‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

আকিদা নিয়মের রাজত্ব

Mahmud ibn Shahidullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
Threads
520
Comments
533
Reactions
5,566
Credits
2,602
নিয়মের রাজত্ব এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর। এ রাজত্বের আয়তন ও সীমা তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। তবে আমরা তাঁর দৃশ্য ও অদৃশ্য, জানা ও অজানা জগতের কথা অবগত হয়ে অনুমান করে থাকি, তিনি অসীম রাজত্বের মালিক। তাঁর কোন শরীক বা অংশীদার নেই। এমনকি তাঁর স্ত্রী, পুত্র, কন্যাও নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয় চিরস্থায়ী সত্তা। তাঁর জ্ঞানের সীমাও কল্পনা করা অসম্ভব। তাঁর মহাজ্ঞানে সবকিছু তাঁরই কাছে উপস্থিত। মহান আল্লাহ তাঁর অপরিমেয় জ্ঞান দ্বারা এক অকল্পনীয় অবর্ণনীয় নিয়মের রাজত্ব সৃষ্টি করেন। আমরা এই রাজত্বের অধিবাসী হিসাবে যৎকিঞ্চিত জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। কারণ আল্লাহ তাঁর ইবাদত করার জন্যই আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি ব্যতীত তাঁর মহাজ্ঞানের নিদর্শনাবলীর কোন মালিক বা দাবীদার নেই। একমাত্র তিনিই সব কিছুর স্রষ্টা ও মালিক।

তাঁর সৃষ্ট বস্ত্তসমূহ ও নিদর্শনাবলীর সংখ্যা গণনা করে শেষ করা যাবে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,

وَإِنْ تَعُدُّواْ نِعْمَةَ اللهِ لاَ تُحْصُوْهَا إِنَّ اللهَ لَغَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ​

‘যদি আল্লাহর নে‘মত গণনা কর, শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়’ (নাহল ১৬/১৮)। আবার তাঁর সৃষ্ট বস্ত্তসমূহের মধ্যে কোনটি সর্ববৃহৎ এবং কোনটি সর্বক্ষুদ্র তাও জানা বা বলা সম্ভব নয়। তবে এ মহারাজত্বের প্রধান আকর্ষণ আমাদের মাথার উপরের মহাকাশ, যা হাযার হাযার বছর ধরে একইভাবে অবস্থান করছে। এই মহাকাশ, মহাশূন্যের বিভাজন হিসাবে এক একটি ছাদস্বরূপ সৃষ্টি হয়েছে পরপর সাতটি মহাকাশ।

মহান আল্লাহ বলেন,

هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الأَرْضِ جَمِيْعاً ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاء فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ​

‘তিনি পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তৎপর তিনি আকাশে সমুন্নীত হয়েছেন। অতঃপর তাকে সপ্তাকাশে বিন্যস্ত করেন। তিনি সর্ববিষয়ে সবিশেষ অবহিত’ (বাক্বারাহ ২/২৯)

আল্লাহ তা‘আলা পরপর সাতটি ছাদ সদৃশ আসমান তৈরীর পক্ষে একাধিক আয়াতে বলেন,

الَّذِيْ خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقاً​

‘(আল্লাহ) তিনিই যিনি সাত আসমান সৃষ্টি করেছেন একের উপর আরেক’ (মুলক ৬৭/৩)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

أَلَمْ تَرَوْا كَيْفَ خَلَقَ اللهُ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ طِبَاقاً، وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيهِنَّ نُوراً وَجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجاً-​

‘তোমরা কি লক্ষ্য করনি যে, কিভাবে আল্লাহ সাত আসমান সৃষ্টি করেছেন একটার উপর আরেকটা এবং এর মধ্যে চন্দ্রকে করেছেন আলোকসম এবং সূর্যকে বানিয়েছেন প্রদীপ’ (নূহ ৭১/১৫-১৬)। একই বিষয়ে পুনরায় আল্লাহ বলেন,

وَبَنَيْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعاً شِدَاداً، وَجَعَلْنَا سِرَاجاً وَّهَّاجاً-​

‘আমরা নির্মাণ করেছি তোমাদের উপরিভাগে সাতটি সুদৃঢ় আকাশ এবং সেখানে স্থান দিয়েছি একটি জ্বলন্ত প্রদীপ (সূর্য)’ (নাবা ৭৮/১২-১৩)

আমাদের উপরে মহাকাশ এবং নিম্নে বসবাসের উপযোগী বিস্তীর্ণ যমীন। এ উভয় বস্ত্তর সৃষ্টি আশ্চর্যতম। মহান আল্লাহ এ বিষয়ে বলেন,

اللهُ الَّذِي خَلَقَ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ يَتَنَزَّلُ الْأَمْرُ بَيْنَهُنَّ لِتَعْلَمُوْا أَنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ وَأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْماً​

‘আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে। এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তাঁর গোচরীভূত’ (তালাক ৬৫/১২)

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের বর্ণনা বহু জায়গায় উল্লিখিত হয়েছে। একই সাথে এতদুভয়ের মধ্যস্থলে যা কিছু রয়েছে তাদের কথাও বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। সৃষ্ট বস্ত্তর সবাই আল্লাহর নিয়মের অনুবর্তী। আল্লাহর অসামান্য জ্ঞান ও ইচ্ছাই তাঁর সকল সৃষ্টির উৎস। কোন বস্ত্ত সৃষ্টিতেই তাঁর শক্তির বা পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না। যেমন তিনি বলেন,

إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْنَاهُ أَنْ نَّقُوْلَ لَهُ كُنْ فَيَكُوْنُ​

‘আমরা যখন কোন কিছু করার ইচ্ছা করি, তখন তাকে এতটুকুই বলি যে, হয়ে যাও। সুতরাং তা হয়ে যায়’ (নাহল ১৬/৪০)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘তিনি যথাবিধি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, যখন তিনি বলেন, হও, তখন তা হয়ে যায়। তাঁর কথাই সত্য’ (আন‘আম ৬/৭৩)। মহান আল্লাহ আরও বলেন,

إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ، وَمَا أَمْرُنَا إِلَّا وَاحِدَةٌ كَلَمْحٍ بِالْبَصَرِ-​

‘আমরা তো প্রত্যেক বস্ত্তকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছি। আমার আদেশ তো এক কথায় চোখের পলকের মত’ (ক্বামার ৫৪/৪৯-৫০)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। আর যখন তিনি কিছু করবেন বলে স্থির করেন, তখন তিনি শুধু বলেন, হও, আর তা হয়ে যায়’ (মুমিন ৪০/৬৮)

সুতরাং নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যে যাবতীয় বৃহৎ হ’তে বৃহত্তম এবং ক্ষুদ্র হ’তে ক্ষুদ্রতম দৃশ্য ও অদৃশ্য বস্ত্ত আল্লাহর ইচ্ছায় সৃষ্টি হয়েছে। এটাই তাঁর নিয়ম, এর কোন পরিবর্তন নেই। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন,

فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِ​

‘এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই’ (রূম ৩০/৩০)

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে,

إِنَّ فِي اخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ اللهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ لآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَّقُوْنَ​

‘দিন ও রাত্রির পরিবর্তনে এবং আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীতে যা সৃষ্টি করেছেন তাতে আল্লাহভীরু সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে’ (ইউনুস ১০/৬)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন

,وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالْنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالْنُّجُوْمُ مُسَخَّرَاتٌ بِأَمْرِهِ إِنَّ فِيْ ذَلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُوْنَ​

