Joynal Bin Tofajjal
Student Of Knowledge
Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
- Joined
- Nov 25, 2022
- Threads
- 344
- Comments
- 475
- Reactions
- 5,289
- Thread Author
- #1
আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান এক বক্তব্যে বলেছেন, “এটা মানুষে বোঝে না, মুসলিমরা এটা বোঝে না যে, আল্লাহর বিধান যখন থাকবে, যখন নাই সেটা আলাদা কথা, যখন আল্লাহর বিধান কোনো বিষয়ে থাকবে, সেটা বাদ দিয়ে যদি অন্য কোনো বিধান মানি, এটা শির্ক। এটা শির্কে আকবার, বড়ো শির্ক। সুরা তওবায় দলিল আছে। পড়ে দেখবেন।” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক) [দেখুন: https://youtu.be/OJ2aychL6rU (৭:২২ মিনিট থেকে ৭:৪০ মিনিট পর্যন্ত)]
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, ভ্রান্ত বক্তা আবু ত্বহা আদনানের এরকম নিঃশর্ত ফতোয়া অনুযায়ী দুচারজন ব্যতিরেকে সকল মুসলিমকে কাফির বলতে হবে। কারণ প্রায় প্রত্যেকেই কোনো না কোনোক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্য কারও অনুসরণ করে থাকে। আল্লাহর নাজিলকৃত আইন ব্যতিরেকে অন্য কারও আইনের কথা বললে সর্বপ্রথম আমাদের মাথায় আসে, শাসকদের কথা। অথচ বিষয়টি মোটেও শাসকের সাথে খাস নয়। বরং পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ছাড়া অন্যের) আইন অনুযায়ী ফায়সালা করা হয় এবং মান্যও করা হয় অন্যের সেই আইন। আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে ভিন্ন আইন দিয়ে ফায়সালার বিস্তারিত বিধান কী হবে, তা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। কেউ যদি এ বিষয়ে সঠিক বিধান জানতে চান, তিনি আমাদের অনূদিত আল্লামা সুলাইমান আর-রুহাইলি হাফিযাহুল্লাহর ‘তাগুত বিষয়ে বিস্তারিত’ বইটি দেখতে পারেন।
এখানে আমরা গাইরুল্লাহর আইন মানার বিধান নিয়ে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। আমরা বলছিলাম, এই বিষয়টি স্রেফ শাসকের সাথে খাস নয়। বরং চিন্তা করে দেখুন, স্বামীর কথা শুনে কত নারীই না আল্লাহর অবাধ্য হয়, আবার কত স্বামীই না স্ত্রীর কথা শুনে আল্লাহর নাফরমানি করে, অফিসের বস, কিংবা পিতামাতা, অথবা এলাকার প্রভাবশালী বড়ো ভাই, কিংবা পছন্দের উলামা-মাশায়েখ — এমন বহুজনের কথা শুনে অহরহ মানুষ আল্লাহর অবাধ্য হয়। আর আল্লাহর অবাধ্য হওয়া মানেই তাঁর আইনবিরোধী কাজ করা। খারেজি বক্তা আবু ত্বহা আদনানের ফতোয়া যদি সত্যই হয়ে থাকে, তাহলে গাইরুল্লাহর আইন না মানার অপরাধে উল্লিখিত সবাই কাফির সাব্যস্ত হবেন! যেহেতু আবু ত্বহা আদনানের ফতোয়া অনুযায়ী গাইরুল্লাহর আইন মানা বড়ো শির্ক!
এবার আসুন, গাইরুল্লাহর আনুগত্যের সঠিক বিধান জেনে নিই। পাশাপাশি আবু ত্বহা আদনান ‘সুরা তওবায় দলিল আছে’ বলে যেই আয়াতটির প্রতি ইঙ্গিত করেছে, তার সঠিক ব্যাখ্যাও জেনে নিই। আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন যাবতীয় ক্ষেত্রে অন্যের অনুসরণ করা শরিয়তে হারাম করা হয়েছে। পাপের তারতম্য অনুযায়ী কখনো কখনো এ কাজ বড়ো শির্ক তথা বড়ো কুফর হতে পারে, আবার কখনো কখনো শির্ক না হয়ে হতে পারে ফাসেকি কাজ।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আদি বিন হাতিম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, একদা তিনি শুনলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করছেন, اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ “তারা (ইহুদি ও খ্রিষ্টান জাতির লোকেরা) আল্লাহর পরিবর্তে তাদের ধর্মীয় নেতা ও পুরোহিতদেরকে রব হিসেবে বরণ করে নিয়েছিল।” (সুরা তাওবা: ৩১) তখন আমি নবিজিকে বললাম, ‘আমরা তো তাদের ইবাদত করি না।’ তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘আচ্ছা, আল্লাহর হালাল ঘোষিত জিনিসকে তারা হারাম বললে, তোমরা কি তা হারাম হিসেবে গ্রহণ করো না? আবার আল্লাহর হারাম ঘোষিত জিনিসকে তারা হালাল বললে, তোমরা কি তা হালাল হিসেবে গ্রহণ করো না?’ আমি উত্তর দিলাম, ‘জি।’ তিনি তখন বললেন, ‘এটাই তাদের ইবাদত।’ [তিরমিজি, হা: ৩০৯৫; সনদ: হাসান]
কিন্তু কখন এই অন্যায় আনুগত্য বড়ো শির্ক হয়, কখনই বা ফাসেকি পাপের কাজ হয়—তা জানা খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আমরা দুই যুগের জগৎশ্রেষ্ঠ দুজন ইমাম থেকে দুটো বক্তব্য পেশ করছি।
প্রথমজন হলেন শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭২৮ হি.)। বক্তা আবু ত্বহা আদনানও স্বীকার করে, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ অনেক বড়ো পর্যায়ের ইমাম। ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন—
এক তারা জানে যে, ওরা আল্লাহর দিনকে পরিবর্তন করেছে। তারা এই পরিবর্তনের ওপরই তাদের আনুগত্য করে। আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তারা তা হালাল বলে বিশ্বাস করে, আর আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তারা তা হারাম বলে বিশ্বাস করে— তাদের নেতৃবর্গের আনুগত্য করার জন্য। অথচ তারা জানে যে, ওরা রসুলগণের দিনের বিরোধিতা করেছে। এটা কুফরি। আল্লাহ ও তাঁর রসুল এটাকে শির্ক সাব্যস্ত করেছেন, যদিও তারা তাদের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ে না, এবং তাদেরকে সিজদাও করে না। যে ব্যক্তি দিনের বিপরীতে অন্যের অনুসরণ করে, এটা জানা সত্ত্বেও যে, বিষয়টি দিন-বিরোধী, এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বক্তব্য ব্যতিরেকে অনুসৃত ব্যক্তি যা বলে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সে ব্যক্তি তাদের মতোই মুশরিক বলে বিবেচিত হবে।
দুই হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বাস ও ইমান ঠিক রয়েছে। কিন্তু তারা আল্লাহর নাফরমানি করে তাদের আনুগত্য করেছে। যেমনভাবে একজন মুসলিম বিভিন্ন পাপকাজ করে থাকে, যেসব পাপকে সে গুনাহের কাজ বলে বিশ্বাস করে থাকে। এদের বিধান তাদের অনুরূপ পাপীদের বিধানের মতোই।” [ফাতহুল মাজিদ শারহু কিতাবিত তাওহিদ, পৃষ্ঠা: ১১৭-১১৮; তাহকিক: মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাকি; দারুল গাদ্দিল জাদিদ (কায়রো) কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৮ হি./২০০৭ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাকিহ ও উসুলবিদ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.) বলেছেন—
“জেনে রেখ, আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তা হালাল করার ক্ষেত্রে অথবা এর বিপরীত কাজ করার ক্ষেত্রে উলামা ও শাসকদের আনুগত্য তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:
এক তাদের মতবাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে, তাদের মতবাদকে অগ্রাধিকারযোগ্য গণ্য করে এবং আল্লাহর বিধানের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে সেই ব্যাপারে তাদের আনুগত্য করা। এই কাজের কাজি কাফির। কেননা সে আল্লাহর বিধানকে অপছন্দ করেছে। ফলে আল্লাহ তার আমলকে বিনষ্ট করে দিয়েছেন। আর (বড়ো) কুফরি ব্যতীত সমুদয় আমল বিনষ্ট হয় না। তাই যে ব্যক্তিই আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে অপছন্দ করে, সে ব্যক্তিই কাফির।
দুই আল্লাহর বিধানের প্রতি সন্তুষ্টি এবং দেশ ও দশের জন্য উক্ত বিধানকেই সঠিক বিবেচনা করা সত্ত্বেও প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে অন্য বিধানকে চয়ন করে সেই ব্যাপারে তাদের আনুগত্য করা। উদাহরণস্বরূপ সে (হয়তো তাদের কাছে) চাকরি পেতে চায়। এই ব্যক্তি কাফির হবে না। কিন্তু সে ফাসেক, তার বিধান অন্যান্য পাপীদের মতোই।
তিন অজ্ঞতাবশত তাদের আনুগত্য করা। সে (পাপকাজটির ব্যাপারে) এরকম ধারণা করে যে, সেটা আল্লাহর বিধান। এটি আবার দুভাগে বিভক্ত। যথা:
ক. তার জন্য নিজে থেকেই হক জানা সম্ভব ছিল। কিন্তু সে ছিল অবহেলাকারী বা শৈথিল্যকারী। এই ব্যক্তি পাপী হবে। কেননা কোনো বিষয়ে জানা না থাকলে আল্লাহ উলামাদের কাছে প্রশ্ন করতে বলেছেন।
খ. সে নিজে জানে না এবং তার পক্ষে জানা সম্ভবও নয়। ফলে সে অন্ধের মতো তাদের অনুসরণ করে এবং ধারণা করে যে, এটাই হক। এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কেননা সে তাই করেছে, যা করতে সে আদিষ্ট হয়েছে। সে এ ব্যাপারে একজন ওজরগ্রস্ত ব্যক্তি।” [ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ, মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িল; খণ্ড: ৯-১০ (একত্রে); পৃষ্ঠা: ৭৩৯]
সুপ্রিয় পাঠক, উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো যে, আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হারাম করার ক্ষেত্রে এবং আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করার ক্ষেত্রে কারও আনুগত্য করা হারাম। অন্যায়ের স্তরভেদে কখনো কখনো তা বড়ো শির্কের পর্যায়ে পৌঁছে, আবার কখনো পৌঁছে ফাসেকি পাপের পর্যায়ে। কেউ যদি বলে, বড়োপিরের কাছে সাহায্য চাও, কিংবা শাহজালালের মাজারের উদ্দেশ্যে মানত করো, এরকম সুস্পষ্ট শির্কের ক্ষেত্রে এই লোকের কথা মানলে বড়ো শির্কের গুনাহ হবে, উক্ত কাজের কাজি কাফির হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে বড়ো কুফর নয় এমন গুনাহর ক্ষেত্রে পাপকাজটিকে হালাল বিশ্বাস করে আনুগত্য করলে বড়ো শির্কের গুনাহ হবে, আর হালাল বিশ্বাস না করে আনুগত্য করলে ফাসেকি কাজের গুনাহ হবে। আর এ বিষয়ে অজ্ঞতার শরিয়তসম্মত ওজর থাকলে কোনো গুনাহ হবে না।
কিন্তু বিভ্রান্ত বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান, যাকে আমরা গত পরিচ্ছেদে দেখেছি, গণহারে আরব বিশ্বের মুসলিম শাসকদের কাফির ফতোয়া দিয়ে নিজেকে খারেজি বানিয়েছে, সে এখানেও প্রকটিত করে তুলেছে তার খারেজি বৈশিষ্ট্য। সর্ববাদিসম্মত ফাসেকি পাপের কাজকে বড়ো শির্ক আর বড়ো কুফর বলে বেড়ানো খারেজিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আমরা গত পরিচ্ছেদেই প্রমাণ করেছি, কাফেরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হওয়া আয়াতগুলোকে যারা কবিরা গুনাহগার মুসলিমদের ওপর ফিট করে তারা খারেজি। কেউ বলতে পারেন, উলামাদের কথা দলিল হিসেবে মানব কেন? আমি বলব, ভাই, উলামাগণ দলিল ছাড়া কথা বলেননি। আমি আপনাকে উলামাদের কথার পক্ষে দলিল দিচ্ছি।
হারাম কাজকে হালাল বলে বিশ্বাস করলে যে ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়, এটা উলামাগণের সর্ববাদিসম্মত অভিমত। অর্থাৎ এ বিষয়ে আলিমগণের ইজমা (মতৈক্য) আছে। এ বিষয়ে কোনো মুসলিম দ্বিমত করবেও না। [দেখুন: ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ কৃত আস-সারিমুল মাসলুল আলা শাতিমির রসুল; পৃষ্ঠা: ৫২১; সৌদিয়ান ন্যাশনাল গার্ড কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪০৩ হি./১৯৮৩ খ্রি.]
পক্ষান্তরে হারাম কাজকে হালাল বিশ্বাস না করে কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও অনুসরণ করলে কাফির হবে না, এর দলিল— নবি আদম আলাইহিস সালাম ও মা হাওয়া আলাইহাস সালামের কাজ। আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালামকে জান্নাতের এক গাছের কাছে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা দুজন শয়তানের প্ররোচনায় সেই গাছের ফল খেয়েছিলেন। তাঁরা এ কাজে শয়তানের অনুসরণ করে গুনাহর কাজ করেছিলেন। প্রখ্যাত নাজদি বিদ্বান ইমাম সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ রাহিমাহুল্লাহ আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালামের আরেকটি ঘটনা ব্যাখ্যা করতে যেয়ে বলেছেন, “তাঁরা দুজন শয়তানের অনুসরণ করেছিলেন।” [তাইসিরুল আযিযিল হামিদ, পৃষ্ঠা: ১১০৩; তাহকিক: উসামা আল-উতাইবি; দারুস সামিয়ি (রিয়াদ) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৮ হি./২০০৭ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
যাহোক, উক্ত কাজের জন্য তাঁরা দুজনেই ‘রব্বানা জলামনা...’ দোয়াটি পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। [ঘটনাটির বিবরণ দেখুন: সুরা আরাফ: ১৯-২৫] আদিপিতা ও আদিমাতার এই কাজটি বড়ো কুফর ছিল না, এর দরুন তাঁরা কাফিরও হননি। নবিদের ব্যাপারে এমনটা কল্পনাই করা যায় না যে, তাঁরা বড়ো শির্কে লিপ্ত হবেন। উপরন্তু বিষয়টি বড়ো কুফর হলে মহান আল্লাহ কুরআনের মধ্যে ঘটনাটি বর্ণনার সময় অবশ্যই বলে দিতেন কিংবা আমাদের নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ক আয়াত শেখানোর সময় জানিয়ে দিতেন, এ কাজ বড়ো কুফর। কারণ শরিয়তের মূলনীতি হচ্ছে, প্রয়োজনের সময় আলোচনাকে বিলম্ব করা না-জায়েজ।
আলোচ্য পরিচ্ছেদের প্রান্তভাগে এসে আমার প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনদের বলতে চাই, পাবলিক লেকচারে কবিরা গুনাহকে ‘বড়ো শির্ক’ আখ্যা দিয়ে যুবসম্প্রদায়ের মাঝে ফিতনা ছড়ানো খারেজি বক্তাদের থেকে সতর্ক থাকা অতীব জরুরি। যুবক-যুবতী দূরের কথা অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ মানু্ষও আবু ত্বহা আদনানের লেকচার শুনে বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে নির্ভরযোগ্য খবর আছে, আদনান-ভক্ত জনৈক মুরব্বি নাকি বলে বেড়ান, দেশের সকল আহলেহাদিস বিদ্বান শির্কের সাথে জড়িত! কারণ কী? কারণ আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য আইন দিয়ে দেশ চলে। এজন্য সবাই শির্কে আচ্ছন্ন! নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক। আল্লাহ আপনাদের রহম করুন, এই বক্তার সমুদয় আলোচনা থেকে আল্লাহর ওয়াস্তে পলায়ন করুন।
উম্মাহদরদী আলিম, বর্তমান যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ফাকিহ, ইমাম সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৬ হি.) বলেছেন, “জালেম সম্প্রদায়ের সাথে ওঠাবসা করতে স্বয়ং আল্লাহ আমাদের নিষেধ করেছেন। আর সবচেয়ে বড়ো জালেমদের অন্যতম ফিতনার দায়িবর্গ। তুমি তাদের সাথে বসবে না এবং তাদের আলোচনাও শুনবে না। তুমি একথা বল না, ‘আমি তো শরিয়ত জানি। এরা আমাকে ধোঁকা দিতে পারবে না।’ না! ভাই আমার, নিজেকে এমন সার্টিফিকেট দিয়ো না তুমি।” [শাইখ সালিহ আল-ফাওযান বিরচিত শারহু কিতাবিল ফিতানি ওয়াল হাওয়াদিস, পৃষ্ঠা: ৭৮]
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, ভ্রান্ত বক্তা আবু ত্বহা আদনানের এরকম নিঃশর্ত ফতোয়া অনুযায়ী দুচারজন ব্যতিরেকে সকল মুসলিমকে কাফির বলতে হবে। কারণ প্রায় প্রত্যেকেই কোনো না কোনোক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্য কারও অনুসরণ করে থাকে। আল্লাহর নাজিলকৃত আইন ব্যতিরেকে অন্য কারও আইনের কথা বললে সর্বপ্রথম আমাদের মাথায় আসে, শাসকদের কথা। অথচ বিষয়টি মোটেও শাসকের সাথে খাস নয়। বরং পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ছাড়া অন্যের) আইন অনুযায়ী ফায়সালা করা হয় এবং মান্যও করা হয় অন্যের সেই আইন। আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে ভিন্ন আইন দিয়ে ফায়সালার বিস্তারিত বিধান কী হবে, তা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। কেউ যদি এ বিষয়ে সঠিক বিধান জানতে চান, তিনি আমাদের অনূদিত আল্লামা সুলাইমান আর-রুহাইলি হাফিযাহুল্লাহর ‘তাগুত বিষয়ে বিস্তারিত’ বইটি দেখতে পারেন।
এখানে আমরা গাইরুল্লাহর আইন মানার বিধান নিয়ে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ। আমরা বলছিলাম, এই বিষয়টি স্রেফ শাসকের সাথে খাস নয়। বরং চিন্তা করে দেখুন, স্বামীর কথা শুনে কত নারীই না আল্লাহর অবাধ্য হয়, আবার কত স্বামীই না স্ত্রীর কথা শুনে আল্লাহর নাফরমানি করে, অফিসের বস, কিংবা পিতামাতা, অথবা এলাকার প্রভাবশালী বড়ো ভাই, কিংবা পছন্দের উলামা-মাশায়েখ — এমন বহুজনের কথা শুনে অহরহ মানুষ আল্লাহর অবাধ্য হয়। আর আল্লাহর অবাধ্য হওয়া মানেই তাঁর আইনবিরোধী কাজ করা। খারেজি বক্তা আবু ত্বহা আদনানের ফতোয়া যদি সত্যই হয়ে থাকে, তাহলে গাইরুল্লাহর আইন না মানার অপরাধে উল্লিখিত সবাই কাফির সাব্যস্ত হবেন! যেহেতু আবু ত্বহা আদনানের ফতোয়া অনুযায়ী গাইরুল্লাহর আইন মানা বড়ো শির্ক!
এবার আসুন, গাইরুল্লাহর আনুগত্যের সঠিক বিধান জেনে নিই। পাশাপাশি আবু ত্বহা আদনান ‘সুরা তওবায় দলিল আছে’ বলে যেই আয়াতটির প্রতি ইঙ্গিত করেছে, তার সঠিক ব্যাখ্যাও জেনে নিই। আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন যাবতীয় ক্ষেত্রে অন্যের অনুসরণ করা শরিয়তে হারাম করা হয়েছে। পাপের তারতম্য অনুযায়ী কখনো কখনো এ কাজ বড়ো শির্ক তথা বড়ো কুফর হতে পারে, আবার কখনো কখনো শির্ক না হয়ে হতে পারে ফাসেকি কাজ।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আদি বিন হাতিম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে, একদা তিনি শুনলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করছেন, اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ “তারা (ইহুদি ও খ্রিষ্টান জাতির লোকেরা) আল্লাহর পরিবর্তে তাদের ধর্মীয় নেতা ও পুরোহিতদেরকে রব হিসেবে বরণ করে নিয়েছিল।” (সুরা তাওবা: ৩১) তখন আমি নবিজিকে বললাম, ‘আমরা তো তাদের ইবাদত করি না।’ তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘আচ্ছা, আল্লাহর হালাল ঘোষিত জিনিসকে তারা হারাম বললে, তোমরা কি তা হারাম হিসেবে গ্রহণ করো না? আবার আল্লাহর হারাম ঘোষিত জিনিসকে তারা হালাল বললে, তোমরা কি তা হালাল হিসেবে গ্রহণ করো না?’ আমি উত্তর দিলাম, ‘জি।’ তিনি তখন বললেন, ‘এটাই তাদের ইবাদত।’ [তিরমিজি, হা: ৩০৯৫; সনদ: হাসান]
কিন্তু কখন এই অন্যায় আনুগত্য বড়ো শির্ক হয়, কখনই বা ফাসেকি পাপের কাজ হয়—তা জানা খুবই জরুরি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আমরা দুই যুগের জগৎশ্রেষ্ঠ দুজন ইমাম থেকে দুটো বক্তব্য পেশ করছি।
প্রথমজন হলেন শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭২৮ হি.)। বক্তা আবু ত্বহা আদনানও স্বীকার করে, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ অনেক বড়ো পর্যায়ের ইমাম। ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন—
وهؤلاء الذين اتخذوا أحبارهم ورهبانهم أربابا حيث أطاعوهم في تحليل ما حرم اللّه وتحريم ما أحل اللّه يكونون على وجهين: أحدهما: أن يعلموا أنهم بدلوا دين اللّه فيتبعوهم على التبديل، فيعتقدون تحليل ما حرم اللّه، وتحريم ما أحل اللّه، اتباعًا لرؤسائهم، مع علمهم أنهم خالفوا دين الرسل، فهذا كفر، وقد جعله اللّه ورسوله شركًا وإن لم يكونوا يصلون لهم ويسجدون لهم، فكان من اتبع غيره في خلاف الدين مع علمه أنه خلاف الدين، واعتقد ما قاله ذلك، دون ما قاله اللّه ورسوله مشركًا مثل هؤلاء. والثاني: أن يكون اعتقادهم وإيمانهم بتحريم الحلال وتحليل الحرام ثابتًا، لكنهم أطاعوهم في معصية اللّه، كما يفعل المسلم ما يفعله من المعاصي التي يعتقد أنها معاص، فهؤلاء لهم حكم أمثالهم من أهل الذنوب.
“যারা তাদের পণ্ডিত ও সংসারবিরাগীদেরকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করেছে, যেহেতু তারা আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করার ক্ষেত্রে এবং আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হারাম করার ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করেছে, তারা দুভাগে বিভক্ত। যথা:এক তারা জানে যে, ওরা আল্লাহর দিনকে পরিবর্তন করেছে। তারা এই পরিবর্তনের ওপরই তাদের আনুগত্য করে। আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তারা তা হালাল বলে বিশ্বাস করে, আর আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তারা তা হারাম বলে বিশ্বাস করে— তাদের নেতৃবর্গের আনুগত্য করার জন্য। অথচ তারা জানে যে, ওরা রসুলগণের দিনের বিরোধিতা করেছে। এটা কুফরি। আল্লাহ ও তাঁর রসুল এটাকে শির্ক সাব্যস্ত করেছেন, যদিও তারা তাদের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ে না, এবং তাদেরকে সিজদাও করে না। যে ব্যক্তি দিনের বিপরীতে অন্যের অনুসরণ করে, এটা জানা সত্ত্বেও যে, বিষয়টি দিন-বিরোধী, এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বক্তব্য ব্যতিরেকে অনুসৃত ব্যক্তি যা বলে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সে ব্যক্তি তাদের মতোই মুশরিক বলে বিবেচিত হবে।
দুই হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বাস ও ইমান ঠিক রয়েছে। কিন্তু তারা আল্লাহর নাফরমানি করে তাদের আনুগত্য করেছে। যেমনভাবে একজন মুসলিম বিভিন্ন পাপকাজ করে থাকে, যেসব পাপকে সে গুনাহের কাজ বলে বিশ্বাস করে থাকে। এদের বিধান তাদের অনুরূপ পাপীদের বিধানের মতোই।” [ফাতহুল মাজিদ শারহু কিতাবিত তাওহিদ, পৃষ্ঠা: ১১৭-১১৮; তাহকিক: মুহাম্মাদ হামিদ আল-ফাকি; দারুল গাদ্দিল জাদিদ (কায়রো) কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৮ হি./২০০৭ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাকিহ ও উসুলবিদ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.) বলেছেন—
“জেনে রেখ, আল্লাহ যা হারাম করেছেন, তা হালাল করার ক্ষেত্রে অথবা এর বিপরীত কাজ করার ক্ষেত্রে উলামা ও শাসকদের আনুগত্য তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:
এক তাদের মতবাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে, তাদের মতবাদকে অগ্রাধিকারযোগ্য গণ্য করে এবং আল্লাহর বিধানের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে সেই ব্যাপারে তাদের আনুগত্য করা। এই কাজের কাজি কাফির। কেননা সে আল্লাহর বিধানকে অপছন্দ করেছে। ফলে আল্লাহ তার আমলকে বিনষ্ট করে দিয়েছেন। আর (বড়ো) কুফরি ব্যতীত সমুদয় আমল বিনষ্ট হয় না। তাই যে ব্যক্তিই আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে অপছন্দ করে, সে ব্যক্তিই কাফির।
দুই আল্লাহর বিধানের প্রতি সন্তুষ্টি এবং দেশ ও দশের জন্য উক্ত বিধানকেই সঠিক বিবেচনা করা সত্ত্বেও প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে অন্য বিধানকে চয়ন করে সেই ব্যাপারে তাদের আনুগত্য করা। উদাহরণস্বরূপ সে (হয়তো তাদের কাছে) চাকরি পেতে চায়। এই ব্যক্তি কাফির হবে না। কিন্তু সে ফাসেক, তার বিধান অন্যান্য পাপীদের মতোই।
তিন অজ্ঞতাবশত তাদের আনুগত্য করা। সে (পাপকাজটির ব্যাপারে) এরকম ধারণা করে যে, সেটা আল্লাহর বিধান। এটি আবার দুভাগে বিভক্ত। যথা:
ক. তার জন্য নিজে থেকেই হক জানা সম্ভব ছিল। কিন্তু সে ছিল অবহেলাকারী বা শৈথিল্যকারী। এই ব্যক্তি পাপী হবে। কেননা কোনো বিষয়ে জানা না থাকলে আল্লাহ উলামাদের কাছে প্রশ্ন করতে বলেছেন।
খ. সে নিজে জানে না এবং তার পক্ষে জানা সম্ভবও নয়। ফলে সে অন্ধের মতো তাদের অনুসরণ করে এবং ধারণা করে যে, এটাই হক। এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কেননা সে তাই করেছে, যা করতে সে আদিষ্ট হয়েছে। সে এ ব্যাপারে একজন ওজরগ্রস্ত ব্যক্তি।” [ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ, মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িল; খণ্ড: ৯-১০ (একত্রে); পৃষ্ঠা: ৭৩৯]
সুপ্রিয় পাঠক, উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো যে, আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হারাম করার ক্ষেত্রে এবং আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করার ক্ষেত্রে কারও আনুগত্য করা হারাম। অন্যায়ের স্তরভেদে কখনো কখনো তা বড়ো শির্কের পর্যায়ে পৌঁছে, আবার কখনো পৌঁছে ফাসেকি পাপের পর্যায়ে। কেউ যদি বলে, বড়োপিরের কাছে সাহায্য চাও, কিংবা শাহজালালের মাজারের উদ্দেশ্যে মানত করো, এরকম সুস্পষ্ট শির্কের ক্ষেত্রে এই লোকের কথা মানলে বড়ো শির্কের গুনাহ হবে, উক্ত কাজের কাজি কাফির হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে বড়ো কুফর নয় এমন গুনাহর ক্ষেত্রে পাপকাজটিকে হালাল বিশ্বাস করে আনুগত্য করলে বড়ো শির্কের গুনাহ হবে, আর হালাল বিশ্বাস না করে আনুগত্য করলে ফাসেকি কাজের গুনাহ হবে। আর এ বিষয়ে অজ্ঞতার শরিয়তসম্মত ওজর থাকলে কোনো গুনাহ হবে না।
কিন্তু বিভ্রান্ত বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান, যাকে আমরা গত পরিচ্ছেদে দেখেছি, গণহারে আরব বিশ্বের মুসলিম শাসকদের কাফির ফতোয়া দিয়ে নিজেকে খারেজি বানিয়েছে, সে এখানেও প্রকটিত করে তুলেছে তার খারেজি বৈশিষ্ট্য। সর্ববাদিসম্মত ফাসেকি পাপের কাজকে বড়ো শির্ক আর বড়ো কুফর বলে বেড়ানো খারেজিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আমরা গত পরিচ্ছেদেই প্রমাণ করেছি, কাফেরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হওয়া আয়াতগুলোকে যারা কবিরা গুনাহগার মুসলিমদের ওপর ফিট করে তারা খারেজি। কেউ বলতে পারেন, উলামাদের কথা দলিল হিসেবে মানব কেন? আমি বলব, ভাই, উলামাগণ দলিল ছাড়া কথা বলেননি। আমি আপনাকে উলামাদের কথার পক্ষে দলিল দিচ্ছি।
হারাম কাজকে হালাল বলে বিশ্বাস করলে যে ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়, এটা উলামাগণের সর্ববাদিসম্মত অভিমত। অর্থাৎ এ বিষয়ে আলিমগণের ইজমা (মতৈক্য) আছে। এ বিষয়ে কোনো মুসলিম দ্বিমত করবেও না। [দেখুন: ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ কৃত আস-সারিমুল মাসলুল আলা শাতিমির রসুল; পৃষ্ঠা: ৫২১; সৌদিয়ান ন্যাশনাল গার্ড কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪০৩ হি./১৯৮৩ খ্রি.]
পক্ষান্তরে হারাম কাজকে হালাল বিশ্বাস না করে কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও অনুসরণ করলে কাফির হবে না, এর দলিল— নবি আদম আলাইহিস সালাম ও মা হাওয়া আলাইহাস সালামের কাজ। আদম আলাইহিস সালাম এবং হাওয়া আলাইহাস সালামকে জান্নাতের এক গাছের কাছে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা দুজন শয়তানের প্ররোচনায় সেই গাছের ফল খেয়েছিলেন। তাঁরা এ কাজে শয়তানের অনুসরণ করে গুনাহর কাজ করেছিলেন। প্রখ্যাত নাজদি বিদ্বান ইমাম সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ রাহিমাহুল্লাহ আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালামের আরেকটি ঘটনা ব্যাখ্যা করতে যেয়ে বলেছেন, “তাঁরা দুজন শয়তানের অনুসরণ করেছিলেন।” [তাইসিরুল আযিযিল হামিদ, পৃষ্ঠা: ১১০৩; তাহকিক: উসামা আল-উতাইবি; দারুস সামিয়ি (রিয়াদ) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৮ হি./২০০৭ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
যাহোক, উক্ত কাজের জন্য তাঁরা দুজনেই ‘রব্বানা জলামনা...’ দোয়াটি পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। [ঘটনাটির বিবরণ দেখুন: সুরা আরাফ: ১৯-২৫] আদিপিতা ও আদিমাতার এই কাজটি বড়ো কুফর ছিল না, এর দরুন তাঁরা কাফিরও হননি। নবিদের ব্যাপারে এমনটা কল্পনাই করা যায় না যে, তাঁরা বড়ো শির্কে লিপ্ত হবেন। উপরন্তু বিষয়টি বড়ো কুফর হলে মহান আল্লাহ কুরআনের মধ্যে ঘটনাটি বর্ণনার সময় অবশ্যই বলে দিতেন কিংবা আমাদের নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ক আয়াত শেখানোর সময় জানিয়ে দিতেন, এ কাজ বড়ো কুফর। কারণ শরিয়তের মূলনীতি হচ্ছে, প্রয়োজনের সময় আলোচনাকে বিলম্ব করা না-জায়েজ।
আলোচ্য পরিচ্ছেদের প্রান্তভাগে এসে আমার প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনদের বলতে চাই, পাবলিক লেকচারে কবিরা গুনাহকে ‘বড়ো শির্ক’ আখ্যা দিয়ে যুবসম্প্রদায়ের মাঝে ফিতনা ছড়ানো খারেজি বক্তাদের থেকে সতর্ক থাকা অতীব জরুরি। যুবক-যুবতী দূরের কথা অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ মানু্ষও আবু ত্বহা আদনানের লেকচার শুনে বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে নির্ভরযোগ্য খবর আছে, আদনান-ভক্ত জনৈক মুরব্বি নাকি বলে বেড়ান, দেশের সকল আহলেহাদিস বিদ্বান শির্কের সাথে জড়িত! কারণ কী? কারণ আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে অন্য আইন দিয়ে দেশ চলে। এজন্য সবাই শির্কে আচ্ছন্ন! নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক। আল্লাহ আপনাদের রহম করুন, এই বক্তার সমুদয় আলোচনা থেকে আল্লাহর ওয়াস্তে পলায়ন করুন।
উম্মাহদরদী আলিম, বর্তমান যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ফাকিহ, ইমাম সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৬ হি.) বলেছেন, “জালেম সম্প্রদায়ের সাথে ওঠাবসা করতে স্বয়ং আল্লাহ আমাদের নিষেধ করেছেন। আর সবচেয়ে বড়ো জালেমদের অন্যতম ফিতনার দায়িবর্গ। তুমি তাদের সাথে বসবে না এবং তাদের আলোচনাও শুনবে না। তুমি একথা বল না, ‘আমি তো শরিয়ত জানি। এরা আমাকে ধোঁকা দিতে পারবে না।’ না! ভাই আমার, নিজেকে এমন সার্টিফিকেট দিয়ো না তুমি।” [শাইখ সালিহ আল-ফাওযান বিরচিত শারহু কিতাবিল ফিতানি ওয়াল হাওয়াদিস, পৃষ্ঠা: ৭৮]
লিখেছেন: মুহাম্মাদ আব্দুল্ললাহ মৃধা।