সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

অন্যান্য চিকিৎসা করানো ও রোগীর অনুমতি নেওয়ার হুকুম

abdulazizulhakimgrameen

Altruistic

Uploader
Salafi User
Threads
378
Comments
447
Solutions
1
Reactions
8,613
Credits
21,988
প্রশ্ন: ইসলামে চিকিৎসা করানোর হুকুম কী? বিশেষ করে যে সকল রোগ থেকে আরোগ্য লাভের ব্যাপারে আশা নেই। রোগীর চিকিৎসা শুরু করার আগে কি তার অনুমতি নিতে হবে? বিশেষতঃ জরুরী পরিস্থিতিতে

উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ।

১৪১২ হিজরী সনে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত হওয়া ইসলামী ফিকহ একাডেমির সপ্তম সম্মেলনের সিদ্ধান্তে বর্ণিত হয়েছে:

এক: চিকিৎসা করানো:

চিকিৎসা করানোর মূল হুকুম হল এটা বৈধ। কারণ কুরআন কারীম এবং বাচনিক ও কর্মগত সুন্নাহতে উক্ত বিষয়টি উদ্ধৃত হয়েছে। অধিকন্তু এর মাধ্যমে জীবন রক্ষা পায় যা শরীয়তের সামগ্রিক মাকসাদ তথা উদ্দেশ্যের অন্যতম।

চিকিৎসা করানোর হুকুম ব্যক্তি ও অবস্থাভেদে বিভিন্ন হয়:

কোনো ব্যক্তি চিকিৎসা ছেড়ে দিলে যদি তার পরিণতি হয় মৃত্যু বা অঙ্গহানি কিংবা অক্ষমতা কিংবা যদি তার রোগের ক্ষতিটা অন্যের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে; যেমন: সংক্রামক ব্যাধি; তাহলে তার উপর চিকিৎসা করানো ওয়াজিব।
আর যদি চিকিৎসা ছেড়ে দিলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে; কিন্তু প্রথম অবস্থার মত পরিণতি না হয় তাহলে মুস্তাহাব।
উপর্যুক্ত দুই অবস্থার অন্তর্ভুক্ত না হলে চিকিৎসা করানো মুবাহ তথা বৈধ।
যদি চিকিৎসা করতে গেলে এমন কাজ করতে হয় যেটার কারণে রোগ বহুগুণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে চিকিৎসা করানো মাকরূহ।
দুই: যে রোগগুলো থেকে সুস্থতার আশা নেই সেগুলোর চিকিৎসা:

ক. মুসলিমের আকীদার হলো রোগ ও সুস্থতা আল্লাহর হাতে। চিকিৎসা করানোর অর্থ সৃষ্টিজগতে আল্লাহ যে মাধ্যমগুলো দিয়েছেন সেগুলো গ্রহণ করা। আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া থেকে নিরাশ হওয়া জায়েয নেই। বরং আল্লাহ ইচ্ছা করলে সুস্থতা আসবে এই আশা বাকি থাকতে হবে। চিকিৎসক ও রোগীর আত্মীয়দের উচিত রোগীর মনোবল দৃঢ় করা, নিয়মিত তার যত্ন নেওয়া এবং তার মানসিক ও শারীরিক বেদনা কমানোর চেষ্টা করা; সে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি নেই সেটার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করেই।

খ. যে রোগটিকে আরোগ্য লাভের আশা নেই মর্মে গণ্য করা হয় সেটি চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত, প্রত্যেক কালে ও স্থানে বিদ্যমান চিকিৎসাবিজ্ঞানের সক্ষমতা এবং রোগীর অবস্থার ভিত্তিতে।

তিন: রোগীর অনুমতি:

ক. রোগীর অনুমতি নেয়ার শর্তারোপ করা হবে যদি সে অনুমতি দেয়ার পরিপূর্ণ উপযুক্ত হয়। কিন্তু যদি সে উপযুক্ত না হয় কিংবা তার উপযুক্ততায় ঘাটতি থাকে তাহলে শরয়ী অভিভাবকত্বের ক্রমানুযায়ী যিনি তার অভিভাবক হবেন তার অনুমতিই ধর্তব্য। আর সেটা শরীয়তের বিধি-বিধান অনুসারে হবে, যা অভিভাবকের কার্যক্রমকে অধীনস্থ ব্যক্তির উপকার ও কল্যাণ সাধন এবং অনিষ্ট দূর করার দায়িত্বের মধ্যে সীমিত করে। তবে ঐ ক্ষেত্রে অভিভাবক কর্তৃক অনুমতি না দেয়াকে বিবেচনা করা হবে না যদি এর মধ্যে তার অধীনস্থের সুস্পষ্ট ক্ষতি লক্ষণীয় হয়। সেক্ষেত্রে অন্য অভিভাবকদের কাছে দায়িত্ব চলে যাবে। সবশেষে শাসকের উপর দায়িত্ব অর্পিত হবে।

খ. কিছু কিছু অবস্থায় শাসক চিকিৎসা গ্রহণে বাধ্য করতে পারেন। যেমন: সংক্রামক ব্যাধি, টিকা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

গ. অ্যাম্বুলেন্সে করে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে আনা হলে তার জীবন যদি হুমকির মুখে থাকে তাহলে চিকিৎসা অনুমতির উপর নির্ভর করবে না।

ঘ. চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার আওতায় আনতে হলে অনুমতি দেয়ার পরিপূর্ণ উপযুক্ত ব্যক্তি থেকে সম্মতি নেয়া আবশ্যক। যাতে কোনো ধরনের জবরদস্তির লেশ থাকবে না; যেমন: বন্দিদের ক্ষেত্রে ঘটে কিংবা কোন আর্থিক প্রলোভন থাকবে না, যেমন: নিঃস্ব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঘটে। তাছাড়া এ সকল গবেষণা চালানোর কারণে কোন ক্ষতি না বর্তানো আবশ্যক। সম্মতি দেয়ার উপযুক্ত নয় কিংবায় উপযুক্ততায় ঘাটতি আছে এমন ব্যক্তিদের ওপর চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণা চালানো জায়েয নয়; এমনকি যদি তাদের অভিভাবকগণ সম্মতি দেয় তবুও।”

[মাজমাউল ফিকহিল ইসলামী, সপ্তম সংখ্যা (খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৭২৯)]

সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব চিকিৎসা করানো ও রোগীর অনুমতি নেওয়ার হুকুম - ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
 
Top