সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রবন্ধ নববী চিকিৎসা পদ্ধতি (৫ম কিস্তি)

Mahmud ibn Shahidullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
Threads
520
Comments
533
Reactions
5,544
Credits
2,602
বিভিন্ন রোগের নববী চিকিৎসা :

ক. হিজামা :


একটি উত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি হ’ল হিজামা তথা শিঙ্গা লাগানো। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

إِنَّ أَمْثَلَ مَا تَدَاوَيْتُمْ بِهِ الْحِجَامَةُ​

‘তোমরা যেসব জিনিস দিয়ে চিকিৎসা কর, সেগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হ’ল হিজামা’।[1]
হিজামা আরবী শব্দ ‘আল-হাজম’ থেকে এসেছে। যার অর্থ চোষা বা টেনে নেওয়া। আধুনিক পরিভাষায় Cupping (কাপিং) বলা হয়। হিজামার মাধ্যমে দূষিত রক্ত (Toxin) বের করা হয়। এতে শরীরের মাংসপেশী সমূহের রক্ত প্রবাহ দ্রুততর হয়। পেশী, ত্বক ও শরীরের ভিতরের অরগান সমূহের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীর সতেজ ও শক্তিশালী হয়।

হিজামা বা Wet Cupping অতি প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতি হিসাবে আরব বিশ্বে জনপ্রিয়। নির্দিষ্ট স্থান থেকে সূঁচের মাধ্যমে নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে (টেনে/চুষে) নিস্তেজ প্রবাহহীন দূষিত রক্ত বের করে ফেলা হয়।

হিজামা থেরাপি ৩০০০ বছরেরও পুরাতন চিকিৎসাপদ্ধতি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে উৎপত্তি হ’লেও চিকিৎসাপদ্ধতি হিসাবে চীন, ভারত ও আমেরিকায় পূর্ব থেকেই এটি প্রচলিত ছিল।[2]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বয়ং হিজামা দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন[3] এবং হিজামা দ্বারা চিকিৎসা করতে উৎসাহিত করেছেন।[4] এমনকি তিনি ইহরাম অবস্থায়[5], ছিয়াম অবস্থায়[6] ও সফর অবস্থায়ও হিজামা দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।[7] যে শিঙ্গা লাগিয়ে দেয় তাকে পারিশ্রমিক দিয়েছেন।[8] মি‘রাজ রজনীতে ফেরেশতামন্ডলী রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে পরামর্শ দিয়েছেন, তাঁর উম্মতকে শিঙ্গা লাগাবার আদেশ দিতে’।[9]

সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) হিজামা দ্বারা চিকিৎসাকে প্রাধান্য দিতেন। আছেম ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ رضى الله عنهما عَادَ الْمُقَنَّعَ ثُمَّ قَالَ لاَ أَبْرَحُ حَتَّى تَحْتَجِمَ فَإِنِّى سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ إِنَّ فِيهِ شِفَاءً-​

‘জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) অসুস্থ মুক্বান্না (রাঃ)-কে দেখতে যান। এরপর তিনি বলেন, আমি হটব না, যতক্ষণ না তুমি শিঙ্গা লাগাবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই এতে নিরাময় আছে’।[10]

হিজামা দ্বারা অনেক রোগের চিকিৎসা করা যায়। তার মধ্যে অন্যতম হ’ল মাথা ব্যথা। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,

أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم احْتَجَمَ وَهْوَ مُحْرِمٌ فِى رَأْسِهِ مِنْ شَقِيقَةٍ كَانَتْ بِهِ-​

‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আধ কপালির ব্যথার কারণে মুহরিম অবস্থায় তাঁর মাথায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন’।[11]

নিতম্বের ব্যথার কারণেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হিজামা দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। জাবের (রাঃ) বলেনে,

أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم احْتَجَمَ عَلَى وَرِكِهِ مِنْ وَثْءٍ كَانَ بِهِ-​

‘নবী করীম (ﷺ)-এর নিতম্বে ব্যথা হওয়ায় তিনি সে স্থানে হিজামা দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন’।[12]

