প্রবন্ধ জান্নাত ও জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী

Joined
Jan 12, 2023
Threads
827
Comments
1,075
Solutions
19
Reactions
11,892
প্রথমত: অধিকাংশ জান্নাতী:

১. উম্মতে মুহাম্মদী:


عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: " يَا آدَمُ، فَيَقُولُ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ، وَالخَيْرُ فِي يَدَيْكَ، فَيَقُولُ: أَخْرِجْ بَعْثَ النَّارِ، قَالَ: وَمَا بَعْثُ النَّارِ؟، قَالَ: مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعَ مِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ، فَعِنْدَهُ يَشِيبُ الصَّغِيرُ، وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا، وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى، وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ " قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَأَيُّنَا ذَلِكَ الوَاحِدُ؟ قَالَ: " أَبْشِرُوا، فَإِنَّ مِنْكُمْ رَجُلًا وَمِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ أَلْفًا. ثُمَّ قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنِّي أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا رُبُعَ أَهْلِ الجَنَّةِ " فَكَبَّرْنَا، فَقَالَ: «أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا ثُلُثَ أَهْلِ الجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا، فَقَالَ: «أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا نِصْفَ أَهْلِ الجَنَّةِ» فَكَبَّرْنَا، فَقَالَ: «مَا أَنْتُمْ فِي النَّاسِ إِلَّا كَالشَّعَرَةِ السَّوْدَاءِ فِي جِلْدِ ثَوْرٍ أَبْيَضَ، أَوْ كَشَعَرَةٍ بَيْضَاءَ فِي جِلْدِ ثَوْرٍ أَسْوَدَ»​

আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মহান আল্লাহ (হাশরের দিন) ডাকবেন, হে আদম! তখন তিনি জবাব দিবেন, আমি হাযির, আমি সৌভাগ্যবান এবং সকল কল্যাণ আপনার হাতেই । তখন আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামী দলকে বের করে দাও। আদম আলাইহিস সালাম বলবেন, জাহান্নামী দল কারা? আল্লাহ্ বলবেন, প্রতি হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময় (চরম ভয়ের কারণে) ছোটরা বুড়ো হয়ে যাবে।
প্রত্যেক গর্ভবতী তাঁর গর্ভপাত করে ফেলবে। মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়। বস্তুতঃ আল্লাহর শাস্তি কঠিন। সাহাবারা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! (প্রতি হাজারের মধ্যে একজন) আমাদের মধ্যে সেই একজন কে? তিনি বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। কেননা তোমাদের মধ্য থেকে একজন আর এক হাজারের অবশিষ্ট ইয়া’জুজ-মা’জুজ হবে। অতঃপর তিনি বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম। আমি আশা করি, তোমরা (যারা আমার উম্মত) সমস্ত জান্নাতবাসীদের এক চতুর্থাংশ হবে। (আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন) আমরা এ সুসংবাদ শুনে আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম।

এরপর তিনি আবার বললেন, আমি আশা করি তোমরা সমস্ত জান্নাতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ হবে। আমরা পুনরায় আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি আবার বললেন, আমি আশাকরি তোমরা সমস্ত জান্নাতবাসীদের অর্ধেক হবে। একথা শুনে আমরা আবার আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। তিনি বললেন, তোমরা তো অন্যান্য মানুষের তুলনায় এমন, যেমন সাদা ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি কাল পশম অথবা কালো ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি সাদা পশম।”[1]

২. দরিদ্র লোক:

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «اطَّلَعْتُ فِي الجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الفُقَرَاءَ، وَاطَّلَعْتُ فِي النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ»​

“ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী বললেন, আমি জান্নাতের অধিবাসীর হিসাব অবহিত হয়েছি। আমি জানতে পারলাম, জান্নাতে অধিকাংশ অধিবাসী হবে গরীব লোক। আর জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত হয়েছি, আমি দেখেছি এর অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা।” [2]

৩. মহিলা:

জান্নাতী হুরদের পাশাপাশি দুনিয়ার নারীসহ অধিকাংশ জান্নাতী হবে নারী। তবে শুধু দুনিয়ার নারীদের হিসেবে তারা জান্নাতীদের সংখ্যায় কম হবে এবং অধিকাংশ জাহান্নামী হবে।

ففي صحيح مسلم أن ابن عُلَيَّةَ، أَخْبَرَنَا أَيُّوبُ، عَنْ مُحَمَّدٍ، قَالَ: إِمَّا تَفَاخَرُوا وَإِمَّا تَذَاكَرُوا: الرِّجَالُ فِي الْجَنَّةِ أَكْثَرُ أَمِ النِّسَاءُ؟ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: أَوَ لَمْ يَقُلْ أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ تَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ، وَالَّتِي تَلِيهَا عَلَى أَضْوَإِ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ، لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ اثْنَتَانِ، يُرَى مُخُّ سُوقِهِمَا مِنْ وَرَاءِ اللَّحْمِ، وَمَا فِي الْجَنَّةِ أَعْزَبُ»​

মুসলিমে ইবন ‘উলাইবাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদেরকে আইয়ুব রহ. সংবাদ দিয়েছেন, তিনি মুহাম্মদ রহ. থেকে বলেন: লোকেরা হয়ত গর্ব প্রকাশ করে বলল, অথবা আলোচনা করে বলল, জান্নাতে পুরুষ বেশী হবে, না মহিলা! এ কথা শুনে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেন নি যে, “প্রথম দলটি যেটি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা চৌদ্দ তারিখের চাঁদের আকৃতিতে প্রবেশ করবে, তারপর যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা আকাশে প্রজ্জলিত নক্ষত্রের মত হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য দুইজন স্ত্রী থাকবে। তাদের স্ত্রীদের সৌন্দর্য এত বেশি হবে, চামড়ার উপর দিয়ে তাদের পায়ের নলার মগজ দেখা যাবে। আর জান্নাতে আশ্চর্য বলতে কিছু নাই।”[3]



দ্বিতীয়ত: অধিকাংশ জাহান্নামী:

১. ইয়া’জুজ মা’জুজ:


উপরিউক্ত আবু সাঈদ খুদুরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস, আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে ডেকে বলবেন, জাহান্নামী দলটিকে বের করো, তিনি বলবেন, প্রতি এক হাজারে নয়শত নিরানব্বই জনকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

فَإِنَّ مِنْكُمْ رَجُلًا وَمِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ أَلْفًا.​

“তোমাদের মধ্য থেকে একজন আর ইয়া’জুজ-মা’জুজ থেকে হবে এক হাজার।” [4]

২. নারী:

অধিকাংশ জাহান্নামী হবে নারীরা।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ، تَصَدَّقْنَ وَأَكْثِرْنَ الِاسْتِغْفَارَ، فَإِنِّي رَأَيْتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ» فَقَالَتِ امْرَأَةٌ مِنْهُنَّ جَزْلَةٌ: وَمَا لَنَا يَا رَسُولَ اللهِ أَكْثَرُ أَهْلِ النَّارِ؟ قَالَ: «تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ، وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ،َ»​

আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীলোকদেরকে বললেন, “হে মহিলা সমাজ! তোমরা বেশীকরে দান সদকা করো এবং অধিক পরিমাণে তাওবা করো। কেননা আমি তোমাদের অধিকাংশকে জাহান্নামে দেখেছি। এ সময় তাদের মধ্য থেকে এক বুদ্ধিমতি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের অধিকাংশ কেন দোযখী? তিনি জবাবে বললেন, তোমরা খুব বেশী অভিশাপ দিয়ে থাকো এবং স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।” [5]

عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «اطَّلَعْتُ فِي الجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الفُقَرَاءَ، وَاطَّلَعْتُ فِي النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ»​

“ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী বললেন, আমি জান্নাতের অধিবাসীর হিসাব অবহিত হয়েছি। আমি জানতে পারলাম, জান্নাতে অধিকাংশ অধিবাসী হবে গরীব লোক। আর জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত হয়েছি, আমি দেখেছি এর অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা।” [6]

লেখক : সা‘ঈদ ইবন আলী ইবন ওয়াহাফ আল-ক্বাহত্বানী
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ আল-মামুন আল-আযহারী
সম্পাদনা: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী​

[1] বুখারী, হাদীস নং ৩৩৪৮।
[2] বুখারী, হাদীস নং ৩২৪১।
[3] মুসলিম, হাদীস নং ২৮৩৪।
[4] মুসলিম, হাদীস নং ৩৩৪৮।
[5] মুসলিম, হাদীস নং ৭৯।
[6] বুখারী, হাদীস নং ৩২৪১।
 
Similar threads Most view View more
Back
Top