- Joined
- Jul 24, 2023
- Threads
- 520
- Comments
- 533
- Reactions
- 5,571
- Thread Author
- #1
ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁরই কাছে সাহায্য চাই, তাঁরই কাছে ক্ষমা চাই, আর আমাদের আত্মার অনিষ্ট ও মন্দ কর্ম থেকে তাঁরই কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে হেদায়াত দান করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ হেদায়াত দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবীগণ ও ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে যারা অনুসরণ করবে তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ এবং অসংখ্য শান্তি বর্ষণ করুন।
এটা কালিমায়ে তাওহীদ সংক্রান্ত একটি সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা, যা "اَلْعُرْوَةُ الْوُثْقَى" তথা ‘মজবুত হাতল’, কালিমায়ে ত্বাইয়িবা, কালিমায়ে তাক্বওয়া, হক্বের সাক্ষ্য ও হক্বের প্রতি আহ্বান তথা
ﷺ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন হক্ব মাবূদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল’। আমি এই গ্রন্থটি রচনা করেছি আমার নিজের জন্য ও আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে হতে যাদেরকে চান তাদের জন্য। আর আমি সেই আল্লাহর কাছে চাই যিনি ছাড়া কোন হক্ব মাবূদ নেই, যিনি একক, যিনি অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি আর তার সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি যেন আমাকে, আপনাদেরকে ও সকল মুসলিমকে সত্যবাদী, মুখলিছ, এতে যা দলীল সম্মত তার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আমলকারী বানিয়ে দেন। আরো একটি দিক হল, তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান এবং দ্রুত দু‘আ কবুলকারী।
আমি এই গবেষণাকর্মকে চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করেছি এবং প্রতিটি পরিচ্ছেদের অধীনে অনেকগুলো আলোচ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। যা নিম্নরূপ-
প্রথম অধ্যায় : أشهد أن لا إله إلا الله -এর বিশ্লেষণ
দ্বিতীয় অধ্যায় : أشهد أن محمدا رسول الله -এর বিশ্লেষণ
তৃতীয় অধ্যায় : شهادتينতথা কালিমা শাহাদাত সংকোচন ও ভঙ্গের কারণসমূহ
চতুর্থ অধ্যায় : মুশরিকদেরকে তাওহীদের কালিমার প্রতি দাওয়াত দেয়া
আমি এ বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ অনুসরণ করেছি। অতএব আমি আল্লাহর কাছে চাই তিনি যেন এই পুস্তিকাকে বরকতপূর্ণ, মহান রবের সন্তুষ্টি লাভের নির্ভেজাল মাধ্যম করে দেন। এর লেখক, পাঠক, মুদ্রণকারী ও প্রকাশককে নৈকট্যশীল ও জান্নাতের নে‘মত দান করুন। আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে আমার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরে উপকার করুন। এছাড়া তারও উপকার করুন যারা এই কিতাবের মাধ্যমে তার কিতাবের নিকট এসেছে। নিশ্চয় যাদের কাছে চাওয়া হয় তিনি তাদের মধ্যে উত্তম ও যাদের কাছে প্রত্যাশা করা যায় তিনি তাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত। আমাদের জন্য তিনিই যথেষ্ঠ ও উত্তম অভিভাবক। তাই সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আর আল্লাহ তা‘আলা আমদের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ), তাঁর পরিবারবর্গ, সঙ্গি-সাথী ও তাদেরকে যারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত অনুসরণ করবে তাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন।
প্রথম অধ্যায় : أشهد أن لا إله إلا الله -এর বিশ্লেষণ
প্রথম আলোচ্য বিষয় : لا إله إلا الله -এর মর্যাদা ও স্তর
لا إله إلا الله এমন একটি বাক্য, যার দ্বারা আসমানসমূহ ও যমীন প্রতিষ্ঠিত। আর এ কালিমার জন্যই যাবতীয় সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আমি মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমারই ইবাদত করার জন্য’ (সূরা আয-যারিয়াত : ৫৬)। এই কালিমার জন্যই দুনিয়া ও আখিরাত সৃষ্টি করা হয়েছে। এর দ্বারাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাঁর বিভিন্ন শরী‘আত প্রবর্তন করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আর আপনার পূর্বে আমরা যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তার কাছে এ অহীই পাঠিয়েছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ২৫)। এই কালিমার জন্যই মীযানের পাল্লা স্থাপিত হবে, আমলনামা উপস্থাপন করা হবে এবং জান্নাতে ও জাহান্নামে বাজার বসবে। আর এ কালিমা দ্বারাই মানুষের চরিত্র, মুমিন-কাফির এবং নেককার ও বদকার হিসাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই কালিমাকে কেন্দ্র করেই মানুষ হতভাগা অথবা সৌভাগ্যবান হবে। সুতরাং এই কালিমাই যাবতীয় সৃষ্টি, কর্ম, প্রতিদান ও শাস্তির উৎসস্থল। আর এ কালিমা দ্বারাই আমলনামা ডান হাতে অথবা বাম হাতে আসবে ও মীযানের পাল্লা ভারী অথবা হালকা হবে। এর দ্বারাই জাহান্নামে প্রবেশের পর এবং তাতে অবস্থান করা আবশ্যক হয়ে যাওয়ার পরও জাহান্নাম থেকে মুক্তি মিলবে। এটা এমন হক যার জন্য যাবতীয় সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারাই অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে ও এর হক্ব বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে এবং ক্বিয়ামত দিবসে এর হিসাব গ্রহণ করা হবে। এর উপরই প্রতিদান ও শাস্তি নির্ভর করে। এর উপর ভিত্তি করেই ক্বিবলা প্রতিষ্ঠিত এবং জাতি গঠিত। আর এটা সকল বান্দার উপর আল্লাহ তা‘আলার হক্ব।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘বান্দাদের ওপর আল্লাহর হক্ব হল, তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং কাউকে তাঁর সাথে শরীক করবে না’।[১]
আর আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর মুমিন বান্দাদের প্রতি কৃত সবচেয়ে বড় নে‘মত এটাই, যখন তিনি তাদেরকে এর প্রতি হেদায়াত দান করেন। সুতরাং এটা হল ইসলামের কালিমা এবং জান্নাতের চাবি। এর দ্বারাই জান ও মাল নিরাপত্তা লাভ করে এবং এর দ্বারাই জিহাদের তরবারী উন্মুক্ত হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘আমি মানুষদের সাথে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবূদ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল, আর সালাত কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে। যদি তারা এটা করতে পারে তবে তারা আমার কাছ থেকে তাদের জান ও মালের নিরাপত্তা লাভ করল। তবে ইসলামের বিধান অনুযায়ী কোন কারণ থাকে তবে তা আলাদা কথা। আর তাদের হিসাবের ভার আল্লাহর নিকট।[২] আর এটা এমন কালিমা মানুষকে সর্বপ্রথম যার প্রতি দাওয়াত দেয়া ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মু‘আয (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ইয়ামানে প্রেরণকালে বলেন,
‘তুমি এমন এক জাতির নিকট যাচ্ছ যারা আহলে কিতাব। সুতরাং তুমি তাদের সর্বপ্রথম আল্লাহর ইবাদতের দিকে দাওয়াত দিবে’।[৩] অন্য বর্ণনায় এসেছে,
‘সুতরাং তুমি তাদেরকে কালিমায়ে শাহাদাত তথা ‘আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবূদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল’ এই কালিমার প্রতি দাওয়াত দিবে’।[৪]
এটাই হল দ্বীনের মূল ভিত্তি, দ্বীনের প্রধান নির্দেশ ও এর গাছের মূল কাণ্ড এবং দ্বীনের তাঁবুর খুঁটি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত ১. এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই ও মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল ২. সালাত প্রতিষ্ঠা করা ৩. যাকাত প্রদান করা ৪. রামাযানের সিয়াম পালন করা ৫. হজ্জ করা।[৫]
এটাই মজবুত হাতল। এটা হক্ব কালিমা, তাক্বওয়ার কালিমা, প্রমাণিত সত্য বাণী এবং পবিত্র কালিমা ও সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণ। এটা হক্বের সাক্ষ্য, ইখলাছের কালিমা ও এটাই হক্বের দাওয়াত। এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ যিকির। নবীগণের কথার মধ্যে এটাই সর্বোত্তম। এটাই সর্বোত্তম আমল। এটা (পাঠ করা) একজন দাস মুক্ত করার সমান। এর পাঠকের জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা হয়। আর এটা এমন মহান কালিমা যার সম্পর্কে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলেই জিজ্ঞাসিত হবে। ফলে ক্বিয়ামতের দিন দু’টি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আল্লাহর তা‘আলার সামনে থেকে কোন বান্দার পদদ্বয় এক বিন্দুও সরবে না। প্রশ্ন দু’টি হল,
‘তোমরা কী ইবাদত করেছ? এবং তোমরা রাসূলগণের ডাকে কেমন সাড়া দিয়েছ?
এর প্রথম অংশের উত্তর لا إله إلا الله ‘আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই’ এই কালিমার বাস্তবায়ন। অর্থাৎ এই কালিমা জেনে বুঝে, স্বীকৃতি দিয়ে ও আমলে বাস্তবায়ন করলে প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব হবে أن محمدا رسول الله ‘নিশ্চয় মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল’। অর্থাৎ জেনে বুঝে, মুখে স্বীকৃতি দিয়ে ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যথাযথ আনুগত্য।[৬] কেননা তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তিনি আল্লাহর অহীর বিষয়ে আমানতদার, আল্লাহর সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ, আল্লাহ ও বান্দার মাঝে দূত বার্তাবাহক এবং তিনি শক্তিশালী দ্বীন ও সরল-সোজা মানহাজ নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তাঁকে জগৎসমূহের জন্য রহমত, মুত্তাক্বীদের ইমাম ও সমস্ত সৃষ্টির উপর হুজ্জাতসরূপ প্রেরণ করেছেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মাধ্যমে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সুস্পষ্ট পথের দিশা দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে অনেক অন্ধ চক্ষু, অনুভূতিহীন বন্ধ হৃদয় ও বধির কর্ণকে খুলে দিয়েছেন। আর তিনি বান্দাদের উপর তাঁর আনুগত্য, তাঁকে সাহায্য-সহযোগিতা, সম্মান, ভালোবাসা ও তাঁর হক্বের পক্ষে দণ্ডায়মান হওয়াকে ফরয করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাস্তা ছাড়া জান্নাতের সকল রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে তাঁর রাস্তা ছাড়া অন্য কোন রাস্তা কারো জন্য খোলা হবে না। সুতরাং তিনি তাঁর বক্ষকে প্রশস্ত করে দিয়েছেন। তাঁর স্মরণকে সমুন্নত করেছেন। তাঁর বোঝা হালকা করে দিয়েছেন। আর যারা তাঁর আদেশ অমান্য করবে তাদের জন্য অপমান ও লাঞ্ছনা আবশ্যক করে দিয়েছেন। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আনুগত্যের ভিত্তিতেই হেদায়াত, সফলতা ও মুক্তি মিলবে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা বান্দার দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা তাঁর আনুগত্যের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছেন। আর যারা তাঁর অবাধ্য হবে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের দুর্ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আনুগত্যকারীদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে হেদায়াত, সফলতা, মুক্তি, মর্যাদা, পূর্ণতা, সাহায্য, নেতৃত্ব, ক্ষমতা ও স্বাচ্ছন্দময় জীবন-যাপন। পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অবাধ্যদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে, অপমান, লাঞ্ছনা, ভয়, ভ্রষ্টতা, ব্যর্থতা ও দুর্ভাগ্য।[৭]
তথ্যসূত্র :
[১]. সহীহ বুখারী, হা/২৮৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৩০।
[২]. সহীহ বুখারী, হা/২৫; সহীহ মুসলিম, হা/২২।
[৩]. সহীহ বুখারী, হা/১৪৫৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৯।
[৪]. সহীহ মুসলিম, হা/১৯।
[৫]. সহীহ বুখারী, হা/৮, ৪৫১৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৬।
[৬]. যাদুল মা‘আদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৪; মা‘আরিজুল ক্বুবূল বিশারহি সুল্লামিল উছূল ইলা ইলমিল উছূল ফিত-তাওহীদ লিশ-শায়খ হাফিয ইবনি আহমাদ আল-হাকামী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪১০-৪১৩; কালিমাতুল ইখলাছ ওয়া তাহক্বীকু মা‘নাহা লিল হাফিয ইবনি রাজাব আল-হাম্বালী, পৃ. ৪৯-৫১।
[৭]. যাদুল মা‘আদ লিইবনিল ক্বাইয়িম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৪-৩৬; আশ-শাক্বাউ ফী হুকুকিল মুছত্বাফা (ﷺ), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁরই কাছে সাহায্য চাই, তাঁরই কাছে ক্ষমা চাই, আর আমাদের আত্মার অনিষ্ট ও মন্দ কর্ম থেকে তাঁরই কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে হেদায়াত দান করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ হেদায়াত দিতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ, সাহাবীগণ ও ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে যারা অনুসরণ করবে তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ এবং অসংখ্য শান্তি বর্ষণ করুন।
এটা কালিমায়ে তাওহীদ সংক্রান্ত একটি সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা, যা "اَلْعُرْوَةُ الْوُثْقَى" তথা ‘মজবুত হাতল’, কালিমায়ে ত্বাইয়িবা, কালিমায়ে তাক্বওয়া, হক্বের সাক্ষ্য ও হক্বের প্রতি আহ্বান তথা
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ।
ﷺ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন হক্ব মাবূদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল’। আমি এই গ্রন্থটি রচনা করেছি আমার নিজের জন্য ও আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যে হতে যাদেরকে চান তাদের জন্য। আর আমি সেই আল্লাহর কাছে চাই যিনি ছাড়া কোন হক্ব মাবূদ নেই, যিনি একক, যিনি অমুখাপেক্ষী, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি আর তার সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি যেন আমাকে, আপনাদেরকে ও সকল মুসলিমকে সত্যবাদী, মুখলিছ, এতে যা দলীল সম্মত তার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আমলকারী বানিয়ে দেন। আরো একটি দিক হল, তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান এবং দ্রুত দু‘আ কবুলকারী।
আমি এই গবেষণাকর্মকে চারটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত করেছি এবং প্রতিটি পরিচ্ছেদের অধীনে অনেকগুলো আলোচ্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। যা নিম্নরূপ-
প্রথম অধ্যায় : أشهد أن لا إله إلا الله -এর বিশ্লেষণ
- প্রথম আলোচ্য বিষয় : لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله-এর প্রভাব ও মর্যাদা।
- দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয় : لا إله إلا الله -এর অর্থ।
- তৃতীয় আলোচ্য বিষয় : لا إله إلا الله-এর রুকন।
- চতুর্থ আলোচ্য বিষয় : لا إله إلا الله-এর মর্যাদা।
- পঞ্চম আলোচ্য বিষয় : لا إله إلا الله তাওহীদের সকল প্রকারকে একত্রিত করে।
- ষষ্ঠ আলোচ্য বিষয় : لا إله إلا الله -এর প্রতিই সকল নবী-রাসূলের দাওয়াত ছিল।
- সপ্তম আলোচ্য বিষয় : لا إله إلا الله-এর শর্তসমূহ।
দ্বিতীয় অধ্যায় : أشهد أن محمدا رسول الله -এর বিশ্লেষণ
- প্রথম আলোচ্য বিষয় : এর অর্থ ও প্রয়োজনীয়তা।
- দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয় : নবী (ﷺ)-এর পরিচয় জানা আবশ্যক।
- তৃতীয় আলোচ্য বিষয় : নবী (ﷺ)-এর সত্যবাদিতার বিষয়ে দলীল ও প্রামাণ।
- চতুর্থ আলোচ্য বিষয় : উম্মতের উপর তাঁর হক্ব।
- পঞ্চম আলোচ্য বিষয় : তাঁর রিসালাতের ব্যাপকতা।
- ষষ্ঠ আলোচ্য বিষয় : নবী (ﷺ) সম্পর্কে সীমালঙ্ঘন ও বাড়াবাড়ি করা হারাম।
তৃতীয় অধ্যায় : شهادتينতথা কালিমা শাহাদাত সংকোচন ও ভঙ্গের কারণসমূহ
- প্রথম আলোচ্য বিষয় : মতবিরোধের প্রকারসমূহ।
- দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয় : সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও সর্বাধিক সংঘটিত (শাহাদাতাইন) ভঙ্গকারী বিষয়।
- তৃতীয় আলোচ্য বিষয় : (শাহাদাতাইন) ভঙ্গকারী কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা এবং মুনাফিক্বী ও বিদ‘আতের প্রকারসমূহ।
- চতুর্থ আলোচ্য বিষয় : শাহাদাতাইন ভঙ্গের মৌলিক কারণ।
চতুর্থ অধ্যায় : মুশরিকদেরকে তাওহীদের কালিমার প্রতি দাওয়াত দেয়া
- প্রথম আলোচ্য বিষয় : আল্লাহ তা‘আলার উলূহিয়্যাত সাব্যস্তে আক্বলী দলীল।
- দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয় : আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য সকল (বাতিল) মা‘বূদের দুর্বলতা।
- তৃতীয় আলোচ্য বিষয় : কতিপয় উপমা।
- চতুর্থ আলোচ্য বিষয় : সাধারণভাবে সকল দিক থেকে পূর্ণাঙ্গ গুণ শুধু আল্লাহর জন্য নির্ধারিত।
- পঞ্চম আলোচ্য বিষয় : প্রমাণিত ও নিষিদ্ধ সুপারিশের বর্ণনা।
- ষষ্ঠ আলোচ্য বিষয় : প্রকৃত ইলাহ দুনিয়ার সবকিছুকে তাঁর বান্দাদের জন্য অনুগত করে দেন।
আমি এ বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ অনুসরণ করেছি। অতএব আমি আল্লাহর কাছে চাই তিনি যেন এই পুস্তিকাকে বরকতপূর্ণ, মহান রবের সন্তুষ্টি লাভের নির্ভেজাল মাধ্যম করে দেন। এর লেখক, পাঠক, মুদ্রণকারী ও প্রকাশককে নৈকট্যশীল ও জান্নাতের নে‘মত দান করুন। আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে আমার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পরে উপকার করুন। এছাড়া তারও উপকার করুন যারা এই কিতাবের মাধ্যমে তার কিতাবের নিকট এসেছে। নিশ্চয় যাদের কাছে চাওয়া হয় তিনি তাদের মধ্যে উত্তম ও যাদের কাছে প্রত্যাশা করা যায় তিনি তাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত। আমাদের জন্য তিনিই যথেষ্ঠ ও উত্তম অভিভাবক। তাই সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আর আল্লাহ তা‘আলা আমদের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ), তাঁর পরিবারবর্গ, সঙ্গি-সাথী ও তাদেরকে যারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত অনুসরণ করবে তাদের উপর রহমত বর্ষণ করুন।
প্রথম অধ্যায় : أشهد أن لا إله إلا الله -এর বিশ্লেষণ
প্রথম আলোচ্য বিষয় : لا إله إلا الله -এর মর্যাদা ও স্তর
لا إله إلا الله এমন একটি বাক্য, যার দ্বারা আসমানসমূহ ও যমীন প্রতিষ্ঠিত। আর এ কালিমার জন্যই যাবতীয় সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ
‘আমি মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমারই ইবাদত করার জন্য’ (সূরা আয-যারিয়াত : ৫৬)। এই কালিমার জন্যই দুনিয়া ও আখিরাত সৃষ্টি করা হয়েছে। এর দ্বারাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাঁর বিভিন্ন শরী‘আত প্রবর্তন করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا نُوۡحِیۡۤ اِلَیۡہِ اَنَّہٗ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدُوۡنِ
‘আর আপনার পূর্বে আমরা যে রাসূলই প্রেরণ করেছি তার কাছে এ অহীই পাঠিয়েছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই, সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ২৫)। এই কালিমার জন্যই মীযানের পাল্লা স্থাপিত হবে, আমলনামা উপস্থাপন করা হবে এবং জান্নাতে ও জাহান্নামে বাজার বসবে। আর এ কালিমা দ্বারাই মানুষের চরিত্র, মুমিন-কাফির এবং নেককার ও বদকার হিসাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই কালিমাকে কেন্দ্র করেই মানুষ হতভাগা অথবা সৌভাগ্যবান হবে। সুতরাং এই কালিমাই যাবতীয় সৃষ্টি, কর্ম, প্রতিদান ও শাস্তির উৎসস্থল। আর এ কালিমা দ্বারাই আমলনামা ডান হাতে অথবা বাম হাতে আসবে ও মীযানের পাল্লা ভারী অথবা হালকা হবে। এর দ্বারাই জাহান্নামে প্রবেশের পর এবং তাতে অবস্থান করা আবশ্যক হয়ে যাওয়ার পরও জাহান্নাম থেকে মুক্তি মিলবে। এটা এমন হক যার জন্য যাবতীয় সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারাই অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন। এ বিষয়ে ও এর হক্ব বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে এবং ক্বিয়ামত দিবসে এর হিসাব গ্রহণ করা হবে। এর উপরই প্রতিদান ও শাস্তি নির্ভর করে। এর উপর ভিত্তি করেই ক্বিবলা প্রতিষ্ঠিত এবং জাতি গঠিত। আর এটা সকল বান্দার উপর আল্লাহ তা‘আলার হক্ব।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
حَقُّ اللهِ عَلَى الْعِبَادِ أَنْ يَعْبُدُوْهُ وَلَا يُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا
‘বান্দাদের ওপর আল্লাহর হক্ব হল, তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং কাউকে তাঁর সাথে শরীক করবে না’।[১]
আর আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাঁর মুমিন বান্দাদের প্রতি কৃত সবচেয়ে বড় নে‘মত এটাই, যখন তিনি তাদেরকে এর প্রতি হেদায়াত দান করেন। সুতরাং এটা হল ইসলামের কালিমা এবং জান্নাতের চাবি। এর দ্বারাই জান ও মাল নিরাপত্তা লাভ করে এবং এর দ্বারাই জিহাদের তরবারী উন্মুক্ত হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوْا أَنْ لَا إله إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ، وَيُقِيْمُوا الصَّلَاةَ، وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ، فَإِذَا فَعَلُوْا ذٰلِكَ عَصَمُوْا مِنِّيْ دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلَّا بِحَقِّ الْإِسْلَامِ، وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللهِ
‘আমি মানুষদের সাথে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবূদ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল, আর সালাত কায়েম করবে ও যাকাত প্রদান করবে। যদি তারা এটা করতে পারে তবে তারা আমার কাছ থেকে তাদের জান ও মালের নিরাপত্তা লাভ করল। তবে ইসলামের বিধান অনুযায়ী কোন কারণ থাকে তবে তা আলাদা কথা। আর তাদের হিসাবের ভার আল্লাহর নিকট।[২] আর এটা এমন কালিমা মানুষকে সর্বপ্রথম যার প্রতি দাওয়াত দেয়া ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মু‘আয (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ইয়ামানে প্রেরণকালে বলেন,
إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ أَهْلِ كِتَابٍ، فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ عِبَادَةُ اللهِ
‘তুমি এমন এক জাতির নিকট যাচ্ছ যারা আহলে কিতাব। সুতরাং তুমি তাদের সর্বপ্রথম আল্লাহর ইবাদতের দিকে দাওয়াত দিবে’।[৩] অন্য বর্ণনায় এসেছে,
فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لَا إله إَلَّا اللهُ وَأَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ
‘সুতরাং তুমি তাদেরকে কালিমায়ে শাহাদাত তথা ‘আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মাবূদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল’ এই কালিমার প্রতি দাওয়াত দিবে’।[৪]
এটাই হল দ্বীনের মূল ভিত্তি, দ্বীনের প্রধান নির্দেশ ও এর গাছের মূল কাণ্ড এবং দ্বীনের তাঁবুর খুঁটি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
بُنِىَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيْتَاءِ الزَّكَاةِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ، وَحَجِّ الْبَيْتِ
‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত ১. এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই ও মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল ২. সালাত প্রতিষ্ঠা করা ৩. যাকাত প্রদান করা ৪. রামাযানের সিয়াম পালন করা ৫. হজ্জ করা।[৫]
এটাই মজবুত হাতল। এটা হক্ব কালিমা, তাক্বওয়ার কালিমা, প্রমাণিত সত্য বাণী এবং পবিত্র কালিমা ও সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণ। এটা হক্বের সাক্ষ্য, ইখলাছের কালিমা ও এটাই হক্বের দাওয়াত। এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ যিকির। নবীগণের কথার মধ্যে এটাই সর্বোত্তম। এটাই সর্বোত্তম আমল। এটা (পাঠ করা) একজন দাস মুক্ত করার সমান। এর পাঠকের জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খোলা হয়। আর এটা এমন মহান কালিমা যার সম্পর্কে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলেই জিজ্ঞাসিত হবে। ফলে ক্বিয়ামতের দিন দু’টি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আল্লাহর তা‘আলার সামনে থেকে কোন বান্দার পদদ্বয় এক বিন্দুও সরবে না। প্রশ্ন দু’টি হল,
مَاذَا كُنْتُمْ تَعْبُدُوْنَ؟ وَمَاذَا أَجَبْتُمْ الْمُرْسَلِيْنَ؟
‘তোমরা কী ইবাদত করেছ? এবং তোমরা রাসূলগণের ডাকে কেমন সাড়া দিয়েছ?
এর প্রথম অংশের উত্তর لا إله إلا الله ‘আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই’ এই কালিমার বাস্তবায়ন। অর্থাৎ এই কালিমা জেনে বুঝে, স্বীকৃতি দিয়ে ও আমলে বাস্তবায়ন করলে প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাব হবে أن محمدا رسول الله ‘নিশ্চয় মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল’। অর্থাৎ জেনে বুঝে, মুখে স্বীকৃতি দিয়ে ও রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যথাযথ আনুগত্য।[৬] কেননা তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তিনি আল্লাহর অহীর বিষয়ে আমানতদার, আল্লাহর সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ, আল্লাহ ও বান্দার মাঝে দূত বার্তাবাহক এবং তিনি শক্তিশালী দ্বীন ও সরল-সোজা মানহাজ নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন। আল্লাহ তাঁকে জগৎসমূহের জন্য রহমত, মুত্তাক্বীদের ইমাম ও সমস্ত সৃষ্টির উপর হুজ্জাতসরূপ প্রেরণ করেছেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মাধ্যমে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সুস্পষ্ট পথের দিশা দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে অনেক অন্ধ চক্ষু, অনুভূতিহীন বন্ধ হৃদয় ও বধির কর্ণকে খুলে দিয়েছেন। আর তিনি বান্দাদের উপর তাঁর আনুগত্য, তাঁকে সাহায্য-সহযোগিতা, সম্মান, ভালোবাসা ও তাঁর হক্বের পক্ষে দণ্ডায়মান হওয়াকে ফরয করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাস্তা ছাড়া জান্নাতের সকল রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে তাঁর রাস্তা ছাড়া অন্য কোন রাস্তা কারো জন্য খোলা হবে না। সুতরাং তিনি তাঁর বক্ষকে প্রশস্ত করে দিয়েছেন। তাঁর স্মরণকে সমুন্নত করেছেন। তাঁর বোঝা হালকা করে দিয়েছেন। আর যারা তাঁর আদেশ অমান্য করবে তাদের জন্য অপমান ও লাঞ্ছনা আবশ্যক করে দিয়েছেন। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আনুগত্যের ভিত্তিতেই হেদায়াত, সফলতা ও মুক্তি মিলবে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা বান্দার দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা তাঁর আনুগত্যের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছেন। আর যারা তাঁর অবাধ্য হবে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের দুর্ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আনুগত্যকারীদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে হেদায়াত, সফলতা, মুক্তি, মর্যাদা, পূর্ণতা, সাহায্য, নেতৃত্ব, ক্ষমতা ও স্বাচ্ছন্দময় জীবন-যাপন। পক্ষান্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অবাধ্যদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে, অপমান, লাঞ্ছনা, ভয়, ভ্রষ্টতা, ব্যর্থতা ও দুর্ভাগ্য।[৭]
তথ্যসূত্র :
[১]. সহীহ বুখারী, হা/২৮৫৬; সহীহ মুসলিম, হা/৩০।
[২]. সহীহ বুখারী, হা/২৫; সহীহ মুসলিম, হা/২২।
[৩]. সহীহ বুখারী, হা/১৪৫৮; সহীহ মুসলিম, হা/১৯।
[৪]. সহীহ মুসলিম, হা/১৯।
[৫]. সহীহ বুখারী, হা/৮, ৪৫১৪; সহীহ মুসলিম, হা/১৬।
[৬]. যাদুল মা‘আদ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৪; মা‘আরিজুল ক্বুবূল বিশারহি সুল্লামিল উছূল ইলা ইলমিল উছূল ফিত-তাওহীদ লিশ-শায়খ হাফিয ইবনি আহমাদ আল-হাকামী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪১০-৪১৩; কালিমাতুল ইখলাছ ওয়া তাহক্বীকু মা‘নাহা লিল হাফিয ইবনি রাজাব আল-হাম্বালী, পৃ. ৪৯-৫১।
[৭]. যাদুল মা‘আদ লিইবনিল ক্বাইয়িম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৪-৩৬; আশ-শাক্বাউ ফী হুকুকিল মুছত্বাফা (ﷺ), ১ম খণ্ড, পৃ. ৩।
- ড. সাঈদ ইবনু আলী ইবনু ওয়াহাফ আল-ক্বাহত্বানী
-মুহাম্মাদ ইউনুস বিন আহসান
Last edited: