If you're in doubt ask الله.
Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
‘উহিয়্যাহ' কুরবানীর দিনসমূহে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে যবেহ-যোগ্য উঁট, গরু, ছাগল বা ভেঁড়াকে বলা হয়। উক্ত শব্দটি ‘যুহা' শব্দ থেকে গৃহীত যার অর্থ পূর্বাহ্ন। যেহেতু কুরবানী যবেহ করার উত্তম বা আফযল সময় হল ১০ই যুলহজ্জের (ঈদের দিনের পূর্বাহ্নকাল। তাই ঐ সামঞ্জস্যের জন্য তাকে 'উহিয়্যাহ' বলা হয়েছে। যাকে 'যাহিয়্যাহ' বা 'আযহাহ’ও বলা হয়। আর 'আযহাহ' এর বহুবচন ‘আযহা’। যার সহিত সম্পর্ক জুড়ে ঈদের নাম হয়েছে ‘ঈদুল আযহা'। বলা বাহুল্য, ঈদুযোহা কথাটি ঠিক নয়।
কুরবানী শব্দটিও ‘কুর্ব’ ধাতু থেকে গঠিত। যার অর্থ নৈকট্য। কুরবান হল, প্রত্যেক সেই বস্তু, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। আর সেখান থেকেই ফারসী বা উর্দু- বাংলাতে গৃহীত হয়েছে ‘কুরবানী' শব্দটি।
কুরবানী করা কিতাব, সুন্নাহ ও সর্ববাদিসম্মতিক্রমে বিধেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘অতএব তুমি নামায পড় তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে এবং কুরবানী কর।’ (সূরা আসর ২ আয়াত)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী (ﷺ) -কে নামায ও কুরবানী এই দু'টি ইবাদতকে একত্রিত করে পালন করতে আদেশ করেছেন। যে দু'টি বৃহত্তম আনুগত্যের অন্যতম এবং মহোত্তম সামীপ্যদানকারী ইবাদত। আল্লাহর রসূল (ﷺ) সে আদেশ যথাযথভাবে পালন করেছেন। তাই তিনি ছিলেন- অধিক নামায কায়েমকারী ও অধিক কুরবানীদাতা। ইবনে উমর (রা:) বলেন, “নবী (ﷺ) দশ বছর মদীনায় অবস্থানকালে কুরবানী করেছেন। (মুসনাদ আহমাদ, তিরমিযী)
হযরত আনাস (রা:) বলেন, 'রসূল (ﷺ) দীর্ঘ (ও সুন্দর) দু’শিংবিশিষ্ট সাদা-কালো মিশ্রিত (মেটে বা ছাই) রঙের দু'টি দুম্বা কুরবানী করেছেন।' (বুখারী, মুসলিম)
তিনি কোন বছর কুরবানী ত্যাগ করতেন না। (যাদুল মাআদ ২/৩১৭) যেমন তিনি তাঁর কর্ম দ্বারা কুরবানী করার উপর উম্মতকে অনুপ্রাণিত করেছেন, তেমনি তিনি তাঁর বাক্য দ্বারাও অনুপ্রাণিত ও তাকীদ করেছেন।
যেমন তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি (ঈদের) নামাযের পূর্বে যবেহ করে সে নিজের জন্য যবেহ করে। আর যে নামাযের পরে যবেহ করে তার কুরবানী সিদ্ধ হয় এবং সে মুসলমানদের তরীকার অনুসারী হয়।” (বুখারী ৫২২৬নং)
তিনি আরো বলেন, “সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানী করে না সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।” (মুসনাদ আহমাদ ২/৩২১, ইবনে মাজাহ ২/১০৪৪, হাকেম ২/৩৮৯)
সকল মুসলিমগণ কুরবানী বিধেয় হওয়ার ব্যাপারে একমত। এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। (মুগনী ১৩/৩৬০, ফাতহুল বারী ১০/৩)
তবে কুরবানী করা ওয়াজেব না সুন্নত তা নিয়ে মতান্তর আছে। আর দুই মতেরই দলীল প্রায় সমানভাবে বলিষ্ঠ। যাতে কোন একটার প্রতি পক্ষপাতিত্ব সহজ নয়। যার জন্য কিছু সংস্কারক ও চিন্তাবিদ ওলামা কুরবানী ওয়াজেব হওয়ার পক্ষ সমর্থন করেন। তাঁদের মধ্যে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রঃ) অন্যতম। কিন্তু অধিকাংশ সাহাবা, তাবেয়ীন এবং ফকীহগণের মতে কুরবানী সুন্নাতে মুআক্কাদাহ (তাকীদপ্রাপ্ত সুন্নত)। অবশ্য মুসলিমের জন্য মধ্যপন্থা এই যে, সামর্থ্য থাকতে কুরবানী ত্যাগ না করাই উচিত।(1) উচিত নিজের ও পরিবার-পরিজনের তরফ থেকে কুরবানী করা। যাতে আল্লাহর আদেশ পালনে এবং মহানবী (ﷺ) এর অনুকরণে বিরাট সওয়াবের অধিকারী হতে পারে।
বস্তুতঃ কুরবানীতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের খাতে অর্থব্যয় (ও স্বার্থত্যাগ) হয়। যাতে তওহীদবাদীদের ইমাম হযরত ইবরাহীম (আ:)-এর সুন্নাহ জীবিত হয়। ইসলামের একটি প্রতীকের বিকাশ ঘটে। পরিবার ও দরিদ্রজনের উপর খরচ করা হয় এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্য হাদিয়া ও উপঢৌকন পেশ করা হয়। এত কিছুর মাধ্যমে মুসলিম ঈদের খুশীর স্বাদ গ্রহণ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর আনুগত্য করতে পেরেই মুসলিম আনন্দলাভ করতে পারে। সেই খুশীই তার আসল খুশী। রমযানের সারা দিন রোযা শেষে ইফতারের সময় তার খুশী হয়। পূর্ণ এক মাস রোযা করে সেই বিরাট আনুগত্যের মাধ্যমে ঈদের দিনে তারই আনন্দ অনুভব করে থাকে। এই খুশীই তার যথার্থ খুশী। বাকী অন্যান্য পার্থিব সুখ-বিলাসের খুশী খুশী নয়। বরং তা সর্বনাশের কদমবুসী। আল্লাহ পাক কিছু জাহান্নামবাসীদের উদ্দেশ্যে বলবেন, ‘এ এ কারণে যে, তোমরা পৃথিবীতে অযথা আনন্দ করতে ও দম্ভ প্রকাশ করতে।” (সূরা মু'মিন ৭৫ আয়াত)
কারুনের পার্থিব উৎফুল্লতা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, “স্মরণ কর, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, (দর্পময়) আনন্দ করো না। অবশ্যই আল্লাহ (দর্পময়) আনন্দকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (সূরা ক্বাসাস ৭৬ আয়াত)
অতঃপর জ্ঞাতব্য যে, যেমন হজ্জ না করে তার খরচ সদকাহ করলে ফরয আদায় হয় না, তেমনি কুরবানী না করে তার মূল্য সদকাহ করে অভীষ্ট সুন্নত আদায় হয় না। যেহেতু যবেহ হল আল্লাহর তা'যীম-সম্বলিত এক ইবাদত এবং তাঁর দ্বীনের এক নিদর্শন ও প্রতীক। আর মূল্য সদকাহ করলে তা বাতিল হয়ে যায়।
পক্ষান্তরে কুরবানী নবী (ﷺ)-এর সুন্নাহ এবং সমগ্র মুসলিম জাতির এক আমল। আর কোথাও কথিত নেই যে, তাঁদের কেউ কুরবানীর পরিবর্তে তার মূল্য সদকাহ করেছেন। আবার যদি তা উত্তম হত, তাহলে তাঁরা নিশ্চয় তার ব্যতিক্রম করতেন না। (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ ২৬/৩০৪)
ইবনুল কাইয়্যেম (রঃ) বলেন, 'যবেহ তার স্বস্থানে কুরবানীর মূল্য সদকাহ করা অপেক্ষা উত্তম। যদিও সে মূল্য কুরবানীর চেয়ে পরিমাণে অধিক হয়। কারণ, আসল যবেহই উদ্দেশ্য ও অভীষ্ট। যেহেতু কুরবানী নামাযের সংযুক্ত ইবাদত। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায পড় ও কুরবানী কর। (সূরা আসর)
অন্যত্র বলেন, বল, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর উদ্দেশ্যে। (সূরা আনআম ১৬২ আয়াত)
অতএব প্রত্যেক ধর্মাদর্শে নামায ও কুরবানী আছে; যার বিকল্প অন্য কিছু হতে পারে না। আর এই জন্যই যদি কোন হাজী তার তামাত্তু' বা ক্বিরান হজ্জের কুরবানীর বদলে তার তিনগুণ অথবা তার থেকে বেশী মূল্য সদকাহ করে তবে তার পরিবর্ত হবে না। অনুরূপভাবে কুরবানীও। আর আল্লাহই অধিক জানেন। (তুহফাতুল মাওদুদ ৩৬পৃঃ)
আরো জ্ঞাতব্য বিষয় এই যে, মূলতঃ কুরবানী যথাসময়ে জীবিত ব্যক্তির তরফ থেকেই প্রার্থনীয়। অবশ্য সে ইচ্ছা করলে তার সওয়াবে জীবিত অথবা মৃত আত্মীয়-স্বজনকেও শরীক করতে পারে। যেহেতু নবী (ﷺ) তাঁর সাহাবাবৃন্দ (রা:) নিজেদের এবং পরিবার- পরিজনদের তরফ থেকে কুরবানী করতেন।
একাধিক মৃতব্যক্তিকে একটি মাত্র কুরবানীর সওয়াবে শরীক করাও বৈধ; যদি তাদের মধ্যে কারো উপর কুরবানী ওয়াজেব (নযর) না থাকে তবে। রসূল (ﷺ) নিজের তরফ থেকে, পরিবার-পরিজনের তরফ থেকে এবং সেই উম্মতের তরফ থেকে কুরবানী করেছেন; যারা আল্লাহর জন্য তওহীদের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং তাঁর জন্য রিসালাত বা প্রচারের সাক্ষ্য দিয়েছে। (মুসনাদ আহমাদ ৬/৩৯১-৩৯২, বাইহাকী ৯/২৬৮)
আর বিদিত যে, ঐ সাক্ষ্য প্রদানকারী কিছু উম্মত তাঁর যুগেই মারা গিয়েছিল। অতএব একই কুরবানীতে কেউ নিজ মৃত পিতামাতা ও দাদা-দাদীকেও সওয়াবে শামিল করতে পারে।
মৃতব্যক্তির তরফ থেকে পৃথক কুরবানী করার কোন দলীল নেই। তবে করা যায়। যেহেতু কুরবানী করা এক প্রকার সদকাহ। আর মৃতের তরফ থেকে সদকাহ করা সিদ্ধ; যা যথাপ্রমাণিত এবং মৃতব্যক্তি তদ্বারা উপকৃতও হবে - ইনশাআল্লাহ। পরন্তু মৃতব্যক্তি এই - শ্রেণীর পুণ্যকর্মের মুখাপেক্ষীও থাকে।
যেমন, একটি কুরবানীকে নিজের তরফ থেকে না দিয়ে কেবলমাত্র মৃতের জন্য নির্দিষ্ট করা ঠিক নয় এবং এতে আল্লাহ তাআলার সীমাহীন করুণা থেকে বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়। বরং উচিত এই যে, নিজের নামের সহিত জীবিত-মৃত অন্যান্য আত্মীয়-পরিজনকে কুরবানীর নিয়তে শামিল করা। যেমন আল্লাহর নবী কুরবানী যবেহ করার সময় বলেছেন, 'হে আল্লাহ! এ (কুরবানী) মুহাম্মদের তরফ থেকে এবং মুহাম্মদের বংশধরের তরফ থেকে। সুতরাং তিনি নিজের নাম প্রথমে নিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে বংশধরদেরকেও তার সওয়াবে শরীক করেছেন।
পক্ষান্তরে মৃতব্যক্তি যদি তার এক তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে কাউকে কুরবানী করতে অসীয়ত করে যায়, অথবা কিছু ওয়াক্ফ করে তার অর্জিত অর্থ থেকে কুরবানীর অসীয়ত করে যায়, তবে অসীর জন্য তা কার্যকর করা ওয়াজেব। কুরবানী না করে ঐ অর্থ সদকাহ খাতে ব্যয় করা বৈধ নয়। কারণ, তা সুন্নাহর পরিপন্থী এবং অসিয়তের রূপান্তর। অন্যথা যদি কুরবানীর জন্য অসিয়তকৃত অর্থ সংকুলান না হয়, তাহলে দুই অথবা ততোধিক বছরের অর্থ একত্রিত করে কুরবানী দিতে হবে। অবশ্য নিজের তরফ থেকে বাকী অর্থ পূরণ করে কুরবানী করলে তা সর্বোত্তম। মোটকথা অসীর উচিত, সূক্ষ্মভাবে অসীয়ত কার্যকর করা এবং যাতে মৃত অসিয়তকারীর উপকার ও লাভ হয় তারই যথার্থ প্রয়াস করা।
জ্ঞাতব্য যে, রসূল (ﷺ) এ কর্তৃক আলী (রা:) কে কুরবানীর অসিয়ত করার হাদীস যয়ীফ। (যআদাঃ ৫৯৬নং, যতিঃ ২৫৫নং, যইমাঃ ৬৭২নং, মিঃ ১৪৬২নং হাদীসের টীকা দ্রঃ) পরন্তু নবীর নামে কুরবানী করা আমাদের জন্য বিধেয় নয়। তিনি ঈসালে সওয়াবের মুখাপেক্ষীও নন।
উল্লেখ্য যে, মুসাফির হলেও তার জন্য কুরবানী করা বিধেয়। আল্লাহর রসূল (ﷺ) মিনায় থাকাকালে নিজ স্ত্রীগণের তরফ থেকে গরু কুরবানী করেছেন। (বুখারী ২৯৪, ৫৫৪৮, মুসলিম ১৯৭৫নং, বাইহাকী ৯/২৯৫)
1. অপরের দান বা সহযোগিতা নিয়ে হজ্জ বা কুরবানী করলে তা পালন হয়ে যাবে এবং দাতা ও কর্তা উভয়েই সওয়াবের অধিকারী হবে। ঋণ করে কুরবানী দেওয়া জরুরী নয়।
কুরবানী শব্দটিও ‘কুর্ব’ ধাতু থেকে গঠিত। যার অর্থ নৈকট্য। কুরবান হল, প্রত্যেক সেই বস্তু, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। আর সেখান থেকেই ফারসী বা উর্দু- বাংলাতে গৃহীত হয়েছে ‘কুরবানী' শব্দটি।
কুরবানী করা কিতাব, সুন্নাহ ও সর্ববাদিসম্মতিক্রমে বিধেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘অতএব তুমি নামায পড় তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে এবং কুরবানী কর।’ (সূরা আসর ২ আয়াত)
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী (ﷺ) -কে নামায ও কুরবানী এই দু'টি ইবাদতকে একত্রিত করে পালন করতে আদেশ করেছেন। যে দু'টি বৃহত্তম আনুগত্যের অন্যতম এবং মহোত্তম সামীপ্যদানকারী ইবাদত। আল্লাহর রসূল (ﷺ) সে আদেশ যথাযথভাবে পালন করেছেন। তাই তিনি ছিলেন- অধিক নামায কায়েমকারী ও অধিক কুরবানীদাতা। ইবনে উমর (রা:) বলেন, “নবী (ﷺ) দশ বছর মদীনায় অবস্থানকালে কুরবানী করেছেন। (মুসনাদ আহমাদ, তিরমিযী)
হযরত আনাস (রা:) বলেন, 'রসূল (ﷺ) দীর্ঘ (ও সুন্দর) দু’শিংবিশিষ্ট সাদা-কালো মিশ্রিত (মেটে বা ছাই) রঙের দু'টি দুম্বা কুরবানী করেছেন।' (বুখারী, মুসলিম)
তিনি কোন বছর কুরবানী ত্যাগ করতেন না। (যাদুল মাআদ ২/৩১৭) যেমন তিনি তাঁর কর্ম দ্বারা কুরবানী করার উপর উম্মতকে অনুপ্রাণিত করেছেন, তেমনি তিনি তাঁর বাক্য দ্বারাও অনুপ্রাণিত ও তাকীদ করেছেন।
যেমন তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি (ঈদের) নামাযের পূর্বে যবেহ করে সে নিজের জন্য যবেহ করে। আর যে নামাযের পরে যবেহ করে তার কুরবানী সিদ্ধ হয় এবং সে মুসলমানদের তরীকার অনুসারী হয়।” (বুখারী ৫২২৬নং)
তিনি আরো বলেন, “সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কুরবানী করে না সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়।” (মুসনাদ আহমাদ ২/৩২১, ইবনে মাজাহ ২/১০৪৪, হাকেম ২/৩৮৯)
সকল মুসলিমগণ কুরবানী বিধেয় হওয়ার ব্যাপারে একমত। এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। (মুগনী ১৩/৩৬০, ফাতহুল বারী ১০/৩)
তবে কুরবানী করা ওয়াজেব না সুন্নত তা নিয়ে মতান্তর আছে। আর দুই মতেরই দলীল প্রায় সমানভাবে বলিষ্ঠ। যাতে কোন একটার প্রতি পক্ষপাতিত্ব সহজ নয়। যার জন্য কিছু সংস্কারক ও চিন্তাবিদ ওলামা কুরবানী ওয়াজেব হওয়ার পক্ষ সমর্থন করেন। তাঁদের মধ্যে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রঃ) অন্যতম। কিন্তু অধিকাংশ সাহাবা, তাবেয়ীন এবং ফকীহগণের মতে কুরবানী সুন্নাতে মুআক্কাদাহ (তাকীদপ্রাপ্ত সুন্নত)। অবশ্য মুসলিমের জন্য মধ্যপন্থা এই যে, সামর্থ্য থাকতে কুরবানী ত্যাগ না করাই উচিত।(1) উচিত নিজের ও পরিবার-পরিজনের তরফ থেকে কুরবানী করা। যাতে আল্লাহর আদেশ পালনে এবং মহানবী (ﷺ) এর অনুকরণে বিরাট সওয়াবের অধিকারী হতে পারে।
বস্তুতঃ কুরবানীতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের খাতে অর্থব্যয় (ও স্বার্থত্যাগ) হয়। যাতে তওহীদবাদীদের ইমাম হযরত ইবরাহীম (আ:)-এর সুন্নাহ জীবিত হয়। ইসলামের একটি প্রতীকের বিকাশ ঘটে। পরিবার ও দরিদ্রজনের উপর খরচ করা হয় এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্য হাদিয়া ও উপঢৌকন পেশ করা হয়। এত কিছুর মাধ্যমে মুসলিম ঈদের খুশীর স্বাদ গ্রহণ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর আনুগত্য করতে পেরেই মুসলিম আনন্দলাভ করতে পারে। সেই খুশীই তার আসল খুশী। রমযানের সারা দিন রোযা শেষে ইফতারের সময় তার খুশী হয়। পূর্ণ এক মাস রোযা করে সেই বিরাট আনুগত্যের মাধ্যমে ঈদের দিনে তারই আনন্দ অনুভব করে থাকে। এই খুশীই তার যথার্থ খুশী। বাকী অন্যান্য পার্থিব সুখ-বিলাসের খুশী খুশী নয়। বরং তা সর্বনাশের কদমবুসী। আল্লাহ পাক কিছু জাহান্নামবাসীদের উদ্দেশ্যে বলবেন, ‘এ এ কারণে যে, তোমরা পৃথিবীতে অযথা আনন্দ করতে ও দম্ভ প্রকাশ করতে।” (সূরা মু'মিন ৭৫ আয়াত)
কারুনের পার্থিব উৎফুল্লতা স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, “স্মরণ কর, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, (দর্পময়) আনন্দ করো না। অবশ্যই আল্লাহ (দর্পময়) আনন্দকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (সূরা ক্বাসাস ৭৬ আয়াত)
অতঃপর জ্ঞাতব্য যে, যেমন হজ্জ না করে তার খরচ সদকাহ করলে ফরয আদায় হয় না, তেমনি কুরবানী না করে তার মূল্য সদকাহ করে অভীষ্ট সুন্নত আদায় হয় না। যেহেতু যবেহ হল আল্লাহর তা'যীম-সম্বলিত এক ইবাদত এবং তাঁর দ্বীনের এক নিদর্শন ও প্রতীক। আর মূল্য সদকাহ করলে তা বাতিল হয়ে যায়।
পক্ষান্তরে কুরবানী নবী (ﷺ)-এর সুন্নাহ এবং সমগ্র মুসলিম জাতির এক আমল। আর কোথাও কথিত নেই যে, তাঁদের কেউ কুরবানীর পরিবর্তে তার মূল্য সদকাহ করেছেন। আবার যদি তা উত্তম হত, তাহলে তাঁরা নিশ্চয় তার ব্যতিক্রম করতেন না। (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ ২৬/৩০৪)
ইবনুল কাইয়্যেম (রঃ) বলেন, 'যবেহ তার স্বস্থানে কুরবানীর মূল্য সদকাহ করা অপেক্ষা উত্তম। যদিও সে মূল্য কুরবানীর চেয়ে পরিমাণে অধিক হয়। কারণ, আসল যবেহই উদ্দেশ্য ও অভীষ্ট। যেহেতু কুরবানী নামাযের সংযুক্ত ইবাদত। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায পড় ও কুরবানী কর। (সূরা আসর)
অন্যত্র বলেন, বল, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর উদ্দেশ্যে। (সূরা আনআম ১৬২ আয়াত)
অতএব প্রত্যেক ধর্মাদর্শে নামায ও কুরবানী আছে; যার বিকল্প অন্য কিছু হতে পারে না। আর এই জন্যই যদি কোন হাজী তার তামাত্তু' বা ক্বিরান হজ্জের কুরবানীর বদলে তার তিনগুণ অথবা তার থেকে বেশী মূল্য সদকাহ করে তবে তার পরিবর্ত হবে না। অনুরূপভাবে কুরবানীও। আর আল্লাহই অধিক জানেন। (তুহফাতুল মাওদুদ ৩৬পৃঃ)
আরো জ্ঞাতব্য বিষয় এই যে, মূলতঃ কুরবানী যথাসময়ে জীবিত ব্যক্তির তরফ থেকেই প্রার্থনীয়। অবশ্য সে ইচ্ছা করলে তার সওয়াবে জীবিত অথবা মৃত আত্মীয়-স্বজনকেও শরীক করতে পারে। যেহেতু নবী (ﷺ) তাঁর সাহাবাবৃন্দ (রা:) নিজেদের এবং পরিবার- পরিজনদের তরফ থেকে কুরবানী করতেন।
একাধিক মৃতব্যক্তিকে একটি মাত্র কুরবানীর সওয়াবে শরীক করাও বৈধ; যদি তাদের মধ্যে কারো উপর কুরবানী ওয়াজেব (নযর) না থাকে তবে। রসূল (ﷺ) নিজের তরফ থেকে, পরিবার-পরিজনের তরফ থেকে এবং সেই উম্মতের তরফ থেকে কুরবানী করেছেন; যারা আল্লাহর জন্য তওহীদের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং তাঁর জন্য রিসালাত বা প্রচারের সাক্ষ্য দিয়েছে। (মুসনাদ আহমাদ ৬/৩৯১-৩৯২, বাইহাকী ৯/২৬৮)
আর বিদিত যে, ঐ সাক্ষ্য প্রদানকারী কিছু উম্মত তাঁর যুগেই মারা গিয়েছিল। অতএব একই কুরবানীতে কেউ নিজ মৃত পিতামাতা ও দাদা-দাদীকেও সওয়াবে শামিল করতে পারে।
মৃতব্যক্তির তরফ থেকে পৃথক কুরবানী করার কোন দলীল নেই। তবে করা যায়। যেহেতু কুরবানী করা এক প্রকার সদকাহ। আর মৃতের তরফ থেকে সদকাহ করা সিদ্ধ; যা যথাপ্রমাণিত এবং মৃতব্যক্তি তদ্বারা উপকৃতও হবে - ইনশাআল্লাহ। পরন্তু মৃতব্যক্তি এই - শ্রেণীর পুণ্যকর্মের মুখাপেক্ষীও থাকে।
যেমন, একটি কুরবানীকে নিজের তরফ থেকে না দিয়ে কেবলমাত্র মৃতের জন্য নির্দিষ্ট করা ঠিক নয় এবং এতে আল্লাহ তাআলার সীমাহীন করুণা থেকে বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়। বরং উচিত এই যে, নিজের নামের সহিত জীবিত-মৃত অন্যান্য আত্মীয়-পরিজনকে কুরবানীর নিয়তে শামিল করা। যেমন আল্লাহর নবী কুরবানী যবেহ করার সময় বলেছেন, 'হে আল্লাহ! এ (কুরবানী) মুহাম্মদের তরফ থেকে এবং মুহাম্মদের বংশধরের তরফ থেকে। সুতরাং তিনি নিজের নাম প্রথমে নিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে বংশধরদেরকেও তার সওয়াবে শরীক করেছেন।
পক্ষান্তরে মৃতব্যক্তি যদি তার এক তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে কাউকে কুরবানী করতে অসীয়ত করে যায়, অথবা কিছু ওয়াক্ফ করে তার অর্জিত অর্থ থেকে কুরবানীর অসীয়ত করে যায়, তবে অসীর জন্য তা কার্যকর করা ওয়াজেব। কুরবানী না করে ঐ অর্থ সদকাহ খাতে ব্যয় করা বৈধ নয়। কারণ, তা সুন্নাহর পরিপন্থী এবং অসিয়তের রূপান্তর। অন্যথা যদি কুরবানীর জন্য অসিয়তকৃত অর্থ সংকুলান না হয়, তাহলে দুই অথবা ততোধিক বছরের অর্থ একত্রিত করে কুরবানী দিতে হবে। অবশ্য নিজের তরফ থেকে বাকী অর্থ পূরণ করে কুরবানী করলে তা সর্বোত্তম। মোটকথা অসীর উচিত, সূক্ষ্মভাবে অসীয়ত কার্যকর করা এবং যাতে মৃত অসিয়তকারীর উপকার ও লাভ হয় তারই যথার্থ প্রয়াস করা।
জ্ঞাতব্য যে, রসূল (ﷺ) এ কর্তৃক আলী (রা:) কে কুরবানীর অসিয়ত করার হাদীস যয়ীফ। (যআদাঃ ৫৯৬নং, যতিঃ ২৫৫নং, যইমাঃ ৬৭২নং, মিঃ ১৪৬২নং হাদীসের টীকা দ্রঃ) পরন্তু নবীর নামে কুরবানী করা আমাদের জন্য বিধেয় নয়। তিনি ঈসালে সওয়াবের মুখাপেক্ষীও নন।
উল্লেখ্য যে, মুসাফির হলেও তার জন্য কুরবানী করা বিধেয়। আল্লাহর রসূল (ﷺ) মিনায় থাকাকালে নিজ স্ত্রীগণের তরফ থেকে গরু কুরবানী করেছেন। (বুখারী ২৯৪, ৫৫৪৮, মুসলিম ১৯৭৫নং, বাইহাকী ৯/২৯৫)
- পড়ুন: যুল হজ্জের তের দিন - PDF
1. অপরের দান বা সহযোগিতা নিয়ে হজ্জ বা কুরবানী করলে তা পালন হয়ে যাবে এবং দাতা ও কর্তা উভয়েই সওয়াবের অধিকারী হবে। ঋণ করে কুরবানী দেওয়া জরুরী নয়।