তওবা সকল পাপ ক্ষমা নেয়ার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম
তওবা-ইস্তিগফার পাপ থেকে মুক্তির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মানুষের পাপ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক বিষয় নয়। বরং পাপ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক। পাপ হয়ে গেলে বাঁচার পথও ইসলামে বাতলে দেয়া হয়েছে। যখন কোন ব্যক্তি পাপ করে ফেলে তখন তাকে আন্তরিকভাবে তওবা করতে হবে। এমর্মে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে এরশাদ করেন,
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্র নিকট তওবা কর; বিশুদ্ধ ও আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ তওবা’ (সূরা আত-তাহরীম : ৮)। হৃদয় থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কেউ তওবা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। ইনশাআল্লাহ! কারণ তিনিই বিশ্বাসীদের ক্ষমার চাইতে নির্দেশ দিয়েছেন। ক্ষমা করা তাঁর মহৎ গুণের অন্যতম। তিনি ক্ষমা করতেও পসন্দ করেন। আর ক্ষমাকারীকেও পসন্দ করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দৈনিক অধিক পরিমাণে ক্ষমা চাইতেন।
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি দৈনিক সত্তর বারেরও বেশি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই’।[১] অন্যত্র রয়েছে-
আগার মুযানী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহর নিকট তাওবা কর। আমি দৈনিক একশতবার তাঁর নিকট তাওবা করি’।[২]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন নিষ্পাপ। তার আগের পরের বর্তমান সব পাপ আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।[৩] তার জীবনে কোন পাপ অবশিষ্ট রাখা হয়নি। তার পরও তিনি প্রতিদিন সত্তর বার কিংবা একশ’ বার আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তিনি ক্ষমা চাইতে অলসতা বা পিছুপা হতেন না। আর আমাদের জীবনে তো অগণিত পাপের স্তুপ হয়ে রয়েছে। অথচ আমরা প্রতিদিন অধিক পরিমাণে ক্ষমা চাচ্ছি না। যা একেবারে অন্যায়। বিধায় আমাদের উচিত প্রত্যাহ প্রভুর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। ক্ষমা চাইতে অলসতা করা বা ক্ষমার ব্যাপারে নিরাশ হওয়া উচিত নয়।
যাদের তওবা নিশ্চিত কবুল হয়
এমন কতিপয় সময় ও পর্যায় রয়েছে যখন নিশ্চিত তওবা কবুল হয়। এ পর্যায়ে কেউ ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দেন না। এরশাদ হচ্ছে-
‘আল্লাহ তওবা কবুল করেন কেবল সে সকল লোকের, যারা অপরাধ করে অজ্ঞতাবশত; অতঃপর তাড়াতাড়ি তওবা করে’ (সূরা আন-নিসা : ১৭)।
না জেনে কেউ ভুল করে তৎক্ষণাৎ তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। কেননা কেউ পাপ করলে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত তার পাপ লেখা হয় না। এর মধ্যে সে ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।[৪]
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যখন বান্দা গুনাহ স্বীকার করে এবং অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে ক্ষমা চায় আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন’।[৫]
ইবনু উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তওবা সে পর্যন্ত কবুল করবেন, যে পর্যন্ত তার প্রাণ কণ্ঠাগত বা ওষ্ঠাগত না হয়’।[৬]
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে তওবা করবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন’।[৭] অপর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘গোনাহের কাজের দু‘আ না করলে অথবা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দু‘আ না করলে কিংবা দু‘আতে তাড়াতাড়ি না করলে বান্দার দু‘আ কবুল করা হয়। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! তাড়াতাড়ি কী? রাসূল (ﷺ) বললেন, মানুষ বলবে আমি এ দু‘আ করেছি, আমি ঐ দু‘আ করেছি, কৈ আমার দু‘আ তো কবুল হতে দেখলাম না। অতঃপর সে দুর্বল ও অলস হয়ে পড়ে এবং দু‘আ করা ছেড়ে দেয়’।[৮]
অতএব তওবা কবুলের জন্য ইসলামে কয়েকটি দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেমন,
উল্লেখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে কেউ তওবা করলে ইনশাআল্লাহ তার তওবা কবুল হবে। সর্ব বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলাই অধিক অবগত!
তওবাকারী ব্যক্তিরাই সর্বোত্তম
অপরাধ করে তওবাকারী ব্যক্তিবর্গই আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। তওবার মধ্যেই মুমিন জীবনের সফলতা লুকিয়ে রয়েছে। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন,
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার’ (সূরা আন-নূর : ৩১)। এমর্মে হাদীসে রয়েছে-
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী। তবে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম ভুলকারী যে তওবা করে’।[৯]
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার আত্মা রয়েছে! যদি তোমরা গুনাহ না করতে আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে দিতেন এবং এমন এক জাতিকে সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন’।[১০] অপর একটি হাদীসে রয়েছে-
আব্দুল্লাহ ইবনু বুসর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, ‘সেই লোক ধন্য হবে, যার আমলনামাতে বেশি বেশি ইস্তিগফার পাওয়া যাবে অর্থাৎ ক্ষমা চাওয়া আমল পাবে’।[১১]
আল্লাহ স্বীয় বান্দার প্রতি ক্ষমাশীল ও অতিশয় দয়ালু। তিনি চান বান্দা তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করুক। বিধায় অপরাধ করার পর তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি অধিক খুশী হন। যারা ভুল করার পর তওবা করে তাদেরকেই ইসলামে সর্বোত্তম ব্যক্তি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যারা অধিক পরিমাণে তওবা-ইস্তিগফার করে তারা সফল ব্যক্তি। তাদের জীবনই ধন্য।
তওবাকারীর প্রতি আল্লাহ সীমাহীন খুশি হন
কোন ব্যক্তি যখন অপরাধ করার পর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই তখন তিনি তার প্রতি সীমাহীন খুশি হন। যা নি¤েœর হাদীস থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়-
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবা ও ক্ষমা চাওয়াতে আনন্দিত হন, যখন সে তার নিকট তওবা করে, তোমাদের মধ্যকার সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক যার বাহন একটি মরু প্রান্তরে তার নিকট হতে ছুটে পালায় যার পিঠে তার খাদ্য ও পানীয় ছিল। এতে লোকটি হতাশ হয়ে যায়। অতঃপর সে একটি গাছের নিকট এসে তার ছায়ায় শুয়ে পড়ে। সে তার বাহন সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরাশ। এমতাবস্থায় সে হঠাৎ দেখে বাহন তার নিকট দাঁড়িয়ে আছে। সে তার লাগাম ধরে আনন্দের আতিশয্যে বলে ওঠে হে আল্লাহ! আপনি আমার বান্দা আর আমি আপনার প্রতিপালক! সে ভুল করে আনন্দের আতিশয্যে এরূপ বলে ফেলে’।[১২]
আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলেই তিনি ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন
বান্দা তাঁর নিকট ক্ষমা চাইলে তিনি তা ক্ষমা করার জন্য সদায় প্রস্তুত থাকেন। তিনি প্রতি রাতেই অপরাধী বান্দাদের ক্ষমা করা জন্য ডাক দেন। তাদেরকে শুধু আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। খালেছ অন্তরে ক্ষমা চাইলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। এমর্মে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিপালক তাবারকা ওয়া তা‘আলা প্রত্যেক রাতের তিন ভাগের শেষ ভাগে (একতৃতীয়াংশ বাকী থাকতে) প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন কে আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আমার কাছে কিছু চায় আমি তাকে তা দিব। কে আমার কাছে ক্ষমা চায় আমি তাকে ক্ষমা করে দিব’।[১৩]
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি সেইরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সাথে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দায় তওবায় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি খুশী হন, যে তার মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া বাহন ফিরে পায়। আর যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। যে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। আর সে যখন আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তখন তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই’।[১৪]
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় হাত প্রসারিত করেন যাতে দিনের গুনাহগার যারা তারা তওবা করে। আবার দিনের বেলায় হাত প্রসারিত করেন যাতে রাতের গুনাহগার ব্যক্তিরা তাওবা করে। এভাবে তিনি ক্ষমার হাত প্রসারিত করতে থাকবেন পশ্চিম দিকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত’।[১৫]
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করার জন্য দিবা-রাত্রিই প্রস্তুত থাকেন। ক্ষমা চাইলে তিনি রাগ করেন না বরং অত্যধিক খুশি হন। তাঁর কাছে কোন জিনিস বারবার চাইলে তিনি বেজার হন না। তাঁর নিকট যতই চাইবে তিনি ততই খুশি হন। অপরাধ করে তওবার জন্য তাঁর দিকে যে গতিতে মানুষ অগ্রসর হয়, তিনি তার দ্বিগুণ গতিতে ক্ষমা করার জন্য বান্দার দিকে অগ্রসর হন। সুবহানাআল্লাহ! তাঁর এ মহৎগুণ লিখে শেষ করার মত নয়।
আবূ যার গিফারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) আল্লাহর নাম করে বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আমার বান্দাগণ! আমি যুলুমকে আমার জন্য হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম করো না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই পথহারা কিন্তু আমি যাকে পথ দেখাই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট সঠিক পথের সন্ধান চাও। আমি তোমাদেরকে পথ দেখাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই ক্ষুধার্ত কিন্তু আমি যাকে আহার দেই। অতএব তোমরা আমার নিকট খাদ্য চাও। আমি তোমাদেরকে খাদ্য দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই নগ্ন বা বস্ত্রহীন কিন্তু আমি যাকে পরিধান করাই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট পোশাক চাও। আমি তোমাদেরকে পরিধান করাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা অপরাধ করে থাক রাত-দিন, আমি সমস্ত অপরাধ মাফ করে দেই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব’।[১৬]
মানুষ দিনে রাতে যে অপরধাই করুক না কেন তা ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তাঁর নিকট ক্ষমা না চাওয়াই আত্মঅহমিকার বড় নিদর্শন। নিরহংকার মানুষরা তাঁর নিকট ক্ষমা চাইতে লজ্জাবোধ করে না। অহংকারী স্বভাবের ব্যক্তিরা ক্ষমা চাইতে লজ্জাবোধ করে। তাঁর নিকট ক্ষমা চাইতে লজ্জাবোধ করা যাবে না। সে যে পাপই করুক না কেন।
তথ্যসূত্র :
[১]. সহীহ বুখারী, হা/৬৩০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৭৮০; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৯২৫; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৮৭৭০; মিশকাত, হা/২৩২৩।
[২]. সহীহ মুসলিম, হা/২৭০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৮৮০; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৯২৯; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭০২২; মিশকাত, হা/২৩২৫।
[৩]. সূরা ফাতাহ, ৪৮/২ নং আয়াত; সহীহ বুখারী, হা/৫০৬৩; মিশকাত, হা/১৪৫।
[৪]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭০৫১; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৭৭৬৫; সহীহুল জামে‘, হা/২০৯৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১২০৯, সনদ হাসান।
[৫]. সহীহ বুখারী, হা/৪১৪১; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৭০; মুসনাদে আহমাদ হা/২৫৬৬৪; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪২১২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১২০৮; মিশকাত, হা/২৩৩০।
[৬]. তিরমিযী, হা/৩৫৩৭; ইবনু মাজাহ, হা/৪২৫৩; আহমাদ, হা/৬১৬০; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬২৮; মিশকাত, হা/২৩৪৩, সনদ হাসান।
[৭]. সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩৬; আহমাদ, হা/৯১১৯; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬২৯; ত্বাবারাণী আওসাত, হা/৭৩৪৪; মিশকাত, হা/২৩৩১।
[৮]. সহীহ মুসলিম, হা/৭১১২; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৯৭৬; বায়হাক্বী কুবরা, হা/৬২২২; সহীহ আত-তারগীব, হা/১৬৪৯; মিশকাত, হা/২২২৭।
[৯]. তিরমিযী, হা/২৪৯৯; ইবনু মাজাহ, হা/২৪৫১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬১৭; দারেমী, হা/২৭২৭; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭১২৭; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/২৯২২; মিশকাত, হা/২৩৪১, পৃ. ২০৪, সনদ হাসান।
[১০]. সহীহ মুসলিম, হা/২৭৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০৬৮; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭১০২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৯৫০; মিশকাত, হা/২৩২৮।
[১১]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৮১৮; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৬৪৬; সহীহুল জামে‘, হা/৩৯৩০; সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩২৮; মিশকাত, হা/২৩৫৬, সনদ সহীহ।
[১২]. সহীহ মুসলিম, হা/২৭৪৪; সহীহুল জামে‘, হা/৫০৩০; সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৩৫; মিশকাত, হা/২৩৩২।
[১৩]. সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/৭৫৮; আবুদাউদ, হা/১৩১৫; তিরমিযী, হা/৩৪৯৮; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৬৬; মুওয়াত্তা মালেক, হা/৭২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৬১১; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৯২০; মিশকাত, হা/১২২৩।
[১৪]. সহীহ বুখারী, হা/৭৪০৫; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৫; তিরমিযী, হা/৩৬০৩; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৯২২; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৮১১।
[১৫]. সহীহ মুসলিম, হা/২৭৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৫৪৭; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৬৬; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭০৭৫; মিশকাত, হা/২৩২৯।
[১৬]. সহীহ মুসলিম, হা/২৫৭৭; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭০৮৮; মুসনাদে বাযযার, হা/৪০৫৩; সহীহুল জামে‘, হা/৪৩৪৫; মিশকাত, হা/২৩২৬
তওবা-ইস্তিগফার পাপ থেকে মুক্তির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মানুষের পাপ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক বিষয় নয়। বরং পাপ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক। পাপ হয়ে গেলে বাঁচার পথও ইসলামে বাতলে দেয়া হয়েছে। যখন কোন ব্যক্তি পাপ করে ফেলে তখন তাকে আন্তরিকভাবে তওবা করতে হবে। এমর্মে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে এরশাদ করেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ تَوۡبَۃً نَّصُوۡحًا
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্র নিকট তওবা কর; বিশুদ্ধ ও আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ তওবা’ (সূরা আত-তাহরীম : ৮)। হৃদয় থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কেউ তওবা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। ইনশাআল্লাহ! কারণ তিনিই বিশ্বাসীদের ক্ষমার চাইতে নির্দেশ দিয়েছেন। ক্ষমা করা তাঁর মহৎ গুণের অন্যতম। তিনি ক্ষমা করতেও পসন্দ করেন। আর ক্ষমাকারীকেও পসন্দ করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দৈনিক অধিক পরিমাণে ক্ষমা চাইতেন।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ وَاللهِ إِنِّيْ لَأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِيْنَ مَرَّةً
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি দৈনিক সত্তর বারেরও বেশি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই’।[১] অন্যত্র রয়েছে-
عَنِ الْأَغَرِّ الْمُزَنِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوْبُوْا إِلَى اللهِ فَإِنِّي أَتُوْبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ
আগার মুযানী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! আল্লাহর নিকট তাওবা কর। আমি দৈনিক একশতবার তাঁর নিকট তাওবা করি’।[২]
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছিলেন নিষ্পাপ। তার আগের পরের বর্তমান সব পাপ আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।[৩] তার জীবনে কোন পাপ অবশিষ্ট রাখা হয়নি। তার পরও তিনি প্রতিদিন সত্তর বার কিংবা একশ’ বার আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তিনি ক্ষমা চাইতে অলসতা বা পিছুপা হতেন না। আর আমাদের জীবনে তো অগণিত পাপের স্তুপ হয়ে রয়েছে। অথচ আমরা প্রতিদিন অধিক পরিমাণে ক্ষমা চাচ্ছি না। যা একেবারে অন্যায়। বিধায় আমাদের উচিত প্রত্যাহ প্রভুর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। ক্ষমা চাইতে অলসতা করা বা ক্ষমার ব্যাপারে নিরাশ হওয়া উচিত নয়।
যাদের তওবা নিশ্চিত কবুল হয়
এমন কতিপয় সময় ও পর্যায় রয়েছে যখন নিশ্চিত তওবা কবুল হয়। এ পর্যায়ে কেউ ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দেন না। এরশাদ হচ্ছে-
إ اِنَّمَا التَّوۡبَۃُ عَلَی اللّٰہِ لِلَّذِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ السُّوۡٓءَ بِجَہَالَۃٍ ثُمَّ یَتُوۡبُوۡنَ مِنۡ قَرِیۡبٍ
‘আল্লাহ তওবা কবুল করেন কেবল সে সকল লোকের, যারা অপরাধ করে অজ্ঞতাবশত; অতঃপর তাড়াতাড়ি তওবা করে’ (সূরা আন-নিসা : ১৭)।
না জেনে কেউ ভুল করে তৎক্ষণাৎ তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। কেননা কেউ পাপ করলে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত তার পাপ লেখা হয় না। এর মধ্যে সে ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।[৪]
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قالت قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ بِذَنْبٍ ثُمَّ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যখন বান্দা গুনাহ স্বীকার করে এবং অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করে ক্ষমা চায় আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন’।[৫]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ إِنَّ اللهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ
ইবনু উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তওবা সে পর্যন্ত কবুল করবেন, যে পর্যন্ত তার প্রাণ কণ্ঠাগত বা ওষ্ঠাগত না হয়’।[৬]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ تَابَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا تَابَ اللهُ عَلَيْهِ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে তওবা করবে আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন’।[৭] অপর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ য قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله ﷺ يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيْعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا الِاسْتِعْجَالُ قَالَ يَقُوْلُ قَدْ دَعَوْتُ وَقَدْ دَعَوْتُ فَلَمْ أَرَ يَسْتَجِيْبُ لِيْ فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ وَيَدَعُ الدُّعَاءَ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘গোনাহের কাজের দু‘আ না করলে অথবা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দু‘আ না করলে কিংবা দু‘আতে তাড়াতাড়ি না করলে বান্দার দু‘আ কবুল করা হয়। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! তাড়াতাড়ি কী? রাসূল (ﷺ) বললেন, মানুষ বলবে আমি এ দু‘আ করেছি, আমি ঐ দু‘আ করেছি, কৈ আমার দু‘আ তো কবুল হতে দেখলাম না। অতঃপর সে দুর্বল ও অলস হয়ে পড়ে এবং দু‘আ করা ছেড়ে দেয়’।[৮]
অতএব তওবা কবুলের জন্য ইসলামে কয়েকটি দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেমন,
- জেনে বুঝে পাপে জড়িত হওয়া যাবে না।
- পাপ কর্ম হওয়ার পর পরই ক্ষমা চাইতে হবে। পাপ করে ক্ষমা চাইতে বেশি দেরী করা ঠিক নয়।
- নিজের অন্যায় কর্মের ভুল স্বীকার করে রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
- মৃত্যু যন্ত্রণা আরম্ভ হওয়ার আগেই ক্ষমা চাইতে হবে।
- ক্বিয়ামত তথা আযাব এসে যাওয়ার পূর্বেই ক্ষমা চাইতে হবে। এ বিষয়ে শেষ যামানার মানুষ যারা ক্বিয়ামতের পূর্বক্ষণে থাকবেন তাদের সতর্ক থাকতে হবে।
- গুনাহের কাজ বা অন্যায় কাজের ব্যাপারে প্রার্থনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- দু‘আ কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করা যাবে না। দু‘আ করে ধৈর্যধারণ করতে হবে।
- দু‘আ বা তওবা কবুল হচ্ছে না ভেবে দু‘আ করা পরিত্যাগ করা যাবে না। আল্লাহর নিকট ছবরের সাথে বারংবার চাইতে থাকতে হবে।
উল্লেখিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে কেউ তওবা করলে ইনশাআল্লাহ তার তওবা কবুল হবে। সর্ব বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলাই অধিক অবগত!
তওবাকারী ব্যক্তিরাই সর্বোত্তম
অপরাধ করে তওবাকারী ব্যক্তিবর্গই আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। তওবার মধ্যেই মুমিন জীবনের সফলতা লুকিয়ে রয়েছে। এমর্মে মহান আল্লাহ বলেন,
وَ تُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ جَمِیۡعًا اَیُّہَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার’ (সূরা আন-নূর : ৩১)। এমর্মে হাদীসে রয়েছে-
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ كُلُّ بَنِىْ آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِيْنَ التَّوَّابُوْنَ
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী। তবে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম ভুলকারী যে তওবা করে’।[৯]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ لَوْ لَمْ تُذْنِبُوْا لَذَهَبَ اللهُ بِكُمْ وَلَجَاءَ بِقَوْمٍ يُذْنِبُوْنَ فَيَسْتَغْفِرُوْنَ اللهَ فَيَغْفِرُ لَهُمْ
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার আত্মা রয়েছে! যদি তোমরা গুনাহ না করতে আল্লাহ তোমাদের সরিয়ে দিতেন এবং এমন এক জাতিকে সৃষ্টি করতেন যারা গুনাহ করে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করত। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন’।[১০] অপর একটি হাদীসে রয়েছে-
عَبْدَ اللهِ بْنَ بُسْرٍ يَقُوْلُ قَالَ النَّبِىُّ ﷺ طُوْبَى لِمَنْ وَجَدَ فِىْ صَحِيْفَتِهِ اسْتِغْفَارًا كَثِيْرًا
আব্দুল্লাহ ইবনু বুসর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, ‘সেই লোক ধন্য হবে, যার আমলনামাতে বেশি বেশি ইস্তিগফার পাওয়া যাবে অর্থাৎ ক্ষমা চাওয়া আমল পাবে’।[১১]
আল্লাহ স্বীয় বান্দার প্রতি ক্ষমাশীল ও অতিশয় দয়ালু। তিনি চান বান্দা তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করুক। বিধায় অপরাধ করার পর তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি অধিক খুশী হন। যারা ভুল করার পর তওবা করে তাদেরকেই ইসলামে সর্বোত্তম ব্যক্তি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যারা অধিক পরিমাণে তওবা-ইস্তিগফার করে তারা সফল ব্যক্তি। তাদের জীবনই ধন্য।
তওবাকারীর প্রতি আল্লাহ সীমাহীন খুশি হন
কোন ব্যক্তি যখন অপরাধ করার পর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই তখন তিনি তার প্রতি সীমাহীন খুশি হন। যা নি¤েœর হাদীস থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যায়-
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَلهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِيْنَ يَتُوْبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِىْ ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِىْ وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবা ও ক্ষমা চাওয়াতে আনন্দিত হন, যখন সে তার নিকট তওবা করে, তোমাদের মধ্যকার সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক যার বাহন একটি মরু প্রান্তরে তার নিকট হতে ছুটে পালায় যার পিঠে তার খাদ্য ও পানীয় ছিল। এতে লোকটি হতাশ হয়ে যায়। অতঃপর সে একটি গাছের নিকট এসে তার ছায়ায় শুয়ে পড়ে। সে তার বাহন সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরাশ। এমতাবস্থায় সে হঠাৎ দেখে বাহন তার নিকট দাঁড়িয়ে আছে। সে তার লাগাম ধরে আনন্দের আতিশয্যে বলে ওঠে হে আল্লাহ! আপনি আমার বান্দা আর আমি আপনার প্রতিপালক! সে ভুল করে আনন্দের আতিশয্যে এরূপ বলে ফেলে’।[১২]
আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলেই তিনি ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত থাকেন
বান্দা তাঁর নিকট ক্ষমা চাইলে তিনি তা ক্ষমা করার জন্য সদায় প্রস্তুত থাকেন। তিনি প্রতি রাতেই অপরাধী বান্দাদের ক্ষমা করা জন্য ডাক দেন। তাদেরকে শুধু আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। খালেছ অন্তরে ক্ষমা চাইলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। এমর্মে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِيْنَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ فَيَقُوْلُ مَنْ يَدْعُوْنِىْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ وَمَنْ يَسْأَلُنِىْ فَأُعْطِيَهُ وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِىْ فَأَغْفِرَ لَهُ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিপালক তাবারকা ওয়া তা‘আলা প্রত্যেক রাতের তিন ভাগের শেষ ভাগে (একতৃতীয়াংশ বাকী থাকতে) প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন কে আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আমার কাছে কিছু চায় আমি তাকে তা দিব। কে আমার কাছে ক্ষমা চায় আমি তাকে ক্ষমা করে দিব’।[১৩]
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ أَنَّهُ قَالَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِىْ بِىْ وَأَنَا مَعَهُ حَيْثُ يَذْكُرُنِىْ وَاللهِ لَلهُ أَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أَحَدِكُمْ يَجِدُ ضَالَّتَهُ بِالْفَلَاةِ وَمَنْ تَقَرَّبَ إِلَىَّ شِبْرًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا وَمَنْ تَقَرَّبَ إِلَىَّ ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ بَاعًا وَإِذَا أَقْبَلَ إِلَىَّ يَمْشِىْ أَقْبَلْتُ إِلَيْهِ أُهَرْوِلُ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি সেইরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সাথে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দায় তওবায় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি খুশী হন, যে তার মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া বাহন ফিরে পায়। আর যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। যে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। আর সে যখন আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তখন তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই’।[১৪]
عَنْ أَبِىْ مُوْسَى عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ إِنَّ اللهَ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوْبَ مُسِىءُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوْبَ مُسِىءُ اللَّيْلِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا
আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় হাত প্রসারিত করেন যাতে দিনের গুনাহগার যারা তারা তওবা করে। আবার দিনের বেলায় হাত প্রসারিত করেন যাতে রাতের গুনাহগার ব্যক্তিরা তাওবা করে। এভাবে তিনি ক্ষমার হাত প্রসারিত করতে থাকবেন পশ্চিম দিকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত’।[১৫]
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করার জন্য দিবা-রাত্রিই প্রস্তুত থাকেন। ক্ষমা চাইলে তিনি রাগ করেন না বরং অত্যধিক খুশি হন। তাঁর কাছে কোন জিনিস বারবার চাইলে তিনি বেজার হন না। তাঁর নিকট যতই চাইবে তিনি ততই খুশি হন। অপরাধ করে তওবার জন্য তাঁর দিকে যে গতিতে মানুষ অগ্রসর হয়, তিনি তার দ্বিগুণ গতিতে ক্ষমা করার জন্য বান্দার দিকে অগ্রসর হন। সুবহানাআল্লাহ! তাঁর এ মহৎগুণ লিখে শেষ করার মত নয়।
عَنْ أَبِىْ ذَرٍّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فِيْمَا رَوَى عَنِ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَّهُ قَالَ يَا عِبَادِىْ إِنِّىْ حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِىْ وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلَا تَظَالَمُوْا يَا عِبَادِىْ كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُوْنِىْ أَهْدِكُمْ يَا عِبَادِىْ كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلَّا مَنْ أَطْعَمْتُهُ فَاسْتَطْعِمُوْنِىْ أُطْعِمْكُمْ يَا عِبَادِىْ كُلُّكُمْ عَارٍ إِلَّا مَنْ كَسَوْتُهُ فَاسْتَكْسُوْنِىْ أَكْسُكُمْ يَا عِبَادِىْ إِنَّكُمْ تُخْطِئُوْنَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا فَاسْتَغْفِرُوْنِى أَغْفِرْ لَكُمْ
আবূ যার গিফারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) আল্লাহর নাম করে বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আমার বান্দাগণ! আমি যুলুমকে আমার জন্য হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর যুলুম করো না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই পথহারা কিন্তু আমি যাকে পথ দেখাই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট সঠিক পথের সন্ধান চাও। আমি তোমাদেরকে পথ দেখাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই ক্ষুধার্ত কিন্তু আমি যাকে আহার দেই। অতএব তোমরা আমার নিকট খাদ্য চাও। আমি তোমাদেরকে খাদ্য দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই নগ্ন বা বস্ত্রহীন কিন্তু আমি যাকে পরিধান করাই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট পোশাক চাও। আমি তোমাদেরকে পরিধান করাব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা অপরাধ করে থাক রাত-দিন, আমি সমস্ত অপরাধ মাফ করে দেই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব’।[১৬]
মানুষ দিনে রাতে যে অপরধাই করুক না কেন তা ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। তাঁর নিকট ক্ষমা না চাওয়াই আত্মঅহমিকার বড় নিদর্শন। নিরহংকার মানুষরা তাঁর নিকট ক্ষমা চাইতে লজ্জাবোধ করে না। অহংকারী স্বভাবের ব্যক্তিরা ক্ষমা চাইতে লজ্জাবোধ করে। তাঁর নিকট ক্ষমা চাইতে লজ্জাবোধ করা যাবে না। সে যে পাপই করুক না কেন।
তথ্যসূত্র :
[১]. সহীহ বুখারী, হা/৬৩০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৭৮০; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৯২৫; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৮৭৭০; মিশকাত, হা/২৩২৩।
[২]. সহীহ মুসলিম, হা/২৭০২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৮৮০; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৯২৯; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭০২২; মিশকাত, হা/২৩২৫।
[৩]. সূরা ফাতাহ, ৪৮/২ নং আয়াত; সহীহ বুখারী, হা/৫০৬৩; মিশকাত, হা/১৪৫।
[৪]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭০৫১; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৭৭৬৫; সহীহুল জামে‘, হা/২০৯৭; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১২০৯, সনদ হাসান।
[৫]. সহীহ বুখারী, হা/৪১৪১; সহীহ মুসলিম, হা/২৭৭০; মুসনাদে আহমাদ হা/২৫৬৬৪; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪২১২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১২০৮; মিশকাত, হা/২৩৩০।
[৬]. তিরমিযী, হা/৩৫৩৭; ইবনু মাজাহ, হা/৪২৫৩; আহমাদ, হা/৬১৬০; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬২৮; মিশকাত, হা/২৩৪৩, সনদ হাসান।
[৭]. সহীহ মুসলিম, হা/৭০৩৬; আহমাদ, হা/৯১১৯; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬২৯; ত্বাবারাণী আওসাত, হা/৭৩৪৪; মিশকাত, হা/২৩৩১।
[৮]. সহীহ মুসলিম, হা/৭১১২; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৯৭৬; বায়হাক্বী কুবরা, হা/৬২২২; সহীহ আত-তারগীব, হা/১৬৪৯; মিশকাত, হা/২২২৭।
[৯]. তিরমিযী, হা/২৪৯৯; ইবনু মাজাহ, হা/২৪৫১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৬১৭; দারেমী, হা/২৭২৭; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭১২৭; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/২৯২২; মিশকাত, হা/২৩৪১, পৃ. ২০৪, সনদ হাসান।
[১০]. সহীহ মুসলিম, হা/২৭৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮০৬৮; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭১০২; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৯৫০; মিশকাত, হা/২৩২৮।
[১১]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৮১৮; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৬৪৬; সহীহুল জামে‘, হা/৩৯৩০; সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৩২৮; মিশকাত, হা/২৩৫৬, সনদ সহীহ।
[১২]. সহীহ মুসলিম, হা/২৭৪৪; সহীহুল জামে‘, হা/৫০৩০; সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৩৫; মিশকাত, হা/২৩৩২।
[১৩]. সহীহ বুখারী, হা/১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হা/৭৫৮; আবুদাউদ, হা/১৩১৫; তিরমিযী, হা/৩৪৯৮; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৬৬; মুওয়াত্তা মালেক, হা/৭২৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৬১১; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৯২০; মিশকাত, হা/১২২৩।
[১৪]. সহীহ বুখারী, হা/৭৪০৫; সহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৫; তিরমিযী, হা/৩৬০৩; ইবনু মাজাহ, হা/৩৮২২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১০৯২২; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৮১১।
[১৫]. সহীহ মুসলিম, হা/২৭৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৫৪৭; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৬৬; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭০৭৫; মিশকাত, হা/২৩২৯।
[১৬]. সহীহ মুসলিম, হা/২৫৭৭; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭০৮৮; মুসনাদে বাযযার, হা/৪০৫৩; সহীহুল জামে‘, হা/৪৩৪৫; মিশকাত, হা/২৩২৬
-ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
Last edited: