أسند) إلى آخره تقديره: أن يقال: نعم، حديث أنس أسند، يعني أقوى وأحسن سندا من حديث جرهد، إلا أن العمل بحديث جرهد لأنه الأحوط، يعني أكثر احتياطا في أمر الدين، وأقرب إلى التقوى
উসুল হচ্ছে যে যদি বর্ণিত দুটি হাদিসের মধ্যে একটি অন্যটির চাইতে অধিকতর সহীহ হয়, তবে অধিকতর সহীহ হাদিসটির উপরেই আমল করা হবে। তাহলে এখানে আনাস (রা:) এর বর্ণিত হাদিসটি অধিকতর সহীহ হওয়া সত্ত্বেও মতবিরোধ এর উদয় কীভাবে হলো? ইমাম বুখারী এই প্রশ্নের উত্তরই এভাবে দিয়েছেন (সনদের দিক থেকে আনাস (রাঃ)-এর হাদিসটি অধিক সহীহ)। তার বক্তব্যের সারসংক্ষেপ করে বলা যায় যে, হ্যাঁ, আনাস (রাঃ) এর বর্ণিত হাদিসটিই অধিকতর সহীহ তথা সনদের দিক দিয়ে জারহাদ এর হাদিসের চাইতে মজবুত ও উত্তম। তবে জারহাদ (রা:) এর বর্ণিত হাদিসটি আমলের দিক থেকে অধিক বিচক্ষণ। অর্থাৎ দ্বীনের বিধিবিধানের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতামূলক ও তাকওয়ার নিকটবর্তী।
অতপরঃ ইমাম আইনী লিখেছেন,
ولأجل هذه النكتة لم يقل البخاري: باب الفخذ عورة، ولا قال أيضا: باب الفخذ ليس بعورة ، بل قال: باب ما يذكر في الفخذ،
এজন্যই অধ্যায়ের শিরোনাম স্বরূপ "উরুই হচ্ছে আওরাহ" অথবা "উরু আওরাহ নয়" এরকম কিছু ইমাম বুখারী লিখেননি। বরং তিনি অধ্যায়ের শিরোনাম হিসেবে লিখেছেন,
"উরু সম্পর্কে বর্ণনা"।
উমদাতুল কারী ফি শারহি সহীহুল বুখারি, ৪র্থ খণ্ড, ৮০ পৃঃ (মাক্তাবা শামেলা)
যাহিরী মাযহাবের ইমাম ইবনু হাযম (রাহ:) বলেন,
مسألة: والعورة المفترض سترها على الناظر وفي الصلاة -: من الرجل: الذكر وحلقة الدبر فقط؛ وليس الفخذ منه عورة
সালাত আদায়কালীন সালাত আদায়কারী ব্যক্তিকে তার সতর ঢাকতে হবে। পুরুষের ক্ষেত্রে: সামনের এবং পেছনের গোপনাঙ্গ হচ্ছে আওরাহ, পুরুষের উরু আওরাহ নয়।
আল মুহাল্লা, ২/২৪১, মাসআলা নং ৩৪৯
ইমাম ইবনু হাযম (রাহিমাহুল্লাহ) আনাস ইবনু মালিক (রা:) এর হাদিসটিকে এক্ষেত্রে হুজ্জাত হিসেবে নিয়েছেন।
লেখাটি বড় হওয়ায় পরবর্তী পর্বে বাকি দলিলগুলো আলোচনা করবো।
সাফিন চৌধুরী
Facebook: Shafin Chowdhury