আল-কুরআন মহান আল্লাহর কথা ও অবতীর্ণ বাণী, এতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি স্বয়ং এ বাণীর প্রবক্তা। তিনি তা বলেছেন, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তা শুনেছেন এবং আল্লাহর নির্দেশে জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তা নিয়ে শেষনবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিকট অবতীর্ণ হয়েছেন। শেষনবী (ﷺ) তাঁর নিকট থেকে শুনেছেন এবং স্মৃতিস্থ করেছেন। যারা মুমিন এবং জ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত, তারা এ কিতাবে বিশ্বাস করে। আর যাদের অন্তরে বক্রতা ও সত্য-লঙ্ঘন প্রবণতা রয়েছে, তারা এটাতে সন্দেহ ও মিথ্যা অভিযোগ করে।
আল-কুরআনের ব্যাপারে অমুসলিমদের সন্দেহ ও মিথ্যা অভিযোগ এবং মহান আল্লাহর চ্যালেঞ্জ
মহান আল্লাহর কথা ন্যায়সঙ্গত। সত্যতা, ন্যায়, সমতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ। তাঁর কথার কোন পরিবর্তনকারী নেই। বহু হতভাগা মানুষ তাঁর বাণীতে সন্দেহ পোষণ করে পরিবর্তন করতে চায় এবং প্রচার করতে বাধা দেয়। অথচ তাঁর কথা পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই।
মহান আল্লাহ বলেন,
‘তারা আল্লাহর বাণী পরিবর্তন করতে চায়’ (সূরা আল-ফাতহ : ১৫)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তাঁর কথা পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই’ (সূরা আল-কাহ্ফ : ২৭)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে আপনার প্রতিপালকের বাণী সম্পূর্ণ এবং তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নেই। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (সূরা আল-আন‘আম : ১১৫)।
তাঁর বাণী চিরন্তন সত্য। তাঁর বাণীতে কোন অবাস্তব, অসত্য কথা নেই। তিনি হলেন অধিক সত্যবাদী এবং তাঁর প্রতিশ্রুতিও সত্য। আল-কুরআনে বিবৃত সকল বিবরণ, আদেশ-নিষেধ এবং বিধি-বিধান সত্য (সূরা আলে ‘ইমরান : ৯৫; আন-নিসা : ৮৭, ১২২)।[১]
তাঁর কথা অতুলনীয়, অপ্রতিদ্বন্দী, সবচেয়ে সুন্দর এবং সর্বোত্তম (সূরা আয-যুমার : ২৩)।[২]
কুরআনের বাণী কোন ফেরেশতার বাণী নয়। বরং আল্লাহ তা‘আলা সম্মানিত ফেরেশতা জিবরীলের মাধ্যমে শেষনবী (ﷺ)-এর উপর অবতীর্ণ করেন (সূরা আশ-শুআ‘রা : ১৯২-১৯৫)।
কুরআন কোন শয়তান, যাদুকর, কবি বা গণকের বাণী নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘এ কুরআন বিতাড়িত শয়তানের কথা নয়’ (সূরা আত-তাকভীর : ২৫)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয় এ কুরআন এক সম্মানিত রাসূলের বাণী। আর এটা কোন কবির কথা নয়; তোমরা খুব অল্পই ঈমান পোষণ করে থাক, এটা কোন গণকের কথাও নয়, তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। এটা সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে নাযিলকৃত’ (সূরা আল-হাক্বক্বাহ : ৪১-৪২)।
এ কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কল্পনাপ্রসূত রচনা নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এ কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কল্পনাপ্রসূত রচনা নয়’ (সূরা ইউনুস : ৩৭)।
এমনকি নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পক্ষ থেকেও কল্পনাপ্রসূত রচনা নয়। বরং তিনি যদি নিজের নামে রচনা করে চালানোর চেষ্টা করতেন, তবে অবশ্যই আল্লাহ তাঁর জীবন-ধমনী কেটে ফেলতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তিনি যদি আমাদের নামে কোন কথা রচনা করে চালাতে চেষ্টা করতেন, তবে অবশ্যই আমরা তাঁকে পাকড়াও করতাম ডান হাত দিয়ে, তারপর অবশ্যই আমরা কেটে দিতাম তাঁর হৃদপি-ের শিরা, অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউই নেই, যে তাঁকে রক্ষা করতে পারে’ (সূরা আল-হাক্বক্বাহ : ৪৪-৪৭)।
কুরআন হল সন্দেহমুক্ত কিতাব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘এটা (আল-কুরআন) সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২)।
رَیۡبَ -এর অর্থ সংশয় ও সন্দেহ।[৩] رَیۡبَ শব্দটি আরবদের কবিতায় অপবাদের অর্থেও এসেছে।لَا رَیۡبَ فِیۡہِ -এর অর্থ হল, ‘এই কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়া[৪], আল্লাহর অহী, তাঁর কথা এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট অহী অবতরণ করেছেন, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই’।[৫] যেমনভাবে মৃত্যু, পুনরুত্থান এবং ক্বিয়ামতের ব্যাপারে সন্দেহ নেই।[৬]
আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির জন্য এমন একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যা সম্পূর্ণ সন্দেহমুক্ত।[৭]
এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতরণ এতে কোন সন্দেহ নেই (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২)। আল-কুরআনের সবকিছু স্পষ্ট। এতে কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন নেই।[৮]
আল-কুরআন জগৎসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ এমন সত্য কিতাব, যার মাধ্যমে সর্তক করা হয়েছে এমন সম্প্রদায়কে, যাদের নিকট পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি, যেন তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় (সূরা আস-সাজদাহ : ২-৩)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর এই কুরআন কল্পনাপ্রসূত নয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে, এটা তো সেই কিতাবের সত্যতা প্রমাণকারী, যা এর পূর্বে (নাযিল) হয়েছে এবং আবশ্যকীয় বিধানসমূহের ব্যাখ্যা বর্ণনাকারী, এতে কোন সন্দেহ নেই, এটা বিশ্বপ্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে’ (সূরা ইউনুস : ৩৭)।
এটা আল-কুরআনের মু‘জিযা। মানুষের পক্ষে কুরআনের মত অনুরূপ কুরআন, দশটি সূরা এবং কোন সূরার ন্যায় একটি সূরা তৈরি করা অসম্ভব। কেননা কুরআনের বিশুদ্ধতা, নির্ভেজাল, বাগ্মিতা, সুন্দর বাচনভঙ্গি, শব্দ ও বাক্যের ক্রটিমুক্তি, ভাষার অলঙ্কার, বাহুল্যবর্জিত, মূল্যবান, বিরল, সম্মানিত ও বলিষ্ঠ অর্থের অন্তর্ভুক্তি, যা দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণকর ও উপকারী; রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়া ছাড়া অসম্ভব। যার সত্তা, গুণাবলী, কাজ, কথার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই এবং যার কথার সাথে সৃষ্টির কথার কোন সাদৃশ্য নেই। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর এই কুরআন কল্পনাপ্রসূত নয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে, ...’ (সূরা ইউনুস : ৩৭)।[৯]
কুরাইশ কাফির-মুশরিকরা অহী (কুরআন) অবতরণ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করত। তারা ধারণা করত যে, এটা মুহাম্মাদ (ﷺ) নিজেই রচনা করে। এ কারণে তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে উম্মাদ (সূরা আত-তাকভীর : ২২), কবি, গণক (সূরা আল-হাক্ব-ক্বাহ : ৪১-৪২) ইত্যাদি বলে অপবাদ দিত। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ঐ সকল ভ্রান্ত ধারণা রদ করেন (সূরা আল-হাক্ব-ক্বাহ : ৪০-৪৩)।
পবিত্র কুরআন যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এতে কোন সন্দেহ নেই। আর এ চ্যালেঞ্জ বিভিন্ন স্থানে এসেছে। কাফিররা কুরআনের ব্যাপারে সন্দেহ করত। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। আল-কুরআন যদি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পক্ষ থেকেই তৈরি হয়, তাহলে মুহাম্মাদ (ﷺ) তো তাদের মতই একজন মানুষ। অক্ষরজ্ঞানহীন মুহাম্মাদ (ﷺ) যদি কুরআন তৈরি করতে পারে, তারাও অনুরূপ নিয়ে আসুক এবং এ ব্যাপারে তাদের সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করুক।[১০] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘বলুন, যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ আনতে পারবে না’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৮৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘নাকি তারা বলে, সে এটা নিজে রচনা করেছে? বলুন! তোমরা যদি (তোমাদের দাবিতে) সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা রচনা করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যাকে পার (এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য) ডেকে নাও’ (সূরা হূদ : ১৩)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আর এ কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো রচনা হওয়া সম্ভব নয়। বরং এর আগে যা নাযিল হয়েছে এটা তার সত্যায়নকারী এবং আল কিতাবের বিশদ ব্যাখ্যা। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে। নাকি তারা বলে, তিনি এটা রচনা করেছেন? বলুন, তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যাকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’ (সূরা ইউনুস : ৩৭-৩৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘এবং আমরা আমাদের বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি, তাতে তোমরা যদি সন্দিহান হও তবে তার ন্যায় একটি ‘সূরা’ তৈরি করে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সাহায্যকারীদেরকেও ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩)।
ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ কুরআনের অনুরূপ কুরআন, একটি সূরা বা একটি আয়াতও রচনা করতে সক্ষম হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘অনন্তর যদি তোমরা তা করতে না পার এবং তোমরা তা কখনও করতে পারবে না, তাহলে তোমরা সেই জাহান্নামকে ভয় কর যার ইন্ধন মানুষ ও প্রস্তরপুঞ্জ, যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৪)।
এ চ্যালেঞ্জ কুরআনের শুধু ভাষাশৈলীর উপর করা হয়নি। সাধারণভাবে লোকেরা এ চ্যালেঞ্জটিকে নিছক কুরআনের ভাষাশৈলী, অলংকার ও সাহিত্য সুষমার দিক দিয়ে ছিল বলে মনে করে। কুরআন তার অনন্য ও অতুলনীয় হবার দাবীর ভিত্তি নিছক নিজের শাব্দিক সৌন্দর্য সুষমার ওপর প্রতিষ্ঠিত করেনি। নিঃসন্দেহে ভাষাশৈলীর দিক দিয়েও কুরআন নযীরবিহীন। কিন্তু মূলত যে জিনিসটির ভিত্তিতে বলা হয়েছে যে, কোন মানবিক মেধা ও প্রতিভা এহেন কিতাব রচনা করতে পারে না, সেটি হচ্ছে তার বিষয়বস্তু, অলংকারিত্ব ও শিক্ষা।
মানুষের লেখা যে কোন কিতাব, গ্রন্থে ভুল থাকতে পারে, সন্দেহ ও সংশয় থাকতে পারে। কিন্তু আল্লাহর কালামে কোন ভুল ও সন্দেহ নেই এবং থাকতেও পারে না। কোন লেখকই বইয়ের শুরুতে লিখতে পারে না যে, ‘এই গ্রন্থে কোন সন্দেহ নেই’। শুধু আসমান-যমীনের অধিপতি তা পারেন। তিনি তাঁর কালামে ভূমিকা সূরার পর দ্বিতীয় সূরার শুরুতেই বলেছেন,
‘এটা (কুরআন) সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা মুত্তাক্বীদের জন্য পথ প্রদর্শক’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২)। এতে কোন প্রকারের সন্দেহ নেই। এর খবর সত্য, এর আদেশ-নিষেধ সত্য। অথচ অবিশ্বারীরা সন্দেহ করত, এটা কোন মানুষের রচিত। মক্কায় কিছু ক্রীতদাস ছিল, যারা তাওরাত ও ইঞ্জীল সম্পর্কে অবগত ছিল। প্রথমে তারা খ্রিষ্টান বা ইয়াহুদী ছিল, পরে মুসলিম হয়। তাদের ভাষাও ছিল অশুদ্ধ। মক্কার কাফিররা এদের প্রতিই ইঙ্গিত করে বলত যে, ‘অমুক দাস মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে কুরআন শিক্ষা দেয়! তাদের উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আমরা তো জানিই, তারা বলে, তাঁকে শিক্ষা দেয় এক মানুষ। তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা তো আরবী নয়; আর এ তো স্পষ্ট আরবী ভাষা’ (সূরা আন-নাহল : ১০৩)।
অর্থাৎ ওরা যাদের কথা বলে, তারা তো শুদ্ধভাবে আরবীও বলতে পারে না, অথচ কুরআন এমন বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট আরবী ভাষায়, যার সাহিত্যশৈলী সুউচ্চ এবং যার অলৌকিকতা অতুলনীয়। চ্যালেঞ্জের পরও একটি আয়াতও কেউ আনতে সক্ষম হয়নি। পৃথিবীর সকল সাহিত্যিক মিলেও এর সমতুল্য বাণী রচনা করতে অক্ষম।
আল-কুরআনের ব্যাপারে মিথ্যা অভিযোগের কারণ
যাদের অন্তরে কুফরী ও বক্রতা রয়েছে, মূলত তারাই অশান্তি সৃষ্টি এবং রবের বিধানকে বিকৃত করার জন্য আল-কুরআনের ব্যাপারে সন্দেহ ও মিথ্যা অভিযোগ তুলে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই আপনার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যাতে সুস্পষ্ট অকাট্য আয়াতসমূহ রয়েছে-ওগুলো গ্রন্থের মূল এ ব্যতীত কতিপয় আয়াতসমূহ অস্পষ্ট; অতএব যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে, ফলত তারাই অশান্তি সৃষ্টি ও (ইচ্ছা মত) ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে অস্পষ্টের অনুসরণ করে’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ৭)। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের একদল আল্লাহর বাণী শ্রবণ করে, তারপর তারা তা অনুধাবন করার পর বিকৃত করে, অথচ তারা জানে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৭৫)।
আল-কুরআনের ব্যাপারে অমুসলিমদের মিথ্যা অভিযোগ ও তার খণ্ডন
কিছু কিছু সন্দেহকারী আল-কুরআনের ব্যাপারে সন্দেহ ও মিথ্যা অভিযোগ করে। তাদের এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অমূলক। নিম্নে তাদের মিথ্যা অভিযোগ উল্লেখ করা হল।
অভিযোগ-১ : কিছু কিছু অহী অস্বীকারকারী মনে করে, কুরআন মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিজের রচনা। তা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ নয়।
তাদের এ অভিযোগ ও সন্দেহ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কাফির-মুশরিকরাও এমন অভিযোগ করেছিল, মহান আল্লাহ তা নাকোচ করে দিয়েছেন (সূরা ইউনুস : ৩৭-৩৮)। এর কারণগুলো নিম্নরূপ।
(ক) কুরআন যদি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিজের পক্ষ থেকে লিখিত হত, তবে তা আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করার কোন যুক্তি নেই। বরং তিনি তা নিজের বলে দাবী করতে পারতেন। তৎকালিন আরবের সমস্ত পণ্ডিত ও ভাষাবিদগণ কুরআনের অনুরূপ অথবা একটি সূরা অথবা একটি আয়াত আনয়ন করতে অক্ষম ও অপারগ হয়ে পড়ে। তখন তিনি কেন এ কুরআন তার নিজের রচনা নয় বলে উল্লেখ করবেন।
(খ) নবী করীম (ﷺ) একবার অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মে মাখতূম (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে কুরাইশ নেতাদের দাওয়াত দানে মনোনিবেশ করেন। মহান আল্লাহ তাঁর এ কাজটি পছন্দ করেননি। মহান আল্লাহ তাঁর সমালোচনা করে বলেন, ‘ভ্রু কুঞ্চিত করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল, কারণ তার নিকট অন্ধ লোকটি এসেছিল। আপনি কী জানেন সে হয়ত পরিশুদ্ধ হত, অথবা উপদেশ গ্রহণ করত, ফলে উপদেশ তার উপকারে আসত। পক্ষান্তরে যে পরওয়া করে না, আপনি তার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন। অথচ সে নিজে পরিশুদ্ধ না হলে আপনার কোন দায়িত্ব নেই, পক্ষান্তরে যে আপনার নিকট ছুটে আসল, আর সে সশংকচিত্ত (ভীত অবস্থায়) আপনি তাকে অবজ্ঞা করলেন! কখনও নয়, এটা তো উপদেশবাণী’ (সূরা ‘আবাসা : ১-১১)।
(গ) মুহাম্মাদ (ﷺ) বদর যুদ্ধের বন্দীদের নিকট থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করে তাদের মুক্ত করে দেন। মহান আল্লাহর নিকট এ কাজটি অপছন্দ ছিল। ফলে তিনি এ কাজের সমালোচনা করেন এবং তাঁকে সতর্ক করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কোন নবীর পক্ষে ততক্ষণ পর্যন্ত বন্দী লোক রাখা শোভা পায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত ভূ-পৃষ্ঠ (দেশ) হতে শত্রু বাহিনী নির্মূল না হয়, তোমরা দুনিয়ার সম্পদ কামনা করছ, আর আল্লাহ চান পরকালের কল্যাণ, আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল্লাহর লিপি পূর্বে লিখিত না হলে তোমরা যা কিছু গ্রহণ করেছ তজ্জন্যে তোমাদের উপর মহাশাস্তি আপতিত হত’ (সূরা আনফাল : ৬৭-৬৮)।
(ঘ) মুনাফিক্বরা উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর প্রতি অপবাদ আরোপ করে। এতে তাঁর মান-মর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুন্ন হয়। নবী করীম (ﷺ) দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় একমাস অতিক্রান্ত হয়। পরিশেষে মহান আল্লাহ আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর পবিত্রতায় কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ করেন (সূরা আন-নূর : ১১)।[১১]
কুরআন যদি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর রচনা হতে তবে এ ষড়যন্ত্রকারীদের অপবাদ নস্যাতের উদ্দেশ্যে কুরআন রচনায় কে তাঁকে বাধা প্রদান করেছিল।
(ঙ) তাবূক যুদ্ধের সময় নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট কয়েকজন ব্যক্তি বিভিন্ন ওযর পেশ করে যুদ্ধে গমন থেকে বিরত থাকার অনুমতি প্রার্থনা করে। নবী করীম (ﷺ) তাদের অনুমতি প্রদান করেন। এদের মধ্যে কয়েকজন মুনাফিক্ব ছিল। তাঁর এ ভুল মতামতের কারণে মহান আল্লাহ তাঁকে সাবধান করে কুরআনের আয়াত অবতরণ করে বলেন, ‘আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করলেন, (কিন্তু) আপনি তাদেরকে (এত শীঘ্র) কেন অনুমতি দিয়েছিলেন (যুদ্ধে অনুপস্থিত থাকার) যে পর্যন্ত না সত্যবাদী লোকেরা আপনার কাছে প্রকাশ হয়ে পড়তো এবং আপনি মিথ্যাবাদীদেরকে জেনে নিতেন’ (সূরা আত-তওবাহ : ৪৩)।
কুরআন যদি তাঁর স্বরচিত হত তবে নিজের ভুল সিন্ধান্ত অবগত হওয়ার পরও তিনি খোলাখুলিভাবে নিজের এমন কঠোর সমালোচনা করতেন না।
অভিযোগ-২ : কুরআনের বক্তব্য পরস্পর বিরোধী[১২]
কুরআনের কোন বক্তব্য পরস্পর বিরোধী নয় বা কোন বক্তব্যে স্ববিরোধিতা নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি কুরআন সম্বন্ধে চিন্তা-ভাবনা করে না? এ (কুরআন) যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো পক্ষ থেকে (অবতীর্ণ) হত, তাহলে নিশ্চয় তারা তাতে অনেক পরস্পর-বিরোধী কথা পেত’ (সূরা আন-নিসা : ৮২)।
সুতরাং মুমিনের বিশ্বাস থাকবে যে, কুরআনে কোন পরস্পর বিরোধী কথা নেই। কিন্তু তেমন কথা অনুভূত হলে জানতে হবে, বুঝার কোন সমস্যা আছে, তার কোন ব্যাখ্যা আছে অথবা কোন কারণ আছে।
একটি কারণ হল, পূর্ববর্তী নির্দেশকে রহিত করে অনুরূপ কোন নির্দেশ অথবা উত্তম নির্দেশ আনয়ন করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমরা কোন আয়াত (বাক্য) রহিত করলে অথবা বিস্মৃত হতে দিলে তা থেকে উত্তম কিংবা তার সমতুল্য কোন আয়াত আনয়ন করি’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১০৬)। আল-কুরআনে তিন শ্রেণীর রহিত হওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। ১. তেলাওয়াত ও নির্দেশ উভয়ই রহিত[১৩] ২. তেলাওয়াত রহিত, নির্দেশ অবশিষ্ট[১৪] এবং ৩. আয়াতের নির্দেশ রহিত, কিন্তু আয়াতটি কুরআনে বর্তমান আছে (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৪, ২১৯, ২৪০, ২৮৪)।
অভিযোগ-৩ : কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্য পরস্পর বিরোধী[১৫]
শরী‘আত নেয়ার ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহকে পাশাপাশি রাখতে হবে। আগে কুরআন, তারপর সুন্নাহ নয়। কারণ দু’টিই অহী। মানার ক্ষেত্রে দু’টিই সমান। অনেক সময় কুরআন ও সুন্নাহ পরস্পর বিরোধী হলে উপায় কী? কুরআন সুন্নাহতে পরস্পর বিরোধীতা বলতে দু’টি দিক সামনে আসতে পারে।
(ক) আম-খাছের পরস্পর বিরোধিতা : কুরআনে আছে আম নির্দেশ, হাদীসে সেটাকে খাছ করেছে। যেমন কার সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ আলোচনা পেশ করার পর মহান আল্লাহ বলেন, ‘উল্লিখিত নারীগণ ব্যতীত আর সকলকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়; এই শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে নিজ সম্পদের বিনিময়ে বিবাহের মাধ্যমে গ্রহণ করবে, অবৈধ যৌন-সম্পর্কের মাধ্যমে নয়’ (সূরা আন-নিসা : ২৪)। অথচ হাদীসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে, কেউ যেন ফুফু ও তার ভাতিজীকে এবং খালা ও তার বোনঝিকে একত্রে বিবাহ না করে।[১৬] অথচ কুরআনে তা বলা হয়নি।
অনুরূপভাবে কুরআনে আমভাবে মৃত জীব ও রক্ত খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু হাদীসে দুই প্রকারের মৃত এবং দুই প্রকারের রক্ত আমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। মৃত দু’টি হল- মাছ ও টিড্ডি। আর দুই প্রকারের রক্ত হল- যকৃৎ ও প্লীহা।[১৭]
উপরিউক্ত কুরআনের আম নির্দেশকে হাদীস দ্বারা খাছ করা হয়েছে। এগুলো প্রকৃতপক্ষে পরস্পর বিরোধী না।
(খ) কুরআনের এমন কিছু নির্দেশ আছে, যা সুন্নাহ দ্বারা রহিত করা হয়েছে : কুরআন ও সুন্নাহ দু’টিই অহী। প্রয়োজনের তাকীদে একটি অহী অন্য অহী দ্বারা রহিত হয়েছে। সুতরাং কুরআন সুন্নাহয় পরস্পর বিরোধিতা বলে কিছু নেই। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে মুহাম্মাদ)! আপনি বলুন, অহীর মাধ্যমে আমার কাছে যে বিধান পাঠানো হয়েছে, তাতে কোন আহারকারীর জন্য কোন বস্তু হারাম করা হয়েছে-এমন কিছু আমি পাইনি, তবে মৃতজন্তু, প্রবাহিত রক্ত ও শূকরের গোশত। কেননা, এটা অবশ্যই নাপাক অথবা যা শরী‘আত গর্হিত বস্তু’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৪৫)।
উপরিউক্ত আয়াতে মৃতজন্তু, প্রবাহিত রক্ত ও শূকরের গোশত ছাড়া অন্য কোন প্রাণী হারাম নয়। অথচ হাদীসে এসেছে, ‘আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল তোমাদেরকে গৃহপালিত গাধার গোস্ত খেতে নিষেধ করেছেন’।[১৮]
অনুরূপভাবে কুরআনের প্রাথমিক নির্দেশ ছিল পিতা-মাতার নামেও সম্পত্তি অছীয়ত করার (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮০)। কিন্তু সে নির্দেশকে রহিত করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক হক্বদারকে তার প্রাপ্য হক্ব প্রদান করেছেন। সুতরাং কোন ওয়ারেছের জন্য অছীয়ত বৈধ নয়’।[১৯]
অভিযোগ-৪ : কেউ কেউ মনে করে, মুহাম্মাদ (ﷺ) ছিলেন সুতীক্ষ্ম বুদ্ধি ও মেধার অধিকারী, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন; স্বচ্ছ অন্তকরণ। তিনি ভালমন্দ এবং ন্যায়-অন্যায় উপলব্ধি করতেন। অন্তর্চক্ষু দিয়ে বহু গোপনীয় বিষয় অনুধাবন করতেন। অতঃপর তাঁর নিজস্ব ভাষা ও বর্ণনাভঙ্গীর মাধমে তা কুরআন রূপে বর্ণনা করতেন।
আল-কুরআন গভীরভাবে অনুধাবন ও অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, তাদের এমন অভিযোগ ও ধারণা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও অমূলক। কারণ কুরআন মাজীদের অতীত কালের অনেক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যা কারো নিকট শ্রবণ ব্যতীত নিজের পক্ষ থেকে বলা আদৌ সম্ভব নয়। যেমন আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সৃষ্টি রহস্য, জান্নাত হতে অবতরণ, নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর প্লাবন, মূসা (আলাইহিস সালাম), শু‘আইব (আলাইহিস সালাম), ইউসুফ (আলাইহিস সালাম), মারইয়াম (আলাইহিস সালাম)-সহ অন্যান্য নবী-রাসূল সহ আরো ঘটনা। মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁদের যুগে ছিলেন না এবং তাঁদের ঘটনা ও জীবন পরিক্রমার কোন পুস্তকও অধ্যয়ন করেননি।
আল-কুরআনে সময় ও যুগের হিসাব সংক্রান্ত এমন সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম তথ্যের অবতারণা করা হয়েছে (সূরা আল-‘আনকাবূত : ১৪; সূরা আল-কাহফ : ২৫), যা মানুষের আয়ত্বের বাহিরে। বহু জ্ঞান ও বিস্তারিত তত্ত্ব পেশ করা হয়েছে। যেমন পৃথিবী সৃষ্টি, এর সমাপ্তি, পরকাল, ক্বিয়ামত, জান্নাত, হাশর, ফেরেশতা এবং তাদের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি। কোন জ্ঞানী ব্যক্তি তার জ্ঞান ও দূরদর্শিতার বলে এ সকল তত্ত্ব ও উপাত্ত আয়ত্ত্ব করা বা পেশ করা সম্ভব নয়। মুহাম্মাদ (ﷺ) তার ব্যতিক্রম নয়। বরং অহীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁকে এ সকল বিষয় জানিয়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এটা হচ্ছে গায়েবী সংবাদ সমূহের অন্তর্ভুক্ত, যা আমরা আপনার কাছে অহী মারফত পৌঁছিয়ে দিচ্ছি, ইতিপূর্বে এটা না আপনি জানতেন, আর না আপনার কওম’ (সূরা হূদ : ৪৯)।
অভিযোগ-৫ : বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক।
কুরআনের কোন কোন তথ্য বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক মনে হলে আদৌ কিন্তু তা নয়। কুরআন মাজীদ গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে দেখা যায় তাতে বিজ্ঞান সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এতে বহু বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে, যা আধুনিক যুগে আবিস্কৃত হয়েছে এবং তা আল-কুরআন চৌদ্দ শতাব্দী পূর্বে আমাদেরকে অবহিত করেছে (সুবহানাল্লাহ)। যেমন মহাবিস্ফোরণ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৩০), পানির অপর নাম জীবন, গভীর সমুদ্রে অন্ধকার তথ্য, সমুদ্রের তরঙ্গের উপর তরঙ্গের তথ্য (সূরা আন-নূর : ৪০), দুই সমুদ্রের মাঝে অন্তরাল (সূরা আর-রহমান : ২০; সূরা আন-নাহল : ৬১), সূর্য স্থির নয় (সূরা ইয়াসীন : ৩৮), পৃথিবী স্থির নয় (সূরা আন-নামল : ৮৮), ভূগোল তথ্য (সূরা আন-নাযি‘আত : ৩০), ভূতত্ত্বে পর্বতমালা স্থাপন (সূরা আন-নাবা : ৭; সূরা আন-নাযি‘আত : ৩২) ইত্যাদি। আধুনিক যুগের বৈজ্ঞানিক গবেষণা কুরআন মাজীদের কোন একটি তথ্যকেও ভুল প্রমাণিত করতে পারেনি। পারবেই বা কি করে। কারণ বিজ্ঞানির বুদ্ধিমত্তা, চিন্তাশক্তি, বিচক্ষণতা এবং বিশ্লেষণের ক্ষমতা তো মহান রবের দেয়া অনুগ্রহ ও দান। অতএব স্রষ্টার সৃষ্টি, তত্ত্ব ও তথ্যে ভুল ধরার ক্ষেত্রে সৃষ্টির কোন সক্ষমতা নেই। আল-কুরআন বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক কি না? এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত গবেষক ড. মরিস বুকাইলি বলেন,
‘বস্তুত কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বিশ্বসৃষ্টি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভুমণ্ডল গঠনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ, পশুপ্রজাতি, উদ্ভিদজগৎ এবং মানব প্রজন্ম প্রভৃতি বিষয়ে এত অধিকভাবে আলোচনা রয়েছে যে, অভিভূত না হয়ে পারা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা, এসব বিষয়ের আলোচনায় বাইবেলে ভুলের পরিমাণ যেখানে পর্বত সমান, সেখানে কুরআনের কোন আয়াতে একটি মাত্র ভুলও আমি খুঁজে পাইনি। বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পদে পদেই আমাদের থেকে যেতে হয়েছে। প্রতিটি পর্যায়ে নিজেকেই আমি জিজ্ঞেস না করে পারিনি যে, সত্যি সত্যিই কোন মানুষ যদি এ কুরআন রচনা করে থাকেন, তাহলে সপ্তম শতাব্দিতে বসে তিনি কিভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের এত সব বক্তব্য এত সঠিক ভাবে রচনা করতে পারলে? আর সেসব বক্তব্যই বা কিভাবে আজকের যুগের সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্য-জ্ঞানের সাথে এতটা সামঞ্জস্য হতে পারল?[২০]
আল-কুরআন নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ ও তার পরিণতি
যারা এই কুরআনের কোন একটি সূরা, আয়াত, শব্দ বা হরফ নিয়ে অভিযোগ ও সন্দেহ করবে, তারাই মিথ্যাবাদী, অনাচারী ও সীমালংঘনকারী। মহান আল্লাহ বলেন,
‘যারা আল্লাহর আয়াতে বিশ্বাস করে না, তাদেরকে আল্লাহ পথনির্দেশ করেন না এবং তাদের জন্য আছে বেদনাদায়ক শাস্তি। যারা আল্লাহর আয়াতে বিশ্বাস করে না, তারাই শুধু মিথ্যা উদ্ভাবন করে এবং তারাই মিথ্যাবাদী’ (সূরা আন-নাহল : ১০৫)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,
‘অবিশ্বাসীরা বলে, এ মিথ্যা ব্যতীত কিছুই নয়; সে নিজে তা উদ্ভাবন করেছে এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে; ওরা অবশ্যই সীমালংঘন করে ও মিথ্যা বলে’ (সূরা আল-ফুরক্বান : ৪-৬)।
উপসংহার
আল-কুরআন যেহেতু সন্দেহমুক্ত কিতাব, সেহেতু এ সম্মানিত কিতাবের প্রতিটি কথা, আদেশ-নিষেধ এবং বিধান আদম সন্তানদের জন্য কল্যাণকর। সন্দেহমুক্ত এ কিতাবই মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে সুখ, শান্তি ও স্বস্তি এনে দিতে সক্ষম। অতএব সকলের উচিত, এ কিতাবের প্রতিটি বিধান নিজের জীবনে মেনে নেয়া এবং তদুনাযায়ী জীবনকে পরিচালিত করা। মহান আল্লাহ সন্দেহমুক্ত এ কিতাবের প্রতিটি বিধানকে আমাদের সার্বিক জীবনে মেনে চলার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!
তথ্যসূত্র :
[১]. নাসাঈ, হা/১৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৩৭৩; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/১৭৮৫, সনদ সহীহ।
[২]. সহীহ বুখারী, হা/৬০৯৮, ৭২৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/৮৬৭; নাসাঈ, হা/১৩১১, সনদ সহীহ।
[৩]. ইবনু আব্বাস, ইবনু মাসঊদ এবং আরও কয়েকজন সাহাবী হ থেকে এ অর্থ বর্ণিত হয়েছে। দ্র. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬২।
[৪]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬২।
[৫]. আইসারুত তাফাসীর লি কালামিল ‘আলিয়ি্যুল কাবীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯।
[৬]. رَیۡبَ - শব্দটিকে আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনে বহু অর্থে ও বহু স্থানে ব্যবহার করেছেন। যেমন- ১. মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত : আল্লাহ তা‘আলা মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত মানুষের জন্য স্থির করেছেন এক নির্দিষ্ট কাল, যাতে কোন সন্দেহ নেই-দ্র. সূরা বানী ইসরাঈল : ৯৯। ২. পুনরুত্থান : পুনরুত্থান সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই-দ্র. সূরা আল-হজ্জ : ৫। ৩. ক্বিয়ামত : আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিনে সকল মানুষকে একত্রিত করবেন, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই- দ্র. সূরা আলে ‘ইমরান : ৯, ২৫; সূরা আন-নিসা : ৮৭; সূরা আল-আন‘আম : ১২; সূরা আল-কাহফ : ২১; সূরা আল-হজ্জ : ৭; সূরা আল-মুমিন : ৫৯।
[৭]. জামি‘ঊল বায়ান ফী তা‘বীলিল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ২২৯।
[৮]. আল-জামিঊ লি-আহকামিল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫৭।
[৯]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৬৭।
[১০]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৬৭।
[১১]. সহীহ বুখারী, হা/৪৭৫০।
[১২]. আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী, মহাগ্রন্থ আল-কুরআন (রাজশাহী : ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী, ২০১৫ খ্রি.), পৃ. ৩৭৭।
[১৩]. সহীহ মুসলিম, হা/১৪৫২।
[১৪]. সহীহ মুসলিম, হা/১৬৯১।
[১৫]. মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, পৃ. ৩৮২।
[১৬]. সহীহ বুখারী, হা/৫১০৯।
[১৭]. মুসনাদে আহমাদ হা/৫৭২৩; ইবনু মাজাহ হা/৩৩১৪; দারাকুৎনী হা/৪৭৯৪; সনদ জাইয়েদ।
[১৮]. সহীহ বুখারী, হা/৪১৯৯।
[১৯]. আবূ দাঊদ, হা/৩৫৬৫; ইবনু মাজাহ, হা/২৭১৩, সনদ সহীহ।
[২০]. বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান, পৃ. ১৯৯; দ্র. ড. মুহাম্মাদ শফিকুল্লাহ, ‘উলূমু’ল কুরআন, পৃ. ৪৩-৪৪।
আল-কুরআনের ব্যাপারে অমুসলিমদের সন্দেহ ও মিথ্যা অভিযোগ এবং মহান আল্লাহর চ্যালেঞ্জ
মহান আল্লাহর কথা ন্যায়সঙ্গত। সত্যতা, ন্যায়, সমতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ। তাঁর কথার কোন পরিবর্তনকারী নেই। বহু হতভাগা মানুষ তাঁর বাণীতে সন্দেহ পোষণ করে পরিবর্তন করতে চায় এবং প্রচার করতে বাধা দেয়। অথচ তাঁর কথা পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই।
মহান আল্লাহ বলেন,
یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یُّبَدِّلُوۡا کَلٰمَ اللّٰہِ
‘তারা আল্লাহর বাণী পরিবর্তন করতে চায়’ (সূরা আল-ফাতহ : ১৫)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
لَا مُبَدِّلَ لِکَلِمٰتِہٖ
‘তাঁর কথা পরিবর্তন করার অধিকার কারো নেই’ (সূরা আল-কাহ্ফ : ২৭)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ تَمَّتۡ کَلِمَتُ رَبِّکَ صِدۡقًا وَّ عَدۡلًا لَا مُبَدِّلَ لِکَلِمٰتِہٖ وَ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ
‘সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে আপনার প্রতিপালকের বাণী সম্পূর্ণ এবং তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নেই। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (সূরা আল-আন‘আম : ১১৫)।
তাঁর বাণী চিরন্তন সত্য। তাঁর বাণীতে কোন অবাস্তব, অসত্য কথা নেই। তিনি হলেন অধিক সত্যবাদী এবং তাঁর প্রতিশ্রুতিও সত্য। আল-কুরআনে বিবৃত সকল বিবরণ, আদেশ-নিষেধ এবং বিধি-বিধান সত্য (সূরা আলে ‘ইমরান : ৯৫; আন-নিসা : ৮৭, ১২২)।[১]
তাঁর কথা অতুলনীয়, অপ্রতিদ্বন্দী, সবচেয়ে সুন্দর এবং সর্বোত্তম (সূরা আয-যুমার : ২৩)।[২]
কুরআনের বাণী কোন ফেরেশতার বাণী নয়। বরং আল্লাহ তা‘আলা সম্মানিত ফেরেশতা জিবরীলের মাধ্যমে শেষনবী (ﷺ)-এর উপর অবতীর্ণ করেন (সূরা আশ-শুআ‘রা : ১৯২-১৯৫)।
কুরআন কোন শয়তান, যাদুকর, কবি বা গণকের বাণী নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ مَا ہُوَ بِقَوۡلِ شَیۡطٰنٍ رَّجِیۡمٍ
‘এ কুরআন বিতাড়িত শয়তানের কথা নয়’ (সূরা আত-তাকভীর : ২৫)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয় এ কুরআন এক সম্মানিত রাসূলের বাণী। আর এটা কোন কবির কথা নয়; তোমরা খুব অল্পই ঈমান পোষণ করে থাক, এটা কোন গণকের কথাও নয়, তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। এটা সৃষ্টিকুলের রবের কাছ থেকে নাযিলকৃত’ (সূরা আল-হাক্বক্বাহ : ৪১-৪২)।
এ কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কল্পনাপ্রসূত রচনা নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এ কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কল্পনাপ্রসূত রচনা নয়’ (সূরা ইউনুস : ৩৭)।
এমনকি নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পক্ষ থেকেও কল্পনাপ্রসূত রচনা নয়। বরং তিনি যদি নিজের নামে রচনা করে চালানোর চেষ্টা করতেন, তবে অবশ্যই আল্লাহ তাঁর জীবন-ধমনী কেটে ফেলতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তিনি যদি আমাদের নামে কোন কথা রচনা করে চালাতে চেষ্টা করতেন, তবে অবশ্যই আমরা তাঁকে পাকড়াও করতাম ডান হাত দিয়ে, তারপর অবশ্যই আমরা কেটে দিতাম তাঁর হৃদপি-ের শিরা, অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউই নেই, যে তাঁকে রক্ষা করতে পারে’ (সূরা আল-হাক্বক্বাহ : ৪৪-৪৭)।
কুরআন হল সন্দেহমুক্ত কিতাব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
ذٰلِکَ الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ فِیۡہِ
‘এটা (আল-কুরআন) সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২)।
رَیۡبَ -এর অর্থ সংশয় ও সন্দেহ।[৩] رَیۡبَ শব্দটি আরবদের কবিতায় অপবাদের অর্থেও এসেছে।لَا رَیۡبَ فِیۡہِ -এর অর্থ হল, ‘এই কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়া[৪], আল্লাহর অহী, তাঁর কথা এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট অহী অবতরণ করেছেন, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই’।[৫] যেমনভাবে মৃত্যু, পুনরুত্থান এবং ক্বিয়ামতের ব্যাপারে সন্দেহ নেই।[৬]
আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির জন্য এমন একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন যা সম্পূর্ণ সন্দেহমুক্ত।[৭]
এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতরণ এতে কোন সন্দেহ নেই (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২)। আল-কুরআনের সবকিছু স্পষ্ট। এতে কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন নেই।[৮]
আল-কুরআন জগৎসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ এমন সত্য কিতাব, যার মাধ্যমে সর্তক করা হয়েছে এমন সম্প্রদায়কে, যাদের নিকট পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি, যেন তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হয় (সূরা আস-সাজদাহ : ২-৩)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর এই কুরআন কল্পনাপ্রসূত নয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে, এটা তো সেই কিতাবের সত্যতা প্রমাণকারী, যা এর পূর্বে (নাযিল) হয়েছে এবং আবশ্যকীয় বিধানসমূহের ব্যাখ্যা বর্ণনাকারী, এতে কোন সন্দেহ নেই, এটা বিশ্বপ্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে’ (সূরা ইউনুস : ৩৭)।
এটা আল-কুরআনের মু‘জিযা। মানুষের পক্ষে কুরআনের মত অনুরূপ কুরআন, দশটি সূরা এবং কোন সূরার ন্যায় একটি সূরা তৈরি করা অসম্ভব। কেননা কুরআনের বিশুদ্ধতা, নির্ভেজাল, বাগ্মিতা, সুন্দর বাচনভঙ্গি, শব্দ ও বাক্যের ক্রটিমুক্তি, ভাষার অলঙ্কার, বাহুল্যবর্জিত, মূল্যবান, বিরল, সম্মানিত ও বলিষ্ঠ অর্থের অন্তর্ভুক্তি, যা দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণকর ও উপকারী; রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হওয়া ছাড়া অসম্ভব। যার সত্তা, গুণাবলী, কাজ, কথার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই এবং যার কথার সাথে সৃষ্টির কথার কোন সাদৃশ্য নেই। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর এই কুরআন কল্পনাপ্রসূত নয় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দ্বারা প্রকাশিত হয়েছে, ...’ (সূরা ইউনুস : ৩৭)।[৯]
কুরাইশ কাফির-মুশরিকরা অহী (কুরআন) অবতরণ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করত। তারা ধারণা করত যে, এটা মুহাম্মাদ (ﷺ) নিজেই রচনা করে। এ কারণে তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে উম্মাদ (সূরা আত-তাকভীর : ২২), কবি, গণক (সূরা আল-হাক্ব-ক্বাহ : ৪১-৪২) ইত্যাদি বলে অপবাদ দিত। আল্লাহ তা‘আলা তাদের ঐ সকল ভ্রান্ত ধারণা রদ করেন (সূরা আল-হাক্ব-ক্বাহ : ৪০-৪৩)।
পবিত্র কুরআন যে আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত এতে কোন সন্দেহ নেই। আর এ চ্যালেঞ্জ বিভিন্ন স্থানে এসেছে। কাফিররা কুরআনের ব্যাপারে সন্দেহ করত। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। আল-কুরআন যদি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পক্ষ থেকেই তৈরি হয়, তাহলে মুহাম্মাদ (ﷺ) তো তাদের মতই একজন মানুষ। অক্ষরজ্ঞানহীন মুহাম্মাদ (ﷺ) যদি কুরআন তৈরি করতে পারে, তারাও অনুরূপ নিয়ে আসুক এবং এ ব্যাপারে তাদের সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করুক।[১০] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قُلۡ لَّئِنِ اجۡتَمَعَتِ الۡاِنۡسُ وَ الۡجِنُّ عَلٰۤی اَنۡ یَّاۡتُوۡا بِمِثۡلِ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنِ لَا یَاۡتُوۡنَ بِمِثۡلِہٖ وَ لَوۡ کَانَ بَعۡضُہُمۡ لِبَعۡضٍ ظَہِیۡرًا
‘বলুন, যদি কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনার জন্য মানুষ ও জিন সমবেত হয় এবং যদিও তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ আনতে পারবে না’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৮৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىہُ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِعَشۡرِ سُوَرٍ مِّثۡلِہٖ مُفۡتَرَیٰتٍ وَّ ادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ
‘নাকি তারা বলে, সে এটা নিজে রচনা করেছে? বলুন! তোমরা যদি (তোমাদের দাবিতে) সত্যবাদী হও তবে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা রচনা করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যাকে পার (এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য) ডেকে নাও’ (সূরা হূদ : ১৩)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ مَا کَانَ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنُ اَنۡ یُّفۡتَرٰی مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ وَ لٰکِنۡ تَصۡدِیۡقَ الَّذِیۡ بَیۡنَ یَدَیۡہِ وَ تَفۡصِیۡلَ الۡکِتٰبِ لَا رَیۡبَ فِیۡہِ مِنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ - اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىہُ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِسُوۡرَۃٍ مِّثۡلِہٖ وَ ادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ
‘আর এ কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো রচনা হওয়া সম্ভব নয়। বরং এর আগে যা নাযিল হয়েছে এটা তার সত্যায়নকারী এবং আল কিতাবের বিশদ ব্যাখ্যা। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে। নাকি তারা বলে, তিনি এটা রচনা করেছেন? বলুন, তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যাকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’ (সূরা ইউনুস : ৩৭-৩৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ رَیۡبٍ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلٰی عَبۡدِنَا فَاۡتُوۡا بِسُوۡرَۃٍ مِّنۡ مِّثۡلِہٖ وَ ادۡعُوۡا شُہَدَآءَکُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ
‘এবং আমরা আমাদের বান্দার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি, তাতে তোমরা যদি সন্দিহান হও তবে তার ন্যায় একটি ‘সূরা’ তৈরি করে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সাহায্যকারীদেরকেও ডেকে নাও; যদি তোমরা সত্যবাদী হও’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩)।
ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউ কুরআনের অনুরূপ কুরআন, একটি সূরা বা একটি আয়াতও রচনা করতে সক্ষম হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَاِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلُوۡا وَ لَنۡ تَفۡعَلُوۡا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِیۡ وَقُوۡدُہَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ اُعِدَّتۡ لِلۡکٰفِرِیۡنَ
‘অনন্তর যদি তোমরা তা করতে না পার এবং তোমরা তা কখনও করতে পারবে না, তাহলে তোমরা সেই জাহান্নামকে ভয় কর যার ইন্ধন মানুষ ও প্রস্তরপুঞ্জ, যা অবিশ্বাসীদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৪)।
এ চ্যালেঞ্জ কুরআনের শুধু ভাষাশৈলীর উপর করা হয়নি। সাধারণভাবে লোকেরা এ চ্যালেঞ্জটিকে নিছক কুরআনের ভাষাশৈলী, অলংকার ও সাহিত্য সুষমার দিক দিয়ে ছিল বলে মনে করে। কুরআন তার অনন্য ও অতুলনীয় হবার দাবীর ভিত্তি নিছক নিজের শাব্দিক সৌন্দর্য সুষমার ওপর প্রতিষ্ঠিত করেনি। নিঃসন্দেহে ভাষাশৈলীর দিক দিয়েও কুরআন নযীরবিহীন। কিন্তু মূলত যে জিনিসটির ভিত্তিতে বলা হয়েছে যে, কোন মানবিক মেধা ও প্রতিভা এহেন কিতাব রচনা করতে পারে না, সেটি হচ্ছে তার বিষয়বস্তু, অলংকারিত্ব ও শিক্ষা।
মানুষের লেখা যে কোন কিতাব, গ্রন্থে ভুল থাকতে পারে, সন্দেহ ও সংশয় থাকতে পারে। কিন্তু আল্লাহর কালামে কোন ভুল ও সন্দেহ নেই এবং থাকতেও পারে না। কোন লেখকই বইয়ের শুরুতে লিখতে পারে না যে, ‘এই গ্রন্থে কোন সন্দেহ নেই’। শুধু আসমান-যমীনের অধিপতি তা পারেন। তিনি তাঁর কালামে ভূমিকা সূরার পর দ্বিতীয় সূরার শুরুতেই বলেছেন,
ذٰلِکَ الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ فِیۡہِ ہُدًی لِّلۡمُتَّقِیۡنَ
‘এটা (কুরআন) সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই। এটা মুত্তাক্বীদের জন্য পথ প্রদর্শক’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২)। এতে কোন প্রকারের সন্দেহ নেই। এর খবর সত্য, এর আদেশ-নিষেধ সত্য। অথচ অবিশ্বারীরা সন্দেহ করত, এটা কোন মানুষের রচিত। মক্কায় কিছু ক্রীতদাস ছিল, যারা তাওরাত ও ইঞ্জীল সম্পর্কে অবগত ছিল। প্রথমে তারা খ্রিষ্টান বা ইয়াহুদী ছিল, পরে মুসলিম হয়। তাদের ভাষাও ছিল অশুদ্ধ। মক্কার কাফিররা এদের প্রতিই ইঙ্গিত করে বলত যে, ‘অমুক দাস মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে কুরআন শিক্ষা দেয়! তাদের উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ لَقَدۡ نَعۡلَمُ اَنَّہُمۡ یَقُوۡلُوۡنَ اِنَّمَا یُعَلِّمُہٗ بَشَرٌ لِسَانُ الَّذِیۡ یُلۡحِدُوۡنَ اِلَیۡہِ اَعۡجَمِیٌّ وَّ ہٰذَا لِسَانٌ عَرَبِیٌّ مُّبِیۡنٌ
‘আমরা তো জানিই, তারা বলে, তাঁকে শিক্ষা দেয় এক মানুষ। তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষা তো আরবী নয়; আর এ তো স্পষ্ট আরবী ভাষা’ (সূরা আন-নাহল : ১০৩)।
অর্থাৎ ওরা যাদের কথা বলে, তারা তো শুদ্ধভাবে আরবীও বলতে পারে না, অথচ কুরআন এমন বিশুদ্ধ ও স্পষ্ট আরবী ভাষায়, যার সাহিত্যশৈলী সুউচ্চ এবং যার অলৌকিকতা অতুলনীয়। চ্যালেঞ্জের পরও একটি আয়াতও কেউ আনতে সক্ষম হয়নি। পৃথিবীর সকল সাহিত্যিক মিলেও এর সমতুল্য বাণী রচনা করতে অক্ষম।
আল-কুরআনের ব্যাপারে মিথ্যা অভিযোগের কারণ
যাদের অন্তরে কুফরী ও বক্রতা রয়েছে, মূলত তারাই অশান্তি সৃষ্টি এবং রবের বিধানকে বিকৃত করার জন্য আল-কুরআনের ব্যাপারে সন্দেহ ও মিথ্যা অভিযোগ তুলে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই আপনার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যাতে সুস্পষ্ট অকাট্য আয়াতসমূহ রয়েছে-ওগুলো গ্রন্থের মূল এ ব্যতীত কতিপয় আয়াতসমূহ অস্পষ্ট; অতএব যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে, ফলত তারাই অশান্তি সৃষ্টি ও (ইচ্ছা মত) ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যে অস্পষ্টের অনুসরণ করে’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ৭)। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের একদল আল্লাহর বাণী শ্রবণ করে, তারপর তারা তা অনুধাবন করার পর বিকৃত করে, অথচ তারা জানে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৭৫)।
আল-কুরআনের ব্যাপারে অমুসলিমদের মিথ্যা অভিযোগ ও তার খণ্ডন
কিছু কিছু সন্দেহকারী আল-কুরআনের ব্যাপারে সন্দেহ ও মিথ্যা অভিযোগ করে। তাদের এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অমূলক। নিম্নে তাদের মিথ্যা অভিযোগ উল্লেখ করা হল।
অভিযোগ-১ : কিছু কিছু অহী অস্বীকারকারী মনে করে, কুরআন মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিজের রচনা। তা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ নয়।
তাদের এ অভিযোগ ও সন্দেহ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কাফির-মুশরিকরাও এমন অভিযোগ করেছিল, মহান আল্লাহ তা নাকোচ করে দিয়েছেন (সূরা ইউনুস : ৩৭-৩৮)। এর কারণগুলো নিম্নরূপ।
(ক) কুরআন যদি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিজের পক্ষ থেকে লিখিত হত, তবে তা আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করার কোন যুক্তি নেই। বরং তিনি তা নিজের বলে দাবী করতে পারতেন। তৎকালিন আরবের সমস্ত পণ্ডিত ও ভাষাবিদগণ কুরআনের অনুরূপ অথবা একটি সূরা অথবা একটি আয়াত আনয়ন করতে অক্ষম ও অপারগ হয়ে পড়ে। তখন তিনি কেন এ কুরআন তার নিজের রচনা নয় বলে উল্লেখ করবেন।
(খ) নবী করীম (ﷺ) একবার অন্ধ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু উম্মে মাখতূম (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে কুরাইশ নেতাদের দাওয়াত দানে মনোনিবেশ করেন। মহান আল্লাহ তাঁর এ কাজটি পছন্দ করেননি। মহান আল্লাহ তাঁর সমালোচনা করে বলেন, ‘ভ্রু কুঞ্চিত করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল, কারণ তার নিকট অন্ধ লোকটি এসেছিল। আপনি কী জানেন সে হয়ত পরিশুদ্ধ হত, অথবা উপদেশ গ্রহণ করত, ফলে উপদেশ তার উপকারে আসত। পক্ষান্তরে যে পরওয়া করে না, আপনি তার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন। অথচ সে নিজে পরিশুদ্ধ না হলে আপনার কোন দায়িত্ব নেই, পক্ষান্তরে যে আপনার নিকট ছুটে আসল, আর সে সশংকচিত্ত (ভীত অবস্থায়) আপনি তাকে অবজ্ঞা করলেন! কখনও নয়, এটা তো উপদেশবাণী’ (সূরা ‘আবাসা : ১-১১)।
(গ) মুহাম্মাদ (ﷺ) বদর যুদ্ধের বন্দীদের নিকট থেকে মুক্তিপণ গ্রহণ করে তাদের মুক্ত করে দেন। মহান আল্লাহর নিকট এ কাজটি অপছন্দ ছিল। ফলে তিনি এ কাজের সমালোচনা করেন এবং তাঁকে সতর্ক করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কোন নবীর পক্ষে ততক্ষণ পর্যন্ত বন্দী লোক রাখা শোভা পায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত ভূ-পৃষ্ঠ (দেশ) হতে শত্রু বাহিনী নির্মূল না হয়, তোমরা দুনিয়ার সম্পদ কামনা করছ, আর আল্লাহ চান পরকালের কল্যাণ, আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল্লাহর লিপি পূর্বে লিখিত না হলে তোমরা যা কিছু গ্রহণ করেছ তজ্জন্যে তোমাদের উপর মহাশাস্তি আপতিত হত’ (সূরা আনফাল : ৬৭-৬৮)।
(ঘ) মুনাফিক্বরা উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর প্রতি অপবাদ আরোপ করে। এতে তাঁর মান-মর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুন্ন হয়। নবী করীম (ﷺ) দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় একমাস অতিক্রান্ত হয়। পরিশেষে মহান আল্লাহ আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর পবিত্রতায় কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ করেন (সূরা আন-নূর : ১১)।[১১]
কুরআন যদি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর রচনা হতে তবে এ ষড়যন্ত্রকারীদের অপবাদ নস্যাতের উদ্দেশ্যে কুরআন রচনায় কে তাঁকে বাধা প্রদান করেছিল।
(ঙ) তাবূক যুদ্ধের সময় নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট কয়েকজন ব্যক্তি বিভিন্ন ওযর পেশ করে যুদ্ধে গমন থেকে বিরত থাকার অনুমতি প্রার্থনা করে। নবী করীম (ﷺ) তাদের অনুমতি প্রদান করেন। এদের মধ্যে কয়েকজন মুনাফিক্ব ছিল। তাঁর এ ভুল মতামতের কারণে মহান আল্লাহ তাঁকে সাবধান করে কুরআনের আয়াত অবতরণ করে বলেন, ‘আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করলেন, (কিন্তু) আপনি তাদেরকে (এত শীঘ্র) কেন অনুমতি দিয়েছিলেন (যুদ্ধে অনুপস্থিত থাকার) যে পর্যন্ত না সত্যবাদী লোকেরা আপনার কাছে প্রকাশ হয়ে পড়তো এবং আপনি মিথ্যাবাদীদেরকে জেনে নিতেন’ (সূরা আত-তওবাহ : ৪৩)।
কুরআন যদি তাঁর স্বরচিত হত তবে নিজের ভুল সিন্ধান্ত অবগত হওয়ার পরও তিনি খোলাখুলিভাবে নিজের এমন কঠোর সমালোচনা করতেন না।
অভিযোগ-২ : কুরআনের বক্তব্য পরস্পর বিরোধী[১২]
কুরআনের কোন বক্তব্য পরস্পর বিরোধী নয় বা কোন বক্তব্যে স্ববিরোধিতা নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি কুরআন সম্বন্ধে চিন্তা-ভাবনা করে না? এ (কুরআন) যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো পক্ষ থেকে (অবতীর্ণ) হত, তাহলে নিশ্চয় তারা তাতে অনেক পরস্পর-বিরোধী কথা পেত’ (সূরা আন-নিসা : ৮২)।
সুতরাং মুমিনের বিশ্বাস থাকবে যে, কুরআনে কোন পরস্পর বিরোধী কথা নেই। কিন্তু তেমন কথা অনুভূত হলে জানতে হবে, বুঝার কোন সমস্যা আছে, তার কোন ব্যাখ্যা আছে অথবা কোন কারণ আছে।
একটি কারণ হল, পূর্ববর্তী নির্দেশকে রহিত করে অনুরূপ কোন নির্দেশ অথবা উত্তম নির্দেশ আনয়ন করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমরা কোন আয়াত (বাক্য) রহিত করলে অথবা বিস্মৃত হতে দিলে তা থেকে উত্তম কিংবা তার সমতুল্য কোন আয়াত আনয়ন করি’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১০৬)। আল-কুরআনে তিন শ্রেণীর রহিত হওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করা যায়। ১. তেলাওয়াত ও নির্দেশ উভয়ই রহিত[১৩] ২. তেলাওয়াত রহিত, নির্দেশ অবশিষ্ট[১৪] এবং ৩. আয়াতের নির্দেশ রহিত, কিন্তু আয়াতটি কুরআনে বর্তমান আছে (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৪, ২১৯, ২৪০, ২৮৪)।
অভিযোগ-৩ : কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্য পরস্পর বিরোধী[১৫]
শরী‘আত নেয়ার ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহকে পাশাপাশি রাখতে হবে। আগে কুরআন, তারপর সুন্নাহ নয়। কারণ দু’টিই অহী। মানার ক্ষেত্রে দু’টিই সমান। অনেক সময় কুরআন ও সুন্নাহ পরস্পর বিরোধী হলে উপায় কী? কুরআন সুন্নাহতে পরস্পর বিরোধীতা বলতে দু’টি দিক সামনে আসতে পারে।
(ক) আম-খাছের পরস্পর বিরোধিতা : কুরআনে আছে আম নির্দেশ, হাদীসে সেটাকে খাছ করেছে। যেমন কার সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ আলোচনা পেশ করার পর মহান আল্লাহ বলেন, ‘উল্লিখিত নারীগণ ব্যতীত আর সকলকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়; এই শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে নিজ সম্পদের বিনিময়ে বিবাহের মাধ্যমে গ্রহণ করবে, অবৈধ যৌন-সম্পর্কের মাধ্যমে নয়’ (সূরা আন-নিসা : ২৪)। অথচ হাদীসে নিষিদ্ধ করা হয়েছে যে, কেউ যেন ফুফু ও তার ভাতিজীকে এবং খালা ও তার বোনঝিকে একত্রে বিবাহ না করে।[১৬] অথচ কুরআনে তা বলা হয়নি।
অনুরূপভাবে কুরআনে আমভাবে মৃত জীব ও রক্ত খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু হাদীসে দুই প্রকারের মৃত এবং দুই প্রকারের রক্ত আমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। মৃত দু’টি হল- মাছ ও টিড্ডি। আর দুই প্রকারের রক্ত হল- যকৃৎ ও প্লীহা।[১৭]
উপরিউক্ত কুরআনের আম নির্দেশকে হাদীস দ্বারা খাছ করা হয়েছে। এগুলো প্রকৃতপক্ষে পরস্পর বিরোধী না।
(খ) কুরআনের এমন কিছু নির্দেশ আছে, যা সুন্নাহ দ্বারা রহিত করা হয়েছে : কুরআন ও সুন্নাহ দু’টিই অহী। প্রয়োজনের তাকীদে একটি অহী অন্য অহী দ্বারা রহিত হয়েছে। সুতরাং কুরআন সুন্নাহয় পরস্পর বিরোধিতা বলে কিছু নেই। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে মুহাম্মাদ)! আপনি বলুন, অহীর মাধ্যমে আমার কাছে যে বিধান পাঠানো হয়েছে, তাতে কোন আহারকারীর জন্য কোন বস্তু হারাম করা হয়েছে-এমন কিছু আমি পাইনি, তবে মৃতজন্তু, প্রবাহিত রক্ত ও শূকরের গোশত। কেননা, এটা অবশ্যই নাপাক অথবা যা শরী‘আত গর্হিত বস্তু’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৪৫)।
উপরিউক্ত আয়াতে মৃতজন্তু, প্রবাহিত রক্ত ও শূকরের গোশত ছাড়া অন্য কোন প্রাণী হারাম নয়। অথচ হাদীসে এসেছে, ‘আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল তোমাদেরকে গৃহপালিত গাধার গোস্ত খেতে নিষেধ করেছেন’।[১৮]
অনুরূপভাবে কুরআনের প্রাথমিক নির্দেশ ছিল পিতা-মাতার নামেও সম্পত্তি অছীয়ত করার (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮০)। কিন্তু সে নির্দেশকে রহিত করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক হক্বদারকে তার প্রাপ্য হক্ব প্রদান করেছেন। সুতরাং কোন ওয়ারেছের জন্য অছীয়ত বৈধ নয়’।[১৯]
অভিযোগ-৪ : কেউ কেউ মনে করে, মুহাম্মাদ (ﷺ) ছিলেন সুতীক্ষ্ম বুদ্ধি ও মেধার অধিকারী, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন; স্বচ্ছ অন্তকরণ। তিনি ভালমন্দ এবং ন্যায়-অন্যায় উপলব্ধি করতেন। অন্তর্চক্ষু দিয়ে বহু গোপনীয় বিষয় অনুধাবন করতেন। অতঃপর তাঁর নিজস্ব ভাষা ও বর্ণনাভঙ্গীর মাধমে তা কুরআন রূপে বর্ণনা করতেন।
আল-কুরআন গভীরভাবে অনুধাবন ও অধ্যয়ন করলে দেখা যায়, তাদের এমন অভিযোগ ও ধারণা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও অমূলক। কারণ কুরআন মাজীদের অতীত কালের অনেক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যা কারো নিকট শ্রবণ ব্যতীত নিজের পক্ষ থেকে বলা আদৌ সম্ভব নয়। যেমন আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সৃষ্টি রহস্য, জান্নাত হতে অবতরণ, নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর প্লাবন, মূসা (আলাইহিস সালাম), শু‘আইব (আলাইহিস সালাম), ইউসুফ (আলাইহিস সালাম), মারইয়াম (আলাইহিস সালাম)-সহ অন্যান্য নবী-রাসূল সহ আরো ঘটনা। মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁদের যুগে ছিলেন না এবং তাঁদের ঘটনা ও জীবন পরিক্রমার কোন পুস্তকও অধ্যয়ন করেননি।
আল-কুরআনে সময় ও যুগের হিসাব সংক্রান্ত এমন সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম তথ্যের অবতারণা করা হয়েছে (সূরা আল-‘আনকাবূত : ১৪; সূরা আল-কাহফ : ২৫), যা মানুষের আয়ত্বের বাহিরে। বহু জ্ঞান ও বিস্তারিত তত্ত্ব পেশ করা হয়েছে। যেমন পৃথিবী সৃষ্টি, এর সমাপ্তি, পরকাল, ক্বিয়ামত, জান্নাত, হাশর, ফেরেশতা এবং তাদের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি। কোন জ্ঞানী ব্যক্তি তার জ্ঞান ও দূরদর্শিতার বলে এ সকল তত্ত্ব ও উপাত্ত আয়ত্ত্ব করা বা পেশ করা সম্ভব নয়। মুহাম্মাদ (ﷺ) তার ব্যতিক্রম নয়। বরং অহীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁকে এ সকল বিষয় জানিয়ে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এটা হচ্ছে গায়েবী সংবাদ সমূহের অন্তর্ভুক্ত, যা আমরা আপনার কাছে অহী মারফত পৌঁছিয়ে দিচ্ছি, ইতিপূর্বে এটা না আপনি জানতেন, আর না আপনার কওম’ (সূরা হূদ : ৪৯)।
অভিযোগ-৫ : বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক।
কুরআনের কোন কোন তথ্য বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক মনে হলে আদৌ কিন্তু তা নয়। কুরআন মাজীদ গভীরভাবে অধ্যয়ন করলে দেখা যায় তাতে বিজ্ঞান সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এতে বহু বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে, যা আধুনিক যুগে আবিস্কৃত হয়েছে এবং তা আল-কুরআন চৌদ্দ শতাব্দী পূর্বে আমাদেরকে অবহিত করেছে (সুবহানাল্লাহ)। যেমন মহাবিস্ফোরণ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৩০), পানির অপর নাম জীবন, গভীর সমুদ্রে অন্ধকার তথ্য, সমুদ্রের তরঙ্গের উপর তরঙ্গের তথ্য (সূরা আন-নূর : ৪০), দুই সমুদ্রের মাঝে অন্তরাল (সূরা আর-রহমান : ২০; সূরা আন-নাহল : ৬১), সূর্য স্থির নয় (সূরা ইয়াসীন : ৩৮), পৃথিবী স্থির নয় (সূরা আন-নামল : ৮৮), ভূগোল তথ্য (সূরা আন-নাযি‘আত : ৩০), ভূতত্ত্বে পর্বতমালা স্থাপন (সূরা আন-নাবা : ৭; সূরা আন-নাযি‘আত : ৩২) ইত্যাদি। আধুনিক যুগের বৈজ্ঞানিক গবেষণা কুরআন মাজীদের কোন একটি তথ্যকেও ভুল প্রমাণিত করতে পারেনি। পারবেই বা কি করে। কারণ বিজ্ঞানির বুদ্ধিমত্তা, চিন্তাশক্তি, বিচক্ষণতা এবং বিশ্লেষণের ক্ষমতা তো মহান রবের দেয়া অনুগ্রহ ও দান। অতএব স্রষ্টার সৃষ্টি, তত্ত্ব ও তথ্যে ভুল ধরার ক্ষেত্রে সৃষ্টির কোন সক্ষমতা নেই। আল-কুরআন বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক কি না? এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত গবেষক ড. মরিস বুকাইলি বলেন,
‘বস্তুত কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বিশ্বসৃষ্টি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভুমণ্ডল গঠনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ, পশুপ্রজাতি, উদ্ভিদজগৎ এবং মানব প্রজন্ম প্রভৃতি বিষয়ে এত অধিকভাবে আলোচনা রয়েছে যে, অভিভূত না হয়ে পারা যায় না। সবচেয়ে বড় কথা, এসব বিষয়ের আলোচনায় বাইবেলে ভুলের পরিমাণ যেখানে পর্বত সমান, সেখানে কুরআনের কোন আয়াতে একটি মাত্র ভুলও আমি খুঁজে পাইনি। বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পদে পদেই আমাদের থেকে যেতে হয়েছে। প্রতিটি পর্যায়ে নিজেকেই আমি জিজ্ঞেস না করে পারিনি যে, সত্যি সত্যিই কোন মানুষ যদি এ কুরআন রচনা করে থাকেন, তাহলে সপ্তম শতাব্দিতে বসে তিনি কিভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের এত সব বক্তব্য এত সঠিক ভাবে রচনা করতে পারলে? আর সেসব বক্তব্যই বা কিভাবে আজকের যুগের সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্য-জ্ঞানের সাথে এতটা সামঞ্জস্য হতে পারল?[২০]
আল-কুরআন নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ ও তার পরিণতি
যারা এই কুরআনের কোন একটি সূরা, আয়াত, শব্দ বা হরফ নিয়ে অভিযোগ ও সন্দেহ করবে, তারাই মিথ্যাবাদী, অনাচারী ও সীমালংঘনকারী। মহান আল্লাহ বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰہِ لَا یَہۡدِیۡہِمُ اللّٰہُ وَ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ - اِنَّمَا یَفۡتَرِی الۡکَذِبَ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰہِ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡکٰذِبُوۡنَ
‘যারা আল্লাহর আয়াতে বিশ্বাস করে না, তাদেরকে আল্লাহ পথনির্দেশ করেন না এবং তাদের জন্য আছে বেদনাদায়ক শাস্তি। যারা আল্লাহর আয়াতে বিশ্বাস করে না, তারাই শুধু মিথ্যা উদ্ভাবন করে এবং তারাই মিথ্যাবাদী’ (সূরা আন-নাহল : ১০৫)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,
وَ قَالَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اِنۡ ہٰذَاۤ اِلَّاۤ اِفۡکُۨ افۡتَرٰىہُ وَ اَعَانَہٗ عَلَیۡہِ قَوۡمٌ اٰخَرُوۡنَ فَقَدۡ جَآءُوۡ ظُلۡمًا وَّ زُوۡرًا - وَ قَالُوۡۤا اَسَاطِیۡرُ الۡاَوَّلِیۡنَ اکۡتَتَبَہَا فَہِیَ تُمۡلٰی عَلَیۡہِ بُکۡرَۃً وَّ اَصِیۡلًا - قُلۡ اَنۡزَلَہُ الَّذِیۡ یَعۡلَمُ السِّرَّ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ اِنَّہٗ کَانَ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا
‘অবিশ্বাসীরা বলে, এ মিথ্যা ব্যতীত কিছুই নয়; সে নিজে তা উদ্ভাবন করেছে এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে; ওরা অবশ্যই সীমালংঘন করে ও মিথ্যা বলে’ (সূরা আল-ফুরক্বান : ৪-৬)।
উপসংহার
আল-কুরআন যেহেতু সন্দেহমুক্ত কিতাব, সেহেতু এ সম্মানিত কিতাবের প্রতিটি কথা, আদেশ-নিষেধ এবং বিধান আদম সন্তানদের জন্য কল্যাণকর। সন্দেহমুক্ত এ কিতাবই মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে সুখ, শান্তি ও স্বস্তি এনে দিতে সক্ষম। অতএব সকলের উচিত, এ কিতাবের প্রতিটি বিধান নিজের জীবনে মেনে নেয়া এবং তদুনাযায়ী জীবনকে পরিচালিত করা। মহান আল্লাহ সন্দেহমুক্ত এ কিতাবের প্রতিটি বিধানকে আমাদের সার্বিক জীবনে মেনে চলার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!
তথ্যসূত্র :
[১]. নাসাঈ, হা/১৫৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৩৭৩; সহীহ ইবনু হিব্বান, হা/১৭৮৫, সনদ সহীহ।
[২]. সহীহ বুখারী, হা/৬০৯৮, ৭২৭৭; সহীহ মুসলিম, হা/৮৬৭; নাসাঈ, হা/১৩১১, সনদ সহীহ।
[৩]. ইবনু আব্বাস, ইবনু মাসঊদ এবং আরও কয়েকজন সাহাবী হ থেকে এ অর্থ বর্ণিত হয়েছে। দ্র. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬২।
[৪]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬২।
[৫]. আইসারুত তাফাসীর লি কালামিল ‘আলিয়ি্যুল কাবীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৯।
[৬]. رَیۡبَ - শব্দটিকে আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনে বহু অর্থে ও বহু স্থানে ব্যবহার করেছেন। যেমন- ১. মৃত্যুর পর থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত : আল্লাহ তা‘আলা মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান পর্যন্ত মানুষের জন্য স্থির করেছেন এক নির্দিষ্ট কাল, যাতে কোন সন্দেহ নেই-দ্র. সূরা বানী ইসরাঈল : ৯৯। ২. পুনরুত্থান : পুনরুত্থান সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই-দ্র. সূরা আল-হজ্জ : ৫। ৩. ক্বিয়ামত : আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিনে সকল মানুষকে একত্রিত করবেন, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই- দ্র. সূরা আলে ‘ইমরান : ৯, ২৫; সূরা আন-নিসা : ৮৭; সূরা আল-আন‘আম : ১২; সূরা আল-কাহফ : ২১; সূরা আল-হজ্জ : ৭; সূরা আল-মুমিন : ৫৯।
[৭]. জামি‘ঊল বায়ান ফী তা‘বীলিল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ২২৯।
[৮]. আল-জামিঊ লি-আহকামিল কুরআন, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫৭।
[৯]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৬৭।
[১০]. তাফসীরুল কুরআনিল ‘আযীম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ২৬৭।
[১১]. সহীহ বুখারী, হা/৪৭৫০।
[১২]. আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী, মহাগ্রন্থ আল-কুরআন (রাজশাহী : ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী, ২০১৫ খ্রি.), পৃ. ৩৭৭।
[১৩]. সহীহ মুসলিম, হা/১৪৫২।
[১৪]. সহীহ মুসলিম, হা/১৬৯১।
[১৫]. মহাগ্রন্থ আল-কুরআন, পৃ. ৩৮২।
[১৬]. সহীহ বুখারী, হা/৫১০৯।
[১৭]. মুসনাদে আহমাদ হা/৫৭২৩; ইবনু মাজাহ হা/৩৩১৪; দারাকুৎনী হা/৪৭৯৪; সনদ জাইয়েদ।
[১৮]. সহীহ বুখারী, হা/৪১৯৯।
[১৯]. আবূ দাঊদ, হা/৩৫৬৫; ইবনু মাজাহ, হা/২৭১৩, সনদ সহীহ।
[২০]. বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান, পৃ. ১৯৯; দ্র. ড. মুহাম্মাদ শফিকুল্লাহ, ‘উলূমু’ল কুরআন, পৃ. ৪৩-৪৪।
আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহীম
Last edited: