প্রথমত: জান্নাতীদের পোশাক পরিচ্ছেদ:
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, নিশ্চয় আমি এমন কারো প্রতিদান নষ্ট করব না, যে সুকর্ম করেছে। এরাই তারা, যাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী জান্নাতসমূহ, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণের চুড়ি দিয়ে এবং তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু সিল্কের সবুজ পোশাক। তারা সেখানে (থাকবে) আসনে হেলান দিয়ে। কী উত্তম প্রতিদান এবং কী সুন্দর বিশ্রামস্থল!।” [সূরা আল-কাহফ: ৩০-৩১]
“তাদের উপর থাকবে সবুজ ও মিহি রেশমের পোশাক এবং মোটা রেশমের পোশাক, আর তাদেরকে পরিধান করানো হবে রূপার চুড়ি এবং তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়।” [সূরা আল্-ইনসান: ২১]
“যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন এমন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। যেখানে তাদেরকে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং যেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।” [সূরা আল-হাজ্জ: ২৩]
“চিরস্থায়ী জান্নাত, এতে তারা প্রবেশ করবে। যেখানে তাদেরকে স্বর্ণের চুড়ি ও মুক্তা দ্বারা অলঙ্কৃত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের।” [সূরা: ফাতির: ৩৩]
আল-ইসতাবরাক: হলো যা কারুকার্যখচিত রেশমী পোশাক। [1] কেউ কেউ বলেন, ঘন রেশমী কাপড়, কেউ আবার বলেছেন, স্বর্ণখচিত রেশমী কাপড়, বা রেশমের কাপড়। [2]
আদ-দিবাজ: সিল্কের তৈরি পোশাক। [3]
আস-সুনদুস: সূক্ষ্ম রেশমের তৈরি এক ধরণের রেশমী কাপড়। [4]
আদ-দুররা: মহামূল্যবান মণিমুক্তা। [5]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আমি আমার দোস্ত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন মু’মিনের যে পর্যন্ত তার উযুর পানি পৌছব, সে পর্যন্ত অলঙ্কার পরানো হবে। [6]
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রথম দল যেটি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা চৌদ্দ তারিখের চাঁদের মত উজ্জল হবে। আর দ্বিতীয় জামাত যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা আসমানে প্রজ্জলিত নক্ষত্র হতেও অধিক সুন্দর হবে। তাদের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য ‘হুরে ঈন’ থেকে দুটি করে স্ত্রী থাকবে। আর প্রতিটি স্ত্রীর জন্য সত্তুরটি চাদর থাকবে। তাদের পায়ের গোড়ালীর মগজ তাদের চামড়ার উপর থেকে দেখা যাবে। আর তাদের চাদরের সৌন্দর্য হল, সাদা কাঁচের গ্লাসে লাল মদের মত।” [7]
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রেশমী কাপড় হাদিয়া দেয়া হয়েছিল, লোকজন কাপড়টি দেখে খুব আশ্চর্য হলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
“তোমরা এটা দেখে আশ্চর্য হলে? অথচ জান্নাতে সা‘দ ইবন মু‘য়ায এর রুমাল এর চেয়েও অধিক উত্তম।” [8]
দ্বিতীয়ত: জাহান্নামীদের পোশাক পরিচ্ছেদ:
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের পোশাকের কথা কুরআনে বর্ণনা করেছে, এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
“এরা দু’টি বিবদমান পক্ষ, যারা তাদের রব সম্পর্কে বিতর্ক করে। তবে যারা কুফরী করে তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার দ্বারা তাদের পেটের অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে তা ও তাদের চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে।” [সূরা আল-হাজ্জ: ১৯-২০]
“আর সে দিন তুমি অপরাধীদের দেখবে তারা শিকলে বাঁধা। তাদের পোশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে।” [সূরা ইবরাহিম: ৪৯-৫০]
তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে। সাঈদ ইবন জুবায়ের রহ. বলেন, তামার তৈরি পোশাক যা উত্তাপ দিলে অত্যধিক গরম হয়।
তাদের মাথার উপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। সাঈদ ইবন জুবায়ের রহ. বলেন, তামার পাত্রে পানি ফুটানো হবে, ফলে তা মারাত্মক গরম হবে। তাদের মাথায় ঢেলে দিলে পেট থেকে সব গলে বের হবে এবং ও চামড়া জ্বলে পুড়ে যাবে। [9]
তারা শিকলে বাঁধা থাকবে। অর্থাৎ এক জনের সাথে অন্য জনকে বেঁধে রাখা হবে। প্রত্যেক শ্রেণির অপরাধীকে সম অপরাধীর সাথে বেঁধে রাখা হবে। [10]
তাদের পোশাক হবে আলকাতরার। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তামার দ্রবীভূত উষ্ণ পোশাক। [11]
আবু মালিক আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মাতের মধ্যে জাহিলিয়াত বিষয়ের চারটি জিনিস রয়েছে যা তারা ত্যাগ করছে না। বংশ মর্যাদা নিয়ে গর্ব, অন্যের বংশের প্রতি কটাক্ষ, গ্রহ-নক্ষত্রের মাধ্যমে! বৃষ্টি প্রার্থনা এবং মৃতদের জন্য বিলাপ করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, বিলাপকারী যদি তার মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিনে তাঁকে দাঁড় করানো হবে, তখন তার দেহে আলকাতরার আবরণ থাকবে এবং খসখসে লোহার পোষাক থাকবে।” [12]
[1] আন-নিহায়া ফি গরীবিল হাদীস, লেখক ইবন আসীর: ১/৪৭।
[2] আল-কামূস আল-মুহীত: পৃষ্ঠা ১১২০।
[3] আন-নিহায়া ফি গরীবিল হাদীস: ১/৪৭।
[4] আল-কামূস আল-মুহীত: পৃষ্ঠা ৭১০।
[5] আল-কামূস আল-মুহীত: পৃষ্ঠা ৫৫০।
[6] মুসলিম, হাদীস নং ২৫০।
[7] আল-মু‘জাম আল-কাবীর, লেখক: ইমাম তাবরানী, হাদীস নং ১০৩২১।
[8] বুখারী, হাদীস নং ৩২৪৮, মুসলিম, হাদীস নং ২৪৬৮।
[9] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৩/২১৩, ৪/৪২, ৪৬৫, তাফসীরে বাগভী: ৪/৬৭, ৪৩৮।
[10] তাফসীরে ইবন কাসীর: ২/৫৪৫।
[11] পূর্বসূত্র।
[12] মুসলিম, হাদীস নং ৯৩৪।
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجۡرَ مَنۡ أَحۡسَنَ عَمَلًا ٣٠ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهِمُ ٱلۡأَنۡهَٰرُ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَيَلۡبَسُونَ ثِيَابًا خُضۡرٗا مِّن سُندُسٖ وَإِسۡتَبۡرَقٖ مُّتَّكِِٔينَ فِيهَا عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِۚ نِعۡمَ ٱلثَّوَابُ وحَسُنَتۡ مُرۡتَفَقٗا ٣١ ﴾ [الكهف: ٣٠، ٣١]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, নিশ্চয় আমি এমন কারো প্রতিদান নষ্ট করব না, যে সুকর্ম করেছে। এরাই তারা, যাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী জান্নাতসমূহ, যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ। সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণের চুড়ি দিয়ে এবং তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু সিল্কের সবুজ পোশাক। তারা সেখানে (থাকবে) আসনে হেলান দিয়ে। কী উত্তম প্রতিদান এবং কী সুন্দর বিশ্রামস্থল!।” [সূরা আল-কাহফ: ৩০-৩১]
﴿ عَٰلِيَهُمۡ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضۡرٞ وَإِسۡتَبۡرَقٞۖ وَحُلُّوٓاْ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٖ وَسَقَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡ شَرَابٗا طَهُورًا ٢١ ﴾ [الانسان: ٢١]
“তাদের উপর থাকবে সবুজ ও মিহি রেশমের পোশাক এবং মোটা রেশমের পোশাক, আর তাদেরকে পরিধান করানো হবে রূপার চুড়ি এবং তাদের রব তাদেরকে পান করাবেন পবিত্র পানীয়।” [সূরা আল্-ইনসান: ২১]
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ يُدۡخِلُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٢٣ ﴾ [الحج: ٢٣]
“যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন এমন জান্নাতে, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। যেখানে তাদেরকে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং যেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।” [সূরা আল-হাজ্জ: ২৩]
﴿ جَنَّٰتُ عَدۡنٖ يَدۡخُلُونَهَا يُحَلَّوۡنَ فِيهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٖ وَلُؤۡلُؤٗاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِيهَا حَرِيرٞ ٣٣ ﴾ [فاطر: ٣٣]
“চিরস্থায়ী জান্নাত, এতে তারা প্রবেশ করবে। যেখানে তাদেরকে স্বর্ণের চুড়ি ও মুক্তা দ্বারা অলঙ্কৃত করা হবে এবং সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের।” [সূরা: ফাতির: ৩৩]
আল-ইসতাবরাক: হলো যা কারুকার্যখচিত রেশমী পোশাক। [1] কেউ কেউ বলেন, ঘন রেশমী কাপড়, কেউ আবার বলেছেন, স্বর্ণখচিত রেশমী কাপড়, বা রেশমের কাপড়। [2]
আদ-দিবাজ: সিল্কের তৈরি পোশাক। [3]
আস-সুনদুস: সূক্ষ্ম রেশমের তৈরি এক ধরণের রেশমী কাপড়। [4]
আদ-দুররা: মহামূল্যবান মণিমুক্তা। [5]
عن أبي هريرة قال: سَمِعْتُ خَلِيلِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «تَبْلُغُ الْحِلْيَةُ مِنَ الْمُؤْمِنِ، حَيْثُ يَبْلُغُ الْوَضُوءُ»
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আমি আমার দোস্ত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের দিন মু’মিনের যে পর্যন্ত তার উযুর পানি পৌছব, সে পর্যন্ত অলঙ্কার পরানো হবে। [6]
عن عبد الله بن مسعود ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَوَّلُ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ كَأَنَّ وُجُوهَهُمْ ضَوْءُ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ، وَالزُّمْرَةُ الثَّانِيَةُ عَلَى لَوْنِ أَحْسَنِ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ، لِكُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ مِنَ الْحُورِ الْعَيْنِ، عَلَى كُلِّ زَوْجَةٍ سَبْعُونَ حُلَّةً، يُرَى مُخُّ سُوقِهِمَا مِنْ وَرَاءِ لُحُومِهِمَا وَحُلَلِهِمَا كَمَا يُرَى الشَّرَابُ الْأَحْمَرُ فِي الزُّجَاجَةِ الْبَيْضَاءِ»
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রথম দল যেটি জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা চৌদ্দ তারিখের চাঁদের মত উজ্জল হবে। আর দ্বিতীয় জামাত যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা আসমানে প্রজ্জলিত নক্ষত্র হতেও অধিক সুন্দর হবে। তাদের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য ‘হুরে ঈন’ থেকে দুটি করে স্ত্রী থাকবে। আর প্রতিটি স্ত্রীর জন্য সত্তুরটি চাদর থাকবে। তাদের পায়ের গোড়ালীর মগজ তাদের চামড়ার উপর থেকে দেখা যাবে। আর তাদের চাদরের সৌন্দর্য হল, সাদা কাঁচের গ্লাসে লাল মদের মত।” [7]
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রেশমী কাপড় হাদিয়া দেয়া হয়েছিল, লোকজন কাপড়টি দেখে খুব আশ্চর্য হলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
«تَعْجَبُونَ مِنْ هَذِهِ لَمَنَادِيلُ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ فِي الْجَنَّةِ أَحْسَنُ مِمَّا تَرَوْنَ؟»
“তোমরা এটা দেখে আশ্চর্য হলে? অথচ জান্নাতে সা‘দ ইবন মু‘য়ায এর রুমাল এর চেয়েও অধিক উত্তম।” [8]
দ্বিতীয়ত: জাহান্নামীদের পোশাক পরিচ্ছেদ:
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের পোশাকের কথা কুরআনে বর্ণনা করেছে, এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে নিচে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো:
﴿ ۞هَٰذَانِ خَصۡمَانِ ٱخۡتَصَمُواْ فِي رَبِّهِمۡۖ فَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ قُطِّعَتۡ لَهُمۡ ثِيَابٞ مِّن نَّارٖ يُصَبُّ مِن فَوۡقِ رُءُوسِهِمُ ٱلۡحَمِيمُ ١٩ يُصۡهَرُ بِهِۦ مَا فِي بُطُونِهِمۡ وَٱلۡجُلُودُ ٢٠ ﴾ [الحج: ١٩، ٢٠]
“এরা দু’টি বিবদমান পক্ষ, যারা তাদের রব সম্পর্কে বিতর্ক করে। তবে যারা কুফরী করে তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার দ্বারা তাদের পেটের অভ্যন্তরে যা কিছু রয়েছে তা ও তাদের চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে।” [সূরা আল-হাজ্জ: ১৯-২০]
﴿ وَتَرَى ٱلۡمُجۡرِمِينَ يَوۡمَئِذٖ مُّقَرَّنِينَ فِي ٱلۡأَصۡفَادِ ٤٩ سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٖ وَتَغۡشَىٰ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ ٥٠ ﴾ [ابراهيم: ٤٩، ٥٠]
“আর সে দিন তুমি অপরাধীদের দেখবে তারা শিকলে বাঁধা। তাদের পোশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে।” [সূরা ইবরাহিম: ৪৯-৫০]
﴿ قُطِّعَتۡ لَهُمۡ ثِيَابٞ مِّن نَّارٖ ﴾
তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে। সাঈদ ইবন জুবায়ের রহ. বলেন, তামার তৈরি পোশাক যা উত্তাপ দিলে অত্যধিক গরম হয়।
يُصَبُّ مِن فَوۡقِ رُءُوسِهِمُ ٱلۡحَمِيمُ
তাদের মাথার উপর থেকে ঢেলে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি। সাঈদ ইবন জুবায়ের রহ. বলেন, তামার পাত্রে পানি ফুটানো হবে, ফলে তা মারাত্মক গরম হবে। তাদের মাথায় ঢেলে দিলে পেট থেকে সব গলে বের হবে এবং ও চামড়া জ্বলে পুড়ে যাবে। [9]
مُّقَرَّنِينَ فِي ٱلۡأَصۡفَادِ
তারা শিকলে বাঁধা থাকবে। অর্থাৎ এক জনের সাথে অন্য জনকে বেঁধে রাখা হবে। প্রত্যেক শ্রেণির অপরাধীকে সম অপরাধীর সাথে বেঁধে রাখা হবে। [10]
سَرَابِيلُهُم مِّن قَطِرَانٖ
তাদের পোশাক হবে আলকাতরার। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তামার দ্রবীভূত উষ্ণ পোশাক। [11]
وعن أبي مالك الأشعري قال: إن النبي قَالَ: "أَرْبَعٌ فِي أُمَّتِي مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ، لَا يَتْرُكُونَهُنَّ: الْفَخْرُ فِي الْأَحْسَابِ، وَالطَّعْنُ فِي الْأَنْسَابِ، وَالْاسْتِسْقَاءُ بِالنُّجُومِ، وَالنِّيَاحَةُ " وَقَالَ: «النَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا، تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ، وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ»
আবু মালিক আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মাতের মধ্যে জাহিলিয়াত বিষয়ের চারটি জিনিস রয়েছে যা তারা ত্যাগ করছে না। বংশ মর্যাদা নিয়ে গর্ব, অন্যের বংশের প্রতি কটাক্ষ, গ্রহ-নক্ষত্রের মাধ্যমে! বৃষ্টি প্রার্থনা এবং মৃতদের জন্য বিলাপ করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, বিলাপকারী যদি তার মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিনে তাঁকে দাঁড় করানো হবে, তখন তার দেহে আলকাতরার আবরণ থাকবে এবং খসখসে লোহার পোষাক থাকবে।” [12]
লেখক : সা‘ঈদ ইবন আলী ইবন ওয়াহাফ আল-ক্বাহত্বানী
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ আল-মামুন আল-আযহারী
সম্পাদনা: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ আল-মামুন আল-আযহারী
সম্পাদনা: মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী
[1] আন-নিহায়া ফি গরীবিল হাদীস, লেখক ইবন আসীর: ১/৪৭।
[2] আল-কামূস আল-মুহীত: পৃষ্ঠা ১১২০।
[3] আন-নিহায়া ফি গরীবিল হাদীস: ১/৪৭।
[4] আল-কামূস আল-মুহীত: পৃষ্ঠা ৭১০।
[5] আল-কামূস আল-মুহীত: পৃষ্ঠা ৫৫০।
[6] মুসলিম, হাদীস নং ২৫০।
[7] আল-মু‘জাম আল-কাবীর, লেখক: ইমাম তাবরানী, হাদীস নং ১০৩২১।
[8] বুখারী, হাদীস নং ৩২৪৮, মুসলিম, হাদীস নং ২৪৬৮।
[9] তাফসীরে ইবন কাসীর: ৩/২১৩, ৪/৪২, ৪৬৫, তাফসীরে বাগভী: ৪/৬৭, ৪৩৮।
[10] তাফসীরে ইবন কাসীর: ২/৫৪৫।
[11] পূর্বসূত্র।
[12] মুসলিম, হাদীস নং ৯৩৪।