সালাফী আকিদা ও মানহাজে - Salafi Forum

Salafi Forum হচ্ছে সালাফী ও সালাফদের আকিদা, মানহাজ শিক্ষায় নিবেদিত একটি সমৃদ্ধ অনলাইন কমিউনিটি ফোরাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় নিযুক্ত হউন, সালাফী আলেমদের দিকনির্দেশনা অনুসন্ধান করুন। আপনার ইলম প্রসারিত করুন, আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করুন এবং সালাফিদের সাথে দ্বীনি সম্পর্ক গড়ে তুলুন। বিশুদ্ধ আকিদা ও মানহাজের জ্ঞান অর্জন করতে, ও সালাফীদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এবং ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে আলিঙ্গন করতে আজই আমাদের সাথে যোগ দিন।
Joynal Bin Tofajjal

বক্তা আদনানের বাতিল ফতোয়া— কাগজের টাকা হারাম!

Joynal Bin Tofajjal

Student Of Knowledge

Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
LV
16
 
Awards
30
Credit
4,479
আবু ত্বহা আদনান বলেছেন, “এবং আইএমএফ – ইন্টারন্যাশনাল মনিটরিং ফান্ড দিয়ে এরা পুরো বিশ্বের সম্পদ লুটে নেওয়ার চেষ্টা করল। সুদি ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং সম্পদ লুটে নেওয়া। সুদ তো আপনারা বোঝেনই। আর সম্পদ লুটল কীভাবে? এই যে, কাগজের টাকা দিয়ে। আপনাকে কাগজের টাকা দিবে, আর আপনি ওদেরকে সোনা দিবেন, রুপা দিবেন, তেল দিবেন, গ্যাস দিবেন। ওরা সমৃদ্ধ হবে, আর আপনাকে তেজপাতা ধরিয়ে দিবে। আমি বলেছি, আগামী দিনগুলোতে যদি ওরা কাগজের টাকা তুলে দেয় এবং সেটা তুলে দিবে ইনশাআল্লাহ অল্প সময় পরেই, সব ইলেক্ট্রনিক মানি হয়ে যাবে। যদি তখন তেজপাতাকে তারা কাগজ হিসেবে চালু করে, লেমেনেটিং করে তেজপাতাকে টাকা হিসেবে চালু করে দেয়, আমাদের প্রত্যেকটা আলেম-ওলামা বলবে, এটা জায়েজ ইল্লা মাশাআল্লাহ। অর্থনীতির বিষয়ে তারা এতই মিসকিন, অর্থনীতির জ্ঞানে তারা এতই মিসকিন যে, এই সামান্য প্রতারণাটুকু ধরতে পারল না।” [দেখুন: https://youtu.be/FLx7i81qd94 (২৫:৫৮ মিনিট থেকে ২৭:০০ মিনিট)]

বক্তা আদনানের ব্যাপারটি বড়োই অদ্ভুত। তিনি কাগজের টাকা হারাম ফতোয়া দিয়ে নিজেই কাড়িকাড়ি টাকা নিয়ে মাহফিল করে বেড়ান! আদনানের ভক্তকুল আদনানকে নিয়ে যতই লম্ফঝম্ফ করুক না কেন, টাকার লেনদেন কিন্তু তারা ছাড়ে না। আরেকটি ব্যাপার খেয়াল করুন, উম্মতের মহান উলামাদেরকে কী বাজেভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন বক্তা আদনান। অর্থনীতিতে উলামাদেরকে মিসকিন আখ্যা দেন তিনি। অথচ সে-ই তিনিই আবার বড়ো গলায় বলে বেড়ান, আকিদা-মানহাজের নাম দিয়ে বিভক্তি করবেন না, ইসলামি দলগুলোর কোনো সমালোচনা করবেন না! এদের মতো বিভ্রান্তদের জন্যই কি সেই আয়াতটি প্রযোজ্য নয়, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, “ওহে যারা ইমান এনেছ, তোমরা কেন এমন কথা বল, যা তোমরা নিজেরাই করো না? তোমরা নিজেরা যা করো না তা তোমাদের বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় ঘৃণিত।” [সুরা সফ: ২-৩]

এবার আসুন, জেনে নিই, কাগুজে মুদ্রা বা ব্যাংক-নোট ব্যবহারের শরয়ি বিধান কী। আমরা এ বিষয়ে জানার জন্য মুসলিম বিশ্বের সর্বজনগৃহীত ফতোয়া কমিটিগুলোর ফতোয়া পেশ করব ইনশাআল্লাহ।

সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহর নেতৃত্বাধীন সৌদি আরবের ইলমি গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির উলামাগণকে ‘কাগুজে মুদ্রা স্বর্ণমুদ্রার মতো গচ্ছিত রেখে তা থেকে সুদি লভ্যাংশ গ্রহণ করা জায়েজ কিনা’ মর্মে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা উত্তরে বলেন, العملة الورقية (ورق البنكنوت) حكمه في التعامل حكم النقد ذهبا أو فضة “লেনদেনের ক্ষেত্রে কাগুজে মুদ্রা তথা ব্যাংক-নোটের বিধান স্বর্ণমুদ্রা বা রৌপ্যমুদ্রার বিধানের অনুরূপ।” ইমাম ইবনু বায-সহ উক্ত ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছেন ইমাম আব্দুর রাযযাক আফিফি, ইমাম আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান এবং ইমাম আব্দুল্লাহ বিন কাউদ রাহিমাহুমুল্লাহ। [ফাতাওয়া লাজনা দায়িমা, ফতোয়া নং: ৩০৪৮; খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ৩০৮]

আন্তর্জাতিক ইসলামি সংস্থা রাবেতায়ে আলাম আল-ইসলামি তথা মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের ইসলামিক ফিকহ অ্যাকাডেমির গৃহীত সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, فإنَّ مَجلِسَ المَجْمَعِ الفِقهيِّ الإسلاميِّ، يُقرِّرُ: أنَّ العُملةَ الوَرقيَّةَ نقْدٌ قائمٌ بذاتِه، له حُكمُ النَّقدينِ مِن الذَّهبِ والفِضَّةِ، فتَجِبُ الزَّكاةُ فيها، ويَجْري الرِّبا عليها بنَوعَيْه، فضْلًا ونَسيئةً، كما يَجْري ذلك في النَّقدينِ مِن الذَّهبِ والفِضَّةِ تَمامًا “ইসলামিক ফিকহ অ্যাকাডেমির কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করছে যে, কাগুজে মুদ্রা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মুদ্রা। স্বর্ণমুদ্রা ও রৌপ্যমুদ্রার বিধানই উক্ত মুদ্রার জন্য প্রযোজ্য হবে। এজন্য কাগুজে মুদ্রাতেও জাকাত ফরজ হয়। কাগুজে মুদ্রাতেও পুরোপুরি সুদের প্রকারদ্বয় তথা ঋণ পরিশোধের সময় প্রদেয় সুদ এবং সমজাতীয় জিনিস লেনদেনের সময় প্রদেয় সুদ সম্পন্ন হয়; যেমনভাবে এসব সুদ স্বর্ণমুদ্রা ও রৌপ্যমুদ্রায় সম্পন্ন হয়ে থাকে।” [কারারাতুল মাজমায়িল ফিকহিয়্যিল ইসলামি লির রাবিতা, পৃষ্ঠা: ১১৩-১১৪]

আন্তর্জাতিক ইসলামি সংস্থা ওআইসি তথা অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশনের ইসলামিক ফিকহ অ্যাকাডেমির কাউন্সিলও অনুরূপ ফতোয়া দিয়েছে। [দেখুন: মাজাল্লাতু মাজমায়িল ফিকহিল ইসলামি ম্যাগাজিন, সংখ্যা: ৩; রেজুলেশন নং: ৯]

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদও এ বিষয়ে অনুরূপ ফতোয়া দিয়েছে। [দেখুন: আবহাসু হাইআতি কিবারিল উলামা, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৯২]

অনুরূপভাবে জর্ডানের দারুল ইফতা ফতোয়া বোর্ডও কাগুজে মুদ্রা প্রসঙ্গে একই সিদ্ধান্ত পেশ করেছে। [দেখুন: জর্ডানের দারুল ইফতার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ফতোয়া নং: ৩৩৯২]

দুঃখের কথা কী আর বলব, মুসলিম বিশ্বের সর্বজনগৃহীত ফতোয়া কমিটির মুফতিরা বক্তা আদনানের মতে অর্থনীতির জ্ঞানে মিসকিন তো, সেজন্য তাঁদের ফতোয়া বাদ দিয়ে আদনানের ভক্তকুল হয়তো গরম গরম আদনানীয় ফতোয়াই মান্য করবেন! কিন্তু সেখানেও দুরাশা রয়েই গেল, বক্তা আদনান নিজেই যখন কাগজের টাকা হারাম ফতোয়া দিয়ে মাহফিল করে বড়ো অংকের টাকা নিয়ে নেন, তখন ভক্তকুল আর কী করতে পারে আদনানের মতো হিপোক্রেসি ছাড়া? আল্লাহ আমাদের সুমতি দিন, আমিন।









লিখেছেন: মুহাম্মাদ আব্দুল্ললাহ মৃধা।​
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Similar threads

Total Threads
12,902Threads
Total Messages
16,403Comments
Total Members
3,337Members
Latest Messages
Emon11Latest member
Top