‘তিনিই তোমাদের জন্য কাজে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চন্দ্রকে। তারকা সমূহ তাঁরই নির্দেশে প্রদক্ষিণরত রয়েছে। নিশ্চয়ই এতে বোধশক্তি সম্পন্নদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে’ (নাহল ১৬/১২)

উপরে উদ্ধৃত কুরআনের আয়াত সমূহে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃষ্টিকর্তা এবং তার অদ্বিতীয় স্রষ্টা প্রবল পরাক্রমশালী মহান আল্লাহপাকের একচ্ছত্র সার্বভৌমত্বের বিষয়ে আলোচিত হয়েছে। এতদ্ব্যতীত আসমানী বস্ত্তসমূহের অবস্থান ও গতিপ্রকৃতির বিষয়বস্ত্ত অতি সন্তর্পনে উপস্থাপিত হয়েছে। তাঁর মহারাজত্বের কোথাও কোন নিয়মের ব্যতিক্রম নেই এবং তাঁর নিয়মের বিরোধিতা করারও কেউ নেই। তাঁর এ বিশাল রাজত্ব একটি নিয়মের ফ্রেমে বাঁধা।

তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করতে পারেন। তিনি এত কিছু সৃষ্টি করার পরও তাঁর ইচ্ছা পূরণের জন্যে মানুষ সৃষ্টি করেন এবং বলেন,

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ​

‘আমার ইবাদত করার জন্যেই আমি মানুষ ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)। তাঁর ইবাদতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে গেলে অবশ্য অনেক আলোচনাই এসে যাবে। কিন্তু সংক্ষেপে ইবাদতের সারমর্মও আল্লাহর নিয়মেরই বহিঃপ্রকাশ। পৃথিবীর সৃষ্ট বস্ত্তসমূহ যেমন আল্লাহর হুকুমে তাদের নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে যাচ্ছে, মানুষকেও তদ্রূপ আল্লাহর আদেশের আনুগত্যে থেকে তাঁর দেয়া হুকুম সমূহ পালন করে যেতে হবে। এটাই আল্লাহর ইবাদত।

মানুষ সৃষ্টির সূচনালগ্নেই আল্লাহর ইবাদত করার জন্য তিনি মানুষকে হুকুম দেন। মূলতঃ মানব সৃষ্টিই আল্লাহর মহারাজত্ব সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। আর মানুষকেই তিনি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসাবে জ্ঞান-বুদ্ধি, বিবেক-বিবেচনা প্রভৃতি দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। শ্রেষ্ঠত্বের অপূর্ব নিদর্শন স্বরূপ সর্বজ্ঞ আল্লাহ তাঁর সমস্ত ফেরেশতাকুলকে সৃষ্টির সর্বোত্তম মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার এক অতীব সম্মানজনক উপায় অবলম্বন করেন, যা সৃষ্টির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আদম (আঃ)-কে সৃষ্টির পর পরই মহান আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত ফেরেশতাকে নির্দেশ দেন আদম (আঃ)-কে সিজদা করার জন্য। ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল। সে অভিশপ্ত হ’ল, কিন্তু মহাজ্ঞানী আল্লাহর সমীপে বিনয়াবনত অবস্থায়, আদম (আঃ) তথা মানব জাতির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাদের ক্ষতি করার আবেদন জানাল এবং অনুমোদনও পেল। এরপর আদম (আঃ)-এর মনতুষ্টির জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সঙ্গিনী মা হাওয়াকে সহ জান্নাতে স্থান দেন। এ সময় তাঁকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ ও পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু ইবলীসের চক্রান্তে আদম (আঃ) ও মা হাওয়া ভুল করে ফেললেন। সেই ফলশ্রুতিতেই পৃথিবীতে বসবাস শুরু হয়।

আদম (আঃ)-কে পৃথিবীতে প্রেরণের সময় আল্লাহ তার প্রতি যে সংক্ষিপ্ত উপদেশ, আদেশ ও নির্দেশনা জারি করেছিলেন তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিয়মের রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত।

আদম (আঃ)-এর জ্ঞান-বুদ্ধি তাঁকে ভুল পথ পরিহার করে সঠিক পথে ফিরে আসতে উদ্বুদ্ধ করেছিল, যা পরবর্তী মানব সমাজকে তাঁর অনুসরণে অনুপ্রাণিত করে। আজও মানুষ ভুল করে আল্লাহর সমীপে নত মস্তকে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে পৃথিবীতে শান্তির ধারা অব্যাহত রেখেছে। অপরপক্ষে শয়তান ইবলীস আল্লাহর হুকুম অমান্য করেও নিজের অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র টলে যায়নি কিংবা নিজেকে তেমন অপরাধী বলে স্বীকারও করেনি। তাই ইবলীসের পদাংক অনুসরণ করে বহু মানুষ আজও বহু অপরাধ করে তার মতই অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছে।

আল্লাহর নিয়মের রাজত্বে শয়তানের অবাধ বিচরণ এবং তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের সাথে শত্রুতা করার কারণও তিনি জানেন। মানুষের মধ্যে বহু মানুষ শয়তানের দলে যোগ দিয়ে নিরপরাধ ঈমানদার ব্যক্তিদের দিবারাত্রি নির্যাতন করছে তাও আললাহ জানেন। কিন্তু আল্লাহর রাজত্বে তাঁর বিধান সুনির্ধারিত তিনি বলেন, وَكَانَ أَمْرُ اللهِ قَدَراً مَّقْدُوْراً ‘আল্লাহর বিধান সুনির্ধারিত’ (আহযাব ৩৩/৩৮)

অতঃপর তাঁর রাজত্বের নিয়ম বা বিধানাবলী সমগ্র জগদ্বাসীকে পুঙ্ক্ষাণুপুঙ্ক্ষভাবে অবহিত করার জন্য আজ হ’তে দেড় হাযার বছর পূর্বে আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর প্রতি পবিত্র কুরআন নাযিল হয়। আল্লাহর রাজত্বে ছোট-বড় যাবতীয় বিষয় সুন্দর ও সহজ ভাষায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। মানুষ সৃষ্টির কারণ, তার কর্তব্য, কর্তব্যের বিস্তারিত বিবরণ ও কর্তব্যের ফলাফল লিপিবদ্ধ হয়েছে। এ পৃথিবী নশ্বর, অচিরেই ধ্বংস হবে। অতঃপর আল্লাহ সব মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং কিয়ামতের মাঠেই সমবেত করবেন বিচারের জন্য। বিচার শেষে মানুষ পরকালের চিরস্থায়ী ঠিকানার সার্টিফিকেট পাবে এবং নিজ নিজ ঠিকানায় পৌঁছে যাবে। এসব বিষয় পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। দুনিয়ার জীবনে এগুলো শিক্ষা লাভ করে তদনুযায়ী আমল করতে পারলেই পরকালে চিরস্থায়ী শান্তির গৃহ লাভ করা যাবে। অন্যথা অশান্তির অনলে পুড়তে হবে চিরস্থায়ীভাবে।

পবিত্র কুরআনের আদেশ হ’ল এক আল্লাহর ইবাদত কর। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহর ইবাদত চিন্তাও নিষিদ্ধ। দ্বিতীয় হ’ল পবিত্র কুরআনের ধারক ও বাহক মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর অনুসরণ। সংক্ষেপে প্রথম আদেশ হ’ল এক আল্লাহর ইবাদত, আর দ্বিতীয় আদেশ হ’ল মহানবী (ﷺ)-এর অনুসরণ। এ দু’টি আদেশের দু’টিই অথবা যে কোন একটি অমান্য করলে সে কাফের বলে গণ্য হবে। এই আদেশ দ্বয়ের অনুকূলে সংক্ষেপে কয়েকটি উদাহরণ পেশ করা হ’ল,

فَتَعَالَى اللهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ​

‘শীর্ষ মহিমায় আল্লাহ, তিনিই সত্যিকার মালিক, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের অধিপতি’ (মুমিনূন ২৩/১১৬)

তিনি আরো বলেন,

وَإِلَـهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيْمُ​

‘তোমাদের উপাস্যই একমাত্র উপাস্য। তিনি ছাড়া করুণাময় দয়ালু কেউ নেই’ (বাক্বারাহ ২/১৬৩)

তিনি অন্যত্র বলেন,

ذَلِكُمُ اللهُ رَبُّكُمْ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوْهُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ وَكِيْلٌ​

‘তিনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা। অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদত কর। তিনি প্রত্যেক বস্ত্তর কার্যনির্বাহী’ (আন‘আম ৬/১০২)

আল্লাহ আরো বলেন,

وَهُوَ اللهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ لَهُ الْحَمْدُ فِي الْأُولَى وَالْآخِرَةِ وَلَهُ الْحُكْمُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ​

‘তিনি আল্লাহ। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ইহকাল ও পরকালে তাঁরই প্রশংসা। বিধান তাঁরই ক্ষমতাধীন এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে’ (ক্বাছাছ ২৮/৭০)

অতঃপর আল্লাহ তাঁর রাসূলের অনুসরণ সম্পর্কে বলেন,

مَّنْ يُطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ​

‘যে রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহরই আনুগত্য করে’ (নিসা ৪/৮০)। অন্যত্র তিনি বলেন,

وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَاتَّقُوْا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ​

‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর, আর যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা’ (হাশর ৫৯/৭)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে অমান্য বা অবজ্ঞা করার মত কোন অবকাশ ইসলামে নেই। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوْا اللهَ وَأَطِيْعُوْا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوْا أَعْمَالَكُمْ​

‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রাসূলের আনুগত্য কর। তোমরা নিজেদের কর্ম বিনষ্ট কর না’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৩৩)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الَّذِيْنَ يُحَادُّوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهُ أُوْلَئِكَ فِيْ الأَذَلِّيْنَ​

‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তাঁরাই লাঞ্ছিতদের দলভুক্ত’ (মুজাদালাহ ৫৮/২০)

মহিমাময় আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দানের নিমিত্তে বলেন, ‘তোমাদের বন্ধুতো আল্লাহ, তাঁর প্রিয় রাসূল এবং মুমিনগণ; যারা বিনম্র হয়ে সালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে আর যারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং বিশ্বাসীদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই আল্লাহর দল এবং তারাই বিজয়ী’ (মায়েদাহ ৫/৫৫-৫৬)

আল্লাহ তা‘আলা হ’লেন সমগ্র জাহানের পালনকর্তা ও একমাত্র অভিভাবক। মানুষ তাঁর প্রতিনিধি। তাই মানুষকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। এই দায়িত্ব পালনে মানুষকে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। তন্মধ্যে আল্লাহর বাণীর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান ও বিশ্বাসই শীর্ষস্থানীয় ইবাদত। এতদুদ্দেশ্যেই উপরের আয়াতগুলি উপস্থাপন করা হয়েছে।

মহান আল্লাহর সুনিয়ন্ত্রিত নিয়মের রাজত্বে ইহকাল ও পরকালের সৃষ্টি তাঁর এক অনন্য অভিপ্রায়ের প্রতিফলন। তিনি চান তাঁর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বজগতের সবকিছু তাঁর ইচ্ছাধীনেই চলবে। যেমন নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও সপ্তআসমান, তদূর্ধ্বের গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ, অসংখ্য নক্ষত্ররাজি, সূর্য-চন্দ্র, গ্রহ-উপগ্রহ, আলো-বায়ু প্রভৃতি সবকিছুই তাঁর নিয়ন্ত্রণে ও নিয়মে চলছে। সৃষ্টির সেরা মানুষও তদ্রূপ সুন্দরভাবে ইহকালে বসবাস করুক। পবিত্র কুরআনের নির্দেশনার যথাযথ মূল্যায়ণ করাই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর মধ্যেই মানব জাতির কল্যাণ রয়েছে। অন্যথা তাদের জীবন ইহজগতে ও পরজগতে বিড়ম্বনার জীবনে রূপান্তরিত হবে। ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে শান্তি ও মুক্তির জন্য ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। নইলে উভয় জীবন হবে দুঃখময়। তাই মানব জাতির ইহকালের জীবন হ’ল সর্ববৃহৎ চ্যালেঞ্জ। ইহকালের কর্মকান্ড উত্তম হ’লে উভয় জগতে শান্তি মিলবে। পক্ষান্তরে ইহকালের কর্মকান্ড মন্দ হ’লে উভয় জগতে অশান্তির দাবদাহে জ্বলতে হবে। সুতরাং মানব জাতির লক্ষ্যে পৌঁছার সর্বোচ্চ প্রস্ত্ততি নিয়ে অগ্রসর হওয়ার ব্রত গ্রহণ করতে হবে।

মানব সৃষ্টির সূচনার ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহের পরই বর্তমান পৃথিবীর সূচনা হয় এবং এখানকার জীবন-যাপন প্রণালী মানুষকে শিক্ষা দেওয়া হয়। শয়তানের মিথ্যা প্রতারণা, প্রচারণা ও বিভিন্ন প্রলোভন হ’তে আত্মরক্ষা করে এক আল্লাহর আদেশ-নির্দেশ ও তদীয় রাসূলের আদর্শে চলার হুকুম জারী হয় সকল মানুষের প্রতি। জন্মের পর মানুষের জন্য এ পৃথিবীতে বসবাসের একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে। উক্ত সময় শেষে মৃত্যুবরণ করতে হয় এবং তাকে কবরস্থ করা হয়। আর কবরস্থ হওয়ার পর ইহজগতের কর্মকান্ডের হিসাব-নিকাশ শুরু হয়ে যায়। প্রতিফলিত হয় ভাল ও মন্দের মূল্যায়ণ।

অবশ্য মানুষ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য ভাল কাজ করতে সচেষ্ট থাকে। এজন্য ভুল-ত্রুটি, অন্যায়-অত্যাচার, মিথ্যা প্রভৃতির আশ্রয় নিলে পরকালে রেহাই নেই বলেও জানে। অপরদিকে পরকালের জন্য মানুষ সাধারণত আরও ভাল কাজ করতে সচেষ্ট হয়। এ সময়েও ভুল-ত্রুটি বা অন্যায়-অপরাধ হয়ে গেলে তার প্রতিফল পরকালেই পাবে। কিন্তু এজন্য অনুতপ্ত হ’লে বা ভুল স্বীকার করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করবে। এভাবে ইহকালের যেকোন ভাল কাজ, ভাল চিন্তা, সদাচরণ, মানবতাবোধ, আল্লাহর আদেশ পালন ইত্যাদি ইবাদতের পর্যায়ভুক্ত হবে। পক্ষান্তরে পরকালের চিন্তা বাদ দিয়ে বা আল্লাহর আদেশ-নির্দেশের প্রতি খেয়াল না করে এবং তাঁর সন্তুষ্টির চিন্তা না করে, ইহকালের ধন-সম্পদ, সম্মান-মর্যাদা, প্রভাব প্রতিপত্তি ইত্যাদির চিন্তায় মানবতার সেবামূলক কাজ করলেও তা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত হবে না এবং আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই ইবাদতের মাধ্যমে ইহকাল ও পরকালে কল্যাণ লাভের জন্য কাজ করে যাওয়ার আহবান জানিয়ে মানব সম্প্রদায়ের প্রতি আদেশ-নির্দেশ জারী হয়।




রফীক আহমাদ

 
Last edited:

Share this page