• আসসালামু আলাইকুম, খুব শীঘ্রই আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন আপনারা প্রবেশ করতে পারবেন না। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

পবিত্রতা অযুর সময় বিসমিল্লাহ বলার হুকুম কী? কেউ যদি অযুর সময় বিসমিল্লাহ না বলে, তাহলে তার অযু হবে?

Golam Rabby

Knowledge Sharer

ilm Seeker
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Top Active User
Threads
870
Comments
1,022
Reactions
9,741
Credits
4,384
উত্তর: অযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার হুকুম সম্পর্কে আহালুল ইমামগনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ দুটি মত রয়েছে। যেমন;

(১). আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মহান ইমাম, শাইখুল ইসলাম আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ) [জন্ম ১৬৪ হি./৭৮০ খ্রি. এবং মৃত্যু ২৪১ হি./৮৫৫ খ্রি.] এর দুটি মতের মধ্যে শক্তিশালী মত অনুযায়ী তিনি বলেছেন, অযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া ওয়াজিব। তিনি দলীল দিয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদীস দিয়ে। যেখানে নবীজী বলেছেন; “যে ব্যক্তি ওযুর সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে না, তার ওযু নেই।” (তিরমিযী হা/২৫; শাইখ আলবানী সহীহুত তিরমিযীতে হাসান বলেছেন,দেখুন আল-মুগনী: খন্ড ১পৃষ্ঠা; ১৪৫)

সৌদি আরবের ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) আলিমগণ বলেছেন; অযু করার সময় আল্লাহর নামে (বিসমিল্লাহ বলে) অযু করা ওয়াজিব। কিন্তু কেউ যদি বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, অতঃপর ওযু শেষ না হওয়ার পূর্বে তা স্মরণ আসে, তাহলে তাকে বিসমিল্লাহ পাঠ করে ওযু করতে হবে।কিন্তু অযু শেষ হওয়া পর্যন্ত যদি তার মনে না থাকে,তাহলে তার ওযু সহীহ হবে এবং তার জন্য তাকে অযূর পুনরাবৃত্তি করতে হবে না। (ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দাইমাহ; খন্ড:৪ পৃষ্ঠা:৭৩)

(২). পক্ষান্তরে অধিকাংশ আলেম তথা ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অপর একটি বর্ণনা অনুযায়ী অযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা ওযুর অন্যতম একটি সুন্নত; এটা ওয়াজিব নয়। দলিলের আলোকে এটাই অধিক বিশুদ্ধ মত। এই মতটটি আল-খিরাকী ও ইবনে কুদামার মতো অনেক হাম্বলী বেছে নিয়েছেন। (ইবনে কুদামাহ আল-মুগনী: খন্ড: ১ পৃষ্ঠা: ১৪৫ ও আল-ইনসাফ,খন্ড:১ পৃষ্ঠা:১২৮)। বিগত শতাব্দীর আলেমদের মধ্য থেকে শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম ও মুহাম্মাদ ইবনে উসাইমীন (রাহিমাহুমাল্লাহ) এই মত বেছে নিয়েছেন। (ফাতাওয়াশ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম ২/৩৯ ও উসাইমীন আশ-শারহুল মুমতি; ১/১৩০, ৩০০)। অযুর ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ পড়া ওয়াজিব না হওয়ার পক্ষে তারা কিছু দলীল দিয়েছেন। যথা:

(১). রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ভুলকারী সাহাবীকে অযু শেখানোর সময় বলেন; “আল্লাহ যেভাবে তোমাকে আদেশ দিয়েছেন সেভাবে ওযু করো।” (তিরমিযী হা/৩০২, আবু দাউদ হা/৮০৩-৮০৭)। ইমাম আলবসনী তিরমিজির তাহক্বীকে হাদীসটি সহীহ বলেছেন। (আলবানী ইরওয়া:১/৩২১-৩২২)। এই হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইঙ্গিত দিয়েছেন আল্লাহর বাণীর দিকে; “হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য উঠবে (উদ্যোগী হবে) তখন মুখমণ্ডল ও কনু্ই পর্যন্ত হাত ধোবে, মাথা মুছবে এবং গোড়ালির উপরের গিঁট পর্যন্ত পা ধোবে।”(সূরা মায়েদা: ৬)। আল্লাহর এই আদেশের মাঝে বিসমিল্লাহ পড়ার কথা নেই। (ইমাম নববী আল- মাজমূ; খন্ড:১ পৃষ্ঠা:৩৪৬)।

(২). অপর বর্ননায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গভাবে অযু না করলে কারো সালাত শুদ্ধ হবে না। সুতরাং সে তার মুখমণ্ডল এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুবে, মাথা মাসাহ করবে এবং উভয় পা গোড়ালীসহ ধুবে...’(আবু দাঊদ, হা/৮৫৮)। এই হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিসমিল্লাহ বলার কথা বর্ণনা করেননি। সুতরাং এই হাদীসসহ আরো অন্য বর্ণনা প্রমাণ করে যে, অযুতে বিসমিল্লাহ বলা ফরয নয়, বরং তা সুন্নাত। (ইমাম বাইহাকী আস- সুনানুল কুবরা; খন্ড:১ পৃষ্ঠা:৪৪)।

বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল,ওযুর প্রারম্ভে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা কি ওয়াজিব?

জবাবে শাইখ বলেন; ওযুর প্রারম্ভে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা ওয়াজিব নয়; বরং উহা সুন্নাত। কেননা এক্ষেত্রে বর্ণিত হাদীস সহীহ বলার ক্ষেত্রে অনেকের আপত্তি রয়েছে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রহঃ) বলেন, ‘এক্ষেত্রে কোন হাদীস প্রমাণিত হয়নি।’ বলার অপেক্ষা রাখে না এবং কারো অজানা নয় যে, ইমাম আহমাদ হাদীস শাস্ত্রের ইমাম এবং হাফেয। তিনি যদি কোন ক্ষেত্রে বলেন, এ বিষয়ে কোন হাদীস প্রমাণিত হয়নি, তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রশ্ন থেকে যায়। অতএব যে বিষয়টি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত নয়, তা মানুষের উপর আবশ্যক করা উচিৎ নয়। এ জন্যে আমি মনে করি ওযুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা সুন্নাত। কিন্তু কারো নিকট যদি এ ক্ষেত্রে হাদীস সহীহ বলে প্রমাণিত হয়, তবে ‘বিসমিল্লাহ’ ওয়াজিব বলা তার জন্য আবশ্যক। কেননা হাদীসে বলা হয়েছে: لاَ وَضُوْءَ অর্থাৎ- ওযু বিশুদ্ধ
হবে না। ওযু পূর্ণ হবে না এরূপ অর্থ করা ঠিক নয়। (উসামীন আশ-শারহুল মুমতি ;১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা:১৩০, ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম প্রশ্ন নং-১৩৪)

যারা অযুর ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহ বলা ওয়াজিব মনে করেন এবং তারা যে হাদীসটি দিয়ে দলীল পেশ করেন সেটার বিপরীতে যারা সুন্নাত মনে করেন তারা দুটো জবাব পেশ করেন;

(ক). আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; ঐ ব্যক্তির সালাত হয় না যে (সঠিকভাবে) অযু করে না এবং ঐ ব্যক্তির অযু হয় না যে তাতে আল্লাহর নাম নেয় না। (আবু দাঊদ হা/১০১; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৮, ইমাম আলবানী হাদীসটির সনদ হাসান বললেও অপর একদল আলেম এটাকে দুর্বল বলেছেন। তন্মধ্যে রয়েছেন- ইমাম আহমাদ, ইমাম বাইহাকী, ইমাম নববী ও ইমাম বাযযার)

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ)-কে ওযুতে বিসমিল্লাহ পড়ার বিধান জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন; “এ ব্যাপারে কোনো হাদীস প্রমাণিত না। আমি এ প্রসঙ্গে এমন কোনো হাদীস জানি না যেটার সনদ ভালো।” (ইবনে কুদামাহ আল-মুগনী; খন্ড:১ পৃষ্ঠা:১৪৫, আরো বিস্তারিত জানতে আস-সুনানুল কুবরা খন্ড: ১ পৃষ্ঠা:৪৩, নববী আল-মাজমু; খন্ড:১পৃষ্ঠা: ৩৪৩ ও তালখীসুল হাবীর; খন্ড:১ পৃষ্ঠা:৭২)।

(খ). হাদীসটি সহীহ হলে হাদীসের বাক্য “তার ওযু নেই” এ কথার অর্থ হবে, বিসমিল্লাহ না বললে তার পূর্ণাঙ্গ অযু হবে না। কিন্তু বিসমিল্লাহ না পড়লে তার ‘ওযু সহীহ নয়’ এটি এ কথার অর্থ নয়। (নববী আল-মাজমূ, খন্ড:১ পৃষ্ঠা:৩৪৭ ও ইবনে কুদামাহ আল-মুগনী, খন্ড:১ পৃষ্ঠা:১৪৬)। সুতরাং হাদীসটা সহীহ হলেও সেটি প্রমাণ করবে যে বিসমিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব; সেটি প্রমাণ করবে না যে, বিসমিল্লাহ্‌ পড়া ওয়াজিব। (আল্লাহু আলাম)

পরিশেষে প্রিয় পাঠক! উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে একথা পরিস্কার যে,অধিক বিশুদ্ধ মতে অযূর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা ওয়াজিব নয়। সুতরাং কোন মুসলিম নারী-পুরুষ যদি বিসমিল্লাহ না পড়ে ওযু করেন তাহলে তার ওযু সঠিক। তবে তিনি বিসমিল্লাহ না বলার এই সুন্নাহ পালনের নেকী থেকে নিজেকে বঞ্চিত করলেন। তাই একজন মুসলিমের জন্য ওযুতে বিসমিল্লাহ পড়া উত্তম এবং ত্যাগ না করাই নিরাপদ।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
____________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি
#Jewelmahmudsalafi
 
Top