Joynal Bin Tofajjal

কেয়ামতের আলামত বিষয়ে আবু ত্বহা আদনানের বলা আরও কিছু বানোয়াট কথাবার্তা

Joynal Bin Tofajjal

Student Of Knowledge

Forum Staff
Moderator
Uploader
Exposer
HistoryLover
Salafi User
LV
16
 
Awards
30
Credit
4,479
আমাদের মনে রাখা দরকার, কেয়ামতের আলামত বিষয়ে কথা বলার সময় আল্লাহর নাজিলকৃত শরিয়তকে উপস্থাপন করা হয়। এজন্য বিনা দলিলে কোনো বিষয়কে কেয়ামতের আলামত আখ্যা দেওয়া মূলত শরিয়তের ব্যাপারে বানোয়াট কথাবার্তা বলার শামিল, যা সন্দেহাতীতভাবে হারাম কাজ। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান এই কাজটিই করে থাকেন। আমরা তার এরকম বেশকিছু বক্তব্যের নমুনা পেশ করছি।

এক. উলামাদের মধ্যকার গিবত-তোহমত শেষ জামানার আলামত
আবু ত্বহা আদনান বলেছেন, “উলামায়ে কেরামের মধ্যে কোনো ঐক্য দেখতে পারবেন না। এক উলামা আরেক উলামাকে গালি দিবে, এর গিবত করবে, ওর তোহমত করবে, মসজিদ ভাগাভাগি করে ফেলবে, দলটল ভাগাভাগি করে ফেলবে, একে অপরের সাথে চা পর্যন্ত খাবে না। এই হচ্ছে শেষ জামানা।” [দেখুন: https://youtu.be/cILy9Valw6o (১:১১ মিনিট থেকে ১:২৭ মিনিট)]
বক্তা আদনান যেসব কাজের কথা বলেছেন, সেগুলোকে তিনি স্পষ্টভাবে কেয়ামতের আলামত বলেননি বটে, কিন্তু শেষ জামানার আলামত নিয়ে আলোচনা করতে যেয়ে কথাগুলো বলেছেন। তাঁর কথা থেকে বোঝা যায়, এগুলো শেষ জামানার নিদর্শন। কিন্তু শরিয়ত নিয়ে কথা বলতে যেয়ে শরিয়তের দলিল ব্যতিরেকে এরকম কথা বলা যায় না। কোনটি শেষ জামানার নিদর্শন, আর কোনটি কেয়ামতের আলামত তা শরিয়তের দলিল ছাড়া জানার কোনো উপায় নেই। আদনান সাহেব যদি বলেন, তাঁর এ কথার ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে, তাহলে সেটা তাঁকে অবশ্যই ক্ল্যারিফাই করে জানাতে হবে।

দুই. ইহুদিরা সারা ওয়ার্ল্ডকে রুল করবে
বক্তা আদনান বলেছেন, “আরেকটা বিষয় বুঝতে আমরা ভুল করি। যতক্ষণ পর্যন্ত এই ইসরাইল, এই যে ইসরাইল, অবৈধ রাষ্ট্র, সারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই মালহামাও হবে না।” [দেখুন: https://youtu.be/NzmsBpr4v9U (১৯:০৫ মিনিট থেকে ১৯:২৫ মিনিট)]

আরেক বক্তব্যে বলেছেন, “যখন ইহুদিরা সারা ওয়ার্ল্ডকে রুল করবে, রুলিং স্টেটে পরিণত হবে, তখন যদি কেউ বের হয়ে বলে, ‘আনাল মাসিহ, আমি হচ্ছি দাজ্জাল,’ তখন তারা তাকে বিশ্বাস করবে।” [দেখুন: https://youtu.be/O5Jyve3gUO0 (০:৪২ মিনিট থেকে ১:০৫ মিনিট)]

বক্তা আদনানের কথা অনুযায়ী আগামীতে ইসরায়েলি ইহুদিরা সারা বিশ্ব শাসন করবে। আরও অনেক বক্তব্যে তিনি এমনটি স্পষ্টরূপে ব্যক্ত করেছেন। কেয়ামতের আলামত বিষয়ে আল্লাহর শরিয়তকে উপস্থাপন করার সময় এরকম দলিলবিহীন কথাবার্তা অন্যায় ও গর্হিত অপরাধ। কেয়ামতের আলামত বিষয়ে আমরা এরকম একটি হাদিসও পাইনি, যেখানে বলা হয়েছে, ইহুদিরা সারা বিশ্ব শাসন করবে। সুতরাং এ জাতীয় বক্তব্য শরিয়তের ব্যাপারে জালিয়াতি ও বানোয়াট কথা হিসেবেই বিবেচিত হবে। আল্লাহুল মুস্তাআন।

তিন. গ্রামে চলে যেতে হবে, শহর থাকবে না!
আবু ত্বহা আদনান বলেছেন, “শহরে যারা থাকে, তাদের উদ্দেশ্যে বেশি বলছি এটা। কারণ এটা অনলাইনে যাবে। শহরকেন্দ্রিক জীবনব্যবস্থা ত্যাগ করতে হবে। শহরে আপনি বাঁচতে পারবেন না, টিকতে পারবেন না। শহরগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহ পাক বলেছেন, وَإِنْ مِنْ قَرْيَةٍ إِلَّا نَحْنُ مُهْلِكُوهَا قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ’কেয়ামতের আগে প্রত্যেক নগরী আমি ধ্বংস করে দিব। (সুরা ইসরা: ৫৮)’ আল্লাহ বলেছেন। শহর থাকবে না, প্রত্যন্ত জায়গায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন।” [দেখুন: https://youtu.be/npyaY-cHMKw (২১:০০ মিনিট থেকে ২১:৩২ মিনিট পর্যন্ত)]

শহর ত্যাগ করে গ্রামে চলে যেতে হবে এমন কথা কুরআন-সুন্নাহর কোথাও বলা হয়নি। কেয়ামতের আলামত হিসেবেও এমন কথা বলা হয়নি যে, শহর ধ্বংস হয়ে যাবে। সুতরাং আদনান সাহেবের উক্ত কথা ভ্রান্ত হিসেবে বিবেচ্য। বক্তা আদনান সুরা বানি ইসরাইল তথা সুরা ইসরার ৫৮ নং আয়াত দিয়ে নিজের ভ্রান্ত কথার পক্ষে দলিল দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَإِنْ مِنْ قَرْيَةٍ إِلَّا نَحْنُ مُهْلِكُوهَا قَبْلَ يَوْمِ الْقِيَامَةِ أَوْ مُعَذِّبُوهَا عَذَابًا شَدِيدًا ۚ كَانَ ذَٰلِكَ فِي الْكِتَابِ مَسْطُورًا “এমন কোনো জনপদ নেই, যা আমি কেয়ামত দিসবের পূর্বে ধ্বংস করব না অথবা তাকে কঠোর শাস্তি দিব না; এটাতো কিতাবে লেখা রয়েছে।” [সুরা ইসরা: ৫৮] তিনি আয়াতটির বিকৃত ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘এমন কোনো নগরী নেই, যা আমি কেয়ামত দিবসের পূর্বে ধ্বংস করব না।’ অথচ আয়াতটিতে শুধু নগরী বা শহরের ব্যাপারে বলা হয়নি, বরং মানুষজনের বসবাস রয়েছে এমন প্রতিটি এলাকার ব্যাপারে বলা হয়েছে; চাই সেই এলাকা শহর হোক, কিংবা গ্রাম।

আয়াতে উল্লিখিত ‘কর্‌ইয়া (قَرْيَةٍ)’ শব্দের অনুবাদ হিসেবে তিনি স্রেফ ‘নগরী’ করেছেন এবং এ অনুযায়ী নিজের বাতিল মতবাদকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এজন্য আমরা প্রথমত আরবি শব্দটির সঠিক অনুবাদ দেখাব, এরপর তাফসির গ্রন্থ থেকে আয়াতটির অনুবাদ পেশ করব, ইনশাআল্লাহ।

বিখ্যাত আরবি-বাংলা অভিধানপ্রণেতা ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান লিখেছেন, قَرْيَة ج قُرَى [قري] “[ক্বার্‌ইয়াহ্] জনপদ, গ্রাম, পল্লী, লোকালয়।” [আধুনিক আরবী-বাংলা অভিধান (আল-মু‘জামুল ওয়াফী), পৃষ্ঠা: ৭৮৯; রিয়াদ প্রকাশনী (বাংলাবাজার, ঢাকা) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: মে, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ (৬ষ্ঠ সংস্করণ)]

সুপ্রসিদ্ধ আরবি-ইংরেজি অভিধান আল-মাওরিদ প্রণেতা বলেছেন, قَرْيَة : ضيعة “village, small town, hamlet. অর্থ: গ্রাম, ছোটো শহর, পল্লী।” [ড. রুহি বাআলবাকি কৃত আল-মাওরিদ : অ্যা মডার্ন অ্যারাবিক-ইংলিশ ডিকশনারি; পৃষ্ঠা: ৮৫৮; দারুল ইলম লিল মালায়িন (বৈরুত) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ (৭ম সংস্করণ)]

প্রথিতযশা তাফসিরকারক ইমাম আব্দুর রহমান বিন নাসির আস-সাদি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ১৩৭৬ হি.) আয়াতটির ব্যাখ্যায় লিখেছেন, أي: ما من قرية من القرى المكذبة للرسل إلا لا بد أن يصيبهم هلاك قبل يوم القيامة أو عذاب شديد “অর্থাৎ রসুলগণকে মিথ্যা-প্রতিপন্নকারী এমন কোনো জনপদ নেই, যা কিনা কেয়ামত দিবসের পূর্বে ধ্বংস হবে না, কিংবা কঠোর শাস্তিতে নিপাতিত হবে না।” [তাইসিরুল কারিমির রহমান ফি তাফসিরি কালামিল মান্নান, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৬১]

এখন কি বক্তা আদনান বলবেন, রসুলদের অস্বীকারকারীরা শহরের অধিবাসী হলে শাস্তি পাবে, আর গ্রামের কাফেররা বেঁচে যাবে?! অবশ্যই তিনি এমন কথা বলবেন না। এজন্য তাঁর উচিত হবে উক্ত আয়াতকে স্রেফ শহরের সাথে খাস না করে, আয়াতটিকে জনপদ বা লোকালয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা। আমি বিষয়টি আরও স্পষ্ট করার জন্য বিশ্বনন্দিত দ্য নোবল কুরআনের ইংরেজি অনুবাদ তুলে দিচ্ছি। দ্য নোবল কুরআনে ইমাম তাকিউদ্দিন হিলালি ও ড. মুহসিন খান আয়াতটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন, “And there is not a town (population) but We shall destroy it before the Day of Resurrection, or punish it with a severe torment. That is written in the Book (of our Decrees).” [দ্য নোবল কুরআন, পৃষ্ঠা: ৩৭৬; কিং ফাহাদ গ্লোরিয়াস কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স (মদিনা) কর্তৃক প্রকাশিত] আয়াতটির অনুবাদে তাঁরা আরবি ‘কর্‌ইয়া (قَرْيَةٍ)’ শব্দের ব্যাখ্যায় জনপদ (population) লিখেছেন।

এই লেখা যারা পড়বেন, তাঁদের অনেকের কাছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ গ্রহণযোগ্য বলে মনে করি আমি; যদিও আল্লাহর গুণাবলি সংক্রান্ত বিষয়ে ফাউন্ডেশনের অনুবাদে কিছু সমস্যা আছে। সেজন্য ফাউন্ডেশনের অনুবাদ তুলে ধরছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে অনূদিত কুরআনে আয়াতটির অর্থ করা হয়েছে, “এমন কোনো জনপদ নাই যাহা আমি কিয়ামতের দিনের পূর্বে ধ্বংস করিব না অথবা যাহাকে কঠোর শাস্তি দিব না; ইহা তো কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।” [আল-কুরআনুল করীম, পৃষ্ঠা: ৪৪৬; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ডিসেম্বর, ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ (২৬শ মুদ্রণ)]

নাতিদীর্ঘ এ আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো, কেয়ামতের আলামত হিসেবে শহর ধ্বংস হয়ে যাবে – মর্মে আবু ত্বহা আদনানের ব্যক্তীকৃত কথাটি ভ্রান্ত। আল্লাহ আমাদের সুমতি দিন। আমিন।





লিখেছেন: মুহাম্মাদ আব্দুল্ললাহ মৃধা।​
 

Create an account or login to comment

You must be a member in order to leave a comment

Create account

Create an account on our community. It's easy!

Log in

Already have an account? Log in here.

Total Threads
12,902Threads
Total Messages
16,403Comments
Total Members
3,337Members
Latest Messages
Emon11Latest member
Top