শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ কদ্দাসাল্লাহু বূহাহু-কে আমি বলতে শুনেছি, "দুনিয়াতেই রয়েছে জান্নাত । যে দুনিয়ার জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না, সে পরকালের জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না।"
তিনি একবার আমাকে বলেন, আমার শত্রুরা আমার কীইবা করতে পারবে? আমার জান্নাত তো আমার বুকেই। আমি যেখানেই যাই, সেই জান্নাত আমার সাথেই থাকে, আমার থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হয় না। কারাগার আমার ইবাদতের জন্য নির্জন আশ্রয়স্থল। মৃত্যুদন্ড আমার জন্য শাহাদাতের সুযোগ । আর দেশ থেকে নির্বাসন আমার জন্য এক সফর।
কারাবন্দী অবস্থায় তিনি বলতেন, ‘আমি যদি এই কারাগার পরিমাণ স্বর্ণ দান করি তবুও এই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় হবে না।”
অথবা তিনি এ কথা বলেন, ‘কারাগারে বন্দী করে শত্রুরা আমার কল্যাণের যে ব্যবস্থা করেছে, আমি কোনোভাবেই এর প্রতিদান দিতে পারবো না।'
কারাগারে বন্দী অবস্থায় তিনি সাজদায় বলতেন, 'হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তোমার যিকির, শোকর এবং তোমার উত্তম ইবাদত করতে সাহায্য করো'।
তিনি একবার আমাকে বলেন, ‘প্রকৃত বন্দী তো ঐ ব্যক্তি, যার অন্তর রবের যিকির থেকে বন্দী। প্রকৃত কয়েদী তো সেই, যার প্রবৃত্তি তাকে কয়েদ করে ফেলেছে।'
শাইখুল ইসলামকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হলে কারাগারে প্রবেশ করে। কারাগারের চার দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে তিনি এই আয়াত পাঠ করেন,
অতঃপর তাদের মাঝে একটি প্রাচীর স্থাপন করা হবে, যার একটি দরজা। থাকবে। তার ভেতর ভাগে থাকবে রহমত আর বহির্ভাগের সর্বত্র থাকবে। আযাব। (সূরা হাদীদ, আয়াত ১৩)
আমি এমন কাউকে দেখিনি যার জীবন শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহর জীবন থেকে বেশি উত্তম ও প্রশান্ত ছিলো। অথচ বাহ্যিক জীবনোপকরণ ছিলো সংকীর্ণ, তাতে ছিলো না কোনো বিলাসিতা ও প্রাচুর্যতা। এছাড়াও তাকে কারাগার বরণ করতে হয়েছে, শুনতে হয়েছে বিভিন্নরকমের হুমকি-ধুমকি। এতকিছুর পরও তার জীবনপদ্ধতি ছিল সর্বোত্তম, বক্ষ ছিল প্রশস্থ, অন্তর ছিল ইস্পাতের মতো শক্ত, সবসময় আনন্দ লেগে থাকত মনে। চেহারা থেকে সর্বদা আলো ও বিভা ঝরে পড়ত।
যখন আমরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়তাম, আমাদের অন্তরে যখন ওয়াসওয়াসা ও কুধারণা জন্ম নিত, আমাদের জীবন হয়ে উঠত সংকীর্ণ, তখন আমরা তার কাছে ছুটে যেতাম। তাকে দেখা ও তার কথা শোনা মাত্রই রাজ্যের ভয়-ভীতি, ওয়াসওয়াসা, কুধারণা ও সংকীর্ণতা আমাদের থেকে দূর হয়ে যেত। বিন্দু মাত্র তার রেশ থাকত না। আমাদের মাঝে তখন প্রশান্তি, প্রশস্থতা, মনোবল, ইয়াকিন ও প্রফুল্লতা ছড়িয়ে পড়ত।
সেই সত্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যিনি তাঁর সাথে সাক্ষাতের পূর্বে দুনিয়াতেই তার বান্দাকে জান্নাত দেখিয়েছেন এবং দারুল আমালে (আমলের রাজ্য অর্থাৎ দুনিয়া) তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দিয়েছেন। সেই দরজা দিয়ে তার কাছে জান্নাতের স্বাদ, ঘ্রাণ ও মৃদমন্দ বায়ু আসত ।
এক আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি বলেন,
‘আমরা যে সুখ-শান্তি ও আরাম-আয়েশে থাকি, রাজা-বাদশাহ ও রাজপুতেরা যদি কোনোভাবে তা টের পেত, তবে তারা তা ছিনিয়ে নিতে আমাদের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করত।
আরেকজন আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি বলেন,
‘প্রকৃত মিসকীন তো সেই, যে দুনিয়ার উত্তম বস্তু, তৃপ্তি ও স্বাদ আস্বাদন করা ছাড়াই দুনিয়া ত্যাগ করেছে।
তাকে জিজ্ঞেস করা হয়,
‘দুনিয়ার উত্তম বস্তু, তৃপ্তি ও স্বাদ কী?’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহকে ভালোবাসা, তাঁকে ভালোভাবে চেনা ও তাঁর যিকির করা।'
আরেকজন বলেন,
‘কখনো কখনো চিত্ত এমন অবস্থার সম্মুখীন হয় যে, আনন্দে সে নাচতে শুরু করে।”
অন্য আরেকজন বলেন,
‘মাঝেমধ্যে অন্তরে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয় যে, আমি বলে উঠি, জান্নাতীরা যদি এমন অবস্থায় থাকে তবে তারা সুখে আছে।'
- বই: যিকরুল্লাহ (আল ওয়াবিলুস সাইয়্যিব গ্রন্থের অনুবাদ) , লেখক: ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম, অনুবাদক: শাইখ আব্দুল্লাহ মাহমুদ, প্রকাশনায়: আযান প্রকাশনী
তিনি একবার আমাকে বলেন, আমার শত্রুরা আমার কীইবা করতে পারবে? আমার জান্নাত তো আমার বুকেই। আমি যেখানেই যাই, সেই জান্নাত আমার সাথেই থাকে, আমার থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন হয় না। কারাগার আমার ইবাদতের জন্য নির্জন আশ্রয়স্থল। মৃত্যুদন্ড আমার জন্য শাহাদাতের সুযোগ । আর দেশ থেকে নির্বাসন আমার জন্য এক সফর।
কারাবন্দী অবস্থায় তিনি বলতেন, ‘আমি যদি এই কারাগার পরিমাণ স্বর্ণ দান করি তবুও এই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় হবে না।”
অথবা তিনি এ কথা বলেন, ‘কারাগারে বন্দী করে শত্রুরা আমার কল্যাণের যে ব্যবস্থা করেছে, আমি কোনোভাবেই এর প্রতিদান দিতে পারবো না।'
কারাগারে বন্দী অবস্থায় তিনি সাজদায় বলতেন, 'হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তোমার যিকির, শোকর এবং তোমার উত্তম ইবাদত করতে সাহায্য করো'।
তিনি একবার আমাকে বলেন, ‘প্রকৃত বন্দী তো ঐ ব্যক্তি, যার অন্তর রবের যিকির থেকে বন্দী। প্রকৃত কয়েদী তো সেই, যার প্রবৃত্তি তাকে কয়েদ করে ফেলেছে।'
শাইখুল ইসলামকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হলে কারাগারে প্রবেশ করে। কারাগারের চার দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে তিনি এই আয়াত পাঠ করেন,
অতঃপর তাদের মাঝে একটি প্রাচীর স্থাপন করা হবে, যার একটি দরজা। থাকবে। তার ভেতর ভাগে থাকবে রহমত আর বহির্ভাগের সর্বত্র থাকবে। আযাব। (সূরা হাদীদ, আয়াত ১৩)
আমি এমন কাউকে দেখিনি যার জীবন শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহর জীবন থেকে বেশি উত্তম ও প্রশান্ত ছিলো। অথচ বাহ্যিক জীবনোপকরণ ছিলো সংকীর্ণ, তাতে ছিলো না কোনো বিলাসিতা ও প্রাচুর্যতা। এছাড়াও তাকে কারাগার বরণ করতে হয়েছে, শুনতে হয়েছে বিভিন্নরকমের হুমকি-ধুমকি। এতকিছুর পরও তার জীবনপদ্ধতি ছিল সর্বোত্তম, বক্ষ ছিল প্রশস্থ, অন্তর ছিল ইস্পাতের মতো শক্ত, সবসময় আনন্দ লেগে থাকত মনে। চেহারা থেকে সর্বদা আলো ও বিভা ঝরে পড়ত।
যখন আমরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়তাম, আমাদের অন্তরে যখন ওয়াসওয়াসা ও কুধারণা জন্ম নিত, আমাদের জীবন হয়ে উঠত সংকীর্ণ, তখন আমরা তার কাছে ছুটে যেতাম। তাকে দেখা ও তার কথা শোনা মাত্রই রাজ্যের ভয়-ভীতি, ওয়াসওয়াসা, কুধারণা ও সংকীর্ণতা আমাদের থেকে দূর হয়ে যেত। বিন্দু মাত্র তার রেশ থাকত না। আমাদের মাঝে তখন প্রশান্তি, প্রশস্থতা, মনোবল, ইয়াকিন ও প্রফুল্লতা ছড়িয়ে পড়ত।
সেই সত্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যিনি তাঁর সাথে সাক্ষাতের পূর্বে দুনিয়াতেই তার বান্দাকে জান্নাত দেখিয়েছেন এবং দারুল আমালে (আমলের রাজ্য অর্থাৎ দুনিয়া) তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দিয়েছেন। সেই দরজা দিয়ে তার কাছে জান্নাতের স্বাদ, ঘ্রাণ ও মৃদমন্দ বায়ু আসত ।
এক আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি বলেন,
‘আমরা যে সুখ-শান্তি ও আরাম-আয়েশে থাকি, রাজা-বাদশাহ ও রাজপুতেরা যদি কোনোভাবে তা টের পেত, তবে তারা তা ছিনিয়ে নিতে আমাদের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করত।
আরেকজন আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি বলেন,
‘প্রকৃত মিসকীন তো সেই, যে দুনিয়ার উত্তম বস্তু, তৃপ্তি ও স্বাদ আস্বাদন করা ছাড়াই দুনিয়া ত্যাগ করেছে।
তাকে জিজ্ঞেস করা হয়,
‘দুনিয়ার উত্তম বস্তু, তৃপ্তি ও স্বাদ কী?’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহকে ভালোবাসা, তাঁকে ভালোভাবে চেনা ও তাঁর যিকির করা।'
আরেকজন বলেন,
‘কখনো কখনো চিত্ত এমন অবস্থার সম্মুখীন হয় যে, আনন্দে সে নাচতে শুরু করে।”
অন্য আরেকজন বলেন,
‘মাঝেমধ্যে অন্তরে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয় যে, আমি বলে উঠি, জান্নাতীরা যদি এমন অবস্থায় থাকে তবে তারা সুখে আছে।'
- বই: যিকরুল্লাহ (আল ওয়াবিলুস সাইয়্যিব গ্রন্থের অনুবাদ) , লেখক: ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম, অনুবাদক: শাইখ আব্দুল্লাহ মাহমুদ, প্রকাশনায়: আযান প্রকাশনী
Last edited: