কুরবানী আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। এতে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর সুন্নাত আদায়ের সাথে সাথে প্রিয় রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সুন্নাতও পালন করা হয়। কেননা তিনি নিজে কুরবানী করেছেন এবং তাঁর উম্মতের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে অবশিষ্ট রেখে গেছেন। ফলে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কুরবানীর বিধান বলবৎ থাকবে ইনশাআল্লাহ। এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যাধিক। তাই এর হুকুম-আহকাম সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান থাকা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য একান্ত দায়িত্ব।
মাসআলা-১ : কুরবানী করা ওয়াজিব, না-কি সুন্নাত?
উত্তর : কুরবানী ওয়াজিব বা ফরয নয়; বরং সক্ষম ব্যক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।[১]
মানুষ ফরয মনে করবে এই ভয়ে আবূবকর এবং ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) মাঝে মধ্যে কুরবানী করতেন না।[২] অতএব কুরবানী করা সুন্নাত।
ইমাম ইবনু হাযম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, কুরবানী ওয়াজিব নয়। এটি কোন সাহাবী থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়নি।[৩]
ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলে ইলম বা কুরআন-হাদীসের জ্ঞানীদের আমল ছিল এই যে, কুরবানী ওয়াজিব নয়, বরং নবী করীম (ﷺ)-এর সুন্নাতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।[৪]
ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
‘কুরবানী করা সুন্নাত, ওয়াজিব নয়’।[৫]
ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
‘কুরবানী সুন্নাত’, এই সুন্নাত ত্যাগ করা আমি পসন্দ করি না’।[৬]
হানাফী মাযহারেব ইমাম আবু ইউসুফ, মালিকী মাযহাবের ইমাম আশহাব এবং অধিকাংশ আলিমের মতে, তা সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা।[৭]
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৯১-৭৫১ হি.) বলেন,
‘নবী করীম (ﷺ) কখনো কুরবানী করা থেকে বিরত থাকেননি’।[৮]
উক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কুরবানী করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, ফরয বা ওয়াজিব নয়।
মাসআলা-২ : সফর অবস্থায় কুরবানী করার বিধান কি?
উত্তর : সামর্থ্য থাকলে সফরেও কুরবানী করতে পারে। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধির সফরে ছিলাম। (এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হলে) একটি গরুতে সাতজন ও একটি উটে সাতজন শরীক হয়ে কুরবানী করি’।[৯]
উক্ত হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, সফরে থাকাবস্থাতেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাথীগণ সাতজন শরীক হয়ে কুরবানী করেছেন, কিন্তু তা বর্জন করেননি।
ইমাম ইবনু হাযম (মৃ. ৪৫৬ হি.) বলেন, কুরবানীর ব্যাপারে মুক্বীম ও মুসাফিরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীসের বিপরীতে যদি কেউ আমল করে, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ কুরবানী করা সুন্নাত, আর এ সুন্নাত থেকে বিরত থাকা বৈধ হবে নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বিরত থাকার হাদীস না পাওয়া যাবে।[১০]
ইমাম নাযীর হুসাইন দেহলভী (মৃ. ১৯০২ খ্রি.) বলেন, কুরবানী দেয়া ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া ব্যক্তির সাথে, মুক্বীম হওয়ার এবং মুসাফির না হওয়ার শর্তের ব্যাপারে হাদীসে কোন দলীল পাওয়া যায় না। বরং মুসাফিরের কুরবানী করার ব্যাপারে হাদীসে ফিক্বহের বিপরীতে দলীল পাওয়া যায়। যেমন ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হি.) মুসাফিরের কুরবানী করার ব্যাপারে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এবং ঐ অনুচ্ছেদের অধীনে একটি হাদীসও উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কা সফরে কুরবানী করেছিলেন।[১১]
উল্লেখ্য যে, মাযহাব চতুষ্টয়ের মধ্যে কেবল হানাফী ফিক্বহের ফৎওয়া হল- মুসাফিরের উপর কুরবানী নেই এবং যার উপর যাকাত ফরয নয়, তার উপরে কুরবানীও নেই।[১২] কিন্তু এ দাবী সঠিক নয়।
মাসআলা-৩ : মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা যাবে কি?
উত্তর : মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করার কোন সহীহ হাদীস নেই। আবূ দাঊদে বর্ণিত হাদীসটি যঈফ।[১৩]
হাদীসটি হল- হানাশ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
‘আমি আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে দু’টি দুম্বা কুরবানী করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কী ব্যাপার? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার পক্ষ থেকে আমাকে কুরবানী করার অছিয়ত করে গেছেন, তাই আমি তাঁর পক্ষ থেকে ঐ কুরবানী করছি’।[১৪]
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (মৃ. ১৩৫৩ হি.) বলেন,
‘মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়ার ব্যাপারে আমি কোন সহীহ মারফূ‘ হাদীস পাইনি। উল্লেখিত আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীসটি যঈফ। তবে কোন ব্যক্তি যদি মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী প্রদান করে, তাহলে উক্ত পশুর গোশত সম্পূর্ণটাই ছাদাক্বাহ করে দিতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত’।[১৫]
তিনি আরো বলেন,
‘আমি মৃত ব্যক্তির জন্য ছাদাক্বাহ করা পসন্দ করি, কুরবানী করা নয়’।[১৬]
মাসআলা-৪ : বর্তমানে অনেক ব্যক্তিকে দেখা যায় যে, যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পরেও তারা নখ, চুল, গোঁফ ইত্যাদি কেটে থাকে। পাশাপাশি কুরবানী করতে অক্ষম ব্যক্তিগণ যদি কুরবানীর নিয়তে চুল, নখ ইত্যাদি কর্তন করা থেকে বিরত থাকে এবং ঈদুল আযহার সালাতের পরে এসে কর্তন করে, তাহলে সে পূর্ণাঙ্গ কুরবানীর নেকী পেয়ে যাবে। বিষয়টির ব্যাপারে শরী‘আতের সিদ্ধান্ত কী?
উত্তর : যিলহজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানীদাতা চুল, নখ ইত্যাদি কাটতে পারবেন না। উম্মে সালামাহ র হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘যখন যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ তারিখ শুরু হয়, আর তোমাদের মধ্যে কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, তখন সে যেন নিজের চুল বা শরীরের কোন অংশ স্পর্শ না করে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সে যেন চুল না কাটে এবং নখ না কাটে। অন্যত্র রয়েছে, যে ব্যক্তি যিলহজ্জের নতুন চাঁদ দেখে এবং কুরবানী করার ইচ্ছা করে, সে যেন নিজের চুল না ছাঁটাই করে এবং নখসমূহ না কাটে’।[১৭]
নবী করীম (ﷺ)-এর স্ত্রী উম্মে সালামাহ র বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
‘যার কুরবানীর পশু রয়েছে, সে যেন যিলহজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী করার পূর্ব পর্যন্ত তাঁর চুল ও নখ না কাটে’।[১৮]
উক্ত হাদীস সম্পর্কে শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কুরবানী দাতার পরিবার তথা সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীদের জন্য এই হুকুম নয়। আলেমগণের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, তারা চুল ও নখ কাটার নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে। হুকুমটি কেবল কুরবানী দাতার জন্য খাছ, যিনি তার সম্পদ থেকে কুরবানীর পশুটি ক্রয় করেছেন’।[১৯] সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া বোর্ডের ফৎওয়া হল, ‘যে ব্যক্তি কুরবানী করতে ইচ্ছুক তার জন্য বিধান হচ্ছে- তিনি যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে নিজের চুল, নখ ও চামড়ার কোন অংশ কাটবেন না, যতক্ষণ তিনি কুরবানী সম্পন্ন না করেন। এক্ষেত্রে সে নিজ হাতে যব্হ করুক কিংবা অন্য কাউকে যব্হ করার দায়িত্ব দিক উভয়টা সমান। আর যাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করা হচ্ছে তাদের জন্য এসব বিধান নেই। যেহেতু এমর্মে কোন দলীল নেই’।[২০]
শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকার বিধানটি শুধু কুরবানী দাতার জন্য খাছ। তিনি যাদের পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় করবেন তাদের জন্য এ বিধান প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি নিজের ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করেন, তাহলে নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকার হুকুমটি শুধু কুরবানীদাতার উপর বর্তাবে। পরিবারের বাকী সদস্যদের নখ-চুল কাটাতে কোন সমস্যা নেই। পক্ষান্তরে যে সকল আলেম বলেন, পরিবারের বাকী সদস্যদেরও নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকা যরূরী, তাদের এই মতটি দুর্বল। কেননা এখানে হাদীসের ভাষ্য স্পষ্ট, হাদীসের মধ্যে বলা হয়েছে ‘তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী দেয়ার ইচ্ছা রাখে’। রাসূল (ﷺ) একথা বলেননি যে, ‘অথবা যার পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়া হয়’। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজ ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন, কিন্তু তাদেরকে নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেননি (ফাতাওয়া উছায়মীন, ২৫তম খণ্ড, পৃ. ১৮৮; ইসলাম, সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ৫ম খণ্ড, ৪৫৪০ পৃ.)।
উল্লেখ্য, কুরবানী করতে অক্ষম ব্যক্তির ফযীলতের পক্ষে যে বর্ণনা পেশ করা হয়, তা যঈফ।[২১]
যেমন- আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আমি কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন হিসাবে পালন করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ তা‘আলা এ দিনটিকে এ উম্মতের জন্য ঈদের দিন ধার্য করেছেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! মাদী ‘মানীহা’ ব্যতীত যদি অন্য কোন পশু না পাই, তবে কী দ্বারা কুরবানী করব? উত্তরে তিনি বললেন, না, বরং তুমি কুরবানীর দিনে তোমার চুল ও নখ কাটবে, তোমার গোঁফ খাটো করবে এবং নাভীর নিচের কেশ মু-ন করবে। এটাই আল্লাহ তা‘আলার নিকট তোমার পূর্ণ কুরবানী’।[২২]
উক্ত হাদীসের সনদে ঈসা ইবনু হিলাল আছ-ছাদাফী নামের রাবী থাকার কারণে আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন। তাঁর নিকটে উক্ত রাবী মাজহূল পর্যায়ের। তিনি আরো বলেন, এর মতনও ইযতিরাব। যদিও ইমাম হাকেম ও ইবনু হিব্বান তাকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু তারা উভয়ে হাদীস যাচাইয়ের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিছগণের নিকটে শৈথিল্য প্রদর্শনকারী হিসাবে খুবই প্রসিদ্ধ।[২৩]
তাই তাদের মন্তব্য অনেক সময় গ্রহণযোগ্য নয়। আর শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব (রাহিমাহুল্লাহ)সহ অন্য যারা হাসান বা সহীহ বলেছেন, তারা ইবনু হিব্বানের মন্তব্যের আলোকেই বলেছেন।[২৪]
অন্যদিকে মুহাদ্দিছ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ আবূ দাঊদের ভাষ্যের মধ্যে আলবানীর মন্তব্যটা উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ দারাকুৎনীর তাহক্বীক্বেও মুহাদ্দিছ সাইয়েদ ইবরাহীম হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন।[২৫] সুতরাং উক্ত হাদীস আমলযোগ্য নয়।
এছাড়া তিরমিযীর ভাষ্যকার ইবনুল আরাবী আল-মালেকী (৪৬৯-৫৪৩ হি.) বলেন,
‘কুরবানীর ফযীলত সংক্রান্ত কোন সহীহ হাদীস নেই’। উক্ত বক্তব্যকে তুহফাতুল আহওয়াযী প্রণেতা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী সমর্থন করেছেন।[২৬]
মাসআলা-৫ : কোন্ প্রকৃতির পশু দ্বারা কুরবানী করা বৈধ এবং কুরবানীর পশুর বয়স কত বছর হলে কুরবানী করা যায়? পশুর দুধের দাঁত পড়ার পর নতুন দাঁত উঠা কি শর্ত?
উত্তর : সাধারণত তিন প্রকার প্রাণী দ্বারা কুরবানী বৈধ। যথা : (১) উট (২) গরু এবং (৩) ছাগল। তবে দুম্বা ও ভেড়া ছাগলের মধ্যে গণ্য। উক্ত প্রাণীর প্রত্যেকটির নর ও মাদি যেকোন ধরনের পশু কুরবানী করা বৈধ। এগুলোর বাইরে অন্য পশু দিয়ে কুরবানী করার প্রমাণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে পাওয়া যায় না। তবে অনেক বিদ্বান মহিষকে গরুর অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয বলেছেন।[২৭]
মহান আল্লাহ বলেন,
‘যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করবে’-আয়াতের شَعَآئِرَ-এর ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, اِسْتِسْمَانُهَا وَاِسْتِحْسَانُهَا ‘মোটা তাজা ও পসন্দনীয় জন্তু’।[২৮]
বিশিষ্ট সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করে বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমন শিং বিশিষ্ট মোটাতাজা দুম্বা কুরবানী করেছেন, যার চোখ, মুখ, পা ও কপাল কালো বর্ণের ছিল’।[২৯]
শরী‘আতে কুরবানীর পশুর বয়সের কথা বলা হয়নি।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘তোমরা দুধের দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত ওঠা (মুসিন্নাহ) পশু ছাড়া যব্হ করো না।[৩০]
এই হাদীস প্রমাণ করে যে, দুধের দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত ওঠা শর্ত। উল্লেখ্য, চার ধরনের পশু কুরবানী করা নাজায়েয। যথা- স্পষ্ট খোঁড়া, স্পষ্ট কানা, স্পষ্ট রোগী ও জীর্ণশীর্ণ এবং অর্ধেক কানকাটা বা ছিদ্র করা ও অর্ধেক শিং ভাঙ্গা।[৩১]
তবে কুরবানীর পশুর অসুখ হলে সেটি বিক্রি করে ভাল পশু কিনে কুরবানী করতে শরী‘আতে কোন বাধা নেই।
মাসআলা-৬ : বর্তমানে কুরবানীর পশুর সাথে আক্বীক্বা করার প্রচলন দেখা যায়। শরী‘আতে এর কোন অনুমতি আছে কি?
উত্তর : কুরবানীর সাথে আক্বীক্বা করার কোন দলীল নেই। তাই এটা জায়েয নয়। কেউ দিলে তা শরী‘আত সম্মত হবে না। আর আক্বীক্বা সাত দিনে করাই সুন্নাত।[৩২]
কুরবানী ও আক্বীক্বা দু’টি পৃথক ইবাদত। কুরবানীর পশুতে আক্বীক্বার নিয়ত করা শরী‘আত সম্মত নয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বা সাহাবায়ে কেরামের যুগে এ ধরনের আমলের অস্তিত্ব ছিল না।[৩৩]
মাসআলা-৭ : কোন পশু যব্হ কিংবা কুরবানীর সময় এলে সমাজে একটি কথা শুনা যায় যে, মহিলারা কোন পশু যব্হ কিংবা কুরবানী করতে পারে না। এটা শুধু পুরুষের কাজ। আসলে বিষয়টির সত্যতা কতটুকু?
উত্তর : কুরবানীর পশু যব্হ করার জন্য নারী-পুরুষের মাঝে কোন পার্থক্য বা শর্তারোপ করা হয়নি। যব্হ করা কাজটি সাহসের ব্যাপার। কোন নারী যদি কুরবানীর পশু যব্হ করার সাহস রাখে, তাহলে সে করতে পারবে।
ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হি.) ইবনু রাফি‘ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, সাহাবী আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর মেয়েদেরকে নিজ হাতে তাদের কুরবানীর পশু যব্হ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[৩৪] উক্ত হাদীস প্রমাণ করে মেয়েরাও নিজ হাতে কুরবানী করতে পারে।
মাসআলা-৮ : বর্তমানে অনেকে ঈদুল আযহার সালাতের পূর্বে পানাহার না করাকে সিয়াম মনে করেন। উক্ত ধারণা কি সঠিক?
উত্তর : উক্ত ধারণা সঠিক নয়। ঈদুল আযহার দিন না খেয়ে থাকাকে ছওম বলা এবং ঈদগাহ থেকে এসে খাওয়াকে ইফতারী বলার কোন প্রমাণ শরী‘আতে পাওয়া যায় না।
হাদীসে এসেছে, রাসূল (ﷺ) ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটি বিজোড় খেজুর খেয়ে ঈদগাহে বের হতেন এবং ঈদুল আযহার দিন সালাত আদায় না করা পর্যন্ত কিছুই খেতেন না।[৩৫] ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম তিনি স্বীয় কুরবানীর গোশত হতে খেতেন।[৩৬]
বিদায় হজ্জের দিন তিনি ১০০টি উটের প্রতিটি থেকে একটু করে অংশ নিয়ে এক পাত্রে রান্না করে সেখান থেকে গোশত ও ঝোল খেয়েছিলেন।[৩৭]
তবে কলিজা খাওয়া মর্মে বর্ণিত হাদীসটি যঈফ। কারণ উক্ত বর্ণনার সনদে ওক্ববাহ ইবনু আছম নামক রাবী দুর্বল।[৩৮]
মাসআলা-৯ : গরু বা উট ভাগে কুরবানী দেয়া যাবে কি?
উত্তর : মুক্বীম অবস্থায় একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করাই উত্তম। তবে সামর্থ্য থাকলে একাধিক পশুও কুরবানী করতে পারবে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেন, ‘হে জনমণ্ডলী! নিশ্চয় প্রতিটি পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী’।[৩৯]
সাহাবায়ে কেরামও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উক্ত সুন্নাত অনুযায়ী আমল করতেন। ‘আত্বা ইবনু ইয়াসির সাহাবী আবূ আইয়ূব আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যুগে কুরবানী কেমন ছিল মর্মে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘একজন লোক একটি বকরী দ্বারা নিজের ও নিজের পরিবারের পক্ষ হতে কুরবানী দিত। অতঃপর তা নিজে খেত ও অন্যকে খাওয়াত।[৪০]
তবে গরুতে সাত এবং উটে দশ ভাগা দিয়ে কুরবানী করা জায়েয। কেউ কেউ ভাগা কুরবানীর হাদীসগুলোকে শুধু সফরের সাথে খাছ করে থাকেন। এটা সঠিক নয়। কারণ কোন সালাফী বিদ্বান উক্ত বর্ণনাগুলোকে শুধু সফরের সাথে খাছ করেননি। যেমন আল্লামা শামসুল হক আযীমাবাদী, আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, শায়খ বিন বায, শায়খ উছায়মীন প্রমুখ। তাই ভাগা কুরবানী নিয়ে সামান্য ইখতেলাফ থাকলেও একে নাজায়েয বলা যাবে না।[৪১]
মাসআলা-১০ : কুরবানী করার সময় কোন্ দু‘আ পড়তে হবে?
উত্তর : কুরবানী করার সময় বলবে,
‘বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লাহু আকবার’।[৪২] এর সাথে ‘আল্ল-হুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্নী’ও বলা যাবে।[৪৩]
উল্লেখ্য যে, ‘আল্লা-হুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্নী ওয়া মিন আহলি বাইতী’ মর্মে কোন দু‘আ হাদীসে পাওয়া যায় না।
মাসআলা-১১ : কুরবানীর গোশত কয় ভাগ করতে হবে?
উত্তর : কুরবানীর গোশত তিন শ্রেণীর মানুষ খাবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তা হতে তোমরা খাও, অভাবগ্রস্তকে খাওয়াও এবং ভিক্ষাকারীকে দাও’ (সূরা আল-হজ্জ : ৩৬)।
তাই তিন ভাগ করা ভাল। তবে প্রয়োজনে ভাগে কম-বেশিও করা যাবে এবং সবটুকুও ছাদাক্বাহ করা যাবে। কিন্তু কাউকে না দিয়ে একাই খাওয়া জায়েয নয়। দরিদ্র ও মিসকীনদের জন্য জমাকৃত গোশত যারা কুরবানী দিয়েছে তাদের মাঝে বণ্টন করা ঠিক নয়।
উল্লেখ্য যে, ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজ পরিবারকে খাওয়াতেন ও একভাগ অভাবী প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ সায়েলদের তথা ভিক্ষুকদের মধ্যে ছাদাক্বাহ করতেন’ মর্মে বর্ণিত হাদীসটি সনদ বিহীন।[৪৪]
মাসআলা-১২ : কুরবানী বা আক্বীক্বার জন্য নির্দিষ্ট পশুর বাচ্চা জন্ম নিলে করণীয় কী?
উত্তর : পশুর সাথে পশুর বাচ্চাকেও যব্হ করবে।[৪৫]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কুরবানীর মাসআলা-মাসায়েল বিশুদ্ধভাবে জানা ও সে অনুযায়ী পালন করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!
তথ্যসূত্র :
[১]. সহীহ বুখারী, হা/৫৫৬৪-৬৫; মিশকাত, হা/১৪৫৩।
[২]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/১৯৫০৬-৭, সনদ সহীহ; ইরওয়াউল গালীল, হা/১১৩৯, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৫৪।
[৩]. لَا يَصِحُّ عَنْ أَحَدٍ مِنَ الصَّحَابَةِ أَنَّهَا وَاجِبَةٌ-ফাৎহুল বারী শারহু সহীহিল বুখারী, ১০ম খণ্ড, পৃ. ৩।
[৪]. তিরমিযী, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮২; ফাৎহুল বারী শারহু সহীহিল বুখারী, ১০ম খণ্ড, পৃ. ৩।
[৫]. তিরমিযী (ইফাবা অনুবাদ), পৃ. ৮০, ১৩নং রেওয়াত দ্র.; মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালিক, পৃ. ১৮৯।
[৬]. আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু ইদরীস আশ-শাফেঈ, আল-উম্ম (বৈরূত : দারুল মা‘আরিফাহ, ১৪১০ হি./১৯৯০ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩।
[৭]. ফাৎহুল বারী শারহু সহীহিল বুখারী, ১০ম খণ্ড, পৃ. ৩।
[৮]. মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর শামসুদ্দীন ইবনে ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়াহ, যাদুল মা‘আদ ফী হাদই খায়রিল ইবাদ (বৈরূত : মুওয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ২৭ তম সংস্করণ ১৪১৫ হি./১৯৯৪ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩১৭।
[৯]. সহীহ মুসলিম, হা/১৩১৮; মিশকাত, হা/২৬৩৬।
[১০]. ইমাম আলী ইবনে আহমাদ ইবনে হাযম, আল-মুহাল্লা মুনীরিয়্যাহ (মিসরী ছাপা, ১৩৪৯ হি.), ৭ম খণ্ড, পৃ. ৩৭৫।
[১১]. ইমাম সৈয়দ নাযীর হুসাইন দেহলভী, ফাতাওয়া নাবীবিয়্যাহ (দিল্লী ছাপা, তাবি), ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৫৩।
[১২]. আল-হিদায়াহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৪৫।
[১৩]. যঈফ আবূ দাঊদ, হা/২৭৯০; মিশকাত, হা/১৬৪২।
[১৪]. আবূ দাঊদ, হা/২৭৯০; মিশকাত, হা/১৬৪২, পৃ. ১২৮; বায়হাক্বী, ৯ম খণ্ড, পৃ. ২৮৮।
[১৫]. আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী শারহ জামেঊত তিরমিযী (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি), ৫ম খণ্ড, পৃ. ৬৬; শায়খ ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ শারহ মিশকাতুল মাছাবীহ (বানারাস, হিন্দ : আল-জামে‘আহ আস-সালাফিয়াহ, ৩য় সংস্করণ ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি.), ৫ম খণ্ড, পৃ. ৯৫।
[১৬]. মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, মিরক্বাতুল মাফাতীহ শারহ মিশকাতুল মাছাবীহ (বৈরূত : দারুল ফিকর, ১৪২২ হি./২০০২ খ্রি.), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১০৮৪।
[১৭]. সহীহ মুসলিম, হা/১৯৭৭; তিরমিযী, হা/১৫২৩, সনদ সহীহ; মিশকাত হা/১৪৫৯।
[১৮]. মুসলিম, হা/১৯৭৭; আবূ দাঊদ, হা/২৭৯১; ইবনু হিব্বান, হা/৫৯১৭।
[১৯]. ফাতাওয়া আল-ইসলামিয়্যা, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩১৬-৩১৭।
[২০]. ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমাহ, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৪২৬-৪২৭।
[২১]. যঈফ আবূ দাঊদ, হা/২৭৮৯; যঈফ নাসাঈ, হা/৪৩৬৫।
[২২]. আবূ দাঊদ, হা/২৭৮৯; নাসাঈ, হা/৪৩৬৫; মিশকাত, হা/১৪৭৯; যঈফ আবূ দাঊদ, হা/২৭৮৯; যঈফ নাসাঈ, হা/৪৩৬৫।
[২৩]. তাহক্বীক্ব মিশকাত, হা/১৪৭৯-এর টীকা দ্র.; যঈফ আবূ দাঊদ, হা/২৭৮৯-আলোচনা দ্র.; যঈফ নাসাঈ, হা/৪৩৬৫।
[২৪]. তাহক্বীক্ব আহমাদ, হা/৬৫৭৫।
[২৫]. দারাকুৎনী, হা/৪৭৪৯।
[২৬]. তুহফাতুল আহওয়াযী, ৫ম খণ্ড পৃ. ৬৩।
[২৭]. সূরা আল-আন‘আম : ১৪৪-৪৫; মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৮১।
[২৮]. তাফসীর ইবনু কাছীর, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৪২১; তাফসীরে সা‘আদী, পৃ. ৫৩৮; তাফসীরে ত্বাবারী, ১৮ম খণ্ড, পৃ. ৬২১।
[২৯]. আবূ দাঊদ, হা/২৭৯৬; মিশকাত, হা/১৪৬৬, সনদ সহীহ।
[৩০]. সহীহ মুসলিম, হা/১৯৬৩; মিশকাত, হা/১৪৫৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৩৭১, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২২২।
[৩১]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/১৭৫৭; মিশকাত, হা/১৪৬৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৩৮১, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২২৫।
[৩২]. তিরমিযী, হা/১৫২২; মিশকাত, হা/৪১৫৩, সনদ সহীহ।
[৩৩]. ইমাম শাওকানী, নায়লুল আওত্বার, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৬৮, ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়; মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৫১ও ৫ম খণ্ড, পৃ. ৭৫।
[৩৪]. সহীহ বুখারী, পৃ. ৮৩৩; ফাৎহুল বারী শারহু সহীহিল বুখারী, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯।
[৩৫]. সহীহ বুখারী, হা/৯৫৩; মিশকাত, হা/১৪৩৩; তিরমিযী, হা/৫৪২; মিশকাত, হা/১৪৪০, সনদ সহীহ।
[৩৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৩৪, সনদ হাসান; দারাকুৎনী, হা/১৭৩৪; নায়লুল আওতার, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৫৫।
[৩৭]. মুসলিম, হা/৩০০৯; ইবনু মাজাহ, হা/৩০৭৪; মিশকাত, হা/২৫৫৫।
[৩৮]. সুবুলুস সালাম (৪র্থ সংস্করণ, ১৯৬০ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৫; তা‘লীক্ব আলবানী, পৃ. ২য় খণ্ড, ২০০।
[৩৯]. তিরমিযী, হা/১৫১৮; আবূ দাঊদ, হা/২৭৮৮; মিশকাত, হা/১৪৭৮, সনদ সহীহ।
[৪০]. তিরমিযী, হা/১৫০৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৪৭ ‘নিজ পরিবারের পক্ষ হতে একটা বকরী কুরবানী করা’ অনুচ্ছেদ, ‘কুরবানী’ অধ্যায়।
[৪১]. ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৩৯৫ ও ৪০৫ দ্র.; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল, ২৫তম খণ্ড, পৃ. ২২ ও ৪৬; আল-ইসলাম সওয়াল ওয়া জাওয়াব, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৪৫৩১।
[৪২]. সহীহ মুসলিম, হা/১৯৬৬।
[৪৩]. সহীহ মুসলিম, হা/১৯৬৭; আলবানী, মানাসিকুল হাজ্জ, পৃ. ৩৫।
[৪৪]. আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, হা/১১৬০; মির‘আত, হা/১৪৯৩, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১২০ ও ৯ম খণ্ড, পৃ. ২৪৪; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী, ১১তম খণ্ড, পৃ. ১০৮-০৯।
[৪৫]. মির‘আত, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৬৮-৬৯।
মাসআলা-১ : কুরবানী করা ওয়াজিব, না-কি সুন্নাত?
উত্তর : কুরবানী ওয়াজিব বা ফরয নয়; বরং সক্ষম ব্যক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।[১]
মানুষ ফরয মনে করবে এই ভয়ে আবূবকর এবং ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) মাঝে মধ্যে কুরবানী করতেন না।[২] অতএব কুরবানী করা সুন্নাত।
ইমাম ইবনু হাযম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, কুরবানী ওয়াজিব নয়। এটি কোন সাহাবী থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়নি।[৩]
ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আহলে ইলম বা কুরআন-হাদীসের জ্ঞানীদের আমল ছিল এই যে, কুরবানী ওয়াজিব নয়, বরং নবী করীম (ﷺ)-এর সুন্নাতের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।[৪]
ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
اَلْأُضْحِيَّةُ سُنَّةٌ وَلَيْسَتْ بِوَاجِبَةٍ
‘কুরবানী করা সুন্নাত, ওয়াজিব নয়’।[৫]
ইমাম শাফেঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
الضَّحَايَا سُنَّةٌ لَا أُحِبُّ تَرْكَهَا
‘কুরবানী সুন্নাত’, এই সুন্নাত ত্যাগ করা আমি পসন্দ করি না’।[৬]
হানাফী মাযহারেব ইমাম আবু ইউসুফ, মালিকী মাযহাবের ইমাম আশহাব এবং অধিকাংশ আলিমের মতে, তা সুন্নাতে মুওয়াক্কাদা।[৭]
ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৯১-৭৫১ হি.) বলেন,
إِنَّهُ ﷺ لَمْ يَكُنْ يَدَعُ الْأُضْحِيِّةَ
‘নবী করীম (ﷺ) কখনো কুরবানী করা থেকে বিরত থাকেননি’।[৮]
উক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কুরবানী করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, ফরয বা ওয়াজিব নয়।
মাসআলা-২ : সফর অবস্থায় কুরবানী করার বিধান কি?
উত্তর : সামর্থ্য থাকলে সফরেও কুরবানী করতে পারে। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
نَحَرْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ عَامَ الْحُدَيْبِيَةِ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَّالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ
‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধির সফরে ছিলাম। (এমতাবস্থায় কুরবানীর ঈদ উপস্থিত হলে) একটি গরুতে সাতজন ও একটি উটে সাতজন শরীক হয়ে কুরবানী করি’।[৯]
উক্ত হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, সফরে থাকাবস্থাতেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও তাঁর সাথীগণ সাতজন শরীক হয়ে কুরবানী করেছেন, কিন্তু তা বর্জন করেননি।
ইমাম ইবনু হাযম (মৃ. ৪৫৬ হি.) বলেন, কুরবানীর ব্যাপারে মুক্বীম ও মুসাফিরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীসের বিপরীতে যদি কেউ আমল করে, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ কুরবানী করা সুন্নাত, আর এ সুন্নাত থেকে বিরত থাকা বৈধ হবে নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বিরত থাকার হাদীস না পাওয়া যাবে।[১০]
ইমাম নাযীর হুসাইন দেহলভী (মৃ. ১৯০২ খ্রি.) বলেন, কুরবানী দেয়া ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া ব্যক্তির সাথে, মুক্বীম হওয়ার এবং মুসাফির না হওয়ার শর্তের ব্যাপারে হাদীসে কোন দলীল পাওয়া যায় না। বরং মুসাফিরের কুরবানী করার ব্যাপারে হাদীসে ফিক্বহের বিপরীতে দলীল পাওয়া যায়। যেমন ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হি.) মুসাফিরের কুরবানী করার ব্যাপারে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন এবং ঐ অনুচ্ছেদের অধীনে একটি হাদীসও উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মক্কা সফরে কুরবানী করেছিলেন।[১১]
উল্লেখ্য যে, মাযহাব চতুষ্টয়ের মধ্যে কেবল হানাফী ফিক্বহের ফৎওয়া হল- মুসাফিরের উপর কুরবানী নেই এবং যার উপর যাকাত ফরয নয়, তার উপরে কুরবানীও নেই।[১২] কিন্তু এ দাবী সঠিক নয়।
মাসআলা-৩ : মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা যাবে কি?
উত্তর : মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী করার কোন সহীহ হাদীস নেই। আবূ দাঊদে বর্ণিত হাদীসটি যঈফ।[১৩]
হাদীসটি হল- হানাশ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
رَأَيْتُ عَلِيًّا يُضَحِّى بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ مَا هَذَا فَقَالَ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَوْصَانِىْ أَنْ أُضَحِّىَ عَنْهُ فَأَنَا أُضَحِّى عَنْهُ
‘আমি আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে দু’টি দুম্বা কুরবানী করতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কী ব্যাপার? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার পক্ষ থেকে আমাকে কুরবানী করার অছিয়ত করে গেছেন, তাই আমি তাঁর পক্ষ থেকে ঐ কুরবানী করছি’।[১৪]
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (মৃ. ১৩৫৩ হি.) বলেন,
لَمْ أَجِدْ فِي التَّضْحِيَةِ عَنِ الْمَيِّتِ مُنْفَرِدًا حَدِيْثًا مَرْفُوْعًا صَحِيْحًا وَأَمَّا حَدِيْثُ عَلِيٍّ الْمَذْكُوْرُ فِيْ هَذَا الْبَابِ فَضَعِيْفٌ. فَإِذَا ضَحَّى الرَّجُلُ عَنِ الْمَيِّتِ مُنْفَرِدًا فَالِاحْتِيَاطُ أَنْ يَّتَصَدَّقَ بِهَا كُلِّهَا وَاللهُ تَعَالَى أَعْلَمُ
‘মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়ার ব্যাপারে আমি কোন সহীহ মারফূ‘ হাদীস পাইনি। উল্লেখিত আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হাদীসটি যঈফ। তবে কোন ব্যক্তি যদি মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী প্রদান করে, তাহলে উক্ত পশুর গোশত সম্পূর্ণটাই ছাদাক্বাহ করে দিতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত’।[১৫]
তিনি আরো বলেন,
أُحِبُّ أَنْ يَّتَصَدَّقَ عَنْهُ وَلَا يُضَحِّيَ
‘আমি মৃত ব্যক্তির জন্য ছাদাক্বাহ করা পসন্দ করি, কুরবানী করা নয়’।[১৬]
মাসআলা-৪ : বর্তমানে অনেক ব্যক্তিকে দেখা যায় যে, যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পরেও তারা নখ, চুল, গোঁফ ইত্যাদি কেটে থাকে। পাশাপাশি কুরবানী করতে অক্ষম ব্যক্তিগণ যদি কুরবানীর নিয়তে চুল, নখ ইত্যাদি কর্তন করা থেকে বিরত থাকে এবং ঈদুল আযহার সালাতের পরে এসে কর্তন করে, তাহলে সে পূর্ণাঙ্গ কুরবানীর নেকী পেয়ে যাবে। বিষয়টির ব্যাপারে শরী‘আতের সিদ্ধান্ত কী?
উত্তর : যিলহজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানীদাতা চুল, নখ ইত্যাদি কাটতে পারবেন না। উম্মে সালামাহ র হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘যখন যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ তারিখ শুরু হয়, আর তোমাদের মধ্যে কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, তখন সে যেন নিজের চুল বা শরীরের কোন অংশ স্পর্শ না করে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সে যেন চুল না কাটে এবং নখ না কাটে। অন্যত্র রয়েছে, যে ব্যক্তি যিলহজ্জের নতুন চাঁদ দেখে এবং কুরবানী করার ইচ্ছা করে, সে যেন নিজের চুল না ছাঁটাই করে এবং নখসমূহ না কাটে’।[১৭]
নবী করীম (ﷺ)-এর স্ত্রী উম্মে সালামাহ র বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
مَنْ كَانَ لَهُ ذِبْحٌ يَذْبَحُهُ فَإِذَا أُهِلَّ هِلَالُ ذِى الْحِجَّةِ فَلَا يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ وَلَا مِنْ أَظْفَارِهِ شَيْئًا حَتّٰى يُضَحِّىَ
‘যার কুরবানীর পশু রয়েছে, সে যেন যিলহজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী করার পূর্ব পর্যন্ত তাঁর চুল ও নখ না কাটে’।[১৮]
উক্ত হাদীস সম্পর্কে শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কুরবানী দাতার পরিবার তথা সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীদের জন্য এই হুকুম নয়। আলেমগণের বিশুদ্ধ মতানুযায়ী, তারা চুল ও নখ কাটার নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে। হুকুমটি কেবল কুরবানী দাতার জন্য খাছ, যিনি তার সম্পদ থেকে কুরবানীর পশুটি ক্রয় করেছেন’।[১৯] সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া বোর্ডের ফৎওয়া হল, ‘যে ব্যক্তি কুরবানী করতে ইচ্ছুক তার জন্য বিধান হচ্ছে- তিনি যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে নিজের চুল, নখ ও চামড়ার কোন অংশ কাটবেন না, যতক্ষণ তিনি কুরবানী সম্পন্ন না করেন। এক্ষেত্রে সে নিজ হাতে যব্হ করুক কিংবা অন্য কাউকে যব্হ করার দায়িত্ব দিক উভয়টা সমান। আর যাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করা হচ্ছে তাদের জন্য এসব বিধান নেই। যেহেতু এমর্মে কোন দলীল নেই’।[২০]
শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকার বিধানটি শুধু কুরবানী দাতার জন্য খাছ। তিনি যাদের পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় করবেন তাদের জন্য এ বিধান প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি নিজের ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করেন, তাহলে নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকার হুকুমটি শুধু কুরবানীদাতার উপর বর্তাবে। পরিবারের বাকী সদস্যদের নখ-চুল কাটাতে কোন সমস্যা নেই। পক্ষান্তরে যে সকল আলেম বলেন, পরিবারের বাকী সদস্যদেরও নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকা যরূরী, তাদের এই মতটি দুর্বল। কেননা এখানে হাদীসের ভাষ্য স্পষ্ট, হাদীসের মধ্যে বলা হয়েছে ‘তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী দেয়ার ইচ্ছা রাখে’। রাসূল (ﷺ) একথা বলেননি যে, ‘অথবা যার পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়া হয়’। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজ ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন, কিন্তু তাদেরকে নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেননি (ফাতাওয়া উছায়মীন, ২৫তম খণ্ড, পৃ. ১৮৮; ইসলাম, সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ৫ম খণ্ড, ৪৫৪০ পৃ.)।
উল্লেখ্য, কুরবানী করতে অক্ষম ব্যক্তির ফযীলতের পক্ষে যে বর্ণনা পেশ করা হয়, তা যঈফ।[২১]
যেমন- আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আমি কুরবানীর দিনকে ঈদের দিন হিসাবে পালন করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ তা‘আলা এ দিনটিকে এ উম্মতের জন্য ঈদের দিন ধার্য করেছেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! মাদী ‘মানীহা’ ব্যতীত যদি অন্য কোন পশু না পাই, তবে কী দ্বারা কুরবানী করব? উত্তরে তিনি বললেন, না, বরং তুমি কুরবানীর দিনে তোমার চুল ও নখ কাটবে, তোমার গোঁফ খাটো করবে এবং নাভীর নিচের কেশ মু-ন করবে। এটাই আল্লাহ তা‘আলার নিকট তোমার পূর্ণ কুরবানী’।[২২]
উক্ত হাদীসের সনদে ঈসা ইবনু হিলাল আছ-ছাদাফী নামের রাবী থাকার কারণে আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন। তাঁর নিকটে উক্ত রাবী মাজহূল পর্যায়ের। তিনি আরো বলেন, এর মতনও ইযতিরাব। যদিও ইমাম হাকেম ও ইবনু হিব্বান তাকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু তারা উভয়ে হাদীস যাচাইয়ের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিছগণের নিকটে শৈথিল্য প্রদর্শনকারী হিসাবে খুবই প্রসিদ্ধ।[২৩]
তাই তাদের মন্তব্য অনেক সময় গ্রহণযোগ্য নয়। আর শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্ব (রাহিমাহুল্লাহ)সহ অন্য যারা হাসান বা সহীহ বলেছেন, তারা ইবনু হিব্বানের মন্তব্যের আলোকেই বলেছেন।[২৪]
অন্যদিকে মুহাদ্দিছ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ আবূ দাঊদের ভাষ্যের মধ্যে আলবানীর মন্তব্যটা উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ দারাকুৎনীর তাহক্বীক্বেও মুহাদ্দিছ সাইয়েদ ইবরাহীম হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন।[২৫] সুতরাং উক্ত হাদীস আমলযোগ্য নয়।
এছাড়া তিরমিযীর ভাষ্যকার ইবনুল আরাবী আল-মালেকী (৪৬৯-৫৪৩ হি.) বলেন,
لَيْسَ فِي فَضْلِ الْأُضْحِيَّةِ حَدِيْثٌ صَحِيْحٌ
‘কুরবানীর ফযীলত সংক্রান্ত কোন সহীহ হাদীস নেই’। উক্ত বক্তব্যকে তুহফাতুল আহওয়াযী প্রণেতা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী সমর্থন করেছেন।[২৬]
মাসআলা-৫ : কোন্ প্রকৃতির পশু দ্বারা কুরবানী করা বৈধ এবং কুরবানীর পশুর বয়স কত বছর হলে কুরবানী করা যায়? পশুর দুধের দাঁত পড়ার পর নতুন দাঁত উঠা কি শর্ত?
উত্তর : সাধারণত তিন প্রকার প্রাণী দ্বারা কুরবানী বৈধ। যথা : (১) উট (২) গরু এবং (৩) ছাগল। তবে দুম্বা ও ভেড়া ছাগলের মধ্যে গণ্য। উক্ত প্রাণীর প্রত্যেকটির নর ও মাদি যেকোন ধরনের পশু কুরবানী করা বৈধ। এগুলোর বাইরে অন্য পশু দিয়ে কুরবানী করার প্রমাণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে পাওয়া যায় না। তবে অনেক বিদ্বান মহিষকে গরুর অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয বলেছেন।[২৭]
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ مَنۡ یُّعَظِّمۡ شَعَآئِرَ اللّٰہِ
‘যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করবে’-আয়াতের شَعَآئِرَ-এর ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, اِسْتِسْمَانُهَا وَاِسْتِحْسَانُهَا ‘মোটা তাজা ও পসন্দনীয় জন্তু’।[২৮]
বিশিষ্ট সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করে বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এমন শিং বিশিষ্ট মোটাতাজা দুম্বা কুরবানী করেছেন, যার চোখ, মুখ, পা ও কপাল কালো বর্ণের ছিল’।[২৯]
শরী‘আতে কুরবানীর পশুর বয়সের কথা বলা হয়নি।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘তোমরা দুধের দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত ওঠা (মুসিন্নাহ) পশু ছাড়া যব্হ করো না।[৩০]
এই হাদীস প্রমাণ করে যে, দুধের দাঁত ভেঙ্গে নতুন দাঁত ওঠা শর্ত। উল্লেখ্য, চার ধরনের পশু কুরবানী করা নাজায়েয। যথা- স্পষ্ট খোঁড়া, স্পষ্ট কানা, স্পষ্ট রোগী ও জীর্ণশীর্ণ এবং অর্ধেক কানকাটা বা ছিদ্র করা ও অর্ধেক শিং ভাঙ্গা।[৩১]
তবে কুরবানীর পশুর অসুখ হলে সেটি বিক্রি করে ভাল পশু কিনে কুরবানী করতে শরী‘আতে কোন বাধা নেই।
মাসআলা-৬ : বর্তমানে কুরবানীর পশুর সাথে আক্বীক্বা করার প্রচলন দেখা যায়। শরী‘আতে এর কোন অনুমতি আছে কি?
উত্তর : কুরবানীর সাথে আক্বীক্বা করার কোন দলীল নেই। তাই এটা জায়েয নয়। কেউ দিলে তা শরী‘আত সম্মত হবে না। আর আক্বীক্বা সাত দিনে করাই সুন্নাত।[৩২]
কুরবানী ও আক্বীক্বা দু’টি পৃথক ইবাদত। কুরবানীর পশুতে আক্বীক্বার নিয়ত করা শরী‘আত সম্মত নয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বা সাহাবায়ে কেরামের যুগে এ ধরনের আমলের অস্তিত্ব ছিল না।[৩৩]
মাসআলা-৭ : কোন পশু যব্হ কিংবা কুরবানীর সময় এলে সমাজে একটি কথা শুনা যায় যে, মহিলারা কোন পশু যব্হ কিংবা কুরবানী করতে পারে না। এটা শুধু পুরুষের কাজ। আসলে বিষয়টির সত্যতা কতটুকু?
উত্তর : কুরবানীর পশু যব্হ করার জন্য নারী-পুরুষের মাঝে কোন পার্থক্য বা শর্তারোপ করা হয়নি। যব্হ করা কাজটি সাহসের ব্যাপার। কোন নারী যদি কুরবানীর পশু যব্হ করার সাহস রাখে, তাহলে সে করতে পারবে।
ইমাম বুখারী (১৯৪-২৫৬ হি.) ইবনু রাফি‘ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, সাহাবী আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর মেয়েদেরকে নিজ হাতে তাদের কুরবানীর পশু যব্হ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[৩৪] উক্ত হাদীস প্রমাণ করে মেয়েরাও নিজ হাতে কুরবানী করতে পারে।
মাসআলা-৮ : বর্তমানে অনেকে ঈদুল আযহার সালাতের পূর্বে পানাহার না করাকে সিয়াম মনে করেন। উক্ত ধারণা কি সঠিক?
উত্তর : উক্ত ধারণা সঠিক নয়। ঈদুল আযহার দিন না খেয়ে থাকাকে ছওম বলা এবং ঈদগাহ থেকে এসে খাওয়াকে ইফতারী বলার কোন প্রমাণ শরী‘আতে পাওয়া যায় না।
হাদীসে এসেছে, রাসূল (ﷺ) ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটি বিজোড় খেজুর খেয়ে ঈদগাহে বের হতেন এবং ঈদুল আযহার দিন সালাত আদায় না করা পর্যন্ত কিছুই খেতেন না।[৩৫] ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম তিনি স্বীয় কুরবানীর গোশত হতে খেতেন।[৩৬]
বিদায় হজ্জের দিন তিনি ১০০টি উটের প্রতিটি থেকে একটু করে অংশ নিয়ে এক পাত্রে রান্না করে সেখান থেকে গোশত ও ঝোল খেয়েছিলেন।[৩৭]
তবে কলিজা খাওয়া মর্মে বর্ণিত হাদীসটি যঈফ। কারণ উক্ত বর্ণনার সনদে ওক্ববাহ ইবনু আছম নামক রাবী দুর্বল।[৩৮]
মাসআলা-৯ : গরু বা উট ভাগে কুরবানী দেয়া যাবে কি?
উত্তর : মুক্বীম অবস্থায় একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করাই উত্তম। তবে সামর্থ্য থাকলে একাধিক পশুও কুরবানী করতে পারবে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেন, ‘হে জনমণ্ডলী! নিশ্চয় প্রতিটি পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি করে কুরবানী’।[৩৯]
সাহাবায়ে কেরামও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উক্ত সুন্নাত অনুযায়ী আমল করতেন। ‘আত্বা ইবনু ইয়াসির সাহাবী আবূ আইয়ূব আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যুগে কুরবানী কেমন ছিল মর্মে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘একজন লোক একটি বকরী দ্বারা নিজের ও নিজের পরিবারের পক্ষ হতে কুরবানী দিত। অতঃপর তা নিজে খেত ও অন্যকে খাওয়াত।[৪০]
তবে গরুতে সাত এবং উটে দশ ভাগা দিয়ে কুরবানী করা জায়েয। কেউ কেউ ভাগা কুরবানীর হাদীসগুলোকে শুধু সফরের সাথে খাছ করে থাকেন। এটা সঠিক নয়। কারণ কোন সালাফী বিদ্বান উক্ত বর্ণনাগুলোকে শুধু সফরের সাথে খাছ করেননি। যেমন আল্লামা শামসুল হক আযীমাবাদী, আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, শায়খ বিন বায, শায়খ উছায়মীন প্রমুখ। তাই ভাগা কুরবানী নিয়ে সামান্য ইখতেলাফ থাকলেও একে নাজায়েয বলা যাবে না।[৪১]
মাসআলা-১০ : কুরবানী করার সময় কোন্ দু‘আ পড়তে হবে?
উত্তর : কুরবানী করার সময় বলবে,
بِاسْمِ اللّٰهِ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ
‘বিসমিল্লা-হি ওয়াল্লাহু আকবার’।[৪২] এর সাথে ‘আল্ল-হুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্নী’ও বলা যাবে।[৪৩]
উল্লেখ্য যে, ‘আল্লা-হুম্মা তাক্বাব্বাল মিন্নী ওয়া মিন আহলি বাইতী’ মর্মে কোন দু‘আ হাদীসে পাওয়া যায় না।
মাসআলা-১১ : কুরবানীর গোশত কয় ভাগ করতে হবে?
উত্তর : কুরবানীর গোশত তিন শ্রেণীর মানুষ খাবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَکُلُوۡا مِنۡہَا وَ اَطۡعِمُوا الۡقَانِعَ وَ الۡمُعۡتَرَّ
‘তা হতে তোমরা খাও, অভাবগ্রস্তকে খাওয়াও এবং ভিক্ষাকারীকে দাও’ (সূরা আল-হজ্জ : ৩৬)।
তাই তিন ভাগ করা ভাল। তবে প্রয়োজনে ভাগে কম-বেশিও করা যাবে এবং সবটুকুও ছাদাক্বাহ করা যাবে। কিন্তু কাউকে না দিয়ে একাই খাওয়া জায়েয নয়। দরিদ্র ও মিসকীনদের জন্য জমাকৃত গোশত যারা কুরবানী দিয়েছে তাদের মাঝে বণ্টন করা ঠিক নয়।
উল্লেখ্য যে, ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে একভাগ নিজ পরিবারকে খাওয়াতেন ও একভাগ অভাবী প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ সায়েলদের তথা ভিক্ষুকদের মধ্যে ছাদাক্বাহ করতেন’ মর্মে বর্ণিত হাদীসটি সনদ বিহীন।[৪৪]
মাসআলা-১২ : কুরবানী বা আক্বীক্বার জন্য নির্দিষ্ট পশুর বাচ্চা জন্ম নিলে করণীয় কী?
উত্তর : পশুর সাথে পশুর বাচ্চাকেও যব্হ করবে।[৪৫]
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কুরবানীর মাসআলা-মাসায়েল বিশুদ্ধভাবে জানা ও সে অনুযায়ী পালন করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!
তথ্যসূত্র :
[১]. সহীহ বুখারী, হা/৫৫৬৪-৬৫; মিশকাত, হা/১৪৫৩।
[২]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/১৯৫০৬-৭, সনদ সহীহ; ইরওয়াউল গালীল, হা/১১৩৯, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৫৪।
[৩]. لَا يَصِحُّ عَنْ أَحَدٍ مِنَ الصَّحَابَةِ أَنَّهَا وَاجِبَةٌ-ফাৎহুল বারী শারহু সহীহিল বুখারী, ১০ম খণ্ড, পৃ. ৩।
[৪]. তিরমিযী, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৮২; ফাৎহুল বারী শারহু সহীহিল বুখারী, ১০ম খণ্ড, পৃ. ৩।
[৫]. তিরমিযী (ইফাবা অনুবাদ), পৃ. ৮০, ১৩নং রেওয়াত দ্র.; মুওয়াত্ত্বা ইমাম মালিক, পৃ. ১৮৯।
[৬]. আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু ইদরীস আশ-শাফেঈ, আল-উম্ম (বৈরূত : দারুল মা‘আরিফাহ, ১৪১০ হি./১৯৯০ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ২৪৩।
[৭]. ফাৎহুল বারী শারহু সহীহিল বুখারী, ১০ম খণ্ড, পৃ. ৩।
[৮]. মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর শামসুদ্দীন ইবনে ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়াহ, যাদুল মা‘আদ ফী হাদই খায়রিল ইবাদ (বৈরূত : মুওয়াস্সাসাতুর রিসালাহ, ২৭ তম সংস্করণ ১৪১৫ হি./১৯৯৪ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৩১৭।
[৯]. সহীহ মুসলিম, হা/১৩১৮; মিশকাত, হা/২৬৩৬।
[১০]. ইমাম আলী ইবনে আহমাদ ইবনে হাযম, আল-মুহাল্লা মুনীরিয়্যাহ (মিসরী ছাপা, ১৩৪৯ হি.), ৭ম খণ্ড, পৃ. ৩৭৫।
[১১]. ইমাম সৈয়দ নাযীর হুসাইন দেহলভী, ফাতাওয়া নাবীবিয়্যাহ (দিল্লী ছাপা, তাবি), ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৫৩।
[১২]. আল-হিদায়াহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৪৫।
[১৩]. যঈফ আবূ দাঊদ, হা/২৭৯০; মিশকাত, হা/১৬৪২।
[১৪]. আবূ দাঊদ, হা/২৭৯০; মিশকাত, হা/১৬৪২, পৃ. ১২৮; বায়হাক্বী, ৯ম খণ্ড, পৃ. ২৮৮।
[১৫]. আল্লামা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযী শারহ জামেঊত তিরমিযী (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়াহ, তাবি), ৫ম খণ্ড, পৃ. ৬৬; শায়খ ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ শারহ মিশকাতুল মাছাবীহ (বানারাস, হিন্দ : আল-জামে‘আহ আস-সালাফিয়াহ, ৩য় সংস্করণ ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি.), ৫ম খণ্ড, পৃ. ৯৫।
[১৬]. মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, মিরক্বাতুল মাফাতীহ শারহ মিশকাতুল মাছাবীহ (বৈরূত : দারুল ফিকর, ১৪২২ হি./২০০২ খ্রি.), ৩য় খণ্ড, পৃ. ১০৮৪।
[১৭]. সহীহ মুসলিম, হা/১৯৭৭; তিরমিযী, হা/১৫২৩, সনদ সহীহ; মিশকাত হা/১৪৫৯।
[১৮]. মুসলিম, হা/১৯৭৭; আবূ দাঊদ, হা/২৭৯১; ইবনু হিব্বান, হা/৫৯১৭।
[১৯]. ফাতাওয়া আল-ইসলামিয়্যা, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩১৬-৩১৭।
[২০]. ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমাহ, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৪২৬-৪২৭।
[২১]. যঈফ আবূ দাঊদ, হা/২৭৮৯; যঈফ নাসাঈ, হা/৪৩৬৫।
[২২]. আবূ দাঊদ, হা/২৭৮৯; নাসাঈ, হা/৪৩৬৫; মিশকাত, হা/১৪৭৯; যঈফ আবূ দাঊদ, হা/২৭৮৯; যঈফ নাসাঈ, হা/৪৩৬৫।
[২৩]. তাহক্বীক্ব মিশকাত, হা/১৪৭৯-এর টীকা দ্র.; যঈফ আবূ দাঊদ, হা/২৭৮৯-আলোচনা দ্র.; যঈফ নাসাঈ, হা/৪৩৬৫।
[২৪]. তাহক্বীক্ব আহমাদ, হা/৬৫৭৫।
[২৫]. দারাকুৎনী, হা/৪৭৪৯।
[২৬]. তুহফাতুল আহওয়াযী, ৫ম খণ্ড পৃ. ৬৩।
[২৭]. সূরা আল-আন‘আম : ১৪৪-৪৫; মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৮১।
[২৮]. তাফসীর ইবনু কাছীর, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৪২১; তাফসীরে সা‘আদী, পৃ. ৫৩৮; তাফসীরে ত্বাবারী, ১৮ম খণ্ড, পৃ. ৬২১।
[২৯]. আবূ দাঊদ, হা/২৭৯৬; মিশকাত, হা/১৪৬৬, সনদ সহীহ।
[৩০]. সহীহ মুসলিম, হা/১৯৬৩; মিশকাত, হা/১৪৫৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৩৭১, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২২২।
[৩১]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/১৭৫৭; মিশকাত, হা/১৪৬৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/১৩৮১, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২২৫।
[৩২]. তিরমিযী, হা/১৫২২; মিশকাত, হা/৪১৫৩, সনদ সহীহ।
[৩৩]. ইমাম শাওকানী, নায়লুল আওত্বার, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৬৮, ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়; মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৫১ও ৫ম খণ্ড, পৃ. ৭৫।
[৩৪]. সহীহ বুখারী, পৃ. ৮৩৩; ফাৎহুল বারী শারহু সহীহিল বুখারী, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯।
[৩৫]. সহীহ বুখারী, হা/৯৫৩; মিশকাত, হা/১৪৩৩; তিরমিযী, হা/৫৪২; মিশকাত, হা/১৪৪০, সনদ সহীহ।
[৩৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৩৪, সনদ হাসান; দারাকুৎনী, হা/১৭৩৪; নায়লুল আওতার, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৫৫।
[৩৭]. মুসলিম, হা/৩০০৯; ইবনু মাজাহ, হা/৩০৭৪; মিশকাত, হা/২৫৫৫।
[৩৮]. সুবুলুস সালাম (৪র্থ সংস্করণ, ১৯৬০ খ্রি.), ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৫; তা‘লীক্ব আলবানী, পৃ. ২য় খণ্ড, ২০০।
[৩৯]. তিরমিযী, হা/১৫১৮; আবূ দাঊদ, হা/২৭৮৮; মিশকাত, হা/১৪৭৮, সনদ সহীহ।
[৪০]. তিরমিযী, হা/১৫০৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৪৭ ‘নিজ পরিবারের পক্ষ হতে একটা বকরী কুরবানী করা’ অনুচ্ছেদ, ‘কুরবানী’ অধ্যায়।
[৪১]. ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৩৯৫ ও ৪০৫ দ্র.; উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল, ২৫তম খণ্ড, পৃ. ২২ ও ৪৬; আল-ইসলাম সওয়াল ওয়া জাওয়াব, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৪৫৩১।
[৪২]. সহীহ মুসলিম, হা/১৯৬৬।
[৪৩]. সহীহ মুসলিম, হা/১৯৬৭; আলবানী, মানাসিকুল হাজ্জ, পৃ. ৩৫।
[৪৪]. আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, হা/১১৬০; মির‘আত, হা/১৪৯৩, ৫ম খণ্ড, পৃ. ১২০ ও ৯ম খণ্ড, পৃ. ২৪৪; ইবনু কুদামা, আল-মুগনী, ১১তম খণ্ড, পৃ. ১০৮-০৯।
[৪৫]. মির‘আত, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৬৮-৬৯।
Last edited: