Well-known member
তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নাজদবাসী এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলো। তার মাথার চুল ছিল এলোমেলো। আমরা তার কথার মৃদু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম; কিন্তু সে কি বলছিল, আমরা তা বুঝতে পারছিলাম না। এভাবে সে কাছে এসে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত। সে বলল, আমার ওপর এ ছাড়া আরো সালাত আছে?’ তিনি বললেন, না, তবে নফল আদায় করতে পারো। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আর রমযান মাসের সিয়াম। সে বলল, ‘আমার ওপর এ ছাড়া আরো সাওম আছে? তিনি বললেন, না, তবে নফল সাওম পালন করতে পারো। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে যাকাতের কথা বললেন। সে বলল, আমার ওপর এ ছাড়া আরো দেওয়ার আছে? তিনি বললেন, না, তবে নফল হিসেবে দিতে পারো। বর্ণনাকারী বলেন, সে ব্যক্তি এই বলে চলে গেলেন, আল্লাহর কসম! আমি এর চেয়ে বেশিও করব না এবং কমও করব না। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি সফলকাম হবে; যদি সত্য বলে থাকে”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৯৪; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১।
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একবার আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি সওয়ার অবস্থায় ঢুকল। মসজিদে (প্রাঙ্গণে) সে তার উটটি বসিয়ে বেঁধে রাখল। এরপর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলল, তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে?’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সাহাবীগণের সামনেই হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। আমরা বললাম, এই হেলান দিয়ে বসা ফর্সা রঙের ব্যক্তিই হলেন তিনি। তারপর লোকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বলল, হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র! রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি তোমার জওয়াব দিচ্ছি। লোকটি বলল, আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব এবং সে প্রশ্ন করার ব্যাপারে কঠোর হবো, এতে আপনি রাগ করবেন না। তিনি বললেন, তোমার যেমন ইচ্ছা প্রশ্ন করো। সে বলল, আমি আপনাকে আপনার রব ও আপনার পূর্ববর্তীদের রবের কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহই কি আপনাকে সকল মানুষের রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহই কি আপনাকে দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহই কি আপনাকে বছরের এ মাসে (রমযান) সাওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহই কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদের ধনীদের থেকে সদকা (যাকাত) আদায় করে আমাদের গরীবদের মধ্যে তা ভাগ করে দিতে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। এরপর লোকটি বলল, আমি ঈমান আনলাম আপনি যা (যে শরী‘আত) এনেছেন তার ওপর। আর আমি আমার জাতির রেখে আসা লোকজনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি। আমার নাম দ্বিমাম ইবন সা‘লাবা, বনী সা‘দ ইবন বকর গোত্রের একজন”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২।
মুসলিমের (হাদীস নং ১২) বর্ণনায় এসেছে,
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো বিষয়ে (অতিরিক্ত) প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তাই আমরা চাইতাম যে, গ্রাম থেকে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমাদের কাছে আপনার দূত এসে বলেছে, আপনি দাবি করেছেন যে, আল্লাহ আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, আসমান কে সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, এসব পর্বতমালা কে স্থাপন করেছেন এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি করেছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, সেই সত্তার কসম! যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং এসব পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। আল্লাহই আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের ওপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের ওপর আমাদের মালের যাকাত দেওয়া ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিকই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, প্রতি বছর রমযান মাসের সাওম পালন করা আমাদের ওপর ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তার কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের মধ্যে যে বাইতুল্লায় যেতে সক্ষম তার ওপর হজ ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যি বলেছে। বর্ণনাকারী বলেন যে, তারপর আগন্তুক চলে যেতে যেতে বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি এর অতিরিক্তও করব না এবং এর কমও করব না। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সে জান্নাতে যাবে”।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনী সা‘দ ইবন বকর দিমাম ইবন সা‘লাবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং মসজিদে নববীর আঙ্গিনায় তার উট বসিয়ে তাকে বেঁধে মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের সাথে মজলিসে বসা ছিলেন। দিমাম রাদিয়াল্লাহু আনহু খুবই শক্তিশালী ও দুবেণী বিশিষ্ট ঘনকেশী ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের মাঝে এসে দাঁড়ালেন। উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন: তোমাদের মধ্যে ইবন আব্দুল মুত্তালিব কে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি ইবন আব্দুল মুত্তালিব। লোকটি বললো: আপনি মুহাম্মাদ? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে ব্যক্তি বললো: হে ইবন আব্দুল মুত্তালিব! আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো এবং প্রশ্নের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করব। আপনি কিছু মনে করবেন না। তখন তিনি বললেন, আমি কিছু মনে করবো না। তোমার যা মনে চায় প্রশ্ন করো। তখন সে বললো: আমি আপনাকে আপনার ইলাহ, আপনার পূর্ববর্তীদের ইলাহ ও আপনার পরবর্তীদের ইলাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে আমাদের কাছে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন, নিশ্চয়ই। সে বললো, এখন আমি আপনাকে আপনার ইলাহ, আপনার পূর্ববর্তীদের ইলাহ ও আপনার পরবর্তীদের ইলাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন একমাত্র তার ইবাদত করি, তাঁর সাথে কাউকে শরিক না করি, আমাদের পূর্বপুরুষরা যেসব মূর্তির পূজা করতো এবং তাঁর সাথে শরীক করতো সেগুলো যেনো ছেড়ে দেই? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন, নিশ্চয়ই। সে বললো, এখন আমি আপনাকে আপনার ইলাহ, আপনার পূর্ববর্তীদের ইলাহ ও আপনার পরবর্তীদের ইলাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেনো এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন, নিশ্চয়ই। এভাবে তিনি ইসলামের অন্যান্য ফরয তথা যাকাত, সাওম, হজ ও ইসলামের সমস্ত বিধান সম্পর্কে পূর্বের ন্যায় শপথ করে করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছেন। এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা শেষ হলে তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। আমি এসব ফরয যথাযথভাবে আদায় করবো। আর আপনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকবো। তবে আমি আমলের ক্ষেত্রে এগুলোর বেশিও করবো না আবার কমও করবো না। অতঃপর সে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য তার উটের দিকে গেলো। তিনি যখন ফিরে যাচ্ছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দুবেণী বিশিষ্ট লোকটি যদি সত্য বলে থাকে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি তার উটের কাছে গেলো, তার বাঁধন খুলে নিজ গোত্রের উদেশ্যে রওয়ানা হলেন। সেখানে পৌঁছে তাদের সাথে মিলিত হলেন। তিনি সর্বপ্রথম যে বাক্যটি বললেন তা হলো: লাত ও ‘উয্যা কতোই না নিকৃষ্ট! গোত্রের লোকেরা বললো, চুপ করো হে দিমাম। এগুলো অভিশাপ লেগে যাবে। কুষ্ঠরোগ ও গোদ রোগের ভয় করো। তুমি পাগল হয়ে যাওয়ার ভয় করো। দিমাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তোমাদের ধ্বংস হোক। আল্লাহর শপথ এদুটি কোনো উপকার বা ক্ষতি কিছুই করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, তিনি তাঁর রাসূলের প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, তোমরা যে পথভ্রষ্টতায় ছিলে তা থেকে মুক্তি দিবে এবং তোমাদেরকে উদ্ধার করবেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যাতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। তিনি তোমাদেরকে যা আদেশ ও নিষেধ করেছেন আমি তা নিয়ে তোমাদের কাছ থেকে এসেছি। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর শপথ, সেদিন বিকেল হওয়ার পূর্বেই বনী সা‘দ ইবন বকর গোত্রের উপস্থিত এমন কোনো নারী পুরুষ ছিল না যে মুসলিম হয় নি
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, দিমাম ইবন সা‘লাবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চেয়ে উত্তম কোনো প্রতিনিধি দলের প্রধানের কথা আমরা আর শুনি নি”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২৩৮০; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৮৭; হাকিম, ৩/৫৪, তিনি সহীহ বলেছেন।
হাকিম ইবন মু‘আওয়িয়াহ্ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসলাম। এসে বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার কাছে আসার পূর্বে এই সংখ্যার (আমার দুই হাতের আঙ্গুলসমূহের সংখ্যার) চেয়েও অধিক সংখ্যক শপথ করেছিলাম যে, আমি আপনার কাছে আসব না (আপনার ধর্মও গ্রহণ করব না)। আমাদেরকে এ সময় আফফান (একজন বর্ণনাকারী) তার হাত দুটি একত্রিত করেন। সে সত্তার কসম করে বলছি যিনি আপনাকে সত্যসহকারে প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ আপনাকে আমাদের কাছে কী দিয়ে প্রেরণ করেছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম দিয়ে। মু‘আবিয়া বললেন, ইসলাম কী? তিনি বললেন, তা হচ্ছে এই যে, তুমি বলবে, আমি আমার মুখমণ্ডল (নিজ সত্তা) সমর্পণ করলাম (আল্লাহর নিকট) এবং যাবতীয় শির্ক থেকে নিজেকে মুক্ত করলাম। ফরয সালাত কায়েম করবে, ফরয যাকাত প্রদান করবে এবং (জেনে রেখ) মুসলিমরা পরস্পর সহযোগী ভাই। ইসলাম গ্রহণ করার পর কেউ শির্ক করলে আল্লাহ তার কোনো ভালো আমল গ্রহণ করেন না (যতক্ষণ না সে তওবা করে মুসলিমের দলে ফিরে আসে)। আমি বললাম, আমাদের ওপর আমাদের স্ত্রীর অধিকার কী? তিনি বললেন, তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খাওয়াবে, তোমরা যা পরিধান করবে তাদেরকেও তা পরিধান করাবে, তাদের চেহারায় আঘাত করবে না (তাদেরকে বেদম প্রহর করবে না) এবং তাদেরকে গালমন্দ করবে না। তাদেরকে গৃহ ব্যতীত অন্য কোথাও পরিত্যাগ করবে না অর্থাৎ তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দিবে না।
তিনি বললেন, তোমাদেরকে এখান থেকে – শামের দিকে ইশারা করে- আল্লাহর দরবারে পায়ে হেঁটে, আরোহী অবস্থায় ও মুখের উপর ভর করে উপস্থিত হতে হবে, (সে দিন) তোমাদের মুখে (জিহ্বায়) ছাঁকনি (আঁটি) লাগিয়ে দেওয়া হবে, তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করবে এবং নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম যে অঙ্গ তোমাদের সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবে তা হচ্ছে তোমাদের উরু”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২০০২২; আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৪২; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ১৬০; নাসায়ী, হাদীস নং ২৪৩৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৩৬।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, “কোনো দাস যদি তার মনিবের কাছে এসে এমন কোনো অনুগ্রহ চায় যা তার কাছে আছে, কিন্তু সে তাকে সে অনুগ্রহ (সম্পদ) প্রদান করা থেকে বিরত থাকে, তবে সেসব অনুগ্রহকে আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর বিষাক্ত সাপ বানিয়ে তাকে দংশন করাতে থাকবে যতক্ষণ না তাদের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন হবে।”
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২০০২৩।
ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, এ কথার সাক্ষ্য দান, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রমযান মাসের সাওম পালন করা”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬ বা ২২, হাদীসের শব্দাবলী বুখারীর।
عَنْ طَلْحَةَ بْن عُبَيْدِ اللَّهِ، يَقُولُ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَهْلِ نَجْدٍ ثَائِرَ الرَّأْسِ، نَسْمَعُ دَوِيُّ صَوْتِهِ وَلاَ نَفْقَهُ مَا يَقُولُ، حَتَّى دَنَا، فَإِذَا هُوَ يَسْأَلُ عَنِ الإِسْلاَمِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَمْسُ صَلَوَاتٍ فِي اليَوْمِ وَاللَّيْلَةِ». فَقَالَ: هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهُن؟ قَالَ: «لاَ، إِلَّا أَنْ تَطَوَّعَ». قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَصِيَامُ شهرُ رَمَضَانَ». قَالَ: هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهُ؟ قَالَ: «لاَ، إِلَّا أَنْ تَطَوَّعَ». قَالَ: وَذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الزَّكَاةَ، قَالَ: هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهَا؟ قَالَ: «لاَ، إِلَّا أَنْ تَطَوَّعَ». قَالَ: فَأَدْبَرَ الرَّجُلُ وَهُوَ يَقُولُ: وَاللَّهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا وَلاَ أَنْقُصُ، فقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَفْلَحَ الرجلُ إِنْ صَدَقَ».
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং ৯৪; সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১।
عَنْ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ: بَيْنَمَا نَحْنُ جُلُوسٌ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي المَسْجِدِ، دَخَلَ رَجُلٌ عَلَى جَمَلٍ، فَأَنَاخَهُ فِي المَسْجِدِ ثُمَّ عَقَلَهُ، ثُمَّ قَالَ لَهُمْ: أَيُّكُمْ مُحَمَّدٌ؟ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُتَّكِئٌ بَيْنَ ظَهْرَانَيْهِمْ، فَقُلْنَا: هَذَا الرَّجُلُ الأَبْيَضُ المُتَّكِئُ. فَقَالَ لَهُ الرَّجُلُ: يَا ابْنَ عَبْدِ المُطَّلِبِ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قَدْ أَجَبْتُكَ». فَقَالَ الرَّجُلُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنِّي سَائِلُكَ فَمُشَدِّدٌ عَلَيْكَ فِي المَسْأَلَةِ، فَلاَ تَجِدْ عَلَيَّ فِي نَفْسِكَ؟ فَقَالَ: «سَلْ عَمَّا بَدَا لَكَ» فَقَالَ: أَسْأَلُكَ بِرَبِّكَ وَرَبِّ مَنْ قَبْلَكَ، آللَّهُ أَرْسَلَكَ إِلَى النَّاسِ كُلِّهِمْ؟ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ نَعَمْ». قَالَ: أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ نُصَلِّيَ الصَّلَوَاتِ الخَمْسَ فِي اليَوْمِ وَاللَّيْلَةِ؟ قَالَ: «اللَّهُمَّ نَعَمْ». قَالَ: أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ نَصُومَ هَذَا الشَّهْرَ مِنَ السَّنَةِ؟ قَالَ: «اللَّهُمَّ نَعَمْ». قَالَ: أَنْشُدُكَ بِاللَّهِ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ تَأْخُذَ هَذِهِ الصَّدَقَةَ مِنْ أَغْنِيَائِنَا فَتَقْسِمَهَا عَلَى فُقَرَائِنَا؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اللَّهُمَّ نَعَمْ». فَقَالَ الرَّجُلُ: آمَنْتُ بِمَا جِئْتَ بِهِ، وَأَنَا رَسُولُ مَنْ وَرَائِي مِنْ قَوْمِي، وَأَنَا ضِمَامُ بْنُ ثَعْلَبَةَ أَخُو بَنِي سَعْدِ بْنِ بَكْرٍ.
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “একবার আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি সওয়ার অবস্থায় ঢুকল। মসজিদে (প্রাঙ্গণে) সে তার উটটি বসিয়ে বেঁধে রাখল। এরপর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলল, তোমাদের মধ্যে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে?’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সাহাবীগণের সামনেই হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। আমরা বললাম, এই হেলান দিয়ে বসা ফর্সা রঙের ব্যক্তিই হলেন তিনি। তারপর লোকটি তাঁকে লক্ষ্য করে বলল, হে আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র! রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি তোমার জওয়াব দিচ্ছি। লোকটি বলল, আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করব এবং সে প্রশ্ন করার ব্যাপারে কঠোর হবো, এতে আপনি রাগ করবেন না। তিনি বললেন, তোমার যেমন ইচ্ছা প্রশ্ন করো। সে বলল, আমি আপনাকে আপনার রব ও আপনার পূর্ববর্তীদের রবের কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আল্লাহই কি আপনাকে সকল মানুষের রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহই কি আপনাকে দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহই কি আপনাকে বছরের এ মাসে (রমযান) সাওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। সে বলল, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আল্লাহই কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমাদের ধনীদের থেকে সদকা (যাকাত) আদায় করে আমাদের গরীবদের মধ্যে তা ভাগ করে দিতে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ। এরপর লোকটি বলল, আমি ঈমান আনলাম আপনি যা (যে শরী‘আত) এনেছেন তার ওপর। আর আমি আমার জাতির রেখে আসা লোকজনের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি। আমার নাম দ্বিমাম ইবন সা‘লাবা, বনী সা‘দ ইবন বকর গোত্রের একজন”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২।
মুসলিমের (হাদীস নং ১২) বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: نُهِينَا أَنْ نَسْأَلَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ شَيْءٍ، فَكَانَ يُعْجِبُنَا أَنْ يَجِيءَ الرَّجُلُ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ الْعَاقِلُ، فَيَسْأَلَهُ، وَنَحْنُ نَسْمَعُ، فَجَاءَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، أَتَانَا رَسُولُكَ فَزَعَمَ لَنَا أَنَّكَ تَزْعُمُ أَنَّ اللهَ أَرْسَلَكَ، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَمَنْ خَلَقَ السَّمَاءَ؟ قَالَ: «اللهُ»، قَالَ: فَمَنْ خَلَقَ الْأَرْضَ؟ قَالَ: «اللهُ»، قَالَ: فَمَنْ نَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ، وَجَعَلَ فِيهَا مَا جَعَلَ؟ قَالَ: «اللهُ»، قَالَ: فَبِالَّذِي خَلَقَ السَّمَاءَ، وَخَلَقَ الْأَرْضَ، وَنَصَبَ هَذِهِ الْجِبَالَ، آللَّهُ أَرْسَلَكَ؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِنَا، وَلَيْلَتِنَا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا زَكَاةً فِي أَمْوَالِنَا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا صَوْمَ شَهْرِ رَمَضَانَ فِي سَنَتِنَا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: فَبِالَّذِي أَرْسَلَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: «نَعَمْ»، قَالَ: وَزَعَمَ رَسُولُكَ أَنَّ عَلَيْنَا حَجَّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا، قَالَ: «صَدَقَ»، قَالَ: ثُمَّ وَلَّى، قَالَ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ، لَا أَزِيدُ عَلَيْهِنَّ، وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُنَّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَئِنْ صَدَقَ لَيَدْخُلَنَّ الْجَنَّةَ».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো বিষয়ে (অতিরিক্ত) প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তাই আমরা চাইতাম যে, গ্রাম থেকে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমাদের কাছে আপনার দূত এসে বলেছে, আপনি দাবি করেছেন যে, আল্লাহ আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, আসমান কে সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, এসব পর্বতমালা কে স্থাপন করেছেন এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি করেছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, সেই সত্তার কসম! যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং এসব পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। আল্লাহই আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের ওপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের ওপর আমাদের মালের যাকাত দেওয়া ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিকই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, প্রতি বছর রমযান মাসের সাওম পালন করা আমাদের ওপর ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তার কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের মধ্যে যে বাইতুল্লায় যেতে সক্ষম তার ওপর হজ ফরয। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যি বলেছে। বর্ণনাকারী বলেন যে, তারপর আগন্তুক চলে যেতে যেতে বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি এর অতিরিক্তও করব না এবং এর কমও করব না। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সে জান্নাতে যাবে”।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: بَعَثَتْ بَنُو سَعْدِ بْنِ بَكْرٍ ضِمَامَ بْنَ ثَعْلَبَةَ وَافِدًا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَدِمَ عَلَيْهِ، وَأَنَاخَ بَعِيرَهُ عَلَى بَابِ الْمَسْجِدِ، ثُمَّ عَقَلَهُ، ثُمَّ دَخَلَ الْمَسْجِدَ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، جَالِسٌ فِي أَصْحَابِهِ، وَكَانَ ضِمَامٌ رَجُلًا جَلْدًا أَشْعَرَ ذَا غَدِيرَتَيْنِ، فَأَقْبَلَ حَتَّى وَقَفَ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فِي أَصْحَابِهِ فَقَالَ: أَيُّكُمُ ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ "، قَالَ مُحَمَّدٌ؟ قَالَ: " نَعَمْ "، فَقَالَ: ابْنَ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ، إِنِّي سَائِلُكَ وَمُغَلِّظٌ فِي الْمَسْأَلَةِ، فَلا تَجِدَنَّ فِي نَفْسِكَ، قَالَ: " لَا أَجِدُ فِي نَفْسِي، فَسَلْ عَمَّا بَدَا لَكَ " قَالَ: أَنْشُدُكَ اللهَ إِلَهَكَ، وَإِلَهَ مَنْ كَانَ قَبْلَكَ، وَإِلَهَ مَنْ هُوَ كَائِنٌ بَعْدَكَ، آللَّهُ بَعَثَكَ إِلَيْنَا رَسُولًا؟ فَقَالَ: " اللهُمَّ نَعَمْ " قَالَ: فَأَنْشُدُكَ اللهَ إِلَهَكَ، وَإِلَهَ مَنْ كَانَ قَبْلَكَ، وَإِلَهَ مَنْ هُوَ كَائِنٌ بَعْدَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ تَأْمُرَنَا أَنْ نَعْبُدَهُ وَحْدَهُ، لَا نُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، وَأَنْ نَخْلَعَ هَذِهِ الْأَنْدَادَ الَّتِي كَانَتْ آبَاؤُنَا يَعْبُدُونَ مَعَهُ؟ قَالَ: " اللهُمَّ نَعَمْ "، قَالَ: فَأَنْشُدُكَ اللهَ إِلَهَكَ، وَإِلَهَ مَنْ كَانَ قَبْلَكَ، وَإِلَهَ مَنْ هُوَ كَائِنٌ بَعْدَكَ، آللَّهُ أَمَرَكَ أَنْ نُصَلِّيَ هَذِهِ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ؟ قَالَ: " اللهُمَّ نَعَمْ " قَالَ: ثُمَّ جَعَلَ يَذْكُرُ فَرَائِضَ الْإِسْلامِ فَرِيضَةً فَرِيضَةً: الزَّكَاةَ، وَالصِّيَامَ، وَالْحَجَّ، وَشَرَائِعَ الْإِسْلامِ كُلَّهَا، يُنَاشِدُهُ عِنْدَ كُلِّ فَرِيضَةٍ كَمَا يُنَاشِدُهُ فِي الَّتِي قَبْلَهَا، حَتَّى إِذَا فَرَغَ قَالَ: فَإِنِّي أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، وَسَأُؤَدِّي هَذِهِ الْفَرَائِضَ، وَأَجْتَنِبُ مَا نَهَيْتَنِي عَنْهُ، ثُمَّ لَا أَزِيدُ وَلا أَنْقُصُ، قَالَ: ثُمَّ انْصَرَفَ رَاجِعًا إِلَى بَعِيرِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ وَلَّى: " إِنْ يَصْدُقْ ذُو الْعَقِيصَتَيْنِ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ "
قَالَ: فَأَتَى إِلَى بَعِيرِهِ، فَأَطْلَقَ عِقَالَهُ، ثُمَّ خَرَجَ حَتَّى قَدِمَ عَلَى قَوْمِهِ، فَاجْتَمَعُوا إِلَيْهِ، فَكَانَ أَوَّلَ مَا تَكَلَّمَ بِهِ أَنْ قَالَ: بِئْسَتِ اللاتُ وَالْعُزَّى، قَالُوا: مَهْ يَا ضِمَامُ، اتَّقِ الْبَرَصَ وَالْجُذَامَ، اتَّقِ الْجُنُونَ، قَالَ: وَيْلَكُمْ، إِنَّهُمَا وَاللهِ لَا يَضُرَّانِ وَلا يَنْفَعَانِ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ بَعَثَ رَسُولًا، وَأَنْزَلَ عَلَيْهِ كِتَابًا اسْتَنْقَذَكُمْ بِهِ مِمَّا كُنْتُمْ فِيهِ، وَإِنِّي أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، إِنِّي قَدْ جِئْتُكُمْ مِنْ عِنْدِهِ بِمَا أَمَرَكُمْ بِهِ، وَنَهَاكُمْ عَنْهُ، قَالَ: فَوَاللهِ مَا أَمْسَى مِنْ ذَلِكَ الْيَوْمِ وَفِي حَاضِرِهِ رَجُلٌ وَلا امْرَأَةٌ إِلا مُسْلِمًا قَالَ: يَقُولُ ابْنُ عَبَّاسٍ: " فَمَا سَمِعْنَا بِوَافِدِ قَوْمٍ كَانَ أَفْضَلَ مِنْ ضِمَامِ بْنِ ثَعْلَبَةَ "
قَالَ: فَأَتَى إِلَى بَعِيرِهِ، فَأَطْلَقَ عِقَالَهُ، ثُمَّ خَرَجَ حَتَّى قَدِمَ عَلَى قَوْمِهِ، فَاجْتَمَعُوا إِلَيْهِ، فَكَانَ أَوَّلَ مَا تَكَلَّمَ بِهِ أَنْ قَالَ: بِئْسَتِ اللاتُ وَالْعُزَّى، قَالُوا: مَهْ يَا ضِمَامُ، اتَّقِ الْبَرَصَ وَالْجُذَامَ، اتَّقِ الْجُنُونَ، قَالَ: وَيْلَكُمْ، إِنَّهُمَا وَاللهِ لَا يَضُرَّانِ وَلا يَنْفَعَانِ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ بَعَثَ رَسُولًا، وَأَنْزَلَ عَلَيْهِ كِتَابًا اسْتَنْقَذَكُمْ بِهِ مِمَّا كُنْتُمْ فِيهِ، وَإِنِّي أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، إِنِّي قَدْ جِئْتُكُمْ مِنْ عِنْدِهِ بِمَا أَمَرَكُمْ بِهِ، وَنَهَاكُمْ عَنْهُ، قَالَ: فَوَاللهِ مَا أَمْسَى مِنْ ذَلِكَ الْيَوْمِ وَفِي حَاضِرِهِ رَجُلٌ وَلا امْرَأَةٌ إِلا مُسْلِمًا قَالَ: يَقُولُ ابْنُ عَبَّاسٍ: " فَمَا سَمِعْنَا بِوَافِدِ قَوْمٍ كَانَ أَفْضَلَ مِنْ ضِمَامِ بْنِ ثَعْلَبَةَ "
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনী সা‘দ ইবন বকর দিমাম ইবন সা‘লাবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং মসজিদে নববীর আঙ্গিনায় তার উট বসিয়ে তাকে বেঁধে মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের সাথে মজলিসে বসা ছিলেন। দিমাম রাদিয়াল্লাহু আনহু খুবই শক্তিশালী ও দুবেণী বিশিষ্ট ঘনকেশী ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের মাঝে এসে দাঁড়ালেন। উপস্থিত লোকদের জিজ্ঞাসা করলেন: তোমাদের মধ্যে ইবন আব্দুল মুত্তালিব কে? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি ইবন আব্দুল মুত্তালিব। লোকটি বললো: আপনি মুহাম্মাদ? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে ব্যক্তি বললো: হে ইবন আব্দুল মুত্তালিব! আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো এবং প্রশ্নের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করব। আপনি কিছু মনে করবেন না। তখন তিনি বললেন, আমি কিছু মনে করবো না। তোমার যা মনে চায় প্রশ্ন করো। তখন সে বললো: আমি আপনাকে আপনার ইলাহ, আপনার পূর্ববর্তীদের ইলাহ ও আপনার পরবর্তীদের ইলাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে আমাদের কাছে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন, নিশ্চয়ই। সে বললো, এখন আমি আপনাকে আপনার ইলাহ, আপনার পূর্ববর্তীদের ইলাহ ও আপনার পরবর্তীদের ইলাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন একমাত্র তার ইবাদত করি, তাঁর সাথে কাউকে শরিক না করি, আমাদের পূর্বপুরুষরা যেসব মূর্তির পূজা করতো এবং তাঁর সাথে শরীক করতো সেগুলো যেনো ছেড়ে দেই? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন, নিশ্চয়ই। সে বললো, এখন আমি আপনাকে আপনার ইলাহ, আপনার পূর্ববর্তীদের ইলাহ ও আপনার পরবর্তীদের ইলাহর নামে শপথ দিয়ে বলছি আল্লাহ তা‘আলা কি আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেনো এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন, নিশ্চয়ই। এভাবে তিনি ইসলামের অন্যান্য ফরয তথা যাকাত, সাওম, হজ ও ইসলামের সমস্ত বিধান সম্পর্কে পূর্বের ন্যায় শপথ করে করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছেন। এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা শেষ হলে তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। আমি এসব ফরয যথাযথভাবে আদায় করবো। আর আপনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকবো। তবে আমি আমলের ক্ষেত্রে এগুলোর বেশিও করবো না আবার কমও করবো না। অতঃপর সে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য তার উটের দিকে গেলো। তিনি যখন ফিরে যাচ্ছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দুবেণী বিশিষ্ট লোকটি যদি সত্য বলে থাকে তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি তার উটের কাছে গেলো, তার বাঁধন খুলে নিজ গোত্রের উদেশ্যে রওয়ানা হলেন। সেখানে পৌঁছে তাদের সাথে মিলিত হলেন। তিনি সর্বপ্রথম যে বাক্যটি বললেন তা হলো: লাত ও ‘উয্যা কতোই না নিকৃষ্ট! গোত্রের লোকেরা বললো, চুপ করো হে দিমাম। এগুলো অভিশাপ লেগে যাবে। কুষ্ঠরোগ ও গোদ রোগের ভয় করো। তুমি পাগল হয়ে যাওয়ার ভয় করো। দিমাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তোমাদের ধ্বংস হোক। আল্লাহর শপথ এদুটি কোনো উপকার বা ক্ষতি কিছুই করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, তিনি তাঁর রাসূলের প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, তোমরা যে পথভ্রষ্টতায় ছিলে তা থেকে মুক্তি দিবে এবং তোমাদেরকে উদ্ধার করবেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যাতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল। তিনি তোমাদেরকে যা আদেশ ও নিষেধ করেছেন আমি তা নিয়ে তোমাদের কাছ থেকে এসেছি। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর শপথ, সেদিন বিকেল হওয়ার পূর্বেই বনী সা‘দ ইবন বকর গোত্রের উপস্থিত এমন কোনো নারী পুরুষ ছিল না যে মুসলিম হয় নি
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, দিমাম ইবন সা‘লাবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চেয়ে উত্তম কোনো প্রতিনিধি দলের প্রধানের কথা আমরা আর শুনি নি”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২৩৮০; আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৮৭; হাকিম, ৩/৫৪, তিনি সহীহ বলেছেন।
عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: »أَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: مَا أَتَيْتُكَ حَتَّى حَلَفْتُ عَدَدَ أَصَابِعِي هَذِهِ أَنْ لَا آتِيَكَ، أَرَانَا عَفَّانُ وَطَبَّقَ كَفَّيْهِ، فَبِالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا الَّذِي بَعَثَكَ بِهِ ؟ قَالَ: " الْإِسْلَامُ ". قَالَ: وَمَا الْإِسْلَامُ؟ قَالَ: " أَنْ يُسْلِمَ قَلْبُكَ لِلَّهِ، وَأَنْ تُوَجِّهَ وَجْهَكَ إِلَى اللهِ وَتُصَلِّيَ الصَّلَاةَ الْمَكْتُوبَةَ، وَتُؤَدِّيَ الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ، أَخَوَانِ نَصِيرَانِ. لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْ أَحَدٍ تَوْبَةً أَشْرَكَ بَعْدَ إِسْلَامِهِ ". قُلْتُ: مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟ قَالَ: " تُطْعِمُهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ، وَلَا تُقَبِّحْ، وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ ". قَالَ: " تُحْشَرُونَ هَاهُنَا وَأَوْمَأَ بِيَدِهِ إِلَى نَحْوِ الشَّامِ مُشَاةً وَرُكْبَانًا، وَعَلَى وُجُوهِكُمْ تُعْرَضُونَ عَلَى اللهِ وَعَلَى أَفْوَاهِكُمُ الْفِدَامُ، وَأَوَّلُ مَا يُعْرِبُ عَنْ أَحَدِكُمْ فَخِذُهُ «.
হাকিম ইবন মু‘আওয়িয়াহ্ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আসলাম। এসে বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার কাছে আসার পূর্বে এই সংখ্যার (আমার দুই হাতের আঙ্গুলসমূহের সংখ্যার) চেয়েও অধিক সংখ্যক শপথ করেছিলাম যে, আমি আপনার কাছে আসব না (আপনার ধর্মও গ্রহণ করব না)। আমাদেরকে এ সময় আফফান (একজন বর্ণনাকারী) তার হাত দুটি একত্রিত করেন। সে সত্তার কসম করে বলছি যিনি আপনাকে সত্যসহকারে প্রেরণ করেছেন, আল্লাহ আপনাকে আমাদের কাছে কী দিয়ে প্রেরণ করেছেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম দিয়ে। মু‘আবিয়া বললেন, ইসলাম কী? তিনি বললেন, তা হচ্ছে এই যে, তুমি বলবে, আমি আমার মুখমণ্ডল (নিজ সত্তা) সমর্পণ করলাম (আল্লাহর নিকট) এবং যাবতীয় শির্ক থেকে নিজেকে মুক্ত করলাম। ফরয সালাত কায়েম করবে, ফরয যাকাত প্রদান করবে এবং (জেনে রেখ) মুসলিমরা পরস্পর সহযোগী ভাই। ইসলাম গ্রহণ করার পর কেউ শির্ক করলে আল্লাহ তার কোনো ভালো আমল গ্রহণ করেন না (যতক্ষণ না সে তওবা করে মুসলিমের দলে ফিরে আসে)। আমি বললাম, আমাদের ওপর আমাদের স্ত্রীর অধিকার কী? তিনি বললেন, তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খাওয়াবে, তোমরা যা পরিধান করবে তাদেরকেও তা পরিধান করাবে, তাদের চেহারায় আঘাত করবে না (তাদেরকে বেদম প্রহর করবে না) এবং তাদেরকে গালমন্দ করবে না। তাদেরকে গৃহ ব্যতীত অন্য কোথাও পরিত্যাগ করবে না অর্থাৎ তাদেরকে ঘর থেকে বের করে দিবে না।
তিনি বললেন, তোমাদেরকে এখান থেকে – শামের দিকে ইশারা করে- আল্লাহর দরবারে পায়ে হেঁটে, আরোহী অবস্থায় ও মুখের উপর ভর করে উপস্থিত হতে হবে, (সে দিন) তোমাদের মুখে (জিহ্বায়) ছাঁকনি (আঁটি) লাগিয়ে দেওয়া হবে, তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করবে এবং নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম যে অঙ্গ তোমাদের সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবে তা হচ্ছে তোমাদের উরু”।
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২০০২২; আবু দাউদ, হাদীস নং ২১৪২; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ১৬০; নাসায়ী, হাদীস নং ২৪৩৬; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৩৬।
وَقَالَ: «مَا مِنْ مَوْلًى يَأْتِي مَوْلًى لَهُ، فَيَسْأَلُهُ مِنْ فَضْلٍ عِنْدَهُ فَيَمْنَعُهُ إِلَّا جَعَلَهُ اللهُ عَلَيْهِ شُجَاعًا يَنْهَشُهُ قَبْلَ الْقَضَاءِ».
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন, “কোনো দাস যদি তার মনিবের কাছে এসে এমন কোনো অনুগ্রহ চায় যা তার কাছে আছে, কিন্তু সে তাকে সে অনুগ্রহ (সম্পদ) প্রদান করা থেকে বিরত থাকে, তবে সেসব অনুগ্রহকে আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর বিষাক্ত সাপ বানিয়ে তাকে দংশন করাতে থাকবে যতক্ষণ না তাদের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন হবে।”
হাসান, মুসনাদ আহমদ, হাদীস নং ২০০২৩।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ».
ইবন ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল, এ কথার সাক্ষ্য দান, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রমযান মাসের সাওম পালন করা”।
মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬ বা ২২, হাদীসের শব্দাবলী বুখারীর।