Knowledge Sharer
ilm Seeker
Uploader
Salafi User
- Joined
- Jan 12, 2023
- Threads
- 864
- Comments
- 1,113
- Solutions
- 20
- Reactions
- 13,054
- Thread Author
- #1
ধোয়া তুলসি পাতা : তুলসি একটি ঔষধী গুণ বিশিষ্ট সুগন্ধীযুক্ত উদ্ভিদজাত বৃক্ষ। সর্দি-কাশি জনিত সমস্যায় এই গাছের পাতার রস কার্যকরী ঔষধের ভূমিকা পালন করে। ধোয়া তুলসি পাতা বলতে পবিত্র বা নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী বোঝানো হয়। তবে আমরা প্রবচনটি কাউকে কটাক্ষ করতে বেশী ব্যবহার করে থাকি। তুলসি গাছ ও এর পাতাকে হিন্দু ধর্মালম্ব^ীগণ পবিত্র মনে করে পূঁজা করে থাকে। তুলসি গাছকে পবিত্র ধারণা করার পিছনে হিন্দু বিভিন্ন পুরাণে দীর্ঘ ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। তুলসি নামে এক কন্যা পরম কৃষ্ণ ভক্ত ছিল। সে কৃষ্ণ তথা বিষ্ণুকে স্বামী হিসাবে পেতে চাইত। তুলসি বিষ্ণুর কৃষ্ণ অবতারে রাধিকার সহচর ছিল। অপরদিকে তুলসি প্রেমিক সুদামাও কৃষ্ণ ভক্ত ছিল। একদিন তুলসিকে কৃষ্ণের সাথে ক্রীড়ারত দেখে রাধিকা সুদামা তুলসিকে অভিশাপ দেয়। ফলে রাজা ধর্মধ্বজের কন্যারূপে তুলসির এবং অসুর বংশে শঙ্খচূড় নামে সুদামার পুনর্জন্ম হয়। যৌবনে তুলসি বিষ্ণুর পত্নী হওয়ার জন্য ব্রহ্মার তপস্যা করে। ব্রহ্মা তুলসিকে শঙ্খচূড়ের স্ত্রী হওয়ার বর প্রদান করেন। তুলসি ও শঙ্খচূড়ের বিবাহ হয়।
শঙ্খচূড় কঠোর তপস্যা করে দু’টি বর লাভ করে। একটি কৃষ্ণ কবজ অপরটি তার স্ত্রীর সতীত্ব। সে শর্ত দেয় যে, তার স্ত্রীর সতীত্ব থাকা অবস্থায় কেউ যেন তাকে হত্যা করতে না পারে। বর লাভের পর শঙ্খচূড় পরোক্ষভাবে অমরত্ব পায়। ফলে দেবতাদের পরাজিত করে ইন্দ্রলোক দখল করে। দেবতারা শিবের সাহায্য প্রার্থনা করলে শিব ও শঙ্খচূড়ের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে শিব অসুর শঙ্খচূড়কে পরাস্ত করতে পারে না। অতঃপর বিষ্ণু ছলনা করে শঙ্খচূড়ের কাছ থেকে কবজ নিয়ে নেয়। অপরদিকে শঙ্খচূড়ের রূপ ধারণ করে তুলসির সতীত্ব হরণ করে। ফলশ্রুতিতে শঙ্খচূড়ের মৃত্যু ঘটে। শঙ্খচূড়ের অস্থি লবণ সাগরে নিক্ষেপ করা হয়। ধারণা করা হয় সেখান থেকেই শঙ্খ বা শাখের জন্ম হয়। এজন্য হিন্দুদের নিকট শাখের পানি পবিত্র। শাখের পানি দিয়ে গোছল করলে তীর্থসণান করার ফল লাভ হবে বলে পুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে শঙ্খচূড়ের হত্যার বিষয়টি তুলসি বুঝতে পেরে বিষ্ণুকে পাষাণ হওয়ার অভিশাপ দেয়। কেননা তুলসি শুধুমাত্র তাকে বিবাহ করার জন্য দু’বার জন্মগ্রহণ করে। অথচ সে তুলসিকে বিবাহের পরিবর্তে তার সত্বীত হরণ করে। পরিশেষে বিষ্ণু তুলসিকে বর দেয় যে, তার দেহ থেকে গন্ডকী নদী প্রবাহীত হবে এবং সেখানে পাষাণরূপে শালগ্রাম পাথর বেশে বিষ্ণুর বসবাস হবে’।[১]
সেই সাথে তুলসির চুল থেকে তুলসি বৃক্ষের জন্ম হবে যেখানে পাষাণ খন্ড তথা পাথর খন্ডের সাথে তুলসির বিবাহ হবে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, বিষ্ণুর সামনে একদিন স্বরসতী ও তুলসি ঝগড়া করে। এতে তুলসি অপমাণিত হয়ে ভূ-গহবরে অন্তর্হিত হয়। অতঃপর বিষ্ণু দশ অক্ষরে মন্ত্র পাঠ করে তুলসিকে আহবান করলে, তুলসি বৃক্ষরূপে বের হয়ে আসে। বিষ্ণু ঘোষণা করে ঘি-এর প্রদীপ, সিঁদূর, চন্দন, ধূপ ও ফুল দিয়ে যে ব্যক্তি তুলসি বৃক্ষের পূজা করবে সে সিদ্ধি লাভ করবে’।[২]
ঠিক এ কারণেই হিন্দুদের নিকট তুলসি গাছ পূজনীয় এবং সর্বাধিক পবিত্র। এ ঘটনা অবলম্বনে তুলসিকে পবিত্র বৃক্ষ মনে করে ‘ধোয়া তুলসি পাতা’ প্রবচনটির উৎপত্তি ঘটেছে। এভাবে মুসলিম সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিন্দুয়ানী প্রবাদ-প্রবচন প্রবেশ করেছে। কখন এসব প্রবাদ-প্রবচন ঈমান ও আক্বীদা বিনষ্ট করে দেয়। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আমাদের এত্থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন।-আমীন!
[১]. বলা হয় শালগ্রাম কৃষ্ণবর্ণ গোলাকার পাথর খন্ড। এ পাথরকে নারায়ণ তথা বিষ্ণুর প্রতীকীরূপ ধরা হয়। তুলসি বৃক্ষের পাদদেশে এ পাথর রেখে হিন্দুরা পূঁজা করে। বাংলার প্রবাদ, ড. সুশীলকুমার দে, পত্র ভারতী প্রকাশনী, ১ম সংস্করণ, আগষ্ট ২০০০, পৃ. ৩৬।
[২]. ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, অনুবাদ : শ্রী সুবোধচন্দ্র মজুমদার, দেব সাহিত্য কুটীর, ২২৫ বি, ঝামাপুকুর লেন, কলকাতা, পুনর্মুদ্রণ ১৩৬০ বঙ্গাব্দ, প্রকৃতি খন্ড, ১৩তম অধ্যায়, পৃ. ১১২-১৪১।
শঙ্খচূড় কঠোর তপস্যা করে দু’টি বর লাভ করে। একটি কৃষ্ণ কবজ অপরটি তার স্ত্রীর সতীত্ব। সে শর্ত দেয় যে, তার স্ত্রীর সতীত্ব থাকা অবস্থায় কেউ যেন তাকে হত্যা করতে না পারে। বর লাভের পর শঙ্খচূড় পরোক্ষভাবে অমরত্ব পায়। ফলে দেবতাদের পরাজিত করে ইন্দ্রলোক দখল করে। দেবতারা শিবের সাহায্য প্রার্থনা করলে শিব ও শঙ্খচূড়ের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে শিব অসুর শঙ্খচূড়কে পরাস্ত করতে পারে না। অতঃপর বিষ্ণু ছলনা করে শঙ্খচূড়ের কাছ থেকে কবজ নিয়ে নেয়। অপরদিকে শঙ্খচূড়ের রূপ ধারণ করে তুলসির সতীত্ব হরণ করে। ফলশ্রুতিতে শঙ্খচূড়ের মৃত্যু ঘটে। শঙ্খচূড়ের অস্থি লবণ সাগরে নিক্ষেপ করা হয়। ধারণা করা হয় সেখান থেকেই শঙ্খ বা শাখের জন্ম হয়। এজন্য হিন্দুদের নিকট শাখের পানি পবিত্র। শাখের পানি দিয়ে গোছল করলে তীর্থসণান করার ফল লাভ হবে বলে পুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে। অপরদিকে শঙ্খচূড়ের হত্যার বিষয়টি তুলসি বুঝতে পেরে বিষ্ণুকে পাষাণ হওয়ার অভিশাপ দেয়। কেননা তুলসি শুধুমাত্র তাকে বিবাহ করার জন্য দু’বার জন্মগ্রহণ করে। অথচ সে তুলসিকে বিবাহের পরিবর্তে তার সত্বীত হরণ করে। পরিশেষে বিষ্ণু তুলসিকে বর দেয় যে, তার দেহ থেকে গন্ডকী নদী প্রবাহীত হবে এবং সেখানে পাষাণরূপে শালগ্রাম পাথর বেশে বিষ্ণুর বসবাস হবে’।[১]
সেই সাথে তুলসির চুল থেকে তুলসি বৃক্ষের জন্ম হবে যেখানে পাষাণ খন্ড তথা পাথর খন্ডের সাথে তুলসির বিবাহ হবে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, বিষ্ণুর সামনে একদিন স্বরসতী ও তুলসি ঝগড়া করে। এতে তুলসি অপমাণিত হয়ে ভূ-গহবরে অন্তর্হিত হয়। অতঃপর বিষ্ণু দশ অক্ষরে মন্ত্র পাঠ করে তুলসিকে আহবান করলে, তুলসি বৃক্ষরূপে বের হয়ে আসে। বিষ্ণু ঘোষণা করে ঘি-এর প্রদীপ, সিঁদূর, চন্দন, ধূপ ও ফুল দিয়ে যে ব্যক্তি তুলসি বৃক্ষের পূজা করবে সে সিদ্ধি লাভ করবে’।[২]
ঠিক এ কারণেই হিন্দুদের নিকট তুলসি গাছ পূজনীয় এবং সর্বাধিক পবিত্র। এ ঘটনা অবলম্বনে তুলসিকে পবিত্র বৃক্ষ মনে করে ‘ধোয়া তুলসি পাতা’ প্রবচনটির উৎপত্তি ঘটেছে। এভাবে মুসলিম সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিন্দুয়ানী প্রবাদ-প্রবচন প্রবেশ করেছে। কখন এসব প্রবাদ-প্রবচন ঈমান ও আক্বীদা বিনষ্ট করে দেয়। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আমাদের এত্থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন।-আমীন!
[১]. বলা হয় শালগ্রাম কৃষ্ণবর্ণ গোলাকার পাথর খন্ড। এ পাথরকে নারায়ণ তথা বিষ্ণুর প্রতীকীরূপ ধরা হয়। তুলসি বৃক্ষের পাদদেশে এ পাথর রেখে হিন্দুরা পূঁজা করে। বাংলার প্রবাদ, ড. সুশীলকুমার দে, পত্র ভারতী প্রকাশনী, ১ম সংস্করণ, আগষ্ট ২০০০, পৃ. ৩৬।
[২]. ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, অনুবাদ : শ্রী সুবোধচন্দ্র মজুমদার, দেব সাহিত্য কুটীর, ২২৫ বি, ঝামাপুকুর লেন, কলকাতা, পুনর্মুদ্রণ ১৩৬০ বঙ্গাব্দ, প্রকৃতি খন্ড, ১৩তম অধ্যায়, পৃ. ১১২-১৪১।
- মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ।