সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের বিষয় ও বিরাট নিদর্শন যা পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলার কুদরতকে নির্দেশ করে, তা হচ্ছে: ছয়টি মূলনীতি, যা আল্লাহ তা‘আলা সাধারণ মানুষের জন্য ধারণাকারীদের ধারণা থেকেও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তারপরেও সৃষ্টিজগতের সবচেয়ে বুদ্ধিমানেরা এবং বনী আদমের বিদ্বান ব্যক্তিবর্গও এ ব্যাপারে ভুলের শিকার হয়েছে, সামান্য কতিপয় লোক ব্যতীত।
নগণ্য শ্রেণিরও বোধের উপযোগী এই অত্যন্ত স্পষ্ট বিষয়টির ব্যাপারে যা দ্ব্যার্থহীনভাবে সুন্নাহতে বর্ণিত হয়েছে, তা আরো সুস্পষ্ট করে। এরপরেও এই বিষয়টি সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য বিষয় হয়ে গেল, (প্রকৃত) ইলম ও ফিকহ হয়ে গেল বিদ‘আত আর গোমরাহী। আর হকের সাথে বাতিলের মিশ্রণই তাদের কাছে থাকা উত্তম বস্তু হিসেবে থেকে গেল। আবার যে ইলম অর্জনকে আল্লাহ তা‘আলা ফরয করেছেন এবং তার প্রশংসা করেছেন, তার ব্যাপারে পাগল ও যিন্দিক ছাড়া কেউই উচ্চ-বাচ্চ করে না। আর যে ফরয ইলমকে অস্বীকার করল, তার সাথে শত্রুতা করল এবং তার থেকে সতর্ক করে কিতাব রচনা করল আর তার থেকে নিষেধ করল, সেই হয়ে গেল ফকীহ আলিম।
সূরা ইউনুসের আরেকটি একটি আয়াত, সেটি হচ্ছে: “জেনে রাখ! আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৬২] তারপরেও বিষয়টি যারা নিজেদেরকে ইলমের অধিকারী বলে দাবী করে আর মনে করে যে তারাই মানুষের পথ প্রদর্শণকারী, শরী‘আতের হিফাযতকারী, তাদের কাছে এমন হয়ে গেল যে, অলীদের জন্য রাসূলদের অনুসরণ পরিত্যাগ করা আবশ্যক, আর যারা তাদেরকে অনুসরণ করবে তারা তাদের (অলীদের) মধ্যে কেউ না। আবার তাদের জন্য জিহাদ ত্যাগ করা আবশ্যক হবে, তাই যারা জিহাদ করবে, তারাও তাদের (অলীদের) মধ্যে কেউ না। এবং তাদের জন্য আরো আবশ্যক হচ্ছে ঈমান ও তাকওয়াকে পরিত্যাগ করা, সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমান ও তাকওয়ার পথ অনুসরণ করবে, সেও তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। হে আমাদের রব! আমরা আপনার কাছে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি, নিশ্চয় আপনি সকল দু‘আ শ্রবণকারী।
সমাপ্ত। আর সকল প্রশংসা সৃষ্টি জগতের রব আল্লাহর জন্যই। আমাদের নেতা মুহাম্মাদ, তার পরিবার এবং তার সাহাবাদের উপরে কিয়ামাত পর্যন্ত সালাত ও অসংখ্য সালাম বর্ষিত হোক।
প্রথম মূলনীতি:
আল্লাহ তা‘আলার জন্যে দীনকে খালিস করা, যিনি এক এবং যার কোনো শরীক নেই আর তার বিপরীত বিষয়গুলো বর্ণনা করা, তা হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিরক। আর অধিকাংশ কুরআন বিভিন্নভাবে ও এতটাই সহজ ভাষায় এ মূলনীতি বর্ণনায় ব্যাপৃত হয়েছে যা সাধারণ থেকে নির্বোধ ব্যক্তিও বোঝে। এরপরেও যখন অধিকাংশ উম্মাহর ওপর যা হওয়ার তা হল, তখন শয়তান তাদের সামনে ইখলাসকে সালিহীন বা সৎকর্মশীলদের মর্যাদার কমতি ও তাদের অধিকারের ঘাটতির খোলসে উপস্থাপন করল, আর আল্লাহর সাথে শিরককে তাদের সামনে সালিহীন (সৎকর্মশীলদের) ও তাদের অনুসরণকারীদের ভালোবাসার খোলসে উপস্থাপন করল।দ্বিতীয় মূলনীতি
আল্লাহ তা‘আলা দীনের ব্যাপারে একত্রিত থাকার আদেশ করেছেন এবং তাতে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ এটি এতো স্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করেছেন যা সাধারণও বুঝতে সক্ষম। আর তিনি আমাদেরকে তাদের মত হতে নিষেধ করেছেন, যারা আমাদের পূর্বে বিভক্ত ও মতবিরোধে লিপ্ত হওয়ার ফলে ধ্বংস হয়েছে। আল্লাহ উল্লেখ করেছেন যে, তিনি মুসলিমদেরকে দীনের বিষয়ে একত্রিত থাকার আদেশ করেছেন এবং তাতে বিভক্ত হওয়া থেকে নিষেধ করেছেন। আর এ বিষয়ে সুন্নাতে আসা বিষয়গুলো উক্ত বিষয়টিকে আরো স্পষ্ট করে দেয়, যা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার। অতঃপর বিষয়টি এমন হয়ে গেলো যে, দীনের মূলনীতিসমূহ ও শাখাগুলোতে মতানৈক্যই হলো ইলম ও দীনের ভেতরকার ফিকহ! আর দীনের ব্যাপারে একত্রিত হওয়ার বিষয়টি এমন হয়ে গেল যে, যিন্দীক ও পাগল ছাড়া কেউই তা নিয়ে কথা বলে না।তৃতীয় মূলনীতি
নিশ্চয় পরিপূর্ণ একত্রিত হওয়ার স্বরূপ হচ্ছে: যে ব্যক্তি আমাদের উপরে শাসক হিসেবে নিয়োজিত হবে, তার কথা শোনা, আনুগত্য করা, যদিও সে হাবশী গোলাম হয়। আর আল্লাহ তা‘আলা এটিকে শার‘ঈ ও তাকদিরীভাবে অত্যন্ত যথেষ্ট ও ব্যাপকতরভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনা করেছেন। তারপরেও এই মূলনীতিটি অধিকাংশ ইলমের দাবীদারদের কাছে অজ্ঞাত রয়ে গেল, তাহলে এর উপরে আমল কিভাবে হবে?চতুর্থ মূলনীতি
ইলম ও আলিমগণ, ফিকহ ও ফকীহগণের বর্ণনা এবং তাদের বর্ণনা যারা তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখে, তবে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহ তা‘আলা এই মূলনীতিটিকে সূরা আল-বাকারার প্রথম দিকেই উল্লেখ করেছেন, তাঁর বাণী: “হে বনী ইসরাঈল! তোমরা আমার সেই নি‘আমাতের কথা স্মরণ করো যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি এবং আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করো, আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করবো।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৪০] [এখান থেকে] আল্লাহর বাণীর এই পর্যন্ত: “হে বনী ইসরাঈল! আমার সে নি‘আমাতের কথা স্মরণ করো যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি। আর নিশ্চয় আমি সমগ্র সৃষ্টিকুলের উপর তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৪৭]নগণ্য শ্রেণিরও বোধের উপযোগী এই অত্যন্ত স্পষ্ট বিষয়টির ব্যাপারে যা দ্ব্যার্থহীনভাবে সুন্নাহতে বর্ণিত হয়েছে, তা আরো সুস্পষ্ট করে। এরপরেও এই বিষয়টি সবচেয়ে দুষ্প্রাপ্য বিষয় হয়ে গেল, (প্রকৃত) ইলম ও ফিকহ হয়ে গেল বিদ‘আত আর গোমরাহী। আর হকের সাথে বাতিলের মিশ্রণই তাদের কাছে থাকা উত্তম বস্তু হিসেবে থেকে গেল। আবার যে ইলম অর্জনকে আল্লাহ তা‘আলা ফরয করেছেন এবং তার প্রশংসা করেছেন, তার ব্যাপারে পাগল ও যিন্দিক ছাড়া কেউই উচ্চ-বাচ্চ করে না। আর যে ফরয ইলমকে অস্বীকার করল, তার সাথে শত্রুতা করল এবং তার থেকে সতর্ক করে কিতাব রচনা করল আর তার থেকে নিষেধ করল, সেই হয়ে গেল ফকীহ আলিম।
পঞ্চম মূলনীতি
আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক আল্লাহর অলীদের বর্ণনা এবং তাঁর পক্ষ হতেই আল্লাহর শত্রু মুনাফিক ও পাপীদের মধ্য হতে যারা তাদের সাথে সাদৃশ্য রাখে তার মধ্যে পৃথকীকরণের বর্ণনা। এ ব্যাপারে সূরা আলে ইমরানের একটি আয়াতই যথেষ্ট, আর তা হলো আল্লাহর বাণী: “বলুন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩১] সূরা মায়িদার আরেকটি আয়াত, আর তা হলো: “হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি তার দীন থেকে ফিরে গেলে অচিরেই আল্লাহ এমন কওমকে আনবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে।” [সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত: ৫৪]সূরা ইউনুসের আরেকটি একটি আয়াত, সেটি হচ্ছে: “জেনে রাখ! আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৬২] তারপরেও বিষয়টি যারা নিজেদেরকে ইলমের অধিকারী বলে দাবী করে আর মনে করে যে তারাই মানুষের পথ প্রদর্শণকারী, শরী‘আতের হিফাযতকারী, তাদের কাছে এমন হয়ে গেল যে, অলীদের জন্য রাসূলদের অনুসরণ পরিত্যাগ করা আবশ্যক, আর যারা তাদেরকে অনুসরণ করবে তারা তাদের (অলীদের) মধ্যে কেউ না। আবার তাদের জন্য জিহাদ ত্যাগ করা আবশ্যক হবে, তাই যারা জিহাদ করবে, তারাও তাদের (অলীদের) মধ্যে কেউ না। এবং তাদের জন্য আরো আবশ্যক হচ্ছে ঈমান ও তাকওয়াকে পরিত্যাগ করা, সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমান ও তাকওয়ার পথ অনুসরণ করবে, সেও তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। হে আমাদের রব! আমরা আপনার কাছে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি, নিশ্চয় আপনি সকল দু‘আ শ্রবণকারী।
ষষ্ঠ মূলনীতি
একটি সন্দেহের অপনোদন শয়তান যা কুরআন-সুন্নাহকে ত্যাগ করা ও বিভিন্ন ধরণের মত ও প্রবৃত্তির অনুসরণের ক্ষেত্রে তৈরি করেছে। আর তা হচ্ছে: কুরআন ও সুন্নাহকে একমাত্র পূর্ণাঙ্গ মুজতাহিদ ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না। আর মুজতাহিদ হচ্ছে, যার মধ্যে এমন এমন অসংখ্য গুণ থাকবে, হয়ত তা পরিপূর্ণরূপে আবূ বাকর ও উমারের মধ্যেও পাওয়া যাবে না। সুতরাং যদি কোনো মানুষ ঐ পর্যায়ের না হয়, তাহলে সে কুরআন-সুন্নাহকে অত্যাবশ্যকভাবে এড়িয়ে চলবে, তাতে কোনো প্রশ্ন নেই! আর যে সেখান থেকে হিদায়াত তলব করবে, সে হয়ত যিন্দীক অথবা পাগল। কারণ, তা বুঝা অত্যন্ত কঠিন! আমি আল্লাহর প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি এ কারণে যে, তিনি শার‘ঈ, তাকদিরী, সৃষ্টিগত ও আদেশগত দিকসহ কত অসংখ্য দিক হতে এই অভিশপ্ত সন্দেহটিকে অপনোদন করেছেন, যা মেনে নেওয়া একটি সার্বজনীন প্রয়োজনের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু এরপরেও অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। “অবশ্যই তাদের অধিকাংশের উপর অবধারিত হয়েছে যে, তারা ঈমান আনবে না। নিশ্চয় আমরা তাদের গলায় চিবুক পর্যন্ত বেড়ি পরিয়েছি, ফলে তারা ঊর্ধমুখী হয়ে গেছে। আর আমরা তাদের সামনে প্রাচীর ও পিছনে প্রাচীর স্থাপন করেছি তারপর তাদেরকে আবৃত করেছি; ফলে তারা দেখতে পায় না। আর তুমি তাদেরকে সতর্ক কর বা না কর, তাদের পক্ষে উভয়ই সমান; তারা ঈমান আনবে না। তুমি শুধু তাদেরকেই সতর্ক করতে পার যে 'যিকর' এর অনুসরণ করে এবং গায়েবের সাথে রহমানকে ভয় করে। অতএব তাকে তুমি ক্ষমা ও সম্মানজনক পুরস্কারের সুসংবাদ দাও।” [সূরা ইয়াসিন, আয়াত: ৭-১১]সমাপ্ত। আর সকল প্রশংসা সৃষ্টি জগতের রব আল্লাহর জন্যই। আমাদের নেতা মুহাম্মাদ, তার পরিবার এবং তার সাহাবাদের উপরে কিয়ামাত পর্যন্ত সালাত ও অসংখ্য সালাম বর্ষিত হোক।