সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Joynal Bin Tofajjal

মানহাজ তাকলীদ কাকে বলে, তাকলীদের উৎপত্তি কীভাবে হলো?

Joynal Bin Tofajjal

Student Of Knowledge

Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
Threads
344
Comments
479
Solutions
1
Reactions
4,788
Credits
3,269
এটা সালাফগণের মানহাজ নয় যে, অন্ধ তাকলীদ করা ও দলীল ছাড়া গোঁড়ামি করা।


তাকলীদ কাকে বলে, তাকলীদের উৎপত্তি কীভাবে হলো, এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে:

তাকলীদ পরিচিতি:
আরবি অভিধানে তাকলীদ শব্দটির অর্থ হচ্ছে কোনো কিছুর ওপর অপর কোনো কিছুকে লটকানো। [ইবন ফারিস, মু‘জামু মাকায়ীসিল লুগাহ (৫/১৯)] এর থেকেই এসেছে উটের গলায় হার বা জুতা লটকিয়ে তাকে বায়তুল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা। তাছাড়া তাকলীদ আরেকটি অর্থ হচ্ছে, লুযূম বা সর্বদা লেগে থাকা, যেমন: বলা হয়, কাল্লিদুল খাইলা অর্থাৎ সর্বদা তার সঙ্গে থাক। অপর অর্থটি হচ্ছে, বহন করা। যেমন বলা হয়, ‘কাল্লাদতুহু আমরি’। মোটামুটি এ তিনটি অর্থই আরবি অভিধানে এসেছে। [ইবন মানযূর, লিসানুল আরাব (১১/২৭৬)]
পরিভাষায় তাকলীদ শব্দটির বহু সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তবে এ মতভেদের কারণ হচ্ছে, আলিমগণ তাকলীদ নিয়ে দুটি অবস্থানে:

এক. কারো কারো মতে তাকলীদ তখনই বলা হবে যখন এমন কারো কথা গ্রহণ করা হবে যার কথা স্বয়ং প্রমাণ নয়: যেমন,
আসফারায়ীনি বলেন, ‘কোনো বক্তার বক্তব্য বিনা দলীলে মেনে নেওয়ার নাম তাকলীদ।’ [যারকাশি, আল-বাহরুল মুহীত (৬/২০৭)] এ সংজ্ঞা আরো দিয়েছেন জুওয়াইনি [আল-ওরাক্বাত: ৮২] আবু মানসূর আল-বাগদাদি, তবে তিনি বাড়িয়েছেন, ‘যার কথার ওপর প্রমাণ প্রকাশ পায় না।’ [আল-বাহরুল মুহীত (৬/২৭০)]
বাকিল্লানি বলেন, তা হচ্ছে, এমন কারো অনুসরণ করা যার অনুসরণের ওপর প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি, আর তিনি কোনো জ্ঞানের দিকে সম্পৃক্ত করেননি। [আল-বাহরুল মুহীত (৬/২৭৪)] জুওয়াইনি তার ‘আত-তালখীস’ গ্রন্থে এটাকে সমর্থন দিয়েছেন (৩/৪২৫)।

শীরাযি বলেন, তা হচ্ছে- কারো কথা প্রমাণ ছাড়া গ্রহণ করা। [আল-লুমা ১২৫] আর এ সংজ্ঞাটি আবু ইয়ালা [আল-উদ্দাহ (৪/১২১৬)], ইবন তাইমিয়্যাহ [আল-মুসাওয়াদাহ ৪৬২], ইবন জুযাই [তাকরীবুল উসূল ৪৪৪] ও উকবারি [রিসালাতুন ফী উসূলিল ফিকহ, পৃ. ১২৭] গ্রহণ করেছেন।

একই নীতিতে চলেছেন অনেক হানাফি [ইবনুস সাআতি, নিহায়াতুল উসূল (২/৬৮৯); জুরজানি, আত-তা‘রীফাত ৯০; ইবনুল হুমাম, আত-তাহরীর ও তার ব্যাখ্যাকারীরা যেমন আত-তাকরীর ওয়াত তাহবীর (৩/৩৪০); তাইসীরুত তাহরীর (৪/২৪১), ইবন আবদুশ শাকুর, মুসাল্লামুস সুবূত (২/৪০০)]

অনুরূপ অনেক মালিকি [বাজি, আল-হুদূদ ৬৪; ইবনুল হাজিব, মুখতাসারুল মুন্তাহা (৩/৩৫০); কারাফি, নাফায়িসুল উসূল (৯/৩৯৫২-৩৯৫৩)]
অনুরূপ অনেক শাফিয়ি [সামআনি, কাওয়াতিউল আদিল্লাহ (২/৩৪০); গাযালি, আল-মুস্তাসফা (২/৩৮৭); ইবনুস সালাহ, আদাবুল ফাতাওয়া ১৩৫; আস-সফী আল-হিন্দি, নিহায়াতুল উসূল (৪/৩৯২৫); ইসনাওয়ি, যাওয়ায়িদুল উসূল ৪৩৯; ইবনুস সুবুকি, জামউল জাওয়ামি‘উ (৪/৬০০); সুয়ূতি, রিসালাতু উসূলিল ফিকহ ৭৭; আল-আনসারি, লুব্বুল উসূল ১৫০] এবং অনেক হাম্বলি ইমাম [আবুল খাত্তাব, আত-তামহীদ (৪/৩৯৫); ইবন কুদামাহ, রাওদাতুন নাযির (৩/১০১৭); ইবন তাইমিয়্যাহ, আল-মুসাওয়াদাহ ৫৫৩; তুফি, শারহু মুখতাসার আর-রাওদাহ (৩/৬৫১); ইবনুন নাজ্জার, শারহুল কাওকাবুল মুনীর (৪/৫২৯-৫৩০)]
সামআনি বলেন, এ হচ্ছে ফকীহগণের সংজ্ঞা। [কাওয়াতিউল আদিল্লাহ (২/৩৪০)]
আর এর ওপর চলেছেন ইবন হাযম, [আল-ইহকাম (২/২৩৩)] শাওকানি [ইরশাদুল ফুহূল ৪৪৩], সিদ্দীক হাসান খান [হুসূলুল মামূল ১৩৬]।

দুই. কারো কারো মতে তাকলীদ তখনই বলা হবে যখন এমন কারো অনুসরণ করা যার কথা স্বয়ং প্রমাণ। যেমন,
কাফফাল আশ-শাশি বলেন, তাকলীদ হচ্ছে বক্তার বক্তব্য গ্রহণ করে নেওয়া, যদিও জানা না যায়, তিনি তা কোত্থেকে বলেছেন। [আল-বাহুরুল মুহীত (৬/২৭০); সালাসিলুয যাহাব ৪৩৯-৪৪০; বুরহান (২/৮৮৮)]

নাসাফি বলেন, তাকলীদ হচ্ছে, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক অপর কারো থেকে শুনেই তার অনুসরণ করা এই ভিত্তিতে যে, সে হক বলেছে, যাতে দলীল দেখা কিংবা চিন্তা করা হয় না। [কাশফুল আসরার (২/১৭২-১৭৩)] জুরজানিও এমন একটি সংজ্ঞাই দিয়েছে। [আত-তা‘রীফাত, পৃ. ৯০]
তবে সবচেয়ে উপযোগী সংজ্ঞা হচ্ছে, এমন কারো ‘মাযহাব’ এর সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে নেওয়া যার কথা স্বয়ং দলীল নয়।

তাকলীদের ব্যাপারে মৌলিক নীতি:
সর্বশেষ সংজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি যে, মৌলিকভাবে ইসলামে তাকলীদ জায়িয নেই। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বহু আয়াতে তাকলীদ নিষেধ করেছেন। যেমন, “তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে যা নাযিল করা হয়েছে, তোমরা তার অনুসরণ করো এবং তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে অভিভাবকরূপে অনুসরণ করো না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করো।” [সূরা আল-আরাফ: ০৩] তাছাড়া তা পূর্ববর্তী উম্মাতদের কুফর ও শির্কে পতিত হওয়ার কারণ, আল্লাহ বলেন “আর যারা কুফরি করেছে তারা বলে, ‘আমরা এ কুরআনের ওপর কখনো ঈমান আনব না এবং এর আগে যা আছে তাতেও না।’ আর হায়! আপনি যদি দেখতেন যালিমদেরকে, যখন তাদের রবের সামনে দাঁড় করানো হবে, তখন তারা পরস্পর বাদ-প্রতিবাদ করতে থাকবে, যাদেরকে দুর্বল মনে করা হতো, তারা অহংকারীদেরকে বলবে, ‘তোমরা না থাকলে আমরা অবশ্যই মুমিন হতাম।’ যারা অহংকারী ছিল তারা, যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের কাছে সৎ পথের দিশা আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে নিবৃত্ত করেছিলাম? বরং তোমরাই ছিলে অপরাধী’।” [সূরা সাবা: ৩১-৩২] অনুরূপ “আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তোমরা অনুসরণ করো’, তারা বলে, ‘না, বরং আমরা অনুসরণ করব তার, যার ওপর আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি’। যদিও তাদের পিতৃপুরুষরা কিছু বুঝতো না এবং তারা সৎপথেও পরিচালিত ছিল না, তবুও কি?” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৭০] আরো বলেন, “আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে ও রাসূলের দিকে আস’, তখন তারা বলে, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যেটাতে পেয়েছি সেটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।’ যদিও তাদের পূর্বপুরুষরা কিছুই জানতো না এবং সৎ পথপ্রাপ্তও ছিল না, তবুও কি?” [সূরা আল-মায়িদাহ: ১০৪]; আরো এসেছে, “তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগীদেরকে তাদের রব রূপে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়াম-পুত্র মসীহকেও। অথচ এক ইলাহের ইবাদাত করার জন্যই তারা আদিষ্ট হয়েছিল। তিনি ব্যতীত অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই। তারা যে শরীক করে তা থেকে তিনি কতই না পবিত্র!” [সূরা আত-তাওবাহ: ৩১] এজন্যই প্রত্যেক ইমাম তাকলীদ থেকে নিষেধ করে গেছেন। বিষয়টি ইমাম আবু হানীফা, মালিক, শাফিয়ি ও আহমাদ ইবন হাম্বল থেকে সাব্যস্ত। দেখুন: ফুল্লানি, ঈকাযুল হিমাম; আলবানি, মুকাদ্দিমাতু সিফাতিস সালাত।

তাকলীদের প্রকারাদি ও প্রত্যেক প্রকারের বিধান:

তাকলীদ দুপ্রকার:

এক. অনুমোদিত তাকলীদ: আর তা কয়েক অবস্থায়,
১- সময় ও সুযোগ না থাকার কারণে কোনো আলিমের কথার ওপর নির্ভর করে আমল করা।

২- যোগ্যতা না থাকার কারণে কোনো আলিমের অনুসরণ করা। যেমন আল্লাহ বলেন, “আর আপনার আগে আমরা ওহিসহ পুরুষদেরকেই পাঠিয়েছিলাম। সুতরাং যদি তোমরা না জানো তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ০৭]

দুই. নিন্দিত তাকলীদ: আর তা হচ্ছে,
১- কুরআন ও সুন্নাহর ভাষ্য স্পষ্ট হওয়ার পরও তার বিরোধিতা করে কারো অনুসরণ করা। আল্লাহ বলেন, “আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ের ফয়সালা দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে বিষয়ে তাদের কোনো (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার সংগত নয়। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল, সে স্পষ্টভাবে পথভ্রষ্ট হলো।” [সূরা আল-আহযাব: ৩৬]

২- সুযোগ ও সামর্থ্য থাকার পরও কুরআন ও সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্ধভাবে কারো তাকলীদের পিছনে পড়ে থাকা। যেমন আল্লাহ বলেন, “আর স্মরণ করুন, যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে কেন কষ্ট দিচ্ছ অথচ তোমরা জানো যে, আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল। অতঃপর তারা যখন বাঁকা পথ অবলম্বন করল তখন আল্লাহ তাদের হৃদয়কে বাঁকা করে দিলেন। আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।” [সূরা আস-সাফ্‌ফ: ০৫] আরো বলেন, “একদলকে তিনি হিদায়াত করেছেন। আর অপরদল, তাদের ওপর পথভ্রান্তি নির্ধারিত হয়েছে। নিশ্চয় তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে তাদের অভিভাবক-রূপে গ্রহণ করেছিল এবং মনে করত তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।” [সূরা আল-আরাফ: ৩০]

৩- তাকলীদ বাধ্যতামূলক মনে করে কুরআন ও সুন্নাহর দলীল বোঝার চেষ্টা না করা।

৪- গোঁড়ামি করে কারো কোনো এক ব্যক্তির সকল কথাকে বাধ্যতামূলক মনে করে, তা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা। আল্লাহ বলেন, “যালিম ব্যক্তি সেদিন নিজের দুহাত দংশন করতে করতে বলবে, হায়, আমি যদি রাসূলের সঙ্গে কোনো পথ অবলম্বন করতাম!” [সূরা আল-ফুরকান: ২৭] আরো বলেন, “যেদিন তাদের মুখমণ্ডল আগুনে উলট-পালট করা হবে, সেদিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহকে মানতাম আর রাসূলকে মানতাম!” [সূরা আল-আহযাব: ৬৬] আরো বলেন, “যখন যাদের অনুসরণ করা হয়েছে তারা, যারা অনুসরণ করেছে তাদের থেকে নিজেদের মুক্ত করে নেবে এবং তারা শাস্তি দেখতে পাবে। আর তাদের পারস্পরিক সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৬৬]

তবে কোনো অবস্থাতেই বাতিলপন্থি ও বিদআতিদের বিদআত জানার পর কারো জন্য তাদের অনুসরণ অনুকরণ করা জায়িয নেই। কারণ তাহলে দীন আর আল্লাহর থাকবে না, ব্যক্তিবিশেষের হয়ে যাবে। দেখুন, ইবনুল কাইয়িম, তারীকুল হিজরাতাইন, পৃ. ৬০৭। কারণ তখন সেটা সে হাদীসের অধীন হবে যেখানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যে-কেউ ইসলামে বাজে কোনো কাজ করবে তার গুনাহ যেমন তার ওপর হবে তেমনি যত মানুষ তার অনুসরণ করবে সবার গুনাহ সে কাঁধে নিবে।” [মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১০১৭]

_____________________

এটা সালাফগণের মানহাজ নয়!
অনুবাদ: হাবিব বিন তোফাজ্জল
সম্পাদনা: শাইখ ড.আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া​
 
Top