তাক্বদীরের প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে অনেক মানুষ বিপদগামী হয়েছে। তাই নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো- তাক্বদীর দুই প্রকার। (১) মুবরাম (স্থায়ী) (২) মুআল্লাক্ব (ঝুলন্ত)। মুবরাম এমন তাক্বদীর যা কখনো পরিবর্তন হয় না; বান্দার জন্য যা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অনিবার্যভাবে ঘটবেই। যেমন- আপনি কোনো স্থানে মৃত্যুবরণ করবেন এটা পূর্ব থেকে নির্ধারিত। একটি হাদীছে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,إِذَا قَضَى اللَّهُ لِعَبْدٍ أَنْ يَمُوتَ بِأَرْضٍ جَعَلَ لَهُ إِلَيْهَا حَاجَةً ‘আল্লাহ তাআলা যখন যে জায়গায় কারো মৃত্যু হওয়ার ফয়সালা করেন, তখন ঐ জায়াগায় গমনের উদ্দেশ্যে তার কোনো প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন’।[1] মুবরাম তাক্বদীরের উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে ও পুণ্যের আশা করতে হবে। অহেতুক ও অযাচিত কথা বলা উচিত যাবে না। মুআল্লাক্ব হলো এমন তাক্বদীর, যা পরিবর্তন হয়। যেমন- আল্লাহ তাআলা কারো ভাগ্য নির্ধারণ করেন এভাবে, যদি আমার উমুক বান্দা উমুক স্থানে যায়, তাহলে গাড়ি এক্সিডেন্টে সে মৃত্যুবরণ করবে। হ্যাঁ, তবে সে যদি যাওয়ার আগে কোনো কিছু দান করে বা আমার কাছে হঠাৎ মৃত্যু থেকে পরিত্রাণ চায়, তাহলে সে এই বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাবে। এ ধরনের তাক্বদীর সাধারণত শর্তযুক্ত থাকে। পবিত্র কুরআনে তাক্বদীরে মুআল্লাক্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার সুস্পষ্ট বাণী রয়েছে,وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلَا يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلَّا فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ ‘কারো বয়স বৃদ্ধি বা হ্রাসকরণ সবই কিতাবে রয়েছে; আর এটা আল্লাহর কাছে অতি সহজ বিষয়’ (আল-ফাত্বির, ৩৫/১১)। এখানে দেখুন, কারো হায়াত যদি চূড়ান্তভাবে ৬০ বছর লেখা থাকে, তাহলে আবার তা বৃদ্ধি হবে কীভাবে? অথচ আল্লাহ বলছেন বয়স বৃদ্ধি পায়। বুঝা যাচ্ছে, এটা তাক্বদীরে মুবরাম নয়; বরং মুআল্লাক্ব। এ ব্যাপারটি আরো একটু সুস্পষ্ট হয় যামাখশারীর বক্তব্য দ্বারা। তিনি তাফসীরে কাশশাফে উল্লেখ করেছেন,
[প্রবন্ধ: তাক্বদীর নিয়ে কিছু কথা, মাসিক আল ইতিছাম ; (লেখক- সাঈদুর রহমান, শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ)]
أَنَّهُ لاَ يَطُوْلُ عُمُرُ الْإِنْسًانِ وَلاَ يَقْصُرُ إِلاَّ فِيْ كِتَابٍ وَصُوْرَتُهُ أَنْ يُّكْتَبَ فِي اللَّوْحِ إِنْ لَمْ يَحُجَّ فُلاَنٌ أَوْ يَغْزُ فَعُمْرُهُ أَرْبَعُوْنَ سَنَةً ، وَإِنْ حَجَّ وَغَزَا فَعُمْرُهُ سِتِّوْنَ سَنَةً ، فَإِذَا جَمَعَ بَيْنَهُمَا فَبَلَغَ السِّتِّيْنَ ، وَإِذَا أَفْرَدَ أَحَدُهُمَا فَلَمْ يَتَجَاوَزْ بِهِ الْأَرْبَعِيْنَ فَقَدْ نُقِصَ مِنْ عُمُرِهِ الَّذِيْ هُوَ الْغَايَةُ وَهُوَ السِّتُّوْنَ وَذَكَرَ نَحْوَهُ فِيْ مَعَالِمِ التَّنْزِيْلِ
‘মানুষের বয়স বৃদ্ধি পাওয়া বা হ্রাস ঘটার উদাহরণটা হলো এমন, আল্লাহ তাআলা লাওহে মাহফূযে কারো ভাগ্য এভাবে লিখে রেখেছেন, যদি উমুক হজ্জব্রত পালন না করে ও যুদ্ধে না যায়, তাহলে তার বয়স হবে ৪০। আর যদি হজ্জব্রত পালন করে ও যুদ্ধে যায়, তাহলে তার বয়স হবে ৬০। এখানে ব্যক্তি দুটি শর্ত পূর্ণ করার কারণে তার বয়স হয়েছে ৬০। কিন্তু ব্যক্তি যদি একটি শর্ত পূরণ করে, তাহলে সে চূড়ান্ত বয়সে ৬০ বছর) পৌঁছতে পারবে না, বরং তার বয়স হবে ৪০; মাআলিমুত তানযীল গ্রন্থেও এ ধরনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।[2] অনেক মানুষ তাক্বদীরে মুআল্লাক্ব না জানার কারণে অহেতুক আল্লাহকে দোষারোপ করে থাকে, রোগ হলে অনেকে ভাগ্যের উপর নির্ভর করে বসে থাকে এবং বলে, ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। আরো বলে, আল্লাহ ভাগ্যে যা রেখেছেন, তাই হবে। এ কথা বলে সে আর চেষ্টাই করে না। রোগ হলে সাধ্যানুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে, এটাই আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন। তিনি বলেননি যে, ভাগ্যের উপর নির্ভর করে বসে থাকো। একটি হাদীছে আছে, ছাহাবায়ে কেরাম নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করেন, আমাদের রোগ হলে কি আমরা তাক্বদীরের উপর নির্ভর করে বসে থাকব, নাকি প্রতিষেধক গ্রহণ করব? প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রতিষেধক গ্রহণ করো; এটাও তাক্বদীরে রয়েছে’।[3] আমরা তো জানি না আমাদের তাক্বদীরে কী লেখা আছে, তাই তাক্বদীরের উপর নির্ভর করে বসে থাকলে চলবে না; বরং আমাদের সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা করার পরও যদি সফলতা অর্জন করা সম্ভব না হয়, ঐ সময় মনে করতে হবে তাক্বদীরে আমার সফলতা নেই, তাই আমি সফল হতে পারিনি। তাই চেষ্টা না করে তাক্বদীরের উপর নির্ভর করে বসে থাকা অনুচিত।[প্রবন্ধ: তাক্বদীর নিয়ে কিছু কথা, মাসিক আল ইতিছাম ; (লেখক- সাঈদুর রহমান, শিক্ষক, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, বীরহাটাব-হাটাব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ)]
[1]. তিরমিযী, হা/২১৪৬; মিশকাত, হা/১১০।
[2]. তুহফাতুল আহওয়াযী, ৫/৬৪৩।
[3]. তিরমিযী, হা/২১৪৮।
[2]. তুহফাতুল আহওয়াযী, ৫/৬৪৩।
[3]. তিরমিযী, হা/২১৪৮।