সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

হাদিস ও হাদিসের ব্যাখ্যা ঈমান, ইসলাম ও ইহসান সম্পর্কে জিবরীল আলাইহিস সালামের প্রশ্ন

Abdul fattah

Well-known member

Threads
51
Comments
53
Reactions
383
Credits
571
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনসমক্ষে বসা ছিলেন। এমন সময় তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করলেন ‘ঈমান কী?’ তিনি বললেন, ‘ঈমান হলো, আপনি বিশ্বাস রাখবেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, (কিয়ামতের দিন) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি। আপনি আরো বিশ্বাস রাখবেন পুনরুত্থানের প্রতি।’ তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইসলাম কী?’ তিনি বললেন, ‘ইসলাম হলো, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করবেন না, সালাত কায়েম করবেন, ফরয যাকাত আদায় করবেন এবং রমযানের সাওম পালন করবেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইহসান কী?’ তিনি বললেন, ‘আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (বিশ্বাস রাখবেন যে,) তিনি আপনাকে দেখছেন।’ ঐ ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কিয়ামত কবে হবে?’ তিনি বললেন, ‘এ ব্যাপারে যাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, তিনি জিজ্ঞাসাকারী অপেক্ষা বেশি জানেন না। তবে আমি আপনাকে কিয়ামতের আলামতসমূহ বলে দিচ্ছি, বাঁদী যখন তার প্রভুকে প্রসব করবে এবং উটের নগণ্য রাখালেরা যখন বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। (কিয়ামতের বিষয়) সেই পাঁচটি জিনিসের অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’ এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াতটি শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَارِزًا يَوْمًا لِلنَّاسِ، فَأَتَاهُ رجلٌ فَقَالَ: مَا الإِيمَانُ؟ قَالَ: «الإِيمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللَّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَبِلِقَائِهِ، وَرُسُلِهِ وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ». قَالَ: مَا الإِسْلاَمُ؟ قَالَ: " الإِسْلاَمُ: أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ، وَلاَ تُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ، وَتُؤَدِّيَ الزَّكَاةَ المَفْرُوضَةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ ". قَالَ: مَا الإِحْسَانُ؟ قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»، قَالَ: مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ: " مَا المَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ، وَسَأُخْبِرُكَ عَنْ أَشْرَاطِهَا: إِذَا وَلَدَتِ الأَمَةُ رَبَّهَا، وَإِذَا تَطَاوَلَ رُعَاةُ الإِبِلِ البُهْمُ فِي البُنْيَانِ، فِي خَمْسٍ لاَ يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا اللَّهُ " ثُمَّ تَلاَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ﴿إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ﴾ [لقمان: ٣٤] ، ثُمَّ أَدْبَرَ فَقَالَ: «رُدُّوهُ» فَلَمْ يَرَوْا شَيْئًا، فَقَالَ: «هَذَا جِبْرِيلُ جَاءَ يُعَلِّمُ النَّاسَ دِينَهُمْ».​

“কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহই নিকট।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪]।

﴿إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ﴾ [لقمان: ٣٤]

এরপর ঐ ব্যক্তি চলে গেলে তিনি বললেন, ‘তোমরা তাকে ফিরিয়ে আনো।’ তারা কিছুই দেখতে পেল না। তখন তিনি বললেন, ‘ইনি জিবরীল আলাইহিস সালাম। লোকদের দীন শেখাতে এসেছিলেন”।

মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯।



عَنْ عُمَر بْن الْخَطَّابِ قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ، شَدِيدُ سَوَادِ الشَّعَرِ، لَا يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ، وَلَا يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ، حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى رُكْبَتَيْهِ، وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخِذَيْهِ، وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنِ الْإِسْلَامِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْإِسْلَامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ، وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلًا»، قَالَ: صَدَقْتَ، قَالَ: فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ، وَيُصَدِّقُهُ، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِيمَانِ، قَالَ: «أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَرُسُلِهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ»، قَالَ: صَدَقْتَ، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِحْسَانِ، قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ، قَالَ: «مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ» قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَتِهَا، قَالَ: «أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا، وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ»، قَالَ: ثُمَّ انْطَلَقَ فَلَبِثْتُ مَلِيًّا، ثُمَّ قَالَ لِي: «يَا عُمَرُ أَتَدْرِي مَنِ السَّائِلُ؟» قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «فَإِنَّهُ جِبْرِيلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُمْ».​

উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একবার আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমীপে অবস্থান করছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমাদের কাছে এসে হাযির হলেন। তার পরিধানের কাপড় ছিল সাদা ধবধবে, মাথার কেশ ছিল কালো কুচকুচে। তার মধ্যে সফরের কোনো চিহ্ন ছিল না। আমরা কেউ তাকে চিনি না। তিনি নিজের দুই হাঁটু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর তার দুই হাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই উরুর উপর রাখলেন। তারপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম হলো, তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযানের সাওম পালন করবে এবং বাইতুল্লাহ পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হজ পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তার কথা শুনে আমরা বিষ্মিত হলাম যে, তিনিই প্রশ্ন করেছেন আর তিনিই-তা সত্যায়িত করছেন। আগন্তুক বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি, তার ফিরিশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসূলগণের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে, আর তাকদিরের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন,আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহসান হলো, এমনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে এ বিশ্বাস রাখবে যে, তিনি তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আমাকে কিয়ামত সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন। আগন্তুক বললেন, আমাকে এর আলামত সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হলো এই যে, দাসী তার প্রভুর জননী হবে এবং নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে। উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, পরে আগন্তুক প্রস্থান করলেন। আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে উমার! তুমি জানো, এই প্রশ্নকারী কে? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই সম্যক জ্ঞাত আছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি তো জিবরীল। তোমাদের তিনি দীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন”।

সহীহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮, কয়েকটি সনদে। যাতে ইয়াহইয়া ইবন ই‘য়ামার রহ. থেকে বর্ণিত,


«أَوَّلَ مَنْ قَالَ فِي الْقَدَرِ بِالْبَصْرَةِ مَعْبَدٌ الْجُهَنِيُّ، فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَحُمَيْدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحِمْيَرِيُّ حَاجَّيْنِ - أَوْ مُعْتَمِرَيْنِ - فَقُلْنَا: لَوْ لَقِينَا أَحَدًا مَنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلْنَاهُ عَمَّا يَقُولُ هَؤُلَاءِ فِي الْقَدَرِ، فَوُفِّقَ لَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ دَاخِلًا الْمَسْجِدَ، فَاكْتَنَفْتُهُ أَنَا وَصَاحِبِي أَحَدُنَا عَنْ يَمِينِهِ، وَالْآخَرُ عَنْ شِمَالِهِ، فَظَنَنْتُ أَنَّ صَاحِبِي سَيَكِلُ الْكَلَامَ إِلَيَّ، فَقُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ إِنَّهُ قَدْ ظَهَرَ قِبَلَنَا نَاسٌ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ، وَيَتَقَفَّرُونَ الْعِلْمَ، وَذَكَرَ مِنْ شَأْنِهِمْ، وَأَنَّهُمْ يَزْعُمُونَ أَنْ لَا قَدَرَ، وَأَنَّ الْأَمْرَ أُنُفٌ، قَالَ: «فَإِذَا لَقِيتَ أُولَئِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنِّي بَرِيءٌ مِنْهُمْ، وَأَنَّهُمْ بُرَآءُ مِنِّي»، وَالَّذِي يَحْلِفُ بِهِ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ «لَوْ أَنَّ لِأَحَدِهِمْ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا، فَأَنْفَقَهُ مَا قَبِلَ اللهُ مِنْهُ حَتَّى يُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ» ثُمَّ قَالَ: حدثني أبي عمر بن الخطاب رضي الله عنه. فذكر الحديث.​

“সর্বপ্রথম ‘কাদর’ (তাকদীরের ভালো-মন্দ) সম্পর্কে বসরা শহরে ‘মা‘বাদ আল জুহানী কথা তোলেন। আমি (ইয়াহইয়া ইবন ই‘য়ামার) এবং হুমাইদ ইবন আব্দুর রহমান আল হিমইয়ারী হজ অথবা উমরা আদায়ের জন্য মক্কায় আসলাম। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম যে, যদি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীর সাক্ষাৎ পাই তাহলে তার কাছে এসব লোক তাকদীর সস্পর্কে যা বলে বেড়াচ্ছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম। সৌভাগ্যক্রমে আমরা আব্দুল্লাহ ইবন উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে মসজিদে প্রবেশরত অবস্থায় দেখা পাই। আমরা তার কাছে গিয়ে একজন তার ডানপাশে এবং আর একজন বামপাশ দিয়ে তাকে ঘিরে ধরলাম। আমার মনে হলো, আমার সাথী চান যে, আমিই কথা বলি। আমি বললাম, হে আবু আব্দুর রহমান! (আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কুনিয়াত ছিল আবু আব্দুর রহমান) আমার দেশে এমন কতিপয় লোকের আবির্ভাব হয়েছে যারা কুরআন পাঠ করে এবং ইলমে দীন সম্পর্কে গবেষণা করে। তিনি তাদের অবস্থা সস্পর্কে আরো কিছু উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তারা মনে করে তাকদীর বলতে কিছু নেই। সবকিছু তাৎক্ষনিকভাবে ঘটে। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাদের সাথে তোমাদের দেখা হলে বলে দিও যে, তাদের সাথে আমার কোনো সস্পর্ক নেই এবং আমার সঙ্গে তাদেরও কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহর কসম! যার উপর আবদুল্লাহ ইবন উমর শপথ করছে তা হলো, যদি এদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনার মালিক হয় এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে, তাকদীরের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত আল্লাহ তা কবুল করবেন না। তারপর তিনি বললেন, আমাকে আমার পিতা উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাদীস শুনিয়েছেন। অতঃপর তিনি পুরো হাদীস বর্ণনা করেন।

হাদীসে উল্লিখিত বাক্য «فَاكْتَنَفْتُهُ أَنَا وَصَاحِبِي» এর অর্থ হলো, আমি ও আমার সাথী তার দুপাশে (একজন ডান পাশে আরেকজন বাম পাশে) ঘিরে ধরলাম।

হাদীসে উল্লিখিত আরেকটি বাক্য «يَتَقَفَّرُونَ الْعِلْمَ» এর অর্থ, তারা ইলমে দীন অনুসরণ করে এবং তা খুঁজে বেড়ায়, تقفر হচ্ছে কোনো কিছুর অনুসরণ করা।

হাদীসে উল্লিখিত আরেকটি বাক্য «أَنَّ الْأَمْرَ أُنُفٌ» এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সবকিছু তাৎক্ষনিক ভাবে ঘটে। এতে তাকদীর বা কারো ইচ্ছার হাত নেই। যেমন বলা হয়, روضة أنف যেখানে আগের কিছু বিবেচনা করা হয় না, أنف الشيء কোনো কিছুর আগ্রভাগ।

ইমাম বাগভী রহ. বলেন, “এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহ্যিক আমলকে ইসলাম এবং অন্তরের বিশ্বাসকে ঈমান বলেছেন। মূলত এ কথা দ্বারা এটা বুঝার সুযোগ নেই যে, আমলসমূহ ঈমানের অংশ নয়। অথবা এটাও বলা যাবে না যে, অন্তরের সত্যায়নকে ইসলাম বলে না। বরং এটা একটি মৌলিক বাক্যের ব্যাখ্যা যে বাক্যটি সবকিছুকেই শামিল করে, আর তা হচ্ছে দীন। আর এ জন্যই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«ذلك جِبْرِيلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ أمر دِينَكُمْ».​

“তিনি জিবরীল আলাইহিস সালাম। তোমাদেরকে তিনি দীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন”। বস্তুত: ঈমান ও ইসলাম উভয় শব্দ দ্বারাই অন্তরের সত্যায়ন ও আমল বুঝায়। এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী,

﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُ﴾ [ال عمران: ١٩]​

“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দীন হচ্ছে ইসলাম”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗا﴾ [المائ‍دة: ٣] “এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে”। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ٨٥﴾ [ال عمران: ٨٥]​

“আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায়, তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫]

এসব আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে, তিনি যে দীনের ওপর রাজি-খুশি ও বান্দাহর থেকে গ্রহণ করবেন তা হলো ইসলাম। আর অন্তরের সত্যায়নের সাথে আমল না থাকলে আল্লাহর কাছে তা গ্রহণযোগ্য ও সন্তুষ্টির পর্যায়ে যাবে না”। শরহে সুন্নাহ, ১/১০-১১।

عَنْ يَحْيَى بْنِ يَعْمرَ، قُلْتُ لِابْنِ عُمَرَ: »إِنَّ عِنْدَنَا رِجَالًا يَزْعُمُونَ أَنَّ الْأَمْرَ بِأَيْدِيهِمْ، فَإِنْ شَاءُوا عَمِلُوا، وَإِنْ شَاءُوا لَمْ يَعْمَلُوا، فَقَالَ: أَخْبِرْهُمْ أَنِّي مِنْهُمْ بَرِيءٌ، وَأَنَّهُمْ مِنِّي بُرَآءُ، ثُمَّ قَالَ: جَاءَ جِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ مَا الْإِسْلَامُ؟ فَقَالَ: "تَعْبُدُ اللهَ لَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ، وَتَحُجُّ الْبَيْتَ " قَالَ: فَإِذَا فَعَلْتُ ذَلِكَ فَأَنَا مُسْلِمٌ؟ قَالَ: " نَعَمْ " قَالَ: صَدَقْتَ، قَالَ: فَمَا الْإِحْسَانُ؟ قَالَ: " تَخْشَى اللهَ تَعَالَى كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَا تَكُ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ " قَالَ: فَإِذَا فَعَلْتُ ذَلِكَ فَأَنَا مُحْسِنٌ؟ قَالَ: " نَعَمْ " قَالَ: صَدَقْتَ. قَالَ: فَمَا الْإِيمَانُ؟ قَالَ: " تُؤْمِنُ بِاللهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَرُسُلِهِ، وَالْبَعْثِ مِنْ بَعْدِ الْمَوْتِ، وَالْجَنَّةِ، وَالنَّارِ، وَالْقَدَرِ كُلِّهِ "، قَالَ: فَإِذَا فَعَلْتُ ذَلِكَ فَأَنَا مُؤْمِنٌ؟ قَالَ: " نَعَمْ ". قَالَ: صَدَقْتَ«.​

ইয়াহইয়া ইবন ইয়া‘মুর রহ. বলেন, আমি ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে বললাম, আমাদের মধ্যে কিছু লোক আছেন যারা মনে করেন ভালো-মন্দ সবই তাদের হাতে (তাকদীর- বলতে কিছু নেই। সবকিছু তাৎক্ষনিকভাবে ঘটে)। তারা মনে চাইলে আমল করে আর ইচ্ছা করলে আমল ছেড়ে দেয়। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তুমি তাদেরকে বলে দাও যে, আমি তাদের দলভুক্ত নই এবং তারাও আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। অতঃপর তিনি বলেন, একবার জিবরীল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! ইসলাম কী? তিনি উত্তরে বললেন, ইসলাম হলো, তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত (সত্য) কোনো ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযানের সাওম পালন করবে এবং বাইতুল্লাহ পৌঁছার সামর্থ্য থাকলে হজ পালন করবে। জিবরীল বললেন, আমি যখন এ কাজগুলো করবো তখন কি আমি মুসলিম? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, ইহসান কী? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহসান হলো, এমনভাবে আল্লাহকে ভয় করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। যদি তুমি তাকে নাও দেখো, তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন। জিবরীল বললেন, আমি যখন এ কাজগুলো করবো তখন কি আমি মুহসিন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তাহলে ঈমান কী? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি, তার ফিরিশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসূলগণের প্রতি এবং মৃত্যুর পরে পুনর্জীবিত হওয়া, জান্নাত, জাহান্নাম আর তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান আনা। জিবরীল বললেন, আমি যখন এ কাজগুলো করবো তখন কি আমি মুমিন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন”।

সহীহ, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৫৮৫৬।

মুসনাদে আহমদের অন্য বর্ণনায় এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِثْلِهِ، قَالَ: وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَأْتِي النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صُورَةِ دِحْيَةَ. ইনব উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উপরের হাদীসের ন্যায় অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন, “জিবরীল আলাইহিস সালাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ‘দেহইয়া কালবী’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর আকৃতিতে আসতেন”।

সহীহ, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ৫৮৫৬, ৫৮৫৭।



عَنِ عَبْد اللهِ بْن عَبَّاسٍ قَالَ: جَلَسَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَجْلِسًا لَهُ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ، فَجَلَسَ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَاضِعًا كَفَّيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، حَدِّثْنِي مَا الْإِسْلامُ؟ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " الْإِسْلامُ أَنْ تُسْلِمَ وَجْهَكَ لِلَّهِ، وَتَشْهَدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ " قَالَ: فَإِذَا فَعَلْتُ ذَلِكَ فَقَدْ أَسْلَمْتُ؟ قَالَ: " إِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ، فَقَدْ أَسْلَمْتَ " قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، فَحَدِّثْنِي مَا الْإِيمَانُ؟ قَالَ: " الْإِيمَانُ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَالْمَلائِكَةِ، وَالْكِتَابِ، وَالنَّبِيِّينَ، وَتُؤْمِنَ بِالْمَوْتِ، وَبِالْحَيَاةِ بَعْدَ الْمَوْتِ، وَتُؤْمِنَ بِالْجَنَّةِ وَالنَّارِ، وَالْحِسَابِ، وَالْمِيزَانِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ كُلِّهِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ "، قَالَ: فَإِذَا فَعَلْتُ ذَلِكَ فَقَدْ آمَنْتُ؟ قَالَ: " إِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ فَقَدْ آمَنْتَ، قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، حَدِّثْنِي مَا الْإِحْسَانُ؟ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " الْإِحْسَانُ أَنْ تَعْمَلَ لِلَّهِ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنَّكَ إِنْ لَمْ تَرَهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ " قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، فَحَدِّثْنِي مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " سُبْحَانَ اللهِ فِي خَمْسٍ مِنَ الغَيْبِ لَا يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا هُوَ: ﴿إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلۡغَيۡثَ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرُۢ٣٤﴾ [لقمان: ٣٤] وَلَكِنْ إِنْ شِئْتَ حَدَّثْتُكَ بِمَعَالِمَ لَهَا دُونَ ذَلِكَ "، قَالَ: أَجَلْ يَا رَسُولَ اللهِ، فَحَدِّثْنِي. قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: »إِذَا رَأَيْتَ الْأَمَةَ وَلَدَتْ رَبَّتَهَا أَوْ رَبَّهَا، وَرَأَيْتَ أَصْحَابَ الشَّاءِ تَطَاوَلُوا بِالْبُنْيَانِ، وَرَأَيْتَ الْحُفَاةَ الْجِيَاعَ الْعَالَةَ كَانُوا رُؤوسَ النَّاسِ، فَذَلِكَ مِنْ مَعَالِمِ السَّاعَةِ وَأَشْرَاطِهَا ". قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَنْ أَصْحَابُ الشَّاءِ وَالْحُفَاةُ الْجِيَاعُ الْعَالَةُ؟ قَالَ: الْعَرَبُ«.​

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসে বসা ছিলেন। এমন সময় জিবরীল আলাইহিস সালাম আসলেন। তিনি নিজের দুই হাঁটু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে তাঁর সামনে বসে পড়লেন আর তার দুই হাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই হাঁটুর উপর রাখলেন। তারপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম হলো, তুমি নিজেকে আল্লাহর সামনে সমর্পণ করবে আর এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। জিবরীল বললেন, আমি যখন এরূপ করবো তখন আমি মুসলিম হবো?। রাসূল বললেন, আপনি যখন এরূপ করবেন তখন আপনি আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) হবেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি, আখিরাতের প্রতি, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি, মৃত্যু হওয়ার প্রতি, মৃত্যুপরবর্তী জীবনের প্রতি, জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতি, হিসাব নিকাশ, মিযান ও তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান রাখবে। জিবরীল বললেন, আমি যখন এরূপ করবো তখন আমি কি ঈমান আনয়নকারী (মুমিন) হলাম? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, আপনি যখন এরূপ করবেন তখন আপনি মুমিন হবেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহসান হলো, আল্লাহর জন্য এমনভাবে আমল করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে তিনি তো তোমাকে দেখছেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, আমাকে কিয়ামত কখন হবে তা বিবৃত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। এ তো এমন পাঁচটি বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ (সত্যিকারের জ্ঞান) জানেন না।

﴿ إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلۡغَيۡثَ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرُۢ ٣٤ ﴾ [لقمان: ٣٤]​

“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ূতে যা আছে, তা তিনি জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত”। [সূরা : লুকমান, আয়াত: ৩৪]

তবে আপনি চাইলে আমি এর চেয়ে ছোট বিষয় কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে আপনাকে বলতে পারি। তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে এর আলামত সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তুমি দেখবে যে, দাসী তার প্রভু- বা পালনকর্তাকে জন্ম দিচ্ছে, আর মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে। আর তুমি দেখবে নগ্নপদ, ক্ষুধার্ত, অভাবী লোকেরা মানুষের নেতা হবে। এগুলো কিয়ামতের নিদর্শন ও আলামত। জিবরীল আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মেষপালক, নগ্নপদ, ক্ষুধার্ত (নিঃস্ব), অভাবী লোক কারা? তিনি বললেন, এরা আরব”।

হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২৯২৪, ১৭১৬৭; মুসনাদ বাযযার –কাশফুল আসতার-, হাদীস নং ২৪।
 
Top