If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
প্রশ্ন: আমি প্রশ্নটি আগেও করেছিলাম। আশা করি এর উত্তর দিয়ে আমাকে উপকৃত করবেন কারণ আমি এর কোনো সন্তোষজনক জবাব পাই নি। প্রশ্নটি হলো তারাবীহ সম্পর্কে, তা কি ১১ রাকাত নাকি ২০ রাকাত? সুন্নাহ মতে তো তা ১১ রাকাত। শাইখ আল-আলবানী রহ. ‘আল-ক্বিয়াম ওয়া আত-তারাউয়ীহ’ বইতে বলেছেন (তা) ১১ রাকাত। কেউ কেউ সেই মসজিদে যায় যেখানে ১১ রাকাত সালাত আদায় হয়, আবার অনেকে সেই মসজিদে যায়, যেখানে ২০ রাকাত সালাত আদায় হয়। তাই এই মাসআলাটি এখানে যুক্তরাষ্ট্রে সংবেদনশীল হয়ে গেছে। যে ১১ রাকাত সালাত আদায় করে সে ২০ রাকাত সালাত আদায়কারীকে দোষারোপ করে, আবার এর বিপরীতটিও হয়। তাই (এই ব্যাপারটি নিয়ে) ফিতনাহ সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি মসজিদুল হারামেও ২০ রাকাত সালাত আদায় করা হয়।
কেন মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে সুন্নাহ থেকে বিপরীত করা হয়? কেন তারা মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবীহের সালাত আদায় করেন?
উত্তর: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
আমরা মনে করি না যে আলেমগণের মধ্যে ইজতিহাদী মাসআলাসমূহ নিয়ে একজন মুসলিমের এ ধরনের সংবেদনশীল আচরণ করা উচিৎ যা মুসলিমদের মাঝে বিভেদ ও ফিতনাহ সৃষ্টির কারণ হয়।
যে ব্যক্তি ইমামের সাথে ১০ রাকাত আদায় করে বিতর-এর সালাতের অপেক্ষায় বসে থাকে এবং ইমামের সাথে তারাবীহের সালাত পূর্ণ করে না, তার সম্পর্কিত মাস‘আলাহর ব্যাপারে বলতে গিয়ে শাইখ ইবন উসাইমীন রহ. উল্লেখ করেন: ‘এটি খুবই দুঃখজনক যে, আমরা এই উন্মুক্ত ইসলামী উম্মাহর মধ্যে এমন একটি দল দেখি যারা ভিন্ন মতের সুযোগ আছে এমন ব্যাপার নিয়ে বিভেদের সৃষ্টি করে। এর ফলে তারা সেই ভিন্ন মতকে অন্তরসমূহের বিভেদের কারণ বানিয়ে দেয়। সাহাবীগণের সময় থেকেই এই উম্মাতের মাঝে ভিন্ন মত ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের অন্তরসমূহ ছিল ঐক্যবদ্ধ।
তাই ইসলামের ব্যাপারে একনিষ্ঠ সকলের ওপর, বিশেষ করে যুবকদের ওপর ওয়াজিব হলো ঐক্যবদ্ধ ও একত্রিত হওয়া; কারণ শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ওঁত পেতে আছে।’[1]
আর এই মাসআলা এর ব্যাপারে দু’টি দল বাড়াবাড়ি করেছে। প্রথম দলটি যারা ১১ রাকাতের বেশি পড়েছে তাদের বিরোধিতা করেছে আর তাদের কাজকে বিদ‘আত হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আর দ্বিতীয় দলটি, শুধু ১১ রাকাতই পড়ে ও এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছেন, তাদের বিরোধিতা করে বলেছে যে, তারা ইজমা‘-এর বিপরীতে গেছে।
চলুন আমরা শুনি সম্মানিত শাইখ ইবন উসাইমীন রহ.-এর উপদেশ যেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমরা এক্ষেত্রে বলব আমাদের উচিৎ না বেশি বাড়াবাড়ি বা অতিরিক্ত কম করা। কেউ কেউ সুন্নাহ-তে বর্ণিত সংখ্যা মানার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে এবং বলে: সুন্নাহ তে যে সংখ্যার বর্ণনা এসেছে তা থেকে বাড়ানো জায়েয নয়। সুতরাং যে তা (১১ রাকাত) থেকে বাড়িয়ে পড়ে, সে তার কঠোর বিরোধিতা করে এবং বলে, সে পাপী, সীমালঙ্ঘনকারী।
আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এটি (এমন ধারনা) ভুল, সে কীভাবে পাপী, সীমালঙ্ঘনকারী হবে যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন:
তিনি কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা বেঁধে দেন নি। আর এটি জানা কথা যে, যিনি রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন তিনি তার (রাকাতের) সংখ্যা জানতেন না। কারণ, যিনি (সালাতের) পদ্ধতি জানেন না, তার রাকাত সংখ্যা না জানারই কথা। আর তিনি রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেবকও ছিলেন না যে আমরা এ কথা বলতে পারি যে, তিনি রাসূলের বাসার ভিতরে কি হচ্ছে তা জানতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু সে ব্যক্তিকে রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট না করে সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, তাই এটি জানা গেল যে, এ ব্যাপারটিতে প্রশস্ততা আছে। সুতরাং কেউ ১০০ রাকাত সালাত আদায় করে ১ রাকাত দিয়েও বিতর আদায় করতে পারে।
আর তাঁর বাণী:
এটি তাদের কাছেও সাধারণভাবে (সর্বক্ষেত্রে) প্রযোজ্য (হুকুম) নয়। আর এ কারণেই তারা একবার ৫ রাকাত, আর একবার ৭ রাকাত, অন্যবার ৯ রাকাত দিয়ে বিতর আদায় করা ওয়াজিব মনে করে না। আর আমরা যদি একে (হাদীসকে) সাধারণভাবে প্রযোজ্য ধরে নেই তাহলে আমাদের এ কথা বলতে হবে যে একবার ৫ রাকাত, আর একবার ৭ রাকাত, অন্যবার ৯ রাকাত দিয়ে ধরে ধরে বিতর আদায় করা ওয়াজিব, বরং “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর”-এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে সালাত আদায়ের পদ্ধতি, রাকাত সংখ্যা নয়। কেবল যে নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে দলীল প্রমাণিত হয়েছে তা ব্যতীত।
আর যাই হোক, একজন মানুষের জন্য যাতে প্রশস্ততা আছে এমন কোনো ব্যাপারে লোকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা উচিৎ নয়। ব্যাপারটি এ পর্যন্ত গড়িয়েছে যে, আমরা দেখেছি যে কিছু ভাইয়েরা এ বিষয়টিতে বেশি জোর প্রয়োগ করে, তারা সেসব ইমামগণের ওপর বিদ‘আতের অপবাদ দেয়, যারা ১১ রাকাতের বেশি আদায় করে এবং তারা মসজিদ থেকে বের হয়ে আসে। এক্ষেত্রে তাদের সাওয়াব ছুটে যায়, এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
আবার তারা অনেক সময় ১০ রাকাত আদায় করে বসে থাকে ফলে কাতার ভঙ্গ হয়, আবার কখনও তারা কথা বলাবলি করে এবং মুসল্লীদের সালাতে বিঘ্ন ঘটায়।
আমরা এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ পোষণ করি না যে, তারা ভালো চান এবং তারা ইজতিহাদ করেছেন, কিন্তু সব মুজতাহিদ সঠিক মতে পৌঁছেন না।
আর দ্বিতীয় পক্ষটি হলো তাদের বিপরীত। তারা, যারা ১১ রাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাদের কঠোর বিরোধিতা করে এবং বলে: ‘তুমি ইজমা‘ থেকে বের হয়ে গেছ।’ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
আর আপনার আগে যারা গত হয়েছে তারা ২৩ রাকাত ছাড়া কোনো কিছু জানতেন না। এরপর তারা এ মতের বিরোধীদের ওপর কঠোরভাবে আক্রমন করে বসে। এটিও একটি ভুল।”[5]
আর তারাবীহের সালাতে ৮ রাকাতের বেশি পড়া জায়েয না হওয়ার মত পোষণকারীরা যে দলীল দিয়েছেন তা হলো, আবু সালামাহ ইবন আবদির রাহমানের হাদীস, যাতে তিনি আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহাকে প্রশ্ন করেছিলেন:
তারা বলেন: এই হাদীস থেকে রমযানে ও এর বাইরে রাতের বেলা সালাতের (রাকাত সংখ্যার) ব্যাপারে নিয়মিত থাকার নির্দেশনা পাওয়া যায়।
আর আলেমগণ এ হাদীসকে তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আচরণের (কাজের) দলীল হিসেবে পেশ করাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কেননা (তাঁর) কাজ (আচরণ) থেকে ওয়াজিব হওয়ার নির্দেশনা পাওয়া যায় না।
আর রাতের সালাত যেমন তারাবীহ, যা কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা দ্বারা নির্ধারিত নয়। এ ব্যাপারে (বর্ণিত) স্পষ্ট দলীলগুলোর একটি হলো, ইবন উমারের হাদীস, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য (ফিকহী) মাযহাবসমূহের আলেমগণের মতামতের দিকে দৃষ্টি দিলে পরিষ্কার হয় যে, এ ব্যাপারটিতে প্রশস্ততা আছে, আর ১১ রাকাতের বেশি পড়ায় কোনো দোষ নেই।
ইমাম আস-সারখাসী, যিনি হানাফী (ফিকহী) মাযহাবের ইমামগণের একজন, তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মতে বিতর ছাড়া তা (তারাবীহ) ২০ রাকাত।’[8]
ইবন কুদামাহ বলেছেন, আবু আবদিল্লাহ (ইমাম আহমাদ) রহ.-এর কাছে পছন্দনীয় মতটি হলো, তা ২০ রাকাত। আর ইমাম আস-সাউরী, ইমাম আবু-হানীফা ও ইমাম আশ-শাফে‘ঈ-ও এ মত ব্যক্ত করেছেন। আর ইমাম মালিক বলেছেন: ‘তা (তারাবীহ) ৩৬ রাকাত।”[9]
ইমাম আন-নাববী বলেছেন, ‘আলেমগণের ইজমা‘ মতে তারাবীহের সালাত সুন্নাহ। আর আমাদের মাযহাবে তা ১০ সালামে ২০ রাকাত। তা একাকী ও জামা‘আতের সাথে আদায় করা জায়েয।”[10]
এগুলো হলো তারাবীহের সালাতের রাকাতের সংখ্যার ব্যাপারে চার ইমামের মাযহাবসমূহ, তাদের সবাই ১১ রাকাতের বেশি পড়ার ব্যাপারে বলেছেন। যে কারণে তারা ১১ রাকাতের বেশি পড়ার ব্যাপারে বলেছেন সম্ভবত তা হলো:
১. তারা দেখেছেন যে, আয়েশাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীস নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করে না।
২. পূর্ববর্তী সাহাবী ও তাবে‘ঈগণের অনেকের কাছ থেকে (১১ রাকাতের) বেশি পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়।[11]
৩. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ১১ রাকাত সালাত আদায় করতেন তা এতটা দীর্ঘ করতেন যে, তার পুরো রাতই লেগে যেত, এমনকি এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবীহের সালাতে তাঁর সাহাবীগণের সাথে যে সালাত আদায় করেছিলেন তা ফজর (সুবহে সাদিক) উদিত হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে শেষ করেছিলেন, এমনকি সাহাবীগণ সাহরী ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। সাহাবীগণও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং তারা তা দীর্ঘ মনে করতেন না। তাই আলেমগণ এই মত ব্যক্ত করেছেন যে ইমাম যদি এভাবে সালাত দীর্ঘ করেন তবে তা মুসল্লীদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়, যা তাদেরকে (সালাত থেকে) বিমুখ করতে পারে, এমতাবস্থায় ইমাম কিরাত সংক্ষিপ্ত করে রাকাত সংখ্যা বাড়াতে পারেন।
সারকথা হলো যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত পদ্ধতিতে ১১ রাকাত সালাত পড়ে সে ভালো করল এবং সুন্নাহ পালন করল। আর যে কিরাত সংক্ষিপ্ত করে রাকাতের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে সেও ভালো করল। যে এই দু’টি বিষয়ের যে কোনো একটি করল, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেছেন, ‘যে তারাবীহের সালাত আবু হানীফাহ, আশ-শাফে‘ঈ ও আহমাদ-এর মাযহাব অনুসারে ২০ রাকাত আদায় করল অথবা মালিকের মাযহাব অনুসারে ৩৬ রাকাত আদায় করল অথবা ১৩ বা ১১ রাকাত আদায় করল সে ভালো করল, যেমনটি ইমাম আহমাদ মত পোষণ করেছেন এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার কারণে। তাই রাকাত সংখ্যা বেশি বা কম করা কিয়াম দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত করা অনুযায়ী হবে।’[12]
আস-সুয়ূত্বী বলেছেন, ‘রমযানে কিয়াম করার আদেশ দিয়ে ও এর ব্যাপারে উৎসাহিত করে সহীহ ও হাসান হাদীসসমূহে যা বর্ণিত হয়েছে তাতে কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয় নি। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এমনও প্রমাণিত হয় নি যে, তিনি ২০ রাকাত তারাবীহ পড়েছেন; বরং তিনি রাতের সালাত আদায় করেছেন যার (রাকাতের) সংখ্যা উল্লেখ হয় নি। এরপর তিনি ৪র্থ রাতে দেরি করলেন এই আশঙ্কায় যে, তা (তারাবীহের সালাত) তাদের ওপর ফরয করে দেওয়া হবে, আর তারা তা (পালন) করতে অসমর্থ হবেন।’ ইবন হাজার আল-হাইসামী বলেছেন: ‘নবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে তারাবীহের সালাত ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে কোনো সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় নি। আর এই ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে, “তিনি ২০ রাকাত সালাত আদায় করতেন, তা অত্যন্ত দুর্বল।”[13]
আর এইসবের পর প্রশ্নকারী ভাই, আপনি তারাবীহের সালাত ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে অবাক হবেন না। কারণ, এর আগে ইমামগণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা করেছেন। আর তাদের সবার মধ্যেই কল্যাণ আছে।
আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
[1] আশ-শারহ আল-মুমতি‘ (৪২২৫)।
[2] বুখারী, হাদীস নং ৪৭২; মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯। [সম্পাদক]
[3] বুখারী, হাদীস নং ৬৩১।
[4] তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৬ এবং আল-আলবানী ‘সহীহ আত-তিরমিযী’-তে (৬৪৬) একে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন।
[5] আশ-শারহ আল মুমতি‘ (৩/৭৩-৭৫)।
[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৮।
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯।
[8] আল-মাবসূত (২/১৪৫)।
[9] আল-মুগনী (১/৪৫৭)।
[10] আল-মাজমূ‘ (৪/৩১)।
[11] আল-মুগনী (২/৬০৪); আল-মাজমূ‘ (৪/৩২)
[12] আল-ইখতিয়ারাত (পৃ. ৬৪)।
[13] আল-মূসূ‘আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ (২৭/১৪২-১৪৫)।
কেন মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে সুন্নাহ থেকে বিপরীত করা হয়? কেন তারা মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবীহের সালাত আদায় করেন?
উত্তর: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
আমরা মনে করি না যে আলেমগণের মধ্যে ইজতিহাদী মাসআলাসমূহ নিয়ে একজন মুসলিমের এ ধরনের সংবেদনশীল আচরণ করা উচিৎ যা মুসলিমদের মাঝে বিভেদ ও ফিতনাহ সৃষ্টির কারণ হয়।
যে ব্যক্তি ইমামের সাথে ১০ রাকাত আদায় করে বিতর-এর সালাতের অপেক্ষায় বসে থাকে এবং ইমামের সাথে তারাবীহের সালাত পূর্ণ করে না, তার সম্পর্কিত মাস‘আলাহর ব্যাপারে বলতে গিয়ে শাইখ ইবন উসাইমীন রহ. উল্লেখ করেন: ‘এটি খুবই দুঃখজনক যে, আমরা এই উন্মুক্ত ইসলামী উম্মাহর মধ্যে এমন একটি দল দেখি যারা ভিন্ন মতের সুযোগ আছে এমন ব্যাপার নিয়ে বিভেদের সৃষ্টি করে। এর ফলে তারা সেই ভিন্ন মতকে অন্তরসমূহের বিভেদের কারণ বানিয়ে দেয়। সাহাবীগণের সময় থেকেই এই উম্মাতের মাঝে ভিন্ন মত ছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের অন্তরসমূহ ছিল ঐক্যবদ্ধ।
তাই ইসলামের ব্যাপারে একনিষ্ঠ সকলের ওপর, বিশেষ করে যুবকদের ওপর ওয়াজিব হলো ঐক্যবদ্ধ ও একত্রিত হওয়া; কারণ শত্রুরা তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে ওঁত পেতে আছে।’[1]
আর এই মাসআলা এর ব্যাপারে দু’টি দল বাড়াবাড়ি করেছে। প্রথম দলটি যারা ১১ রাকাতের বেশি পড়েছে তাদের বিরোধিতা করেছে আর তাদের কাজকে বিদ‘আত হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আর দ্বিতীয় দলটি, শুধু ১১ রাকাতই পড়ে ও এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছেন, তাদের বিরোধিতা করে বলেছে যে, তারা ইজমা‘-এর বিপরীতে গেছে।
চলুন আমরা শুনি সম্মানিত শাইখ ইবন উসাইমীন রহ.-এর উপদেশ যেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমরা এক্ষেত্রে বলব আমাদের উচিৎ না বেশি বাড়াবাড়ি বা অতিরিক্ত কম করা। কেউ কেউ সুন্নাহ-তে বর্ণিত সংখ্যা মানার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে এবং বলে: সুন্নাহ তে যে সংখ্যার বর্ণনা এসেছে তা থেকে বাড়ানো জায়েয নয়। সুতরাং যে তা (১১ রাকাত) থেকে বাড়িয়ে পড়ে, সে তার কঠোর বিরোধিতা করে এবং বলে, সে পাপী, সীমালঙ্ঘনকারী।
আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে এটি (এমন ধারনা) ভুল, সে কীভাবে পাপী, সীমালঙ্ঘনকারী হবে যেখানে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন:
«مثنى مثنى»
“(তা) দুই দুই (রাকাত) করে”।[2]তিনি কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা বেঁধে দেন নি। আর এটি জানা কথা যে, যিনি রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন তিনি তার (রাকাতের) সংখ্যা জানতেন না। কারণ, যিনি (সালাতের) পদ্ধতি জানেন না, তার রাকাত সংখ্যা না জানারই কথা। আর তিনি রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেবকও ছিলেন না যে আমরা এ কথা বলতে পারি যে, তিনি রাসূলের বাসার ভিতরে কি হচ্ছে তা জানতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু সে ব্যক্তিকে রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট না করে সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, তাই এটি জানা গেল যে, এ ব্যাপারটিতে প্রশস্ততা আছে। সুতরাং কেউ ১০০ রাকাত সালাত আদায় করে ১ রাকাত দিয়েও বিতর আদায় করতে পারে।
আর তাঁর বাণী:
«صلوا كما رأيتموني أصلي»
“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর।”[3]এটি তাদের কাছেও সাধারণভাবে (সর্বক্ষেত্রে) প্রযোজ্য (হুকুম) নয়। আর এ কারণেই তারা একবার ৫ রাকাত, আর একবার ৭ রাকাত, অন্যবার ৯ রাকাত দিয়ে বিতর আদায় করা ওয়াজিব মনে করে না। আর আমরা যদি একে (হাদীসকে) সাধারণভাবে প্রযোজ্য ধরে নেই তাহলে আমাদের এ কথা বলতে হবে যে একবার ৫ রাকাত, আর একবার ৭ রাকাত, অন্যবার ৯ রাকাত দিয়ে ধরে ধরে বিতর আদায় করা ওয়াজিব, বরং “তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর”-এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে সালাত আদায়ের পদ্ধতি, রাকাত সংখ্যা নয়। কেবল যে নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে দলীল প্রমাণিত হয়েছে তা ব্যতীত।
আর যাই হোক, একজন মানুষের জন্য যাতে প্রশস্ততা আছে এমন কোনো ব্যাপারে লোকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা উচিৎ নয়। ব্যাপারটি এ পর্যন্ত গড়িয়েছে যে, আমরা দেখেছি যে কিছু ভাইয়েরা এ বিষয়টিতে বেশি জোর প্রয়োগ করে, তারা সেসব ইমামগণের ওপর বিদ‘আতের অপবাদ দেয়, যারা ১১ রাকাতের বেশি আদায় করে এবং তারা মসজিদ থেকে বের হয়ে আসে। এক্ষেত্রে তাদের সাওয়াব ছুটে যায়, এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«من قام مع الإمام حتى ينصرف كُتب له قيام ليلة»
“যে ইমামের সাথে ইমাম (সালাত সমাপ্ত করে) চলে যাওয়া পর্যন্ত কিয়াম করে, তার জন্য সম্পূর্ণ রাতের কিয়াম (এর সাওয়াব) লিখা হবে।”[4]আবার তারা অনেক সময় ১০ রাকাত আদায় করে বসে থাকে ফলে কাতার ভঙ্গ হয়, আবার কখনও তারা কথা বলাবলি করে এবং মুসল্লীদের সালাতে বিঘ্ন ঘটায়।
আমরা এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ পোষণ করি না যে, তারা ভালো চান এবং তারা ইজতিহাদ করেছেন, কিন্তু সব মুজতাহিদ সঠিক মতে পৌঁছেন না।
আর দ্বিতীয় পক্ষটি হলো তাদের বিপরীত। তারা, যারা ১১ রাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাদের কঠোর বিরোধিতা করে এবং বলে: ‘তুমি ইজমা‘ থেকে বের হয়ে গেছ।’ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا
“আর যে তার কাছে সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে আমরা তাকে সেদিকে পরিচালিত করব, যেদিকে সে অভিমুখী হয় এবং আমরা তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে আর তা কতই না খারাপ প্রত্যাবর্তন।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৫]আর আপনার আগে যারা গত হয়েছে তারা ২৩ রাকাত ছাড়া কোনো কিছু জানতেন না। এরপর তারা এ মতের বিরোধীদের ওপর কঠোরভাবে আক্রমন করে বসে। এটিও একটি ভুল।”[5]
আর তারাবীহের সালাতে ৮ রাকাতের বেশি পড়া জায়েয না হওয়ার মত পোষণকারীরা যে দলীল দিয়েছেন তা হলো, আবু সালামাহ ইবন আবদির রাহমানের হাদীস, যাতে তিনি আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহাকে প্রশ্ন করেছিলেন:
«كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم في رمضان ؟ فقالت: ما كان يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي ثلاثا فقلت يا رسول الله أتنام قبل أن توتر قال يا عائشة إن عينيَّ تنامان ولا ينام قلبي»
“রমযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাত কেমন ছিল?” তিনি বললেন: তিনি (রাসূলুল্লাহ) রমযানে বা এর বাইরে ১১ রাকতের বেশি আদায় করতেন না, তিনি ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন- এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না (অর্থাৎ তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত!), এরপর তিনি আরও ৪ রাকাত সালাত আদায় করতেন -এর সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন না (অর্থাৎ তা এতই সুন্দর ও দীর্ঘ হত!), এরপর তিনি ৩ রাকাত সালাত আদায় করতেন। আমি (আয়েশা) (বিতরের আগে শুতে দেখে) বললাম: ‘হে রাসূলুল্লাহ! আপনি কি বিতরের আগে ঘুমিয়ে নিবেন?’ তিনি বললেন, ‘হে আয়েশা, আমার দুই চোখ তো ঘুমায় কিন্তু অন্তর ঘুমায় না।’[6]তারা বলেন: এই হাদীস থেকে রমযানে ও এর বাইরে রাতের বেলা সালাতের (রাকাত সংখ্যার) ব্যাপারে নিয়মিত থাকার নির্দেশনা পাওয়া যায়।
আর আলেমগণ এ হাদীসকে তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আচরণের (কাজের) দলীল হিসেবে পেশ করাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কেননা (তাঁর) কাজ (আচরণ) থেকে ওয়াজিব হওয়ার নির্দেশনা পাওয়া যায় না।
আর রাতের সালাত যেমন তারাবীহ, যা কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা দ্বারা নির্ধারিত নয়। এ ব্যাপারে (বর্ণিত) স্পষ্ট দলীলগুলোর একটি হলো, ইবন উমারের হাদীস, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাতের সালাত সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:
«صلاة الليل مثنى مثنى فإذا خشي أحدكم الصبح صلى ركعة واحدة توتر له ما قد صلَّى».
“রাতের সালাত দুই দুই (রাকাত) করে, এরপর আপনাদের মধ্যে যে ভোর (ফজর) হবার আশংকা করে তিনি যেন এক রাকাত পড়ে নেন, যা আদায় করা সালাতের উইতর (বিতর, সালাতের রাকাত সংখ্যাকে বেজোড় করা) হিসেবে গণ্য হবে।”[7]বিভিন্ন গ্রহণযোগ্য (ফিকহী) মাযহাবসমূহের আলেমগণের মতামতের দিকে দৃষ্টি দিলে পরিষ্কার হয় যে, এ ব্যাপারটিতে প্রশস্ততা আছে, আর ১১ রাকাতের বেশি পড়ায় কোনো দোষ নেই।
ইমাম আস-সারখাসী, যিনি হানাফী (ফিকহী) মাযহাবের ইমামগণের একজন, তিনি বলেছেন, ‘আমাদের মতে বিতর ছাড়া তা (তারাবীহ) ২০ রাকাত।’[8]
ইবন কুদামাহ বলেছেন, আবু আবদিল্লাহ (ইমাম আহমাদ) রহ.-এর কাছে পছন্দনীয় মতটি হলো, তা ২০ রাকাত। আর ইমাম আস-সাউরী, ইমাম আবু-হানীফা ও ইমাম আশ-শাফে‘ঈ-ও এ মত ব্যক্ত করেছেন। আর ইমাম মালিক বলেছেন: ‘তা (তারাবীহ) ৩৬ রাকাত।”[9]
ইমাম আন-নাববী বলেছেন, ‘আলেমগণের ইজমা‘ মতে তারাবীহের সালাত সুন্নাহ। আর আমাদের মাযহাবে তা ১০ সালামে ২০ রাকাত। তা একাকী ও জামা‘আতের সাথে আদায় করা জায়েয।”[10]
এগুলো হলো তারাবীহের সালাতের রাকাতের সংখ্যার ব্যাপারে চার ইমামের মাযহাবসমূহ, তাদের সবাই ১১ রাকাতের বেশি পড়ার ব্যাপারে বলেছেন। যে কারণে তারা ১১ রাকাতের বেশি পড়ার ব্যাপারে বলেছেন সম্ভবত তা হলো:
১. তারা দেখেছেন যে, আয়েশাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীস নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করে না।
২. পূর্ববর্তী সাহাবী ও তাবে‘ঈগণের অনেকের কাছ থেকে (১১ রাকাতের) বেশি পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়।[11]
৩. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ১১ রাকাত সালাত আদায় করতেন তা এতটা দীর্ঘ করতেন যে, তার পুরো রাতই লেগে যেত, এমনকি এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবীহের সালাতে তাঁর সাহাবীগণের সাথে যে সালাত আদায় করেছিলেন তা ফজর (সুবহে সাদিক) উদিত হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগে শেষ করেছিলেন, এমনকি সাহাবীগণ সাহরী ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। সাহাবীগণও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করতে পছন্দ করতেন এবং তারা তা দীর্ঘ মনে করতেন না। তাই আলেমগণ এই মত ব্যক্ত করেছেন যে ইমাম যদি এভাবে সালাত দীর্ঘ করেন তবে তা মুসল্লীদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়, যা তাদেরকে (সালাত থেকে) বিমুখ করতে পারে, এমতাবস্থায় ইমাম কিরাত সংক্ষিপ্ত করে রাকাত সংখ্যা বাড়াতে পারেন।
সারকথা হলো যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত পদ্ধতিতে ১১ রাকাত সালাত পড়ে সে ভালো করল এবং সুন্নাহ পালন করল। আর যে কিরাত সংক্ষিপ্ত করে রাকাতের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে সেও ভালো করল। যে এই দু’টি বিষয়ের যে কোনো একটি করল, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ বলেছেন, ‘যে তারাবীহের সালাত আবু হানীফাহ, আশ-শাফে‘ঈ ও আহমাদ-এর মাযহাব অনুসারে ২০ রাকাত আদায় করল অথবা মালিকের মাযহাব অনুসারে ৩৬ রাকাত আদায় করল অথবা ১৩ বা ১১ রাকাত আদায় করল সে ভালো করল, যেমনটি ইমাম আহমাদ মত পোষণ করেছেন এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার কারণে। তাই রাকাত সংখ্যা বেশি বা কম করা কিয়াম দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত করা অনুযায়ী হবে।’[12]
আস-সুয়ূত্বী বলেছেন, ‘রমযানে কিয়াম করার আদেশ দিয়ে ও এর ব্যাপারে উৎসাহিত করে সহীহ ও হাসান হাদীসসমূহে যা বর্ণিত হয়েছে তাতে কোনো সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয় নি। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এমনও প্রমাণিত হয় নি যে, তিনি ২০ রাকাত তারাবীহ পড়েছেন; বরং তিনি রাতের সালাত আদায় করেছেন যার (রাকাতের) সংখ্যা উল্লেখ হয় নি। এরপর তিনি ৪র্থ রাতে দেরি করলেন এই আশঙ্কায় যে, তা (তারাবীহের সালাত) তাদের ওপর ফরয করে দেওয়া হবে, আর তারা তা (পালন) করতে অসমর্থ হবেন।’ ইবন হাজার আল-হাইসামী বলেছেন: ‘নবী-সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে তারাবীহের সালাত ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে কোনো সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় নি। আর এই ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে, “তিনি ২০ রাকাত সালাত আদায় করতেন, তা অত্যন্ত দুর্বল।”[13]
আর এইসবের পর প্রশ্নকারী ভাই, আপনি তারাবীহের সালাত ২০ রাকাত হওয়ার ব্যাপারে অবাক হবেন না। কারণ, এর আগে ইমামগণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা করেছেন। আর তাদের সবার মধ্যেই কল্যাণ আছে।
আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
[1] আশ-শারহ আল-মুমতি‘ (৪২২৫)।
[2] বুখারী, হাদীস নং ৪৭২; মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯। [সম্পাদক]
[3] বুখারী, হাদীস নং ৬৩১।
[4] তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৬ এবং আল-আলবানী ‘সহীহ আত-তিরমিযী’-তে (৬৪৬) একে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন।
[5] আশ-শারহ আল মুমতি‘ (৩/৭৩-৭৫)।
[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৩৮।
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৯৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪৯।
[8] আল-মাবসূত (২/১৪৫)।
[9] আল-মুগনী (১/৪৫৭)।
[10] আল-মাজমূ‘ (৪/৩১)।
[11] আল-মুগনী (২/৬০৪); আল-মাজমূ‘ (৪/৩২)
[12] আল-ইখতিয়ারাত (পৃ. ৬৪)।
[13] আল-মূসূ‘আহ আল-ফিক্বহিয়্যাহ (২৭/১৪২-১৪৫)।