সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।

সালাত অন্য কোনো রাত্রিতে না আদায় করে শুধু মাত্র লাইলাতুল কদরের রাত্রিতে তাহাজ্জুদ এর সালাত আদায়ের ব্যাপারে বিধান কি?

Habib Bin Tofajjal

If you're in doubt ask الله.

Forum Staff
Moderator
Generous
ilm Seeker
Uploader
Exposer
HistoryLover
Q&A Master
Salafi User
Threads
690
Comments
1,222
Solutions
17
Reactions
7,058
Credits
5,691
উত্তর: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

প্রথমত: লাইলাতুল কদরের রাত্রিতে ইবাদাত করার মহান ফযীলাতের ব্যাপারে দলীল রয়েছে। আমাদের রব বলেছেন,

﴿ لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ ٣ ﴾ [القدر: ٣]
“এই রাতের ইবাদাত হাজার রাতের চেয়ে উত্তম” [সূরা আল-কদর, আয়াত: ৩]

এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»
“যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে ও প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল কদরের রাত্রিতে কিয়াম করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”[1]

আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ ١ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ ٢ لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ ٣ تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذۡنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمۡرٖ ٤ سَلَٰمٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطۡلَعِ ٱلۡفَجۡرِ ٥ ﴾ [القدر: ١- ٥]
“নিশ্চয় আমরা একে লাইলাতুল কদরে নাযিল করেছি এবং আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম। এতে ফিরিশতাগণ এবং রূহ (জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম) তাদের রবের অনুমতিক্রমে অবতরণ করেন সকল সিদ্ধান্ত নিয়ে। শান্তিময় (বা নিরাপত্তাপূর্ণ) সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।” [সূরা আল-কদর, আয়াত: ১-৫]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন,
«مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ»
“যে ঈমান সহকারে ও প্রতিদানের আশায় লাইলাতুল কদরের রাত্রিতে কিয়াম করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”[2]

এখানে “ঈমান সহকারে” এর অর্থ: এই রাতের মর্যাদা ও তাতে আমল করা, শরী‘আতসম্মত হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বাস স্থাপন করা।

আর “প্রতিদানের আশায়” এর অর্থ: আল্লাহ তা‘আলার জন্য নিয়্যাতের ব্যাপারে ইখলাস (একনিষ্ঠতা) পোষণ করা।

দ্বিতীয়ত: লাইলাতুল কদর নির্দিষ্ট কোন্‌ রাত তা নিয়ে আলেমদের মাঝে এত ভিন্নমত রয়েছে যে তা ৪০-এরও বেশি মতামত পর্যন্ত পৌঁছেছে যেমনটি ‘ফাতহ আল-বারী’-তে উল্লেখ হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সঠিক মতটি হলো তা রমযানের শেষ দশকের বিজোড় রাতের কোনো একটি।

‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنْ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ» .
“লাইলাতুল কদর রমযানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে অনুসন্ধান কর।”[3]

ইমাম বুখারী এই হাদীসটিকে (রমযানের) ‘শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান’ নামক অধ্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

এই রাতটি নির্দিষ্ট কোনো দিনে তা অপ্রকাশিত রাখার পেছনে হিকমাহ (রহস্য) হলো মুসলিমদেরকে রমযানের শেষ দশকের সবগুলো রাতেই ইবাদাত, দো‘আ ও যিকির করার ব্যাপারে তৎপর হতে সক্রিয় করানো। একই হিকমাহ-এর কারণে জুমু‘আর দিনে ঠিক কোনো সময়টিতে দো‘আ কবুল করা হয় তাও নির্দিষ্ট করে বলা হয় নি এবং আল্লাহ তা‘আলার সেই ৯৯ টি নামও নির্দিষ্ট করে বলা হয় নি, যে সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ»
“যে তা (৯৯ টি নাম) গণনা করবে, [অর্থাৎ (১) মুখস্ত করবে, (২) এর অর্থ বুঝবে, (৩) সে অনুযায়ী আমল করবে] সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”[4]

হাফিয ইবন হাজার রহ. বলেছেন, “তার (ইমাম বুখারীর) বক্তব্য ‘অধ্যায়: রমযানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান’ এই পাঠ থেকে রমযান মাসেই যে লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল এই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এরপর এর (রমযানের) শেষ দশকে এবং এরপর এর (শেষ দশকের) বিজোড় রাতগুলোর যে কোনো একটিতে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো রাতে নয়। এই সংক্রান্ত একাধিক বর্ণনা থেকে আমরা অনুরূপ ইঙ্গিত পাই।”[5]

তিনি আরও বলেছেন, “আলেমগণ বলেন, এই রাতটির নির্দিষ্ট তারিখ গোপন রাখার পেছনে হিকমাহ হলো মানুষ এটি পাওয়ার জন্য চেষ্টা সাধনা করবে। তবে নির্দিষ্ট তারিখ জানা থাকলে মানুষ শুধু সেই রাতেই ইবাদাত সীমাবদ্ধ রাখত যেমনটি এর আগে ব্যাখ্যা করা হয়েছে জুমু‘আর দিনের (দো‘আ কবুলের) সুনির্দিষ্ট সময়ের (অজানা থাকার) ব্যাপারে।”

তৃতীয়ত: এই মতের ভিত্তিতে কারো পক্ষে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় কোনো নির্দিষ্ট রাতটি ‘লাইলাতুল কদর’। বিশেষ করে যখন আমরা জানি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি কোনো রাত তা সুনির্দিষ্টভাবে উম্মাতকে জানাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরে তিনি জানিয়েছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা এই জ্ঞান উঠিয়ে নিয়েছেন।

উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘লাইলাতুল কদর’-এর ব্যাপারে খবর দিতে বের হলেন, (এ সময়) মুসলিমদের মধ্যে দু ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হলো। তিনি বললেন:
«إِنِّي خَرَجْتُ لأُخْبِرَكُمْ بِلَيْلَةِ الْقَدْرِ، وَإِنَّهُ تَلاحَى فُلانٌ وَفُلانٌ فَرُفِعَتْ، وَعَسَى أَنْ يَكُونَ خَيْرًا لَكُمْ، الْتَمِسُوهَا فِي السَّبْعِ وَالتِّسْعِ وَالْخَمْسِ».
“আমি আপনাদেরকে ‘লাইলাতুল কদর’-এর ব্যাপারে খবর দিতে বের হয়েছিলাম, কিন্তু অমুক এবং অমুক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হলো, এরপর তা (সেই জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হলো, আশা করি তা আপনাদের জন্য বেশি ভালো হয়েছে, আপনারা তা সপ্তম (২৭ তম), নবম (২৯ম) এবং পঞ্চমে (২৫ম তারিখে) অনুসন্ধান করুন।”[6]

ফাতওয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির আলেমগণ বলেন, “রমযান মাসে নির্দিষ্ট কোনো রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য সুস্পষ্ট দালীলের প্রয়োজন। তবে অন্যান্য রাতের চেয়ে শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর কোনো একটিতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি আর (এর মধ্যে) সাতাশ তম রাতে হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি, যার ইঙ্গিত পাওয়া যায় বিভিন্ন হাদীসসমূহে যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি।”[7]

তাই নির্দিষ্ট কোনো রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিত করা একজন মুসলিমের জন্য উচিৎ নয়। কারণ, এতে এমন ব্যাপারে দৃঢ় নিশ্চয়তা পোষণ করা হয়, যে ব্যাপারে দৃঢ় নিশ্চয়তা পোষণ করা সম্ভব নয়। আর এতে অনেক কল্যাণ ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। হতে পারে এটি ২১তম রাতে অথবা ২৩তম রাতে অথবা ২৯তম রাতে। তাই সে যদি শুধু ২৭তম রাতে কিয়াম করে তবে তার থেকে অফুরন্ত কল্যাণ ছুটে যেতে পারে, আবার হতে পারে সে এই মুবারাক রাত হারিয়ে ফেলতে পারে।

সুতরাং একজন মুসলিমের উচিৎ গোটা রমযান জুড়েই আনুগত্য ও ইবাদাতের কাজে সর্বোচ্চ সাধনা চালানো, আর শেষ দশকে সে ব্যাপারে বেশি তৎপর হওয়া। এটিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ» .
“(রমযানের শেষ) দশ রাত্রি শুরু হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোমর বেঁধে নামতেন, তিনি নিজে তাঁর রাত জাগতেন (ইবাদতের মাধ্যমে) এবং তাঁর পরিবারবর্গকে জাগাতেন (ইবাদতের জন্য)।”[8]

এবং আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।


[1] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০১; সহীহ মুসলিম মুসলিম, হাদীস নং ৭৬০।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬০।
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৯।
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬৭৭।
[5] ফাতহুল বারী (৪/২৬০)।
[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯
[7] ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ লিল বুহূস আল-ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা (১০/৪১৩)
[8] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৭৪।
 
Top