আদব ও শিষ্টাচার গালি মারত্মক একটি অপরাদ।

Joined
May 20, 2024
Threads
21
Comments
26
Reactions
253
গালি মারত্মক একটি অপরাদ।

পবিত্র আল কুরআন বিশ্ববাসীকে হুকুম করে: قولوا قولا سديدا
সঠিক কথা বল। (সূরা আহযাব আয়াত নং ৭০)।
পবিত্র আল কুরআন আরো বলে:
وَقولوا لِلنّاسِ حُسنًا
মানুষের সাথে ভালো (সৎ) কথা বল। (সূরা বাকারা আয়াত নং ৮৩)।
পবিত্র আল কুরআন মানুষ কে অশ্লীলতা এবং অপবাদ দেয়া থেকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, কিন্তু আজকাল মানুষ ইসলামী শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে। এমনকি প্রতিটি সমাবেশ এবং মঞ্চে বিরোধী পক্ষকে গালিগালাজ করা একটি বাধ্যতামূলক অধিকার মনে করা হয়। এবং মসজিদের পবিত্রতা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বার- মেহরাব এর ইজ্জত, ফেরেশতাদের উপস্থিতি ইত্যাদি সবকিছু কে অত্যন্ত আবেগের সাথে লঙ্ঘন করা হয়। অথচ ইসলাম ধর্মে একজন মুসলিম ভাইকে গালি দেওয়া অত্যন্ত জঘন্যতম পাপ। এমনকি আল্লাহ রব্বুল আলামীন মিথ্যা ও মনগড়া দেবি-দেবতাদের গালি দেওয়াকেও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন:
وَلا تَسُبُّوا الَّذينَ يَدعونَ مِن دونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدوًا بِغَيرِ عِلمٍ ۗ كَذٰلِكَ زَيَّنّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُم ثُمَّ إِلىٰ رَبِّهِم مَرجِعُهُم فَيُنَبِّئُهُم بِما كانوا يَعمَلونَ
তোমরা তাদের গালি দেয়ো না, আল্লাহ কে ছেড়ে যাদের তারা আরাধনা করে। নচিত তারা অজ্ঞতাবশতঃ শত্রুতা করে আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি। অতঃপর স্বীয় রবের কাছে তাদেরকে ফিরে যেতে হবে। তিনি তাদেরকে বলে দেবেন যা কিছু তারা করত। (সূরা আনয়াম আয়াত নং ১০৮)।

প্রিয় পাঠক! একটুখানি বিবেচনা করুন যে, এই উপদেশটি সাহাবা রাযিয়াল্লাহু আনহুমদের, বলা হয়েছে যে, তোমরা দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে কখনো আবেগে এতটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড় যেওনা যে, বিরোধী পক্ষকে গালিগালাজ করে ফেলো, কারণ গালিগালাজের মাধ্যমে বিরোধী পক্ষের ইসলাহ করা কঠিন, বরং অসম্ভব।
ইমাম কাতাদাহ (রহঃ) বলেন:
كان المسلمون يسبون أصنام الكفار فنهوا عنه
অনুবাদ: মুসলিমরা কাফেরদের মূর্তিগুলিকে গালিগালাজ করত, তাঁদের কে বারণ করা হয়েছে।
এবং যুজাজ রহ: বলেন:
نهوا أن يلعنوا الأصنام التي كانت تعبدها المشركون
মুশফিকরা যেসব মূর্তির পূজা করে সেগুলোকে গালিগালাজ করতে বারণ করা হয়েছে। (তাফসীর কাসেমী খন্ড: ৬ পৃঃ ৬৭৮, বিস্তারিত জানতে দেখুন:
তাফসীর ইবনে কাসীর খন্ড: ২ পৃঃ ১৮৩)।
উপরোক্ত আলোচ্য আয়াতে, মুশরিকদের মিথ্যা ও মনগড়া মাবুদকে গালিগালাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। সেগুলো একশো শতাংশ মিথ্যা, ভুল এবং মনগড়া, কিন্তু সেগুলোর জন্য অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করা জায়েজ নয়। ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: মুশরিকরা বলল: “হে মুহাম্মদ! তোমার সাথীদের বল: তাঁরা যেন আমাদের দেবি-দেবতাদের গালি না দেয়, অন্যথায় আমরা তোমার রব কে গালি দেব।فهناهم أن يسبوا اوثانهم তাই আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাদের মূর্তিদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করলেন। (তাফসীর কুরতুবী খন্ড: ৭ পৃঃ ৩০৯)।

প্রসিদ্ধ মুফাসসির ইমাম কুরতুবী বলেন:
قال العلماء : حكمها باق في هذه الأمة على كل حال ; فمتى كان الكافر في منعة وخيف أن يسب الإسلام أو النبي عليه السلام أو الله عز وجل ، فلا يحل لمسلم أن يسب صلبانهم ولا دينهم ولا كنائسهم ، ولا يتعرض إلى ما يؤدي إلى ذلك ; لأنه بمنزلة البعث على المعصية
অনুবাদ: আলেমদের মতে, এ আয়াতের আদেশ এখনও বহাল রয়েছে। এটি কেবল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময়কালের জন্য নির্দিষ্ট ছিল না। অতএব, যখন কাফেররা মুসলমানদের মোকাবেলায় ক্ষমতায় থাকে এবং আশঙ্কা থাকে যে তারা ইসলাম, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সর্বশক্তিমান আল্লাহকে অপমান করবে, তখন কোনও মুসলিমের জন্য জায়েজ নয় অমুসলিমদের ক্রুশ, দ্বীন বা উপাসনালয় কে অপমান করা অথবা অন্য কোনো এমন কাজ করা যা এর কারণ হতে পারে। কারণ এটি পাপের প্রতি প্ররোচনা।
প্রিয় পাঠকগণ! ইসলাম এমনকি অমুসলিমদের প্রতিও অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করার কোন অনুমতি দেয় না, বরং কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে, তাহলে কখনো কি মুসলিম ইমামদের প্রতি অশ্লীল ভাষা এবং অপমানজনক শব্দ ও বাক্যাংশ ব্যবহার করার অনুমতি দিতে পারে?
আফসোস এবং শতাধিক দুঃখের বিষয় জাতির সেইসব নেতাদের জন্য যারা মিম্বরে উঠেও নিজেদের মধ্যে বিরোধী পক্ষকে মিথ্যা অপবাদ, নোংরা ভাষায় সম্বোধন এবং গালিগালাজ করা থেকে বিরত থাকেন না। এই তথাকথিত মোল্লাদের অপকর্ম এবং নোংরা ভাষার কারণেই মানুষের মধ্যে দ্বীনের প্রতি ঘৃণা ও অনিহা সৃষ্টি হচ্ছে। আল্লাহ তুমি এদের কে সঠিক পথের হেদায়েত কর।
فرقہ بندی ہے کہیں اور کہیں ذاتیں ہیں
کیا زمانے میں پنپنے کی یہی باتیں ہیں
অনুবাদ: কোথায় তো সাম্প্রদায়িকতা, আবার কোথায় জাতীয়তাবাদ, এ যুগে উন্নতির জন্য এগুলোই কি সরঞ্জাম।
পবিত্র আল কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের জন্য কঠোর শাস্তি এবং আজাবের সুসংবাদ দিয়েছেন যারা মমিন পুরুষ এবং মুমিন মহিলার প্রতি মিথ্যারোপ করে, অপবাদ দেয়, গালিগালাজ করে এবং সম্মানহানি ও কুৎসা রটায়। আল্লাহ বলেন:
وَالَّذينَ يُؤذونَ المُؤمِنينَ وَالمُؤمِنٰتِ بِغَيرِ مَا اكتَسَبوا فَقَدِ احتَمَلوا بُهتٰنًا وَإِثمًا مُبينًا
অর্থ :যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। (সূরা আহযাব আয়াত নং ৫৮)।
এর অনুভূতি এখন নয়, মৃত্যুর পর কেয়ামতের দিন হবে। এমনকি আল্লাহ রব্বুল আলামিন স্বীয় বান্দাদেরকে নসিহত করে বলেন:
وَقُل لِعِبادى يَقولُوا الَّتى هِىَ أَحسَنُ ۚ إِنَّ الشَّيطٰنَ يَنزَغُ بَينَهُم ۚ إِنَّ الشَّيطٰنَ كانَ لِلإِنسٰنِ عَدُوًّا مُبينًا
অর্থ: (হে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!) আপনি আমার বান্দাদেরকে বলে দিন: তাঁরা যেন যা উত্তম এমন কথাই বলে। শয়তান তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধায়। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত নং ৫৩)।
অর্থাৎ, একে অপরের সাথে কথা বলার সময় ভাষা সাবধানে ব্যবহার কর, ভালো কথা বল, এবং একইভাবে, যদি কাফের, মুশরিক এবং আহলে কিতাবদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন হয়, তাহলে তাদের প্রতি সদয় হও এবং ভালো আচরণ কর, কারণ ভাষার সামান্যতম সংযমহীনতা বিদ্রোহের কারণ হতে পারে। এবং বহু সমস্যা এবং অনেক বিষয় বোঝা এবং সমাধানে এগিয়েও বিভ্রান্তিকর হয়ে ওঠে। আমি তো মনে করি যে, গালিগালাজ তো দূরে থাক, উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে সম্বোধন করাও কথোপকথনের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে আসল উদ্দেশ্যই বিফল হয়ে যায়। সম্ভবত এ জন্যেই একজন পিতা তার সন্তান কে নসিহত করে ছিলেন:
وَاقصِد فى مَشيِكَ وَاغضُض مِن صَوتِكَ ۚ إِنَّ أَنكَرَ الأَصوٰتِ لَصَوتُ الحَميرِ
অর্থ: পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর। (সূরা লুকমান আয়াত নং ১৯)।
হাফিজ ইবনে কাসীর বলেছেন: وَاغضُض مِن صَوتِكَ এর অর্থ হল:
لا تبالغ في الكلام ولا ترفع صوتك فيما لا فائدة فيه
কথায় বাড়াবাড়ি করো না এবং অযথা আওয়াজ উঁচু করো না।
অযথা চেঁচামেচি করা এতটাই খারাপ যে একে গাধার ডাকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এবং হাফিজ ইবনে কাসীর রহ বলেছেন:
وهذا التشبيه في هذا بالحمير يقتضي تحريمه وذمه غاية الذم
উচ্চস্বর কে গাধার কণ্ঠস্বরের সাথে তুলনা করা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে এটি হারাম, অত্যন্ত নিন্দনীয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আজ আমাদের একাডেমিক আলোচনাগুলিও লড়াই ঝগড়াররুপ ধারণ করে নেয়। কথা বুঝা এবং বোঝানোর ইচ্ছা খুবই বিরল। আল্লাহ আমাদের সকলকে ভদ্রতার সহিত স্পষ্ট
ভাবে কথোপকথন করার তৌফিক দান করুক। আমীন।

আব্দুর রাকিব নাদভী
 
Similar threads Most view View more
Back
Top