‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রবন্ধ জ্বীন সম্পর্কে জানতে হবে

rasikulindia

Salafi

Salafi User
Threads
37
Comments
48
Reactions
569
Credits
190
জ্বীন আল্লাহ তা'আলার একটি সৃষ্টি। যেমন তিনি ফিরিশতা, মানুষ সৃষ্টি করেছেন তেমনি সৃষ্টি করেছেন জ্বীন। তাদের বিবেক, বুদ্ধি, অনুভূতি শক্তি রয়েছে। তাদের আছে ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা। তাদের মধ্যে আছে ভাল জ্বীন ও মন্দ জ্বীন।

আল্লাহ্‌ সুবহানু তায়ালা বলেন,

وَّ اَنَّا مِنَّا الصّٰلِحُوۡنَ وَ مِنَّا دُوۡنَ ذٰلِکَ ؕ کُنَّا طَرَآئِقَ قِدَدًا ﴿ۙ۱۱﴾​

‘আর নিশ্চয় আমাদের কতিপয় সৎকর্মশীল এবং কতিপয় এর ব্যতিক্রম। আমরা ছিলাম বিভিন্ন মত ও পথে বিভক্ত’। (সূরা আল জ্বীন:১১)

এ গোষ্ঠির নাম জ্বীন রাখা হয়েছে, কারণ জ্বীন শব্দের অর্থঃ গোপন। আরবী জ্বীন শব্দ থেকে ‘ইজতিনান’ এর অর্থঃ হল ‘ইসতেতার’ বা গোপন হওয়া। যেমন আল কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:

فَلَمَّا جَنَّ عَلَیۡہِ الَّیۡلُ​

অর্থঃ অতঃপর যখন রাত তার উপর আচ্ছন্ন হল.... (সূরা আল আনআম: ৭৬)

এখানে জান্না অর্থ হল, আচ্ছন হওয়া, ঢেকে যাওয়া, গোপন হওয়া। তারা মানুষের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকে বলেই তাদের নাম রাখা হয়েছে জ্বীন।

যেমন, আল্লাহ রাব্দুল আলামীন বলেন:

اِنَّہٗ یَرٰىکُمۡ ہُوَ وَ قَبِیۡلُہٗ مِنۡ حَیۡثُ لَا تَرَوۡنَہُمۡ​

নিশ্চয় সে ও তার দলবল তোমাদেরকে দেখে যেখানে তোমরা তাদেরকে দেখ না।(সূরা আল আরাফ: ২৭)

জ্বীনদের কি থেকে সৃষ্টি সৃষ্টি করা হয়েছে?

জ্বীন আগুন থেকে তৈরি। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বলেন:

وَ الۡجَآنَّ خَلَقۡنٰہُ مِنۡ قَبۡلُ مِنۡ نَّارِ السَّمُوۡمِ ﴿۲۷﴾​

আর ইতঃপূর্বে জ্বীনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে।(সূরা আল হিজর: ২৭)

কুরআন এবং হাদীস অনুসারে জ্বীনদের তৈরি করা হয়েছে ধোঁয়াবিহীন আগুন(আরবি শব্দ-'নার') হতে।

“আর তিনি জ্বীনকে সৃষ্টি করেছেন আগুনের শিখা দিয়ে।”(সূরা আর-রহমান, ১৫)

হাদিস থেকে বর্ণিতঃ আয়েশা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সাঃ) বলেছেন-

“ফেরেশতারা আলোর তৈরী, জ্বীনরা আগুনের স্ফুলিংগ থেকে তৈরী এবং আদমকে যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে(মাটি থেকে)। (মুসলিম শরীফ- ১৮/১২৩ – তাফসীর আন নববী), (হিজর ১৫/২৮-৩৪)

وَ لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ ﴿ۚ۲۶﴾ وَ الۡجَآنَّ خَلَقۡنٰہُ مِنۡ قَبۡلُ مِنۡ نَّارِ السَّمُوۡمِ ﴿۲۷﴾​

আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকে।আর ইতঃপূর্বে জিনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে। (সূরা আল হিজর: ২৬-২৭)

এ আয়াত দ্বারা আমরা আরও জানতে পারলাম যে,আল্লাহ রাব্দুল আলামীন মানুষ সৃষ্টি করার পূর্বে জ্বীন সৃষ্টি করেছেন।

আল্লাহ তাআলা যে উদ্দেশ্যে মানুষ সৃষ্টি করেছেন সে-ই উদ্দেশ্যেই জ্বীনকে সৃষ্টি করেছিলেন।তিনি বলেন:

وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ ﴿۵۶﴾​

“আমি জ্বীন ও মানুষকে কেবলমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি” (সূরা আয্-যারিয়াত, ৫৬)

জ্বীনদের কাছেও তিনি নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছিলেন।তিনি বলেন:

یٰمَعۡشَرَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ اَلَمۡ یَاۡتِکُمۡ رُسُلٌ مِّنۡکُمۡ یَقُصُّوۡنَ عَلَیۡکُمۡ اٰیٰتِیۡ وَ یُنۡذِرُوۡنَکُمۡ لِقَآءَ یَوۡمِکُمۡ ہٰذَا ؕ قَالُوۡا شَہِدۡنَا عَلٰۤی اَنۡفُسِنَا وَ غَرَّتۡہُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا وَ شَہِدُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِہِمۡ اَنَّہُمۡ کَانُوۡا کٰفِرِیۡنَ ﴿۱۳۰﴾​

‘হে জিন ও মানুষের দল, তোমাদের মধ্য থেকে কি তোমাদের নিকট রাসূলগণ আসেনি, যারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করত এবং তোমাদের এই দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে তোমাদেরকে সতর্ক করত?’ তারা বলবে, ‘আমরা আমাদের নিজদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলাম।’ আর দুনিয়ার জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে এবং তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, তারা ছিল কাফির। (সূরা আল আনআম: ১৩০)

"আর এই যে মানুষের মধ্যের কিছু লোক জ্বীন জাতির কিছু লোকের আশ্রয় নিত, ফলে ওরা তাদের পাপাচার বাড়িয়ে দিত।” (সূরা জ্বীন, ৬)

یٰمَعۡشَرَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ اِنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ اَنۡ تَنۡفُذُوۡا مِنۡ اَقۡطَارِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ فَانۡفُذُوۡا ؕ لَا تَنۡفُذُوۡنَ اِلَّا بِسُلۡطٰنٍ ﴿ۚ۳۳﴾​

‘‘হে জ্বীন ও মানবকূল, নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের প্রান্ত অতিক্রম করা যদি তোমাদের সাধ্যে কুলায়, তবে অতিক্রম কর। কিন্তু ছাড়পত্র ব্যতীত তোমরা তা অতিক্রম করতে পারবে না।” (সূরা আর-রহমান, ৩৩)

وَ اِذۡ صَرَفۡنَاۤ اِلَیۡکَ نَفَرًا مِّنَ الۡجِنِّ یَسۡتَمِعُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ ۚ فَلَمَّا حَضَرُوۡهُ قَالُوۡۤا اَنۡصِتُوۡا ۚ فَلَمَّا قُضِیَ وَلَّوۡا اِلٰی قَوۡمِهِمۡ مُّنۡذِرِیۡنَ ﴿۲۹﴾​

"যখন আমি একদল জ্বীনকে আপনার(অর্থাৎ মুহাম্মাদ এর) প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম, তারা কোরআন পাঠ শুনছিল। তারা যখন কোরআন পাঠের জায়গায় উপস্থিত হল, তখন পরস্পর বলল, চুপ থাক। অতঃপর যখন পাঠ সমাপ্ত হল, তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে(জ্বীন সম্প্রদায়) সতর্ককারীরূপে ফিরে গেল।” (সূরা আল-আহক্বাফ, ২৯)

এ আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, বিচার দিবসে মানুষের যেমন বিচার হবে তেমনি জ্বীন জাতিকেও বিচার ও জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।

“ সুলাইমান বললেন, হে পরিষদবর্গ, তারা আত্মসমর্পণ করে আমার কাছে আসার পূর্বে কে তার{সাবার রাণী} সিংহাসন আমাকে এনে দেবে?

জনৈক শক্তিশালী-জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে ওঠার পূর্বে আমি তা এনে দেব এবং নিশ্চয়ই আমি এ কাজে শক্তিমান, বিশ্বস্ত।
কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেব।

قَالَ یٰۤاَیُّهَا الۡمَلَؤُا اَیُّکُمۡ یَاۡتِیۡنِیۡ بِعَرۡشِهَا قَبۡلَ اَنۡ یَّاۡتُوۡنِیۡ مُسۡلِمِیۡنَ ﴿۳۸﴾
قَالَ عِفۡرِیۡتٌ مِّنَ الۡجِنِّ اَنَا اٰتِیۡکَ بِهٖ قَبۡلَ اَنۡ تَقُوۡمَ مِنۡ مَّقَامِکَ ۚ وَ اِنِّیۡ عَلَیۡهِ لَقَوِیٌّ اَمِیۡنٌ ﴿۳۹﴾
قَالَ الَّذِیۡ عِنۡدَهٗ عِلۡمٌ مِّنَ الۡکِتٰبِ اَنَا اٰتِیۡکَ بِهٖ قَبۡلَ اَنۡ یَّرۡتَدَّ اِلَیۡکَ طَرۡفُکَ ؕ فَلَمَّا رَاٰهُ مُسۡتَقِرًّا عِنۡدَهٗ قَالَ هٰذَا مِنۡ فَضۡلِ رَبِّیۡ ۟ۖ لِیَبۡلُوَنِیۡۤ ءَاَشۡکُرُ اَمۡ اَکۡفُرُ ؕ وَ مَنۡ شَکَرَ فَاِنَّمَا یَشۡکُرُ لِنَفۡسِهٖ ۚ وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ رَبِّیۡ غَنِیٌّ کَرِیۡمٌ ﴿۴۰﴾​

তারা বিবিধ রূপ ধারণ করতে পারে বলে হাদীসে এসেছে। এমনিভাবে দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারে বলে আল কুরআনের সূরা আন নামল: [২৭:৩৮-৪০]

অর্থাৎ জিনেরা মানুষের মত কোন প্রাণী নয়। এরা এমন এক প্রকারের প্রাণী মুহূর্তের মধ্যেই যাদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের ক্ষমতা আছে। কিংবা হয়তো এরা মানুষের থেকে ভিন্ন কোন মাত্রা (dimension) এর প্রাণী।

আল্লাহ ভালো জানেন। আজকে জানলেন জ্বীন সম্পর্কে।



আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
  • ১. সুলাইমান (عليه السلام)-কে সকল কিছুর ভাষা শিক্ষা দেয়া হয়েছিল।
  • ২. ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম। যেমনটি পূর্ববর্তী ধর্মেও ছিল ।
  • ৩. আল্লাহ তা‘আলার সৎ বান্দারা যত জ্ঞানী বা নেয়ামতের অধিকারী হোক না কেন তাতে তারা অহংকারী হয় না, বরং নেয়ামত পেয়ে শুকরিয়া আদায় করে, যেমন সুলাইমান (عليه السلام)।
  • ৪. কোন ভাল জিনিস প্রাপ্ত হলে তাতে আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
  • ৫. কোন ভাল কাজ করতে হলে আল্লাহ তা‘আলার নামে শুরু করতে হবে।
  • ৬. নাবীদের অর্থ-সম্পদের উত্তরাধিকার হয় না, উত্তরাধিকার হয় ইলম ও নবুওয়াতের।
  • ৭. সৎ কর্ম কবূল হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশাধিকার পাওয়া যাবে না।
  • ৮. শাসকের জন্য জনসাধারণের খোঁজ-খবর নেয়া উচিত।
  • ৯. যেকাজে অলসতা করে, তাকে সুষম শাস্তি দেয়া জায়েয।
  • ১০. গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারাদিতে পরামর্শ করা বুদ্ধিমানের কাজ।

বেশিরভাগ মানুষই জানে না এই জ্বীন সম্পর্কে। তাই আপনাদের অবগত করলাম।
 

Share this page