‘ক্ষমা’ অর্থ- দোষ-ত্রুটি, অপরাধ মার্জনা করে দেওয়া। আলোচ্য প্রবন্ধে আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমাই উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল।
পবিত্র কুরআনের এই সুসংবাদ হ’তেই মানুষ তাঁর নিকট বিভিন্নভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তওবা করে, নিজের পিতা-মাতা, পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজন, সকল ঈমানদার মুমিন-মুসলমানদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। অবশ্য আল্লাহর নিকট প্রত্যেকেরই ক্ষমা প্রার্থনা করা অপরিহার্য কর্তব্য।
কারণ স্বয়ং আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন,
وَاسْتَغْفِرُوْا اللهَ إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ
‘তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর আল্লাহর কাছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (মুযযাম্মিল ৭৩/২০)। অন্যত্র সবার উদ্দেশ্যে তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ)-কে প্রত্যাদেশ করেন,
‘আর তুমি বল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর ও দয়া কর। বস্ত্ততঃ তুমিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু’ (মুমিনূন ২৩/১১৮)।
আল্লাহ তা‘আলা উপরের আয়াতদ্বয় দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে মানুষকে ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন। আবার পরোক্ষভাবেও ক্ষমা প্রার্থনার বহু সুসংবাদ বিদ্যমান।
মহান আল্লাহ বলেন,
‘যারা না দেখে তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার’ (মুলক ৬৭/১২)।
অন্য আয়াতে তিনি বলেন,
- ‘আকাশ ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই, তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (ফাতাহ ৪৮/১৪)।
প্রকৃত ক্ষমাপ্রার্থীকে আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করবেন। এই মর্মে তিনি বলেন,
- ‘অথচ আল্লাহ কখনো তাদের উপর শাস্তি নাযিল করবেন না যতক্ষণ তুমি (হে মুহাম্মাদ!) তাদের মধ্যে অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না যতক্ষণ তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে’ (আনফাল ৮/৩৩)। আর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
‘তুমি কাফিরদের বলে দাও যদি তারা বিরত হয় (ও ইসলাম কবুল করে), তাহ’লে তাদের ক্ষমা করা হবে, যা তারা ইতিপূর্বে করেছে’ (আনফাল ৮/৩৮)।
আল্লাহর নিকট একনিষ্ঠ চিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। কেননা আল্লাহ পাক কুরআনের প্রায় শতাধিক আয়াতে নিজেকে ক্ষমাশীল বলে ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
‘আমার বান্দাদের জানিয়ে দাও যে, নিশ্চয়ই আমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও অপরিসীম দয়ালু’ (হিজর ১৫/৪৯)। অন্য আয়াতে তিনি বলেন,
‘এরপরেও কি তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না (অর্থাৎ তওবা করবে না) ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? অথচ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (মায়েদাহ ৫/৭৪)। তিনি আরও বলেন,
‘নিশ্চয়ই তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৪৪)।
বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ অসীম। আল্লাহ বলেন,
‘বল, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ হ’তে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (যুমার ৩৯/৫৩)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
‘মানুষের যুলুম সত্ত্বেও তোমার পালনকর্তা তাদের প্রতি ক্ষমাশীল। আর নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে কঠোর’ (রা‘দ ১৩/৬)। তিনি আরও বলেন,
‘যারা বড় বড় গোনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে, ছোট-খাট অপরাধ করলেও নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত’ (নাজম ৫৩/৩২)।
ক্ষমাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ :
যারা নিজেদের সৎকর্মের কারণে আল্লাহর কাছে নিশ্চিত ক্ষমার অধিকারী হবে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
‘আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, নম্র পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, ছিয়াম পালনকারী পুরুষ ও নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আললাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান রেখেছেন’ (আহযাব ৩৩/৩৫)।
অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীন পরিব্যপ্ত। যা প্রস্ত্তত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য। যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা সর্বাবস্থায় (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করে, যারা ক্রোধ দমন করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।
যারা কখনো কোন অশ্লীল কাজ করলে কিংবা নিজের উপর কোন যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে। অতঃপর স্বীয় পাপসমূহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কে আছে? আর যারা জেনেশুনে স্বীয় কৃতকর্মের উপর হঠকারিতা প্রদর্শন করে না’ (আলে ইমরান ৩/১৩৩-১৩৫)।
মহান আল্লাহর দয়া, ক্ষমা, রহমত ও অনুগ্রহ প্রভৃতি সর্বজনবিদিত। তিনি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং তাঁর নিকট অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল মানুষ সমান ভালোবাসার পাত্র এবং সকলের প্রতি তিনি সমানভাবে ক্ষমাশীল। শুধু কর্মের কারণে পার্থক্য নিরূপিত হয়। তিনি বহু সদুপদেশ দ্বারা মানুষকে সৎ পথে আহবান জানিয়ে তাকে পুনঃ পুনঃ ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং মানুষকে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে।
পার্থিব জীবন খুবই সল্প এবং পরকালীন জীবন সুদীর্ঘ ও অনন্ত। এ সল্প সময়ের কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে আল্লাহ মানুষকে তাঁর দয়া ও ক্ষমার আশ্বাস দিয়েছেন। মানুষ পাপ করে ফেললে সে যেন নিরাশ না হয়। বরং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়।
মূলতঃ মানুষ একান্তভাবেই আল্লাহর প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসাবে ঘোষিত ও স্বীকৃত। তাদের মধ্যে আল্লাহ তাঁর মুমিন ও বিশ্বস্ত বান্দাদের ভালবাসেন। সুতরাং ফেরেশতারাও আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় মানুষকে ভালবাসে এবং তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে আল্লাহর নিকট মঙ্গল ও ক্ষমা প্রার্থনা করে। পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে অনেক প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করে, তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।
হে আমাদের পালনকর্তা! আর তাদেরকে দাখিল করুন চিরকাল বসবাসের জান্নাতে, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের বাপ-দাদা, পতি-পত্নী ও সন্তানদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আর আপনি তাদেরকে অমঙ্গল থেকে রক্ষা করুন। আপনি যাকে সেদিন অমঙ্গল থেকে রক্ষা করবেন, তার প্রতি অনুগ্রহই করবেন। এটাই মহাসাফল্য’ (মুমিন ৪০/৭-৯)।
আল্লাহর নিকট ফেরেশতাদের ক্ষমা প্রার্থনা কেবল সৎকর্মপরায়ণ ও মুমিন ব্যক্তিদের জন্য সমস্ত মানবকূলের জন্য নয়। কাজেই সৎকর্মপরায়ণ ও মুমিন হওয়ার জন্য অকৃত্রিম ইবাদতের কোন বিকল্প নেই। এই ইবাদত হ’ল মানব জাতির জন্য এ পৃথিবীতে পালনীয় বিধান। আর এ ইবাদত হ’ল ক্ষমার যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যম। যারা খালেছভাবে ইবাদত করে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিবেন।
কুরআন আল্লাহর কিতাব, যা মানব জাতির জন্য উপদেশমালা। এসব উপদেশমালা সেই সব মানুষের জন্য যারা সত্য, সুন্দর, সহজ-সরল শান্তিপ্রিয় জীবনে বিশ্বাসী। তবুও সমগ্র বিশ্ববাসীর জ্ঞান-গরিমা, বিবেক-বিবেচনা, চিন্তা-গবেষণা প্রভৃতির উন্মেষ ঘটানোর প্রয়াসে পবিত্র কুরআন উন্মুক্ত রয়েছে বিশ্ব দরবারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মাতৃভাষায় অনুদিত হয়েছে পবিত্র কুরআন। আমাদের মাতৃভাষা বাংলায়ও পবিত্র কুরআন অনুদিত হয়েছে। ফলে আল্লাহর ক্ষমার বিষয়গুলো সহজেই জানা সম্ভব হচ্ছে।
মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্বকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সৃষ্টির প্রথম হ’তেই যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ আগমন করেছেন। তাঁরা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী নিজ নিজ এলাকার মানুষকে হকের পথে দাওয়াত দিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। অবশেষে শেষ নবী ও রাসূল হিসাবে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর আগমন ঘটে। শুধু আরবের জন্য নয়; বরং সারা বিশ্বের জন্য তিনি নবী ও রাসূল হিসাবে প্রেরিত হন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য একমাত্র অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। স্বয়ং আল্লাহ তাঁর প্রতি পরম সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে নিজের খলীল উপাধিতে ভূষিত করেন (মুসলিম হা/২৩৮৩; মিশকাত হা/৬০১১)। অতঃপর মহাগ্রন্থ কুরআনের ধারক ও বাহক হিসাবে সমগ্র মানবজাতির পক্ষে তাঁর প্রতি জিবরীল (আঃ) কর্তৃক ধীরে ধীরে কুরআন নাযিল করেন।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘এ কিতাব, আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোয় বের করে আনতে পার, তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে তাঁর পথে যিনি শক্তিমান প্রশংসার্হ’ (ইবরাহীম ১৪/১)।
পবিত্র কুরআনে আদেশ হ’ল এক আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণ কর। আর রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর একনিষ্ঠ অনুসরণ কর। এ দু’টি বিষয়ই পবিত্র কুরআনে বিশেষভাবে উল্লিখিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে তাঁকেই একমাত্র উপাস্য হিসাবে তাঁর ইবাদত করার এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর অনুসরণের আদেশ করেছেন।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে রাসূলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহরই আনুগত্য করে’ (নিসা ৪/৮০)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক’ (হাশর ৫৯/৭)। মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, তবে তোমাদের কর্ম বিন্দুমাত্রও নিষ্ফল করা হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (হুজুরাত ৪৯/১৪)।
বস্ত্ততঃ আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভের জন্য তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর আনুগত্য ও অনুসরণ অপরিহার্য। এর কোন বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ বলেন,
- ‘তুমি বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহ’লে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন ও তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (আলে ইমরান ৩/৩১)।
মানুষের সৃষ্টিকর্তা কে? তাঁর শক্তির পরিমাণ কী? তাঁর ক্ষমতার সীমা কত? এ বিষয়গুলো চিন্তা করলে সমগ্র সৃষ্টির স্রষ্টা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস স্থাপনের পথ সুগম হবে। অতঃপর মহাজ্ঞানী আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুসন্ধান ও অনুধাবন করলে মানব সৃষ্টির প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে এবং ভয়ঙ্কর পরিণতি জানা যাবে।
অতঃপর মানব সৃষ্টির কারণ, নশ্বর পৃথিবীতে অবস্থান, কবর, ক্বিয়ামত, বিচার, জান্নাত ও জাহান্নাম, অবিনশ্বর জগত ইত্যাদির বিশদ বিবরণও পাওয়া যাবে পবিত্র কুরআনে। সুতরাং যারা আল্লাহর আনুগত্য করবে, তারা জান্নাতে স্থান পাবে। আর যারা আল্লাহর আনুগত্য করবে না তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
তাই জাহান্নামের শাস্তি হ’তে রক্ষার জন্যই মহান আল্লাহর ভয় প্রয়োজন। আল্লাহ তাঁর ভয়ে ভীত বান্দাকে ভালোবাসেন এজন্য তিনি বার বার তাদেরকে ভীতির আহবান জানিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তওবা ৯/১১৯)। ‘আমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব তোমরা আমাকে ভয় কর’ (নাহল ১৬/২)।
‘হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল’ (আহযাব ৩৩/৭০)। একই মর্মার্থে পুনরায় আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা আমাকে ভয় কর’ (মুমিনূন ২৩/৫২)।
অতঃপর যারা প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর ভয়ে ভীত হবে, তারা তাঁর পক্ষ থেকে অনেক কল্যাণ লাভ করবে এবং মুক্তির পথও পাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য মুক্তির পথ করে দেন’ (ত্বালাক ৬৫/২)। আল্লাহ আরও বলেন, যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন’ (ত্বালাক ৬৫/৪)।
প্রবৃত্তির তাড়নায় ও শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ সাধারণতঃ পাপ করে থাকে। আমাদের আদি পিতা আদম (আঃ)ও শয়তানের প্রতারণামূলক কথায়, আল্লাহর নির্দেশ ভুলে গিয়ে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেলেছিলেন।
অতঃপর আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়ার ভীতি ও কান্না বিজড়িত ক্ষমা প্রার্থনায় দয়াপরবশ হয়ে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং পরবর্তীতে এরূপ ভুল না করার জন্য সাবধান করে দেন। অতঃপর মানব জাতিকে দুনিয়ার বুকে ও পরকালে সুপ্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত করার জন্য তাঁর ক্ষমার ধারা বহাল রাখেন।
অর্থাৎ আদম (আঃ)-এর পরবর্তীকালেও মানুষ পাপ করে আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা বা তওবা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন বলে ঘোষণা করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা মন্দ কাজ করে ও এরপরে তওবা করে ও ঈমান আনে, নিশ্চয়ই তোমার প্রভু উক্ত তওবার পরে ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (আ‘রাফ ৭/১৫৩)।
মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা নিজের জীবনের প্রতি অবিচার করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে’ (নিসা ৪/১১০)। বস্ত্ততঃ ক্ষমা প্রার্থনা ইবাদত সমূহের অন্যতম।
তবে এ ক্ষমা প্রার্থনা অবশ্যই অকৃত্রিম হ’তে হবে। কারণ ক্ষমাই হ’ল মানবজাতির পবিত্রতা লাভের একমাত্র মাধ্যম। সুতরাং ক্ষমা ব্যতীত কোন পরহেযগার ব্যক্তিও আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছতে পারবে না। শুধু যারা তাদের ক্ষমা প্রার্থনায় ও জীবনের কর্মকান্ডে আল্লাহর পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হবে তারাই আল্লাহর নিকট ক্ষমা পাবে।
আল্লাহ বলেন, ‘নভোমন্ডল ও ভূখন্ডের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল পরম মেহেরবান’ (ফাতহ ৪৮/১৪)।
একই মর্মার্থে আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ)-কে বলেন, ‘তুমি কি জানো না যে, আল্লাহরই জন্য সকল রাজত্ব আসমান ও যমীনে। তিনি যাকে খুশী শাস্তি দেন ও যাকে খুশী ক্ষমা করেন। আর আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশালী’ (মায়েদাহ ৫/৪০)।
পৃথিবীর সকল মুমিন-মুমিনা ও নবী-রাসূলই তাঁদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। যেমন হযরত আদম (আঃ)-এর ভুলের ইতিহাস ও তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা, নূহ (আঃ)-এর ঘটনা ও তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা, মূসা (আঃ)-এর দুর্ঘটনা ও তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা, ইবরাহীম (আঃ)-এর ক্ষমা প্রার্থনা, ইউনুস (আঃ)-এর ক্ষমা প্রার্থনা প্রভৃতি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
পরিশেষে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষ ও শ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-কেও সেভাবে ক্ষমা প্রার্থনার আদেশ দিয়ে প্রত্যাদেশ করা হয়েছে।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
‘জেনে রাখো, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমা প্রার্থনা কর, তোমার ত্রুটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)। মহাবিজ্ঞ আল্লাহ নবী করীম (ﷺ)-কে একজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে তুলনা করে অহি প্রেরণ করেন,
‘বল, আমিও তোমাদের মতই মানুষ, আমার প্রতি অহী আসে যে, তোমাদের মা‘বূদ একমাত্র মা‘বূদ। অতএব তাঁর দিকেই দৃঢ় থাক এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর মুশরিকদের জন্যে রয়েছে দুর্ভোগ’ (হা-মীম সাজদা ৪১/৬)।
এ ক্ষমা আল্লাহর সন্তুষ্টি, ভালোবাসা ও করুণার বহিঃপ্রকাশ। যা সরাসরি জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম হ’তে বাঁচার মাধ্যম। ক্ষমাপ্রাপ্ত ও ক্ষমাবঞ্চিত উভয় দলের পরিণতির বর্ণনা দিয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন, ‘যারা ভাগ্যবান (ক্ষমাপ্রাপ্ত) তারা থাকবে জান্নাতে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে ততদিন পর্যন্ত যতদিন আকাশ ও পৃথিবী থাকবে, যদিনা তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা করেন। এ এক নিরিবচ্ছিন্ন পুরষ্কার’ (হূদ ১১/৮)।
যারা ক্ষমা বহির্ভূত তাদের সম্পর্কেও মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যারা হতভাগা হবে তারা জাহান্নামে থাকবে। সেখানে তারা চিৎকার ও আর্তনাদ করবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, যতদিন আসমান ও যমীন বর্তমান থাকবে। তবে তোমার প্রতিপালক যদি অন্য কিছু চান। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক যা চান তা করে থাকেন’ (হূদ ১১/১০৬-১০৭)।
পৃথিবীর জীবনের শেষে মৃত্যু ও কবর, অতঃপর এক সময় কিয়ামত হবে। কিয়ামত দিবস মানুষের বিচার দিবস, এ দিবসে মানুষের ভাল ও মন্দ কর্মের হিসাব ও বিচার হবে। এই বিচারের রায়েই সৌভাগ্যবানরা জান্নাতের উত্তরাধিকার হবে, পক্ষান্তরে হতভাগ্যদের জন্য জাহান্নামের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হবে।
যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ও কৃতজ্ঞ তারাই ক্ষমাপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসী ও অকৃতজ্ঞ তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা হিসাবে জাহান্নাম প্রস্ত্তত করা হয়েছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন, ‘আমি অকৃতজ্ঞ ছাড়া কাউকে শাস্তি দিই না’ (সাবা ৩৪/১৭)।
ক্ষমা বা মাগফিরাত লাভের কতিপয় উপায় :
পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করার অনেক উপায় বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি উপায় এখানে উল্লেখ করা হ’ল।-
১. ঈমান ও আমলে ছালেহের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা :
যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে, আল্লাহ তাদের ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের’ (ফাতহ ৪৮/২৯; মায়েদা ৫/৯)।
তিনি আরো বলেন,
‘অতএব যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা (অর্থাৎ জান্নাত)’ (হজ্জ ২২/৫০)। অন্যত্র তিনি বলেন,
‘আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার’ (ফাতির ৩৫/৭)।
এছাড়া কুরআন তেলাওয়াত ও শ্রবণের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি, আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল ও আল্লাহর রাস্তায় দান প্রভৃতি নেক আমলের মাধ্যমে ক্ষমা লাভ করা যায়। আল্লাহ বলেন,
‘নিশ্চয়ই মুমিন তারাই, যখন তাদের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন তাদের অন্তরসমূহ ভয়ে কেঁপে ওঠে। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। যারা সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে আমরা যে জীবিকা দান করেছি, তা থেকে খরচ করে, এরাই হ’ল সত্যিকারের মুমিন।
এদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে উচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক রূযী’ (আনফাল ৮/২-৪)। তিনি আরো বলেন,
‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর তিনি তোমাদের জন্য উহা বহু গুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী ধৈর্যশীল’ (তাগাবুন ৬৪/১৭)।
২. আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করা :
আল্লাহর ক্ষমা লাভের জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ বলেন,
‘আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (বাক্বারাহ ২/১৯৯; মুয্যাম্মিল ৭৩/২০)। তিনি আরো বলেন
,وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوْءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُوْرًا رَحِيْمًا
- ‘যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অবিচার করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে’ (নিসা ৪/১১০)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
‘ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার জন্য এবং মুমিন নর-নারীদের পাপের জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্বন্ধে অবগত আছেন’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)।
রাসূল (ﷺ) বলেন,
‘আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি দিনে সত্তর বারেরও বেশী আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই এবং তাঁর নিকট তওবা করি’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৩২৩)। অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
- ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা অপরাধ করে থাক রাতে-দিনে। আমি সমস্ত অপরাধ মাফ করে দেই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৬)। অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন,
‘আমাদের প্রতিপালক তাবারকা ওয়া তা‘আলা প্রত্যেক রাতের তিন ভাগের শেষ ভাগে (এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে) প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দিব। কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দিব’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১২২৩)।
