মহান আল্লাহর ইবাদাতসমূহকে শিরকমুক্ত রাখাই তাওহীদ। তাওহীদ তিন প্রকার। যথা-
(১) মহান আল্লাহর ক্ষমতার তাওহীদ
এ প্রকার তাওহীদ মুশরিকগণও স্বীকার করতো। তারা আল্লাহ তাআলাকে সৃষ্টিকর্তা, রিদাতা, পালনকর্তা, পরিচালনাকারী, সম্পদদাতা, সম্মানদাতা, জীবন-মৃত্যু দানকারী হিসেবে বিশ্বাস করতো।
মহান আল্লাহ বলেন,
“বল, ‘আসমান ও জমিন থেকে কে তোমাদের রিযক দেন? অথবা কে (তোমাদের) শ্রবণ ও দৃষ্টিসমূহের মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সব বিষয় পরিচালনা করেন'? তখন তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ'। সুতরাং, তুমি বল, ‘তারপরও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না'?” [সূরা ১০; ইউনুস ৩১]
(২) মহান আল্লাহর ইবাদাতের তাওহীদ
ইবাদাত একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য হওয়া। لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ অর্থ لَا مَعْبُودَ بِحَقِّ إِلَّا অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্য মা'বুদ নেই। সুতরাং একজন কালেমায় বিশ্বাসী মু'মিন ইবাদাতের প্রকারসমূহের মধ্য থেকে কোনো একটি ইবাদাতও একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য করতে পারে না। একটি ইবাদাত করলেও তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
আমাদের সমাজে কেউ কেউ দীনদার, সালেহীন, নেককার বান্দাদের উদ্দেশ্যে অনেক ইবাদাত করে থাকে। যেমন- সিজদা করা, মান্নত করা, পশু যবেহ করা, সাহায্য যাওয়া, দু'আ করা প্রভৃতি। কিন্তু এ ইবাদাতগুলোকে তারা মহান আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্তির উসীলা বা মাধ্যম মনে করে। নিচের আয়াত দ্বারা তারা দলীল পেশ করে থাকে-
“হে মুমিনগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং তার নৈকট্যের অনুসন্ধান কর, আর তার রাস্তায় জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফল হও।” [সূরা ৫; আল-মায়িদাহ ৩৫]
যে দলীলটি তারা পেশ করে থাকে, তা এ আয়াতের বিকৃত ব্যাখ্যা।
এ আয়াতে ... الْوَسِيْلَةُ অর্থ- الطَّاعَةُ وَالْعِبَادَةُ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও ইবাদাত। আল্লাহ তাআলার আদেশ ও নিষেধ মানার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করা। এখানে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তির ইবাদাতকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলা হয়নি। আহলে সুন্নাত ওয়ালা জামা'আতের কোনো মুফাসসির এ ধরনের বাতিল ব্যাখ্যা দেননি।
সুতরাং কোনো দীনদার, সালেহীন বা পীর মাশায়েখের উদ্দেশ্যে যেকোনো ইবাদাত করে, অতঃপর তার ইবাদাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহকে পাওয়ার পথ অনুসরণ করলে ঈমান ভেঙে যাবে।
(৩) মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলির তাওহীদ
মহান আল্লাহর যতগুলো নাম ও গুণাবলি রয়েছে, কোনো প্রকার ধরন নির্ধারণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ব্যতীত, আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে বর্ণনা করেছেন, হুবহু সেভাবে সরল অর্থে বিশ্বাস স্থাপন করা। মহান আল্লাহর নাম, গুণাবলি, কর্ম ও হুকুম সম্পর্কে জানা সকল মানুষের জন্য আবশ্যক। কারণ, তাঁর ইবাদাত করতে হলে তাঁকে অবশ্যই চিনতে হবে, জানতে হবে। মহান আল্লাহকে দু'ভাবে চেনা যায়।
সংক্ষিপ্তভাবে এবং বিস্তারিতভাবে। সংক্ষিপ্তভাবে জানার মাধ্যমে ঈমানের ভিত্তি রচিত হয়, আর বিস্তারিতভাবে জানার মাধ্যমে শিরক ও কুফর থেকে মুক্ত থেকে তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা যায়। সূরা আল-ইখলাস ও আয়াতুল কুরসীর মাধ্যমে মহান আল্লাহকে সংক্ষিপ্তভাবে চেনা যায়। মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলিসমূহ বিস্তারিতভাবে জানার মাধ্যমে অন্তরে ঈমান বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহর ভয় তৈরি হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
“বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে।” [সূরা ৩৫; ফাতির ২৮]
“আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং, তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক।” [সূরা ৭; আল-আ'রাফ ১৮০]
“বল, 'তোমরা (তোমাদের রবকে) ‘আল্লাহ' নামে ডাক অথবা ‘রাহমান' নামে ডাক, যে নামেই তোমরা ডাক না কেন, তাঁর জন্যই তো রয়েছে সুন্দর নামসমূহ।” [সূরা ১৭; আল-ইসরা ১১০]
“তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদানকারী; তাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ।” [সূরা ৫৯; আল-হাশর ২৪]
আবূ হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“আল্লাহর নিরানব্বই অর্থাৎ এক কম একশটি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি তা মনে রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [সহীহ বুখারী: ২৭৩৬; মুসলিম: ২৬৭৭] ইমাম আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কোনো কিছুই তাঁর সাথে তুলনীয় নয়। তিনি তাঁর সৃষ্টির কোনো কিছুর মতো নন। তিনি অনাদি থেকে অনন্তকাল বিদ্যমান এবং তাঁর জাতি (সত্তাগত) ও ফি'লী (কর্মগত) সিফাত (গুণগত) সমূহসহও চিরস্থায়ী।” [আল-ফিকহুল আকবার, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, পৃ-২২৪]
(১) মহান আল্লাহর ক্ষমতার তাওহীদ
এ প্রকার তাওহীদ মুশরিকগণও স্বীকার করতো। তারা আল্লাহ তাআলাকে সৃষ্টিকর্তা, রিদাতা, পালনকর্তা, পরিচালনাকারী, সম্পদদাতা, সম্মানদাতা, জীবন-মৃত্যু দানকারী হিসেবে বিশ্বাস করতো।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَبِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ..
“আর তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ'।” [সূরা ৪৩; আয-যুখরুফ ৮৭]
قُل مَنْ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَمَّنْ يَمْلِكُ السَّبْعَ وَالْأَبْصَارَ وَ مَنْ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَقِّ وَ مَنْ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللهُ فَقُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ
“বল, ‘আসমান ও জমিন থেকে কে তোমাদের রিযক দেন? অথবা কে (তোমাদের) শ্রবণ ও দৃষ্টিসমূহের মালিক? আর কে মৃত থেকে জীবিতকে বের করেন আর জীবিত থেকে মৃতকে বের করেন? কে সব বিষয় পরিচালনা করেন'? তখন তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ'। সুতরাং, তুমি বল, ‘তারপরও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না'?” [সূরা ১০; ইউনুস ৩১]
(২) মহান আল্লাহর ইবাদাতের তাওহীদ
ইবাদাত একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য হওয়া। لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ অর্থ لَا مَعْبُودَ بِحَقِّ إِلَّا অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্য মা'বুদ নেই। সুতরাং একজন কালেমায় বিশ্বাসী মু'মিন ইবাদাতের প্রকারসমূহের মধ্য থেকে কোনো একটি ইবাদাতও একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য করতে পারে না। একটি ইবাদাত করলেও তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
আমাদের সমাজে কেউ কেউ দীনদার, সালেহীন, নেককার বান্দাদের উদ্দেশ্যে অনেক ইবাদাত করে থাকে। যেমন- সিজদা করা, মান্নত করা, পশু যবেহ করা, সাহায্য যাওয়া, দু'আ করা প্রভৃতি। কিন্তু এ ইবাদাতগুলোকে তারা মহান আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্তির উসীলা বা মাধ্যম মনে করে। নিচের আয়াত দ্বারা তারা দলীল পেশ করে থাকে-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيْلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيْلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
“হে মুমিনগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং তার নৈকট্যের অনুসন্ধান কর, আর তার রাস্তায় জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফল হও।” [সূরা ৫; আল-মায়িদাহ ৩৫]
যে দলীলটি তারা পেশ করে থাকে, তা এ আয়াতের বিকৃত ব্যাখ্যা।
এ আয়াতে ... الْوَسِيْلَةُ অর্থ- الطَّاعَةُ وَالْعِبَادَةُ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও ইবাদাত। আল্লাহ তাআলার আদেশ ও নিষেধ মানার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করা। এখানে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তির ইবাদাতকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করার কথা বলা হয়নি। আহলে সুন্নাত ওয়ালা জামা'আতের কোনো মুফাসসির এ ধরনের বাতিল ব্যাখ্যা দেননি।
সুতরাং কোনো দীনদার, সালেহীন বা পীর মাশায়েখের উদ্দেশ্যে যেকোনো ইবাদাত করে, অতঃপর তার ইবাদাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহকে পাওয়ার পথ অনুসরণ করলে ঈমান ভেঙে যাবে।
(৩) মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলির তাওহীদ
মহান আল্লাহর যতগুলো নাম ও গুণাবলি রয়েছে, কোনো প্রকার ধরন নির্ধারণ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ব্যতীত, আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে বর্ণনা করেছেন, হুবহু সেভাবে সরল অর্থে বিশ্বাস স্থাপন করা। মহান আল্লাহর নাম, গুণাবলি, কর্ম ও হুকুম সম্পর্কে জানা সকল মানুষের জন্য আবশ্যক। কারণ, তাঁর ইবাদাত করতে হলে তাঁকে অবশ্যই চিনতে হবে, জানতে হবে। মহান আল্লাহকে দু'ভাবে চেনা যায়।
সংক্ষিপ্তভাবে এবং বিস্তারিতভাবে। সংক্ষিপ্তভাবে জানার মাধ্যমে ঈমানের ভিত্তি রচিত হয়, আর বিস্তারিতভাবে জানার মাধ্যমে শিরক ও কুফর থেকে মুক্ত থেকে তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা যায়। সূরা আল-ইখলাস ও আয়াতুল কুরসীর মাধ্যমে মহান আল্লাহকে সংক্ষিপ্তভাবে চেনা যায়। মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলিসমূহ বিস্তারিতভাবে জানার মাধ্যমে অন্তরে ঈমান বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহর ভয় তৈরি হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَموا
“বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে।” [সূরা ৩৫; ফাতির ২৮]
وَلِلهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا
“আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং, তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক।” [সূরা ৭; আল-আ'রাফ ১৮০]
قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَنَ أَيَّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى
“বল, 'তোমরা (তোমাদের রবকে) ‘আল্লাহ' নামে ডাক অথবা ‘রাহমান' নামে ডাক, যে নামেই তোমরা ডাক না কেন, তাঁর জন্যই তো রয়েছে সুন্দর নামসমূহ।” [সূরা ১৭; আল-ইসরা ১১০]
هُوَ اللهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى
“তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদানকারী; তাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ।” [সূরা ৫৯; আল-হাশর ২৪]
আবূ হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ لِلَّهِ تِسْعَةٌ وَتِسْعِيْنَ إِسْمَا مِائَةً إِلَّا وَاحِدًا مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“আল্লাহর নিরানব্বই অর্থাৎ এক কম একশটি নাম রয়েছে, যে ব্যক্তি তা মনে রাখবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [সহীহ বুখারী: ২৭৩৬; মুসলিম: ২৬৭৭] ইমাম আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
لا يُشْبِهُ شَيْئًا مِنَ الأَشْيَاءِ مِنْ خَلْقِهِ، وَلَا يُشْبِهُهُ شَيْءٌ مِنْ خَلْقِهِ. لَمْ يَزَلْ وَلَا يَزَالُ بِأَسْمَائِهِ وَصِفَاتِهِ الدَّانِيَّةِ وَالْفِعْلِيَّةِ.
“তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কোনো কিছুই তাঁর সাথে তুলনীয় নয়। তিনি তাঁর সৃষ্টির কোনো কিছুর মতো নন। তিনি অনাদি থেকে অনন্তকাল বিদ্যমান এবং তাঁর জাতি (সত্তাগত) ও ফি'লী (কর্মগত) সিফাত (গুণগত) সমূহসহও চিরস্থায়ী।” [আল-ফিকহুল আকবার, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, পৃ-২২৪]