সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

প্রশ্নোত্তর আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের তাৎপর্য এবং এ বিষয়ে মতবিরোধকারীগণ

FORUM BOT

Doing Automated Jobs

Threads
4,147
Comments
4,353
Solutions
1
Reactions
37,583
Credits
24,212
প্রশ্নঃ রুবুবিয়্যাহ বা রব হিসেবে আল্লাহর এককত্ব বলতে কী বুঝায়?


উত্তরঃ



সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।


তাওহিদে রুবুবিয়্যাহ: অর্থাৎ আল্লাহর যাবতীয় কর্মে তাঁকে এক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। যেমন- সৃষ্টি করা, মালিকানা (সার্বভৌমত্ব), নিয়ন্ত্রণ করা, রিযিক দেয়া, জীবন দেয়া, মৃত্যু দেয়া, বৃষ্টিপাত করা ইত্যাদি। সুতরাং আল্লাহকে সবকিছুর রব, মালিক, সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা হিসেবে স্বীকৃতি না দিলে; জীবন ও মৃত্যুদাতা, উপকার ও ক্ষতিকারী, দুআ কবুলকারী, সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকারী, সকল কল্যাণের অধিপতি, স্ব-ইচ্ছা বাস্তবায়নে ক্ষমতাবান হিসেবে বিশ্বাস না করলে একত্ববাদের ঈমান পরিপূর্ণ হবে না। এর মধ্যে তাকদীর তথা ভাল-মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত এ ঈমানও অন্তর্ভুক্ত। এ প্রকারের তাওহিদের ক্ষেত্রে মক্কার কাফেরগণ আপত্তি করেনি; যাদের কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরিত হয়েছিলেন। বরং তারা সামষ্টিক বিচারে তাওহিদে রুবুবিয়্যাতে স্বীকৃতি দিত।


আল্লাহ তাআলা বলেন: “আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন কে নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডল সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহ।”[সূরা যুখরুফ, আয়াত: ০৯] তারা স্বীকার করত যে, আল্লাহই সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকারী। তাঁর হাতে রয়েছে আসমান ও জমিনের রাজত্ব। এর থেকে জানা গেল যে, আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের এতটুকু স্বীকৃতি ইসলাম গ্রহণের জন্য যথেষ্ট নয়। বরং এ ঈমান অন্য যে ঈমানকে আবশ্যক করে সে অংশের উপরও ঈমান আনতে হবে। সেটা হচ্ছে উলুহি্য়্যাত তথা উপাসনাতে আল্লাহর এককত্বের প্রতি ঈমান। এ তাওহিদ অর্থাৎ তাওহিদে রুবুবিয়্যাকে বনি আদমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেউ অস্বীকার করেছে বলে জানা যায় না। এ কথা কেউ বলেনি যে, এ মহাবিশ্বের সমমর্যাদার অধিকারী একাধিক স্রষ্টা রয়েছে। তাই রুবুবিয়্যাকে কেউ অস্বীকার করেনি। শুধু অহংকার ও হঠকারিতা বশতঃ ফেরাউনের পক্ষ থেকে এ ধরনের অস্বীকৃতি প্রকাশ পেয়েছে। বরং সে দাবী করেছিল সেই রব্ব।


আল্লাহ তাআলা তার কথাটি উদ্ধৃত করে বলেন: “এবং বললঃ আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর রব্ব।”[সূরা নাযিআত, আয়াত: ২৪]“আমি জানি না যে, আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য আছে।”[সূরা কাসাস, আয়াত: ৩৮] এটি ছিল তার দাম্ভিকতা। কারণ সে জানত সে রব্ব নয়। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “তারা অন্যায় ও ঔদ্ধত্যভরে নিদর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করল যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল।”[সূরা নামল, আয়াত: ১৪] আল্লাহ তাআলা মূসার বিতর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:“তুমি জান যে,আসমান ও যমীনের রব্ব ছাড়া অন্য কেউ এসব নিদর্শনাবলী নাযিল করেননি।”[সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ১০২] তাই সে মনে মনে স্বীকার করত যে, রব্ব হচ্ছেন- আল্লাহ তাআলা। রুবুবিয়্যাহকে শিরকের মাধ্যমে অস্বীকার করে- মাজুস বা অগ্নি উপাসকেরা। তারা বলে, এ মহাবিশ্বের স্রষ্টা দুইজন: অন্ধকার ও আলো।


তবে এ বিশ্বাস সত্ত্বেও তারা এ দুই স্রষ্টাকে সমান মর্যাদা দেয়নি। তারা বলেছে: আলো আঁধারের চেয়ে উত্তম। কারণ আলো কল্যাণের স্রষ্টা। আর আঁধার অকল্যাণের স্রষ্টা। যে কল্যাণ সৃষ্টি করে সে অকল্যাণ সৃষ্টিকারীর চেয়ে উত্তম। অন্ধকার হচ্ছে- অনস্তিত্ব, অনুজ্জ্বল। আলো হচ্ছে- অস্তিত্বশীল ও উজ্জ্বল। তাই আলোর সত্তা অধিক পরিপূর্ণ। মুশরিকদের রুবুবিয়্যতে বিশ্বাস করার অর্থ এই নয় যে, তাদের সে বিশ্বাস পরিপূর্ণ ছিল। বরং তারা মোটের উপর রুবুবিয়্যতে বিশ্বাসী ছিল। যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখিত আয়াতগুলোতে আমরা দেখেছি। কিন্তু তারা এমন কিছু বিষয়ে লিপ্ত হতো যেগুলো রুবুবিয়্যতের বিশ্বাসকে ত্রুটিপূর্ণ করে দেয়। যেমন- বৃষ্টি বর্ষণকে নক্ষত্রের সাথে সম্পৃক্ত করা; গণক ও যাদুকরেরা গায়েব জানে বলে বিশ্বাস করা; ইত্যাদি। কিন্তু উলুহিয়্যাতের শিরকের তুলনায় তাদের রুবুবিয়্যাতের শিরক ছিল খুবই সীমাবদ্ধ।


আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন মৃত্যু অবধি আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের উপর অবিচল রাখেন। আল্লাহই ভাল জানেন। দেখুন: তাইসীরুল আযিযিল হামিদ, পৃষ্ঠা-৩৩, আল-কাওলুল মুফিদ (১/১৪)।


মূল -- https://islamqa.info/
 
Top