জাল হাদীস- : সালাতুত তারাবীহতে প্রতি চার রাকা'আত অন্তর নির্দিষ্ট দু'আ এবং মুনাজাত করা
সালাতুত তারাবীহতে একটি দু'আ ও একটি মুনাজাত রয়েছে আমাদের সমাজে। সালাতুত তারাবীহ হলো ক্বিয়ামুল লাইল। নবী (সঃ) এবং সাহাবায়ে কিরাম (র) দীর্ঘ রাতব্যাপী সাহরি পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন। উমার (রা) এর সময় থেকে এই সালাত জামা'আতে শুরু হয়, আগে এটা আলাদা আলাদাভাবে একাকী আদায় করা হতো। পরবর্তীতে এই লম্বা সময় সালাত আদায় করার মাঝখানে মাঝখানে একটু বিরতি দেয়া হতো। এই ক্বিয়ামুল লাইলের প্রতি চার রাকা'আত পর একটু বিশ্রাম দেয়া হতো। এই সময় কেউ কেউ কুরআন তিলাওয়াত করতেন, কেউ কেউ তাসবীহ্ তাহলিল করতেন, যিক্র আযকার করতেন এবং যারা বায়তুল্লাহ্ থাকতেন তারা এই বিরতিতে ত্বওয়াফ করতেন। এজন্য রমাদানে যে ক্বিয়ামুল লাইল করা হতো এটাকে সালাতুত তারাবীহ নাম দেয়া হয়েছে। তারাবীহ মানে বিশ্রামের সালাত, এখানে কিছুক্ষণ সালাত পড়ে, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আদায় করা হয় তাই এটা সালাতুত তারাবীহ।
নবী (স) এর যুগে এটা সালাতুত তারাবীহ নাম ছিল না। এই নামকরণ হয়েছে পরে যখন এটা বিশ্রামের সালাত হয়েছে। নবী (স) এর যুগে এই সালাতের নাম ছিল ক্বিয়ামে রমাদান। নবী (স) হাদীসে বলেছেন ‘মান ক্বমা রমাদানা’, ‘মান কমা লাইলাতাল ক্বদর' তাই এই সালাত রমাদানের ‘ক্বিয়াম' হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে অনেক সময় পর কোনো একজন হয়তো কোনো বইতে প্রতি চার রাকা'আত পরে এই দু'আটি পড়ার কথা লিখে দিয়েছেন। দু'আটি হলো-
সালাতুত তারাবীহতে একটি দু'আ ও একটি মুনাজাত রয়েছে আমাদের সমাজে। সালাতুত তারাবীহ হলো ক্বিয়ামুল লাইল। নবী (সঃ) এবং সাহাবায়ে কিরাম (র) দীর্ঘ রাতব্যাপী সাহরি পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন। উমার (রা) এর সময় থেকে এই সালাত জামা'আতে শুরু হয়, আগে এটা আলাদা আলাদাভাবে একাকী আদায় করা হতো। পরবর্তীতে এই লম্বা সময় সালাত আদায় করার মাঝখানে মাঝখানে একটু বিরতি দেয়া হতো। এই ক্বিয়ামুল লাইলের প্রতি চার রাকা'আত পর একটু বিশ্রাম দেয়া হতো। এই সময় কেউ কেউ কুরআন তিলাওয়াত করতেন, কেউ কেউ তাসবীহ্ তাহলিল করতেন, যিক্র আযকার করতেন এবং যারা বায়তুল্লাহ্ থাকতেন তারা এই বিরতিতে ত্বওয়াফ করতেন। এজন্য রমাদানে যে ক্বিয়ামুল লাইল করা হতো এটাকে সালাতুত তারাবীহ নাম দেয়া হয়েছে। তারাবীহ মানে বিশ্রামের সালাত, এখানে কিছুক্ষণ সালাত পড়ে, কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আদায় করা হয় তাই এটা সালাতুত তারাবীহ।
নবী (স) এর যুগে এটা সালাতুত তারাবীহ নাম ছিল না। এই নামকরণ হয়েছে পরে যখন এটা বিশ্রামের সালাত হয়েছে। নবী (স) এর যুগে এই সালাতের নাম ছিল ক্বিয়ামে রমাদান। নবী (স) হাদীসে বলেছেন ‘মান ক্বমা রমাদানা’, ‘মান কমা লাইলাতাল ক্বদর' তাই এই সালাত রমাদানের ‘ক্বিয়াম' হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে অনেক সময় পর কোনো একজন হয়তো কোনো বইতে প্রতি চার রাকা'আত পরে এই দু'আটি পড়ার কথা লিখে দিয়েছেন। দু'আটি হলো-
سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ، سُبْحَانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظَمَةِ (وَالْهَيْبَةِ) وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوتِ، سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِي لا يَنَامُ وَلا يموتُ أبداً أبداً)، سُبُوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّنَا وَ رَبُّ الْمَلائِكَةِ وَالرُّوحِ، (لا إِلَهَ إلا اللَّهُ نَسْتَغْفِرُ اللَّهَ ، نَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ النَّارِ »۲۱۳
আমরা যখন শৈশবে তারাবীহ পড়তাম তখন দেখতাম ইমাম সাহেব চার রাকা'আতের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে খুব জোরেশোরে এই দু'আটির আওয়াজ শুরু হয়ে যেতো পুরো মসজিদ জুড়ে। এই দু'আর গমগম আওয়াজ শুনলেই বুঝা যেতো যে তারাবীহ সালাতের চার রাকা'আত শেষ হয়েছে। দু'আটি ভালো, দু'আটির মধ্যে কোনো শির্কি বা কুফরী কথা নেই। কথাগুলো খুব সুন্দর, কথাগুলো খুব ভালো। আল্লাহ্ 'আযযা ওয়া জাল্লার প্রশংসা করে, তাসবীহ্ আদায় করে, আল্লাহর গুণগান করে দু'আটি করা হয়েছে। সমস্যা হলো এই দু'আ নবী (স) নির্দিষ্ট করে দেননি।
বিদ'আতের মূলনীতি হলো নবী যেখানে কোনো দু'আকে নির্দিষ্ট করেন নাই, সেখানে নির্দিষ্ট করা বিদ'আত। আর যেখানে নবী (স) কোনো দু'আ নির্দিষ্ট করেছেন, সেখানে নির্দিষ্ট না করাটা বিদ'আত। এ ধরনের বিদ'আত হলো নির্দিষ্টকরণের বিদ'আত ।
সালাতুত তারাবীহর প্রতি চার রাকা'আতের পর নবী (সঃ), সাহাবায়ে কিরাম (রঃ), তাবেয়ীনে কিরাম, তাবে তাবেয়ীনে কিরাম, আয়িম্মায়ে কিরাম, সালাফে সালেহীন (রহিমাহু) এর কেউ যুগে যুগে এমন একটা দু'আ নির্দিষ্ট করেননি। এই চার রাকা'আতের পর কেউ চাইলে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন, দরূদ পড়তে পারেন, সুব্হানাল্লাহ্, আল্লাহু আকবার পড়তে পারেন, যে কোনো কিছু পড়তে পারেন; এটা উন্মুক্ত। যখন এখানে ‘সুবহানাযিল মুলকি...' দু'আটি নির্দিষ্ট করে নেয়া হয় তখন তা বিদ'আত ৷
এছাড়া এই দু'আটি কোনো হাদীসের ভাষায় আসেনি। নাম জানা যায় না এমন কোনো একজন ব্যক্তি এই দু'আটি বানিয়েছেন। কে বানিয়েছেন এই তথ্য আল্লাহ্ তা'আলাই ভালো জানেন, তবে কেউ একজন বানিয়েছেন। কারণ নবী (স.) কখনো এই দু'আ পড়েননি। যিনি বানিয়েছেন উনি ভালো বানিয়েছেন, শির্কি কথা বা খারাপ কথা বানাননি। কিন্তু এটাকে আমরা যে তারাবীহর সাথে নির্দিষ্ট করে ফেলেছি, চার রাকা'আত পর এই দু'আটি পড়া, এটা বিদ'আত। আর কোনো মানুষের বানানো দু'আকে ফযীলাত মনে করে পড়া এটাও বিদ'আত। নবী (স) যেই দু'আর ফযীলাত স্বীকৃতি দিয়েছেন এটা সুন্নাত। যেই জিনিসের ফযীলাত নবী (স) বলেননি, আমরা নিজেরা বানিয়ে নিলাম সেটা বিদ'আত। মোটকথা তারাবীহতে চার রাকা'আত পরপর উপরিউক্ত দু'আ হাদীসে আসেনি।
তারাবীহতে আমাদের সমাজে প্রচলিত আরেকটি রীতি হলো কিছু মসজিদে প্রতি চার রাকা'আত পরপর এবং কিছু মসজিদে ২০ রাকা'আত শেষে নির্দিষ্ট মুনাজাত করা । মুনাজাতটি হলো-
বিদ'আতের মূলনীতি হলো নবী যেখানে কোনো দু'আকে নির্দিষ্ট করেন নাই, সেখানে নির্দিষ্ট করা বিদ'আত। আর যেখানে নবী (স) কোনো দু'আ নির্দিষ্ট করেছেন, সেখানে নির্দিষ্ট না করাটা বিদ'আত। এ ধরনের বিদ'আত হলো নির্দিষ্টকরণের বিদ'আত ।
সালাতুত তারাবীহর প্রতি চার রাকা'আতের পর নবী (সঃ), সাহাবায়ে কিরাম (রঃ), তাবেয়ীনে কিরাম, তাবে তাবেয়ীনে কিরাম, আয়িম্মায়ে কিরাম, সালাফে সালেহীন (রহিমাহু) এর কেউ যুগে যুগে এমন একটা দু'আ নির্দিষ্ট করেননি। এই চার রাকা'আতের পর কেউ চাইলে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন, দরূদ পড়তে পারেন, সুব্হানাল্লাহ্, আল্লাহু আকবার পড়তে পারেন, যে কোনো কিছু পড়তে পারেন; এটা উন্মুক্ত। যখন এখানে ‘সুবহানাযিল মুলকি...' দু'আটি নির্দিষ্ট করে নেয়া হয় তখন তা বিদ'আত ৷
এছাড়া এই দু'আটি কোনো হাদীসের ভাষায় আসেনি। নাম জানা যায় না এমন কোনো একজন ব্যক্তি এই দু'আটি বানিয়েছেন। কে বানিয়েছেন এই তথ্য আল্লাহ্ তা'আলাই ভালো জানেন, তবে কেউ একজন বানিয়েছেন। কারণ নবী (স.) কখনো এই দু'আ পড়েননি। যিনি বানিয়েছেন উনি ভালো বানিয়েছেন, শির্কি কথা বা খারাপ কথা বানাননি। কিন্তু এটাকে আমরা যে তারাবীহর সাথে নির্দিষ্ট করে ফেলেছি, চার রাকা'আত পর এই দু'আটি পড়া, এটা বিদ'আত। আর কোনো মানুষের বানানো দু'আকে ফযীলাত মনে করে পড়া এটাও বিদ'আত। নবী (স) যেই দু'আর ফযীলাত স্বীকৃতি দিয়েছেন এটা সুন্নাত। যেই জিনিসের ফযীলাত নবী (স) বলেননি, আমরা নিজেরা বানিয়ে নিলাম সেটা বিদ'আত। মোটকথা তারাবীহতে চার রাকা'আত পরপর উপরিউক্ত দু'আ হাদীসে আসেনি।
তারাবীহতে আমাদের সমাজে প্রচলিত আরেকটি রীতি হলো কিছু মসজিদে প্রতি চার রাকা'আত পরপর এবং কিছু মসজিদে ২০ রাকা'আত শেষে নির্দিষ্ট মুনাজাত করা । মুনাজাতটি হলো-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَنَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ بِرَحْمَتِكَ يَا عَزِيزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيمُ يَا جَبَّارُ يَا خَالِقُ يَا بَارُ اللَّهُمَّ أَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيرُ يَا مُجِيرُ يَا مُجِيرُ بِرَحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ
এই মুনাজাতটি খুবই পরিচিত এবং নির্দিষ্ট । এই দু'আটিও ভালো দু'আ এবং এতে খারাপ কোনো বিষয়ের কথা বলা হয়নি। এই দু'আটিতে কোনো শির্কি, কুফরী বা খারাপ কোনো কথাবার্তা নেই। তবে নবী (র) ও সাহাবাগণ এভাবে দু'আ বানাননি এবং এভাবে দু'আ করেননি। এমনকি তাঁরা এই দু'আটিকে চার রাকা'আত পরপর, আট রাকা'আত পরপর কিংবা ২০ রাকা'আত পর পাঠ করতে হবে বলে নির্দিষ্ট করেননি। এটা আমরা যে কোনো সময় আল্লাহ্র কাছে মুনাজাত করার সময় দু'আ হিসেবে করতে পারি। কেউ এখন বসে আছে, তখন চাইলে কেউ আল্লাহ্র কাছে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা...' হে আল্লাহ্! আমি আপনার নিকট জান্নাত চাই, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই' এরকম দু'আ করতে পারেন। কিন্তু এটাকে তারাবীহর সাথে সংযুক্ত করা বিদ'আত। যেটাকে নবী (স) ও সাহাবী রাদিয়াল্লাহু 'আনহুমগণ নির্দিষ্ট করেননি, আমরা নির্দিষ্ট করে নিলাম সেটা সুস্পষ্ট বিদ'আত।
অপরদিকে এ ধরনের দু'আ আমাদের পড়ার দরকার কী? কুরআন এবং হাদীসে তো দু'আর অভাব নেই। যেগুলো আল্লাহ্ তা'আলা সরাসরি শিখিয়েছেন কুরআনে, আগে তো আমাদের সেগুলো শিখতে হবে। ‘রাব্বানা যলামনা আনফুসানা...', 'রাব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া...', ‘রাব্বির হামহুমা কামা..., ‘রাব্বানা ফাগফিরলানা যুনাবানা...' ইত্যাদি কত দু'আ কুরআনে রয়েছে। আল্লাহর শিখানো দু'আ আগে। তারপর রাসূল (স) এর শিখানো দু'আ। নবী কারীম (স) যত দু'আ শিখিয়েছেন তা সারাজীবন শিখেও শেষ করা যাবে না। আল্লাহ্ ‘আয্যা ওয়া জাল্লা এবং নবী (স) এর দু'আ রেখে অন্যের বানানো দু'আ নিয়ে আমাদের ব্যস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই । আমাদের উচিত আগে আল্লাহর শিখানো দু'আগুলো এবং নবী (স) এর শিখানো দু'আগুলো শিক্ষা করা এবং সেগুলোর ওপর আমল করা।
অপরদিকে এ ধরনের দু'আ আমাদের পড়ার দরকার কী? কুরআন এবং হাদীসে তো দু'আর অভাব নেই। যেগুলো আল্লাহ্ তা'আলা সরাসরি শিখিয়েছেন কুরআনে, আগে তো আমাদের সেগুলো শিখতে হবে। ‘রাব্বানা যলামনা আনফুসানা...', 'রাব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া...', ‘রাব্বির হামহুমা কামা..., ‘রাব্বানা ফাগফিরলানা যুনাবানা...' ইত্যাদি কত দু'আ কুরআনে রয়েছে। আল্লাহর শিখানো দু'আ আগে। তারপর রাসূল (স) এর শিখানো দু'আ। নবী কারীম (স) যত দু'আ শিখিয়েছেন তা সারাজীবন শিখেও শেষ করা যাবে না। আল্লাহ্ ‘আয্যা ওয়া জাল্লা এবং নবী (স) এর দু'আ রেখে অন্যের বানানো দু'আ নিয়ে আমাদের ব্যস্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই । আমাদের উচিত আগে আল্লাহর শিখানো দু'আগুলো এবং নবী (স) এর শিখানো দু'আগুলো শিক্ষা করা এবং সেগুলোর ওপর আমল করা।
২১৩ আদ-দুররুল মুখতার, হাশিয়া,
ইবন 'আবিদীন (১২৫২ হি.), ২/৪৬।
সমাজে বহুল প্রচলিত ১০০ জাল হাদীস
ড. মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর, বাংলাদেশ
ড. মোহাম্মদ ইমাম হোসাইন সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর, বাংলাদেশ