সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

সালাত তারাবির সলাত কয় রাকাত?

Md Atiar Rahaman Halder

Salafi

Salafi User
Threads
62
Comments
84
Reactions
771
Credits
422
তারাবীর জামা‘আত :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযান মাসের ২৩, ২৫ ও ২৭ তিন রাত্রি মসজিদে এশার পর থেকে জামা'আতের সাথে তারাবীহ্রর ছালাত আদায় করেছেন । প্রথম দিন রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত, দ্বিতীয় দিন অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত এবং তৃতীয় দিন নিজের স্ত্রী-পরিবার ও মুছল্লীদের নিয়ে সাহারীর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ছালাত আদায় করেন।২৩৫''​

২৩৫. আবুদাউদ হা/১৩৭৫; তিরমিযী হা/৮০৬ প্রভৃতি; মিশকাত হা/১২৯৮ ‘ছালাত' অধ্যায়- ৪, 'রামাযান মাসে রাত্রি জাগরণ' অনুচ্ছেদ-৩৭।​


পরের রাতে মুছল্লীগণ তাঁর কক্ষের কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘আমি ভয় পাচ্ছি যে, এটি তোমাদের উপর ফরয হয়ে যায় কি- না । আর যদি ফরয হয়ে যায়, তাহ'লে তোমরা তা আদায় করতে সক্ষম হবে না'...। ২৩৬''​

২৩৬. বুখারী হা/৭২৯০; মুসলিম হা/৭৮১; মিশকাত হা/১২৯৫ ‘রামাযান মাসে রাত্রি জাগরণ' অনুচ্ছেদ-৩৭, রাবী যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ)।​


অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মৃত্যুবরণ করলেন এবং ফরয হওয়ার ভয়ও দূর হ'ল। ফলে সুন্নাত সেভাবেই রয়ে গেল, যেভাবে জামা'আতের সাথে এটি আদায় করা শুরু হয়েছিল। অতঃপর ওমর (রাঃ) সেই সুন্নাতটিই পুনর্জীবিত করলেন। যেমন আব্দুর রহমান বিন ‘আব্দ আল-ক্বারী (রাঃ) বলেন,
خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ - لَيْلَةٌ فِي رَمَضَانَ إِلَى الْمَسْجِدِ، فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُونَ - يُصَلِّى الرَّجُلُ لِنَفْسِهِ، وَيُصَلِّى الرَّجُلُ فَيُصَلِّى بِصَلَاتِهِ الرَّهْطُ فَقَالَ عُمَرُ إِنِّى أَرَى لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلَاءِ عَلَى قَارِئِ وَاحِدٍ لَكَانَ أَمْثَلَ ثُمَّعَزَمَ فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَيٍّ بْنِ كَعْبٍ- ثُمَّخَرَجْتُمَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى، وَالنَّاسُ يُصَلُّونَبِصَلَاةِقَارِئِهِمْ،قَالَعُمَرُنِعْمَتِالْبِدْعَةُهَذهِ،وَالَّتِييَنَامُونَعَنْهَا أَفْضَلُ مِنَالَّتِييَقُومُونَ. يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ، وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ
‘আমি রামাযানের এক রাতে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর সঙ্গে মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখতে পাই যে, লোকেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত। কেউ একাকী ছালাত আদায় করছে। কেউ নিজের ছালাত আদায় করছে এবং একদল লোক তার পিছনে ইক্তেদা করছে। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে একত্রিত করে দেই, তবে সেটাই উত্তম হবে। অতঃপর তিনি উবাই বিন কা'ব (রাঃ)-এর পিছনে সকলকে একত্রিত করে দিলেন। পরে অন্য এক রাতে আমি তাঁর সঙ্গে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে ছালাত আদায় করছিল। ওমর (রাঃ) বললেন, কতই না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তবে তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক, তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা ছালাত আদায় কর। এর দ্বারা তিনি শেষ রাত্রিকে বুঝিয়েছেন। কেননা তখন রাতের প্রথম ভাগে লোকেরা ছালাত আদায় করত'।২৩৭ এতে বুঝা গেল যে, এশা ও তারাবীহ রাতের প্রথম ভাগে পড়া হ'ত ।​

২৩৭. বুখারী হা/২০১০; মিশকাত হা/১৩০১ 'ছালাত' অধ্যায়। বঙ্গানুবাদ মেশকাত শরীফে মাননীয় অনুবাদক ‘আবদুল কারী' লিখেছেন (হা/১২২৭ (৭), ৩/১৯৮ পৃ.)। যেটি মারাত্মক ভুল। কেননা রাবীর নাম আব্দুর রহমান বিন আব্দ আল-কারী। আল-কারী হ'ল তাঁর লকব। যা কার্রাহ (৬) গোত্রের দিকে সম্বন্ধিত (মিরকাত)। তাছাড়া অনুচ্ছেদের নাম তিনি লিখেছেন 'তারাবীর নামায ও শবেবরাতের ফযীলত'। কিন্তু মূল আরবী মিশকাতে অনুচ্ছেদের নাম হ'ল ('রামাযান মাসের রাত্রি জাগরণ' অনুচ্ছেদ)। এর দ্বারা সম্মানিত অনুবাদক শবেবরাতের মত একটি বিদ'আতী প্রথাকে হাদীছ সম্মত করার চেষ্টা করেছেন। যা অনুবাদের ক্ষেত্রে অসততার শামিল।​



তারাবীহ্ রাকআত সংখ্যা :
(১) হযরত আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু 'আনহা) বলেন, --​
مَا كَانَ رَسُولُ الله صلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ وَلَا فِي غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُصَلِّى أَرْبَعًا فَلاَ تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّى أَرْبَعًا فَلَا تَسْأَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّى ثَلَاثًا
'রামাযান বা রামাযানের বাইরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রাত্রির ছালাত এগার রাক'আতের বেশী আদায় করেননি। তিনি প্রথমে (২+২) চার রাক'আত পড়েন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি (২+২) চার রাক'আত পড়েন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিন রাক'আত পড়েন।​
(২) হযরত ওমর (রাঃ) ১১ রাক'আত তারাবীহ জামা'আতের সাথে আদায় করার সুন্নাত পুনরায় চালু করেন, ২০ রাক'আত নয়। যেমন হযরত সায়েব বিন ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, -
أَمَرَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أُبَيَّبْنَكَعْبٍوَتَمِيمًاالدَّارِيَّ
أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً
খলীফা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হযরত উবাই বিন কা'ব ও তামীম দারী (রাঃ)-কে রামাযানের রাত্রিতে ১১ রাক'আত ছালাত জামা'আত সহকারে আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেন ... । ২৩৯''​

২৩৯. মুওয়াত্ত্বা হা/৩৭৯; মিশকাত হা/১৩০২, সনদ ছহীহ 'ছালাত' অধ্যায় 'রামাযান মাসে রাত্রি জাগরণ' অনুচ্ছেদ, রাবী সায়েব বিন ইয়াযীদ (রাঃ)।



তবে উক্ত বর্ণনার শেষদিকে ইয়াযীদ বিন রূমান প্রমুখাৎ ওমর (রাঃ)-এর যামানায় লোকেরা ২৩ রাক'আত তারাবীহ পড়তেন' বলে যে বাড়তি অংশ যোগ হয়েছে, সেটি মুনকাতি' বা ছিন্নসূত্র হওয়ায় যঈফ। তিনি ওমরের যামানা পাননি। উপরন্তু এটি ছহীহ হাদীছ সমূহের বিরোধী । ২৪০​

২৪০. মুওয়াত্ত্বা হা/৩৮০; আলবানী, হাশিয়া মিশকাত হা/১৩০২; ঐ, ছালাতুত তারাবীহ ৬১ পৃ.; ইরওয়া হা/৪৪৬।



(৩) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ- صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَمَضَانَ ثَمَانِ رَكَعَاتٍ وَالْوِتْرَ
'রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রামাযান মাসে আমাদেরকে ৮ রাক'আত তারাবীহ ও বিতর ছালাত পড়ান' ৷২৪১''​

২৪১. ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১০৭০ ‘সনদ হাসান' ২/১৩৮ পৃ.; মির'আত ৪/৩২০ পৃ.। ২৪২. মুসলিম হা/৭৩৬-৩৮, রাবী ‘উরওয়া বিন যুবায়ের (রাঃ)।


উরওয়া বলেন, তিনি প্রতি দু'রাক'আত অন্তর সালাম ফিরিয়ে আট রাক'আত তারাবীহ শেষে কখনও এক, কখনও তিন, কখনও পাঁচ রাক'আত বিতর এক সালামে পড়তেন। কিন্তু মাঝে বসতেন না । ২৪২''​

২৪২. মুসলিম হা/৭৩৬-৩৮, রাবী ‘উরওয়া বিন যুবায়ের (রাঃ)।


তিরমিযীর ভাষ্যকার খ্যাতনামা ভারতীয় হানাফী মনীষী দারুল উলূম দেউবন্দ- এর মুহতামিম (অধ্যক্ষ) আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (১২৯২-১৩৫২ হি./১৮৭৫-১৯৩৩ খৃ.) বলেন,
وَلَا مَنَا مِنْ تَسْلِيم أَن تَرَاوِيْحَهُ كَانَتْ ثَمَانِيَةَرَكْعَاتٍ
‘একথা না মেনে উপায় নেই যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর তারাবীহ ৮ রাক'আত ছিল' । ২৪৩''


২৪৩. আল-‘আরফুশ শাযী শরহ তিরমিযী হা/৮০৬-এর আলোচনা, দ্র. ২/২০৮ পৃ.; মির'আত ৪/৩২১ পৃ.।​


ছিয়াম ও ক্বিয়াম
মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব

হাদীছ ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ

 
Last edited:
COMMENTS ARE BELOW
Top