- Joined
- Feb 23, 2023
- Threads
- 347
- Comments
- 399
- Reactions
- 1,882
- Thread Author
- #1
প্রশ্ন: লাইলাতুল কদরের রাত কতটি? সারা পৃথিবীতে একই সাথে কিভাবে লাইলাতুল ক্বদর হওয়া সম্ভব? লাইলাতুল ক্বদরের জন্য কয়েকটি সহজ আমল সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
উত্তর: ‘লাইলাতুল কদর’ এটি গায়েবের অন্তর্ভুক্ত। আর গায়েবের মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ্।(সূরা নামল, ২৭/৬৫)।
“আলেমুল গায়েব” অর্থাৎ অদৃশ্য জ্ঞানী উপাধি একমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের সাথে সংশ্লিষ্ট। পৃথিবীর আর কারো সাথে নয়। আল্লাহ্ বলেন, “আর তাঁর কাছেই আছে অদৃশ্যের চাবিগুলো, সেগুলো তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না।” (সূরা আল- আন‘আম; ৬/৫৯)।
তাই গায়েবী বিষয়ের ধরণ-পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা ঠিক নয়। আল্লাহর কাজ ও বান্দার কাজ এক রকম নয়, আল্লাহর সব কাজ ও হিকমত বান্দার সীমিত জ্ঞান দিয়ে বুঝা সম্ভব নয়। তাই আল্লাহর কাজের ধরণ-পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা বৈধ নয়। বান্দার কাজের উপর আল্লাহর কাজের কিয়াস চলে না, জমহুর ওলামাদের মতে লাইলাতুল ক্বদরের রাত একটিই। আর ক্বদরের রাত্রিটি পৃথিবীর যখন যে স্থান দিয়ে চলে তখন সেখানেই ‘লায়লাতুল ক্বদর’ ঘটে। এটিকে নিজের হিসাবে রাখা ঠিক নয়। কেননা মানুষের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির যেমন সীমা রয়েছে তেমনি মানুষের চিন্তাশক্তির সীমা রয়েছে। আর গায়েবের এই বিষয়গুলো মানুষের চিন্তাশক্তির বাইরে। এটি মহান আল্লাহ তাআলা নিজেই পরিচালনা করেন।
তাছাড়া আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাবী হচ্ছে- তাঁর বিধিবিধান ও শরীয়তকে মেনে নেওয়া। কারণ,আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন কোনটি মানুষের জন্য কল্যাণকর। তাছাড়া সবার জানা উচিত যে, ইসলামী শরীআতের কোন বিধানের কারণ তালাশ করা অন্যায়। বরং নির্বিবাদে মেনে নেওয়ার মধ্যেই বান্দার কল্যাণ নিহিত রয়েছে,মুমিন তো তারাই যারা বলে আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। (সূরা বাকারা;২/২৮৫)।
সুতরাং প্রত্যেক মুমিনকে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ তাআলার প্রত্যেকটি কাজে বিরাট হিকমত এবং প্রশংসনীয় উদ্দেশ্য রয়েছে। আর প্রত্যেক মানুষের জন্য তা স্পষ্ট হওয়া জরূরী নয়। এটি এক প্রকার পরীক্ষা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম।’(সূরা মূলক; ৬৭/২)। কোন কোন শারয়ী হুকুমের রহস্য আমরা বুঝতে পারি। আবার কোন কোন শারয়ী হুকুমের রহস্য আমরা বুঝতে পারি না। সৌদি ফতোয়া বোর্ড (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ)
এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখ আবদুল্লাহ ইবনে জিবরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল বিভিন্ন দেশে লাইলাতুল ক্বদর কি আলাদা?
জবাবে শাইখ বলেন, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে শুরু হলেও লাইলাতুল ক্বদর একই রাতে হয়। তবে দেশের বা শহরের ভিন্নতার কারণে তা সূচনার ভিন্নতা হয়ে থাকে। যেমন; আরবের কোন দেশে সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে সেখানে ক্বদর শুরু হয় এমনিভাবে আফ্রিকার কোন দেশে সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে সেখানে ও শুরু হয়, যদিও দুই দেশের সূর্য অস্ত যাওয়ার পার্থক্য ২০ ঘণ্টা। তবুও প্রত্যেক দেশের জনগণই উক্ত রাতকে ক্বদরের রাত হিসাবে গণ্য করবে এখানে দুই দেশে ফেরেশতা অবতীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা হয় না (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১২৯৬৮৮)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লায়লাতুল ক্বদর রামাযানের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিগুলোতে অন্বেষণ করতে বলেছেন। তাছাড়া কোন তারিখে লায়লাতুল ক্বদর হবে সে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দিষ্ট করে কিছু বলে যাননি। বরং তিনি একাধিক হাদীসে বলেছেন, ‘তোমরা রামাযানের শেষ দশকের প্রত্যেক বেজোড় রাত্রিতে ক্বদর রাত্রি তালাশ করো।’ (সহীহ বুখারী, হা/২০১৭; মিশকাত, হা/২০৮৩-৮৭)
জেনে রাখা ভালো যে, শবে ক্বদরের সওয়াব অর্জনের জন্য শবে ক্বদর কোন রাতে হচ্ছে তা জানা বা দেখা শর্ত নয়। তবে ইবাদতের রাতে শবে ক্বদর সংঘটিত হওয়া এবং তার অনুসন্ধানে সওয়াবের আশা রাখা শর্ত। শবে ক্বদর কোন্ রাতে ঘটছে তা জানা যেতে পারে। আল্লাহ যাকে তওফীক দেন, সে বিভিন্ন লক্ষণ দেখে শবে ক্বদর বুঝতে পারে। সাহাবাগণ (রাযি.) একাধিক নিদর্শন দেখে জানতে পারতেন শবে ক্বদর ঘটার কথা। তবে তা জানা বা দেখা না গেলে যে তার সওয়াব পাওয়া যাবে না -তা নয়। বরং যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশা রেখে সে রাত্রিতে ইবাদত করবে, সেই তার সওয়াবের অধিকারী হবে; চাহে সে শবেকদর দেখতে পাক বা না-ই পাক।
সুতরাং, মুসলিমের উচিত সওয়াব ও নেকী অর্জনের উদ্দেশ্যে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর আদেশ ও নির্দেশমত রমাযানের শেষ দশকে শবে ক্বদর অন্বেষণ করতে যত্নবান ও আগ্রহী হওয়া। অতঃপর দশটি রাতে ঈমান ও নেকীর আশা রাখার সাথে ইবাদত করতে করতে যে কোন রাতে যখন শবে ক্বদর লাভ করবে, তখন সে সেই রাতের অগাধ সওয়াবের অধিকারী হয়ে যাবে; যদিও সে বুঝতে না পারে যে, ঐ দশ রাতের মধ্যে কোন রাতটি শবে ক্বদর রূপে অতিবাহিত হয়ে গেল।
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমান রেখে ও নেকী লাভের আশা করে শবেকদরের রাত্রি কিয়াম করে (নামায পড়ে), সে ব্যক্তির পূর্বেকার গোনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়।’’ (সহীহ বুখারী ৩৫, মুসলিম হা/৭৬০)।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে তার খোঁজে কিয়াম করল এবং সে তা পেতে তওফীক লাভ করল তার পূর্বেকার গোনাহসমূহ মাফ হয়ে গেল।” (মুসনাদে আহমেদ,৫/৩১৮, হা/২২৬১২)।
আর একটি বর্ণনায় আছে, ‘‘যে ব্যক্তি শবেকদরে কিয়াম করবে এবং সে তা ঈমান ও নেকীর আশা রাখার সাথে পেয়ে যাবে, তার গোনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে।’’ (সহীহ মুসলিম হা/৭৬০)।
আর এ সব সেই ব্যক্তির ধারণাকে খন্ডন করে, যে মনে করে যে, যে ব্যক্তি শবে ক্বদর মনে করে কোন রাতে কিয়াম করবে, তার শবে ক্বদরের সওয়াব লাভ হবে; যদিও সে রাতে শবেকদর না হয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ খন্ড:২০ পৃষ্ঠা:১৮৬-১৮৭)
অতএব, আপনি আমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি বা থাকুন, বিশুদ্ধ নিয়তসহ রমজানের শেষ দশকের জোড়/ বেজোড় অর্থাৎ আরবী মাসের হিসাব যেহেতু রাত আগে আসে সে হিসাবে শেষ ১০ রাত অথবা কমপক্ষে ২১, ২৩,২৫,২৭,২৯ বেজোড় ৫ টি রাতে যথাসাধ্য আল্লাহর ইবাদত করতে থাকুন।
তবে বছরের ভিন্নতায় শেষ দশকের বিভিন্ন রাতে তা হতে পারে। এতে আশা করা যায় যে,মাহরুম হবেন না। কিন্তু সারা পৃথিবীতে একসাথে কেমন করে হবে! লাইলাতুল কদর তো একটাই, এক দেশে রাত থাকা অবস্থায় তা হয়ে গেলে অন্যস্থানে কিভাবে হবে- এরকম অনর্থক চিন্তা ভাবনা করে সময় পার করে দিলে মাহরুম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুতরাং, আসুন সবাই মিলে যুক্তি তর্ক না করে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সালফে-সালেহীনের মানহাজ অনুসরণ করি।
শুধু লাইলাতুল ক্বদরে আমরা যেসব ফজিলতপূর্ণ আমল করতে পারি; তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটির নিম্নরূপ:-
প্রথমেই আপনি জেনে খুশি হোন: আল্লাহ বলেছেন; ক্বদরের রাতটি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। তাই এই রাতে একটি নেক আমল করা মানে হাজার মাস যাবত এই নেক আমলটি করা। সুবহানাল্লাহ্! রামাদানের শেষ দশ দিনে ক্বদর তালাশ করতে বলেছেন নবিজি (ﷺ)। তাই, আমরা শেষ দশ দিন নিচের এই আমলগুলো করতে পারি।
(১). তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় পড়া;
রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আর ফরয সালাতের পরে সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের সালাত। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩৯)।
ক্বিয়ামুল লায়ল, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ বা ক্বিয়ামে রামাযান সবগুলোকেই রাতের নফল সালাত বলা হয়। রাতের নফল সালাত তিন রাক‘আত বিতর সহ ১১ রাক‘আত পড়াই উত্তম। দুই দুই রাক‘আত করে চার সালামে ৮ রাক‘আত।
অতঃপর এক সালামে মাঝের তাশাহহুদ ছাড়াই তিন রাক‘আত বিতর পড়া। অথবা দুই দুই রাক‘আত করে ৫ সালামে ১০ রাক‘আত। এরপর এক রাক‘আত বিতর আদায় করা। (সহীহ বুখারী, হা/১১৪৭, ৯৯৫, ৯৯০; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৯৭, ১৭৯৩, ১৭৮২; হাকেম, হা/১১৪০)।
ঘুম থেকে উঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের শেষ ১১টি আয়াত পড়ে মিসওয়াক সহ ওযু করে কিছু তাসবীহ পাঠ করতে হয়। যেমন; দশবার করে ‘আল্লাহু আকবার’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ এবং ‘আল্লাহুম্মাগফির লী ওয়াহদিনী ওয়ারযুক্বনী ওয়া আফিনী পড়তে হয়। অতঃপর ক্বিয়ামাতের দিনের সংকীর্ণ স্থান হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয়। (আবু দাঊদ, হা/৭৬৬; নাসাঈ, হা/১৬১৭, ৫৫৩৫, সনদ সহীহ)।
বিশেষ করে একটি দু‘আ পড়ার অভ্যাস করা উচিত, যা খুবই ফযীলতপূর্ণ- لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ . اَلْحَمْدُ لِلهِ وَسُبْحَانَ اللهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাহাজ্জুদের সালাতে সানাও পড়েছেন ভিন্ন ভিন্ন। তাহাজ্জুদের সালাত শুরুর পূর্বেই দু’রাক‘আত সংক্ষিপ্তভাবে সালাত আদায় করা যায়।’ (সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৭)।
উল্লেখ যে,লাইলাতুল ক্বদরের জন্য আলাদা করে বা নির্দিষ্ট রাকআত সংখ্যায় কোন সালাত নেই। অন্যান্য রাতের মত এরাতেও তারাবীহ তাহাজ্জুত কিয়ামুল লাইলের নিয়তে পড়বেন শবে কদরের নিয়তে নয়।
(২). সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবার—প্রতিটি ১০০ বার করে মোট ৪০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, সে ১০০ ক্রীতদাস মুক্ত করার সওয়াব পাবে;
যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ বলবে, সে আল্লাহর রাস্তায় যু[দ্ধে]র জন্য ১০০ টি সাজানো ঘোড়ায় মু[জা]হিদ প্রেরণের সওয়াব পাবে;
যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে, সে ১০০টি মাকবুল (কবুলকৃত) উট কুরবানির সওয়াব পাবে;
যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, সে এত সওয়াব পাবে, যার ফলে আসমান ও যমিন পূর্ণ হয়ে যাবে। (ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ২/১২৫২; মুসনাদে আহমাদ, ৬/৩৪৪; হাদিসটি হাসান)
(৩). একটি গুরুত্বপূর্ণ তাসবিহ কমপক্ষে ১০০ বার পড়ার চেষ্টা করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার পড়বে—
অর্থ: আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি এক; তাঁর কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব এবং প্রশংসা কেবল তাঁরই; তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
সে ১০টি গোলাম মুক্ত করার সওয়াব পাবে;
তার জন্য ১০০ সওয়াব লেখা হবে;
তার ১০০ গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে;
ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবে এবং (সন্ধ্যায় বা রাতে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে)
ওই দিনের হিসেবে কেউ তার চেয়ে উত্তম সওয়াবের কাজ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ওই ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে বেশি পড়বে।’’ (সহীহ বুখারি ৩২৯৩; আবু দাউদ, ৫০৭৭)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেকটি দশবার করে বলবে, সে ইসমাঈল (আ.)-এর বংশের চারজন ক্রীতদাস মুক্ত করে দেওয়ার নেকি পাবে।’’ (বুখারী, আস-সহিহ: ৬৪০৪)
(৪). কদরের রাতের বিশেষ দু‘আটি মনোযোগের সাথে পড়া।
আয়িশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে ওই রাতে কী বলবো?’ নবিজি বলেন, তুমি বলো—
অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে পছন্দ করো। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও। (আহমাদ , আল-মুসনাদ: ৬/১৮২; হাদিসটি সহিহ)। এই দুআটি শেষ দশকের রাতগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পড়তে চেষ্টা করবো।
(৫). অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্তিগফার ও তাওবার যিকরটি বেশ কয়েকবার পড়া।
ইবনু মাস‘উদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; ‘‘যে ব্যক্তি এই দু‘আ পড়বে, তার গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে—যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলায়নকারী হয়।’’
অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই—তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী—এবং আমি তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি। (আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৫১৭; তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৭৭; হাদিসটি সহিহ)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘আসতাগফিরুল্লাহাল আযীম, আল্লাযি লা ইইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।’’ (তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৭৭; হাদিসটি হাস)
(৬). নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য এবং যেকোনো জীবিত ও মৃত মুসলিমের জন্য দু‘আ করা।
মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ.)-এর চমৎকার দু‘আ (ইসতিগফার)। এর মাধ্যমে একই সাথে নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য এবং সকল জীবিত ও মৃত ঈমানদারের জন্য দু‘আ করা হয়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ।
(৭). কিছু দান-সদাকাহ্ করা।
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি (হাশরের মাঠে) তার সদাকার ছায়াতলে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত লোকদের মাঝে ফয়সালা শেষ না হবে।” [ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৭৩৩৩; শায়খ আলবানি, সহিহুত তারগিব: ৮৭২; হাদিসটি সহিহ]
যদি সম্ভব হয়, তবে এই দশটি রাতেই করুন। এটাই উত্তম। এক টাকা দান করলে হাজার মাস কমপক্ষে ৮৪ বছরের সমান নেকি পাবেন এই রাতের প্রতিটি আমল এভাবেই বৃদ্ধি পাবে। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘কদরের রাতটি (মর্যাদার দিক থেকে) হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’’ (সূরা ক্বাদর, আয়াত: ০৩)।
যদি রাতে দিতে না পারেন, তবে রাতেই কিছু টাকা সাদাকাহ করার জন্য আলাদা করে রেখে দিন। এগুলো দিনের বেলা গরিবদেরকে দিয়ে দিন।
(৮). বেশি করে দরুদ পড়বেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।” (সহীহ মুসলিম হা/৪০৮)।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, ১০ টি গুনাহ মোচন করবেন এবং তার জন্য ১০ টি স্তর উন্নীত করবেন।’’ (সুনানে নাসায়ি: ১২৯৭, মুসতাদরাক হাকিম: ১/৫৫০, সহিহ ইবনু হিব্বান: ৯০৪, হাদীসটি সহীহ)
শ্রেষ্ঠ দরুদ সেটিই, যা আমরা নামাজের শেষ বৈঠকে পড়ি। কা’ব বিন উজরাহ (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, ‘কীভাবে আমরা (আপনার উপর) দরুদ পাঠ করব, তা বলুন।’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরুদে ইব্রাহিম পাঠ করতে বলেন, যা আমরা প্রত্যেক নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু...)-এর পর পড়ি। সেটি হলো: আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মদ .....হামীদুম মাজীদ। সবারই মুখস্থ আছে, তাই এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। এই দরুদটিই সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ।(সহীহ বুখারি: ৩৩৭০, মুসনাদ আহমাদ: ৪/২৪৪)
(৯). কয়েকটি ফজিলতপূর্ণ সুরা ও আয়াত তিলাওয়াত করতে পারি। যেমন-
সুরা ইখলাস: (বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১৩)
সুরা ফালাক ও সুরা নাস: (বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১৭)
সুরা কাফিরুন: (সিলসিলা সহিহাহ: ৫৮৬)
সুরা মুলক: (ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৭৮৬
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত: (বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১০; মুসলিম, আস-সহিহ: ৮০৭)
আয়াতুল কুরসি: (মুসলিম আস-সহিহ: ৮১০)
সুরা সাজদাহ ও সুরা যুমার: (সিলসিলা সহিহাহ: ৬৪১; তিরমিযি, আস-সুনান: ২৩১৬)
১০ পিরিয়ডে (হায়েজ অবস্থায়) থাকা নারীরা রামাদানের শেষ দশকে এবং লাইলাতুল কদর তালাশে যেসব আমল করতে পারেন:
প্রথমত হায়েজ নিফাস অবস্থায় নারীরা সালাত আদায়, সিয়াম (ফরজ,নফল) পালন, কাবাঘর তাওয়াফ করা, স্বামীর সাথে সহবাস করা পবিত্র কুরআন স্পর্শ করে পড়া মসজিদে প্রবেশ করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকুন কেনান হায়েজ নিফাস অবস্থায় উপরোক্ত কাজগুলো হারাম। তাহলে এমন অবস্থায় আপনারা কি করবেন? এই প্রশ্নের জবাবে বলবো আপনারা অনেক কিছুই করতে পারেন যেমন:
১) দু‘আ করা: পিরিয়ডকালে দু‘আ করতে কোনো অসুবিধা নেই। সুতরাং, উত্তম হবে—অজু করে লাইলাতুল কদরের মহান রজনীতে আন্তরিকভাবে দু‘আয় মনোনিবেশ করা। এই রাতে দু‘আ কবুল হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দু‘আ কোনো সাধারণ বিষয় নয়। হাদিসে এসেছে, ‘‘দু‘আ হলো ইবাদত।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৭৯; হাদীসটি সহীহ]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।’’ [সুরা মুমিন, আয়াত: ৬০]
দু‘আর আদব ও নিয়মগুলো অনুসরণ করে দু‘আ করলেই যথেষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ।
(২) স্পর্শ না করে পবিত্র কুরআনের ফজিলত পূর্ণ সূরা গুলো মুখস্ত তেলাওয়াত করা।(হাফেজ অবস্থায় নারীরা মুখস্ত কুরআন তেলাওয়াত করতে পারবে কি না এটা নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও বিশুদ্ধ হতে পারবে)
(৩) তাওবাহ-ইস্তিগফার পাঠ করা:
(৪) নবিজির উপর দরুদ পাঠ করা:
(৫) সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ এবং আল্লাহু আকবার—প্রতিটি ১০০ বার করে মোট ৪০০ বার পড়া। ফজিলতপূর্ণ যিকির ও তাসবিহগুলো পাঠ করা: লাইলাতুল কদরের বিশেষ দু‘আটি বেশি বেশি পড়া:
(৬) সাধ্যানুসারে কিছু দান-সাদাকাহ করা।
(৭) স্বামী সন্তান এবং পরিবারের অন্যান্যদেরকেও জাগিয়ে ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা ইত্যাদি কাজগুলো করতে পারেন ইনশাআল্লাহ।
পরিশেষে বলা যায়, রামাযানের পুরো মাস জুড়েই ইবাদতের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। তাই পুরো মাস ইবাদতের পাশাপাশি বিদায়ের শেষ দশকে আরো সচেতন হয়ে ইবাদত করলে তা আমাদের জন্য আরো কল্যাণ বয়ে আনবে। আল্লাহ আমাদের রামাযান মাসের বরকত, রহমত ও মাগফিরাতের সুযোগ লাভে ধন্য করুন-আমীন!! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
উপস্থাপনায়, জুয়েল মাহমুদ সালাফি
উত্তর: ‘লাইলাতুল কদর’ এটি গায়েবের অন্তর্ভুক্ত। আর গায়েবের মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ্।(সূরা নামল, ২৭/৬৫)।
“আলেমুল গায়েব” অর্থাৎ অদৃশ্য জ্ঞানী উপাধি একমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের সাথে সংশ্লিষ্ট। পৃথিবীর আর কারো সাথে নয়। আল্লাহ্ বলেন, “আর তাঁর কাছেই আছে অদৃশ্যের চাবিগুলো, সেগুলো তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না।” (সূরা আল- আন‘আম; ৬/৫৯)।
তাই গায়েবী বিষয়ের ধরণ-পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা ঠিক নয়। আল্লাহর কাজ ও বান্দার কাজ এক রকম নয়, আল্লাহর সব কাজ ও হিকমত বান্দার সীমিত জ্ঞান দিয়ে বুঝা সম্ভব নয়। তাই আল্লাহর কাজের ধরণ-পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা বৈধ নয়। বান্দার কাজের উপর আল্লাহর কাজের কিয়াস চলে না, জমহুর ওলামাদের মতে লাইলাতুল ক্বদরের রাত একটিই। আর ক্বদরের রাত্রিটি পৃথিবীর যখন যে স্থান দিয়ে চলে তখন সেখানেই ‘লায়লাতুল ক্বদর’ ঘটে। এটিকে নিজের হিসাবে রাখা ঠিক নয়। কেননা মানুষের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির যেমন সীমা রয়েছে তেমনি মানুষের চিন্তাশক্তির সীমা রয়েছে। আর গায়েবের এই বিষয়গুলো মানুষের চিন্তাশক্তির বাইরে। এটি মহান আল্লাহ তাআলা নিজেই পরিচালনা করেন।
তাছাড়া আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাবী হচ্ছে- তাঁর বিধিবিধান ও শরীয়তকে মেনে নেওয়া। কারণ,আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন কোনটি মানুষের জন্য কল্যাণকর। তাছাড়া সবার জানা উচিত যে, ইসলামী শরীআতের কোন বিধানের কারণ তালাশ করা অন্যায়। বরং নির্বিবাদে মেনে নেওয়ার মধ্যেই বান্দার কল্যাণ নিহিত রয়েছে,মুমিন তো তারাই যারা বলে আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। (সূরা বাকারা;২/২৮৫)।
সুতরাং প্রত্যেক মুমিনকে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, আল্লাহ তাআলার প্রত্যেকটি কাজে বিরাট হিকমত এবং প্রশংসনীয় উদ্দেশ্য রয়েছে। আর প্রত্যেক মানুষের জন্য তা স্পষ্ট হওয়া জরূরী নয়। এটি এক প্রকার পরীক্ষা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম।’(সূরা মূলক; ৬৭/২)। কোন কোন শারয়ী হুকুমের রহস্য আমরা বুঝতে পারি। আবার কোন কোন শারয়ী হুকুমের রহস্য আমরা বুঝতে পারি না। সৌদি ফতোয়া বোর্ড (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ)
এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, শাইখ আবদুল্লাহ ইবনে জিবরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি.] কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল বিভিন্ন দেশে লাইলাতুল ক্বদর কি আলাদা?
জবাবে শাইখ বলেন, বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে শুরু হলেও লাইলাতুল ক্বদর একই রাতে হয়। তবে দেশের বা শহরের ভিন্নতার কারণে তা সূচনার ভিন্নতা হয়ে থাকে। যেমন; আরবের কোন দেশে সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে সেখানে ক্বদর শুরু হয় এমনিভাবে আফ্রিকার কোন দেশে সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে সেখানে ও শুরু হয়, যদিও দুই দেশের সূর্য অস্ত যাওয়ার পার্থক্য ২০ ঘণ্টা। তবুও প্রত্যেক দেশের জনগণই উক্ত রাতকে ক্বদরের রাত হিসাবে গণ্য করবে এখানে দুই দেশে ফেরেশতা অবতীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা হয় না (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১২৯৬৮৮)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লায়লাতুল ক্বদর রামাযানের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিগুলোতে অন্বেষণ করতে বলেছেন। তাছাড়া কোন তারিখে লায়লাতুল ক্বদর হবে সে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দিষ্ট করে কিছু বলে যাননি। বরং তিনি একাধিক হাদীসে বলেছেন, ‘তোমরা রামাযানের শেষ দশকের প্রত্যেক বেজোড় রাত্রিতে ক্বদর রাত্রি তালাশ করো।’ (সহীহ বুখারী, হা/২০১৭; মিশকাত, হা/২০৮৩-৮৭)
জেনে রাখা ভালো যে, শবে ক্বদরের সওয়াব অর্জনের জন্য শবে ক্বদর কোন রাতে হচ্ছে তা জানা বা দেখা শর্ত নয়। তবে ইবাদতের রাতে শবে ক্বদর সংঘটিত হওয়া এবং তার অনুসন্ধানে সওয়াবের আশা রাখা শর্ত। শবে ক্বদর কোন্ রাতে ঘটছে তা জানা যেতে পারে। আল্লাহ যাকে তওফীক দেন, সে বিভিন্ন লক্ষণ দেখে শবে ক্বদর বুঝতে পারে। সাহাবাগণ (রাযি.) একাধিক নিদর্শন দেখে জানতে পারতেন শবে ক্বদর ঘটার কথা। তবে তা জানা বা দেখা না গেলে যে তার সওয়াব পাওয়া যাবে না -তা নয়। বরং যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশা রেখে সে রাত্রিতে ইবাদত করবে, সেই তার সওয়াবের অধিকারী হবে; চাহে সে শবেকদর দেখতে পাক বা না-ই পাক।
সুতরাং, মুসলিমের উচিত সওয়াব ও নেকী অর্জনের উদ্দেশ্যে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর আদেশ ও নির্দেশমত রমাযানের শেষ দশকে শবে ক্বদর অন্বেষণ করতে যত্নবান ও আগ্রহী হওয়া। অতঃপর দশটি রাতে ঈমান ও নেকীর আশা রাখার সাথে ইবাদত করতে করতে যে কোন রাতে যখন শবে ক্বদর লাভ করবে, তখন সে সেই রাতের অগাধ সওয়াবের অধিকারী হয়ে যাবে; যদিও সে বুঝতে না পারে যে, ঐ দশ রাতের মধ্যে কোন রাতটি শবে ক্বদর রূপে অতিবাহিত হয়ে গেল।
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমান রেখে ও নেকী লাভের আশা করে শবেকদরের রাত্রি কিয়াম করে (নামায পড়ে), সে ব্যক্তির পূর্বেকার গোনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়।’’ (সহীহ বুখারী ৩৫, মুসলিম হা/৭৬০)।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে তার খোঁজে কিয়াম করল এবং সে তা পেতে তওফীক লাভ করল তার পূর্বেকার গোনাহসমূহ মাফ হয়ে গেল।” (মুসনাদে আহমেদ,৫/৩১৮, হা/২২৬১২)।
আর একটি বর্ণনায় আছে, ‘‘যে ব্যক্তি শবেকদরে কিয়াম করবে এবং সে তা ঈমান ও নেকীর আশা রাখার সাথে পেয়ে যাবে, তার গোনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে।’’ (সহীহ মুসলিম হা/৭৬০)।
আর এ সব সেই ব্যক্তির ধারণাকে খন্ডন করে, যে মনে করে যে, যে ব্যক্তি শবে ক্বদর মনে করে কোন রাতে কিয়াম করবে, তার শবে ক্বদরের সওয়াব লাভ হবে; যদিও সে রাতে শবেকদর না হয়। (মাজাল্লাতুল বুহূসিল ইসলামিয়্যাহ খন্ড:২০ পৃষ্ঠা:১৮৬-১৮৭)
অতএব, আপনি আমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি বা থাকুন, বিশুদ্ধ নিয়তসহ রমজানের শেষ দশকের জোড়/ বেজোড় অর্থাৎ আরবী মাসের হিসাব যেহেতু রাত আগে আসে সে হিসাবে শেষ ১০ রাত অথবা কমপক্ষে ২১, ২৩,২৫,২৭,২৯ বেজোড় ৫ টি রাতে যথাসাধ্য আল্লাহর ইবাদত করতে থাকুন।
তবে বছরের ভিন্নতায় শেষ দশকের বিভিন্ন রাতে তা হতে পারে। এতে আশা করা যায় যে,মাহরুম হবেন না। কিন্তু সারা পৃথিবীতে একসাথে কেমন করে হবে! লাইলাতুল কদর তো একটাই, এক দেশে রাত থাকা অবস্থায় তা হয়ে গেলে অন্যস্থানে কিভাবে হবে- এরকম অনর্থক চিন্তা ভাবনা করে সময় পার করে দিলে মাহরুম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুতরাং, আসুন সবাই মিলে যুক্তি তর্ক না করে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সালফে-সালেহীনের মানহাজ অনুসরণ করি।
শুধু লাইলাতুল ক্বদরে আমরা যেসব ফজিলতপূর্ণ আমল করতে পারি; তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটির নিম্নরূপ:-
প্রথমেই আপনি জেনে খুশি হোন: আল্লাহ বলেছেন; ক্বদরের রাতটি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। তাই এই রাতে একটি নেক আমল করা মানে হাজার মাস যাবত এই নেক আমলটি করা। সুবহানাল্লাহ্! রামাদানের শেষ দশ দিনে ক্বদর তালাশ করতে বলেছেন নবিজি (ﷺ)। তাই, আমরা শেষ দশ দিন নিচের এই আমলগুলো করতে পারি।
(১). তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় পড়া;
রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আর ফরয সালাতের পরে সর্বোত্তম সালাত হলো রাতের সালাত। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩৯)।
ক্বিয়ামুল লায়ল, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ বা ক্বিয়ামে রামাযান সবগুলোকেই রাতের নফল সালাত বলা হয়। রাতের নফল সালাত তিন রাক‘আত বিতর সহ ১১ রাক‘আত পড়াই উত্তম। দুই দুই রাক‘আত করে চার সালামে ৮ রাক‘আত।
অতঃপর এক সালামে মাঝের তাশাহহুদ ছাড়াই তিন রাক‘আত বিতর পড়া। অথবা দুই দুই রাক‘আত করে ৫ সালামে ১০ রাক‘আত। এরপর এক রাক‘আত বিতর আদায় করা। (সহীহ বুখারী, হা/১১৪৭, ৯৯৫, ৯৯০; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৯৭, ১৭৯৩, ১৭৮২; হাকেম, হা/১১৪০)।
ঘুম থেকে উঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের শেষ ১১টি আয়াত পড়ে মিসওয়াক সহ ওযু করে কিছু তাসবীহ পাঠ করতে হয়। যেমন; দশবার করে ‘আল্লাহু আকবার’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ এবং ‘আল্লাহুম্মাগফির লী ওয়াহদিনী ওয়ারযুক্বনী ওয়া আফিনী পড়তে হয়। অতঃপর ক্বিয়ামাতের দিনের সংকীর্ণ স্থান হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয়। (আবু দাঊদ, হা/৭৬৬; নাসাঈ, হা/১৬১৭, ৫৫৩৫, সনদ সহীহ)।
বিশেষ করে একটি দু‘আ পড়ার অভ্যাস করা উচিত, যা খুবই ফযীলতপূর্ণ- لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ . اَلْحَمْدُ لِلهِ وَسُبْحَانَ اللهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাহাজ্জুদের সালাতে সানাও পড়েছেন ভিন্ন ভিন্ন। তাহাজ্জুদের সালাত শুরুর পূর্বেই দু’রাক‘আত সংক্ষিপ্তভাবে সালাত আদায় করা যায়।’ (সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৭)।
উল্লেখ যে,লাইলাতুল ক্বদরের জন্য আলাদা করে বা নির্দিষ্ট রাকআত সংখ্যায় কোন সালাত নেই। অন্যান্য রাতের মত এরাতেও তারাবীহ তাহাজ্জুত কিয়ামুল লাইলের নিয়তে পড়বেন শবে কদরের নিয়তে নয়।
(২). সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ও আল্লাহু আকবার—প্রতিটি ১০০ বার করে মোট ৪০০ বার পড়া। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে, সে ১০০ ক্রীতদাস মুক্ত করার সওয়াব পাবে;
যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ বলবে, সে আল্লাহর রাস্তায় যু[দ্ধে]র জন্য ১০০ টি সাজানো ঘোড়ায় মু[জা]হিদ প্রেরণের সওয়াব পাবে;
যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে, সে ১০০টি মাকবুল (কবুলকৃত) উট কুরবানির সওয়াব পাবে;
যে ব্যক্তি ১০০ বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, সে এত সওয়াব পাবে, যার ফলে আসমান ও যমিন পূর্ণ হয়ে যাবে। (ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ২/১২৫২; মুসনাদে আহমাদ, ৬/৩৪৪; হাদিসটি হাসান)
(৩). একটি গুরুত্বপূর্ণ তাসবিহ কমপক্ষে ১০০ বার পড়ার চেষ্টা করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার পড়বে—
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ
[মোটামুটি উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর]অর্থ: আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি এক; তাঁর কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব এবং প্রশংসা কেবল তাঁরই; তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
সে ১০টি গোলাম মুক্ত করার সওয়াব পাবে;
তার জন্য ১০০ সওয়াব লেখা হবে;
তার ১০০ গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে;
ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবে এবং (সন্ধ্যায় বা রাতে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে)
ওই দিনের হিসেবে কেউ তার চেয়ে উত্তম সওয়াবের কাজ করতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, ওই ব্যক্তি সক্ষম হবে, যে এর চেয়ে বেশি পড়বে।’’ (সহীহ বুখারি ৩২৯৩; আবু দাউদ, ৫০৭৭)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেকটি দশবার করে বলবে, সে ইসমাঈল (আ.)-এর বংশের চারজন ক্রীতদাস মুক্ত করে দেওয়ার নেকি পাবে।’’ (বুখারী, আস-সহিহ: ৬৪০৪)
(৪). কদরের রাতের বিশেষ দু‘আটি মনোযোগের সাথে পড়া।
আয়িশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে ওই রাতে কী বলবো?’ নবিজি বলেন, তুমি বলো—
اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ
[আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউ-উন, তু‘হিব্বুল আফওয়া ফা’অ্ফু আন্নী]অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে পছন্দ করো। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও। (আহমাদ , আল-মুসনাদ: ৬/১৮২; হাদিসটি সহিহ)। এই দুআটি শেষ দশকের রাতগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পড়তে চেষ্টা করবো।
(৫). অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্তিগফার ও তাওবার যিকরটি বেশ কয়েকবার পড়া।
ইবনু মাস‘উদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; ‘‘যে ব্যক্তি এই দু‘আ পড়বে, তার গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে—যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলায়নকারী হয়।’’
ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠّٰﻪَ ﺍﻟَّﺬِﻱْ ﻻَ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻰُّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮْﻡُ ﻭَﺃَﺗُﻮْﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
[আসতাগফিরুল্লাহ আল্লাযি (অথবা আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাযি) লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল ‘হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি]অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ব্যতীত কোনো সত্য উপাস্য নেই—তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী—এবং আমি তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি। (আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৫১৭; তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৭৭; হাদিসটি সহিহ)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘আসতাগফিরুল্লাহাল আযীম, আল্লাযি লা ইইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।’’ (তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৭৭; হাদিসটি হাস)
(৬). নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য এবং যেকোনো জীবিত ও মৃত মুসলিমের জন্য দু‘আ করা।
মুসলিম জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ.)-এর চমৎকার দু‘আ (ইসতিগফার)। এর মাধ্যমে একই সাথে নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য এবং সকল জীবিত ও মৃত ঈমানদারের জন্য দু‘আ করা হয়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ।
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
‘‘হে আমাদের রর! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিয়ো।’’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১)(৭). কিছু দান-সদাকাহ্ করা।
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক ব্যক্তি (হাশরের মাঠে) তার সদাকার ছায়াতলে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত লোকদের মাঝে ফয়সালা শেষ না হবে।” [ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৭৩৩৩; শায়খ আলবানি, সহিহুত তারগিব: ৮৭২; হাদিসটি সহিহ]
যদি সম্ভব হয়, তবে এই দশটি রাতেই করুন। এটাই উত্তম। এক টাকা দান করলে হাজার মাস কমপক্ষে ৮৪ বছরের সমান নেকি পাবেন এই রাতের প্রতিটি আমল এভাবেই বৃদ্ধি পাবে। কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘কদরের রাতটি (মর্যাদার দিক থেকে) হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’’ (সূরা ক্বাদর, আয়াত: ০৩)।
যদি রাতে দিতে না পারেন, তবে রাতেই কিছু টাকা সাদাকাহ করার জন্য আলাদা করে রেখে দিন। এগুলো দিনের বেলা গরিবদেরকে দিয়ে দিন।
(৮). বেশি করে দরুদ পড়বেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।” (সহীহ মুসলিম হা/৪০৮)।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তার প্রতি ১০ বার রহমত বর্ষণ করবেন, ১০ টি গুনাহ মোচন করবেন এবং তার জন্য ১০ টি স্তর উন্নীত করবেন।’’ (সুনানে নাসায়ি: ১২৯৭, মুসতাদরাক হাকিম: ১/৫৫০, সহিহ ইবনু হিব্বান: ৯০৪, হাদীসটি সহীহ)
শ্রেষ্ঠ দরুদ সেটিই, যা আমরা নামাজের শেষ বৈঠকে পড়ি। কা’ব বিন উজরাহ (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, ‘কীভাবে আমরা (আপনার উপর) দরুদ পাঠ করব, তা বলুন।’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরুদে ইব্রাহিম পাঠ করতে বলেন, যা আমরা প্রত্যেক নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু...)-এর পর পড়ি। সেটি হলো: আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মদ .....হামীদুম মাজীদ। সবারই মুখস্থ আছে, তাই এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। এই দরুদটিই সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ।(সহীহ বুখারি: ৩৩৭০, মুসনাদ আহমাদ: ৪/২৪৪)
(৯). কয়েকটি ফজিলতপূর্ণ সুরা ও আয়াত তিলাওয়াত করতে পারি। যেমন-
সুরা ইখলাস: (বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১৩)
সুরা ফালাক ও সুরা নাস: (বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১৭)
সুরা কাফিরুন: (সিলসিলা সহিহাহ: ৫৮৬)
সুরা মুলক: (ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৭৮৬
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত: (বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১০; মুসলিম, আস-সহিহ: ৮০৭)
আয়াতুল কুরসি: (মুসলিম আস-সহিহ: ৮১০)
সুরা সাজদাহ ও সুরা যুমার: (সিলসিলা সহিহাহ: ৬৪১; তিরমিযি, আস-সুনান: ২৩১৬)
১০ পিরিয়ডে (হায়েজ অবস্থায়) থাকা নারীরা রামাদানের শেষ দশকে এবং লাইলাতুল কদর তালাশে যেসব আমল করতে পারেন:
প্রথমত হায়েজ নিফাস অবস্থায় নারীরা সালাত আদায়, সিয়াম (ফরজ,নফল) পালন, কাবাঘর তাওয়াফ করা, স্বামীর সাথে সহবাস করা পবিত্র কুরআন স্পর্শ করে পড়া মসজিদে প্রবেশ করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকুন কেনান হায়েজ নিফাস অবস্থায় উপরোক্ত কাজগুলো হারাম। তাহলে এমন অবস্থায় আপনারা কি করবেন? এই প্রশ্নের জবাবে বলবো আপনারা অনেক কিছুই করতে পারেন যেমন:
১) দু‘আ করা: পিরিয়ডকালে দু‘আ করতে কোনো অসুবিধা নেই। সুতরাং, উত্তম হবে—অজু করে লাইলাতুল কদরের মহান রজনীতে আন্তরিকভাবে দু‘আয় মনোনিবেশ করা। এই রাতে দু‘আ কবুল হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দু‘আ কোনো সাধারণ বিষয় নয়। হাদিসে এসেছে, ‘‘দু‘আ হলো ইবাদত।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৭৯; হাদীসটি সহীহ]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।’’ [সুরা মুমিন, আয়াত: ৬০]
দু‘আর আদব ও নিয়মগুলো অনুসরণ করে দু‘আ করলেই যথেষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ।
(২) স্পর্শ না করে পবিত্র কুরআনের ফজিলত পূর্ণ সূরা গুলো মুখস্ত তেলাওয়াত করা।(হাফেজ অবস্থায় নারীরা মুখস্ত কুরআন তেলাওয়াত করতে পারবে কি না এটা নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও বিশুদ্ধ হতে পারবে)
(৩) তাওবাহ-ইস্তিগফার পাঠ করা:
(৪) নবিজির উপর দরুদ পাঠ করা:
(৫) সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ এবং আল্লাহু আকবার—প্রতিটি ১০০ বার করে মোট ৪০০ বার পড়া। ফজিলতপূর্ণ যিকির ও তাসবিহগুলো পাঠ করা: লাইলাতুল কদরের বিশেষ দু‘আটি বেশি বেশি পড়া:
(৬) সাধ্যানুসারে কিছু দান-সাদাকাহ করা।
(৭) স্বামী সন্তান এবং পরিবারের অন্যান্যদেরকেও জাগিয়ে ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা ইত্যাদি কাজগুলো করতে পারেন ইনশাআল্লাহ।
পরিশেষে বলা যায়, রামাযানের পুরো মাস জুড়েই ইবাদতের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। তাই পুরো মাস ইবাদতের পাশাপাশি বিদায়ের শেষ দশকে আরো সচেতন হয়ে ইবাদত করলে তা আমাদের জন্য আরো কল্যাণ বয়ে আনবে। আল্লাহ আমাদের রামাযান মাসের বরকত, রহমত ও মাগফিরাতের সুযোগ লাভে ধন্য করুন-আমীন!! (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)
উপস্থাপনায়, জুয়েল মাহমুদ সালাফি