প্রবন্ধ অমুসলিমদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানোর বিধান

    Nobody is reading this thread right now.
Joined
Feb 8, 2023
Threads
41
Comments
43
Reactions
381
খ্রিস্টমাস (বড়দিন) কিংবা অন্য কোন বিধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে অমুসলিম কাফেরদের শুভেচ্ছা জানানো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আলেমদের সর্বসম্মত মতানুযায়ী হারাম। কারন তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে কুফরী আচারানুষ্ঠানের প্রতি স্বীকৃতি ও তাদের বাতিল ধর্মবিশ্বাসকে সমর্থন বা সন্তুষ্টি প্রকাশ পায় যা হারাম।

এক্ষেত্রে কোন মুসলিম ব্যক্তি যদিও নিজে এ কুফরী করতে রাজী না হয় তবুও।কারন আল্লাহ তাআলা কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন: “যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ্‌ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও; তবে (জেনে রাখ) তিনি তোমাদের জন্য সেটাই পছন্দ করেন।”(সূরা যুমার, আয়াত: ৭)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”(সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩)

আল্লাহ আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, তার নিকট থেকে তা কখনোই কবুল করা হবে না এবং এমন ব্যক্তি পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (সূরা আলে ইমরান ৩/৮৫)।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর লিখিত “আহকামু আহলিয যিম্মাহ” গ্রন্থে এ বিধানটি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: “কোন কুফরী আচারানুষ্ঠান উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। যেমন- তাদের উৎসব ও উপবাস পালন উপলক্ষে বলা যে, ‘তোমাদের উৎসব শুভ হোক’ কিংবা ‘তোমার উৎসব উপভোগ্য হোক’ কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কথা। যদি এ শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করা কুফরীর পর্যায়ে নাও পৌঁছে; তবে এটি হারামের অন্তর্ভুক্ত। এ শুভেচ্ছা ক্রুশকে সেজদা দেয়ার কারণে কাউকে অভিনন্দন জানানোর পর্যায়ভুক্ত।

বরং আল্লাহর কাছে এটি আরও বেশি জঘন্য গুনাহ। এটি মদ্যপান, হত্যা ও যিনা ইত্যাদির মত অপরাধের জন্য কাউকে অভিনন্দন জানানোর চেয়ে মারাত্মক। যাদের কাছে ইসলামের যথাযথ মর্যাদা নেই তাদের অনেকে এ গুনাতে লিপ্ত হয়ে পড়ে; অথচ তারা এ গুনাহের কদর্যতা উপলব্ধি করে না। যে ব্যক্তি কোন গুনার কাজ কিংবা বিদআত কিংবা কুফরী কর্মের প্রেক্ষিতে কাউকে অভিনন্দন জানায় সে নিজেকে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির সম্মুখীন করে। (ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯৪৭)

অতএব, কুফরী উৎসব উপলক্ষে বিধর্মীদেরকে শুভেচ্ছা জানানো হারাম; তারা সহকর্মী হোক কিংবা অন্য কিছু হোক। আর বিধর্মীরা যদি আমাদেরকে তাদের উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানায় আমরা এর উত্তর দিব না। এমনকি কোন মুসলমানের এমন উৎসবের দাওয়াত কবুল করা হারাম। কেননা এটি তাদেরকে শুভেচ্ছা জানানোর চেয়ে জঘন্য। কারণ এতে করে দাওয়াতকৃত কুফরী অনুষ্ঠানে তাদের সাথে অংশ গ্রহণ করা হয়।অনুরূপভাবে এ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে কোন মুসলিম কাফেরদের মত অনুষ্ঠান করা, উপহার বিনিময় করা, মিষ্টান্ন বিতরণ করা, খাবার-দাবার আদান-প্রদান করা, ছুটি ভোগ করা ইত্যাদি মুসলমানদের জন্য হারাম।

কারণ সেটা আমাদের ঈদ-উৎসব নয়। আর এসব উৎসবের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট নন। তাছাড়া রাসূল ﷺ বলেছেন,যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে ব্যক্তি (কিয়ামতের দিন) তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (আবু দাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)। তিনি বলেন, যে আমাদের ব্যতীত অন্যদের রীতি- নীতির অনুসরণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয় (তিরমিযী হা/২৬৯৫, মিশকাত হা/৪৬৪৯)। তিনি আরো বলেন, শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু দল মূর্তিপূজা করবে এবং মুশরিকদের সাথে মিশে যাবে (ইবনু মাজাহ হা/৩৯৫২, আবুদাঊদ হা/৪২৫২; মিশকাত হা/৫৪০৬)।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর লিখিত ‘ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম’ গ্রন্থে বলেন: “তাদের কোন উৎসব উপলক্ষে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করলে এ বাতিল কর্মের পক্ষে তারা মানসিক প্রশান্তি পায়। এর মাধ্যমে তারা নানাবিধ সুযোগ গ্রহণ করা ও দুর্বলদেরকে বেইজ্জত করার সম্ভাবনা তৈরী হয়।”(ইসলামি সওয়াল-জবাব ফাতাওয়া নং-৯৪৭)

বিগত শতাব্দীতে সৌদি ‘আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, কাফেরদের বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে উপহার বিনিময়, মিষ্টান্ন বিতরণ, রকমারি খাদ্য তৈরী করা, কাজ বন্ধ রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা মুসলমানদের জন্য হারাম ( মাজমূউ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল,৩/৪৪ পৃ.)। আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)



উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি।​
 
Similar threads Most view View more
Back
Top