প্রবন্ধ গর্ভবতী মহিলার রক্তস্রাব

Joined
Jan 12, 2023
Threads
827
Comments
1,075
Solutions
19
Reactions
12,033
সাধারণত নারী যখন গর্ভবতী হয় তখন রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। ইমাম আহমদ রহ. বলেন, ‘রক্তস্রাব বন্ধ হওয়ার মাধ্যমে গর্ভবতী বলে প্রমাণিত হয়। সন্তান সম্ভবা মহিলা যদি প্রসবের অল্প সময় পূর্বে যেমন দুই দিন অথবা তিন দিন পর্যন্ত রক্তস্রাব দেখে এবং সাথে যদি প্রসব বেদনা থাকে তাহলে উহাকে নিফাস (প্রসবোত্তর রক্তস্রাব) হিসেবে গণ্য করা হবে। আর যদি প্রসবের অনেক পূর্বে রক্ত প্রবাহিত হয়ে থাকে তাহলে উক্ত রক্ত নিফাস হিসেবে গণ্য হবে না। এমতাবস্থায় প্রবাহিত রক্তকে কি হায়েয হিসেবে গণ্য করে তার ওপর হায়েযের বিধি-বিধান কার্যকরী করা হবে? না অসুস্থতার রক্ত গণ্য করা হবে? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে সঠিক সমাধান হচ্ছে, সন্তান সম্ভবা মহিলার যদি পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী রক্ত দেখা দেয় তাহলে সেটাকে হায়েয হিসেবে গণ্য করতে হবে। কেননা নারীর লজ্জাস্থান থেকে যে রক্ত বের হয় তা হায়েয হওয়াটাই হচ্ছে প্রকৃত নিয়ম। হ্যাঁ, উক্ত রক্ত হায়েয নয় এর পিছনে যদি কোনো রকম শক্ত প্রমাণ থাকে তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু কুরআন ও সুন্নাতের কোথাও এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, গর্ভবতী মহিলার হায়েয হতে পারে না। ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেঈ রাহিমাহুমাল্লাহর এটিই মত। ইবন তাইমিয়্যাহ রহ.-ও এই মত গ্রহণ করেছেন এবং তার লিখিত ইখতিয়ারাত গ্রন্থের ৩০ পৃষ্ঠায় ইমাম বাইহাকীর উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, ইমাম আহমদের এই জাতীয় একটি অভিমত রয়েছে, বরং তিনি উল্লেখ করেছেন ইমাম আহমদ রহ. ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেঈ রহ.-এর উক্ত মতামতের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। এখন প্রতীয়মান হলো যে, সাধারণ মহিলার হায়েযের যে হুকুম গর্ভবতী মহিলারও ঠিক সেই হুকুম। তবে নিম্নোক্ত দু‘টি মাসআলায় এর ব্যতিক্রম রয়েছে:

১. তালাক: অন্তঃসত্ত্বা নয় এমন মহিলা (যাকে ঋতুস্রাবের মাধ্যমে ইদ্দত পূরণ করতে হয়) তাকে ঋতুস্রাব অবস্থায় তালাক দেওয়া হারাম। পক্ষান্তরে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে (তার ঋতুস্রাব হলেও সে ঋতুস্রাব) অবস্থায় তালাক দেওয়া হারাম নয়। কেননা কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে যে,

﴿فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ﴾ [الطلاق: ١]​

‘‘তোমরা তাদেরকে তালাক দিও তাদের ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে।’’ [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ১]

সুতরাং বুঝা গেল যে, অন্তঃসত্ত্বা নয় এমন মহিলাকে রক্তস্রাবের অবস্থায় তালাক দেওয়া কুরআনে মাজীদের উক্ত আয়াতের বিরোধী। কিন্তু অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হায়েযের অবস্থায় তালাক দেওয়া কুরআনে কারীমের ঘোষণা বিরোধী নয়। কেননা যে ব্যক্তি গর্ভবতী স্ত্রীকে তালাক দিবে সে তো তার ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখেই দিবে, (সে গর্ভাবস্থায়) স্ত্রী হায়েযে থাকুক বা পবিত্র থাকুক। কারণ, গর্ভধারণ দিয়েই তার ইদ্দত গণনা করা হবে (গর্ভাবস্থায় আসা হায়েযের মাধ্যমে তিনি ইদ্দত গণনা করবেন না)। আর এ কারণেই সঙ্গমের পরে তাকে তালাক দেওয়া হারাম নয় বরং জায়েয। পক্ষান্তরে গর্ভবতী নয় এমন মহিলাকে সঙ্গমের পর তালাক দেওয়া হারাম।

২. গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে (গর্ভাবস্থায়) নারীর ঋতুর রক্ত চালু হওয়া না হওয়া সমান। প্রমাণ হিসেবে পবিত্র কুরআন শরীফের সূরা তালাকের ৪নং আয়াত পেশ করা হচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأُوْلَٰتُ ٱلۡأَحۡمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعۡنَ حَمۡلَهُنَّۚ﴾ [الطلاق: ٤]​

‘‘গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত।’’ [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ৪]



নারীর প্রাকৃতিক রক্তস্রাব
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন
অনুবাদ: মীযানুর রহমান আবুল হুসাইন
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া​
 
জাজাকাল্লাহ খাইরান
 
Similar threads Most view View more
Back
Top