‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রশ্নোত্তর কুরআন তিলাওয়াতের জন্য লোক ভাড়া করা হয়, কুরআন তিলাওয়াত করে বিনিময় গ্রহণ করা কি বৈধ ?

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,137
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
34,856
Credits
24,212
প্রশ্ন : আমরা কতক মুসলিম দেশে দেখি, কুরআন তিলাওয়াতের জন্য লোক ভাড়া করা হয়, কুরআন তিলাওয়াত করে বিনিময় গ্রহণ করা কি বৈধ ? বিনিময় দাতা কি এ জন্য গোনাহগার হবে ?


উত্তর : কুরআন তিলাওয়াত একটি খালেস ইবাদাত। মুসলিমগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও সাওয়াবের আশায় তা সম্পাদন করবে, এসব ইবাদাতের মূল নীতিও তাই, এ জন্য কারো থেকে বিনিময় গ্রহণ বা কারো কৃতজ্ঞতা আদায় করা যাবে না। সালাফ তথা আমাদের আদর্শ মনীষীদের থেকে প্রমাণিত নয় যে, তারা মৃত ব্যক্তি, অলিমা অথবা অন্য কোন অনুষ্ঠানে কুরআন তিলাওয়াতের জন্য কাউকে ভাড়া করেছেন, অথবা তারা এর নির্দেশ দিয়েছেন কিংবা এর অনুমতি প্রদান করেছেন, অথবা তারা কেউ কুরআন তিলাওয়াত করে বিনিময় গ্রহণ করেছেন, বরং তারা আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশায় তিলাওয়াত করতেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নির্দেশ দিয়েছেন, যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে, সে যেন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে। তিনি মানুষের নিকট প্রার্থনা থেকে সতর্ক করেছেন। সাহাবি ইমরান বিন হাসিন থেকে ইমাম তিরমিযি তার সুনান গ্রন্থে বর্ণনা করেন :


عن عمران بن حصين أنه مر على قاص يقرأ ثم سأل؛ فاسترجع ثم قال‏:‏ سمعت رسول الله ـ صلى الله عليه وسلم ـ يقول‏:‏ "من قرأ القرآن فليسأل الله به، فإنه سيجيء أقوام يقرؤون القرآن يسألون به الناس"


ইমরান ইবন হুস়াইন এক গল্পকারের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, যে তিলাওয়াত করে করে মানুষের নিকট প্রার্থনা করত। তিনি এ দৃশ্য থেকে ইন্নালিল্লাহ পড়লেন। অতঃপর বললেন : আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শোনেছি :


“যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে, সে যেন তার ওসিলা দিয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে, কারণ অতিসত্বর এমন এক দল আভির্ভূত হবে, যারা কুরআন তিলাওয়াত করবে আর তার ওসিলা দিয়ে মানুষের নিকট প্রার্থনা করবে।” [আহমদ : ৪/৪৩২-৪৩৩, ৪৩৬-৪৩৭, ৪৩৯, ৪৪৫, তিরমিযি : ৫/১৭৯, হাদিস নং : (২৯১৭), ইবনে আবি শায়বাহ : ১০/৪৮০, তাবরানি : ১৮/১৬৬-১৬৭, হাদিস নং : (৩৭০-৩৭৪), বাগাভী : ৪/৪৪১, হাদিস নং : (১১৮৩)]


তবে যেসব অবস্থায় তিলাওয়াতকারী ব্যতীত অপরের নিকটও কুরআনের উপকারিতা পৌঁছয়, সেসব অবস্থায় বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ, যেমন কুরআন শিক্ষা দেয়া অথবা কুরআনের মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক করা ইত্যাদি। বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত, সাহাবি আবু সাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এক পাল বকরী গ্রহণ করেছিলেন সূরা ফাতিহা দ্বারা এক ব্যক্তিকে ঝাড়-ফূঁক করে, যাকে বিষাক্ত কীট দংশন করে ছিল। সাহাবি সাহল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক মেয়েকে জনৈক ব্যক্তির নিকট এ শর্তে বিয়ে দেন যে, সে তার নিকট রক্ষিত কুরআন মেয়েকে শিক্ষা দেবে। [আহমদ : (৫/৩৩৬), বুখারি : হাদিস নং : (২৩১০), (৫০২৯), (৫০৩০), (৫০৮৭), (৫১২১), (৫১২৬), (৫১৩২), (৫১৩৫), (৫১৪১), (৫৮৭১), (৭৪১৭)] অতএব, শুধু তিলাওয়াতের বিনিময় গ্রহণ করা অথবা তিলাওয়াতের জন্য কোন দল ভাড়া করা আদর্শ মনীষীদের রীতি ও সুন্নতের খিলাফ।


দ্বিতীয়ত : উপদেশ গ্রহণ ও আখেরাত স্মরণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কবর যিয়ারত করতেন। তিনি নিজ পরিবারের মুসলিমদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করতেন, তাদের জন্য ‘আফিয়াত তথা নিরাপত্তা প্রার্থনা করতেন। তিনি সাহাবাদের শিক্ষা দিতেন, যেন তারা কবর যিয়ারতের সময় বলে :


‏السلام عليكم اهل الديار من المؤمنين والمسلمين، وانا ان شاء الله بكم لاحقون، نسال الله لنا ولكم العافية‏


“হে কবরবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ, তোমাদের উপর সালাম, ইনশাআল্লাহ আমরা অতিসত্বর তোমাদের সাথে মিলিত হবো, আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য ও তোমাদের জন্য নিরাপত্তার প্রার্থনা করছি।” [ইবনে মাজাহ: ১৫৩৬] আমাদের জানা মতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরআন তিলাওয়াত করে মৃত ব্যক্তিদের ঈসালে সাওয়াব করেন নি। অথচ তিনি অধিক কবর যিয়ারত করতেন। তিনি ছিলেন মুমিনদের উপর দয়ালু ও মেহেরবান। আর আল্লাহই ভালো জানেন।


সূত্র : اللجنة الدائمة للبحوث العلمية والافتا [আল-লাজনাতুদ দায়েমাহ্ লিল বুহুসিল ইলমিয়াহ ওয়াল ইফতা] “ইলমি গবেষণা ও ফতোয়ার স্থায়ী পরিষদ”


সংকলক: শাইখ মুহা: আব্দুল্লাহ আল কাফী
 

Share this page