দুআ, যিকির ও ঝাড়ফুঁক সকাল-সন্ধ্যার দু‘আর সময়কাল কখন ফজর ও মাগরিবের পর, না-কি ফজর ও আছর ছালাতের পর?

Golam Rabby

Knowledge Sharer

ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Top Active User
Joined
Jan 3, 2023
Threads
983
Comments
1,169
Solutions
1
Reactions
10,758
উত্তর : সকাল ও সন্ধ্যার যিকিরের সময় নির্ধারণকে কেন্দ্র করে কিছুটা মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। কেননা এ বিষয়ে বর্ণিত আয়াতসমূহের ভাষা ভিন্ন ভিন্ন। এখানে প্রসিদ্ধ মতামত উল্লেখ করা হল। যথা : প্রথম উক্তি : শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম, শায়খ মুহাম্মাদ আস-সাফ্ফারিনী, শায়খ উছাইমীন, শায়খ বাকর আবূ যায়দ ও শায়খ ছিদ্দীক্ব হাসান খান (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, ‘সকালের সময় হল, ফজর উদিত হওয়া থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। আর সন্ধ্যার সময় হল, আছরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত’ (আল-কালিমুত্ব-ত্বাইয়িব, পৃ. ৩০ পৃ.; আল-ওয়াবিলুছ ছাইয়িব, পৃ. ১২০; গিযাউল আলবাব, ২/৩৬৮ পৃ.; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ র্দাব লিইবনি উছাইমীন, ১২/২০৪-২০৫ পৃ.; তাছহীহুদ দু‘আ, পৃ. ৩৩৭; নুযলুল আবরার, পৃ. ১০৩-১১৩)। তাঁরা আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণীকে দলীল হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহ বলেন, وَ اذۡکُرۡ رَّبَّکَ کَثِیۡرًا وَّ سَبِّحۡ بِالۡعَشِیِّ وَ الۡاِبۡکَارِ ‘আর আপনি আপনার প্রতিপালককে অত্যধিক স্মরণ করুন এবং সন্ধ্যায় ও প্রভাতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন’ (সূরা আলে ইমরান : ৪১; এছাড়া সূরা আল-গাফির : ৫৫; সূরা আল-আন‘আম : ৫২; সূরা আল-কাহ্ফ : ২৮)। উক্ত আয়াতের الۡاِبۡکَارِ বলতে বুঝায় দিনের প্রারম্ভকে। আর الۡعَشِیِّ বলতে বুঝায় সূর্য মধ্যাকাশ থেকে হেলে পড়া থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়কালকে। সুতরাং দু‘আ করার সময় হল, ফজরের ও আছরের ছালাতের পর (তাফরীরুত্ব ত্বাবারী, ৬/৩৯২ পৃ.; আল-আযকার, পৃ. ১০৬; আল-ওয়াবিলুছ ছাইয়িব, পৃ. ১২১; গিযাউল আলবাব, ২/৩৬৮ পৃ.; আত-তাহরীর ওয়াত-তানবীর, ৭/২৪৭ পৃ.)। উল্লেখ্য, এই পক্ষের কিছু আলেম বলেছেন, প্রয়োজনে সময় বাড়ানো যাবে। অর্থাৎ প্রয়োজনে সূর্যোদয় ও মাগরিবের পরও দু‘আ পাঠ করা যাবে (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দ্রাব লিইবনি উছাইমীন, ১২/২০৫ পৃ.)।

দ্বিতীয় উক্তি : শাফিঈ মাযহাবের আলিমগণ বলেন, ‘সকালের সময় হল, ফজর উদিত হওয়া থেকে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢুলে পড়া পর্যন্ত। আর সন্ধ্যার সময় হল, সূর্য ঢুলে পড়ার পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। আর এই মতটিকেই শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) গ্রহণ করেছেন (আল-আযকার, পৃ. ১০৬; রিয়াযুছ ছালিহীন, পৃ. ৩৭৫; আল-মাজমূঊ, ৪/৬৪৭-৬৪৯ পৃ.; দালীলুল ফালিহীন, পৃ.৩৬৪)।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মতপার্থক্যের মূল কারণ হল সকাল ও সন্ধ্যার শুরু ও শেষ সময়কে কেন্দ্র করে। তবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী সকাল বলতে বুঝায়, ফজর উদিত হওয়ার পর থেকে ছালাতুয যোহা আদায়ের শেষ সময়কালকে। আর সন্ধ্যা বলতে বুঝায় আছরের পর থেকে রাত্রীর অন্ধকার অবতরণ করা পর্যন্ত সময়কালকে (আল-ফাতুহাতুর রাব্বানিয়্যাহ, ৩/৭৪ পৃ.)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘সূর্যের রশ্মী প্রখর হওয়ার সময় থেকে নিয়ে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলার পূর্ব পর্যন্ত ছালাতুয যোহা পড়া হয় (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৬/১৫৪ পৃ.)। পরিশেষে প্রথম ও দ্বিতীয় উক্তির সমন্বয়ে আমরা বলব যে, সকাল-সন্ধ্যার যিকিরের সর্বোত্তম সময় হল, ফজরের পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এবং আছরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। তবে প্রয়োজনে সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢুলে পড়া পর্যন্ত এবং মাগরিবের ছালাতের পর থেকে অন্ধকার নেমে আসা পর্যন্ত দু‘আ পাঠ করা জায়েয।

সূত্র: মাসিক আল ইখলাস, মার্চ ২০২২
 
Similar threads Most view View more
Back
Top