সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
FORUM BOT

প্রশ্নোত্তর আহলুস সুন্নাহ অল জামায়াতের আকীদাহ ও বিশ্বাসের মূলনীতি ও ইহার বিষয়গুলি কী কী?

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,135
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
34,836
Credits
24,212
আহলুস সুন্নাহ অল জামায়াতের আকীদাহ ও বিশ্বাসের মূলনীতি ও ইহার বিষয়গুলি কী কী?


উত্তর: তাদের অনুসৃত মূলনীতিসমূহ সুস্পষ্ট বিশ্বাস, আমল এবং আখলাক (চরিত্র) দ্বারা প্রমাণিত। যার বিষয়গুলো নিম্নরূপ:


প্রথম মূলনীতি: আল্লাহর প্রতি ঈমান, তাঁর ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান তাঁর নাযিলকৃত কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, আখিরাত দিবস এবং তক্বদীরের ভাল মন্দের প্রতি ঈমান।


দ্বিতীয় মূলনীতি: মুখের স্বীকৃতি, অন্তরের বিশ্বাস এবং তদনুযায়ী কাজের নামেই হচ্ছে ঈমান। নেক কাজে ঈমান বাড়ে এবং পাপকাজে কমে।


তৃতীয় মূলনীতি: তাঁরা কোনো মুসলিমকে কাফের বলে না যতক্ষণ কোনো ব্যক্তির ইসলাম বরবাদ না হয় কিংবা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল না বলে।


চতুর্থ মূলনীতি: তারা মুসলিম শাসকদের আনুগত্য ওয়াজিব মনে করে। তবে তা আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজের আদেশ প্রদান না করা পর্যন্ত। যখন আল্লাহর নাফরমানী করার আদেশ প্রদান করবে তখন তার আনুগত্য করা নাজায়েয। যেমন: নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:


لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ "


“মহান আল্লাহর অবাধ্যজনক কাজের ব্যাপারে কোনো সৃষ্টির আনুগত্য করা নিষিদ্ধ’’। (মুসনাদে আহমাদ ৬/৪৩২, নং ৩৮৮৯)


পঞ্চম মূলনীতি: কোনো প্রকার কুফরী কাজে জড়িত না হওয়া পর্যন্ত এবং অন্যান্য সাধারণ ভুল-ত্রুটির কারণে মুসলিম শাসক নেতৃবৃন্দের উপর আক্রমণ করা বা তাদের বিরোধিতায় নিপতিত হওয়া হারাম। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:


إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا، عِنْدَكُمْ مِنَ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ»


‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা স্পষ্ট কুফরী না দেখবে, যাতে তোমাদের কাছে স্পষ্ট দলীল রয়েছে’’। (বুখারী, ৭০৫৬)


ষষ্ঠ মূলনীতি: আল্লাহর রাসূলের সাহাবীগণ যারা সবধরনের ত্যাগ তিতিক্ষা, জিহাদ, সংগ্রাম করেছেন, প্রথম পর্যায়ে ঈমান এনেছেন, দীন কবুল করেছেন তাদের সম্মান ও মর্যাদার ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত সুন্দর ধারণা পোষণ করে এব যথাযত মূল্যায়ণে ত্রুটি করে না।


সপ্তম মূলনীতি: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয় পরিজনকে ভালোবাসা, তাদেরকে আপনজন মনে করা কর্তব্য। নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের ব্যাপারে অসিয়ত করেছেন, তিনি বলেন:


«أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتي»


‘‘আমি তোমাদেরকে আমার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি’’। (মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৮)


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার পরিজনদের মধ্যে আছেন: তাঁর স্ত্রীগণ, যারা মুমিনদের মাতা। তবে জ্ঞাতব্য যে, তাঁর পরিবারের মধ্যে তাঁরাই অন্তর্ভুক্ত; যারা সত্যদীন গ্রহণকারী, নেক্কার, ঈমানদার আত্মীয় স্বজন। পক্ষান্তরে যারা ঈমান আনে নি তারা কেউই সম্মান,মর্যাদার অধিকারী নয়। কেননা তারা কুফরী অবলম্বন করে মহান আল্লাহর নাফরমানদের অন্তর্ভুক্ত।


অষ্টম মূলনীতি: আল্লাহর ওলী তথা বন্ধুদের কারামাত সত্য। আর কারামত হচ্ছে: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় বান্দাদের মর্যাদার নিদর্শনস্বরূপ কারো কারো মাধ্যমে আলৌকিক ঘটনা দেখিয়ে থাকেন যা স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম এবং এগুলোকেই আরবী পরিভাষায় কারামত বলে। কুরআন সুন্নাহ দ্বারা কারামতের সত্যতা প্রমাণিত। তবে আউলিয়াদের কারামত এবং ভণ্ডদের ভেল্কিবাজির মধ্যে পার্থক্য আছে। কেননা ভেল্কিবাজি হচ্ছে জাদুকর সাধু-সন্ন্যাসী এবং শয়তানের কাজ, যা দ্বারা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।


নবম মূলনীতি: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামা‘আত আল্লাহর কিতাব, তাঁর রাসূলের সুন্নাতের অনুগত এবং কুরআন-সুন্নাহই তাদের দলীল। আর তারা সাহাবীগণের (তাদের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হোন) অনুসৃত নীতিসমূহ মেনে চলেন।


আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামা‘আত উত্তম চরিত্র এবং উন্নত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাঁরা সৎকাজের আদেশ দান করে এবং অন্যায় কাজে বাধা দান করে। তাঁরা দীন ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান সংরক্ষণ করে এবং পরস্পরকে নছিহত করে। ভালো কাজ ও পরহেযগারীতে তারা একে অন্যের সহযোগী, তাঁরা পিতা-মাতার সাথে সদাচারণ করে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। সুতরাং আমাদের কর্তব্য হবে তাদের মূলনীতি ও আদর্শ গ্রহণ করে তাঁদের দলভুক্ত হওয়া।


সর্বোচ্চ মর্যাদাবান মহামহিয়ান আল্লাহ আমাদেরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত করে দিন এবং তিনি যেন আমাদেরকে দীন ইসলাম ও সুন্নাতের উপর মৃত্যু দান করেন। আল্লাহ যেন তাঁর প্রিয় আউলিয়াদের সাথে মর্যাদাপূর্ণ শান্তিময় ঘরে আমাদেরকে মাতা-পিতা, সংগী সাথী, স্ত্রী এবং সন্তানদের সহ একত্রিত করে দেন। তিনি যেন সন্তানদের মাধ্যমে আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেন। আমাদেরকে মুত্তাকীদের ইমাম বানিয়ে দেন।


আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন।


সূত্রঃ প্রশ্নোত্তরে তাওহীদ
লেখকঃ ড. ইবরাহীম ইবন সালেহ আল-খুদ্বায়রী
 
Top