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পা মচকে যাওয়ার চিকিৎসায় হিজামা গ্রহণ করেছেন। জাবের (রাঃ) বলেন,

أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم سَقَطَ مِنْ فَرَسِهِ عَلَى جِذْعٍ فَانْفَكَّتْ قَدَمُهُ قَالَ وَكِيعٌ يَعْنِى أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم احْتَجَمَ عَلَيْهَا مِنْ وَثْءٍ-​

‘নবী করীম (ﷺ) তাঁর ঘোড়া থেকে একটি খেজুর কান্ডের উপর ছিটকে পড়ে গেলে তাঁর পা মচকে যায়। ওয়াক্বী বলেন, ব্যথার কারণে মচকে যাওয়া স্থানে তিনি শিঙ্গা লাগিয়েছেন’।[13]

আবূ কাবাশা আল-আনমারী (রাঃ) বলেন,

أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَحْتَجِمُ عَلَى هَامَتِهِ وَبَيْنَ كَتِفَيْهِ وَهُوَ يَقُولُ مَنْ أَهْرَاقَ مِنْ هَذِهِ الدِّمَاءِ فَلاَ يَضُرُّهُ أَنْ لاَ يَتَدَاوَى بِشَىْءٍ لِشَىْءٍ-​

‘নবী করীম (ﷺ) তাঁর সিঁথিতে এবং দু’কাঁধের মধ্যখানে হিজামা করাতেন এবং বলতেন, যে ব্যক্তি এই অঙ্গ হ’তে রক্তমোক্ষণ করাবে, সে কোন রোগের কোন ঔষধ ব্যবহার না করলেও তার কোন ক্ষতি হবে না’।[14]

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

نِعْمَ الْعَبْدُ الْحَجَّامُ يَذْهَبُ بِالدَّمِ وَيُخِفُّ الصُّلْبَ وَيَجْلُو الْبَصَرَ-​

‘হিজামাকারী কতই না উত্তম ব্যক্তি, সে দূষিত রক্ত বের করে মেরুদন্ডকে শক্ত করে এবং চোখের ময়লা দূর করে দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে’।[15]

হিজামার সময়কাল :

হিজামা দ্বারা কাংখিত উপকার পেতে হ’লে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশিত দিন ও তারিখ অনুযায়ী লাগাতে হবে। তিনি বলেন,

مَنِ احْتَجَمَ لِسَبْعَ عَشْرَةَ وَتِسْعَ عَشْرَةَ وَإِحْدَى وَعِشْرِينَ كَانَ شِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ-​

‘যে ব্যক্তি প্রতি মাসের সতেরো, ঊনিশ বা একুশ তারিখে হিজামা লাগাবে তা সকল রোগের মহৌষধ হবে’।[16]

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

مَنْ أَرَادَ الْحِجَامَةَ فَلْيَتَحَرَّ سَبْعَةَ عَشَرَ أَوْ تِسْعَةَ عَشَرَ أَوْ إِحْدَى وَعِشْرِينَ وَلاَ يَتَبَيَّغْ بِأَحَدِكُمُ الدَّمُ فَيَقْتُلَهُ-​

‘যে ব্যক্তি হিজামা লাগাতে চায়, সে যেন (চান্দ্র মাসের) ১৭, ১৯ অথবা ২১ তারিখে লাগায়। তোমাদের কেউ যেন রক্ত উত্তেজিত (হাইপ্রেসার) হ’তে না দেয় (হাই প্রেসার হ’লে হিজামা লাগায়)। কেননা উচ্চ রক্তচাপ তাকে হত্যা করে ফেলতে পারে’।[17]

উল্লিখিত হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, উচ্চরক্তচাপ (হাইপ্রেসার) রোগীদের জন্য হিজামা অত্যন্ত উপকারী ও ফলপ্রসূ।

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, হিজামা করার উপযুক্ত সময় মাসের মধ্যবর্তীতে অথবা বেশী হ’লে মাসের শেষ তৃতীয় বা চতুর্থাংশ। কেননা মাসের প্রথমদিকে রক্তের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় না এবং মাসের শেষের দিকে অধিকাংশ সময় নিস্তেজ থাকে। অবশ্য মাসের মধ্য এবং শেষাংশে উত্তেজনা চরম অবস্থায় থাকে।

‘আল-কানূন ফিত তিবব’ গ্রন্থের লেখক ইমাম ইবনু সিনা (রহঃ) বলেন, মাসের প্রথমদিকে হিজামা করাতে হবে না। কেননা তখন মিশ্রণ আন্দোলিত এবং উত্তেজিত হয় না। আর মাসের শেষেও নয়। কেননা তখন হ্রাস-বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। মাসের মাঝামাঝি সময়ে হিজামা করাতে হবে। কেননা মাসের মধ্যবর্তী সময়ে চাঁদের আলোতে পূর্ণতা পায় এবং দেহের উপাদানগুলো উত্তেজিত থাকে।[18]

খালি পেটে শিঙ্গা লাগালে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। হাদীসে এসেছে,

عَنْ نَافِعٍ قَالَ قَالَ ابْنُ عُمَرَ يَا نَافِعُ يَنْبِغْ بِيَ الدَّمُ فَأْتِنِي بِحَجَّامٍ وَاجْعَلْهُ شَابًّا وَلَا تَجْعَلْهُ شَيْخًا وَلَا صَبِيًّا، وَقَالَ ابْنُ عُمَرَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ الْحِجَامَةُ عَلَى الرِّيْقِ أَمْثَلُ وَهِيَ تَزِيْدُ فِي الْعَقْلِ وَتَزِيْدُ فِي الْحِفْظِ وَتَزِيْدُ الْحَافِظَ حِفْظًا-​

নাফে‘ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) আমাকে বললেন, হে নাফে‘! আমার শরীরে রক্ত টগবগ করছে। অতএব একজন যুবক শিঙ্গাওয়ালা ডেকে আনো। বালক কিংবা বৃদ্ধ ব্যক্তিকে এনো না। নাফে‘ বলেন, অতঃপর ইবনু ওমর (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, খালি পেটে শিঙ্গা লাগানো শরীরের জন্য খুবই ফলপ্রসূ! তাতে জ্ঞান ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং হাফেযের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে’।[19]

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,

الْحِجَامَةُ عَلَى الرِّيقِ أَمْثَلُ وَفِيهِ شِفَاءٌ وَبَرَكَةٌ وَتَزِيدُ فِى الْعَقْلِ وَفِى الْحِفْظِ فَاحْتَجِمُوا عَلَى بَرَكَةِ اللهِ يَوْمَ الْخَمِيسِ وَاجْتَنِبُوا الْحِجَامَةَ يَوْمَ الأَرْبِعَاءِ وَالْجُمُعَةِ وَالسَّبْتِ وَيَوْمَ الأَحَدِ تَحَرِّيًا وَاحْتَجِمُوا يَوْمَ الاِثْنَيْنِ وَالثُّلاَثَاءِ فَإِنَّهُ الْيَوْمُ الَّذِى عَافَى اللهُ فِيهِ أَيُّوبَ مِنَ الْبَلاَءِ وَضَرَبَهُ بِالْبَلاَءِ يَوْمَ الأَرْبِعَاءِ فَإِنَّهُ لاَ يَبْدُو جُذَامٌ وَلاَ بَرَصٌ إِلاَّ يَوْمَ الأَرْبِعَاءِ أَوْ لَيْلَةَ الأَرْبِعَاءِ-​

‘বাসীমুখে হিজামা লাগালে তাতে নিরাময় ও বরকত লাভ হয় এবং তাতে জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। অতএব আল্লাহর বরকত লাভে ধন্য হ’তে তোমরা বৃহস্পতিবারে হিজামা লাগাও এবং বুধ, শুক্র, শনি ও বরিবারকে হিজামার জন্য বেছে নেয়া থেকে বিরত থাকো। সোম ও মঙ্গলবারে হিজামা লাগাও। কেননা এই দিনেই আল্লাহ আইয়ূব (আঃ)-কে রোগমুক্তি দান করেন এবং বুধবার তাকে রোগাক্রান্ত করেন। আর কুষ্ঠরোগ ও ধবল বুধবার দিন বা রাতেই শুরু হয়’।[20]

