ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহ:) এর দৃষ্টিতে আবু হানিফা কি মুরজিয়া ছিলেন?
ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহি:) এর অবস্থান ইমাম আবু হানিফা (রাহ:) এর ব্যাপারে ইতিবাচক ছিল বলেই ধরা হয়। এর সপক্ষে প্রমাণও রয়েছে। যেমন তিনি চার মাযহাবের ইমামদের ইখতিলাফ প্রসঙ্গে একটা কিতাব লিখে তাদেরকে ডিফেন্ড করেছেন (কিতাবের নাম: আর রাফউল মা'লাম আন আল আইম্মাতিল আলাম)
তবে জ্ঞাতব্য যে, ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর নিকটেও ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) মুরজিয়াতুল ফুকাহাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি তার কিতাবে একটি বাব রচনা করে শিরোনাম দিয়েছেন,
أبو حنيفة وأصحابه (مرجئة الفقهاء)
আবু হানিফা ও তার অনুসারীগণ মুরজিয়াতুল ফুকাহা।
অতপর লিখেছেন,
الفرقة التاسعة من المرجئة: المنتسبين إلى أبي حنيفة وأصحابه، يزعمون أن الإيمان المعرفة بالله، والإقرار بالله، والمعرفة بالرسول (2)، والإقرار بما جاء من عند الله في الجملة دون التفسير
মুরজিয়াদের নবম ফিরকা হলো: যারা আবু হানিফা ও তার অনুসারীদের সাথে সম্পৃক্ত, তারা দাবি করে যে ঈমান হচ্ছে কেবল আল্লাহর সম্পর্কে জ্ঞান, আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, রাসূল ﷺ সম্পর্কে জ্ঞান এবং আল্লাহর নিকট হতে যে ওহী এসেছে তা বিনা বাক্যে গ্রহণ করা।
আল ঈমানুল আওসাত্ব, ৪৩৬ পৃষ্ঠা, দারুল ইবনিল জাওযিয়্যাহ হতে প্রকাশিত। (স্ক্যানকপি পোস্টে সংযুক্ত)
(মুরজিয়াতুল ফুকাহাগণ আমলকে ঈমানের শর্ত বলে গণ্য করেন না, যা আহলুস সুন্নাহর আকাইদের পরিপন্থী বিধায় ইবনু তাইমিয়্যাহ নবম ফিরকাহ হিসেবে আবু হানিফা ও তার অনুসারীদের কথা উল্লেখ্য করেছেন)
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) অন্যত্র লিখেছেন,
دخل في "إرجاء الفقهاء" جماعة هم عند الأمة أهل علم ودين، ولهذا لم يكفر أحد من السلف أحدا من مرجئة الفقهاء؛ بل جعلوا هذا من بدع الأقوال والأفعال، لا من بدع العقائد؛ فإن كثيرا من النزاع فيها لفظي، لكن اللفظ المطابق للكتاب والسنة هو الصواب، فليس لأحد أن يقول بخلاف قول الله ورسوله، لا سيما وقد صار ذلك ذريعة إلى بدع أهل الكلام من أهل الإرجاء وغيرهم، وإلى ظهور الفسق فصار ذلك الخطأ اليسير في اللفظ سببا لخطأ عظيم في العقائد والأعمال
ইমামদের একটি জামআত "মুরজিয়াতুল ফুকাহা" দের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যারা দ্বীনের বড় উলামা হিসেবে পরিগণিত ছিলেন। যার ফলে সালাফদের কেউই মুরজিয়াতুল ফুকাহাদের মাঝে কাউকে কাফির হিসেবে আখ্যায়িত করেননি। বরং তারা একে বক্তব্য ও আমল সংক্রান্ত বিদআত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, আক্বীদা সংক্রান্ত বিদআত হিসেবে আখ্যা দেননি। কারণ, এক্ষেত্রে অধিকাংশ মতবিরোধ বাচনিক বা শাব্দিক অর্থে ছিল (প্রকৃতার্থে নয়)। তবে, শাব্দিক অর্থও কুরআন-সুন্নাহর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হলেই কেবল তা সঠিক বলে প্রতিপন্ন হবে। তাই, আল্লাহ ও তার রাসূলের কথার বিপরীত কোনো কথা বলার অধিকার কারোই নেই। বিশেষ করে যেহেতু এটি আহলুল কালাম তথা মুরজিয়া এবং অন্যান্যদের বিদআতের স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে কাজ করছে। তাই পাপাচারের বিস্তার ঘটানোর দায়ে এরূপ শাব্দিকতার ছোট ভুলটিও আক্বীদা ও আমল সংক্রান্ত বৃহদাকার ভুলে পরিণত হবার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাক্বরীব ফাতাওয়া ওয়া রাসাঈল শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, ৫৭৬ পৃষ্ঠা, দারুল ইবনিল জাওযিয়্যাহ হতে প্রকাশিত।
শায়েখ আব্দুল আজিজ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) একে কেবল লাফযি/শাব্দিক ইখতিলাফ হবার মতটি মেনে নেননি। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
الصواب أنه ليس لفظيًّا، وإن قال بعضُهم أنه لفظي، بل هو حقيقي معنوي؛ لأنا إذا قلنا: "العمل ليس من الإيمان" يلزم على هذا أنه إذا مات على قولٍ وعقيدةٍ من دون عملٍ أنه كامل الإيمان، وكامل الإيمان يدخل الجنة
সঠিকতর মত হচ্ছে এটি কেবল শাব্দিক ইখতিলাফ নয়, যদিও কেউ কেউ একে কেবল লাফযি ইখতিলাফ বলে দাবি করেছেন। তবে এটি গুরুতর ও নৈতিক ইখতিলাফ। কারণ, আমরা যদি বলি, "আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়", তাহলে এর মানে দাঁড়াবে যে কেউ আমল করা ব্যতীত কেবল মৌখিক স্বীকৃতি ও অন্তরে বিশ্বাস নিয়ে মারা গেলেও সে ঈমানের শর্ত পূর্ণ করবে আর পূর্ণ ঈমানদার জান্নাতে প্রবেশ করবে।
[শায়েখ আব্দুল আযিয বিন বায (রাহ.) এর অফিসিয়াল সাইট থেকে ফতোয়া সংগ্রহীত। ফতোয়া নং ২০৯৬৪। কমেন্টে লিংক দেয়া থাকবে।]
খেয়াল করুন, শায়েখ বিন বায (রাহ:) বুঝাচ্ছেন একে শাব্দিক বা লাফযি ছোট ইখতিলাফ বলে ধরলে তার মানে দাঁড়াবে কেউ আমল না করেও জান্নাতে চলে যেতে পারবে, যেহেতু মুরজিয়াতুল ফুকাহাদের মতে মৌখিক স্বীকৃতি ও অন্তরে বিশ্বাসই ঈমানের শর্ত পূরণে করতে যথেষ্ট। তাই একে লাফযি ইখতিলাফ বলা ভুল।
আর ইবনু তাইমিয়্যাহ সালাফদের থেকে মুরজিয়াতুল ফুকাহাদের কাফির না হওয়া বা আকীদাগত ক্ষেত্রে বিদআতী না হওয়ার মতটি বর্ণনা করেও শেষে যেয়ে বলেছেন, এই লাফযি ভুলটিই ফিসক ছড়ানোর দরুণ আক্বীদাগত ও আমলসংক্রান্ত বড় ভুলের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কাজেই কেউ কীভাবে বলতে পারে আবু হানিফা ইরজা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত বা তার আক্বীদা আহলুস সুন্নাহর আক্বীদা?
সাফিন চৌধুরী।
Facebook: Shafin Chowdhury
Our Group; The Ideology of Salaf
ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহি:) এর অবস্থান ইমাম আবু হানিফা (রাহ:) এর ব্যাপারে ইতিবাচক ছিল বলেই ধরা হয়। এর সপক্ষে প্রমাণও রয়েছে। যেমন তিনি চার মাযহাবের ইমামদের ইখতিলাফ প্রসঙ্গে একটা কিতাব লিখে তাদেরকে ডিফেন্ড করেছেন (কিতাবের নাম: আর রাফউল মা'লাম আন আল আইম্মাতিল আলাম)
তবে জ্ঞাতব্য যে, ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) এর নিকটেও ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) মুরজিয়াতুল ফুকাহাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি তার কিতাবে একটি বাব রচনা করে শিরোনাম দিয়েছেন,
أبو حنيفة وأصحابه (مرجئة الفقهاء)
আবু হানিফা ও তার অনুসারীগণ মুরজিয়াতুল ফুকাহা।
অতপর লিখেছেন,
الفرقة التاسعة من المرجئة: المنتسبين إلى أبي حنيفة وأصحابه، يزعمون أن الإيمان المعرفة بالله، والإقرار بالله، والمعرفة بالرسول (2)، والإقرار بما جاء من عند الله في الجملة دون التفسير
মুরজিয়াদের নবম ফিরকা হলো: যারা আবু হানিফা ও তার অনুসারীদের সাথে সম্পৃক্ত, তারা দাবি করে যে ঈমান হচ্ছে কেবল আল্লাহর সম্পর্কে জ্ঞান, আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, রাসূল ﷺ সম্পর্কে জ্ঞান এবং আল্লাহর নিকট হতে যে ওহী এসেছে তা বিনা বাক্যে গ্রহণ করা।
আল ঈমানুল আওসাত্ব, ৪৩৬ পৃষ্ঠা, দারুল ইবনিল জাওযিয়্যাহ হতে প্রকাশিত। (স্ক্যানকপি পোস্টে সংযুক্ত)
(মুরজিয়াতুল ফুকাহাগণ আমলকে ঈমানের শর্ত বলে গণ্য করেন না, যা আহলুস সুন্নাহর আকাইদের পরিপন্থী বিধায় ইবনু তাইমিয়্যাহ নবম ফিরকাহ হিসেবে আবু হানিফা ও তার অনুসারীদের কথা উল্লেখ্য করেছেন)
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) অন্যত্র লিখেছেন,
دخل في "إرجاء الفقهاء" جماعة هم عند الأمة أهل علم ودين، ولهذا لم يكفر أحد من السلف أحدا من مرجئة الفقهاء؛ بل جعلوا هذا من بدع الأقوال والأفعال، لا من بدع العقائد؛ فإن كثيرا من النزاع فيها لفظي، لكن اللفظ المطابق للكتاب والسنة هو الصواب، فليس لأحد أن يقول بخلاف قول الله ورسوله، لا سيما وقد صار ذلك ذريعة إلى بدع أهل الكلام من أهل الإرجاء وغيرهم، وإلى ظهور الفسق فصار ذلك الخطأ اليسير في اللفظ سببا لخطأ عظيم في العقائد والأعمال
ইমামদের একটি জামআত "মুরজিয়াতুল ফুকাহা" দের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যারা দ্বীনের বড় উলামা হিসেবে পরিগণিত ছিলেন। যার ফলে সালাফদের কেউই মুরজিয়াতুল ফুকাহাদের মাঝে কাউকে কাফির হিসেবে আখ্যায়িত করেননি। বরং তারা একে বক্তব্য ও আমল সংক্রান্ত বিদআত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন, আক্বীদা সংক্রান্ত বিদআত হিসেবে আখ্যা দেননি। কারণ, এক্ষেত্রে অধিকাংশ মতবিরোধ বাচনিক বা শাব্দিক অর্থে ছিল (প্রকৃতার্থে নয়)। তবে, শাব্দিক অর্থও কুরআন-সুন্নাহর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হলেই কেবল তা সঠিক বলে প্রতিপন্ন হবে। তাই, আল্লাহ ও তার রাসূলের কথার বিপরীত কোনো কথা বলার অধিকার কারোই নেই। বিশেষ করে যেহেতু এটি আহলুল কালাম তথা মুরজিয়া এবং অন্যান্যদের বিদআতের স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে কাজ করছে। তাই পাপাচারের বিস্তার ঘটানোর দায়ে এরূপ শাব্দিকতার ছোট ভুলটিও আক্বীদা ও আমল সংক্রান্ত বৃহদাকার ভুলে পরিণত হবার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাক্বরীব ফাতাওয়া ওয়া রাসাঈল শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, ৫৭৬ পৃষ্ঠা, দারুল ইবনিল জাওযিয়্যাহ হতে প্রকাশিত।
শায়েখ আব্দুল আজিজ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) একে কেবল লাফযি/শাব্দিক ইখতিলাফ হবার মতটি মেনে নেননি। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
الصواب أنه ليس لفظيًّا، وإن قال بعضُهم أنه لفظي، بل هو حقيقي معنوي؛ لأنا إذا قلنا: "العمل ليس من الإيمان" يلزم على هذا أنه إذا مات على قولٍ وعقيدةٍ من دون عملٍ أنه كامل الإيمان، وكامل الإيمان يدخل الجنة
সঠিকতর মত হচ্ছে এটি কেবল শাব্দিক ইখতিলাফ নয়, যদিও কেউ কেউ একে কেবল লাফযি ইখতিলাফ বলে দাবি করেছেন। তবে এটি গুরুতর ও নৈতিক ইখতিলাফ। কারণ, আমরা যদি বলি, "আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়", তাহলে এর মানে দাঁড়াবে যে কেউ আমল করা ব্যতীত কেবল মৌখিক স্বীকৃতি ও অন্তরে বিশ্বাস নিয়ে মারা গেলেও সে ঈমানের শর্ত পূর্ণ করবে আর পূর্ণ ঈমানদার জান্নাতে প্রবেশ করবে।
[শায়েখ আব্দুল আযিয বিন বায (রাহ.) এর অফিসিয়াল সাইট থেকে ফতোয়া সংগ্রহীত। ফতোয়া নং ২০৯৬৪। কমেন্টে লিংক দেয়া থাকবে।]
খেয়াল করুন, শায়েখ বিন বায (রাহ:) বুঝাচ্ছেন একে শাব্দিক বা লাফযি ছোট ইখতিলাফ বলে ধরলে তার মানে দাঁড়াবে কেউ আমল না করেও জান্নাতে চলে যেতে পারবে, যেহেতু মুরজিয়াতুল ফুকাহাদের মতে মৌখিক স্বীকৃতি ও অন্তরে বিশ্বাসই ঈমানের শর্ত পূরণে করতে যথেষ্ট। তাই একে লাফযি ইখতিলাফ বলা ভুল।
আর ইবনু তাইমিয়্যাহ সালাফদের থেকে মুরজিয়াতুল ফুকাহাদের কাফির না হওয়া বা আকীদাগত ক্ষেত্রে বিদআতী না হওয়ার মতটি বর্ণনা করেও শেষে যেয়ে বলেছেন, এই লাফযি ভুলটিই ফিসক ছড়ানোর দরুণ আক্বীদাগত ও আমলসংক্রান্ত বড় ভুলের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কাজেই কেউ কীভাবে বলতে পারে আবু হানিফা ইরজা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত বা তার আক্বীদা আহলুস সুন্নাহর আক্বীদা?
সাফিন চৌধুরী।
Facebook: Shafin Chowdhury
Our Group; The Ideology of Salaf
Attachments
Last edited: