আমার আকীদা ও সালাফি মানহাজ পরিচিতি | মাহফুজুর রহমান ফাহাদ

Joined
Aug 5, 2025
Threads
8
Comments
9
Reactions
60
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

আমার নাম মাহফুজুর রহমান ফাহাদ।
স্থায়ী ঠিকানা: জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট।

আলহামদুলিল্লাহ, আমি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্‌-এর সালাফি মানহাজের একজন নিবেদিত অনুসারী। কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে, সালাফে সালেহীনের পথ অনুসরণ করে, বিদআত ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত থেকে দ্বীনকে তার প্রকৃত ও বিশুদ্ধ রূপে পালন করার চেষ্টা করি।

আমার লক্ষ্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন ও আখিরাতে সফলতা লাভ করা। আমি আপনাদের সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা করছি যেন আল্লাহ আমাকে এই পথে দৃঢ় ও অবিচল রাখেন এবং আমার পরিবার-পরিজনসহ সকল মুসলিম উম্মাহকে হিদায়াত দান করেন। আমীন।

জযাকুমুল্লাহ খাইর।
 
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ
আল্লাহ আপনাকে তাঁর সঠিক দ্বীনের উপর অটল রাখুক।
আশাকরি আমাদের ফোরামের মেম্বারগণ আপনার কনটেন্টের মাধ্যমে উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।
ফোরামের সার্বিক উন্নয়ন ও প্রচার প্রচারণার জন্য আপনার সহযোগিতা কামনা করছি।
আল্লাহ আপনার সকল উত্তম প্রচেষ্টাগুলোকে কবুল করুক।
জাযাকাল্লাহু খাইরান।
 
খালাক্বাল্লাহু আদামা আলা সূরাতিহী”

আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর ‘সূরতে’ সৃষ্টি করেছেন।

এ হাদীসটি যা ‘সূরত এর হাদীস’ নামে প্রসিদ্ধ; তার ব্যাখ্যায় আলেমগণের মাঝে মতভেদ হয়েছে। বিশেষ করে মতভেদের কারণ হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘সূরাতিহি’ শব্দের শেষে অবস্থিত ‘হি’ সর্বনামটি কোন দিকে ইঙ্গিত করছে? এখানে বিষয়টি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো:
এক. ইমাম ইবন খুযাইমাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এখানে ‘তার সূরত’ বলতে ‘মাদ্বরূব’ বা যাকে প্রহার করা হচ্ছে সে ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যাদের কাছে ইলম বা জ্ঞানের গভীরতা নেই তারা মনে করেছে, ‘তাঁর সূরত’ বলতে আমাদের রব্ব ‘রহমান’ এর সূরতকে বুঝানো হয়েছে। আমাদের রব্ব মহান ও পবিত্র এ হাদীসের অর্থ হওয়া থেকে। বরং হাদীস ‘খালাক্বা আদামা আলা সূরাতিহী’ এখানে ‘হি’ সর্বনামটি দ্বারা প্রহৃত বা প্রহারকৃত বা গালি প্রদানকৃত ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে চেয়েছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা আদম ‘আলাইহিস সালামকে এ প্রহৃত ব্যক্তির সূরতে সৃষ্টি করেছেন।
এ হচ্ছে উপরোক্ত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবন খুযাইমাহর বক্তব্য। আর ইবন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বর্ণিত হাদীসটিকে তিনি দুর্বল বলেছেন। তারপর ইবন খুযাইমাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যদি ইবন উমার এর হাদীসটি মারফূ‘ হিসাবে সনদের দিক থেকে সাব্যস্ত হয়েও যায়, তবুও আমরা বলবো, এ ইবন উমার এর হাদীসে ‘সূরত’কে রহমানের দিকে সম্বন্ধকৃত করা ঠিক তেমনি মনে করতে হবে যেমনটি স্রষ্টার দিকে সৃষ্টিকে সন্বন্ধকৃত করা হয়। কারণ সৃষ্টিকেও স্রষ্টার দিকে সম্বন্ধ করা হয়, কারণ আল্লাহই তো সেটাকে সৃষ্টি করেছেন। অনুরূপ ‘সূরত’কে রহমানের দিকে সম্বন্ধকৃত করা হয়, কারণ তিনিই তো ‘সূরত’ নির্ধারণ করেছেন।’ [ইবন খুযাইমাহ, আত-তাওহীদ ১/৮৪-৮৫, ৮৭-৯২]
ইমাম ইবন খুযাইমার এ বক্তব্যটিকে আলেমগণ মেনে নেননি। বরং তারা এ বক্তব্যের ভুল ধরেছেন। যেমন:
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ শাইখ আবুল হাসান মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল মালেক আল-কারজী আশ-শাফে‘ঈর বক্তব্য নিয়ে এসেছেন যে, তিনি তাঁর ‘আল-ফুসূল ফিল উসূল’ গ্রন্থে বলেন, ‘আর যে তা’ওয়ীল এর উপর ইমামগণ চলবেন না, যে তাওয়ীলের অনুসরণ ইমামগণ করেন না সেটা অগ্রহণযোগ্য তা’ওয়ীল। যদিও সে তা’ওয়ীলটি কোনো বিখ্যাত ইমাম, অচেনা ব্যক্তি নয় এমন লোক থেকেই প্রকাশ পেয়ে যাক না কেন, যেমনটি আবু বকর মুহাম্মাদ ইবন খুযাইমার দিকে সন্বন্ধ করা হয় যে, তিনি ‘খালাক্বা আদামা আলা সূরাতিহী’ এর তা’ওয়ীল করেছেন।
অনুরূপভাবে শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ হাফেয আবু মূসা আল-মাদীনী থেকে বর্ণনা করেন, যা তিনি হাফেয ইমাম কিওয়ামুস সুন্নাহ বলে খ্যাত আবুল কাসেম ইসমাঈল ইবন মুহাম্মাদ আত-তাইমী যিনি আত-তারগীব ওয়াত তারহীব এর গ্রন্থকার তাঁর জীবনীতে যা জমা করেছেন তাতে বলেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, মুহাম্মাদ ইবন ইসহাক্ব ইবন খুযাইমাহ সূরত সংক্রান্ত হাদীসে ভুল করেছেন। তবে এ কারণেই তার ওপর দোষ দেয়া যাবে না। বরং তাঁর থেকে তা গ্রহণ করা যাবে না এতটুকুই। হাফেয আবু মূসা বলেন, এর দ্বারা আবুল কাসেম আত-তাইমীর উদ্দেশ্য হচ্ছে এটা বলা যে, ‘এমন ইমাম কমই আছে যার কোনো সামান্য পদস্খলন নেই, যদি এসব ইমামকে এসব পদস্খলনের কারণে পরিত্যাগ করা হয়, তাহলে অনেক ইমামকেই বাদ দিয়ে দিতে হবে। আর এটা কখনো করা উচিত হবে না।’ [বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ৬/৪০৯-৪১১; জাওয়াবুল ই‘তিরাদ্বাতিল মিসরিয়্যাহ আলাল ফুতইয়া আল-হামাওয়িয়্যাহ, ১৬৮-১৬৯; আরও দেখুন, ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ২০/৮৮]
তারপর শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বিভিন্নভাবে ইবন খুযাইমার উপরোক্ত তা’ওয়ীল খণ্ডন করেছেন।
ইমাম যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ ইমাম ইবন খুযাইমাহ রাহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে বলেন, ‘আর তাওহীদ এর উপর লেখা তাঁর কিতাব, তাতে তিনি ‘সূরত’ সংক্রান্ত হাদীসের তা’ওয়ীল করেছেন। তাহলে কেউ সিফাতের ক্ষেত্রে এমন তা’ওয়ীল করলে তার জন্যও ওযর তালাশ করা যাবে।... যদি যারাই তাদের ইজতিহাদে ভুল করে,.. অথচ তার ঈমান বিশুদ্ধ, হকের অনুসরণে তার প্রচেষ্টা নিরন্তর, এমন সকলকে যদি পরিত্যাগ করে বসি, তাহলে আমাদের এ নীতিতি ইমামগণের মধ্য হতে খুব কমই নিরাপত্তা পাবে। আল্লাহ সকলকে রহমত করুন, তাঁর একান্ত দয়া ও দানে।” ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১৪/৩৭৬।
উপরোক্ত মাসআলায় ইমাম ইবন খুযাইমার এর মতটি ইমাম বাইহাক্বী গ্রহণ করেছেন। দেখুন, বাইহাক্বী, আল-আসমা ওয়াস সিফাত ২/১৭।
দুই. ইবন হাযম রাহিমাহুল্লাহ মনে করেন, এখানে হাদীসে ‘সূরত’ এর সম্বন্ধ আল্লাহর দিকে করা হয়েছে, মালিকানার ভিত্তিতে। যেমন, আল্লাহর ঘর, আল্লাহর উষ্ট্রী....।’ দেখুন, ইবন হাযম, আল-ফাসলু ফিল মিলালি ওয়াল আহওয়ায়ি ওয়ান নিহাল ২/১৭৬।
তিন. কেউ কেউ হাদীসের তা’ওয়ীল করেছেন এমনভাবে যে, সর্বনামটি আবার আদমের দিকে প্রত্যাবর্তন করে, এ মতটি নিয়েছেন, রাযী, আবু সুলাইমান আল-খাত্তাবী আর তাদের অনুসারী কালামশাস্ত্রবিদরা।
চার. কেউ কেউ তা’ওয়ীল করেছেন এভাবে যে, আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর কাছে থাকা একটি ‘সূরত’ অনুযায়ী সৃষ্টি করেছেন।
পাঁচ. কারও কারও মতে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বক্তব্যের মাধ্যমে নাস্তিক ও সময়ের পূজারী দাহরীদের মতামত খণ্ডন করেছেন। কারণ তারা বলতো, মানুষ তো সর্বদাই বীর্য থেকে এসেছে, আর বীর্য মানুষ থেকে, সুতরাং আলাদা কোনো প্রথম সৃষ্টি ছিল না। তখন এ হাদীস দিয়ে বর্ণনা করে দেয়া হলো যে, ‘আদম আলাইহিস সালামকে প্রথমবারেই এ সূরতে সৃষ্টি করা হয়েছে, বীর্য থেকে নয়।
ছয়. কারও কারও মতে, এ হাদীস দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য প্রকৃতিবাদীদের বক্তব্য খণ্ডন করা, যারা মনে করে থাকে মানুষ সম্ভবত প্রকৃতির কর্ম ও তার প্রভাবের ফলে সৃষ্ট হয়েছে, তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করলেন।” অর্থাৎ প্রকৃতির কোনো কারসাজি ও প্রভাবে নয়।
এ রকম বহু বাতিল ও অগ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এখানে রয়েছে।
দেখুন, ইবন ক্বুতাইবাহ, তা’ওয়ীলু মুখতালাফুল হাদীস, পৃ. ১৪৮-১৪৯; বাইহাক্বী, আল-আসমা ওয়াস সিফাত ২/১৬; ইবন হাজার, ফাতহুল বারী ১১/৩, ৫/১৮৩; ইবন ফুওরাক, মুশকিলুল হাদীস, ৬-৫; ইবন জামা‘আহ, ঈদ্বাহুদ দলীল ফী কাত‘য়ি হুজাজি আহলিত তা‘ত্বীল পৃ. ১৫৪-১৫৫; নাওয়াওয়ী, শারহু মুসলিম, ১৬/১৬৬; গাযালী, ইলজামুল ‘আওয়াম ‘আন ইলমিল কালাম পৃ. ৫৬; ইবনুল জাওযী, দাফ‘উ শুবাহিত তাশবীহ বি আকুফফিত তানযীহ পৃ. ৪৬-৫৪, শাইখ হামূদ আত-তুওয়াইজরী, আকীদাতু আহলিল ঈমান পৃ. ৫০-৫১।
ইমাম ও আলেমগণ এসব ফাসিদ তা’ওয়ীল ও তাহরীফ এর যথাযোগ্য জবাব দিয়েছেন এবং এগুলোকে খণ্ডন করেছেন।
সাত. বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ এর মধ্যস্থিত সর্বনাম ‘তাঁর’ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলাকেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা আদমকে আল্লাহর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। এ মতটিই পূর্বাপর যুগ যুগ ধরে সালাফে সালেহীনের অনুসারী আলেম ও ইমামগণের। তারা আল্লাহর জন্য ‘সূরত’ গুণটি সাব্যস্ত করেন অন্যান্য গুণের মতই। সুতরাং আল্লাহর জন্য তা তেমনিভাবে সাব্যস্ত হবে যেভাবে তাঁর জন্য শোনা, দেখা, চেহারা, পা ইত্যাদি গুণ সাব্যস্ত করা হয়; যা সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ধরণ নির্ধারণে যাওয়া যাবে না, আর আল্লাহ তা‘আলাকে কোনো সাদৃশ্য ও কারো মত হওয়া থেকে পবিত্র রাখতে হবে।
ইমাম ইবন ক্বুতাইবাহ রাহিমাহুল্লাহ আল্লাহর জন্য ‘সূরত’ গুণটি সাব্যস্ত করেছেন এবং তিনি বাকী সকল তা’ওয়ীল অস্বীকার করেছেন এবং সেগুলোকে বাতিল বলেছেন। তারপর বলেন, ‘আর যা আমার নিকট তা হচ্ছে, আল্লাহ ভালো জানেন, আল্লাহর জন্য ‘সূরত’ সাব্যস্ত করা কোনোভাবেই তাঁর জন্য দু’ হাত, আঙ্গুল ও চোখ সাব্যস্ত করার চেয়ে আশ্চর্যজনক নয়। ওগুলো কুরআনে আসার কারণে সেগুলো সহজ সাবলীলভাবে গ্রহণীয় হয়েছে, আর এটি কুরআনে না আসার কারণে অসাবলীল মনে হচ্ছে, আর আমরা এসবের উপরই ঈমান আনি, এসবের কোনো কিছুতেই আমরা ধরণ বা সংজ্ঞায়িত করার মাধ্যমে সীমা নির্ধারণ করি না।’ দেখুন, ইবন ক্বুতাইবাহ, তা’ওয়ীলু মুখতালাফুল হাদীস পৃ. ৬০০।
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল থেকেও এ গুণটি সাব্যস্ত করা এবং যারা এ অর্থের বাইরে অন্য প্রকার তা’ওয়ীল করেছে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা বর্ণিত হয়েছে। যেমনটি খাল্লাল বর্ণনা করেন আবু ত্বালেব থেকে দু সূত্রে। তিনি বলেন, আমি আবু আব্দিল্লাহ (আহমাদ ইবন হাম্বল)কে বলতে শুনেছি, যে বলবে, আল্লাহ তা‘আলা আদমকে আদমের সূরতে সৃষ্টি করেছেন সে জাহমী; আদমকে সৃষ্টি করার আগে আদমের সূরত কোত্থেকে এলো?
অপর বর্ণনায়, ইমাম আহমাদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, হে আবু আব্দুল্লাহ, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে হাদীসটি বর্ণিত, ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’, এর দ্বারা কি আদমের সূরত বুঝানো হয়েছে? জবাবে তিনি বললেন, তাহলে অপর হাদীস ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে রহমানের সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ সেটা কোথায় যাবে? আর আদম সৃষ্টির আগে তার সূরত কোত্থেকে আসলো?’ দেখুন, ইবত্বালুত তা’ওয়ীলাত ১/৮৮, ৯০।
তার ছেলে আব্দুল্লাহ বলেন, এক লোক আমার পিতাকে প্রশ্ন করেন, অমুকে বলে, ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ হাদীসটিতে তাঁর সূরত বলে লোকটির সূরত বুঝানো হয়েছে, তখন আমার পিতা বললেন, এ ব্যক্তি মিথ্যা বলেছে, এ তো জাহমিয়্যাদের কথা, তাহলে কথার উপকারিতা কোথায়? দেখুন, ইবত্বালুত তা’ওয়ীলাত ১/৮৮।
অনুরূপ খাল্লাল বর্ণনা করেন আবু বকর আল-মাররূযী থেকে, তিনি বলেন, আমি আবু আব্দিল্লাহকে বলতে শুনেছি, আমি অবশ্যই হুমাইদীকে সুফইয়ান ইবন উয়াইনাহ এর উপস্থিতিতে আলোচনা করতে শুনেছি, তারপর সেখানে এ হাদীস ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ এর আলোচনা আসলে হুমাইদী বললেন, যে কেউ আদমকে আল্লাহর সূরতে সৃষ্টি করার কথা বলবে না, সে এমন এমন, অর্থাৎ তিনি গালি দিচ্ছিলেন। আর সুফইয়ান চুপ ছিলেন, তার কথার কোনো প্রত্যুত্তর করেননি।
মাররূযী বলেন, আমার মনে হচ্ছে, আমি আবু আব্দিল্লাহর নিকট বসরার এমন এক মুহাদ্দিসের কথা উল্লেখ করেছি যিনি বলে থাকেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ এর অর্থ মাটির সূরতে। তখন ইমাম আহমাদ বললেন, সে জাহমী। আর তিনি বলেন, হাদীস যেভাবে এসেছে সেভাবে আমরা মেনে নিব।
বরং ইমাম আহমাদ তাদেরকে জাহমী বলেছেন, যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যদিকে সর্বনামটিকে ঘুরিয়ে নেয়। তিনি বলেন, যে বলবে, আল্লাহ তা‘আলা আদমকে আদমের সূরতে সৃষ্টি করেছেন, সে জাহমী। আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করার আগে তার সূরত কোত্থেকে আসলো? দেখুন, ইবন বাত্তাহ, আল-ইবানাহ ৩/২৬৬, নং ১৯৮; তাতিম্মাতুর রাদ্দি আলাল জাহমিয়্যাহ।
আবু বকর আল-খাল্লাল ইসহাক্ব ইবন মানসূর আল-কাউসাজ হতে তার বিখ্যাত প্রশ্নোত্তরে ইমাম আহমাদ ও ইসহাক্ব থেকে জানার বিষয়ে বলেন, তিনি আহমাদকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমরা চেহারাকে বিকৃত বলো না; কারণ, ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ আপনি কি এ হাদীস অনুসারে বলেন? তিনি বলেন, বিশুদ্ধ। আর ইসহাক্ব বললেন, বিশুদ্ধ। আর এটিকে কেবল বিদ‘আতী অথবা দুর্বল মতের অধিকারী ব্যক্তিই পরিত্যাগ করতে পারে।’ [আজুররী, আশ-শরী‘আহ ৬৯৭, ইবন বাত্তাহ, আল-ইবানাহ ৩/৫২, নং ৪৬, তাতিম্মাতুর রাদ্দি আলাল জাহমিয়্যাহ; আবু ইয়া‘লা, ইবত্বালুত তা’ওয়ীলাত ১/৮১]
এসবই শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ তাঁর নাক্বদ্বত তা’সীস গ্রন্থে নিয়ে এসেছেন।
ইমাম আজুররী রাহিমাহুল্লাহ তিনি ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ ও নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আদমকে রহমানের সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ হাদীসদ্বয়ের বিভিন্ন সূত্র নিয়ে আসার পর বলেন, এসব হচ্ছে এমন সব সুন্নাহ বা রাসূলের দেয়া আদর্শ মুসলিমদের ওপর ফরয হচ্ছে এর ওপর ঈমান আনা। এগুলোতে বলা হবে না, কেমন সেটা? কেন সেটা? বরং সম্পূর্ণরূপে মেনে নেয়া ও বিশ্বাস করতে হবে। আর বেহুদা চিন্তা-গবেষণা করা পরিত্যাগ করতে হবে। যেমনটি মুসলিমগণের পূর্ববর্তী ইমামগণ বলেছেন। দেখুন, আজুররী, আশ-শরী‘আহ পৃ. ৩৫১।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ এ হাদীসের বিভিন্ন সূত্র ও বর্ণনা আনয়ন করার পর বলেন, ‘এর উপর এটা বলা হবে যে, এ হাদীসের ব্যাপারে প্রথম তিন প্রজন্মের সালাফদের মাঝে কোনো মতভেদ ছিল না যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ এর মধ্যস্থিত ‘তাঁর’ সর্বনামটি আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। কারণ তা বিভিন্নভাবে বিখ্যাত হয়ে বর্ণিত হয়েছে একাধিক সাহাবী থেকে। আর হাদীসের পূর্বাপর সম্পর্ক সেটাই প্রমাণ করে।....[বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ৬/৩৭৩]
তিনি আরও বলেন, অনুরূপ বর্ণনা আহলে কিতাবদের নিকটে থাকা গ্রন্থসমূহেও নবীদের থেকে এসেছে, যেমন তাওরাত ইত্যাদিতে। সালাফে সালেহীনের কেউ কখনো এটাকে তা’ওয়ীল করতেন না।.. জাওয়াবুল ই‘তিরাদ্বাতুল মিসরিয়্যাহ আলাল ফুতইয়া আল-হামাওয়িয়্যাহ পৃ. ১৫৭-১৫৮।
এ হাদীস সম্পর্কে অন্যত্র বলেন, উম্মতের মধ্যে যাদের ইমামত বা নেতৃত্বের ব্যাপারে সকলে একমত তারা সবাই এ হাদীস সর্বদা বর্ণনা করেছেন, কেউ এ হাদীসকে অস্বীকার করেননি, কেউ তা’ওয়ীলও করেননি। তাদের থেকে এটাই সংরক্ষিত হয়ে এসেছে। সর্বপ্রথম যার কাছ থেকে আমাদের কাছে পৌঁছেছে যে, তিনি এটার তা’ওয়ীল করেছেন, যার ইলমে প্রসিদ্ধি ছিল, তিনি হচ্ছেন ইমাম আবু সাওর। জাওয়াবুল ই‘তিরাদ্বাতুল মিসরিয়্যাহ আলাল ফুতইয়া আল-হামাওয়িয়্যাহ পৃ. ১৬৭-১৬৮।
তারপর তিনি বলেন, অতঃপর যখন তৃতীয় শতাব্দীতে জাহমিয়্যাদের প্রাদুর্ভাব ঘটলো, তখন তারা এ সর্বনামটিকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য দিকে ফেরানোর জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়; তাদের এ প্রচারে প্রভাবিত হয়ে এমন কথা ইলম ও সুন্নাহয় প্রসিদ্ধ এক দল লোক থেকেও বর্ণিত হয়েছে। যেমন, আবু সাওর, ইবন খুযাইমাহ, আবুশ শাইখ আল-আসাফানী প্রমুখ। আর সে জন্য দীনের ইমাম আলেমগণ তাদের এ সব কথার প্রতিবাদ করেছেন। .. ইবন তাইমিয়্যাহ, নাক্বদ্বুত তা’সীস।
ইমাম যাহাবী বলেন, আর ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ এ হাদীসের প্রকৃত অর্থকে আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দিব, আর সেভাবেই চুপ থাকবো যেভাবে সালাফগণ চুপ ছিলেন; তবে সাথে সাথে দৃঢ়ভাবে এটা বলবো যে, তাঁর মতো কোনো কিছু নাই।’ দেখুন, ইমাম যাহাবী, মীযানুল ই‘তিদাল ২/৪২০।
অন্যত্র ইমাম যাহাবী ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ এ হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন, ‘সুতরাং আমরা এর অর্থের উপর ঈমান আনব, ধরণকে সোপর্দ করবো, আর মেনে নিব, যাতে আমাদের কোনো উপকার নেই তাতে আলোচনায় প্রবৃত্ত হবো না, তবে অবশ্যই আমরা দৃঢ়ভাবে জানি যে, তাঁর মতো কোনো কিছু নেই, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।’ দেখুন, ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৫/৪৫০।
ইমাম আবু ইয়া‘লা বলেন, দ্বিতীয় অধ্যায়, এটা নিঃশর্তভাবে বলা যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ আর এখানকার ‘তার’ শব্দটি রহমানের দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। তারপর তিনি হাদীস ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ এটিকে নিয়ে আসলেন। তারপর বললেন, এর কারণ হচ্ছে, এটিকে প্রকাশ্য অর্থে বহন করা হলে তা আল্লাহর গুণ হতে অসম্ভব কিছু আসে না, আর সে গুণটিকে যা সে সাব্যস্ত করছে তা যা তার জন্য উপযুক্ত তা থেকে বের করে দিচ্ছে না। কারণ আমরা তাঁর জন্য ‘সূরত’ শব্দটি ব্যবহার করি তবে তা অন্য সূরতের মত নয়। যেমনিভাবে আমরা তাঁর জন্য যাত ও সত্তা ব্যবহার করি যা অন্য যাত ও সত্তার মত নয়।’ ইবত্বালুত তা’ওয়ীলাত ১/৮১।
শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুর রহমান আবু বাত্বীন, যিনি নাজদ কেন্দ্রিক দাওয়াতের ইমামগণের একজন, তিনি এ হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনা উল্লেখ করেন এবং যারা এর সর্বনামটিকে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে বলে মত প্রকাশ করেন তাদের মতামত খণ্ডন করেন, আর আলেমগণ থেকে বিভিন্ন উদ্ধৃতি নিয়ে আসেন যে, বিশুদ্ধ মতে এ সর্বনামটি ‘আল্লাহ তা‘আলা’ এর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হবে, এর দ্বারা আল্লাহর সূরতই উদ্দেশ্য। তারপর তিনি বলেন, সুতরাং যা এ রকম হাদীসের ক্ষেত্রে আবশ্যক তা হচ্ছে, এ হাদীসগুলোকে যেভাবে এসেছে সেভাবে গ্রহণ করা, সন্তুষ্ট হওয়া ও মেনে নেয়া, সাথে সাথে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, তাঁর মতো কোনো কিছু নেই, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। আল্লাহই ভালো জানেন।’ দেখুন, মাজমূ‘আতুর রাসায়িল ওয়াল মাসায়িল আন-নাজদিয়্যাহ ২/২২১-২২৩।
এ হচ্ছে এ হাদীসের ব্যাপারে ইমামগণের সঠিক মতের সংক্ষিপ্ত চিত্র। বস্তুত আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত কেবল এ হাদীস দিয়েই আল্লাহর জন্য ‘সূরত’ গুণটি সাব্যস্ত করেনি, বরং এর সমর্থনে তাদের নিকট আরো হাদীস রয়েছে, যেমন:
১- আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীস, যাতে এসেছে, “অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের কাছে আসবেন, তাঁর যে সূরত তাদের কাছে পরিচিত তা ব্যতীত অন্য সূরতে, তখন তিনি বলবেন, আমি তোমাদের রব। তারা বলবে, আমরা আল্লাহর কাছে আপনার থেকে আশ্রয় চাই, এটা আমাদের অবস্থানের জায়গা, আমাদের রব্ব যতক্ষণ না আসবেন ততক্ষণ আমরা এ স্থান ত্যাগ করবো না, আমরা যখন তাঁকে চিনতে পারবো তখনই কেবল অনুসরণ করবো, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের কাছে সে ‘সূরতে’ আগমন করবেন যে সূরতে তারা তাঁকে চিনে।’ ... আল-হাদীস। বুখারী, আল-জামে‘উস সহীহ, হাদীস নং ৭৪৩৭; মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ১৮২। ইমাম আবু ইয়া‘লা এ হাদীস বর্ণনার পর বলেন, জেনে রাখ যে, এ হাদীসটি আল্লাহর জন্য ‘সূরত’ সাব্যস্ত করছে, তাঁর জন্য ‘আগমন’ সাব্যস্ত করছে। আর এটা নিষিদ্ধ নয় যে, তাঁর জন্য আমরা ‘সূরত’ সাব্যস্ত করবো, যে সূরত অন্য কোনা সূরত এর মতো নয়। যেমনিভাবে তাঁর জন্য নাফস ও যাত ব্যবহার করি তবে অন্য কোনো নাফস ও যাত এর মত নয়।’ ইবত্বালুত তা’ওয়ীলাত ১/১৫১।
২- আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীস, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মহান আল্লাহ আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন, যার দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত, অতঃপর যখন তাকে সৃষ্টি করলেন তখন বললেন, যাও সেসব ফিরিশতাদের দিকে, তাদেরকে সালামা দাও, শোন তারা তোমাকে কী অভিভাদন জানায়?...’ বুখারী, আল-জামে‘উস সহীহ, হাদীস নং ৫৮৭৩, মুসলিম, আস-সহীহ, হাদীস নং ২৮৪১।
৩. অনুরূপ ইবন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হাদীস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা চেহারাকে বিকৃত করো না, বা বিকৃত হোক বলে গালি দিও না; কারণ বনী আদমকে রহমানের সূরতে সৃষ্টি করা হয়েছে।’ যা সংকলন করেছেন,
  • ইবন আবী আসেম, আস-সুন্নাহ ১/৩৬২, নং ৫২৯।
  • আব্দুল্লাহ ইবন ইমাম আহমাদ, আস-সুন্নাহ ৪৯৮, ১০৭৬।
  • ইবন খুযাইমাহ, আত-তাওহীদ, ৪১।
  • বাইহাক্বী, আল-আসমা ওয়াস সিফাত ২/৬৪, নং ৬৪০।
তবে একটি বিষয় এখানে সাবধান করা দরকার তা হচ্ছে,
এ হাদীসে বর্ণিত ‘সূরত’ গুণটি সাব্যস্ত করার ব্যাপারে যেসব আলেম তা’ওয়ীলের আশ্রয় নিয়েছেন, তারা সবাই সুন্নাত থেকে সমান দূরত্বে নন। সুতরাং তাদের মাঝে যাদের ইমাম হওয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত, যেমন আবু সাওর, ইবন খুযাইমাহ, ইবন মান্দাহ, আবুশ শাইখ আল-আসফাহানী, এদের ব্যাপারে দোষারোপ করে কথা বলা ঠিক হবে না। দেখুন, শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ, বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ৬/৪০৯-৪১১; জাওয়াবুল ই‘তিরাদ্বাতিল মিসরিয়্যাহ আলাল ফুতইয়া আল-হামাওয়িয়্যাহ পৃ. ১৬৮-১৬৯।
এ হাদীসের ব্যাপারে যিনি বেশি আলোচনা করেছেন তিনি হচ্ছেন, শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ। তিনি তাঁর বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ গ্রন্থে প্রায় একশত পৃষ্ঠা এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। ৬/৩৫৫-৬২১। তাঁর আলোচনা থেকে কিছু ফায়েদা এখানে বর্ণনা করা হলো:
১- ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ এ হাদীস ও অনুরূপ হাদীসের ভাষ্যে শরী‘আতে যা এসেছে তা শুধু বিশেষভাবে প্রমাণিত, সাধারণ বিবেকের যুক্তি দ্বারা যা জানা যায় তা থেকে আরও বেশি বিশেষ অর্থে সেটা; কারণ সাধারণ বিবেকের যুক্তি হচ্ছে, যে কোনো অস্তিত্বশীল বস্তু ও তার মতো অপর অস্তিত্বশীল বস্তুর মাঝে অর্থের দিক থেকে মুশতারাক বা কমন অংশিদারিত্বের বিষয় থাকে। অনুরূপ প্রতিটি অস্তিত্বশীল দু’টি জীবিত সত্তার মাঝেও কমন একটি অংশে মিল থাকে। (বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ৬/৫১৬)।
২- ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ এ হাদীস দ্বারা এক ধরণের সাদৃশ্য বুঝায় মাত্র, একই রকম হওয়া কোনোভাবেই প্রমাণিত হয় না, বাস্তবেও না, পরিমাণেও না। (বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ৬/৫৩২)।
৩- হাদীস ‘তোমরা চেহারাকে তাক্ববীহ করো না’ এর অর্থ হচ্ছে, তোমরা বলো না যে আল্লাহ তোমার চেহারা বিকৃত করে দিন বা অনুরূপ কিছু। কারণ ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’। এর দ্বারা বুঝা যায় যে, চেহারা বিকৃত করার বদ-দো‘আ করতে বাধার কারণ হচ্ছে তার চেহারা আল্লাহর সূরতের সাথে এক প্রকার সাদৃশ্য রাখে, যদি এমন ‘সূরত’ উদ্দেশ্য হতো যা আল্লাহ সৃষ্টি করবেন, তাহলে সে অবস্থায় তিনি যে আল্লাহর মাখলুক বা সৃষ্ট সেটা আরো বেশি নিষেধের কারণ হতো, সেটার তুলনায় যেটি তিনি সৃষ্টি করবেন। তখন পূর্ণ কারণ থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ কারণের দিকে কথাকে ফিরোনো হয়ে যায়। (বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ৬/৫৩৯)।
৪- যদি হাদীস ‘আল্লাহ তা‘আলা আদমকে তাঁর সূরতে সৃষ্টি করেছেন’ এখানে সূরত এর সম্বন্ধ আল্লাহর দিকে মালিকানা কিংবা সৃষ্টির সম্বন্ধ হতো তাহলে তো শরীরের কোনো অঙ্গেই আঘাত করা নিষিদ্ধ হতো, কারণ সে অংশকে আল্লাহর মালিকানা বা সৃষ্টির দিকে সম্পৃক্ত করা কোনোভাবেই চেহারার সেদিকে সম্পৃক্ত হওয়ার চেয়ে কম নয়, বরং সমপর্যায়ের। (বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ৬/৫৩৮)।
৫- একই হাদীসের বিভিন্ন শব্দের মধ্যে পার্থক্য করে রাখা হাদীসের ব্যাখ্যায় ভুল করার বড় কারণ। কারণ হাদীসটি যদি সকল শব্দে বর্ণনা করা হয়, তবে কোনোভাবেই ‘তাঁর’ সর্বনামটি আদমের দিকে ফিরানোর কোনো সুযোগ নেই। (বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ৬/৪৩৪-৪৩৫)।
৬- যেসব গুণাবলী অন্যের ওপর ভর করে থাকে, যেমন জ্ঞান, ক্ষমতা, কথা ইত্যাদি যখন তা কোনো কিছুর দিকে সম্বন্ধিত হয় তখন সেটি সত্তার সাথে গুণাবলীর সম্বন্ধ বলে বিবেচিত হয়। কারণ এগুলোর জন্য একটি মাওসুফ বা সত্তা লাগবেই যার সাথে তা সম্পৃক্ত হবে, সম্বন্ধিত হবে। যদি তাই হয়, তবে ‘সূরত’ এমন একটি গুণ যা কেবল সূরত দেয়া সত্তার সাথেই থাকতে পারে, আলাদাভাবে অস্তিত্বে আসতে পারে না। তাই আল্লাহর ‘সূরত’ হবে আল্লাহর চেহারা, আল্লাহর হাত, আল্লাহর ইলম, আল্লাহর কুদরত ইত্যাদির মতই, যা শুধু সত্তার সাথেই সম্পৃক্ত হতে পারে, অন্য কিছুর ওপর দাঁড়াতে পারে না। (বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যাহ ৬/৫৩৪-৫৩৬)।
-শাইখ আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া (হাফিজুল্লাহ)
 
Similar threads Most view View more
Back
Top