হিজামা প্রয়োগের স্থান ও কার্যকারিতা :

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মাথা ব্যথার কারণে মাথার মাঝখানে[21] ঘাড়ের দু’টি রগে ও কাঁধে[22], পা মচকে যাওয়ার কারণে পায়ে[23] নিতম্বের ব্যথায় নিতম্বে[24] হিজামা করিয়েছেন। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) ‘আত-তিববুন নববী’ গ্রন্থে লিখেছেন, হিজামা ব্যবহার হ’ল, স্বেচ্ছায় সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শিরাসমূহ থেকে দূষিত রক্ত নিষ্কাষণ করা হয়। বিশেষত কেবল শিরা হ’তে, যেসব শিরা অধিক কর্তন করা হয় না এবং যেগুলোর প্রত্যেকটি কর্তনের মাঝে বিশেষ উপকারিতা রয়েছে।

কনুইয়ে শিঙ্গা লাগানো : ‘বাসলিক’-এর রক্তক্ষরণ ঘটালে কলিজা ও পিত্তের তাপের কারণে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে যে ফোলা দেখা দেয় তা দূর হয়। তাছাড়া ফুসফুস ফোলা উপশম হয়। এমনিভাবে পাঁজর এবং হাঁটু থেকে নিতম্ব পর্যন্ত রক্তসংশ্লিষ্ট যাবতীয় রোগের উপশমে কার্যকরী।

বাহুতে শিঙ্গা লাগানো : ‘আকহাল’ তথা বাহুর শিরা হ’তে শিঙ্গার মাধ্যমে রক্তক্ষরণের দ্বারা সারাদেহ হ’তে অপ্রয়োজনীয় উপাদান নিষ্কাষণে উপকার হয়। বিশেষত যখন সারাদেহের রক্ত নষ্ট হয়ে যায়, তখন এই রক্তক্ষরণে উপকার হয়।

ডান বাহুতে শিঙ্গা লাগানো : কিফাল (নিতম্ব)-এর রক্ত নির্গমণে মস্তিষ্ক এবং ঘাড়ের রোগে উপকার হয় যা রক্তাধিক্য অথবা রক্ত সঞ্চালনের কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে।

গলার পার্শ্বে শিঙ্গা লাগানো : গলার ডান-বাম দুই পার্শ্বের রক্ত নির্গমণে পিত্তের ব্যথা, অর্ধাঙ্গ এবং কপালের ব্যথা উপশম হয়।

গ্রীবায় হিজামা করানো : গ্রীবায় হিজামা করানোর মাধ্যমে কাঁধ ও গলার ব্যথা উপশম হয়।

কানপট্টিতে হিজামা করানো : মস্তিষ্ক ও তার বিভিন্ন অংশ, চেহারা, দাঁত, কান, চোখ, নাক এবং গলায় যদি রক্তাধিক্য, রক্ত সঞ্চালন অথবা এ দু’অবস্থার সম্মিলিত কারণে কোন রোগ সৃষ্টি হয়, তাহ’লে কানপট্টিতে হিজামা করানো খুবই উপকারী।[25]

থুতনীর নিচে : থুতনীর নিচে হিজামা করানো দাঁতের ব্যথা, মুখমন্ডল এবং গলার জন্য উপকারী। তবে শর্ত হচ্ছে যথাসময়ে ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া থুতনীর নিচে হিজামা করালে মস্তিষ্ক এবং হাতের দূষিত রক্ত পরিষ্কার হয়।

পায়ের পিঠে : পায়ের পিঠে হিজামা করানো সাফিনে শিঙ্গা লাগানোর মতো। সাফিন হ’ল গোড়ালির কাছের একটি রগ। এখানে শিঙ্গা লাগানো উরু, নিতম্ব, ঋতুরোগ এবং খোস-পাচড়া রোগের জন্য উপকারী।

বুকের নিচে : বুকের নিচে শিঙ্গা লাগানো রানের ফোঁড়া, চুলকানি, পাচড়া, গেঁটেবাত, অর্শ্বরোগ, পিঠের চুলকানি ও পাচড়ার জন্য অত্যন্ত উপকারী।[26]

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, হিজামার মাধ্যমে ব্যাক পেইন, উচ্চ রক্তচাপ, পায়ে ব্যথা, হাঁটু ব্যথা, মাথা ব্যথা (মাইগ্রেন), ঘাড়ে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, আর্থাইটিজ, বাত, ঘুমের ব্যঘাত, থাইরয়েড, স্মৃতিশক্তিহীনতা, ত্বকের বর্জ্য পরিষ্কার, অতিরিক্ত স্রাব নিঃসরণ বন্ধ করা, অর্শ্ব, পাঁচড়া, ফোঁড়া ইত্যাদি প্রতিরোধ হয়।[27]

হিজামার উপকারিতা :

হিজামাতে বহু বৈজ্ঞানিক থিওরি, ফিজিওলজি, এনাটমি রয়েছে। কাপিং মূলত দুই ধরনের Dry cupping এবং Wet cupping. ওয়েট কাপিং-কে মূলত হিজামা বলা হয়। উপকারিতার দিক থেকে হিজামা সর্বোত্তম। এটি শুধু ইসলামিক চিকিৎসা বলে উত্তম তা নয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা এটাই প্রমাণিত। আমাদের শরীরের প্রথম বৃহত্তম অঙ্গ ত্বক। দ্বিতীয় লিভার। শরীরের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি।

আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার পিছনে এই লিভার ও কিডনি প্রধান ভূমিকা পালন করে। গবেষণা থেকে জানা গেছে, হিজামাতে ত্বককে যে নেগেটিভ প্রেশার দেয়া হয়, তা ৩৫ গুণ বেশী এই একই কাজ করে। অর্থাৎ ত্বকে নেগেটিভ প্রেশার দেয়া হ’লে যে পদার্থ টেনে নিয়ে আসে তাতেই থাকে সেসব বর্জ্য যা লিভার ও কিডনি ডায়ালাইসিস করে। আর এটিই হিজামা। আরেক ধরনের কাপিং আছে যাতে কাটা হয় না। এটিও ব্যথার জন্য অত্যন্ত উপকারী।

বিশেষ করে যারা খেলাধূলা করেন তাদের মাংসপেশীর স্টিফনেস দূর করতে এটি বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও মুখের ত্বক, সেলুলিয়েটের (ত্বকে ভাঁজ পড়া) সমস্যা, মুখের লোমকূপ বড় হয়ে যাওয়া যাকে পোরস বলে, পেটের দাগ ইত্যাদির জন্য কাপিং ম্যাসাজ (ড্রাই কাপিং) কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

হিজামা চিকিৎসাতে ত্বকে খুবই সামান্য কাটতে হয় এবং নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে বদ-রক্ত বের করা হয়। আমাদের ত্বক একটা রক্ষা কবচ হিসাবে কাজ করে। হিজামাতে ত্বকের তিনটি স্তরের কেবল উপরের স্তরটি কাটা হয়। যার ফলে নিচের ত্বক ছাকনী হিসাবে কাজ করে। হিজামার সময় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম অবশ্যই জীবাণুমুক্ত হ’তে হবে। অতঃপর হিজামার স্থানে ধারালো সুঁচ বা ব্লেড দ্বারা হালকাভাবে ছিদ্র করে নিতে হবে। পরে কাপ সেট করে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এভাবে দূষিত রক্ত বের হয়ে কাপে জমতে থাকবে। কিন্তু কেউ যদি এর নিচের ত্বক কেটে দেয় তবে ভাল রক্ত বের হয়ে যাবে। এতে যথেষ্ট ক্ষতি ও ইনফেকশনের আশংকা থাকে।

ইন্টারন্যাশনাল কাপিং থেরাপি এসোসিয়েশন বলেছে, কাপিং একই সাথে একজন মানুষের একাধিক শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার উপশম করতে পারে।

আমরা একটা ঔষধ একটা মাত্র সমস্যার জন্য খেয়ে থাকি। কিন্তু হিজামাতে যে দূষিত প্লাজমা বেরিয়ে আসে তাতে থাকে একাধিক রোগ জীবাণু। যেমন ঠান্ডা, কাশি, বিষণ্ণতা, আরথ্রাইটিস, কোমরের সায়াটিকার ব্যথা, চিন্তা, ঘুমের সমস্যা, মাংসপেশির ব্যথা এবং অন্যান্য সকল রোগের তীব্রতাও কমে আসে।


[1]. বুখারী হা/৫৬৯৬; মুসলিম হা/২২১৭; তিরমিযী হা/২০৮২।
[2]. আত-তিববুন নববী, ৯৯ পৃঃ।
[3]. বুখারী হা/৫৬৯৭, ১৯৩৯, ৫৬৯৪।
[4]. বুখারী হা/৫৬৯৬।
[5]. বুখারী হা/১৮৩৫, ১৯৩৮, ৫৬৯৫।
[6]. বুখারী হা/১৯৩৯, ৫৬৯৪।
[7]. বুখারী হা/৫৬৯৫।
[8]. বুখারী হা/৫৬৯১।
[9]. তিরমিযী হা/২০৫২; ইবনু মাজাহ হা/৩৪৭৭; সহীহাহ হা/২২৬৩; সহীহুল জামে‘ হা/৫৬৭১।
[10]. বুখারী হা/৫৬৯৭।
[11]. বুখারী হা/৫৭০১।
[12]. আবূদাঊদ হা/৩৮৬৩; ইবনু মাজাহ হা/৩৪৮৫; মিশকাত হা/৪৫৪৩, সনদ সহীহ।
[13]. ইবনু মাজাহ হা/৩৪৮৫; আবূদাঊদ হা/৩৮৬৩, সনদ সহীহ।
[14]. আবূদাঊদ হা/৩৮৫৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৭৮৪; সহীহুল জামে‘ হা/৪৯২৬।
[15]. তিরমিযী হা/২০৫৩, সনদ সহীহ।
[16]. আবূদাঊদ হা/৩৮৬১; তিরমিযী হা/২০৫১; ইবনু মাজাহ হা/৩৪৮৩; মিশকাত হা/৪৫৪৭; সহীহাহ হা/৬২২।
[17]. ইবনু মাজাহ হা/৩৪৮৬, সনদ সহীহ।
[18]. আত-তিববুন নববী ১০২ পৃঃ।
[19]. ইবনু মাজাহ হা/৩৪৭৮; সহীহাহ হা/৭৬৬; মিশকাত হা/৪৫৭৩।
[2০]. ইবনু মাজাহ হা/৩৪৮৭; সহীহাহ হা/৭৬৬।
[21]. বুখারী হা/৫৬৯৮, ৫৬৯৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৪৮১।
[22]. আবূ দাঊদ হা/৩৮৬০; আহমাদ হা/১৩০০১, সনদ সহীহ।
[23]. আবূদাঊদ হা/৩৮৬৩; ইবনু মাজাহ হা/৩৪৮৫; নাসাঈ হা/২৮৪৮, সনদ সহীহ।
[24]. আবূদাঊদ হা/৩৮৬৩; ইবনু মাজাহ হা/৩৪৮৫; মিশকাত হা/৪৫৪৩, সনদ সহীহ।
[25]. আত-তিববুন নববী, পৃঃ ১০৩-১০৪।
[26]. প্রাগুক্ত, পৃঃ ১০৬।
[27]
. আত-তিববুন নববী, পৃঃ ১০১-১০২।


ক্বামারুয্যামান বিন আব্দুল বারী

মুহাদ্দিছ, বেলটিয়া কামিল মাদ্রাসা, জামালপুর।​
 
Last edited:
Top