সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

কুরবানী কুরবানীর গোশত জরুরি ভিত্তিক তিন ভাগে বিভক্ত করে সমাজকে বিতরণ করতে দেওয়া

Abdul Qayyoom

Active member

Threads
26
Comments
42
Reactions
246
Credits
326
কিছু সমাজে জরুরি ভিত্তিক এমন নিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছে যে, তাদের গ্রামে বা সমাজে যারাই কুরবানী দিবে, তাদেরকে অবশ্যই তাদের কুরবানীর গোশত তিন ভাগে বিভক্ত করতে হবে। অতঃপর এক ভাগ যতক্ষণ সামাজে জমা না দেওয়া হয় ততক্ষণ তারা বাড়িতে গোশত নিয়ে যেতে পারবে না বা এই ধরণের অন্য নিয়ম।

প্রথমতঃ শরীয়া কুরবানীর গোশতকে তিন ভাগে বিভক্ত করা জরুরি করে নি। “তোমরা নিজে খাও, অপরকে খাওয়াও এবং জমা রাখ”। [বুখারী, আযাহী, নং ৫৫৬৯] এবং অন্য হাদীস “তোমরা নিজে খাও, জমা রাখ এবং দান কর”। [মুসলিম নং ১৯৭১] এই হাদীসদ্বয়ের মাধ্যমে কুরবানীর গোশতের খাত বুঝা যায়, তা আবশ্যিক ভাবে তিনভাগে বিভক্ত করা বুঝায় না।

দ্বিতীয়তঃ “অপরকে খাওয়াও বা সাদাকা কর” সম্বোধনটি প্রত্যেক কুরবানীদাতাকে উদ্দেশ্য করে করা হয়েছে; সমাজ নেতাদের নয়। তাই কুরবানী দাতা নিজে কুরবানীর গোশতের বণ্টন করবে-এটাই হাদীসের মর্ম। কিন্তু সমাজ বিতরণ করার দায়িত্ব নিলে তাদের জন্য এটা বৈধ; তবে জরুরি নয়।

এই সামাজিক নিয়মের সমস্যা হল, তারা জোরপূর্বক মানুষের কাছ থেকে কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক জমা দেয়ার নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়। অথচ সাদাকা ও দান আল্লাহর উদ্দেশ্যে খাঁটি মনে স্বেচ্ছায় না দিলে কবুল হয় না। অনুরূপ কারও কাছ থেকে কোনো কিছু জোরপূর্বক নেওয়া এবং তা দান করাও নিষেধ। তাই এই নিয়মে সাদাকা কারীর ইখলাস ও আন্তরিকতা থাকে না ‌বরং থাকে সামাজিকতার অবৈধ চাপ।

এই আবশ্যপালনীয় সামাজিক নিয়মের আর একটি সমস্যা হল, সমাজ যখন কুরবানীর গোশত জমা করে বিতরণ করে, তখন বিভিন্ন গ্রামের ফকির-মিসকিন উপস্থিত হয় এবং তাদের ভাগ্যে আসে দু-চার শ গ্রাম গোশত। তাই তাকে সেই দিনে আবারও ভিক্ষা করার ন্যায় ঘুরতে হয় পাঁ দশ গ্রাম। অথচ প্রত্যেক গ্রামে কুরবানীদাতা স্বয়ং যদি তার আশেপাশে বসবাসকারী পরিচিতদের দুই-চার জনকে গোশত বিতরণ করে এই ভাবে অন্যরাও বিতরণ করে তাহলে গ্রামের সকল অভাবীর বাসায় গোশত পৌঁছে যাবে। তাদেরকে সে দিন লজ্জা, কষ্ট, তিরষ্কার মাথায় নিয়ে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

আরো একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে যা আমরা অনেকে অনুভব করি না। তা হল, অনেকে একটি ছাগল বা একটি গরুর ভাগ কুরবানী দেয়। তারা খুব বেশী তো ৮/১০ কেচিরেরে গোশত পায়। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ বা আধা যদি সমাজিক নিয়মের কারণে তাদের দিতে হয়, তাহলে তার কাছে অবশিষ্ট থাকে ৫-৬ কে.জি.। এখন বাড়িতে-৭-৮ জন সদস্য সংখ্যা হলে অনুমান করুন তো তারা দু বেলা তৃপ্তি সহকারে গোশত খেতে পারবে কি? তারা নিজ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের দিতে পারবে কি? তাই এমন বহু লোক ভারাক্রান্ত মনে সমাজের নির্ধারিত অংশ জমা দিয়ে বাড়ি ফিরে। অথচ এই দিনগুলি পানাহারের দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “তাশরীকের দিনগুলি খান-পান ও আল্লাহর যিকরের দিন”। [মুসলিম, নং ১১৪১] তাই তারা প্রথমে আনন্দ করে খাবে এটা ঈদুল আযহার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। অতঃপর অন্যকেও দিবে। এমন লোক কুরবানী দাতা হলেও তাদের কুরবানীর গোশত হাদিয়া স্বরূপ দেওয়া উচিৎ।

লেখক: আব্দুর রাকীব মাদানী​
 
Top