অন্য হাদীসে রাসূল (ﷺ) বলেন,
‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতদিন তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার নিকট ক্ষমার আশা রাখবে আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন। আমি কারো পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব। আমি ক্ষমা করার ব্যাপারে কারো পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার দরবারে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কোন শরীক না করে আমার সামনে আস, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকটে উপস্থিত হব’ (তিরমিযী, হাদীস সহীহ, মিশকাত হা/২৩৩৬)।
৩. তওবা করা :
আল্লাহর ক্ষমা লাভের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পাপ করার পরই তাঁর নিকটে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করা। আল্লাহ বলেন,
- ‘তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও পাপ মোচন করেন’ (শূরা ৪২/২৫)। তিনি আরো বলেন,
‘এরপরেও কি তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না (অর্থাৎ তওবা করবে না) ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? অথচ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (মায়েদাহ ৫/৭৪)।
রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
- ‘তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর। কেননা আমি দৈনিক একশতবার তাঁর নিকট তওবা করি’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫)। তিনি আরো বলেন,
- ‘যখন বান্দা গোনাহ স্বীকার করে এবং অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে ক্ষমা চায় আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩০)।
অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন,
- ‘আল্লাহ তা‘আলা রাতে স্বীয় হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনের গোনাহগার যারা তারা তওবা করে। আবার দিনের বেলায় হাত প্রসারিত করেন যাতে রাতের গোনাহগার ব্যক্তিরা তওবা করে। এভাবে তিনি ক্ষমার হাত প্রসারিত করতে থাকবেন পশ্চিম দিকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৯)।
আরেকটি হাদীসে এসেছে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘কোন বান্দা অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি অপরাধ করেছি, তুমি তা ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, (হে আমার ফিরিশতাগণ!) আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দেন? (তোমরা সাক্ষী থাক) আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।
অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন ততদিন সে অপরাধ না করে থাকল। আবার অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি আবার অপরাধ করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দেন? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।
অতঃপর সে অপরাধ না করে থাকল যতদিন আল্লাহ চাইলেন। সে আবার অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি আবার আরেক অপরাধ করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দেন? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। সে যা ইচ্ছা করুক’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩৩)।
৪. তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করা :
আল্লাহর নির্দেশিত বিষয় প্রতিপালন ও নিষিদ্ধ বিষয় পরিহার করার মাধ্যমে তাক্বওয়া অর্জন করা, যা ক্ষমা লাভের অন্যতম উপায়। আল্লাহ বলেন,
‘হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহভীরু
হও, তাহ’লে তিনি তোমাদের জন্য সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার পথ বের করে দিবেন এবং এর ফলে তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন ও তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ হ’লেন মহা অনুগ্রহশীল’ (আনফাল ৮/২৯)।
অন্যত্র তিনি বলেন,
‘যারা দৃষ্টির অগোচরে তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার’ (মুলক ৬৭/১২)।
পরিশেষে বলব, আল্লাহ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল। মানুষ পাপ করার পর তাঁর নিকটে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করে দেন। আর এ ক্ষমা জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম। অতএব জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ ও জান্নাত লাভের জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে গোনাহ মাফের মাধ্যমে তা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দিন-আমীন!
পবিত্র কুরআনের এই সুসংবাদ হ’তেই মানুষ তাঁর নিকট বিভিন্নভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তওবা করে, নিজের পিতা-মাতা, পরিবারবর্গ, আত্মীয়-স্বজন, সকল ঈমানদার মুমিন-মুসলমানদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। অবশ্য আল্লাহর নিকট প্রত্যেকেরই ক্ষমা প্রার্থনা করা অপরিহার্য কর্তব্য।
কারণ স্বয়ং আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন,
وَاسْتَغْفِرُوْا اللهَ إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ
‘তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর আল্লাহর কাছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (মুযযাম্মিল ৭৩/২০)। অন্যত্র সবার উদ্দেশ্যে তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ)-কে প্রত্যাদেশ করেন,
وَقُلْ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
‘আর তুমি বল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর ও দয়া কর। বস্ত্ততঃ তুমিই শ্রেষ্ঠ দয়ালু’ (মুমিনূন ২৩/১১৮)।
আল্লাহ তা‘আলা উপরের আয়াতদ্বয় দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে মানুষকে ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন। আবার পরোক্ষভাবেও ক্ষমা প্রার্থনার বহু সুসংবাদ বিদ্যমান।
মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيْرٌ
‘যারা না দেখে তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার’ (মুলক ৬৭/১২)।
অন্য আয়াতে তিনি বলেন,
وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَغْفِرُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَنْ يَشَاءُ وَكَانَ اللهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
- ‘আকাশ ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই, তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (ফাতাহ ৪৮/১৪)।
প্রকৃত ক্ষমাপ্রার্থীকে আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমা করবেন। এই মর্মে তিনি বলেন,
وَمَا كَانَ اللهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيْهِمْ وَمَا كَانَ اللهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ
- ‘অথচ আল্লাহ কখনো তাদের উপর শাস্তি নাযিল করবেন না যতক্ষণ তুমি (হে মুহাম্মাদ!) তাদের মধ্যে অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না যতক্ষণ তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে’ (আনফাল ৮/৩৩)। আর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
قُلْ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوا إِنْ يَنْتَهُوْا يُغْفَرْ لَهُمْ مَا قَدْ سَلَفَ
‘তুমি কাফিরদের বলে দাও যদি তারা বিরত হয় (ও ইসলাম কবুল করে), তাহ’লে তাদের ক্ষমা করা হবে, যা তারা ইতিপূর্বে করেছে’ (আনফাল ৮/৩৮)।
আল্লাহর নিকট একনিষ্ঠ চিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। কেননা আল্লাহ পাক কুরআনের প্রায় শতাধিক আয়াতে নিজেকে ক্ষমাশীল বলে ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
نَبِّئْ عِبَادِيْ أَنِّي أَنَا الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
‘আমার বান্দাদের জানিয়ে দাও যে, নিশ্চয়ই আমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও অপরিসীম দয়ালু’ (হিজর ১৫/৪৯)। অন্য আয়াতে তিনি বলেন,
أَفَلَا يَتُوْبُوْنَ إِلَى اللهِ وَيَسْتَغْفِرُوْنَهُ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ
‘এরপরেও কি তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না (অর্থাৎ তওবা করবে না) ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? অথচ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (মায়েদাহ ৫/৭৪)। তিনি আরও বলেন,
إِنَّهُ كَانَ حَلِيْمًا غَفُوْرًا
‘নিশ্চয়ই তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৪৪)।
বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ অসীম। আল্লাহ বলেন,
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِيْنَ أَسْرَفُوْا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ
‘বল, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ হ’তে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (যুমার ৩৯/৫৩)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُوْ مَغْفِرَةٍ لِلنَّاسِ عَلَى ظُلْمِهِمْ وَإِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيْدُ الْعِقَابِ
‘মানুষের যুলুম সত্ত্বেও তোমার পালনকর্তা তাদের প্রতি ক্ষমাশীল। আর নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক শাস্তিদানে কঠোর’ (রা‘দ ১৩/৬)। তিনি আরও বলেন,
الَّذِيْنَ يَجْتَنِبُوْنَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ
‘যারা বড় বড় গোনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে, ছোট-খাট অপরাধ করলেও নিশ্চয়ই তোমার পালনকর্তার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত’ (নাজম ৫৩/৩২)।
ক্ষমাপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ :
যারা নিজেদের সৎকর্মের কারণে আল্লাহর কাছে নিশ্চিত ক্ষমার অধিকারী হবে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الْمُسْلِمِيْنَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِيْنَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِيْنَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِيْنَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِيْنَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِيْنَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِيْنَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِيْنَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِيْنَ اللهَ كَثِيْرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيْمًا،
‘আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, নম্র পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, ছিয়াম পালনকারী পুরুষ ও নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আললাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান রেখেছেন’ (আহযাব ৩৩/৩৫)।
অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন,
وَسَارِعُوْا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ، الَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِيْنَ الْغَيْظَ وَالْعَافِيْنَ عَنِ النَّاسِ وَاللهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ، وَالَّذِيْنَ إِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوْا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوْا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوْا لِذُنُوْبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا اللهُ وَلَمْ يُصِرُّوْا عَلَى مَا فَعَلُوْا وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ-
‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীন পরিব্যপ্ত। যা প্রস্ত্তত করা হয়েছে আল্লাহভীরুদের জন্য। যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা সর্বাবস্থায় (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করে, যারা ক্রোধ দমন করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।
যারা কখনো কোন অশ্লীল কাজ করলে কিংবা নিজের উপর কোন যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে। অতঃপর স্বীয় পাপসমূহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কে আছে? আর যারা জেনেশুনে স্বীয় কৃতকর্মের উপর হঠকারিতা প্রদর্শন করে না’ (আলে ইমরান ৩/১৩৩-১৩৫)।
মহান আল্লাহর দয়া, ক্ষমা, রহমত ও অনুগ্রহ প্রভৃতি সর্বজনবিদিত। তিনি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং তাঁর নিকট অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল মানুষ সমান ভালোবাসার পাত্র এবং সকলের প্রতি তিনি সমানভাবে ক্ষমাশীল। শুধু কর্মের কারণে পার্থক্য নিরূপিত হয়। তিনি বহু সদুপদেশ দ্বারা মানুষকে সৎ পথে আহবান জানিয়ে তাকে পুনঃ পুনঃ ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন। সুতরাং মানুষকে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে।
পার্থিব জীবন খুবই সল্প এবং পরকালীন জীবন সুদীর্ঘ ও অনন্ত। এ সল্প সময়ের কাজের বিভিন্ন পর্যায়ে আল্লাহ মানুষকে তাঁর দয়া ও ক্ষমার আশ্বাস দিয়েছেন। মানুষ পাপ করে ফেললে সে যেন নিরাশ না হয়। বরং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়।
মূলতঃ মানুষ একান্তভাবেই আল্লাহর প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসাবে ঘোষিত ও স্বীকৃত। তাদের মধ্যে আল্লাহ তাঁর মুমিন ও বিশ্বস্ত বান্দাদের ভালবাসেন। সুতরাং ফেরেশতারাও আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশায় মানুষকে ভালবাসে এবং তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে আল্লাহর নিকট মঙ্গল ও ক্ষমা প্রার্থনা করে। পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে অনেক প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করে, তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।
হে আমাদের পালনকর্তা! আর তাদেরকে দাখিল করুন চিরকাল বসবাসের জান্নাতে, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের বাপ-দাদা, পতি-পত্নী ও সন্তানদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আর আপনি তাদেরকে অমঙ্গল থেকে রক্ষা করুন। আপনি যাকে সেদিন অমঙ্গল থেকে রক্ষা করবেন, তার প্রতি অনুগ্রহই করবেন। এটাই মহাসাফল্য’ (মুমিন ৪০/৭-৯)।
আল্লাহর নিকট ফেরেশতাদের ক্ষমা প্রার্থনা কেবল সৎকর্মপরায়ণ ও মুমিন ব্যক্তিদের জন্য সমস্ত মানবকূলের জন্য নয়। কাজেই সৎকর্মপরায়ণ ও মুমিন হওয়ার জন্য অকৃত্রিম ইবাদতের কোন বিকল্প নেই। এই ইবাদত হ’ল মানব জাতির জন্য এ পৃথিবীতে পালনীয় বিধান। আর এ ইবাদত হ’ল ক্ষমার যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যম। যারা খালেছভাবে ইবাদত করে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দিবেন।
কুরআন আল্লাহর কিতাব, যা মানব জাতির জন্য উপদেশমালা। এসব উপদেশমালা সেই সব মানুষের জন্য যারা সত্য, সুন্দর, সহজ-সরল শান্তিপ্রিয় জীবনে বিশ্বাসী। তবুও সমগ্র বিশ্ববাসীর জ্ঞান-গরিমা, বিবেক-বিবেচনা, চিন্তা-গবেষণা প্রভৃতির উন্মেষ ঘটানোর প্রয়াসে পবিত্র কুরআন উন্মুক্ত রয়েছে বিশ্ব দরবারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মাতৃভাষায় অনুদিত হয়েছে পবিত্র কুরআন। আমাদের মাতৃভাষা বাংলায়ও পবিত্র কুরআন অনুদিত হয়েছে। ফলে আল্লাহর ক্ষমার বিষয়গুলো সহজেই জানা সম্ভব হচ্ছে।
মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্বকে সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সৃষ্টির প্রথম হ’তেই যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ আগমন করেছেন। তাঁরা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী নিজ নিজ এলাকার মানুষকে হকের পথে দাওয়াত দিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। অবশেষে শেষ নবী ও রাসূল হিসাবে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর আগমন ঘটে। শুধু আরবের জন্য নয়; বরং সারা বিশ্বের জন্য তিনি নবী ও রাসূল হিসাবে প্রেরিত হন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য একমাত্র অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। স্বয়ং আল্লাহ তাঁর প্রতি পরম সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে নিজের খলীল উপাধিতে ভূষিত করেন (মুসলিম হা/২৩৮৩; মিশকাত হা/৬০১১)। অতঃপর মহাগ্রন্থ কুরআনের ধারক ও বাহক হিসাবে সমগ্র মানবজাতির পক্ষে তাঁর প্রতি জিবরীল (আঃ) কর্তৃক ধীরে ধীরে কুরআন নাযিল করেন।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘এ কিতাব, আমি তোমার উপর অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোয় বের করে আনতে পার, তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে তাঁর পথে যিনি শক্তিমান প্রশংসার্হ’ (ইবরাহীম ১৪/১)।
পবিত্র কুরআনে আদেশ হ’ল এক আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আত্মসমর্পণ কর। আর রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর একনিষ্ঠ অনুসরণ কর। এ দু’টি বিষয়ই পবিত্র কুরআনে বিশেষভাবে উল্লিখিত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে তাঁকেই একমাত্র উপাস্য হিসাবে তাঁর ইবাদত করার এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর অনুসরণের আদেশ করেছেন।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে রাসূলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহরই আনুগত্য করে’ (নিসা ৪/৮০)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক’ (হাশর ৫৯/৭)। মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, তবে তোমাদের কর্ম বিন্দুমাত্রও নিষ্ফল করা হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (হুজুরাত ৪৯/১৪)।
বস্ত্ততঃ আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভের জন্য তাঁর প্রিয় হাবীব মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর আনুগত্য ও অনুসরণ অপরিহার্য। এর কোন বিকল্প নেই। মহান আল্লাহ বলেন,
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ
- ‘তুমি বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহ’লে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন ও তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (আলে ইমরান ৩/৩১)।
মানুষের সৃষ্টিকর্তা কে? তাঁর শক্তির পরিমাণ কী? তাঁর ক্ষমতার সীমা কত? এ বিষয়গুলো চিন্তা করলে সমগ্র সৃষ্টির স্রষ্টা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস স্থাপনের পথ সুগম হবে। অতঃপর মহাজ্ঞানী আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুসন্ধান ও অনুধাবন করলে মানব সৃষ্টির প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে এবং ভয়ঙ্কর পরিণতি জানা যাবে।
অতঃপর মানব সৃষ্টির কারণ, নশ্বর পৃথিবীতে অবস্থান, কবর, ক্বিয়ামত, বিচার, জান্নাত ও জাহান্নাম, অবিনশ্বর জগত ইত্যাদির বিশদ বিবরণও পাওয়া যাবে পবিত্র কুরআনে। সুতরাং যারা আল্লাহর আনুগত্য করবে, তারা জান্নাতে স্থান পাবে। আর যারা আল্লাহর আনুগত্য করবে না তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।
তাই জাহান্নামের শাস্তি হ’তে রক্ষার জন্যই মহান আল্লাহর ভয় প্রয়োজন। আল্লাহ তাঁর ভয়ে ভীত বান্দাকে ভালোবাসেন এজন্য তিনি বার বার তাদেরকে ভীতির আহবান জানিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তওবা ৯/১১৯)। ‘আমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব তোমরা আমাকে ভয় কর’ (নাহল ১৬/২)।
‘হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল’ (আহযাব ৩৩/৭০)। একই মর্মার্থে পুনরায় আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তোমরা আমাকে ভয় কর’ (মুমিনূন ২৩/৫২)।
অতঃপর যারা প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর ভয়ে ভীত হবে, তারা তাঁর পক্ষ থেকে অনেক কল্যাণ লাভ করবে এবং মুক্তির পথও পাবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য মুক্তির পথ করে দেন’ (ত্বালাক ৬৫/২)। আল্লাহ আরও বলেন, যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন’ (ত্বালাক ৬৫/৪)।
প্রবৃত্তির তাড়নায় ও শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ সাধারণতঃ পাপ করে থাকে। আমাদের আদি পিতা আদম (আঃ)ও শয়তানের প্রতারণামূলক কথায়, আল্লাহর নির্দেশ ভুলে গিয়ে নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ফেলেছিলেন।
অতঃপর আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়ার ভীতি ও কান্না বিজড়িত ক্ষমা প্রার্থনায় দয়াপরবশ হয়ে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং পরবর্তীতে এরূপ ভুল না করার জন্য সাবধান করে দেন। অতঃপর মানব জাতিকে দুনিয়ার বুকে ও পরকালে সুপ্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত করার জন্য তাঁর ক্ষমার ধারা বহাল রাখেন।
অর্থাৎ আদম (আঃ)-এর পরবর্তীকালেও মানুষ পাপ করে আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা বা তওবা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন বলে ঘোষণা করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা মন্দ কাজ করে ও এরপরে তওবা করে ও ঈমান আনে, নিশ্চয়ই তোমার প্রভু উক্ত তওবার পরে ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (আ‘রাফ ৭/১৫৩)।
মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা নিজের জীবনের প্রতি অবিচার করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে’ (নিসা ৪/১১০)। বস্ত্ততঃ ক্ষমা প্রার্থনা ইবাদত সমূহের অন্যতম।
তবে এ ক্ষমা প্রার্থনা অবশ্যই অকৃত্রিম হ’তে হবে। কারণ ক্ষমাই হ’ল মানবজাতির পবিত্রতা লাভের একমাত্র মাধ্যম। সুতরাং ক্ষমা ব্যতীত কোন পরহেযগার ব্যক্তিও আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছতে পারবে না। শুধু যারা তাদের ক্ষমা প্রার্থনায় ও জীবনের কর্মকান্ডে আল্লাহর পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হবে তারাই আল্লাহর নিকট ক্ষমা পাবে।
আল্লাহ বলেন, ‘নভোমন্ডল ও ভূখন্ডের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল পরম মেহেরবান’ (ফাতহ ৪৮/১৪)।
একই মর্মার্থে আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ)-কে বলেন, ‘তুমি কি জানো না যে, আল্লাহরই জন্য সকল রাজত্ব আসমান ও যমীনে। তিনি যাকে খুশী শাস্তি দেন ও যাকে খুশী ক্ষমা করেন। আর আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাশালী’ (মায়েদাহ ৫/৪০)।
পৃথিবীর সকল মুমিন-মুমিনা ও নবী-রাসূলই তাঁদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। যেমন হযরত আদম (আঃ)-এর ভুলের ইতিহাস ও তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা, নূহ (আঃ)-এর ঘটনা ও তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা, মূসা (আঃ)-এর দুর্ঘটনা ও তাঁর ক্ষমা প্রার্থনা, ইবরাহীম (আঃ)-এর ক্ষমা প্রার্থনা, ইউনুস (আঃ)-এর ক্ষমা প্রার্থনা প্রভৃতি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।
পরিশেষে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষ ও শ্রেষ্ঠ রাসূল মুহাম্মাদ (ﷺ)-কেও সেভাবে ক্ষমা প্রার্থনার আদেশ দিয়ে প্রত্যাদেশ করা হয়েছে।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ
‘জেনে রাখো, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমা প্রার্থনা কর, তোমার ত্রুটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)। মহাবিজ্ঞ আল্লাহ নবী করীম (ﷺ)-কে একজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে তুলনা করে অহি প্রেরণ করেন,
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوْحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَاسْتَقِيْمُوْا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوْهُ وَوَيْلٌ لِلْمُشْرِكِيْنَ
‘বল, আমিও তোমাদের মতই মানুষ, আমার প্রতি অহী আসে যে, তোমাদের মা‘বূদ একমাত্র মা‘বূদ। অতএব তাঁর দিকেই দৃঢ় থাক এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর মুশরিকদের জন্যে রয়েছে দুর্ভোগ’ (হা-মীম সাজদা ৪১/৬)।
এ ক্ষমা আল্লাহর সন্তুষ্টি, ভালোবাসা ও করুণার বহিঃপ্রকাশ। যা সরাসরি জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম হ’তে বাঁচার মাধ্যম। ক্ষমাপ্রাপ্ত ও ক্ষমাবঞ্চিত উভয় দলের পরিণতির বর্ণনা দিয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন, ‘যারা ভাগ্যবান (ক্ষমাপ্রাপ্ত) তারা থাকবে জান্নাতে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে ততদিন পর্যন্ত যতদিন আকাশ ও পৃথিবী থাকবে, যদিনা তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা করেন। এ এক নিরিবচ্ছিন্ন পুরষ্কার’ (হূদ ১১/৮)।
যারা ক্ষমা বহির্ভূত তাদের সম্পর্কেও মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর যারা হতভাগা হবে তারা জাহান্নামে থাকবে। সেখানে তারা চিৎকার ও আর্তনাদ করবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে, যতদিন আসমান ও যমীন বর্তমান থাকবে। তবে তোমার প্রতিপালক যদি অন্য কিছু চান। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক যা চান তা করে থাকেন’ (হূদ ১১/১০৬-১০৭)।
পৃথিবীর জীবনের শেষে মৃত্যু ও কবর, অতঃপর এক সময় কিয়ামত হবে। কিয়ামত দিবস মানুষের বিচার দিবস, এ দিবসে মানুষের ভাল ও মন্দ কর্মের হিসাব ও বিচার হবে। এই বিচারের রায়েই সৌভাগ্যবানরা জান্নাতের উত্তরাধিকার হবে, পক্ষান্তরে হতভাগ্যদের জন্য জাহান্নামের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হবে।
যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ও কৃতজ্ঞ তারাই ক্ষমাপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসী ও অকৃতজ্ঞ তাদের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা হিসাবে জাহান্নাম প্রস্ত্তত করা হয়েছে। সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন, ‘আমি অকৃতজ্ঞ ছাড়া কাউকে শাস্তি দিই না’ (সাবা ৩৪/১৭)।
ক্ষমা বা মাগফিরাত লাভের কতিপয় উপায় :
পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করার অনেক উপায় বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি উপায় এখানে উল্লেখ করা হ’ল।-
১. ঈমান ও আমলে ছালেহের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা :
যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে, আল্লাহ তাদের ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
وَعَدَ اللهُ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيْمًا
‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের’ (ফাতহ ৪৮/২৯; মায়েদা ৫/৯)।
তিনি আরো বলেন,
فَالَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ ورزق كريم
‘অতএব যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা (অর্থাৎ জান্নাত)’ (হজ্জ ২২/৫০)। অন্যত্র তিনি বলেন,
وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَّأَجْرٌ كَبِيْرٌ
‘আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করে, তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার’ (ফাতির ৩৫/৭)।
এছাড়া কুরআন তেলাওয়াত ও শ্রবণের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি, আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল ও আল্লাহর রাস্তায় দান প্রভৃতি নেক আমলের মাধ্যমে ক্ষমা লাভ করা যায়। আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِيْنَ إِذَا ذُكِرَ اللهُ وَجِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيْمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُوْنَ، الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلاَةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ، أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُوْنَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيْمٌ-
‘নিশ্চয়ই মুমিন তারাই, যখন তাদের নিকট আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন তাদের অন্তরসমূহ ভয়ে কেঁপে ওঠে। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। যারা সালাত কায়েম করে এবং তাদেরকে আমরা যে জীবিকা দান করেছি, তা থেকে খরচ করে, এরাই হ’ল সত্যিকারের মুমিন।
এদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে উচ্চ মর্যাদা, ক্ষমা ও সম্মানজনক রূযী’ (আনফাল ৮/২-৪)। তিনি আরো বলেন,
إِنْ تُقْرِضُوا اللهَ قَرْضًا حَسَنًا يُضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ شَكُوْرٌ حَلِيْمٌ
‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর তিনি তোমাদের জন্য উহা বহু গুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী ধৈর্যশীল’ (তাগাবুন ৬৪/১৭)।
২. আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করা :
আল্লাহর ক্ষমা লাভের জন্য তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ বলেন,
وَاسْتَغْفِرُوا اللهَ إِنَّ اللهَ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ
‘আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (বাক্বারাহ ২/১৯৯; মুয্যাম্মিল ৭৩/২০)। তিনি আরো বলেন
,وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوْءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُوْرًا رَحِيْمًا
- ‘যে কেউ দুষ্কর্ম করে অথবা স্বীয় জীবনের প্রতি অবিচার করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী হয়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে’ (নিসা ৪/১১০)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ.
‘ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার জন্য এবং মুমিন নর-নারীদের পাপের জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্বন্ধে অবগত আছেন’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)।
রাসূল (ﷺ) বলেন,
وَاللهِ إِنِّيْ لَأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ فِي الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سبعيْنَ مرَّةً.
‘আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি দিনে সত্তর বারেরও বেশী আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই এবং তাঁর নিকট তওবা করি’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৩২৩)। অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا عِبَادِيْ إِنَّكُمْ تُخْطِئُوْنَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعًا فَاسْتَغْفِرُوْنِيْ أَغْفِرْ لَكُمْ
- ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা অপরাধ করে থাক রাতে-দিনে। আমি সমস্ত অপরাধ মাফ করে দেই। সুতরাং তোমরা আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৬)। অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন,
يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، حِيْنَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ، يَقُوْلُ مَنْ يَدْعُوْنِيْ فَأَسْتَجِيْبَ لَهُ، مَنْ يَسْأَلُنِيْ فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِيْ فَأَغْفِرَ لَهُ-
‘আমাদের প্রতিপালক তাবারকা ওয়া তা‘আলা প্রত্যেক রাতের তিন ভাগের শেষ ভাগে (এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে) প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আমার কাছে কিছু চাইবে আমি তাকে তা দিব। কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দিব’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১২২৩)।
অন্য হাদীসে রাসূল (ﷺ) বলেন,
قَالَ الله تَعَالَى يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ مَا دَعَوْتَنِيْ وَرَجَوْتَنِيْ غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ مِنْكَ وَلاَ أُبَالِي. يَا ابْنَ آدَمَ، لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوْبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ، ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِيْ غَفَرْتُ لَكَ وَلاَ أُبَالِيْ. يَا ابْنَ آدَمَ، إِنَّكَ لَوْ أتَيْتَنِيْ بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا، ثُمَّ لَقِيْتَنِيْ لاَ تُشْرِكْ بِيْ شَيْئاً، لأَتَيْتُكَ بقُرَابِهَا مَغْفِرَةً-
‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতদিন তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার নিকট ক্ষমার আশা রাখবে আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন। আমি কারো পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব। আমি ক্ষমা করার ব্যাপারে কারো পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার দরবারে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কোন শরীক না করে আমার সামনে আস, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকটে উপস্থিত হব’ (তিরমিযী, হাদীস সহীহ, মিশকাত হা/২৩৩৬)।
৩. তওবা করা :
আল্লাহর ক্ষমা লাভের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পাপ করার পরই তাঁর নিকটে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করা। আল্লাহ বলেন,
وَهُوَ الَّذِيْ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَعْفُو عَنِ السَّيِّئَاتِ
- ‘তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও পাপ মোচন করেন’ (শূরা ৪২/২৫)। তিনি আরো বলেন,
أَفَلاَ يَتُوْبُوْنَ إِلَى اللهِ وَيَسْتَغْفِرُوْنَهُ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ
‘এরপরেও কি তারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে না (অর্থাৎ তওবা করবে না) ও তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? অথচ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (মায়েদাহ ৫/৭৪)।
রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
تُوْبُوْا إِلَى اللهِ فَإِنِّيْ أَتُوْبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ
- ‘তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর। কেননা আমি দৈনিক একশতবার তাঁর নিকট তওবা করি’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫)। তিনি আরো বলেন,
فَإِنَّ الْعَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ
- ‘যখন বান্দা গোনাহ স্বীকার করে এবং অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে ক্ষমা চায় আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩০)।
অন্যত্র রাসূল (ﷺ) বলেন,
إنَّ الله تَعَالَى يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوْبَ مُسِيْئ النَّهَارِ، ويَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوْبَ مُسِيْئ اللَّيْلِ، حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا
- ‘আল্লাহ তা‘আলা রাতে স্বীয় হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনের গোনাহগার যারা তারা তওবা করে। আবার দিনের বেলায় হাত প্রসারিত করেন যাতে রাতের গোনাহগার ব্যক্তিরা তওবা করে। এভাবে তিনি ক্ষমার হাত প্রসারিত করতে থাকবেন পশ্চিম দিকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৯)।
আরেকটি হাদীসে এসেছে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘কোন বান্দা অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি অপরাধ করেছি, তুমি তা ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, (হে আমার ফিরিশতাগণ!) আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দেন? (তোমরা সাক্ষী থাক) আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।
অতঃপর আল্লাহ যতদিন চাইলেন ততদিন সে অপরাধ না করে থাকল। আবার অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি আবার অপরাধ করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দেন? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।
অতঃপর সে অপরাধ না করে থাকল যতদিন আল্লাহ চাইলেন। সে আবার অপরাধ করল এবং বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমি আবার আরেক অপরাধ করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন প্রতিপালক আছেন, যিনি অপরাধ ক্ষমা করেন অথবা অপরাধের কারণে শাস্তি দেন? আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। সে যা ইচ্ছা করুক’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩৩)।
৪. তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করা :
আল্লাহর নির্দেশিত বিষয় প্রতিপালন ও নিষিদ্ধ বিষয় পরিহার করার মাধ্যমে তাক্বওয়া অর্জন করা, যা ক্ষমা লাভের অন্যতম উপায়। আল্লাহ বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ
‘হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহভীরু
হও, তাহ’লে তিনি তোমাদের জন্য সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করার পথ বের করে দিবেন এবং এর ফলে তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন ও তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ হ’লেন মহা অনুগ্রহশীল’ (আনফাল ৮/২৯)।
অন্যত্র তিনি বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَيْبِ لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيْرٌ
‘যারা দৃষ্টির অগোচরে তাদের প্রতিপালককে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার’ (মুলক ৬৭/১২)।
পরিশেষে বলব, আল্লাহ তা‘আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল। মানুষ পাপ করার পর তাঁর নিকটে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করে দেন। আর এ ক্ষমা জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম। অতএব জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ ও জান্নাত লাভের জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে গোনাহ মাফের মাধ্যমে তা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দিন-আমীন!
সূত্র: আত-তাহরীক।