১৩. সশব্দে আমীন :
ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,
‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন ‘ওয়ালায যাল্লীন’ পড়তেন, তখন উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলতেন’।[1] একটি বর্ণনায় আছে, فَجَهَرَ بِآمِيْنَ ‘অতঃপর তিনি সশব্দে আমীন বললেন’।[2] يَرْفَعُ صَوْتَهُ بِآمِيْنَ হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম দারাকুৎনী বলেছেন, صَحِيْحٌ ‘সহীহ’।[3]
ইবনু হাজার বলেছেন, وَسَنَدُهُ صَحِيْحٌ ‘এর সনদ সহীহ’।[4]
ইবনু হিববান ও ইবনুল ক্বাইয়িম প্রমুখ সহীহ বলেছেন। কোন নির্ভরযোগ্য ইমাম একে যঈফ বলেননি। এ মর্মের অন্যান্য সহীহ বর্ণনাগুলো আলী, আবু হুরায়রা (রাঃ) প্রমুখ থেকেও বর্ণিত আছে। যেগুলোকে লেখক ‘আল-কাওলুল মাতীন ফিল-জাহর বিত-তা’মীন’(القول المتين في الجهر بالتأمين) গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন।
আতা বিন আবী রাবাহ বর্ণনা করেছেন যে,
‘আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) এবং তাঁর মুক্তাদীরা এত উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলেন যে, মসজিদ গুঞ্জরিত হয়ে উঠে’।[5]
এর সনদ সহীহ (রিজাল ও উছূলে হাদীসের গ্রন্থাবলী দেখুন)।
ইবনু ওমর (রাঃ) এবং তাঁর সাথী ও ইমামের পিছনে আমীন বলতেন এবং এটাকে সুন্নাত আখ্যায়িত করতেন।[6] কোন একজন সাহাবী থেকেও সহীহ সনদে নীরবে আমীন বলা অকাট্যভাবে প্রমাণিত নেই।
মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘নিশ্চয়ই ইহুদীরা তাদের ধর্ম সম্পর্কে বিরক্ত হয়ে গেছে এবং তারা হিংসুক জাতি। তারা যেসব আমলের ব্যাপারে মুসলমানদের সাথে হিংসা করে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল (১) সালামের উত্তর দেয়া (২) কাতার সমূহ সোজা করা এবং (৩) ফরয সালাতে ইমামের পিছনে মুসলমানদের আমীন বলা’।[7]
১৪. রাফ‘উল ইয়াদায়েন :
বহু সাহাবী নবী করীম (ﷺ) থেকে সালাতে রুকূর পূর্বে এবং পরে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। যেমন ইবনু ওমর,[8] মালেক ইবনুল হুওয়াইরিছ,[9] ওয়ায়েল বিন হুজর,[10] আবু হুমাইদ আস-সায়েদী, আবু কাতাদা, সাহল বিন সা‘দ আস-সায়েদী, আবু উসাইদ, মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ,[11] আলী বিন আবু ত্বালেব,[12] আবুবকর ছিদ্দীক্ব, আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের,[13] আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)[14] প্রমুখ। অনেক ইমাম এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করেছেন যে, রুকূর পূর্বে ও পরে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা মুতাওয়াতির। যেমন ইবনুল জাওযী, ইবনু হাযম, ইরাকী, ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনু কুদামা, ইবনু হাজার, কাত্তানী, সুয়ূতী, যুবায়দী, যাকারিয়া আনছারী প্রমুখ।[15]
আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী দেওবন্দী বলেছেন যে,
‘জেনে রাখা উচিত যে, সনদ ও আমল দু’দিক থেকেই রাফ‘উল ইয়াদায়েন মুতাওয়াতির। এতে কোন সন্দেহ নেই। আর রাফ‘উল ইয়াদায়েন মানসূখ বা রহিত হয়নি। এমনকি এর একটি হরফও মানসূখ হয়নি’।[16]
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন সালাত শুরু করতেন তখন তাঁর দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। এভাবে যখন রুকূর তাকবীর বলতেন এবং রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন, তখনও তাঁর দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন এবং বলতেন,سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ ‘আল্লাহ শোনেন তার কথা যে তাঁর প্রশংসা করে। হে আমাদের প্রভু! আপনার জন্যই যাবতীয় প্রশংসা’। আর তিনি সিজদায় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না’।[17]
এই হাদীসের বর্ণনাকারী ইবনু ওমর (রাঃ) নিজেও রুকূর পূর্বে এবং রুকূর পরে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[18] বরং তিনি যাকে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে দেখতেন না, তাকে ছোট পাথর ছুঁড়ে মারতেন।[19] ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরক করা সহীহ সনদে অকাট্যভাবে প্রমাণিত নেই। রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরককারীরা আবুবকর বিন আইয়াশ-এর হুছাইন থেকে মুজাহিদ সূত্রে যে বর্ণনা পেশ করে থাকেন, সে সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণের ইমাম ইয়াহ্ইয়া ইবনু মা‘ঈন বলেছেন, ‘এটি ভুল। এর কোন ভিত্তি নেই’।[20] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেছেন,
অর্থাৎ আবুবকর বিন আইয়াশ সূত্রের বর্ণনাটি বাতিল।[21]
তাবেঈ আবু কিলাবা বলেছেন যে,
‘তিনি মালেক ইবনুল হুওয়াইরিছকে দেখেছেন, যখন তিনি সালাত আদায় করতেন তখন তাকবীর দিতেন এবং তাঁর দু’হাত উত্তোলন করতেন। যখন রুকূ করার ইচ্ছা করতেন এবং রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখন তাঁর দু’হাত উঠাতেন এবং বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমনটা করেছেন’।[22]
মালেক (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছিলেন যে,
‘তোমরা সালাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখছ’।[23] তিনি জালসায়ে ইস্তেরাহাতও[24] করতেন এবং সেটি মারফূ সূত্রে বর্ণনা করতেন।[25] হানাফীদের নিকটে এই বসা রাসূল (ﷺ)-এর বার্ধক্যের উপর প্রযোজ্য। অর্থাৎ যখন রাসূল (ﷺ) শেষ বয়সে বার্ধক্যের কারণে দুর্বল হয়ে গিয়েছিলেন, তখন এভাবে বসতেন।[26]
মালেক ইবনুল হুওয়াইরিছ রাফ‘উল ইয়াদায়েনের রাবী বা বর্ণনাকারী। এজন্য প্রমাণিত হল যে, হানাফীদের নিকটে নবী (ﷺ) শেষ বয়সেও রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,
‘নবী করীম (ﷺ) যখন রুকূ করার ইচ্ছা করলেন তখন তাঁর দু’হাত কাপড়ের মধ্যে থেকে বের করলেন এবং রাফ‘উল ইয়াদায়েন করলেন। অতঃপর তাকবীর বলে রুকূ করলেন। যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বললেন, তখন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করলেন’।[27]
ওয়ায়েল (রাঃ) ইয়েমেনের বড় বাদশাহ ছিলেন।[28]
তিনি ৯ম হিজরীতে প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসাবে নবী করীম (ﷺ)-এর নিকটে আগমন করেছিলেন।[29] তিনি পরবর্তী বছর ১০ম হিজরীতেও মদীনা মুনাউওয়ারায় এসেছিলেন।[30]
ঐ বছরেও তিনি রাফ‘উল ইয়াদায়েন প্রত্যক্ষ করেছিলেন।[31] এজন্য তাঁর বর্ণিত সালাত নবী করীম (ﷺ)-এর শেষ বয়সের সালাত। নবী (ﷺ) এবং কোন সাহাবী থেকে রুকূর সময় ও রুকূর পরে রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরক করা, রহিত হওয়া বা নিষিদ্ধতা অকাট্যভাবে প্রমাণিত নেই।
সুনানে তিরমিযীতে (১/৫৯, হা/২৫৭) ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর দিকে যে বর্ণনাটি সম্পর্কিত রয়েছে, তাতে সুফয়ান ছাওরী মুদাল্লিস।[32] মুদাল্লিস রাবীর عن ওয়ালা বর্ণনা যঈফ হয়।[33] দ্বিতীয় বিষয় এই যে, বিশের অধিক ইমাম একে যঈফ আখ্যা দিয়েছেন। এজন্য এই সনদটি যঈফ। রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরক করার ব্যাপারে বারা ইবনু আযিব (রাঃ)-এর দিকে সম্পর্কিত বর্ণনাটিতে ইয়াযীদ বিন আবী যিয়াদ আল-কূফী যঈফ।[34] মুসনাদে হুমায়দী এবং মুসনাদে আবী আওয়ানাতে বন্ধুরা পরিবর্তন করেছেন। মূল পান্ডুলিপি সমূহতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন সম্পর্কে হ্যাঁ বাচক বর্ণনা রয়েছে। যেটিকে কিছু স্বার্থান্ধ ব্যক্তি পরিবর্তন করতে গিয়ে নাফী বা না বাচক করে দিয়েছে। যিনি তাহকীক করতে চান তিনি আমাদের নিকট এসে মূল পান্ডুলিপি সমূহের ফটোকপি দেখতে পারেন। কতিপয় ব্যক্তি রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরক করার ব্যাপারে ঐ সকল বর্ণনাও পেশ করার চেষ্টা করেছেন, যেগুলোতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা বা না করার কোন উল্লেখই নেই। অথচ কোন বিষয় উল্লেখ না থাকা তা না করার দলীল হয় না।[35]
যে ব্যক্তি সালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে সে প্রত্যেক আঙ্গুলের পরিবর্তে একটি করে নেকী লাভ করে। অর্থাৎ একবার রাফ‘উল ইয়াদায়েন করলে ১০ নেকী।[36] ঈদায়েনের সালাতে অতিরিক্ত তাকবীর সমূহে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা সম্পূর্ণরূপে সঠিক। কেননা নবী করীম (ﷺ) রুকূর পূর্বে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[37] এই হাদীসের সনদ সম্পূর্ণরূপে সহীহ। বর্তমান যুগে কতিপয় ব্যক্তির এই হাদীসের সমালোচনা করা প্রত্যাখ্যাত। ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম ইবনুল মুনযির এই হাদীস দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, ঈদায়েনের তাকবীর সমূহেও রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা উচিত।[38]
ঈদুল ফিতরের তাকবীর সমূহের ব্যাপারে আতা বিন আবী রাবাহ (তাবেঈ) বলেছেন যে,
‘হ্যঁা, ঐ তাকবীরগুলোতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা উচিত এবং সকল মানুষও রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে’।[39] সিরিয়াবাসীর ইমাম আওযাঈ (রহঃ) বলেছেন যে,
‘হ্যঁা, ঐ তাকবীরগুলোর সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন কর’।[40]
মদীনার ইমাম মালেক বিন আনাস (রহঃ) বলেছেন,
‘হ্যঁা, প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন কর। এ ব্যাপারে (এর বিপরীত) কোন কিছু আমি শুনিনি’।[41] এই সহীহ উক্তির বিপরীতে মালেকীদের অনির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ‘মুদাওয়ানা’তে (১/১৫৫) একটি সনদবিহীন উক্তি উল্লিখিত রয়েছে। সনদবিহীন এই উদ্ধৃতিটি প্রত্যাখ্যাত। মুদাওয়ানার জবাবের জন্য আমার ‘আল-কাওলুল মাতীন ফিল-জাহর বিত-তা’মীন’ (পৃঃ ৭৩) গ্রন্থটি দেখুন!
অনুরূপভাবে সনদবিহীন হওয়ার কারণে ইমাম নববীর উদ্ধৃতিও প্রত্যাখ্যাত।[42] মক্কাবাসীর ইমাম শাফেঈ (রহঃ)ও ঈদায়েনের তাকবীর সমূহে রাফ‘উল ইয়াদায়েন-এর প্রবক্তা
ছিলেন।[43]
আহলুস সুন্নাতের ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেছেন যে,
‘(ঈদায়েনের) প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে’।[44]
সালাফে ছালেহীন-এর এ সকল আছারের বিপরীতে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ-শায়বানী লিখেছেন যে, ولا يرفع يديه (ঈদায়েনের তাকবীর সমূহে) রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে না’।[45]
এই উক্তিটি দু’টি কারণে প্রত্যাখ্যাত :
১. মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ-শায়বানী মিথ্যুক।[46] তাঁর সত্যায়ন কোন নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিছ থেকে সুস্পষ্টভাবে সহীহ সনদে প্রমাণিত নেই। আমি এ বিষয়ে ‘আন-নাছরুর রববানী’ (النصر الربانى) নামে একটি পুস্তক লিখেছি। যেখানে প্রমাণ করেছি যে, উল্লেখিত শায়বানী মিথ্যুক ও ন্যায়পরায়ণ নন। ওয়ালহামদু লিল্লাহ।
২. এই মিথ্যুকের বক্তব্য সালাফে ছালেহীনের ইজমা ও ঐক্যমতের বিপরীত হওয়ার কারণেও প্রত্যাখ্যাত।
জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে প্রমাণিত আছে।[47]
তাবেঈ মাকহূল জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[48]
ইমাম যুহরী জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[49]
কায়েস বিন আবী হাযেম (তাবেঈ) জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[50]
নাফে‘ বিন জুবায়ের জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[51]
হাসান বাছরী জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[52]
নিম্নলিখিত ওলামায়ে সালাফে ছালেহীনও জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার প্রবক্তা ও আমলকারী ছিলেন। আতা বিন আবী রাবাহ,[53] আব্দুর
রাযযাক,[54] মুহাম্মাদ ইবনু সিরীন।[55]
সালাফে ছালেহীনের এসকল আছারের বিপরীতে ইবরাহীম নাখঈ (তাবেঈ) জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না।[56]
প্রমাণিত হল যে, জমহূর সালাফে ছালেহীনের মাসলাক এটাই যে, জানাযার প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে হবে। যেমনটি সূত্রসহ পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। আর এটাই সঠিক ও প্রাধান্যযোগ্য মত। ওয়ালহামদু লিল্লাহ।
১৫. সহো সিজদা :
সহো সিজদা সালামের পূর্বেও জায়েয আছে[57] এবং সালামের পরেও জায়েয আছে।[58] সহো সিজদায় শুধু একদিকে সালাম ফিরানোর কোন প্রমাণ হাদীস সমূহে নেই।
১৬. সম্মিলিত দো‘আ :[59]
দো‘আ করা অনেক বড় ইবাদত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, اَلدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ ‘দো‘আ-ই ইবাদত’।[60]
সালাতের পরে বিভিন্ন দো‘আ প্রমাণিত রয়েছে।[61] একটি যঈফ বর্ণনায় এসেছে যে, নবী করীম (ﷺ) ফরয সালাতের শেষের দো‘আকে অধিক কবুলযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন।[62] সাধারণ দো‘আয় হাত উঠানো মুতাওয়াতির হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে।[63] তবে ফরয সালাতের পরে ইমাম ও মুক্তাদীদের সম্মিলিত দো‘আ করা প্রমাণিত নয়।[64]
১৭. ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত :
সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘যখন সালাতের একামত হয়ে যাবে তখন (ঐ) ফরয সালাত ব্যতীত আর কোন সালাত নেই’।[65] কায়েস বিন কাহ্দ (রাঃ) আসলেন, এমতাবস্থায় নবী করীম (ﷺ) ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। তিনি তাঁর সাথে এই সালাত আদায় করলেন। যখন তিনি সালাম ফিরালেন তখন কাহ্দ উঠে দাঁড়ালেন এবং ফজরের দু’রাক‘আত (সুন্নাত) পড়লেন। নবী করীম (ﷺ) তার দিকে দেখছিলেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন,مَا هَاتَانِ الرَّكْعَتَانِ؟ ‘এ দু’রাক‘আত কিসের’? তিনি বললেন, আমার ফজরের পূর্বের (এই) দুই রাক‘আত সালাত থেকে গিয়েছিল। তখন নবী করীম (ﷺ) চুপ হয়ে গেলেন এবং কিছু বললেন না।[66] ইমাম হাকেম ও যাহাবী দু’জনেই একে সহীহ বলেছেন।[67] এ ব্যাপারে সূর্যোদয়ের পর সালাত আদায়ের যে বর্ণনা[68] আছে, তাতে রাবী কাতাদাহ মুদাল্লিস এবং عَنْعَنَ পদ্ধতিতে বর্ণনা করেছেন। সেজন্য ঐ বর্ণনা সন্দেহযুক্ত ও যঈফ।
১৮. দুই সালাত জমা করা :
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সফরে যোহর ও আছরের সালাত জমা করে পড়েছেন। অনুরূপভাবে মাগরিব ও এশার সালাতও জমা করে পড়েছেন।[69] অসংখ্য সাহাবী সফরে দুই সালাতকে জমা করে পড়ার প্রবক্তা ও বাস্তবায়নকারী ছিলেন। যেমন ইবনু আববাস, আনাস বিন মালেক, সা‘দ, আবু মূসা (রাঃ)।[70] নবী করীম (ﷺ) কুরআন মাজীদের সবচেয়ে বড় ব্যাখ্যাকার ও মুফাসসির ছিলেন। সেজন্য এটা হ’তেই পারে না যে, তাঁর কাজ পবিত্র কুরআনের বিপরীত হবে। তাই সফরে দুই সালাত জমা করাকে কুরআন মাজীদের বিপরীত মনে করা ভুল। ওযর ব্যতীত সালাত জমা করা প্রমাণিত নেই। সফর, বৃষ্টি ও অত্যন্ত জোরালো শারঈ ওযর-এর ভিত্তিতে জমা করা জায়েয আছে (যেমনটি সহীহ মুসলিমে এসেছে)। জমা তাকদীম ও তাখীর যেমন যোহরের সময় আছরের সালাত আদায় করা অথবা আছরের সময় যোহর পড়া এ দুই পদ্ধতিই জায়েয আছে।[71] সফরে দুই সালাত জমা করার বর্ণনাসমূহ সহীহ বুখারীতেও (১/১৪৯, হা/১১০৮-১১১২) মওজুদ রয়েছে। ইবনু ওমর (রাঃ) বৃষ্টির সময় দুই সালাত জমা করে পড়তেন।[72]
১৯. বিতর সালাত :
নবী করীম (ﷺ) থেকে এক রাক‘আত বিতর-এর সত্যতা কথা ও কর্ম দু’ভাবেই অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে।[73] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘বিতর প্রত্যেক মুসলিমের উপর হক বা অধিকার। সুতরাং যে চায় সে পাঁচ রাক‘আত বিতর পড়ুক, যে চায় তিন রাক‘আত পড়ুক এবং যে চায় এক রাক‘আত বিতর পড়ুক’।[74] এই হাদীসকে ইমাম ইবনু হিববান তাঁর সহীহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন[75] এবং ইমাম হাকেম ও যাহাবী দু’জনেই বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ বলেছেন।[76]
তিন রাক‘আত বিতর পড়ার পদ্ধতি এই যে, দুই রাক‘আত পড়বে এবং সালাম ফিরাবে। অতঃপর এক রাক‘আত বিতর পড়বে।[77]
মাগরিব সালাতের মতো (মাঝখানে বৈঠক করে) তিন রাক‘আত বিতর পড়া নিষেধ।[78] এজন্য এক সালাম ও দুই তাশাহ্হুদে তিন রাক‘আত বিতর একসাথে পড়া নিষিদ্ধ। যদি কোন ব্যক্তি এক সালামে তিন রাক‘আত বিতর পড়তে চায় যেমনটা কিছু আছার দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে, তাহলে তার উচিত হ’ল দ্বিতীয় রাক‘আতে তাশাহ্হুদের জন্য বসবে না। বরং তিন রাক‘আত বিতর এক তাশাহ্হুদেই পড়বে।
২০. ক্বছর সালাত :
সহীহ মুসলিমে ইয়াহ্ইয়া বিন ইয়াযীদ আল-হুনাঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,
‘আমি আনাস বিন মালেক (রাঃ)-কে সালাত ক্বছর করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন ৩ মাইল বা ৩ ফারসাখ (৯ মাইল) সফরের জন্য বের হ’তেন (৩ বা ৯ এর ব্যাপারে শু‘বার সন্দেহ), তখন তিনি দুই রাক‘আত পড়তেন’।[79]
ইবনু ওমর (রাঃ) ৩ মাইলের দূরত্বেও ক্বছর জায়েয হওয়ার প্রবক্তা ছিলেন।[80] ওমর (রাঃ)ও এর প্রবক্তা ছিলেন।[81] সতর্কতাও এতেই রয়েছে যে, কমপক্ষে ৯ মাইলের দূরত্বে ক্বছর করা হবে। এভাবে সব হাদীসের উপরে সহজে আমল হয়ে যায়।[82]
২১. কিয়ামে রামাযান (তারাবীহ) :
সহীহ বুখারীতে (১/২৬৯, হা/২০১৩) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রামাযান এবং রামাযানের বাইরে ১১ রাক‘আতের বেশী রাতের সালাত পড়তেন না। এই হাদীসের আলোকে জনাব আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী দেওবন্দী বলেছেন,
‘এটা মেনে না নিয়ে কোন উপায় নেই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর তারাবীহ ৮ রাক‘আত ছিল’।[83] তিনি আরো বলেছেন,
‘পক্ষান্তরে নবী করীম (ﷺ) থেকে ৮ রাক‘আত (তারাবীহ) সহীহ প্রমাণিত রয়েছে। আর ২০ রাক‘আতের যে হাদীস তাঁর থেকে বর্ণিত আছে তা যঈফ এবং সেটা যঈফ হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে’।[84]
আমীরুল মুমিনীন ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) এই সুন্নাতে নববীর উপরে আমল করতে গিয়ে নির্দেশ দেন,
‘তারা যেন লোকদেরকে ১১ রাক‘আত পড়ায়’।[85] ইমাম যিয়া আল-মাকদেসী এটাকে সহীহ বলেছেন। মুহাম্মাদ বিন আলী নিমবী এই বর্ণনা সম্পর্কে লিখেছেন,
‘এর সনদ সহীহ’।[86] এজন্য হিজরী পনের শতকে কিছু গোঁড়া সংকীর্ণমনা ব্যক্তির একে মুযতারিব[87] প্রভৃতি বলা বাতিল ও ভিত্তিহীন। উক্ত নির্দেশ অনুযায়ী উবাই বিন কা‘ব ও তামীম আদ-দারী (রাঃ) আমল করে দেখিয়েছিলেন।[88] সাহাবীগণও ১১ রাক‘আতই পড়তেন।[89] এই আমলের সনদকে হাফেয সুয়ূতী
‘চূড়ান্ত সহীহ সনদ’ বলেছেন। স্মতর্ব্য যে, ওমর (রাঃ) থেকে নির্দেশ ও কর্মের দিক থেকে ২০ রাক‘আত সহীহ সনদে অকাট্যভাবে প্রমাণিত নেই।
২২. ঈদায়নের তাকবীর :
নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,
‘ঈদুল ফিতরের দিন প্রথম রাক‘আতে সাত এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর। আর দুই রাক‘আতেই কিরাআত ঐ তাকবীরগুলোর পরে’।[90]
এই হাদীস সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, هُوَ صَحِيْحٌ ‘এটা সহীহ’।[91] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল ও আলী ইবনুল মাদীনীও একে সহীহ বলেছেন।[92] আমর ইবনু শু‘আইব তার পিতা থেকে এবং তিনি তার দাদা থেকে (এই সূত্রটি) হুজ্জাত (দলীল) হওয়ার ব্যাপারে আমি ‘মুসনাদুল হুমায়দী’র তাখরীজে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই বর্ণনার অন্যান্য সমর্থক বর্ণনার জন্য ইরওয়াউল গালীল (৩/১০৬-১১৩) প্রভৃতি দেখুন। নাফে বলেছেন,
‘আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর পিছনে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের সালাত আদায় করেছি। তিনি প্রথম রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে ৭ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে ৫ তাকবীর দিয়েছেন’।[93] এর সনদ একেবারেই সহীহ এবং বুখারী ও মুসলিমের শর্তে।
শু‘আইব বিন আবী হামযার নাফে থেকে বর্ণিত সূত্রে রয়েছে, وَهِىَ السُّنَّةُ ‘এটাই সুন্নাত’।[94] ইমাম মালেক বলেছেন যে, ‘আমাদের এখানে অর্থাৎ মদীনায় এর উপরেই আমল রয়েছে’।[95] আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)ও ঈদায়েনের প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর দিতেন’।[96]
আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ)ও প্রথম রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে সাত এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিতেন।[97] ইবনু জুরাইজের শ্রবণের (سماع)[98] কথা ফিরইয়াবীর আহকামুল ঈদায়ন (পৃঃ ১৭৬, হা/১২৮) গ্রন্থে মওজুদ রয়েছে। এর অন্যান্য শাহেদ বা সমর্থক বর্ণনার জন্য ইরওয়াউল গালীল (৩/১১১) প্রভৃতি অধ্যয়ন করুন!
আমীরুল মুমিনীন ওমর বিন আব্দুল আযীযও প্রথম রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে সাত এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিতেন।[99] এর সনদ
সহীহ।[100]
রাফ‘উল ইয়াদায়েন অনুচ্ছেদে (১৪) এটি হাসান সনদে উল্লেখিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে সে প্রত্যেক আঙ্গুলের বিনিময়ে একটি করে নেকী পায়। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেছেন যে, নবী করীম (ﷺ) রুকূর পূর্বে প্রত্যেক তাকবীরে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন’।[101] এর সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ।[102] ইমাম ইবনুল মুনযির ও ইমাম বায়হাক্বী ঈদায়নের তাকবীর সমূহে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের মাসআলায় এই হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন।[103] আর এই দলীল গ্রহণ সঠিক। কেননা ‘আম দ্বারা দলীল গ্রহণ করা সর্বসম্মতিক্রমে সঠিক। যে ব্যক্তি রাফ‘উল ইয়াদায়েনকে অস্বীকারকারী সে এই ‘আম দলীলের বিপরীতে খাছ দলীল পেশ করুক। স্মতর্ব্য যে, ঈদায়নের তাকবীর সমূহে রাফ‘উল ইয়াদায়েন না করার একটি দলীলও পুরা হাদীসের ভান্ডারে নেই।
২৩. জুম‘আর সালাত :
জুম‘আ ফরয হওয়া মুতাওয়াতির হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে। ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,
‘সফরের সালাত দুই রাক‘আত এবং জুম‘আর সালাত দুই রাক‘আত। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতও দুই রাক‘আত। নবী করীম (ﷺ)-এর ভাষায় এটি পূর্ণ, কছর নয়’।[104]
পবিত্র কুরআনের বরকতময় আয়াত
‘হে মুমিনগণ! জুম‘আর দিনে যখন সালাতের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত দৌড়ে যাও...’ (জুম‘আ ৬২/৯) থেকে জানা যায় যে, প্রত্যেক মুমিনের উপর জুম‘আ ফরয। চাই সে শহুরে হোক বা গ্রাম্য ব্যক্তি। তারেক বিন শিহাব (রাঃ) বলেছেন যে, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,
‘চারজন ব্যতীত প্রত্যেক মুসলমানের উপর জামা‘আতের সাথে জুম‘আ পড়া ফরয। ১. দাস ২. মহিলা ৩. (অপ্রাপ্তবয়স্ক) শিশু ও ৪. অসুস্থ’।[105] এর সনদ সহীহ। তারেক বিন শিহাব (রাঃ) সাক্ষাতের দিক থেকে সাহাবী। যেহেতু এই হাদীস এবং অন্যান্য হাদীসগুলোতে গ্রাম্য ব্যক্তিকে জুম‘আ থেকে পৃথক করা হয়নি, সেজন্য প্রমাণিত হল যে, গ্রাম্য ব্যক্তির উপর জুম‘আ ফরয। অধিক তাহকীকের জন্য সহীহ বুখারী ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ সমূহ অধ্যয়ন করুন।
খলীফা ওমর (রাঃ) তাঁর খেলাফতের সময়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, جَمِّعُوْا حَيْثُمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই থাক জুম‘আ পড়ো’।[106]
হানাফীদের নিকটে গ্রামে জুম‘আ জায়েয নয়।[107] তাঁরা এ বিষয়ে অনেক শর্তও বানিয়ে রেখেছেন। তাদের অনেক মৌলভী গ্রামে জুম‘আ সহীহ না হওয়ার বিষয়ে বইপুস্তকও লিখেছেন। কিন্তু এ সকল ফিকহী গবেষণার বিপরীতে বর্তমানে হানাফী আম জনতা এই মাসআলায় হানাফী মাযহাবকে পরিত্যাগ করে গ্রামগুলোতেও জুম‘আ পড়ছে। হে আল্লাহ! এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করে দিন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, বর্তমানে হানাফী আম জনগণ কিছু মাসআলায় শুধু নামকাওয়াস্তেই ‘তাক্বলীদ’ করে।
২৪. জানাযার সালাত :
আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) এক জানাযায় সূরা ফাতিহা (এবং অন্য একটি সূরা জোরে) পড়েন এবং জিজ্ঞেস করলে বলেন, (আমি এজন্য জোরে পড়লাম) যাতে তোমরা জেনে নাও যে, এটা সুন্নাত (এবং হক)।[108]
আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,
‘জানাযার সালাতে প্রথম তাকবীরে সূরা ফাতিহা নীরবে পড়া সুন্নাত। অতঃপর তিন তাকবীর দিবে এবং শেষ তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরাবে’।[109]
আবু উমামা (রাঃ) থেকে অন্য আরেকটি বর্ণনায় আছে,
‘জানাযার সালাতে সুন্নাত হ’ল, তুমি তাকবীর বলবে অতঃপর সূরা ফাতিহা পড়বে। অতঃপর নবী করীম (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠ করবে। অতঃপর খাছভাবে মাইয়েতের জন্য দো‘আ করবে। শুধু প্রথম তাকবীরে কিরাআত করবে। অতঃপর মনে মনে (অর্থাৎ নীরবে) ডান দিকে সালাম ফিরাবে’।[110] এর সনদ সহীহ।[111]
নবী (ﷺ) ও সাহাবীগণ থেকে এটা অকাট্যভাবে প্রমাণিত নেই যে, সূরা ফাতিহা ব্যতীত জানাযা হয়ে যায়। অথবা তাঁরা সূরা ফাতিহা ব্যতীত জানাযা পড়েছেন। জানাযার সালাতে ঐ দরূদই পড়া উচিত, যেটা নবী করীম (ﷺ) থেকে প্রমাণিত আছে (অর্থাৎ সালাতে যেটা পড়া হয়)। বানোয়াট দরূদ নবী করীম (ﷺ) থেকে প্রমাণিত নেই।
২৬. দাওয়াত :
সাধ্যানুযায়ী কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান অর্জন করা অতঃপর তা প্রচার করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর আবশ্যক। সৃষ্টিজগতের ইমাম নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,
‘আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হ’লেও তা মানুষের নিকটে পৌঁছিয়ে দাও’।[112] শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীসের দাওয়াত দিতে হবে। নিজেদের ফির্কাবাযী মাযহাব এবং কিচ্ছা-কাহিনীর দাওয়াত দেয়া হারাম। দাঈর জন্য যরূরী হল, তিনি তার প্রত্যেক কথার দলীল পেশ করবেন। যাতে যে জীবিত থাকবে সে দলীল দেখে জীবিত থাকবে এবং যে মরবে সে দলীল দেখে মরবে। মহান আল্লাহ বলেন,
‘যে ধ্বংস হবে সে যেন (ইসলামের) সত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ধ্বংস হয় এবং যে বেঁচে থাকবে, সে যেন সত্য প্রতিষ্ঠার পর বেঁচে থাকে’ (আনফাল ৮/৪২)।
২৭. জিহাদ :
দ্বীনের দাওয়াতের সাথে সাথে মুসলিম উম্মাহর মাঝে সহীহ আক্বীদাসম্পন্ন মানুষদের এমন একটি জামা‘আত হওয়া উচিত, যারা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর যে ব্যক্তি এই পথে প্রতিবন্ধক হবে তার বিরুদ্ধে কথা, কলম ও দৈহিক জিহাদ করবে। আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করার জন্য আল্লাহর পথে জিহাদকে মোটেই অপসন্দ করবে না। যাতে সারা পৃথিবীতে কিতাব ও সুন্নাতের ঝান্ডা উড্ডীন হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘তোমরা জেনে রাখ যে, নিঃসন্দেহে জান্নাত তরবারী সমূহের ছায়াতলে’।[113]
আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন কুরআন, হাদীস, সাহাবী, তাবেঈ, মুহাদ্দিছ ও ইমামগণের ভালবাসায় আমাদের মৃত্যু দান করেন এবং দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে আমাদেরকে সব ধরনের অপমান থেকে বাঁচান। আমীন ছুম্মা আমীন! অমা ‘আলায়না ইল্লাল বালাগ। [ঈষৎ সংক্ষেপায়িত]
[1]. আবুদাঊদ ১/১৪২, হা/৯৩২।
[2]. ঐ হা/৯৩৩।
[3]. দারাকুৎনী ১/৩৩৪, হা/১২৫৩, ১২৫৪।
[4]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, আত-তালখীছুল হাবীর ১/২৩৬, হা/৩৫৩।
[5]. সহীহ বুখারী ১/১০৭, হা/৭৮০-এর পূর্বে, ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১১; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২৬৪০।
[6]. সহীহ ইবনু খুযায়মা ১/২৮৭, হা/৫৭২। আলবানী হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন (اسناده ضعيف)।
[7]. মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ২/১১৩, হা/২৬৬৩। হায়ছামী বলেছেন, اسناده حسن ‘এর সনদ হাসান’। তাবারাণী আওসাত ৫/৪৭৩, হা/৪৯১০; আল-কাওলুল মাতীন, পৃঃ ৪৭, ৪৮।
[8]. সহীহ বুখারী ১/১০২, হা/৭৩৫; সহীহ মুসলিম ১/১৬৮, হা/৩৯০।
[9]. সহীহ বুখারী ১/১০২, হা/৭৩৭; সহীহ মুসলিম ১/১৬৮, হা/৩৯১।
[10]. সহীহ মুসলিম ১/১৭৩, হা/৪০১।
[11]. আবুদাঊদ হা/৭৩০, ৭৩৪, সহীহ হাদীস।
[12]. সহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৫৮৪।
[13]. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা ২/৭৩, সনদ সহীহ।
[14]. দারাকুৎনী ১/২৯২, সনদ সহীহ।
[15]. যুবায়ের আলী যাঈ, নূরুল আইনাইন ফী মাসআলায়ে রাফ‘য়ে ইয়াদায়েন, পৃঃ ৮৯, ৯০।
[16]. নায়লুল ফিরকাদাইন, পৃঃ ২৪; ফায়যুল বারী ২/৪৫৫, পাদটীকা।
[17]. সহীহ বুখারী ১/১০২, হা/৭৩৫; সহীহ মুসলিম ১/১৬৮, হা/৩৯০।
[18]. সহীহ বুখারী ১/১০২, হা/৭৩৯।
[19]. বুখারী, জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন, পৃঃ ৫৩। ইমাম নববী আল-মাজমূ শারহুল মুহাযযাব (৩/৪০৫) গ্রন্থে একে সহীহ বলেছেন।
[20]. বুখারী, জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন, পৃঃ ১৬।
[21]. মাসাইলু আহমাদ, ইবনু হানীর বর্ণনা, ১/৫০।
[22]. সহীহ বুখারী ১/১০২, হা/৭৩৭; সহীহ মুসলিম ১/১৬৮, হা/৩৯১।
[23]. সহীহ বুখারী হা/৬৩১ ‘আযান’ অধ্যায়।
[24]. ২য় ও ৪র্থ রাক‘আতে দাঁড়ানোর প্রাক্কালে সিজদা থেকে উঠে সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসা সুন্নাত। একে ‘জালসায়ে ইস্তেরাহাত’ বা স্বস্তির বৈঠক বলে (সালাতুর রাসূল (ﷺ), পৃঃ ১১৪)-অনুবাদক।
[25]. সহীহ বুখারী ১/১১৩, ১১৪, হা/৬৭৭, ৮২৩।
[26]. হেদায়া ১/১১০; হাশিয়াতুস সিন্ধী আলান নাসাঈ ১/১৪০।
[27]. সহীহ মুসলিম ১/১৭৩, হা/৪০১।
[28]. ইবনু হিববান, আছ-ছিকাত ৩/৪২৪।
[29]. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৫/৭১; আইনী, উমদাতুল ক্বারী ৫/২৭৪।
[30]. সহীহ ইবনু হিববান ৩/১৬৭, ১৬৮, হা/১৮৫৭।
[31]. আবুদাঊদ হা/৭২৭।
[32]. ইবনুত তুর্কুমানী হানাফী, আল-জাওহারুন নাকী ৮/২৬২।
[33]. মুক্বাদ্দামা ইবনুছ ছালাহ, পৃঃ ৯৯; আল-কিফায়াহ, পৃঃ ৩৬৪।
[34]. তাকরীবুত তাহযীব, নং ৭৭১৭।
[35]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, আদ-দেরায়া, পৃঃ ২২৫।
[36]. তাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর ১৭/২৯৭; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ২/১০৩। হায়ছামী বলেন, واسناده حسن ‘এর সনদ হাসান’।
[37]. আবুদাঊদ হা/৭২২; মুসনাদে আহমাদ ২/১৩৩, ১৩৪, হা/৬১৭৫; মুনতাকা ইবনুল জারূদ, পৃঃ ৬৯, হা/১৭৮।
[38]. দেখুন : আত-তালখীছুল হাবীর ১/৮৬, হা/৬৯২; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা ৩/২৯২, ২৯৩; ইবনুল মুনযির, আল-আওসাত ৪/২৮২।
[39]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক ৩/২৯৬, হা/৫৬৯৯, সনদ সহীহ।
[40]. ফিরয়াবী, আহকামুল ঈদায়েন হা/১৩৬, সনদ সহীহ।
[41]. ঐ, হা/১৩৭, সনদ সহীহ।
[42]. দেখুন : আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ৫/২৬।
[43]. দেখুন : কিতাবুল উম্ম ১/২৩৭।
[44]. মাসাইলু আহমাদ, আবুদাঊদের বর্ণনা, পৃঃ ৬০, ‘ঈদের সালাতে তাকবীর’ অনুচ্ছেদ।
[45]. কিতাবুল আছল ১/৩৭৪, ৩৭৫; ইবনুল মুনযির, আল-আওসাত ৪/২৮২।
[46]. দেখুন : উকাইলী, কিতাবুয যু‘আফা ৪/৫২, সনদ সহীহ; বুখারী, জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন, তাহকীক : যুবায়ের আলী যাঈ, পৃঃ ৩২।
[47]. বুখারী, জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন হা/১১১; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ৩/২৯৮, হা/১১৩৮৮, সনদ সহীহ।
[48]. বুখারী, জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন হা/১১৬, সনদ হাসান।
[49]. ঐ হা/১১৮, সনদ সহীহ।
[50]. ঐ, হা/১১২, সনদ সহীহ; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ৩/২৯৬, হা/১১৩৮৫।
[51]. জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন, হা/১১৪, সনদ হাসান।
[52]. ঐ হা/১২২, সনদ সহীহ।
[53]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক ৩/৪৬৮, হা/৬৩৫৮, সনদ শক্তিশালী।
[54]. ঐ, হা/৬৩৪৭।
[55]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ৩/২৯৭, হা/১১৩৮৯, সনদ সহীহ।
[56]. দেখুন : মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ৩/২৯৬, হা/১১৩৮৬, সনদ হাসান।
[57]. সহীহ বুখারী ১/১৬৩, হা/১২২৪; সহীহ মুসলিম ১/২১১।
[58]. সহীহ বুখারী হা/১২২৬; সহীহ মুসলিম হা/৫৭৪।
[59]. ফরয সালাতের পরে প্রচলিত সম্মিলিত দো‘আর ক্ষতিকর দিকসমূহের জন্য দেখুন : সালাতুর রাসূল (ﷺ), পৃঃ ১৩২-১৩৩। -অনুবাদক।
[60]. তিরমিযী ২/১৬০, ১৭৫, হা/৩২৪৭, ৩৩৭২; আবুদাঊদ ১/২১৫, হা/১৪৭৯; তিরমিযী বলেছেন, هذا حديث حسن صحيح‘এটি একটি হাসান সহীহ হাদীস’।
[61]. দেখুন : সহীহ বুখারী ২/৯৩৭, হা/৬৩২৯, ৬৩৩০।
[62]. তিরমিযী ২/১৮৭, হা/৩৪৯৯, ইমাম তিরমিযী ও আলবানী (রহঃ) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
[63]. নুযুমুল মুতানাছির মিনাল হাদীসিল মুতাওয়াতির, পৃঃ ১৯০, ১৯১।
[64]. দেখুন : ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/১৮৪; বাযলুল মাজহূদ ৩/১৩৮; কাদ ক্বামাতিছ ছালাহ, পৃঃ ৪০৫।
[65]. সহীহ মুসলিম ১/২৪৭, হা/৭১০ (৬৩)।
[66]. সহীহ ইবনু খুযায়মা ২/১৬৪, হা/১১১৬; সহীহ ইবনু হিববান ৪/৮২, হা/২৪৬২।
[67]. আল-মুস্তাদরাক ১/২৭৪।
[68]. তিরমিযী হা/৪২৩, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[69]. সহীহ মুসলিম ১/২৪৫, হা/৭০৪ (৪৬)।
[70]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ২/৪৫২, ৪৫৭।
[71]. আবুদাঊদ ১/১৭৯, হা/১২২০; তিরমিযী ১/১২৪, হা/৫৫৩; মিশকাত হা/১৩৪৪; ইবনু হিববান (হা/১৫৯১) একে সহীহ বলেছেন।
[72]. মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেক ১/১৪৫, হা/৩২৯, সনদ সহীহ।
[73]. সহীহ বুখারী ১/১৩৫, হা/৯৯০ (কথা); ১/১৩৫, ১৩৬, হা/৯৯৫ (কর্ম); সহীহ মুসলিম ১/২৫৭, হা/৭৪৯ (১৪৬) (কথা), ১/২৫৭, হা/৭৪৯ (১৫৭) (কর্ম)।
[74]. আবুদাঊদ ১/২০৮, হা/১৪২২; নাসাঈ (আতাউল্লাহ হানীফ ভূজিয়ানীর আত-তা‘লীকাতুস সালাফিইয়াহ সহ) ১/২০২, হা/১৭১৩।
[75]. আল-ইহসান ৪/৬৩, হা/২৪০৩।
[76]. আল-মুস্তাদরাক ১/৩০২।
[77]. সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হা/৭৩৬ (১২২), ৭৩৭ (১২৩); সহীহ ইবনু হিববান ৪/৭০, হা/২৪২৬; মুসনাদে আহমাদ ২/৭৬, হা/২৪২০; তাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত ১/৪২২, সনদ সহীহ।
[78]. সহীহ ইবনু হিববান ৪/৬৮; আল-মুস্তাদরাক ১/৩০৪। হাকেম ও যাহাবী দু’জনেই একে বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন।
[79]. মুসলিম, ১/২৪২, হা/৬৯১ (১২)।
[80]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ২/৪৪৩, হা/৮১২০।
[81]. ফিকহে ওমর (উর্দূ), পৃঃ ৩৯৪; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ২/৪৪৫, হা/৮১৩৭।
[82]. সফরের দূরত্বের ব্যাপারে বিদ্বানগণের মধ্যে এক মাইল হ’তে ৪৮ মাইলের বিশ প্রকার বক্তব্য রয়েছে। পবিত্র কুরআনে দূরত্বের কোন ব্যাখ্যা নেই। কেবল সফরের কথা আছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকেও এর কোন সীমা নির্দেশ করা হয়নি। অতএব সফর হিসাবে গণ্য করা যায়, এরূপ সফরে বের হলে নিজ বাসস্থান থেকে বেরিয়ে কিছুদূর গেলেই ‘ক্বছর’ করা যায় (সালাতুর রাসূল (ﷺ), পৃঃ ১৮৬)।-অনুবাদক।
[83]. আল-আরফুশ শাযী ১/১৬৬।
[84]. ঐ।
[85]. মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেক, পৃঃ ৯৮, অন্য সংস্করণ ১/১১৫, হা/২৪৯।
[86]. আছারুস সুনান হা/৭৭৬।
[87]. যে হাদীসের বর্ণনাকারী হাদীসের মতন বা সনদকে বিভিন্ন সময় গোলমাল করে বর্ণনা করেছেন সে হাদীসকে মুযতারিব বলা হয়।-অনুবাদক।
[88]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ২/৩৯১, ৩৯২, হা/৭৬৭০।
[89]. সুনান সাঈদ বিন মানছূর-এর বরাতে সুয়ূতীর আল-হাবী ২/৩৪৯।
[90]. আবুদাঊদ ১/১৭০, হা/১১৫১।
[91]. তিরমিযী, আল-ইলালুল কাবীর ১/২৮৮।
[92]. আত-তালখীছুল হাবীর ২/৮৪।
[93]. মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেক ১/১৮০, হা/৪৩৫।
[94]. আস-সুনানুল কুবরা ৩/২৮৮।
[95]. মুওয়াত্ত্বা মালেক ১/১৮০।
[96]. তাহাবী, শারহু মা‘আনিল আছার ৪/৩৪৫।
[97]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ২/১৭৩, হা/৫৭০১।
[98]. শিক্ষক হাদীস পড়বেন বা মুখস্থ বলবেন এবং ছাত্র তা শুনবে, একে সামা‘ (السماع) বলে।-অনুবাদক
[99]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ২/১৭৬; আহকামুল ঈদায়ন, পৃঃ ১৭১, ১৭২, হা/১১৭।
[100]. সাওয়াতিউল ক্বামারাইন, পৃঃ ১৭২।
[101]. আবুদাঊদ ১/১১১, হা/৭২২; মুসনাদে আহমাদ ২/১৩৪, হা/৬১৭৫।
[102]. ইরওয়াউল গালীল ৩/১১৩।
[103]. আত-তালখীছুল হাবীর ২/৮৬।
[104]. ইবনু মাজাহ, পৃঃ ৭৪, হা/১০৬৪।
[105]. আবুদাঊদ ১/১৬০, হা/১০৬৭।
[106]. ফিকহে ওমর, পৃঃ ৪৫৫; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, ১/১০২, হা/৫০৬৮।
[107]. হেদায়া ১/১৬৭।
[108]. সহীহ বুখারী ১/১৭৮, হা/১৩৩৫; নাসাঈ ১/১৮১, হা/১৯৮৭-৮৯; মুনতাকা ইবনুল জারূদ, পৃঃ ১৮৮, হা/৫৩৪, ৫৩৬। প্রথম বন্ধনীর শব্দগুলো নাসাঈর, দ্বিতীয় বন্ধনীর শব্দগুলো মুনতাকার এবং শেষ বন্ধনীর শব্দগুলো নাসাঈ ও ইবনুল জারূদের।
[109]. নাসাঈ ১/২৮১, হা/১৯৮৯।
[110]. মুনতাকা ইবনুল জারূদ, পৃঃ ১৮৯, হা/৫৪০; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক ৩/৪৮৮, ৪৮৯, হা/৬৪২৮)।
[111]. ইরওয়াউল গালীল ৩/১৮১।
[112]. সহীহ বুখারী ১/৪৯১, হা/৩৪৬১।
[113]. সহীহ বুখারী ১/৪২৫, হা/৩০২৫; সহীহ মুসলিম ২/৮৪, হা/১৭৪২ (২০)। [এজন্য সর্বযুগে জিহাদের শর্তাবলী পূরণ করতে হবে। কোন রাষ্ট্রের অধীনে বসবাসকারী যেকোন মুসলিম নাগরিক যেকোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তরবারীর জিহাদ করতে পারে না।- বিস্তারিত দেখুন: হা.ফা.বা প্রকাশিত ‘জিহাদ ও ক্বিতাল’ বই।-অনুবাদক।]
ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,
كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا قَرَأَ (وَلاَ الضَّالِّينَ) قَالَ آمِينَ وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهُ-
‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন ‘ওয়ালায যাল্লীন’ পড়তেন, তখন উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলতেন’।[1] একটি বর্ণনায় আছে, فَجَهَرَ بِآمِيْنَ ‘অতঃপর তিনি সশব্দে আমীন বললেন’।[2] يَرْفَعُ صَوْتَهُ بِآمِيْنَ হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম দারাকুৎনী বলেছেন, صَحِيْحٌ ‘সহীহ’।[3]
ইবনু হাজার বলেছেন, وَسَنَدُهُ صَحِيْحٌ ‘এর সনদ সহীহ’।[4]
ইবনু হিববান ও ইবনুল ক্বাইয়িম প্রমুখ সহীহ বলেছেন। কোন নির্ভরযোগ্য ইমাম একে যঈফ বলেননি। এ মর্মের অন্যান্য সহীহ বর্ণনাগুলো আলী, আবু হুরায়রা (রাঃ) প্রমুখ থেকেও বর্ণিত আছে। যেগুলোকে লেখক ‘আল-কাওলুল মাতীন ফিল-জাহর বিত-তা’মীন’(القول المتين في الجهر بالتأمين) গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন।
আতা বিন আবী রাবাহ বর্ণনা করেছেন যে,
أَمَّنَ ابْنُ الزُّبَيْرِ وَمَنْ وَرَاءَهُ حَتَّى إِنَّ لِلْمَسْجِدِ لَلَجَّةً
‘আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) এবং তাঁর মুক্তাদীরা এত উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলেন যে, মসজিদ গুঞ্জরিত হয়ে উঠে’।[5]
এর সনদ সহীহ (রিজাল ও উছূলে হাদীসের গ্রন্থাবলী দেখুন)।
ইবনু ওমর (রাঃ) এবং তাঁর সাথী ও ইমামের পিছনে আমীন বলতেন এবং এটাকে সুন্নাত আখ্যায়িত করতেন।[6] কোন একজন সাহাবী থেকেও সহীহ সনদে নীরবে আমীন বলা অকাট্যভাবে প্রমাণিত নেই।
মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
إِنَّ الْيَهُودَ قَوْمٌ سَئِمُوا دِينَهُمْ، وَهُمْ قَوْمٌ حُسَّدٌ، وَلَمْ يَحْسِدُوا الْمُسْلِمِينَ عَلَى أَفْضَلَ مِنْ ثَلاَثٍ: رَدِّ السَّلاَمِ، وَإِقَامَةِ الصُّفُوفِ، وَقَوْلِهِمْ خَلْفَ إِمَامِهِمْ فِي الْمَكْتُوبَةِ آمِينَ-
‘নিশ্চয়ই ইহুদীরা তাদের ধর্ম সম্পর্কে বিরক্ত হয়ে গেছে এবং তারা হিংসুক জাতি। তারা যেসব আমলের ব্যাপারে মুসলমানদের সাথে হিংসা করে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল (১) সালামের উত্তর দেয়া (২) কাতার সমূহ সোজা করা এবং (৩) ফরয সালাতে ইমামের পিছনে মুসলমানদের আমীন বলা’।[7]
১৪. রাফ‘উল ইয়াদায়েন :
বহু সাহাবী নবী করীম (ﷺ) থেকে সালাতে রুকূর পূর্বে এবং পরে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। যেমন ইবনু ওমর,[8] মালেক ইবনুল হুওয়াইরিছ,[9] ওয়ায়েল বিন হুজর,[10] আবু হুমাইদ আস-সায়েদী, আবু কাতাদা, সাহল বিন সা‘দ আস-সায়েদী, আবু উসাইদ, মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ,[11] আলী বিন আবু ত্বালেব,[12] আবুবকর ছিদ্দীক্ব, আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়ের,[13] আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)[14] প্রমুখ। অনেক ইমাম এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করেছেন যে, রুকূর পূর্বে ও পরে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা মুতাওয়াতির। যেমন ইবনুল জাওযী, ইবনু হাযম, ইরাকী, ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনু কুদামা, ইবনু হাজার, কাত্তানী, সুয়ূতী, যুবায়দী, যাকারিয়া আনছারী প্রমুখ।[15]
আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী দেওবন্দী বলেছেন যে,
وليعلم أن الرفع متواترٌ إسنادًا وعملاً، لا يشك فيه ولم يُنْسَخ ولا حرفٌ منه-
‘জেনে রাখা উচিত যে, সনদ ও আমল দু’দিক থেকেই রাফ‘উল ইয়াদায়েন মুতাওয়াতির। এতে কোন সন্দেহ নেই। আর রাফ‘উল ইয়াদায়েন মানসূখ বা রহিত হয়নি। এমনকি এর একটি হরফও মানসূখ হয়নি’।[16]
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ، وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوعِ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ رَفَعَهُمَا كَذَلِكَ أَيْضًا وَقَالَ : سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ وَكَانَ لاَ يَفْعَلُ ذَلِكَ فِى السُّجُودِ-
ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন সালাত শুরু করতেন তখন তাঁর দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। এভাবে যখন রুকূর তাকবীর বলতেন এবং রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন, তখনও তাঁর দু’হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন এবং বলতেন,سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ ‘আল্লাহ শোনেন তার কথা যে তাঁর প্রশংসা করে। হে আমাদের প্রভু! আপনার জন্যই যাবতীয় প্রশংসা’। আর তিনি সিজদায় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না’।[17]
এই হাদীসের বর্ণনাকারী ইবনু ওমর (রাঃ) নিজেও রুকূর পূর্বে এবং রুকূর পরে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[18] বরং তিনি যাকে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে দেখতেন না, তাকে ছোট পাথর ছুঁড়ে মারতেন।[19] ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরক করা সহীহ সনদে অকাট্যভাবে প্রমাণিত নেই। রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরককারীরা আবুবকর বিন আইয়াশ-এর হুছাইন থেকে মুজাহিদ সূত্রে যে বর্ণনা পেশ করে থাকেন, সে সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণের ইমাম ইয়াহ্ইয়া ইবনু মা‘ঈন বলেছেন, ‘এটি ভুল। এর কোন ভিত্তি নেই’।[20] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেছেন,
رواه أبو بكر بن عياش عن حصين عن مجاهد عن ابن عمر وهو باطل-
অর্থাৎ আবুবকর বিন আইয়াশ সূত্রের বর্ণনাটি বাতিল।[21]
তাবেঈ আবু কিলাবা বলেছেন যে,
أَنَّهُ رَأَى مَالِكَ بْنَ الْحُوَيْرِثِ إِذَا صَلَّى كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ، وَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوعِ رَفَعَ يَدَيْهِ، وَحَدَّثَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَنَعَ هَكَذَا-
‘তিনি মালেক ইবনুল হুওয়াইরিছকে দেখেছেন, যখন তিনি সালাত আদায় করতেন তখন তাকবীর দিতেন এবং তাঁর দু’হাত উত্তোলন করতেন। যখন রুকূ করার ইচ্ছা করতেন এবং রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখন তাঁর দু’হাত উঠাতেন এবং বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমনটা করেছেন’।[22]
মালেক (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছিলেন যে,
صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِى أُصَلِّى
‘তোমরা সালাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে আদায় করতে দেখছ’।[23] তিনি জালসায়ে ইস্তেরাহাতও[24] করতেন এবং সেটি মারফূ সূত্রে বর্ণনা করতেন।[25] হানাফীদের নিকটে এই বসা রাসূল (ﷺ)-এর বার্ধক্যের উপর প্রযোজ্য। অর্থাৎ যখন রাসূল (ﷺ) শেষ বয়সে বার্ধক্যের কারণে দুর্বল হয়ে গিয়েছিলেন, তখন এভাবে বসতেন।[26]
মালেক ইবনুল হুওয়াইরিছ রাফ‘উল ইয়াদায়েনের রাবী বা বর্ণনাকারী। এজন্য প্রমাণিত হল যে, হানাফীদের নিকটে নবী (ﷺ) শেষ বয়সেও রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন। ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,
فَلَمَّا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ أَخْرَجَ يَدَيْهِ مِنَ الثَّوْبِ ثُمَّ رَفَعَهُمَا ثُمَّ كَبَّرَ فَرَكَعَ فَلَمَّا قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَفَعَ يَدَيْهِ
‘নবী করীম (ﷺ) যখন রুকূ করার ইচ্ছা করলেন তখন তাঁর দু’হাত কাপড়ের মধ্যে থেকে বের করলেন এবং রাফ‘উল ইয়াদায়েন করলেন। অতঃপর তাকবীর বলে রুকূ করলেন। যখন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বললেন, তখন রাফ‘উল ইয়াদায়েন করলেন’।[27]
ওয়ায়েল (রাঃ) ইয়েমেনের বড় বাদশাহ ছিলেন।[28]
তিনি ৯ম হিজরীতে প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসাবে নবী করীম (ﷺ)-এর নিকটে আগমন করেছিলেন।[29] তিনি পরবর্তী বছর ১০ম হিজরীতেও মদীনা মুনাউওয়ারায় এসেছিলেন।[30]
ঐ বছরেও তিনি রাফ‘উল ইয়াদায়েন প্রত্যক্ষ করেছিলেন।[31] এজন্য তাঁর বর্ণিত সালাত নবী করীম (ﷺ)-এর শেষ বয়সের সালাত। নবী (ﷺ) এবং কোন সাহাবী থেকে রুকূর সময় ও রুকূর পরে রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরক করা, রহিত হওয়া বা নিষিদ্ধতা অকাট্যভাবে প্রমাণিত নেই।
সুনানে তিরমিযীতে (১/৫৯, হা/২৫৭) ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর দিকে যে বর্ণনাটি সম্পর্কিত রয়েছে, তাতে সুফয়ান ছাওরী মুদাল্লিস।[32] মুদাল্লিস রাবীর عن ওয়ালা বর্ণনা যঈফ হয়।[33] দ্বিতীয় বিষয় এই যে, বিশের অধিক ইমাম একে যঈফ আখ্যা দিয়েছেন। এজন্য এই সনদটি যঈফ। রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরক করার ব্যাপারে বারা ইবনু আযিব (রাঃ)-এর দিকে সম্পর্কিত বর্ণনাটিতে ইয়াযীদ বিন আবী যিয়াদ আল-কূফী যঈফ।[34] মুসনাদে হুমায়দী এবং মুসনাদে আবী আওয়ানাতে বন্ধুরা পরিবর্তন করেছেন। মূল পান্ডুলিপি সমূহতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন সম্পর্কে হ্যাঁ বাচক বর্ণনা রয়েছে। যেটিকে কিছু স্বার্থান্ধ ব্যক্তি পরিবর্তন করতে গিয়ে নাফী বা না বাচক করে দিয়েছে। যিনি তাহকীক করতে চান তিনি আমাদের নিকট এসে মূল পান্ডুলিপি সমূহের ফটোকপি দেখতে পারেন। কতিপয় ব্যক্তি রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরক করার ব্যাপারে ঐ সকল বর্ণনাও পেশ করার চেষ্টা করেছেন, যেগুলোতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা বা না করার কোন উল্লেখই নেই। অথচ কোন বিষয় উল্লেখ না থাকা তা না করার দলীল হয় না।[35]
যে ব্যক্তি সালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে সে প্রত্যেক আঙ্গুলের পরিবর্তে একটি করে নেকী লাভ করে। অর্থাৎ একবার রাফ‘উল ইয়াদায়েন করলে ১০ নেকী।[36] ঈদায়েনের সালাতে অতিরিক্ত তাকবীর সমূহে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা সম্পূর্ণরূপে সঠিক। কেননা নবী করীম (ﷺ) রুকূর পূর্বে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[37] এই হাদীসের সনদ সম্পূর্ণরূপে সহীহ। বর্তমান যুগে কতিপয় ব্যক্তির এই হাদীসের সমালোচনা করা প্রত্যাখ্যাত। ইমাম বায়হাক্বী ও ইমাম ইবনুল মুনযির এই হাদীস দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, ঈদায়েনের তাকবীর সমূহেও রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা উচিত।[38]
ঈদুল ফিতরের তাকবীর সমূহের ব্যাপারে আতা বিন আবী রাবাহ (তাবেঈ) বলেছেন যে,
نعم، ويرفع الناس أيضا
‘হ্যঁা, ঐ তাকবীরগুলোতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা উচিত এবং সকল মানুষও রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে’।[39] সিরিয়াবাসীর ইমাম আওযাঈ (রহঃ) বলেছেন যে,
نعم، ارفع يديك مع كلهن-
‘হ্যঁা, ঐ তাকবীরগুলোর সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন কর’।[40]
মদীনার ইমাম মালেক বিন আনাস (রহঃ) বলেছেন,
نعم، ارفع يديك مع كل تكبيرة، ولم أسمع فيه شيئا-
‘হ্যঁা, প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন কর। এ ব্যাপারে (এর বিপরীত) কোন কিছু আমি শুনিনি’।[41] এই সহীহ উক্তির বিপরীতে মালেকীদের অনির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ‘মুদাওয়ানা’তে (১/১৫৫) একটি সনদবিহীন উক্তি উল্লিখিত রয়েছে। সনদবিহীন এই উদ্ধৃতিটি প্রত্যাখ্যাত। মুদাওয়ানার জবাবের জন্য আমার ‘আল-কাওলুল মাতীন ফিল-জাহর বিত-তা’মীন’ (পৃঃ ৭৩) গ্রন্থটি দেখুন!
অনুরূপভাবে সনদবিহীন হওয়ার কারণে ইমাম নববীর উদ্ধৃতিও প্রত্যাখ্যাত।[42] মক্কাবাসীর ইমাম শাফেঈ (রহঃ)ও ঈদায়েনের তাকবীর সমূহে রাফ‘উল ইয়াদায়েন-এর প্রবক্তা
ছিলেন।[43]
আহলুস সুন্নাতের ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেছেন যে,
يرفع يديه في كل ةكبيرة
‘(ঈদায়েনের) প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে’।[44]
সালাফে ছালেহীন-এর এ সকল আছারের বিপরীতে মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ-শায়বানী লিখেছেন যে, ولا يرفع يديه (ঈদায়েনের তাকবীর সমূহে) রাফ‘উল ইয়াদায়েন করবে না’।[45]
এই উক্তিটি দু’টি কারণে প্রত্যাখ্যাত :
১. মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান আশ-শায়বানী মিথ্যুক।[46] তাঁর সত্যায়ন কোন নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিছ থেকে সুস্পষ্টভাবে সহীহ সনদে প্রমাণিত নেই। আমি এ বিষয়ে ‘আন-নাছরুর রববানী’ (النصر الربانى) নামে একটি পুস্তক লিখেছি। যেখানে প্রমাণ করেছি যে, উল্লেখিত শায়বানী মিথ্যুক ও ন্যায়পরায়ণ নন। ওয়ালহামদু লিল্লাহ।
২. এই মিথ্যুকের বক্তব্য সালাফে ছালেহীনের ইজমা ও ঐক্যমতের বিপরীত হওয়ার কারণেও প্রত্যাখ্যাত।
জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে প্রমাণিত আছে।[47]
তাবেঈ মাকহূল জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[48]
ইমাম যুহরী জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[49]
কায়েস বিন আবী হাযেম (তাবেঈ) জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[50]
নাফে‘ বিন জুবায়ের জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[51]
হাসান বাছরী জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন।[52]
নিম্নলিখিত ওলামায়ে সালাফে ছালেহীনও জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার প্রবক্তা ও আমলকারী ছিলেন। আতা বিন আবী রাবাহ,[53] আব্দুর
রাযযাক,[54] মুহাম্মাদ ইবনু সিরীন।[55]
সালাফে ছালেহীনের এসকল আছারের বিপরীতে ইবরাহীম নাখঈ (তাবেঈ) জানাযার সালাতে প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না।[56]
প্রমাণিত হল যে, জমহূর সালাফে ছালেহীনের মাসলাক এটাই যে, জানাযার প্রত্যেক তাকবীরের সাথে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে হবে। যেমনটি সূত্রসহ পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। আর এটাই সঠিক ও প্রাধান্যযোগ্য মত। ওয়ালহামদু লিল্লাহ।
১৫. সহো সিজদা :
সহো সিজদা সালামের পূর্বেও জায়েয আছে[57] এবং সালামের পরেও জায়েয আছে।[58] সহো সিজদায় শুধু একদিকে সালাম ফিরানোর কোন প্রমাণ হাদীস সমূহে নেই।
১৬. সম্মিলিত দো‘আ :[59]
দো‘আ করা অনেক বড় ইবাদত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, اَلدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ ‘দো‘আ-ই ইবাদত’।[60]
সালাতের পরে বিভিন্ন দো‘আ প্রমাণিত রয়েছে।[61] একটি যঈফ বর্ণনায় এসেছে যে, নবী করীম (ﷺ) ফরয সালাতের শেষের দো‘আকে অধিক কবুলযোগ্য আখ্যা দিয়েছেন।[62] সাধারণ দো‘আয় হাত উঠানো মুতাওয়াতির হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে।[63] তবে ফরয সালাতের পরে ইমাম ও মুক্তাদীদের সম্মিলিত দো‘আ করা প্রমাণিত নয়।[64]
১৭. ফজরের দু’রাক‘আত সুন্নাত :
সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَلاَ صَلاَةَ إِلاَّ الْمَكْتُوبَةُ
‘যখন সালাতের একামত হয়ে যাবে তখন (ঐ) ফরয সালাত ব্যতীত আর কোন সালাত নেই’।[65] কায়েস বিন কাহ্দ (রাঃ) আসলেন, এমতাবস্থায় নবী করীম (ﷺ) ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। তিনি তাঁর সাথে এই সালাত আদায় করলেন। যখন তিনি সালাম ফিরালেন তখন কাহ্দ উঠে দাঁড়ালেন এবং ফজরের দু’রাক‘আত (সুন্নাত) পড়লেন। নবী করীম (ﷺ) তার দিকে দেখছিলেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন,مَا هَاتَانِ الرَّكْعَتَانِ؟ ‘এ দু’রাক‘আত কিসের’? তিনি বললেন, আমার ফজরের পূর্বের (এই) দুই রাক‘আত সালাত থেকে গিয়েছিল। তখন নবী করীম (ﷺ) চুপ হয়ে গেলেন এবং কিছু বললেন না।[66] ইমাম হাকেম ও যাহাবী দু’জনেই একে সহীহ বলেছেন।[67] এ ব্যাপারে সূর্যোদয়ের পর সালাত আদায়ের যে বর্ণনা[68] আছে, তাতে রাবী কাতাদাহ মুদাল্লিস এবং عَنْعَنَ পদ্ধতিতে বর্ণনা করেছেন। সেজন্য ঐ বর্ণনা সন্দেহযুক্ত ও যঈফ।
১৮. দুই সালাত জমা করা :
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সফরে যোহর ও আছরের সালাত জমা করে পড়েছেন। অনুরূপভাবে মাগরিব ও এশার সালাতও জমা করে পড়েছেন।[69] অসংখ্য সাহাবী সফরে দুই সালাতকে জমা করে পড়ার প্রবক্তা ও বাস্তবায়নকারী ছিলেন। যেমন ইবনু আববাস, আনাস বিন মালেক, সা‘দ, আবু মূসা (রাঃ)।[70] নবী করীম (ﷺ) কুরআন মাজীদের সবচেয়ে বড় ব্যাখ্যাকার ও মুফাসসির ছিলেন। সেজন্য এটা হ’তেই পারে না যে, তাঁর কাজ পবিত্র কুরআনের বিপরীত হবে। তাই সফরে দুই সালাত জমা করাকে কুরআন মাজীদের বিপরীত মনে করা ভুল। ওযর ব্যতীত সালাত জমা করা প্রমাণিত নেই। সফর, বৃষ্টি ও অত্যন্ত জোরালো শারঈ ওযর-এর ভিত্তিতে জমা করা জায়েয আছে (যেমনটি সহীহ মুসলিমে এসেছে)। জমা তাকদীম ও তাখীর যেমন যোহরের সময় আছরের সালাত আদায় করা অথবা আছরের সময় যোহর পড়া এ দুই পদ্ধতিই জায়েয আছে।[71] সফরে দুই সালাত জমা করার বর্ণনাসমূহ সহীহ বুখারীতেও (১/১৪৯, হা/১১০৮-১১১২) মওজুদ রয়েছে। ইবনু ওমর (রাঃ) বৃষ্টির সময় দুই সালাত জমা করে পড়তেন।[72]
১৯. বিতর সালাত :
নবী করীম (ﷺ) থেকে এক রাক‘আত বিতর-এর সত্যতা কথা ও কর্ম দু’ভাবেই অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে।[73] রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
اَلْوِتْرُ حَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِخَمْسٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِثَلاَثٍ فَلْيَفْعَلْ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يُوتِرَ بِوَاحِدَةٍ فَلْيَفْعَلْ
‘বিতর প্রত্যেক মুসলিমের উপর হক বা অধিকার। সুতরাং যে চায় সে পাঁচ রাক‘আত বিতর পড়ুক, যে চায় তিন রাক‘আত পড়ুক এবং যে চায় এক রাক‘আত বিতর পড়ুক’।[74] এই হাদীসকে ইমাম ইবনু হিববান তাঁর সহীহ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন[75] এবং ইমাম হাকেম ও যাহাবী দু’জনেই বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ বলেছেন।[76]
তিন রাক‘আত বিতর পড়ার পদ্ধতি এই যে, দুই রাক‘আত পড়বে এবং সালাম ফিরাবে। অতঃপর এক রাক‘আত বিতর পড়বে।[77]
মাগরিব সালাতের মতো (মাঝখানে বৈঠক করে) তিন রাক‘আত বিতর পড়া নিষেধ।[78] এজন্য এক সালাম ও দুই তাশাহ্হুদে তিন রাক‘আত বিতর একসাথে পড়া নিষিদ্ধ। যদি কোন ব্যক্তি এক সালামে তিন রাক‘আত বিতর পড়তে চায় যেমনটা কিছু আছার দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে, তাহলে তার উচিত হ’ল দ্বিতীয় রাক‘আতে তাশাহ্হুদের জন্য বসবে না। বরং তিন রাক‘আত বিতর এক তাশাহ্হুদেই পড়বে।
২০. ক্বছর সালাত :
সহীহ মুসলিমে ইয়াহ্ইয়া বিন ইয়াযীদ আল-হুনাঈ (রহঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,
سَأَلْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ عَنْ قَصْرِ الصَّلاَةِ فَقَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا خَرَجَ مَسِيرَةَ ثَلاَثَةِ أَمْيَالٍ أَوْ ثَلاَثَةِ فَرَاسِخَ (شُعْبَةُ الشَّاكُّ) صَلَّى رَكْعَتَيْنِ
‘আমি আনাস বিন মালেক (রাঃ)-কে সালাত ক্বছর করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন ৩ মাইল বা ৩ ফারসাখ (৯ মাইল) সফরের জন্য বের হ’তেন (৩ বা ৯ এর ব্যাপারে শু‘বার সন্দেহ), তখন তিনি দুই রাক‘আত পড়তেন’।[79]
ইবনু ওমর (রাঃ) ৩ মাইলের দূরত্বেও ক্বছর জায়েয হওয়ার প্রবক্তা ছিলেন।[80] ওমর (রাঃ)ও এর প্রবক্তা ছিলেন।[81] সতর্কতাও এতেই রয়েছে যে, কমপক্ষে ৯ মাইলের দূরত্বে ক্বছর করা হবে। এভাবে সব হাদীসের উপরে সহজে আমল হয়ে যায়।[82]
২১. কিয়ামে রামাযান (তারাবীহ) :
সহীহ বুখারীতে (১/২৬৯, হা/২০১৩) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রামাযান এবং রামাযানের বাইরে ১১ রাক‘আতের বেশী রাতের সালাত পড়তেন না। এই হাদীসের আলোকে জনাব আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী দেওবন্দী বলেছেন,
وَلاَ مَنَاصَ مِنْ تَسْلِيْمٍ أَنَّ تَرَاوِيْحَهُ كَانَتْ ثَمَانِيَةَ رَكَعَاتٍ
‘এটা মেনে না নিয়ে কোন উপায় নেই যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর তারাবীহ ৮ রাক‘আত ছিল’।[83] তিনি আরো বলেছেন,
وأما النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فصح عنه ثمان ركعات، وأما عشرون ركعة فهو عنه بسند ضعيف وعلى ضعفه اتفاق-
‘পক্ষান্তরে নবী করীম (ﷺ) থেকে ৮ রাক‘আত (তারাবীহ) সহীহ প্রমাণিত রয়েছে। আর ২০ রাক‘আতের যে হাদীস তাঁর থেকে বর্ণিত আছে তা যঈফ এবং সেটা যঈফ হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যমত রয়েছে’।[84]
আমীরুল মুমিনীন ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) এই সুন্নাতে নববীর উপরে আমল করতে গিয়ে নির্দেশ দেন,
أَنْ يَقُومَا لِلنَّاسِ بِإِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً
‘তারা যেন লোকদেরকে ১১ রাক‘আত পড়ায়’।[85] ইমাম যিয়া আল-মাকদেসী এটাকে সহীহ বলেছেন। মুহাম্মাদ বিন আলী নিমবী এই বর্ণনা সম্পর্কে লিখেছেন,
وإسناده صحيح
‘এর সনদ সহীহ’।[86] এজন্য হিজরী পনের শতকে কিছু গোঁড়া সংকীর্ণমনা ব্যক্তির একে মুযতারিব[87] প্রভৃতি বলা বাতিল ও ভিত্তিহীন। উক্ত নির্দেশ অনুযায়ী উবাই বিন কা‘ব ও তামীম আদ-দারী (রাঃ) আমল করে দেখিয়েছিলেন।[88] সাহাবীগণও ১১ রাক‘আতই পড়তেন।[89] এই আমলের সনদকে হাফেয সুয়ূতী
بسند في غاية الصحة
‘চূড়ান্ত সহীহ সনদ’ বলেছেন। স্মতর্ব্য যে, ওমর (রাঃ) থেকে নির্দেশ ও কর্মের দিক থেকে ২০ রাক‘আত সহীহ সনদে অকাট্যভাবে প্রমাণিত নেই।
২২. ঈদায়নের তাকবীর :
নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,
اَلتَّكْبِيرُ فِى الْفِطْرِ سَبْعٌ فِى الْأُولَى وَخَمْسٌ فِى الْآخِرَةِ وَالْقِرَاءَةُ بَعْدَهُمَا كِلْتَيْهِمَا-
‘ঈদুল ফিতরের দিন প্রথম রাক‘আতে সাত এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর। আর দুই রাক‘আতেই কিরাআত ঐ তাকবীরগুলোর পরে’।[90]
এই হাদীস সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, هُوَ صَحِيْحٌ ‘এটা সহীহ’।[91] ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল ও আলী ইবনুল মাদীনীও একে সহীহ বলেছেন।[92] আমর ইবনু শু‘আইব তার পিতা থেকে এবং তিনি তার দাদা থেকে (এই সূত্রটি) হুজ্জাত (দলীল) হওয়ার ব্যাপারে আমি ‘মুসনাদুল হুমায়দী’র তাখরীজে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই বর্ণনার অন্যান্য সমর্থক বর্ণনার জন্য ইরওয়াউল গালীল (৩/১০৬-১১৩) প্রভৃতি দেখুন। নাফে বলেছেন,
شَهِدْتُ الْأَضْحَى وَالْفِطْرَ مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ فَكَبَّرَ فِي الرَّكْعَةِ الْأُولَى سَبْعَ تَكْبِيرَاتٍ قَبْلَ الْقِرَاءَةِ وَفِي الْآخِرَةِ خَمْسَ تَكْبِيرَاتٍ قَبْلَ الْقِرَاءَةِ
‘আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর পিছনে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের সালাত আদায় করেছি। তিনি প্রথম রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে ৭ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে ৫ তাকবীর দিয়েছেন’।[93] এর সনদ একেবারেই সহীহ এবং বুখারী ও মুসলিমের শর্তে।
শু‘আইব বিন আবী হামযার নাফে থেকে বর্ণিত সূত্রে রয়েছে, وَهِىَ السُّنَّةُ ‘এটাই সুন্নাত’।[94] ইমাম মালেক বলেছেন যে, ‘আমাদের এখানে অর্থাৎ মদীনায় এর উপরেই আমল রয়েছে’।[95] আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)ও ঈদায়েনের প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর দিতেন’।[96]
আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ)ও প্রথম রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে সাত এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিতেন।[97] ইবনু জুরাইজের শ্রবণের (سماع)[98] কথা ফিরইয়াবীর আহকামুল ঈদায়ন (পৃঃ ১৭৬, হা/১২৮) গ্রন্থে মওজুদ রয়েছে। এর অন্যান্য শাহেদ বা সমর্থক বর্ণনার জন্য ইরওয়াউল গালীল (৩/১১১) প্রভৃতি অধ্যয়ন করুন!
আমীরুল মুমিনীন ওমর বিন আব্দুল আযীযও প্রথম রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে সাত এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে কিরাআতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর দিতেন।[99] এর সনদ
সহীহ।[100]
রাফ‘উল ইয়াদায়েন অনুচ্ছেদে (১৪) এটি হাসান সনদে উল্লেখিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে সে প্রত্যেক আঙ্গুলের বিনিময়ে একটি করে নেকী পায়। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেছেন যে, নবী করীম (ﷺ) রুকূর পূর্বে প্রত্যেক তাকবীরে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন’।[101] এর সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ।[102] ইমাম ইবনুল মুনযির ও ইমাম বায়হাক্বী ঈদায়নের তাকবীর সমূহে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের মাসআলায় এই হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন।[103] আর এই দলীল গ্রহণ সঠিক। কেননা ‘আম দ্বারা দলীল গ্রহণ করা সর্বসম্মতিক্রমে সঠিক। যে ব্যক্তি রাফ‘উল ইয়াদায়েনকে অস্বীকারকারী সে এই ‘আম দলীলের বিপরীতে খাছ দলীল পেশ করুক। স্মতর্ব্য যে, ঈদায়নের তাকবীর সমূহে রাফ‘উল ইয়াদায়েন না করার একটি দলীলও পুরা হাদীসের ভান্ডারে নেই।
২৩. জুম‘আর সালাত :
জুম‘আ ফরয হওয়া মুতাওয়াতির হাদীসসমূহ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে। ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,
صَلاَةُ السَّفَرِ رَكْعَتَانِ وَالْجُمُعَةُ رَكْعَتَانِ وَالْعِيدُ رَكْعَتَانِ تَمَامٌ غَيْرُ قَصْرٍ عَلَى لِسَانِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم-
‘সফরের সালাত দুই রাক‘আত এবং জুম‘আর সালাত দুই রাক‘আত। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতও দুই রাক‘আত। নবী করীম (ﷺ)-এর ভাষায় এটি পূর্ণ, কছর নয়’।[104]
পবিত্র কুরআনের বরকতময় আয়াত
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ
‘হে মুমিনগণ! জুম‘আর দিনে যখন সালাতের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত দৌড়ে যাও...’ (জুম‘আ ৬২/৯) থেকে জানা যায় যে, প্রত্যেক মুমিনের উপর জুম‘আ ফরয। চাই সে শহুরে হোক বা গ্রাম্য ব্যক্তি। তারেক বিন শিহাব (রাঃ) বলেছেন যে, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,
اَلْجُمُعَةُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فِى جَمَاعَةٍ إِلاَّ أَرْبَعَةً عَبْدٌ مَمْلُوكٌ أَوِ امْرَأَةٌ أَوْ صَبِىٌّ أَوْ مَرِيضٌ
‘চারজন ব্যতীত প্রত্যেক মুসলমানের উপর জামা‘আতের সাথে জুম‘আ পড়া ফরয। ১. দাস ২. মহিলা ৩. (অপ্রাপ্তবয়স্ক) শিশু ও ৪. অসুস্থ’।[105] এর সনদ সহীহ। তারেক বিন শিহাব (রাঃ) সাক্ষাতের দিক থেকে সাহাবী। যেহেতু এই হাদীস এবং অন্যান্য হাদীসগুলোতে গ্রাম্য ব্যক্তিকে জুম‘আ থেকে পৃথক করা হয়নি, সেজন্য প্রমাণিত হল যে, গ্রাম্য ব্যক্তির উপর জুম‘আ ফরয। অধিক তাহকীকের জন্য সহীহ বুখারী ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ সমূহ অধ্যয়ন করুন।
খলীফা ওমর (রাঃ) তাঁর খেলাফতের সময়ে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, جَمِّعُوْا حَيْثُمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই থাক জুম‘আ পড়ো’।[106]
হানাফীদের নিকটে গ্রামে জুম‘আ জায়েয নয়।[107] তাঁরা এ বিষয়ে অনেক শর্তও বানিয়ে রেখেছেন। তাদের অনেক মৌলভী গ্রামে জুম‘আ সহীহ না হওয়ার বিষয়ে বইপুস্তকও লিখেছেন। কিন্তু এ সকল ফিকহী গবেষণার বিপরীতে বর্তমানে হানাফী আম জনতা এই মাসআলায় হানাফী মাযহাবকে পরিত্যাগ করে গ্রামগুলোতেও জুম‘আ পড়ছে। হে আল্লাহ! এর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করে দিন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, বর্তমানে হানাফী আম জনগণ কিছু মাসআলায় শুধু নামকাওয়াস্তেই ‘তাক্বলীদ’ করে।
২৪. জানাযার সালাত :
আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) এক জানাযায় সূরা ফাতিহা (এবং অন্য একটি সূরা জোরে) পড়েন এবং জিজ্ঞেস করলে বলেন, (আমি এজন্য জোরে পড়লাম) যাতে তোমরা জেনে নাও যে, এটা সুন্নাত (এবং হক)।[108]
আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে,
اَلسُّنَّةُ فِى الصَّلاَةِ عَلَى الْجَنَازَةِ أَنْ يَقْرَأَ فِى التَّكْبِيرَةِ الأُولَى بِأُمِّ الْقُرْآنِ مُخَافَتَةً ثُمَّ يُكَبِّرَ ثَلاَثًا وَالتَّسْلِيمُ عِنْدَ الآخِرَةِ
‘জানাযার সালাতে প্রথম তাকবীরে সূরা ফাতিহা নীরবে পড়া সুন্নাত। অতঃপর তিন তাকবীর দিবে এবং শেষ তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরাবে’।[109]
আবু উমামা (রাঃ) থেকে অন্য আরেকটি বর্ণনায় আছে,
السنة في الصلاة على الجنائز أن تكبر ثم تقرأ بأم القرآن ثم تصلي على النبي صلى الله عليه وسلم ثم تخلص الدعاء للميت ولا تقرأ الا في التكبيرة الاولى ثم تسلم في نفسه عن يمينه
‘জানাযার সালাতে সুন্নাত হ’ল, তুমি তাকবীর বলবে অতঃপর সূরা ফাতিহা পড়বে। অতঃপর নবী করীম (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠ করবে। অতঃপর খাছভাবে মাইয়েতের জন্য দো‘আ করবে। শুধু প্রথম তাকবীরে কিরাআত করবে। অতঃপর মনে মনে (অর্থাৎ নীরবে) ডান দিকে সালাম ফিরাবে’।[110] এর সনদ সহীহ।[111]
নবী (ﷺ) ও সাহাবীগণ থেকে এটা অকাট্যভাবে প্রমাণিত নেই যে, সূরা ফাতিহা ব্যতীত জানাযা হয়ে যায়। অথবা তাঁরা সূরা ফাতিহা ব্যতীত জানাযা পড়েছেন। জানাযার সালাতে ঐ দরূদই পড়া উচিত, যেটা নবী করীম (ﷺ) থেকে প্রমাণিত আছে (অর্থাৎ সালাতে যেটা পড়া হয়)। বানোয়াট দরূদ নবী করীম (ﷺ) থেকে প্রমাণিত নেই।
২৬. দাওয়াত :
সাধ্যানুযায়ী কুরআন ও হাদীসের জ্ঞান অর্জন করা অতঃপর তা প্রচার করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর আবশ্যক। সৃষ্টিজগতের ইমাম নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,
بَلِّغُوا عَنِّى وَلَوْ آيَةً
‘আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হ’লেও তা মানুষের নিকটে পৌঁছিয়ে দাও’।[112] শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীসের দাওয়াত দিতে হবে। নিজেদের ফির্কাবাযী মাযহাব এবং কিচ্ছা-কাহিনীর দাওয়াত দেয়া হারাম। দাঈর জন্য যরূরী হল, তিনি তার প্রত্যেক কথার দলীল পেশ করবেন। যাতে যে জীবিত থাকবে সে দলীল দেখে জীবিত থাকবে এবং যে মরবে সে দলীল দেখে মরবে। মহান আল্লাহ বলেন,
لِيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَنْ بَيِّنَةٍ وَيَحْيَى مَنْ حَيَّ عَنْ بَيِّنَةٍ
‘যে ধ্বংস হবে সে যেন (ইসলামের) সত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ধ্বংস হয় এবং যে বেঁচে থাকবে, সে যেন সত্য প্রতিষ্ঠার পর বেঁচে থাকে’ (আনফাল ৮/৪২)।
২৭. জিহাদ :
দ্বীনের দাওয়াতের সাথে সাথে মুসলিম উম্মাহর মাঝে সহীহ আক্বীদাসম্পন্ন মানুষদের এমন একটি জামা‘আত হওয়া উচিত, যারা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর যে ব্যক্তি এই পথে প্রতিবন্ধক হবে তার বিরুদ্ধে কথা, কলম ও দৈহিক জিহাদ করবে। আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করার জন্য আল্লাহর পথে জিহাদকে মোটেই অপসন্দ করবে না। যাতে সারা পৃথিবীতে কিতাব ও সুন্নাতের ঝান্ডা উড্ডীন হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
وَاعْلَمُوا أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوفِ
‘তোমরা জেনে রাখ যে, নিঃসন্দেহে জান্নাত তরবারী সমূহের ছায়াতলে’।[113]
আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন কুরআন, হাদীস, সাহাবী, তাবেঈ, মুহাদ্দিছ ও ইমামগণের ভালবাসায় আমাদের মৃত্যু দান করেন এবং দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে আমাদেরকে সব ধরনের অপমান থেকে বাঁচান। আমীন ছুম্মা আমীন! অমা ‘আলায়না ইল্লাল বালাগ। [ঈষৎ সংক্ষেপায়িত]
[1]. আবুদাঊদ ১/১৪২, হা/৯৩২।
[2]. ঐ হা/৯৩৩।
[3]. দারাকুৎনী ১/৩৩৪, হা/১২৫৩, ১২৫৪।
[4]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, আত-তালখীছুল হাবীর ১/২৩৬, হা/৩৫৩।
[5]. সহীহ বুখারী ১/১০৭, হা/৭৮০-এর পূর্বে, ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১১১; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/২৬৪০।
[6]. সহীহ ইবনু খুযায়মা ১/২৮৭, হা/৫৭২। আলবানী হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন (اسناده ضعيف)।
[7]. মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ২/১১৩, হা/২৬৬৩। হায়ছামী বলেছেন, اسناده حسن ‘এর সনদ হাসান’। তাবারাণী আওসাত ৫/৪৭৩, হা/৪৯১০; আল-কাওলুল মাতীন, পৃঃ ৪৭, ৪৮।
[8]. সহীহ বুখারী ১/১০২, হা/৭৩৫; সহীহ মুসলিম ১/১৬৮, হা/৩৯০।
[9]. সহীহ বুখারী ১/১০২, হা/৭৩৭; সহীহ মুসলিম ১/১৬৮, হা/৩৯১।
[10]. সহীহ মুসলিম ১/১৭৩, হা/৪০১।
[11]. আবুদাঊদ হা/৭৩০, ৭৩৪, সহীহ হাদীস।
[12]. সহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৫৮৪।
[13]. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা ২/৭৩, সনদ সহীহ।
[14]. দারাকুৎনী ১/২৯২, সনদ সহীহ।
[15]. যুবায়ের আলী যাঈ, নূরুল আইনাইন ফী মাসআলায়ে রাফ‘য়ে ইয়াদায়েন, পৃঃ ৮৯, ৯০।
[16]. নায়লুল ফিরকাদাইন, পৃঃ ২৪; ফায়যুল বারী ২/৪৫৫, পাদটীকা।
[17]. সহীহ বুখারী ১/১০২, হা/৭৩৫; সহীহ মুসলিম ১/১৬৮, হা/৩৯০।
[18]. সহীহ বুখারী ১/১০২, হা/৭৩৯।
[19]. বুখারী, জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন, পৃঃ ৫৩। ইমাম নববী আল-মাজমূ শারহুল মুহাযযাব (৩/৪০৫) গ্রন্থে একে সহীহ বলেছেন।
[20]. বুখারী, জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন, পৃঃ ১৬।
[21]. মাসাইলু আহমাদ, ইবনু হানীর বর্ণনা, ১/৫০।
[22]. সহীহ বুখারী ১/১০২, হা/৭৩৭; সহীহ মুসলিম ১/১৬৮, হা/৩৯১।
[23]. সহীহ বুখারী হা/৬৩১ ‘আযান’ অধ্যায়।
[24]. ২য় ও ৪র্থ রাক‘আতে দাঁড়ানোর প্রাক্কালে সিজদা থেকে উঠে সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসা সুন্নাত। একে ‘জালসায়ে ইস্তেরাহাত’ বা স্বস্তির বৈঠক বলে (সালাতুর রাসূল (ﷺ), পৃঃ ১১৪)-অনুবাদক।
[25]. সহীহ বুখারী ১/১১৩, ১১৪, হা/৬৭৭, ৮২৩।
[26]. হেদায়া ১/১১০; হাশিয়াতুস সিন্ধী আলান নাসাঈ ১/১৪০।
[27]. সহীহ মুসলিম ১/১৭৩, হা/৪০১।
[28]. ইবনু হিববান, আছ-ছিকাত ৩/৪২৪।
[29]. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৫/৭১; আইনী, উমদাতুল ক্বারী ৫/২৭৪।
[30]. সহীহ ইবনু হিববান ৩/১৬৭, ১৬৮, হা/১৮৫৭।
[31]. আবুদাঊদ হা/৭২৭।
[32]. ইবনুত তুর্কুমানী হানাফী, আল-জাওহারুন নাকী ৮/২৬২।
[33]. মুক্বাদ্দামা ইবনুছ ছালাহ, পৃঃ ৯৯; আল-কিফায়াহ, পৃঃ ৩৬৪।
[34]. তাকরীবুত তাহযীব, নং ৭৭১৭।
[35]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, আদ-দেরায়া, পৃঃ ২২৫।
[36]. তাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর ১৭/২৯৭; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ২/১০৩। হায়ছামী বলেন, واسناده حسن ‘এর সনদ হাসান’।
[37]. আবুদাঊদ হা/৭২২; মুসনাদে আহমাদ ২/১৩৩, ১৩৪, হা/৬১৭৫; মুনতাকা ইবনুল জারূদ, পৃঃ ৬৯, হা/১৭৮।
[38]. দেখুন : আত-তালখীছুল হাবীর ১/৮৬, হা/৬৯২; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা ৩/২৯২, ২৯৩; ইবনুল মুনযির, আল-আওসাত ৪/২৮২।
[39]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক ৩/২৯৬, হা/৫৬৯৯, সনদ সহীহ।
[40]. ফিরয়াবী, আহকামুল ঈদায়েন হা/১৩৬, সনদ সহীহ।
[41]. ঐ, হা/১৩৭, সনদ সহীহ।
[42]. দেখুন : আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ৫/২৬।
[43]. দেখুন : কিতাবুল উম্ম ১/২৩৭।
[44]. মাসাইলু আহমাদ, আবুদাঊদের বর্ণনা, পৃঃ ৬০, ‘ঈদের সালাতে তাকবীর’ অনুচ্ছেদ।
[45]. কিতাবুল আছল ১/৩৭৪, ৩৭৫; ইবনুল মুনযির, আল-আওসাত ৪/২৮২।
[46]. দেখুন : উকাইলী, কিতাবুয যু‘আফা ৪/৫২, সনদ সহীহ; বুখারী, জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন, তাহকীক : যুবায়ের আলী যাঈ, পৃঃ ৩২।
[47]. বুখারী, জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন হা/১১১; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ৩/২৯৮, হা/১১৩৮৮, সনদ সহীহ।
[48]. বুখারী, জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন হা/১১৬, সনদ হাসান।
[49]. ঐ হা/১১৮, সনদ সহীহ।
[50]. ঐ, হা/১১২, সনদ সহীহ; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ৩/২৯৬, হা/১১৩৮৫।
[51]. জুযউ রাফ‘ইল ইয়াদায়েন, হা/১১৪, সনদ হাসান।
[52]. ঐ হা/১২২, সনদ সহীহ।
[53]. মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক ৩/৪৬৮, হা/৬৩৫৮, সনদ শক্তিশালী।
[54]. ঐ, হা/৬৩৪৭।
[55]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ৩/২৯৭, হা/১১৩৮৯, সনদ সহীহ।
[56]. দেখুন : মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ৩/২৯৬, হা/১১৩৮৬, সনদ হাসান।
[57]. সহীহ বুখারী ১/১৬৩, হা/১২২৪; সহীহ মুসলিম ১/২১১।
[58]. সহীহ বুখারী হা/১২২৬; সহীহ মুসলিম হা/৫৭৪।
[59]. ফরয সালাতের পরে প্রচলিত সম্মিলিত দো‘আর ক্ষতিকর দিকসমূহের জন্য দেখুন : সালাতুর রাসূল (ﷺ), পৃঃ ১৩২-১৩৩। -অনুবাদক।
[60]. তিরমিযী ২/১৬০, ১৭৫, হা/৩২৪৭, ৩৩৭২; আবুদাঊদ ১/২১৫, হা/১৪৭৯; তিরমিযী বলেছেন, هذا حديث حسن صحيح‘এটি একটি হাসান সহীহ হাদীস’।
[61]. দেখুন : সহীহ বুখারী ২/৯৩৭, হা/৬৩২৯, ৬৩৩০।
[62]. তিরমিযী ২/১৮৭, হা/৩৪৯৯, ইমাম তিরমিযী ও আলবানী (রহঃ) হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
[63]. নুযুমুল মুতানাছির মিনাল হাদীসিল মুতাওয়াতির, পৃঃ ১৯০, ১৯১।
[64]. দেখুন : ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১/১৮৪; বাযলুল মাজহূদ ৩/১৩৮; কাদ ক্বামাতিছ ছালাহ, পৃঃ ৪০৫।
[65]. সহীহ মুসলিম ১/২৪৭, হা/৭১০ (৬৩)।
[66]. সহীহ ইবনু খুযায়মা ২/১৬৪, হা/১১১৬; সহীহ ইবনু হিববান ৪/৮২, হা/২৪৬২।
[67]. আল-মুস্তাদরাক ১/২৭৪।
[68]. তিরমিযী হা/৪২৩, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[69]. সহীহ মুসলিম ১/২৪৫, হা/৭০৪ (৪৬)।
[70]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ২/৪৫২, ৪৫৭।
[71]. আবুদাঊদ ১/১৭৯, হা/১২২০; তিরমিযী ১/১২৪, হা/৫৫৩; মিশকাত হা/১৩৪৪; ইবনু হিববান (হা/১৫৯১) একে সহীহ বলেছেন।
[72]. মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেক ১/১৪৫, হা/৩২৯, সনদ সহীহ।
[73]. সহীহ বুখারী ১/১৩৫, হা/৯৯০ (কথা); ১/১৩৫, ১৩৬, হা/৯৯৫ (কর্ম); সহীহ মুসলিম ১/২৫৭, হা/৭৪৯ (১৪৬) (কথা), ১/২৫৭, হা/৭৪৯ (১৫৭) (কর্ম)।
[74]. আবুদাঊদ ১/২০৮, হা/১৪২২; নাসাঈ (আতাউল্লাহ হানীফ ভূজিয়ানীর আত-তা‘লীকাতুস সালাফিইয়াহ সহ) ১/২০২, হা/১৭১৩।
[75]. আল-ইহসান ৪/৬৩, হা/২৪০৩।
[76]. আল-মুস্তাদরাক ১/৩০২।
[77]. সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হা/৭৩৬ (১২২), ৭৩৭ (১২৩); সহীহ ইবনু হিববান ৪/৭০, হা/২৪২৬; মুসনাদে আহমাদ ২/৭৬, হা/২৪২০; তাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত ১/৪২২, সনদ সহীহ।
[78]. সহীহ ইবনু হিববান ৪/৬৮; আল-মুস্তাদরাক ১/৩০৪। হাকেম ও যাহাবী দু’জনেই একে বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন।
[79]. মুসলিম, ১/২৪২, হা/৬৯১ (১২)।
[80]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ২/৪৪৩, হা/৮১২০।
[81]. ফিকহে ওমর (উর্দূ), পৃঃ ৩৯৪; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ২/৪৪৫, হা/৮১৩৭।
[82]. সফরের দূরত্বের ব্যাপারে বিদ্বানগণের মধ্যে এক মাইল হ’তে ৪৮ মাইলের বিশ প্রকার বক্তব্য রয়েছে। পবিত্র কুরআনে দূরত্বের কোন ব্যাখ্যা নেই। কেবল সফরের কথা আছে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকেও এর কোন সীমা নির্দেশ করা হয়নি। অতএব সফর হিসাবে গণ্য করা যায়, এরূপ সফরে বের হলে নিজ বাসস্থান থেকে বেরিয়ে কিছুদূর গেলেই ‘ক্বছর’ করা যায় (সালাতুর রাসূল (ﷺ), পৃঃ ১৮৬)।-অনুবাদক।
[83]. আল-আরফুশ শাযী ১/১৬৬।
[84]. ঐ।
[85]. মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেক, পৃঃ ৯৮, অন্য সংস্করণ ১/১১৫, হা/২৪৯।
[86]. আছারুস সুনান হা/৭৭৬।
[87]. যে হাদীসের বর্ণনাকারী হাদীসের মতন বা সনদকে বিভিন্ন সময় গোলমাল করে বর্ণনা করেছেন সে হাদীসকে মুযতারিব বলা হয়।-অনুবাদক।
[88]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ২/৩৯১, ৩৯২, হা/৭৬৭০।
[89]. সুনান সাঈদ বিন মানছূর-এর বরাতে সুয়ূতীর আল-হাবী ২/৩৪৯।
[90]. আবুদাঊদ ১/১৭০, হা/১১৫১।
[91]. তিরমিযী, আল-ইলালুল কাবীর ১/২৮৮।
[92]. আত-তালখীছুল হাবীর ২/৮৪।
[93]. মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালেক ১/১৮০, হা/৪৩৫।
[94]. আস-সুনানুল কুবরা ৩/২৮৮।
[95]. মুওয়াত্ত্বা মালেক ১/১৮০।
[96]. তাহাবী, শারহু মা‘আনিল আছার ৪/৩৪৫।
[97]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ২/১৭৩, হা/৫৭০১।
[98]. শিক্ষক হাদীস পড়বেন বা মুখস্থ বলবেন এবং ছাত্র তা শুনবে, একে সামা‘ (السماع) বলে।-অনুবাদক
[99]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা ২/১৭৬; আহকামুল ঈদায়ন, পৃঃ ১৭১, ১৭২, হা/১১৭।
[100]. সাওয়াতিউল ক্বামারাইন, পৃঃ ১৭২।
[101]. আবুদাঊদ ১/১১১, হা/৭২২; মুসনাদে আহমাদ ২/১৩৪, হা/৬১৭৫।
[102]. ইরওয়াউল গালীল ৩/১১৩।
[103]. আত-তালখীছুল হাবীর ২/৮৬।
[104]. ইবনু মাজাহ, পৃঃ ৭৪, হা/১০৬৪।
[105]. আবুদাঊদ ১/১৬০, হা/১০৬৭।
[106]. ফিকহে ওমর, পৃঃ ৪৫৫; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, ১/১০২, হা/৫০৬৮।
[107]. হেদায়া ১/১৬৭।
[108]. সহীহ বুখারী ১/১৭৮, হা/১৩৩৫; নাসাঈ ১/১৮১, হা/১৯৮৭-৮৯; মুনতাকা ইবনুল জারূদ, পৃঃ ১৮৮, হা/৫৩৪, ৫৩৬। প্রথম বন্ধনীর শব্দগুলো নাসাঈর, দ্বিতীয় বন্ধনীর শব্দগুলো মুনতাকার এবং শেষ বন্ধনীর শব্দগুলো নাসাঈ ও ইবনুল জারূদের।
[109]. নাসাঈ ১/২৮১, হা/১৯৮৯।
[110]. মুনতাকা ইবনুল জারূদ, পৃঃ ১৮৯, হা/৫৪০; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক ৩/৪৮৮, ৪৮৯, হা/৬৪২৮)।
[111]. ইরওয়াউল গালীল ৩/১৮১।
[112]. সহীহ বুখারী ১/৪৯১, হা/৩৪৬১।
[113]. সহীহ বুখারী ১/৪২৫, হা/৩০২৫; সহীহ মুসলিম ২/৮৪, হা/১৭৪২ (২০)। [এজন্য সর্বযুগে জিহাদের শর্তাবলী পূরণ করতে হবে। কোন রাষ্ট্রের অধীনে বসবাসকারী যেকোন মুসলিম নাগরিক যেকোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তরবারীর জিহাদ করতে পারে না।- বিস্তারিত দেখুন: হা.ফা.বা প্রকাশিত ‘জিহাদ ও ক্বিতাল’ বই।-অনুবাদক।]
সূত্র: আত-তাহরীক।
Last edited: