• আসসালামু আলাইকুম, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন মেইনটেনেন্স মুডে থাকবে। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রশ্নোত্তর কোনো মেয়ের সোশ্যাল মিডিয়ায় বেপর্দা ছবি থাকলে এখন করণীয় কি?

Md Rahul Khan

Well-known member

Threads
13
Comments
47
Reactions
173
Credits
223
প্রশ্ন: যদি কোন মেয়ে দীনের পথে আসার পূর্বে ফেসবুকে নিজের বেপর্দা ছবি বা ভিডিও আপলোড করে থাকে তাহলে তা থেকে বাঁচার উপায় কী? মৃত্যুর পর যদি সোশ্যাল মিডিয়া বা পর পুরুষের কাছে তার কোনো ছবি-ভিডিও থেকে যায় তাহলে এ কারণে কি কবরে তার আজাব হতে থাকবে?

উত্তর: নিঃসন্দেহে সোশ্যাল মিডিয়ায় হারাম কোন কিছু আপলোড করার ভয়াবহতা অনেক বেশি। কেননা বিভিন্নভাবে তা নেট জগতে ছড়িয়ে যায় এবং অব্যাহতভাবে তা ছড়াতেই থাকে। এ কারণে যত মানুষ গুনাহগার হবে সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি তা পোস্ট করেছিল তার আমলনামায় প্রত্যেকের সমপরিমাণ গুনাহ লিপিবদ্ধ হতেই থাকবে। এমনকি মৃত্যুর পরেও। [সহীহ মুসলিম] ফলে তাদেরকে আখিরাতে নিজের পাপের বোঝার সাথে অন্যদের পাপের বোঝাও বহন করতে হবে। যেমন: আল্লাহ বলেন,

وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالًا مَّعَ أَثْقَالِهِمْ​

“তারা নিজেদের পাপের বোঝা এবং তার সাথে আরও কিছু পাপের বোঝা বহন করবে।” [ সূরা আনকাবুত: ১৩]

সুতরাং কোন নারী যদি দীনের পথে আসার পূর্বে তার বেপর্দা ছবি বা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পাবলিশ করে থাকে তাহলে তার জন্য আবশ্যক হল, তার সকল ছবি-ভিডিও ডিলেট করা এবং অতীত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হ্নদয়ে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করা। অনুরূপভাবে নিজস্ব অ্যালবামে সংরক্ষিত ছবিগুলোও নষ্ট করে দিতে হবে। তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায় ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন,


إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُوْلَئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ​

“অবশ্যই আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করবেন যারা ভুল বশতঃ মন্দকাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে, এরাই হলো সে সব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।” [সূরা নিসা: ১৭] রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ​

‘‘আল্লাহ্ তাআলা বান্দার তাওবা ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করেন, যতক্ষণ না তার মৃত্যুর গড়গড়ানি শুরু হয়।” [তিরমিযী, অধ্যায়: কিতাবুত তাওবা। ইমাম তিরমিযি বলেন, হাসান গরীব। হাকেম তাঁর মুস্তাদরাকে হাদিহটি বর্ণনা করে সহিহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবি তাঁর সাথে একমত পোষণ করেছেন। দেখুন: মুস্তাদরাকুল হাকিম, ৪/২৫৭]

আর যদি তার বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়স্বজনের কাছে সেগুলো সংরক্ষিত থাকে তাহলে সেগুলো ডিলিট করে দেওয়ার জন্য তাদেরকে অনুরোধ করতে হবে। তারা যদি অনুরোধ রক্ষা করে তাহলে তো ভালো আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু অনুরোধ সত্বেও যদি তারা সেগুলো নষ্ট না করে তাহলে এর জন্য আল্লাহ তাকে দায়ী করবেন না। কারণ সে ইতিমধ্যে তওবা করে সেগুলো নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যারা সেগুলো সংরক্ষণ করেছে এবং অনুরোধ সত্বেও নষ্ট করেনি তারা গুনাহগার হবে।

যাহোক, এভাবে তওবা করার পরে যদি কেউ মারা যায় তাহলে ইনশাআল্লাহ দয়াময় আল্লাহ তাকে শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন, যদিও তার কিছু ছবি/ভিডিও তার আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের নিকট অবশিষ্ট থেকে গেছে। অথবা তওবা করার পরও সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ডিলিট করার সময় পায়নি কিংবা চেষ্টা সত্ত্বেও কোনো কারণে তা ডিলিট করতে সক্ষম হয়নি। কিন্তু তওবা করার পূর্বে যদি মারা যায় তাহলে তা দয়াময় আল্লাহর ক্ষমার উপর নির্ভরশীল। আল্লাহ যদি তাকে তার কোন সৎকর্মের প্রতি খুশি হয়ে ক্ষমা করেন তাহলে তো সে সৌভাগ্যবান। আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা পেয়ে গেল। অন্যথায় কবর থেকে শুরু করে আখিরাতে কঠিন শাস্তি তার জন্য অপেক্ষা করছে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন)

তবে এমনও হতে পারে, জীবিত ব্যক্তিগণ যদি তার জন্য দয়াময় আল্লাহর কাছে দুআ ও ইস্তিগফার করে তাহলে হয়তো তিনি তার গুনাহ মোচন করে কবর ও আখিরাতের শাস্তি থেকে তাকে রক্ষা করবেন।

সুতরাং যে সকল মেয়েরা তাদের বেপর্দা ছবি ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেছে তাদের কর্তব্য হল, তার কাছে মৃত্যু দূত উপস্থিত হওয়ার পূর্বেই অনতিবিলম্বে আল্লাহর কাছে তওবা করে সেগুলো ডিলিট করা। নিজের কাছে থাকলে সেগুলো নষ্ট করে ফেলা আর অন্যদের কাছে থাকলে সেগুলো নষ্ট করে ফেলার জন্য অনুরোধ করা। অন্যথায় এমনও হতে পারে যে, এই সকল পাপের বোঝা থেকে মুক্তি পাওয়ার পূর্বেই এবং আল্লাহর কাছে তওবা করার পূর্বেই সে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাবে। ফলে তার মৃত্যু পরবর্তী জীবন হবে অনেক সংকটাপন্ন এবং ভয়াবহ।

যে সমস্ত মেয়েরা ফেসবুকে ছবি আপলোড করে তাদের জন্য সতর্কবার্তা:

গবেষকগণ বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় মেয়েদের ছবি-ভিডিও আপলোড করার ব্যাপারে সাবধান করেছেন। কেননা কিছু অপরাধী ও অসাধু চক্র ফটোশপের মাধ্যমে মেয়েদের ছবির মুখাবয়ব ঠিক রেখে শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো নিখুঁতভাবে পরিবর্তন করে বিভিন্ন পর্নো বা কল গার্ল জাতীয় ওয়েবসাইটে আপলোড করে বা ছবি বিকৃত করে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে থাকে।‌ ফলে তাদেরকে ভয়ানক মান-সম্মানহানি ও কেলেঙ্কারি শিকার হতে হয়। তখন কেলেঙ্কারি ও লোক লজ্জা থেকে বাঁচতে তাদের অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এ বিষয়ে একাধিক ঘটনা ঘটেছে। (যেমন: ভারতে এ বিষয়কে কেন্দ্র করে এক পরিবারের সকল সদস্য আত্মহত্যা করেছে বলে খবর প্রচারিত হয়েছিল)।

আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক জ্ঞান ও বুঝ দান করুন এবং সময় থাকতে তওবা করার তৌফিক দান করুন। আমিন।



উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।
 
Last edited by a moderator:
Top