জাহান্নামের অবস্থান:
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“কখনো নয়, নিশ্চয় পাপাচারীদের ‘আমলনামা সিজ্জীনে। কিসে তোমাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী? লিখিত কিতাব।” [সূরা মুতাফফিফীন: ৭-৯]
অর্থাৎ তাদের আবাসস্থল হল সিজ্জীনে, سجِّين শব্দটি فعيل ওজনে السجن হতে নির্গত। এর অর্থ সংকীর্ণ। যেমন বলা হয়: فتِّيق، وشرِّيب، وخمّير، وسكِّير এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা এ জাহান্নামের বিষয়টি খুব বড় করে দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
“কিসে তোমাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী?।” [সূরা মুতাফফিফীন: ৮] অর্থাৎ এটা মারাত্মক ও সংকীর্ণ জায়গা, যন্ত্রণাদায়ক আযাবের স্থান। [1]
এ বিষয়ে ইমাম ইবনে কাসীর রহ., ইমাম বগবী রহ. ও ইমাম ইবনে রজব রহ. একাধিক হাদীস উল্লেখ করেন, তাতে তিনি বলেন, সিজ্জীন হল, সপ্ত যমীনের নিচে। অর্থাৎ, যেমনি-ভাবে জান্নাত সাত আসমানের উপরে অনুরূপভাবে জাহান্নাম সপ্ত যমীনের নীচে একটি স্থান। [2]
ইমাম ইবন কাসীর রহ. বলেন, سِجِّينٌ শব্দটি السجن থেকে নেয়া হয়েছে। এর অর্থ সংকীর্ণ। কেননা সৃষ্টিকুল যখনই নিম্নে পতিত হয় তখন সংকীর্ণ হতে থাকে, আর যখন উপরে উঠতে থাকে তখন বিস্তৃত হতে থাকে। সপ্ত আসমান একটির চেয়ে উপরেরটি প্রশস্ত। এমনিভাবে জমিনের সাত স্তরের নিম্নের তুলনায় উপরের স্তর প্রশস্ত, এভাবে সবচেয়ে নিচের স্তর সবচেয়ে বেশী সংকীর্ণ। সর্বাধিক নিম্নতম স্থান হলো জমিনের সপ্তম স্তর। [3]
অতঃপর ইমাম ইবন কাসীর রহ. বলেন, পাপাচারীর স্থান হলো জাহান্নাম, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“তারপর আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি হীনদের হীনতম রূপে। তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।” [সূরা : আত্-তীন: ৫-৬]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“কখনো নয়, নিশ্চয় পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জীনে। কিসে তোমাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী?।” [সূরা মুতাফফিফীন: ৭-৮]
এটা সংকীর্ণ ও নিম্নতম স্তর একত্রিত করেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
“আর যখন তাদেরকে গলায় হাত পেঁচিয়ে জাহান্নামের সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, সেখানে তারা নিজদের ধ্বংস আহবান করবে।” [সূরা : আল-ফুরকান: ১৩]
আল্লাহর বাণী:
“লিখিত কিতাব।” [সূরা আল্-মুতাফফিফীন: ২০] আয়াতটি নিম্নোক্ত আয়াতের তাফসীর নয়।
“কিসে তোমাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী?।” [সূরা মুতাফফিফীন: ৮] বরং এটা হলো সিজ্জীনে যাদের নাম লিপিবদ্ধ তাঁর তাফসীর। মারকুম মানে লিখিত, সে সংখ্যা থেকে বাড়বে ও না, আবার কমবে ও না। [4]
ইবন রজব রহ. বলেছেন, জাহান্নাম যে জমিনের সপ্তস্তর নিচে সে ব্যাপারে কোন কোন আলেম দলিল পেশ করেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা যে সংবাদ দিয়েছেন আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত করা হয় – বরঝখের সময়ে- এতে আরো বলা হয়েছে যে, তাদের জন্য আসমানের দরজা খোলা হবে না। এতে প্রমাণিত হয় যে, জাহান্নাম হলো জমিনে।
বারা ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের রূহ কবজের বর্ণনা করেন। তিনি কাফিরদের রূহ সম্পর্কে বলেন,
“যখন দুনিয়ার আসমানের শেষ সীমায় পৌঁছবে তখন আসমানের দরজা খুলতে অনুমতি চাইবে, কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হবে না। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পড়লেন,
“তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে।” [সূরা আল-আ‘রাফ: ৪০] অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তার আমলনামা জমিনের নিম্নস্তর সিজ্জিনে লিপিবদ্ধ করো। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফলে তার আত্মাকে সজোরে নিক্ষেপ করা হবে।” [5]
[1] তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৪/৪৮৫, তাফসীরে বগবী: ৪/৪৫৮।
[2] তাফসীরে বগবী: ৪/৪৫৮-৪৫৯, তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৪/৪৮৫-৪৮৬, তাখফীফ মিনান নার, লেখক, ইবন রজব: পৃষ্ঠা ৬২-৬৩।
[3] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৪৬।
[4] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৮৬।
[5] আবু দাউদ: হাদীস নং ৪৭৫৩, নাসায়ী: ২০৫৯, ইবন মাজাহ: ৪২৬৯, মুসনাদে আহমদ: ১৮৫৩৪।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ كَلَّآ إِنَّ كِتَٰبَ ٱلۡفُجَّارِ لَفِي سِجِّينٖ ٧ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سِجِّينٞ ٨ كِتَٰبٞ مَّرۡقُومٞ ٩ ﴾ [المطففين: ٧، ٩]
“কখনো নয়, নিশ্চয় পাপাচারীদের ‘আমলনামা সিজ্জীনে। কিসে তোমাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী? লিখিত কিতাব।” [সূরা মুতাফফিফীন: ৭-৯]
অর্থাৎ তাদের আবাসস্থল হল সিজ্জীনে, سجِّين শব্দটি فعيل ওজনে السجن হতে নির্গত। এর অর্থ সংকীর্ণ। যেমন বলা হয়: فتِّيق، وشرِّيب، وخمّير، وسكِّير এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা এ জাহান্নামের বিষয়টি খুব বড় করে দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
﴿ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سِجِّينٞ ٨ ﴾ [المطففين: ٨]
“কিসে তোমাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী?।” [সূরা মুতাফফিফীন: ৮] অর্থাৎ এটা মারাত্মক ও সংকীর্ণ জায়গা, যন্ত্রণাদায়ক আযাবের স্থান। [1]
এ বিষয়ে ইমাম ইবনে কাসীর রহ., ইমাম বগবী রহ. ও ইমাম ইবনে রজব রহ. একাধিক হাদীস উল্লেখ করেন, তাতে তিনি বলেন, সিজ্জীন হল, সপ্ত যমীনের নিচে। অর্থাৎ, যেমনি-ভাবে জান্নাত সাত আসমানের উপরে অনুরূপভাবে জাহান্নাম সপ্ত যমীনের নীচে একটি স্থান। [2]
ইমাম ইবন কাসীর রহ. বলেন, سِجِّينٌ শব্দটি السجن থেকে নেয়া হয়েছে। এর অর্থ সংকীর্ণ। কেননা সৃষ্টিকুল যখনই নিম্নে পতিত হয় তখন সংকীর্ণ হতে থাকে, আর যখন উপরে উঠতে থাকে তখন বিস্তৃত হতে থাকে। সপ্ত আসমান একটির চেয়ে উপরেরটি প্রশস্ত। এমনিভাবে জমিনের সাত স্তরের নিম্নের তুলনায় উপরের স্তর প্রশস্ত, এভাবে সবচেয়ে নিচের স্তর সবচেয়ে বেশী সংকীর্ণ। সর্বাধিক নিম্নতম স্থান হলো জমিনের সপ্তম স্তর। [3]
অতঃপর ইমাম ইবন কাসীর রহ. বলেন, পাপাচারীর স্থান হলো জাহান্নাম, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ ثُمَّ رَدَدۡنَٰهُ أَسۡفَلَ سَٰفِلِينَ ٥ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَلَهُمۡ أَجۡرٌ غَيۡرُ مَمۡنُونٖ ٦ ﴾ [التين: ٥، ٦]
“তারপর আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি হীনদের হীনতম রূপে। তবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।” [সূরা : আত্-তীন: ৫-৬]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ كَلَّآ إِنَّ كِتَٰبَ ٱلۡفُجَّارِ لَفِي سِجِّينٖ ٧ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سِجِّينٞ ٨ ﴾ [المطففين: ٧، ٨]
“কখনো নয়, নিশ্চয় পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জীনে। কিসে তোমাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী?।” [সূরা মুতাফফিফীন: ৭-৮]
এটা সংকীর্ণ ও নিম্নতম স্তর একত্রিত করেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَإِذَآ أُلۡقُواْ مِنۡهَا مَكَانٗا ضَيِّقٗا مُّقَرَّنِينَ دَعَوۡاْ هُنَالِكَ ثُبُورٗا ١٣ ﴾ [الفرقان: ١٣]
“আর যখন তাদেরকে গলায় হাত পেঁচিয়ে জাহান্নামের সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, সেখানে তারা নিজদের ধ্বংস আহবান করবে।” [সূরা : আল-ফুরকান: ১৩]
আল্লাহর বাণী:
﴿ كِتَٰبٞ مَّرۡقُومٞ ٢٠ ﴾ [المطففين: ٢٠]
“লিখিত কিতাব।” [সূরা আল্-মুতাফফিফীন: ২০] আয়াতটি নিম্নোক্ত আয়াতের তাফসীর নয়।
﴿ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سِجِّينٞ ٨ ﴾ [المطففين: ٨]
“কিসে তোমাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী?।” [সূরা মুতাফফিফীন: ৮] বরং এটা হলো সিজ্জীনে যাদের নাম লিপিবদ্ধ তাঁর তাফসীর। মারকুম মানে লিখিত, সে সংখ্যা থেকে বাড়বে ও না, আবার কমবে ও না। [4]
ইবন রজব রহ. বলেছেন, জাহান্নাম যে জমিনের সপ্তস্তর নিচে সে ব্যাপারে কোন কোন আলেম দলিল পেশ করেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা যে সংবাদ দিয়েছেন আগুন, তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে উপস্থিত করা হয় – বরঝখের সময়ে- এতে আরো বলা হয়েছে যে, তাদের জন্য আসমানের দরজা খোলা হবে না। এতে প্রমাণিত হয় যে, জাহান্নাম হলো জমিনে।
বারা ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের রূহ কবজের বর্ণনা করেন। তিনি কাফিরদের রূহ সম্পর্কে বলেন,
حَتَّى يُنْتَهَى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيُسْتَفْتَحُ لَهُ، فَلَا يُفْتَحُ لَهُ "، ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ﴿ لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِۚ ٤٠ ﴾ [الاعراف: ٤٠] فَيَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: " اكْتُبُوا كِتَابَهُ فِي سِجِّينٍ فِي الْأَرْضِ السُّفْلَى، فَتُطْرَحُ رُوحُهُ طَرْحًا "
“যখন দুনিয়ার আসমানের শেষ সীমায় পৌঁছবে তখন আসমানের দরজা খুলতে অনুমতি চাইবে, কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হবে না। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পড়লেন,
﴿ لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِۚ ٤٠ ﴾ [الاعراف: ٤٠]
“তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে।” [সূরা আল-আ‘রাফ: ৪০] অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তার আমলনামা জমিনের নিম্নস্তর সিজ্জিনে লিপিবদ্ধ করো। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ফলে তার আত্মাকে সজোরে নিক্ষেপ করা হবে।” [5]
লেখক : সা‘ঈদ ইবন আলী ইবন ওয়াহাফ আল-ক্বাহত্বানী
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ আল-মামুন আল-আযহারী
সম্পাদনা: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ আল-মামুন আল-আযহারী
সম্পাদনা: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
[1] তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৪/৪৮৫, তাফসীরে বগবী: ৪/৪৫৮।
[2] তাফসীরে বগবী: ৪/৪৫৮-৪৫৯, তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৪/৪৮৫-৪৮৬, তাখফীফ মিনান নার, লেখক, ইবন রজব: পৃষ্ঠা ৬২-৬৩।
[3] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৪৬।
[4] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৪/৪৮৬।
[5] আবু দাউদ: হাদীস নং ৪৭৫৩, নাসায়ী: ২০৫৯, ইবন মাজাহ: ৪২৬৯, মুসনাদে আহমদ: ১৮৫৩৪।