সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রশ্নোত্তর তারাবীহ্‌ নামাযের বিধান কি? এর রাকাত সংখ্যা কত?

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,150
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
37,725
Credits
24,212
তারাবীহ্‌ নামায রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সুন্নাত। বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযানের এক রাতে (তারাবীহ) নামায আদায় করলেন। লোকেরাও তাঁর সাথে ছালাত আদায় করল। পরবর্তী রাতেও ছালাত আদায় করলেন। এরাতে মানুষের সংখ্যা অনেক বেশী হল। অতঃপর তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাতেও তারা সমবেত হলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্‌ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর বের হলেন না। প্রভাত হলে তিনি বললেন, ]قَالَ قَدْ رَأَيْتُ الَّذِي صَنَعْتُمْ وَلَمْ يَمْنَعْنِي مِنَ الْخُرُوجِ إِلَيْكُمْ إِلَّا أَنِّي خَشِيتُ أَنْ تُفْرَضَ عَلَيْكُمْ وَذَلِكَ فِي رَمَضَانَ[ “তোমরা যা করেছো আমি দেখেছি। কিন্তু তোমাদের কাছে আসতে আমাকে কোন কিছুই বাধা দেয়নি। তবে আমি আশংকা করেছি যে, এ নামায তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হবে।” আর এটি ছিল রামাযান মাসের ঘটনা। তারাবীহ্‌-এর রাকআত সংখ্যাঃ ১১ রাকাআত। বুখারী মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। মাহে রামাযানে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নামায সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ]مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً[ “তিনি রামাযান মাসে এবং অন্য সময় এগার রাকাতের বেশী নামায পড়তেন না।” তারাবীহ্‌ ছালাত যদি ১৩ (তের) রাকাআত আদায় করে, কোন অসুবিধা নেই। ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামায ছিল ১৩ রাকাত।” অর্থাৎ রাতের নামায। বুখারী। ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে ১১ এগার রাকাতেরই প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমনটি মুআত্বা মালেকে সর্বাধিক বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে। যদি এর চাইতে বেশী সংখ্যক রাকাআত আদায় করে তাতেও কোন অসুবিধা নেই। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, صَلَاةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى “রাতের নামায দু’ দু’ রাকাত করে।” এখানে তিনি কোন সংখ্যা নির্ধারণ করে দেননি। সালাফে সালেহীন থেকে এ নামাযের বিভিন্ন ধরণের রাকাতের বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু শুধুমাত্র নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত সংখ্যার উপর আমল করা উত্তম। আর তা হচ্ছে এগার বা তের রাকাআত। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা তাঁর খলীফাদের (রাঃ) থেকে কোন হাদীছ বা বর্ণনা প্রমাণিত হয়নি যে, তাঁদের কেউ ২৩ রাকাত তারাবীহ্‌ আদায় করেছেন। বরং ওমর (রাঃ) থেকে এগার রাকাতের কথাই প্রমাণিত হয়েছে। কেননা তিনি উবাই বিন কা’ব এবং তামীম আদ্দারী (রাঃ)কে ১১ রাকাতের দ্বারা লোকদেরকে নিয়ে ক্বিয়ামুল্লায়াল করার আদেশ করেছিলেন। ওমরের (রাঃ) মত ব্যক্তিত্বের জন্য এটাই শোভনীয় যে, তাঁর জীবন চরিত ও ইবাদত বন্দেগী হবে ঠিক তেমনই, যেমনটি ছিল নবীকুল শিরমনী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জীবন চরিত ও ইবাদত বন্দেগী। আমাদের জানা নেই যে, ছাহাবীদের (রাঃ) মধ্যে কেউ তেইশ রাকাত তারাবীহ্‌ নামায পড়েছিলেন। বরং বাস্তব অবস্থা এর বিপরীত। পূর্বে আয়েশা (রাঃ) এর বাণী উল্লেখ করা হয়েছেঃ “নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযান বা অন্য সময় এগার রাকাতের বেশী রাতের নামায আদায় করতেন না।” নিঃসন্দেহে ছাহাবায়ে কেরামের (রাঃ) এজমা বা ঐকমত্য হচ্ছে একটি হুজ্জত বা বড় দলীল। বিশেষ করে তাদের মধ্যে রয়েছেন খোলাফায়ে রাশেদা। যাঁদের অনুসরণ করতে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা তাঁরা হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। জেনে রাখুন! তারাবীহ্‌ নামাযের রাকাত সংখ্যায় বিভিন্নতা বিষয়টি এমন, যাতে ইজতেহাদ বা গবেষণার অবকাশ রয়েছে। বিষয়টি পারস্পরিক মতবিরোধ বা মুসলমানদের মধ্যে ফাটলের কারণ হওয়া উচিৎ নয়। বিশেষ করে যখন কিনা এতে সালাফে ছালেহীন থেকেই মতবিরোধ পাওয়া যায়। এ মাসআলায় এমন কোন দলীল পাওয়া যায় না যে, এতে ইজতেহাদ বা গবেষণার কোন সুযোগ নেই। কোন একটি ইজতেহাদী বিষয়ে বিরোধীতাকারীকে জনৈক বিদ্বান বলেছিলেন, আমার বিরোধীতা করে আপনি আমার মতটিই প্রকাশ করেছেন। কেননা ইজতেহাদী বিষয়ে প্রত্যেকে সেটারই অনুসরণ করবে যা সে সত্য মনে করে। আমরা সবার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর পসন্দনীয় ও সন'ষ্টি মুলক কাজ কামনা করছি।
সূত্র: ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম। লেখক: শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ)।
 
Top