• আসসালামু আলাইকুম, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন মেইনটেনেন্স মুডে থাকবে। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।
‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রবন্ধ দো‘আয় ভুল-ভ্রান্তি ও তা কবুলে দেরী হ’লে করণীয়

Mahmud ibn Shahidullah

Knowledge Sharer

ilm Seeker
Q&A Master
Salafi User
Threads
520
Comments
533
Reactions
5,566
Credits
2,602
আল্লাহর কাছে বান্দার হৃদয়ের আকুতি প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে দো‘আ। অন্যান্য ইবাদতের ন্যায় দো‘আও একটি ইবাদত। আল্লাহর নিকট বান্দার দো‘আর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। রাসূল (ﷺ) দো‘আকে শ্রেষ্ঠ ইবাদত বলে আখ্যায়িত করেছেন।[1] দো‘আর বদৌলতে আগত বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় এবং অনাগত বিপদ দূরীভূত হয়। কিন্তু দো‘আয় পদ্ধতিগত ভুল-ভ্রান্তি থাকার কারণে কখনো দো‘আ কবুল হয় না। কখনো বা দেরীতে দো‘আ কবুল হয়। আলোচ্য প্রবন্ধে দো‘আয় ভুল-ভ্রান্তি ও দো‘আ কবুল হ’তে দেরী হ’লে করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে ইনশাআল্লাহ!

দো‘আয় ভুল-ভ্রান্তি

১. দো‘আয় শিরকী অসীলা গ্রহণ করা : দো‘আ হবে স্রেফ আল্লাহর নিকটে। দো‘আর মধ্যে মৃত ব্যক্তি, জিন, পাথর, গাছ-পালা, অথবা অন্য কোন অসীলা গ্রহণ করা হারাম। কেননা শিরকী অসীলা গ্রহণ করলে দো‘আ কবুল হওয়ার পরিবর্তে সৎ আমলই বিনষ্ট হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ-​

‘অথচ (হে নবী!) নিশ্চিতভাবে তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তী (নবীদের) প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়েছিল, যদি তুমি শিরক কর, তাহ’লে অবশ্যই তোমার সমস্ত আমল বিফলে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (যুমার ৩৯/৬৫)

আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করলাম,

أَىُّ الذَّنْبِ عِنْدَ اللهِ أَكْبَرُ قَالَ أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدًّا وَهْوَ خَلَقَكَ-​

‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় গোনাহ কোন্টি? তিনি বললেন, কাউকে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ স্থির করা; অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’।[2]

সুতরাং অসীলা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বৈধ অসীলা গ্রহণ করতে হবে। যেমন : (ক) আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর অসীলা। (খ) নিজের নেক আমল সমূহের অসীলা। (গ) জীবিত কোন পরহেযগার ব্যক্তির দো‘আর অসীলা।

২. দো‘আয় বিদ‘আতী মাধ্যম গ্রহণ করা : দো‘আ নবী করীম (ﷺ)-এর দেখানো শারঈ পদ্ধতি অনুযায়ী হ’তে হবে। এক্ষেত্রে অন্য কোন মাধ্যম গ্রহণ করলে তা বিদ‘আত হবে। আর বিদ‘আত কুফরের অগ্রদূত’।[3] যা আল্লাহর নিকট কবুল হবে না।

৩. নিরাশ হয়ে দো‘আ করা : এমন মানুষ আছে যারা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হ’লে চিন্তা করে নেয় যে, সে আর সুস্থ হবে না। এই বিপদ থেকে রক্ষা পাবে না। এরপর দো‘আ ছেড়ে দেয়, আল্লাহর স্মরণ ত্যাগ করে এবং নিরাশ হয়ে যায়। খুব কমই ধারণা রাখে যে, এই অবস্থা পরিবর্তন হবে। এমন পরিস্থিতিতে শয়তান তার মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং তাকে নিরাশ করে দেয়। মহান আল্লাহর প্রতি ক্রমশ তাকে আস্থাহীন করে তোলে। অথচ একমাত্র আল্লাহই পারেন অসুস্থকে সুস্থ করতে এবং বন্ধ্যাকে সন্তান দিতে। সুতরাং আশা ছেড়ে না দিয়ে আল্লাহকে ডাকতে হবে। যেমনটি যাকারিয়া (আঃ) করেছিলেন। তিনি জীবনের পড়ন্ত বেলায় মহান আল্লাহর নিকটে দো‘আ করেছিলেন,

رَبِّ هَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ،​

‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে তোমার পক্ষ হ’তে একটি পূত-চরিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী’ (আলে ইমরান ৩/৩৮)

আল্লাহ তা‘আলা তার দো‘আ কবুল করলেন। কুরআনের ভাষায়,

فَنَادَتْهُ الْمَلَائِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَى مُصَدِّقًا بِكَلِمَةٍ مِنَ اللهِ وَسَيِّدًا وَحَصُوْرًا وَنَبِيًّا مِنَ الصَّالِحِيْنَ-​

‘স্বীয় ইবাদত কক্ষে দাঁড়িয়ে প্রার্থনারত অবস্থায় ফেরেশতারা তাকে সম্বোধন করে বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে ইয়াহইয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন। যিনি হবেন আল্লাহর কালেমা (ঈসা)-এর সত্যায়নকারী, নেতা, কলুষমুক্ত এবং সৎকর্মশীল নবীগণের অন্তর্ভুক্ত’ (আলে ইমরান ৩/৩৮)

৪. দো‘আয় শাস্তি কামনা করা : এমন মানুষ আছে যারা বলে, হে আল্লাহ! আমার অপরাধের শাস্তি দুনিয়ায় দিন। আর পরকালে আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং আমাকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। এ ধরনের দো‘আ করা মারাত্মক ভুল। বরং দো‘আয় দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেরই কল্যাণ কামনা করতে হবে।

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একজন অসুস্থ মুসলমানকে দেখার জন্য আসলেন। লোকটি খুবই দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি আল্লাহর কাছে কোন দো‘আ করেছিলে বা কিছু চেয়েছিলে’? সে বলল, হ্যাঁ, আমি দো‘আ করতাম,

اَللَّهُمَّ مَا كُنْتَ مُعَاقِبِي بِهِ فِي الْآخِرَةِ، فَعَجِّلْهُ لِي فِي الدُّنْيَا-​

‘হে আল্লাহ! আপনি যদি আখেরাতে আমাকে ক্ষমা না করেন তাহ’লে দুনিয়াতেই আমাকে শাস্তি দিন’। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সুবহানাল্লাহ! তুমি তা বরদাশ্ত করতে পারবে না বা সহ্য করতে পারবে না। বরং তুমি এ রকম প্রার্থনা কেন করলে না যে,

اَللَّهُمَّ آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ-​

‘হে আল্লাহ! দুনিয়াতে আমাদের কল্যাণ দাও এবং কল্যাণ দাও আখেরাতে। আর জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের মুক্ত রাখ’। এরপর সে আল্লাহর কাছে এ দো‘আ করল। ফলে আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দিলেন’।[4]

৫. দো‘আয় অসম্ভব কিছু কামনা করা : দো‘আয় আল্লাহর নিকট এমন কিছু চাওয়া, যা পাওয়া আদৌ সম্ভব নয়। যেমন দুনিয়ায় চিরস্থায়ী হওয়ার দো‘আ করা অথবা নবুঅত প্রাপ্তির দো‘আ করা। কোন প্রিয় ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার জীবিত হওয়ার দো‘আ, দুনিয়ায় আল্লাহকে দেখার আকাঙ্ক্ষা, সমস্ত মানুষের কর্তৃত্ব লাভ করা, পানাহার ও শ্বাস ছাড়া জীবন ধারণের ইচ্ছা, স্বামী ছাড়া সন্তান কামনা করা, চাষাবাদ ছাড়া ফল পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করা, স্বর্ণের পাহাড় কামনা করা ইত্যাদি। এগুলো চাইলে সে কখনও তা পাবে না। কেননা এগুলো চিরন্তন নিয়মের বহির্ভূত।

৬. পরিবার, সম্পদ ও নিজের জন্য বদদো‘আ করা : ব্যক্তি জীবনের পরতে পরতে নানাবিধ সমস্যা আসতে পারে। সুতরাং কখন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হ’লেও বদদো‘আ করা যাবে না। এক আনছারী ব্যক্তির আরোহণের পালা আসলে সে তার উটটিকে বসিয়ে এর উপর আরোহণ করল এবং তাকে চালাল। চলমান অবস্থায় উটটি তার উপর কিছু ধুলাবালি উড়াল। ফলে সে ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠল ‘আল্লাহ তোমার প্রতি লা‘নত করুন’। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এ লোকটি কে যে তার উষ্ট্রের প্রতি অভিসম্পাত করল? সে বলল, আমি, হে আল্লাহর রাসূল! তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি এর থেকে নেমে যাও! আর অভিশপ্ত উটটি আমাদের সাথে থাকতে পারবে না। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,

لاَ تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ وَلاَ تَدْعُوْا عَلَى أَوْلاَدِكُمْ وَلاَ تَدْعُوْا عَلَى أَمْوَالِكُمْ-​

‘তোমরা নিজেদের ও তোমাদের সন্তানদের উপর বদ দো‘আ করো না এবং নিজের ধন-সম্পদের উপরও না’।[5]

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

لَا تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَوْلَادِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى خَدَمِكُمْ، وَلَا تَدْعُوا عَلَى أَمْوَالِكُمْ لَا تُوَافِقُوا مِنَ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى سَاعَةَ نَيْلٍ فِيهَا عَطَاءٌ، فَيَسْتَجِيبَ لَكُمْ-​

‘তোমরা নিজেদের অভিশাপ দিও না। তোমরা তোমাদের সন্তান-সন্ততিদের অভিশাপ দিও না, তোমরা তোমাদের চাকর-চাকরানীদের বদদো‘আ কর না এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদের প্রতি বদদো‘আ কর না। কেননা এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে যখন দো‘আ (বা বদদো‘আ) করলে তা কবুল হয়ে যায়। কাজেই তোমার ঐ বদদো‘আ যেন ঐ মুহূর্তের সাথে মিলে না যায়’।[6]

৭. পাপ কর্ম ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দো‘আ করা : যেমন মদ পান করার জন্য দো‘আ করা। অথবা এটা বলা যে, সে যেন কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে অথবা যেনায় লিপ্ত হওয়ার দো‘আ। অথবা খুব সহজে অন্যায়-পাপাচার করার জন্য দো‘আ করা। এধরনের পাপ কাজের জন্য দো‘আ করা মারাত্মক গর্হিত কাজ।

অনুরূপভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা অতি বড় গুনাহের কাজ। অনেকেই এহেন গর্হিত কাজ করে থাকে। যেমন কেউ কেউ আত্মীয়দের থেকে পৃথক হওয়ার জন্য দো‘আ করে অথবা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিভেদ তৈরীর দো‘আ করে। এমন দো‘আ করলে আল্লাহ তা‘আলা কবুল করবেন না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

لاَ يَزَالُ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ-​

‘বান্দার দো‘আ সর্বদা কবুল করা হয় যদি না সে পাপ কর্মের জন্য কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য দো‘আ করে’।[7]

৮. দো‘আয় তাড়াহুড়া করা : আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন, মুমিন ব্যক্তি মাত্রই আল্লাহর দিকে মুখ করে তার কাছে কিছু প্রার্থনা করলে এবং (ফল লাভে) তাড়াহুড়া না করলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা দান করেন’। হয় তা তিনি তাকে দুনিয়াতে অবিলম্বে দান করেন অথবা তার আখেরাতের জীবনের জন্য তা সঞ্চিত রাখেন। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তার তাড়াহুড়া কিরূপ? তিনি বলেন, সে বলে, আমি তো দো‘আর পর দো‘আ করতে থাকলাম, কিন্তু তা কবুল হ’তে দেখছি না’।[8] এরূপ বলা বা চিন্তা করা মারাত্মক ভুল।

৯. রহমতকে সংকুচিত করা : অনেকে বলে, হে আল্লাহ! আপনি শুধুমাত্র আমাদের এলাকায় বৃষ্টিবর্ষণ করুন অথবা হে আল্লাহ! আপনি শুধুমাত্র আমাকেই সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ! আপনি শুধুমাত্র আমাকে রিযিক দিন ইত্যাদি। এমন দো‘আ করতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিষেধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একবার সালাতে দাঁড়ান। আমরাও তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলাম। এ সময় এক বেদুঈন সালাতের মধ্যে থেকেই বলে উঠল,

اللَّهُمَّ ارْحَمْنِى وَمُحَمَّدًا، وَلاَ تَرْحَمْ مَعَنَا أَحَدًا-​

‘হে আল্লাহ! আমার ও মুহাম্মাদের উপর রহম করুন এবং আমাদের সাথে আর কারো প্রতি রহম করবেন না’। নবী করীম (ﷺ) সালাম ফিরানোর পর বেদুঈন লোকটিকে বললেন, তুমি একটি প্রশস্ত জিনিসকে অর্থাৎ আল্লাহর রহমতকে সংকুচিত করেছ’।[9]

১০. দো‘আর আদব পরিত্যাগ করা : দো‘আ কবুল হওয়ার যেসব আদব রয়েছে সেগুলো পরিত্যাগ করা। দো‘আ করার সময় আল্লাহর সাথে সম্বন্ধযুক্ত করা। যেমন হে সাপ, বিচ্ছু, গাধার প্রতিপালক! ইত্যাদি এ ধরনের শব্দ চয়ন করা।

খাত্ত্বাবী বলেন, এটা বলা কখনই যুক্তিযু্ক্ত হবে না হে কুকুরের প্রতিপালক! হে বানর ও শূকরের প্রতিপালক! এধরনের নিম্ন শ্রেণীর প্রাণী ও যমীনের কীট-পতঙ্গ দ্বারা দো‘আয় আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ করা। যদিও সকল কিছু মহান আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন’।[10]

১১. দো‘আ কবুলের ক্ষেত্রে অন্যের উপর ভরসা করা : এমন অনেক মানুষ আছে যারা নিজেদের পাপ ক্ষমার জন্য স্বয়ং আল্লাহর কাছে দো‘আ না করে পীর-ফকীরদের দারস্থ হয়। কখনও মৃত পিতা-মাতার জন্য আলেম-ওলামার দ্বারা দো‘আ করিয়ে নেয়। অথচ পিতা-মাতার কবরে নেকী পৌঁছানোর জন্য কোন আলেম-ওলামা নয় বরং তার দো‘আই পিতা-মাতার কবরে পৌঁছবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় তিন প্রকার আমল ছাড়া। ১. ছাদাক্বায়ে জারিয়া ২. এমন ইলম যার দ্বারা উপকার হয় ৩. পুণ্যবান সন্তান যে তার জন্যে দো‘আ করতে থাকে’।[11]

আর একজন পূর্ণ মুমিনের বৈশিষ্ট্য হ’ল ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় কোন অপরাধ হয়ে গেলে সাথে সাথে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। যেমনটি রাসূল (ﷺ) আয়েশা (রাঃ)-কে বলেন, আর যদি তুমি কোন গুনাহে লিপ্ত হয়ে থাক, তাহ’লে আল্লাহর নিকট তওবা ও ইসতিগফার কর। কেননা

إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ بِذَنْبِهِ ثُمَّ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ​

‘বান্দা নিজের পাপ স্বীকার করে তওবা করলে আল্লাহ তওবা কবূল করেন’।[12]

১২. দো‘আয় মৃত্যু কামনা করা : যখন বিপদ কঠিন হয় তখন মানুষ অধিক ব্যথাতুর হয়ে পড়ে। এমনকি মৃত্যু কামনা করে থাকে। এটা মারত্মক ভুল। কায়স (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, খাববাব (রাঃ) তার পেটে যালেম কর্তৃক সাতটি উত্তপ্ত লোহার দাগ দেওয়ার পর আমি তাঁকে বলতে শুনেছি যে,

لَوْلاَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَانَا أَنْ نَدْعُوَ بِالْمَوْتِ لَدَعَوْتُ بِهِ-​

‘যদি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মৃত্যু কামনা করা নিষিদ্ধ না করতেন, তাহ’লে আমি মৃত্যু কামনা করতাম’।[13]

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

لَا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ لِضُرٍّ نَزَلَ بِهِ، فَإِنْ كَانَ لَا بُدَّ مُتَمَنِّيًا فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي-​

‘তোমাদের কেউ কোন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা করবে না। আর যদি কেউ এমন অবস্থায় পতিত হয় যে, তাকে মৃত্যু কামনা করতেই হয় তবে সে (মৃত্যু কামনা না করে) বলবে, হে আল্লাহ! যতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকা আমার জন্য মঙ্গলজনক হয় ততদিন আমাকে জীবিত রাখ, আর যখন আমার জন্য মৃত্যু মঙ্গলজনক হয় তখন আমার মৃত্যু দাও’।[14]

আব্দুর রহমান ইবনু সা‘দী (রহঃ) এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, মৃত্যু কামনা করা নিষেধ। কোন ব্যক্তি বিপদে, অসুস্থ অবস্থায়, দরিদ্রতায়, ভীতিকর পরিস্থিতিতে, বা এ ধরনের কোন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হ’লে মৃত্যু কামনা করা সম্পূর্ণ গর্হিত কাজ। কারণ এটা সে করে থাকে ক্রোধ ও অসন্তোষ নিয়ে। বরং তার উচিত ধৈর্যের সাথে স্বীয় কর্মে টিকে থাকা। আর এই ধৈর্য তার উপকারে আসবে’।[15]

১৩. দো‘আয় নির্দিষ্ট ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা : দো‘আয় শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে খাছ করা ঠিক নয়। যেমন হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমা কর আমাকে, আমার পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, মামা-খালা, চাচা-ফুফুদেরকে। বরং উত্তম হ’ত এভাবে দো‘আ করা যে, হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমা করুন আমাদেরকে, আমাদের ভাই ও প্রিয়জনদেরকে, আত্মীয় স্বজনদেরকে। হে আল্লাহ! আপনি সমস্ত মুসলিম নর-নারীকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনার রহমত প্রশস্ত। কেননা মহান আল্লাহ মুমিন নর-নারীদের সকলকেই দো‘আয় অন্তর্ভুক্ত করতে পবিত্র কুরআনে বলেন,

وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ-​

‘আর তোমার ত্রুটির জন্য ও মুমিন নর-নারীদের ত্রুটির জন্য তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)

নূহ (আঃ)-এর দো‘আতে যেমনটি উল্লেখ রয়েছে,

رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِيْنَ إِلَّا تَبَارًا-​

‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে, আর যারা মুমিন হয়ে আমার বাড়ীতে প্রবেশ করে তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা কর। আর তুমি যালেমদের ধবংস ছাড়া কিছুই বৃদ্ধি করো না’ (নূহ ৭১/২৮)

দো‘আ কবুলে দেরী হ’লে করণীয়

দো‘আ কবুলে বিলম্ব হ’লে মনের মধ্যে কোন সংশয় রাখা যাবে না। আর শয়তানের কুমন্ত্রণার ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যদি দো‘আকারী গভীরভাবে চিন্তা করে তাহ’লে দো‘আ কবুল দেরীতে হওয়ার ক্ষেত্রে নিজেকে দোদুল্যমান রাখবে না। নিম্নে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হ’ল যা একজন পাঠকের চিন্তাশক্তি ও দো‘আ সুন্দর করবে।

১. ধৈর্য ধারণ করা : মহান আল্লাহ বলেন,

وَنَبْلُوكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ،​

‘আর আমরা তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমাদের কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’ (আম্বিয়া ২১/৩৫)

কল্যাণ দ্বারা পরীক্ষিত হ’লে শুকরিয়া জ্ঞাপন করা এবং মুছীবত দ্বারা পরীক্ষিত হ’লে ধৈর্যধারণ করা মমিনের কর্তব্য। সুতরাং বিপদের সময় দীর্ঘ হ’লে সাবধান থাকা এবং অধিক পরিমাণে দো‘আ করা উচিত। এটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ধৈর্যশীল মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন,

عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لِأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَّهُ، وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَّهُ-​

‘মুমিনের ব্যাপারটি বড়ই বিস্ময়কর। তার সমস্ত বিষয়টিই কল্যাণময়। মুমিন ব্যতীত আর কারো জন্য এরূপ নেই। যখন তাকে কল্যাণ স্পর্শ করে, তখন সে শুকরিয়া আদায় করে। ফলে এটা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যখন তাকে অকল্যাণ স্পর্শ করে, তখন সে ছবর করে। ফলে এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়’।[16]

২. দো‘আ দেরীতে কবুল হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা : দো‘আকারীর ভুলের কারণে কখনো দো‘আ কবুল হয় না। দো‘আর সময় সে সন্দেহপূর্ণ খাবার খেত অথবা দো‘আর সময় তার অন্তর অমনোযোগী ছিল। কিংবা সে নিষিদ্ধ পাপাচারে জড়িত ছিল। ফলে দো‘আ কবুল হ’তে দেরী হ’লে নিজের মধ্যে অনুসন্ধান করতে হবে কেন দো‘আ কবুল হচ্ছে না? সেজন্য লক্ষ্য রাখতে হবে আল্লাহর সাথে তার অবস্থা কি?

৩. পাপ বর্জন করা : কোন ব্যক্তি যদি তাক্বওয়া অবলম্বন করে তাহ’লে সে তার চাওয়া অনুযায়ী প্রাপ্ত হবে। একমাত্র পাপই তার দো‘আ কবুলের পথে অন্তরায়। জেনে রাখা আবশ্যক যে, তাক্বওয়া প্রশান্তির কারণ যা সমস্ত কল্যাণ উন্মুক্ত করে। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا، وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ،​

‘বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন। আর তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক প্রদান করে থাকেন’ (তাহরীম ৬৫/২-৩)
অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا​

‘বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য কর্ম সহজ করে দেন’ (তাহরীম ৬৫/৪)

৪. আল্লাহ রাজাধিরাজ : আল্লাহ কাকে দিবেন আর কাকে বঞ্চিত করবেন, এটা তার ইচ্ছাধীন। তাঁর অনুগ্রহে কোন বাধাদানকারী নেই এবং তাঁর হুকুমের পর্যালোচনাকারীও কেউ নেই। তাঁর দান-দক্ষিণায় কেউ প্রতিরোধকারী নেই। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِمَا يُرِيدُ،​

‘নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক যা চান তা-ই করে থাকেন’ (হূদ ১১/১০৬)

তিনি কাউকে দিলে সে অনুগ্রহ প্রাপ্ত আর কেউ প্রাপ্ত না হ’লেও তিনি ইনছাফকারী। কেননা আল্লাহ বলেন,

وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ،​

‘বস্ত্ততঃ তোমার প্রতিপালক তার বান্দাদের উপর অত্যাচারী নন’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৪৬)

ইবনু নাছিরুদ্দীন দিমাশকী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর আদেশ ও ফায়ছালা থেকে কারও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া উচিত নয়। তার পূর্ণাঙ্গ হুকুম মানার ক্ষেত্রে বা পরীক্ষার সময় তাকে উপেক্ষা করারও কোন সুযোগ নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্যই সমস্ত রাজত্ব ও আনুগত্য। তিনি আমাদের পরিচালনা করেন যেভাবে তিনি চান’।[17] এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর নিকটে দো‘আ অব্যাহত রাখতে হবে।

৫. আল্লাহ পরিপূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী : তিনি কাউকে কিছু দিলে সেটা যেমন হিকমতপূর্ণ। আর কাউকে বঞ্চিত রাখলে তাও হিকমতপূর্ণ। সুতরাং অদৃশ্য হিকমতের অপক্ষোয় আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হ’তে হবে। কেননা মহান আল্লাহ বলেন,

وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ-​

‘আর অবশ্যই তোমরা এমন বহু কিছু অপসন্দ কর, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর অবশ্যই এমন বহু কিছু পসন্দ কর, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। প্রকৃত প্রস্তাবে আল্লাহ সবকিছু জানেন, কিন্তু তোমরা জানো না’ (বাক্বারাহ ২/২১৬)

৬. বান্দার জন্য আল্লাহর পসন্দ তার নিজের পসন্দের চেয়ে উত্তম : এটা গোপন বিষয় যা আল্লাহকে ডাকার সময় বান্দাকে মনোযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে উপযোগী করে তোলে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা শ্রেষ্ঠ বিচারক ও পরম দয়ালু। বান্দার জন্য কোনটা কল্যাণকর তিনিই অধিক জ্ঞাত। আর তিনি অধিক দয়াশীল তার স্বীয় ব্যক্তি জীবনের চেয়ে, এমনকি তার পিতা-মাতার চেয়েও। যখন তার উপর এমন কিছু নাযিল হয় যা সে অপসন্দ করে সেটাই তার জন্য কল্যাণকর। এটা আল্লাহ করে থাকেন বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে এবং তাদের উপর দয়া স্বরূপ।

সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) বলেন, তাকে না দেওয়াটাও একটা দান। এটা এজন্য যে তিনি তাকে কৃপণতা ও অন্য খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেন। মূলতঃ তিনি বান্দার কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রাখেন। অতঃপর তাকে না দেওয়াটাও কল্যাণকর বিষয়’।[18]

৭. মানুষ তার কাজের ফলাফল সম্পর্কে অজ্ঞাত : সে এমন কিছু চায় যা তার উপযোগী নয় বরং তার জন্য ক্ষতিকর। এর উদাহরণ ঐ উত্তেজিত শিশুর ন্যায় যে মিষ্টান্ন চায় অথচ সেটা তার জন্য ক্ষতিকর। সুতরাং মানুষের জন্য কোনটা কল্যাণকর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত। মহান আল্লাহ বলেন,

وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ،​

‘তোমরা এমন বহু কিছু অপসন্দ কর, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর’ (বাক্বারাহ ২/২১৬)

৮. মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত পূর্ণ করা : আল্লাহ চান তাঁর বান্দারা মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত পূর্ণ করুক। তিনি তাদের বিভিন্ন রকমের মুছীবত দ্বারা পরীক্ষা করেন। কখনো দেরীতে দো‘আ কবুলের মাধ্যমেও। যাতে তাঁর বান্দারা দো‘আ নামক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের পূর্ণতার উচ্চ শিখরে পৌঁছতে পারে। কেননা যথাযোগ্য ইবাদতেই বান্দার মর্যাদা পূর্ণ হয়। সুতরাং যখন একজন বান্দা যথাযোগ্য ইবাদত বৃদ্ধি করে তখন তার পূর্ণতাও বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। সাথে সাথে তার মর্যাদাও বেশী হয়’।[19] ফলে দো‘আ কবুল হ’তে দেরী হ’লে আল্লাহর উপর ভরসা করে উত্তম কিছু পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তাহ’লে ভাল কিছুই অর্জন হবে।

৯. প্রিয় ব্যক্তিদের নিকট কষ্ট আসে : আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের দুনিয়ায় কষ্টের সম্মুখীন করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

إِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبْدِهِ الْخَيْرَ عَجَّلَ لَهُ الْعُقُوبَةَ فِى الدُّنْيَا وَإِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبْدِهِ الشَّرَّ أَمْسَكَ عَنْهُ بِذَنْبِهِ حَتَّى يُوَفَّى بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَإِنَّ اللهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ فَمَنْ رَضِىَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ-​

‘আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁর কোন বান্দার মঙ্গল সাধনের ইচ্ছা করেন তখন দুনিয়ায় তাকে অতি তাড়াতাড়ি বিপদাপদের সম্মুখীন

করেন। আর যখন তিনি কোন বান্দার অকল্যাণের ইচ্ছা করেন তখন তার গুনাহের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। অবশেষে ক্বিয়ামতের দিন তাকে এর পরিপূর্ণ শাস্তি প্রদান করেন। আর আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন সম্প্রদায়কে ভালবাসেন তখন তাদের তিনি পরীক্ষায় ফেলেন। যে তাতে সন্তুষ্ট থাকে তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি থাকে। আর যে তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি থাকে’।[20]

সুতরাং বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করতে হবে। কেননা তিনিই একমাত্র জানেন বান্দার কল্যাণ কোথায়। মহান আল্লাহ বলেন,

فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا-​

‘যদি তোমরা তাদের অপসন্দ কর, (তবে হ’তে পারে) তোমরা এমন বস্ত্তকে অপসন্দ করছ, যার মধ্যে আল্লাহ প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন’ (নিসা ৪/১৯)

পরিশেষে বলব, দো‘আ করে কখনও নিরাশ হওয়া যাবে না। বরং দো‘আ কবুল হোক বা না হোক, আল্লাহর নিকট দো‘আ অব্যাহত রাখতে হবে এবং রাসূল (ﷺ)-এর নিম্নোক্ত হাদীসটি স্মরণ রাখতে হবে। যেখানে তিনি বলেছেন, কোন মুসলিম দো‘আ করার সময় কোন গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দো‘আ না করলে অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা তাকে এ তিনটির একটি দান করেন। (১) হয়তো তাকে তার কাঙ্ক্ষিত বস্ত্ত দুনিয়ায় দান করেন, অথবা (২) তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন অথবা (৩) তার কোন অকল্যাণ বা বিপদাপদকে তার থেকে দূর করে দেন’।[21] আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রত্যেককে কবুলযোগ্য দো‘আ করার তওফীক দান করুন-আমীন!


[1]. হাকেম হা/১৮০৫; সহীহাহ হা/১৫৭৯; সহীহুল জামে‘ হা/১১২২।
[2]. বুখারী হা/৪৪৭৭; মুসলিম হা/৮৬; আবু দাঊদ হা/২৩১০।
[3]. ইবনু তায়মিয়া, আত-তাওয়াসসুল ওয়াল অসীলা, ১৬০, ১৭০ পৃ.।
[4]. মুসলিম হা/২৬৮৮; আহমাদ হা/১২০৬৮; মিশকাত হা/২৫০২।
[5]. মুসলিম হা/৩০০৯; সহীহ ইবনু হিববান হা/৫৭৪২; সহীহুল জামে‘ হা/৬৫৮২।
[6]. আবু দাঊদ হা/১৫৩২; সহীহুত তারগীব হা/১৬৫৪।
[7]. মুসলিম হা/২৭৩৫; ইবনু হিববান হা/৮৮১; সহীহুত তারগীব হা/১৬৪৯; মিশকাত হা/২২২৭।
[8]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৭১১; হাকেম হা/১৮২৯।
[9]. বুখারী হা/৬০১০; আবু দাঊদ হা/৩৮০; নাসাঈ হা/১২১৬; আহমাদ হা/৭৭৮৯।
[10]. শা’নুদ দো‘আ ১৫৩ পৃ.।
[11]. মুসলিম হা/১৬৩১; মিশকাত হা/২০৩।
[12]. বুখারী হা/২৬৬১; সহীহাহ হা/২৫০৭।
[13]. বুখারী হা/৬৩৪৯; আদাবুল মুফরাদ হা/৬৮৭।
[14]. বুখারী হা/৫৬৭১; মিশকাত হা/১৬০০।
[15]. বাহযাতু কুলূবিল আবরাজ ৫৫১-২৫২ নং হাদীসে ব্যাখ্যায়।
[16]. মুসলিম হা/২৯৯৯; মিশকাত হা/৫২৯৭।
[17]. বারদুল আকবাদ ইন্দা ফাকদিল আওলাদ, ৩৮ পৃ.।
[18]. মাদারিজুস সালিকীন ২/২১৫ পৃ.।
[19]. উবুদিয়াত লি ইবনু তাইমিয়াহ ৮০ পৃ.।
[20]. তিরমিযী হা/২৩৯৬; সহীহাহ হা/১২২০; মিশকাত হা/১৫৬৫।
[21]
. আহমাদ হা/১১১৪৯; সহীহুত তারগীব হা/১৬৩৩; মিশকাত হা/২২৫৯।


সূত্র: আত-তাহরীক।​
 
Last edited:
COMMENTS ARE BELOW

Share this page