প্রশ্ন: এক জায়গায় দেখলাম যে, দু জন মানুষ সাক্ষাতের পর বিদায় নেয়ার সময় সূরা আসর পাঠ করার পর সালাম দিয়ে বিদায় নিতে হয়। সাহাবীগণ এমনটি করতেন। এটি কি সঠিক?
উত্তর: সাধারণভাবে দু বা ততোধিক মানুষ যদি কোথাও বৈঠক করে তাহলে বৈঠক শেষে নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা এসেছে এবং তার ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
আবু বারযাহ আল-আসলামী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন বলতেন:
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
উচ্চারণ: “সুবাহানকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা”।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসা সহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আপনি ছাড়া প্রকৃত ইলাহ নেই। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকট তওবা করছি।
তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এখন আপনি যে বাক্য পাঠ করলেন তা তো ইতোপূর্বে আপনি পাঠ করেন নি? তিনি বললেন, বৈঠকে যা কিছু (ভুল-ত্রুটি) হয়ে থাকে একথাগুলো তার কাফফারা গণ্য হবে।" (সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: শিষ্টাচার, অনুচ্ছেদ: মজলিসের কাফফারা সম্পর্কে, হা/৪৮৫৯, সনদ সহীহ)
তাছাড়া যে বৈঠক ও সভায় আল্লাহর যিকির হয় না বা আল্লাহর কথা আলোচনা করা হয় না তার ব্যাপারে নিন্দাবাদ বর্ণিত হয়েছে। যেমন: আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ قَوْمٍ يَقُومُونَ مِنْ مَجْلِسٍ لاَ يَذْكُرُونَ الله تَعَالَى فِيهِ، إِلاَّ قَامُوا عَنْ مِثْل جِيفَةِ حِمَارٍ، وَكَانَ لَهُمْ حَسْرَةٌ
‘‘যে জনগোষ্ঠীই কোন বৈঠক/সভা থেকে, তাতে আল্লাহর যিকির না করেই উঠে যায়, আসলে তারা যেন মরা গাধা থেকে উঠে যায়। (অর্থাৎ তারা যেন মৃত গাধার গোশত ভক্ষণ করে উঠে চলে যায়)। আর এটি তাদের জন্য অনুতাপের বিষয় হবে।’’ (আবু দাউদ- সহীহ সূত্রে, হা/৮৩৯)
অন্য হাদিসে বৈঠকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশনা বর্ণিত হয়েছে।
সূরা আসর পাঠ:
দু জন ব্যক্তি দেখা-সাক্ষাৎ করার পর উভয়ে পৃথক হওয়ার পূর্বে সূরা আসর তিলাওয়াত করে পরস্পর পরস্পরকে ঈমান, নেককাজ, দাওয়াত এবং সবরের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন বলে সাহাবীদের পক্ষ থেকে আমল পাওয়া যায়। যেমন নিম্নোক্ত আসারটি।:
فعَنْ أَبِي مَدِينَةَ الدَّارِمِيِّ قَالَ : ( كَانَ الرَّجُلانِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا الْتَقَيَا لَمْ يَفْتَرِقَا حَتَّى يَقْرَأَ أَحَدُهُمَا عَلَى الآخَرِ : " وَالْعَصْرِ إِنَّ الإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ " ، ثُمَّ يُسَلِّمَ أَحَدُهُمَا عَلَى الآخَرِ
আবু মদিনা আদ দারেমী রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দু জন সাহাবী একত্রিত হলে একে অপরের নিকট সূরা আসর তিলাওয়াত করার পূর্বে পৃথক হতেন না। وَالْعَصْرِ إِنَّ الإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ অর্থ: সময়ের কসম, নিশ্চয়, সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে.....।
অত:পর তারা একে অপরকে সালাম দিয়ে বিদায় নিতেন।" (বায়হাকী, ত্ববারানী, আবুদাউদ যুহদ কিতাবে। শাইখ আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬৪৮)
শাইখ আলবানী রহ বলেন, এ হাদিস থেকে দুটি শিক্ষা পাওয়া যায়। যথা:
১) পৃথক হওয়ার সময় সালাম দেয়া।
২) সূরা আসর তিলাওয়াত করা।"
(সিলসিলা সহীহাহ ২৬৪৮)
যদিও বর্তমানে এ সুন্নতটি আমাদের সমাজে প্রায় পরিত্যক্ত! অবশ্য কেউ কেউ এটিকে বিদআত বলতে চেয়েছেন। কিন্তু হয়ত তারা উক্ত আসার বা সাহাবীদের আমল সম্পর্কে জানতেন না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য যে, এটি মারফু হাদিস নয় বরং মাউকূফ। অর্থাৎ আসারটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিস নয় বরং সাহাবীদের আমল। কিন্তু তারপরও বলব, সাহাবীগণ অবশ্যই নিজেদের পক্ষ থেকে কোনো আমল আবিষ্কার করে নি। হয়ত তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা অবশ্যই পেয়েছেন। কারণ তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণে ছিলেন সবচেয়ে অগ্রগামী এবং বিদআত থেকে সর্বাধিক দূরে অবস্থানকারী।
কিন্তু বুঝা যাচ্ছে, এ আমলটি সাহাবীদের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল না। থাকলে এ সম্পর্কে আরও অন্যান্য হাদিস পাওয়া যেত বা মারফূ সূত্রে সরাসরি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদিস বর্ণিত হত।
সুতরাং আমরা যদি মাঝেমধ্যে উক্ত আসার অনুযায়ী দু জন ব্যক্তির সাক্ষাতের পর বিদায়ের প্রাক্কালে সূরা আসর তিলাওয়াত করে একে অপরকে এ সূরার সারমর্ম তথা ঈমান, আমলে সালেহ (সৎকর্ম), দাওয়াহ, সবর ইত্যাদি বিষয়গুলো পরস্পরকে স্মরণ করে দেই তাহলে তা নি:সন্দেহে উত্তম হবে। আল্লাহু আলাম।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
উত্তর প্রদানে : আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
উত্তর: সাধারণভাবে দু বা ততোধিক মানুষ যদি কোথাও বৈঠক করে তাহলে বৈঠক শেষে নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা এসেছে এবং তার ফযিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
আবু বারযাহ আল-আসলামী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোন বৈঠক শেষ করে চলে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন বলতেন:
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
উচ্চারণ: “সুবাহানকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা”।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসা সহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আপনি ছাড়া প্রকৃত ইলাহ নেই। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকট তওবা করছি।
তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এখন আপনি যে বাক্য পাঠ করলেন তা তো ইতোপূর্বে আপনি পাঠ করেন নি? তিনি বললেন, বৈঠকে যা কিছু (ভুল-ত্রুটি) হয়ে থাকে একথাগুলো তার কাফফারা গণ্য হবে।" (সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: শিষ্টাচার, অনুচ্ছেদ: মজলিসের কাফফারা সম্পর্কে, হা/৪৮৫৯, সনদ সহীহ)
তাছাড়া যে বৈঠক ও সভায় আল্লাহর যিকির হয় না বা আল্লাহর কথা আলোচনা করা হয় না তার ব্যাপারে নিন্দাবাদ বর্ণিত হয়েছে। যেমন: আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ قَوْمٍ يَقُومُونَ مِنْ مَجْلِسٍ لاَ يَذْكُرُونَ الله تَعَالَى فِيهِ، إِلاَّ قَامُوا عَنْ مِثْل جِيفَةِ حِمَارٍ، وَكَانَ لَهُمْ حَسْرَةٌ
‘‘যে জনগোষ্ঠীই কোন বৈঠক/সভা থেকে, তাতে আল্লাহর যিকির না করেই উঠে যায়, আসলে তারা যেন মরা গাধা থেকে উঠে যায়। (অর্থাৎ তারা যেন মৃত গাধার গোশত ভক্ষণ করে উঠে চলে যায়)। আর এটি তাদের জন্য অনুতাপের বিষয় হবে।’’ (আবু দাউদ- সহীহ সূত্রে, হা/৮৩৯)
অন্য হাদিসে বৈঠকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশনা বর্ণিত হয়েছে।
সূরা আসর পাঠ:
দু জন ব্যক্তি দেখা-সাক্ষাৎ করার পর উভয়ে পৃথক হওয়ার পূর্বে সূরা আসর তিলাওয়াত করে পরস্পর পরস্পরকে ঈমান, নেককাজ, দাওয়াত এবং সবরের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন বলে সাহাবীদের পক্ষ থেকে আমল পাওয়া যায়। যেমন নিম্নোক্ত আসারটি।:
فعَنْ أَبِي مَدِينَةَ الدَّارِمِيِّ قَالَ : ( كَانَ الرَّجُلانِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا الْتَقَيَا لَمْ يَفْتَرِقَا حَتَّى يَقْرَأَ أَحَدُهُمَا عَلَى الآخَرِ : " وَالْعَصْرِ إِنَّ الإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ " ، ثُمَّ يُسَلِّمَ أَحَدُهُمَا عَلَى الآخَرِ
আবু মদিনা আদ দারেমী রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দু জন সাহাবী একত্রিত হলে একে অপরের নিকট সূরা আসর তিলাওয়াত করার পূর্বে পৃথক হতেন না। وَالْعَصْرِ إِنَّ الإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ অর্থ: সময়ের কসম, নিশ্চয়, সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে.....।
অত:পর তারা একে অপরকে সালাম দিয়ে বিদায় নিতেন।" (বায়হাকী, ত্ববারানী, আবুদাউদ যুহদ কিতাবে। শাইখ আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলা সহীহাহ, হা/২৬৪৮)
শাইখ আলবানী রহ বলেন, এ হাদিস থেকে দুটি শিক্ষা পাওয়া যায়। যথা:
১) পৃথক হওয়ার সময় সালাম দেয়া।
২) সূরা আসর তিলাওয়াত করা।"
(সিলসিলা সহীহাহ ২৬৪৮)
যদিও বর্তমানে এ সুন্নতটি আমাদের সমাজে প্রায় পরিত্যক্ত! অবশ্য কেউ কেউ এটিকে বিদআত বলতে চেয়েছেন। কিন্তু হয়ত তারা উক্ত আসার বা সাহাবীদের আমল সম্পর্কে জানতেন না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য যে, এটি মারফু হাদিস নয় বরং মাউকূফ। অর্থাৎ আসারটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিস নয় বরং সাহাবীদের আমল। কিন্তু তারপরও বলব, সাহাবীগণ অবশ্যই নিজেদের পক্ষ থেকে কোনো আমল আবিষ্কার করে নি। হয়ত তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা অবশ্যই পেয়েছেন। কারণ তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণে ছিলেন সবচেয়ে অগ্রগামী এবং বিদআত থেকে সর্বাধিক দূরে অবস্থানকারী।
কিন্তু বুঝা যাচ্ছে, এ আমলটি সাহাবীদের মাঝে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল না। থাকলে এ সম্পর্কে আরও অন্যান্য হাদিস পাওয়া যেত বা মারফূ সূত্রে সরাসরি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদিস বর্ণিত হত।
সুতরাং আমরা যদি মাঝেমধ্যে উক্ত আসার অনুযায়ী দু জন ব্যক্তির সাক্ষাতের পর বিদায়ের প্রাক্কালে সূরা আসর তিলাওয়াত করে একে অপরকে এ সূরার সারমর্ম তথা ঈমান, আমলে সালেহ (সৎকর্ম), দাওয়াহ, সবর ইত্যাদি বিষয়গুলো পরস্পরকে স্মরণ করে দেই তাহলে তা নি:সন্দেহে উত্তম হবে। আল্লাহু আলাম।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
উত্তর প্রদানে : আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল