‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

আকিদা আসমাউস সিফাতের তাওয়ীল করা দ্বারা উদ্দেশ্য

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
690
Comments
1,222
Solutions
17
Reactions
7,089
Credits
5,753
সিফাতের তাওয়ীল হলো, ঐ প্রকৃত অবস্থা যা একমাত্র আল্লাহই জানেন তা হচ্ছে সিফাতের ধরণ, যা অজ্ঞাত। ইমাম মালেক ও অন্যান্য সালাফে সালেহীন এটাই উদ্দেশ্য নিয়েছেন যখন তারা বলেছেন,

الاستواء معلوم، والكيف مجهول​

“ইস্তেওয়া এর অর্থ জানা রয়েছে (অর্থাৎ উপরে উঠা) কিন্তু ধরণ অজানা।”

সুতরাং ‘ইস্তেওয়া’ এর অর্থ জানা ও জ্ঞাত। এটাকে অন্য ভাষায় অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করা যাবে। এটা এমন তাওয়ীল যা ইলমে সুদৃঢ়পদগণ জানেন। কিন্তু সে ‘ইস্তেওয়া' বা উপরে উঠার ধরণ সেটাই ঐ তাওয়ীল যা একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না।

ইবন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে, যা আব্দুর রায্যাক (১) ও অন্যান্যগণ (২) তাদের তাফসীরে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, “কুরআনের তাফসীর চার ধরনের:

(১) ঐ তাফসীর যা আরবগণ তাদের কথায় জানে ও বুঝে।​
(২) ঐ তাফসীর যা সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার ওযর গ্রহণযোগ্য নয়।​
(৩) ঐ তাফসীর যা আলেমগণ জানেন।​
(৪) ঐ তাফসীর যা কেবল আল্লাহ জানেন, যে ওটা জানার দাবি করবে সে মিথ্যাবাদী।”(৩)

এটা ঐরকম যেমন আল্লাহ বলেছেন:

فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةٍ أَعْيُنٍ جَزَاء بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ​

“অতএব কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ!” [সূরা আস-সাজদাহ: ১৭]

অনুরূপ নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তা'আলা বলেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি যা কোনো চোখ দেখেনি, কোনো কান শুনেনি এবং কোনো মানুষের অন্তর কল্পনা করেনি।”(৪)

তেমনি কিয়ামতের জ্ঞান ইত্যাদি।

এটা ঐ তা’ওয়ীল যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না, যদিও আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে যা কিছু বলা হয়েছে তার অর্থ আমরা বুঝি, অনুরূপ আমাদেরকে বুঝানোর উদ্দেশ্যে যে বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে তাও আমরা বুঝি।(৫)

কেননা আল্লাহ বলেছেন:
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْءَانَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا​

“তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে?” [সূরা মুহাম্মদ : ২৪]

তিনি আরও বলেন,

أَفَلَمْ يَدَّبَّرُوا الْقَوْلَ​

“তবে কি তারা এ বাণীতে চিন্তা-গবেষণা করেনি?” [সূরা আল-মুমিনুন: ৬৮]

এখানে তিনি পূর্ণ কুরআন গবেষণা করতে নির্দেশ দিয়েছেন, আংশিক নয়। আবু আব্দুর রহমান সুলামী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

حدثنا الذين كانوا يُقرؤوننا القرآن عثمان بن عفان وعبد الله بن مسعود، وغيرهما : أنهم كانوا إذا تعلموا من النبي صلى الله عليه وسلم عشر آيات لم يتجاوزوها حتى يتعلموا ما فيها من العلم والعمل. قالوا: فتعلمنا القرآن والعلم والعمل جميعا.​

“আমাদেরকে যারা কুরআন পড়াতেন; যেমন উসমান, ইবন মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু “আনহুমা তারা আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, তারা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দশটি আয়াত শিখলে তার মধ্যকার ইলম শেখা ও আমল শেখা ব্যতিরেকে সেগুলো অতিক্রম করত না। তাদের উক্তি আমরা কুরআন, ইলম, আমল সবটাই শিখেছি।”(৬)

মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

عرضت المصحف على ابن عباس - رضي الله عنهما - من فاتحته إلى خاتمته، أقف عند كل آية أسأله عنها​

আমি ইবন ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহুমার নিকট মুসহাফ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পেশ করেছি। প্রত্যেক আয়াতের শেষে থেমে সে সম্পর্কে আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছি।”(৭)

শা'বী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

ما ابتدع أحد بدعة إلا وفي كتاب الله بيانها​

“যে কেউ নতুন কিছু উদ্ভাবন করলেই আল্লাহর কিতাবে তার বর্ণনা রয়েছে।” (৮)

মাসরুক রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

ما قال أصحاب محمد صلى الله عليه وسلم عن شيء إلا وعِلْمُه في القرآن، ولكن عِلْمُنا قَصُرَ عنه».​

“মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীগণ যা কিছুই বলেছেন, তার জ্ঞান কুরআনে বিদ্যমান। তবে আমাদের জ্ঞান সে ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতায় রয়েছে।”(৯) এর বিস্তারিত বিবরণ স্বীয় স্থানে বর্ণিত হয়েছে।(১০)

এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐসব ভ্রান্ত মতবাদসমূহের ‘মুলনীতি'র ব্যাপারে সতর্ক করা’ যেগুলো রাসূলের আনীত ইলম ও ঈমান অধ্যায়ে বিভ্রান্তিকর ও ভ্রষ্টতা আবশ্যক করেছে। আর (এ বিষয়েও সাবধান করা যে) রাসূলকে কেউ যদি এমন বানায় যে, তার প্রতি যে কুরআন নাযিল হয়েছে তার অর্থ সম্পর্কে তিনি জ্ঞান রাখেন না, তদ্রূপ জিবরীলকেও এমন বানায় যে, তিনি শ্রুত তথা আকীদা বিষয়ে জ্ঞান রাখেন না, তাহলে তো সে কুরআনকে হিদায়াতকারী হিসেবে নেয়নি, মানুষের জন্য সেটাকে বর্ণনা হিসাবেও গ্রহণ করেনি।

আরও পড়ুন - ফাতওয়া আল হামাউইয়্যা


১। তিনি হচ্ছেন আব্দুর রায্যাক ইবন হাম্মাম ইবন নাফে' আল-হিমইয়ারী আস-সান'আনী। তার যমানার সবচেয়ে বড় হাফেযদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি হাদীস শুনেছেন হিশাম ইবন হাসসান, উবাইদুল্লাহ ইবন ‘উমার, তার ভাই আব্দুল্লাহ, ইবন জুরাইজ, মা'মার প্রমুখ থেকে, তবে তিনি মা'মার থেকে বেশি নিয়েছেন। আর তার থেকে হাদীস গ্রহণ করেন তার শিক্ষক সুফইয়ান ইবন উয়াইনাহ, মু'তামির ইবন সুলাইমান, আহমাদ ইবন হাম্বল, ইবন রাহওয়াইহি, ইবন মা‘ঈন, ইবনুল মাদীনী প্রমুখ। আব্দুর রায্যাক বলেন, আমি আট বছর মামারের সঙ্গী ছিলাম। হিশাম ইবন ইউসুফ বলেন, আব্দুর রায্যাক আমাদের মধ্যে বড় আলেম ও বড় হাফেয। তিনি হিজরী ২১১ সালে মারা যান। তার গ্রন্থসমূহের অন্যতম হচ্ছে, মুসান্নাফ, তাফসীর। বলা হয়ে থাকে, আব্দুর রাযযাক সতেরো হাজার হাদীস মুখস্থ জানতেন।দেখুন, ইবন সা'দ, আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা (৫/৫৪৮); ইবনু খাল্লিকান, ওফায়াতুল আ'ইয়ান (৩/২১৬); ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা (৯/৫৬৩); ইবন হাজার, তাহযীবুত তাহযীব ( ৬/৩১০)।

২। অন্যান্যগণের মধ্যে অবশ্যই রয়েছেন ইবন জারীর আত-তাবারী।

৩। দেখুন, তাবারী, তাফসীর (১/৩৪); ইবন কাসীর, তাফসীর (১/১৮), (২/৭); আরও দেখুন, সুয়ূত্বীর আদ-দুররুল মানসূর (২/১৫১-১৫২)।

৪। বুখারী, আল-জামে'উস সহীহ, হাদীস নং ৩২৪৪, ৪৭৭৬, ৪৭৭৯, ৪৭৮০, ৭৪৯৮; মুসলিম, আস- সহীহ, হাদীস নং ২৮২৪।

৫। অর্থাৎ কুরআনে কারীমে এমন কোনো কোনো ভাষ্য এসেছে যার আসল তাফসীর একমাত্র আল্লাহ জানেন, কিন্তু সেগুলোর শব্দার্থ ও সেগুলোর দ্বারা আল্লাহ কী বুঝাতে চাচ্ছেন তা মোটামোটি বুঝি। অথচ এগুলো নিয় চিন্তা-গবেষণা করারও উদ্দেশ্য।

৬। মুসনাদে আহমাদ (৫/৪১০), হাদীস নং ২৩৪৮২; ইবন আবী শাইবাহ, আল-মুসান্নাফ, হাদীস নং ৩০৫৪৯; তাবারী, আত-তাফসীর (১/৩৫-৩৬); হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (১/৫৫৭); ইবন সা'দ, আত-ত্বাবাক্বাত (৬/১৭২); মুহাম্মাদ ইবন ওয়াদ্বাহ আল-কুরতুবী, আল-বিদা'উ ওয়ান নাহইয়ু 'আনহা, পৃ. ৮৬; বাইহাক্বী, আস-সুনান আল-কুবরা (৩/১১৯-১২০); ত্বাহাউই, মুশকিলুল আসার (১৪৫১); তাহাউই, মুশকিলুল আসার, হাদীস নং ১৪৫০।

৭। ইবন আবী শাইবাহ, আল-মুসান্নাফ, হাদীস নং ৩০৯১৮; দারেমী, আস-সুনান, হাদীস নং ১১২০; তাবারী, আত-তাফসীর (১/৯০), নং ১০৮; আত-ত্বাবারানী, আল-মু'জামুল কাবীর ( ১১/৭৭), হাদীস নং ১১০৯৭; হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (২/৩০৭); আবু নু'আইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া (৩/২৭৯- ২৮০); ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ'লামিন নুবালা (৪/৪৬৫-৪৫৭); ইবন কাসীর, আত-তাফসীর

৮। আল-খাল্লাল, আস-সুন্নাহ (১/৫৪৭); অনুরূপ ইবনুল কাইয়্যেম, আস-সাওয়া'য়িকুল মুরসালাহ (৩/৯২৫)।

৯। আবু খাইসামাহ যুহাইর ইবন হারব, আল-ইলম, পৃ. ৫০; খত্বীব আল-বাগদাদী, আল-ফকীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ (১/১৯৭), নং ১৯৫। ইবন তাইমিয়্যাহ, দারউত তা আরুদ্ধ (১/২০৮), (৫/৫৭); ইবনুল কাইয়্যেম, আস-সাওয়া'য়িক (৩/৯২৫)।

অপর বর্ণনায় এসেছে, মাসরূক বলেন, প্রবৃত্তির অনুসারীরা (বিদ'আতীরা) যেই হোক না কেন, আল্লাহর কুরআনে সেটার খণ্ডন রয়েছে। তবে হয়ত কখনও কখনও আমরা সেটার হদিস পাই না। [হারওয়ী, যাম্মুল কালাম, নং ২০৪]

অনুরূপ ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “মানুষ যদি পুরো কুরআন নিয়ে গবেষণা করতো, তাহলে তাতে প্রতিটি বিদ'আতী ও তার বিদ'আতের জবাব খুঁজে পেত।” [হারওয়ী, যাম্মুল কালাম, পৃ. ৬৯]

১০। যেমন, দারউত তা‘আরুদ্ধ (৫/৫৬-৫৭); তাছাড়া কুরআন ধারণ করার জন্য আরও কিছু আছার দেখাযেতে পারে, যেমন ইবন মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “তোমরা যদি ইলম বা জ্ঞান চাও তাহলে কুরআনে খুঁজে বেড়াও; কারণ তাতে পূর্বের ও পরের ইলম রয়েছে।” [আত-ত্বাবারানী, আল-কাবীর (৯/১৩৫); বাইহাক্বী, আশ-শু'আব (৩/৩৪৭)] এ বিষয়ে আরও দেখা যেতে পারে, ইবনুল মুবারক, আয- যুহদ, নং ৮১৪; মারওয়াযী, মুখতাসারু কিয়ামিল্লাইল, নং ২১৩; যাহাবী, তাযকিরাতুল হুফফায (১/১৬)।
 

Share this page