A
Anonymous User
Guest
প্রশ্নঃ বর্তমানে কাউকে কাউকে বলতে শুনা যাচ্ছে যে, “কেমন আছেন/কেমন আছো” বলা যাবে না এবং এর উত্তরে “ভালো আছি” বলা যাবে না। বরং বলতে হবে যে, “আল্লাহ আপনাকে কেমন রেখেছেন?” আর উত্তরে বলতে হবে, “আল্লাহ আমাকে ভালো রেখেছেন।”
“কেমন আছেন” বলা নাকি আশআরি আকিদা (!), আবার কেউ বলে, এতে নাকি মানুষ আল্লাহর সমকক্ষ হয়ে যায়! কারণ মানুষ নিজে নিজে ভালো থাকে না ইত্যাদি।
উত্তর: ইসলাম সম্পর্কে সঠিক গবেষণা না থাকা কিংবা ইসলাম সম্পর্কে ভুল বুঝের কারণে কিংবা বিজ্ঞ আলেমদের সংস্পর্শ থেকে ইলম অর্জন না করার কারণে বর্তমানে অনেক মানুষ, এমনকি আমাদের দেশীয় কোনও কোনও আলেম/বক্তাও এ সব নতুন নতুন দর্শনের আবির্ভাব ঘটিয়ে যুগযুগ ধরে চলে আসা বৈধ বিষয়ে মানুষের মাঝে অযথা বিভ্রান্তি তৈরি করছে- যা কোনও কোনভাবেই কাম্য নয়।
যাহোক, আমরা দেখি, মানুষকে “কেমন আছেন/কেমন আছো” বলে প্রশ্ন করা এবং উত্তরে “ভালো আছি” বলার ব্যাপারে শরিয়তের কোনও আপত্তি আছে কি না।
মূলত: "কেমন আছেন/কেমন আছো?" "ভালো আছি" এই সকল বাক্য ব্যবহারে শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনও সমস্যা নেই। কেননা হাদিসে এই বাক্যগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিকে প্রশ্ন করেছেন, "কেমন আছেন? কী অবস্থা আপনাদের?” আর সাহাবি উত্তর দিয়েছেন, "ভালো আছি!"
সাহাবিদের মাঝেও এ জাতীয় বাক্য ব্যবহারের প্রচলন ছিল। (তবে "ভালো আছি" বলার পর "আলহামদুলিল্লাহ' বলা বা আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত)
নিম্নে এ বিষয়ে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল:
◆ ১. আয়েশা রা. বলেন,
“একবার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক বৃদ্ধা আসলেন। তিনি তখন আমার নিকট ছিলেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃদ্ধা মহিলাটিকে বললেন, কে আপনি?
তিনি উত্তরে বললেন, আমি জাসসামা আল মুযানিয়া (মুযানী গোত্রের নির্বোধ বা কুৎসিত মহিলা)।
তিনি বললেন, “না, বরং আপনি হলেন, হাসসানা আল মুযানিয়া (মুযানি গোত্রের সুদর্শন নারী)। তো আপনারা কেমন আছেন? আপনাদের কী অবস্থা? আমাদের পরে আপনারা কেমন ছিলেন?
বৃদ্ধা মহিলা উত্তরে বললেন, ভালো আছি, হে আল্লাহর রসুল আমার মা-বাবা আপনার উপর কুরবান হোক।
অতঃপর বৃদ্ধা মহিলা বিদায় নিলে আমি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললাম, “হে আল্লাহর রসুল, আপনি এত গুরুত্বের সাথে এ বৃদ্ধার খোঁজ-খবর নিলেন!” (এর কারণ কী?)
তিনি বললেন, খদিজা রা.-এর সময় (খাদিজা রা. বেঁচে থাকা অবস্থায়) এ মহিলা আমাদের নিকট আসতেন। আর “অতীত সম্পর্ক ও পুরনো ভালবাসার যত্ন নেওয়া ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।” [মুসতাদরাকে হাকেম, হা/৪০, সিলসিলা সহীহা-১/৪২৪-শাইখ আলবানি]
উল্লেখ্য যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীর সাথে তো সুন্দর আচরণ করতেনই, স্ত্রীর পরিবার ও স্বজনদের প্রতিও সুন্দর ও উত্তম আচরণ করতেন। এমনকি তার স্ত্রীর বয়োবৃদ্ধ সঙ্গিনীদের প্রতিও সদয় ও যত্নবান ছিলেন৷ তাদের খোঁজখবর নিতেন৷ প্রয়োজনে সাহায্য করতেন৷ উপরোক্ত হাদিসটি তার একটি উদাহরণ।
◆ ২. অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের ভ্রান্ত কথাবার্তা এবং দীন সম্পর্কে ভুল বুঝ ও ভুল ব্যাখ্যা থেকে হেফাজত করুন। আমিন। আল্লাহু আলম।
শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল حفظه الله
“কেমন আছেন” বলা নাকি আশআরি আকিদা (!), আবার কেউ বলে, এতে নাকি মানুষ আল্লাহর সমকক্ষ হয়ে যায়! কারণ মানুষ নিজে নিজে ভালো থাকে না ইত্যাদি।
উত্তর: ইসলাম সম্পর্কে সঠিক গবেষণা না থাকা কিংবা ইসলাম সম্পর্কে ভুল বুঝের কারণে কিংবা বিজ্ঞ আলেমদের সংস্পর্শ থেকে ইলম অর্জন না করার কারণে বর্তমানে অনেক মানুষ, এমনকি আমাদের দেশীয় কোনও কোনও আলেম/বক্তাও এ সব নতুন নতুন দর্শনের আবির্ভাব ঘটিয়ে যুগযুগ ধরে চলে আসা বৈধ বিষয়ে মানুষের মাঝে অযথা বিভ্রান্তি তৈরি করছে- যা কোনও কোনভাবেই কাম্য নয়।
যাহোক, আমরা দেখি, মানুষকে “কেমন আছেন/কেমন আছো” বলে প্রশ্ন করা এবং উত্তরে “ভালো আছি” বলার ব্যাপারে শরিয়তের কোনও আপত্তি আছে কি না।
মূলত: "কেমন আছেন/কেমন আছো?" "ভালো আছি" এই সকল বাক্য ব্যবহারে শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনও সমস্যা নেই। কেননা হাদিসে এই বাক্যগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিকে প্রশ্ন করেছেন, "কেমন আছেন? কী অবস্থা আপনাদের?” আর সাহাবি উত্তর দিয়েছেন, "ভালো আছি!"
সাহাবিদের মাঝেও এ জাতীয় বাক্য ব্যবহারের প্রচলন ছিল। (তবে "ভালো আছি" বলার পর "আলহামদুলিল্লাহ' বলা বা আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত)
নিম্নে এ বিষয়ে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল:
◆ ১. আয়েশা রা. বলেন,
جاءت عجُوزٌ إلى النبيِّ صلى الله عليه وسلم وهو عندي، فقال: لها رسول الله صلى الله عليه وسلم: ((مَن أنتِ؟))، قالت: أنا جثَّامةُ المُزنيَّة، فقال: ((بل أنت حسَّانةُ المُزنيَّةُ، كيف أنتُم؟ كيف حالُكم؟ كيف كنتُم بعدنا؟))، قالت: بخيرٍ بأبي أنت وأُمِّي يا رسول الله، فلمَّا خرجَتْ قلتُ: يا رسول الله، تُقبِلُ على هذه العجوز هذا الإقبال؟ فقال: ((إنَّها كانت تَأتينا زمن خديجة، وإنَّ حُسن العهد من الإيمان
“একবার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক বৃদ্ধা আসলেন। তিনি তখন আমার নিকট ছিলেন। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃদ্ধা মহিলাটিকে বললেন, কে আপনি?
তিনি উত্তরে বললেন, আমি জাসসামা আল মুযানিয়া (মুযানী গোত্রের নির্বোধ বা কুৎসিত মহিলা)।
তিনি বললেন, “না, বরং আপনি হলেন, হাসসানা আল মুযানিয়া (মুযানি গোত্রের সুদর্শন নারী)। তো আপনারা কেমন আছেন? আপনাদের কী অবস্থা? আমাদের পরে আপনারা কেমন ছিলেন?
বৃদ্ধা মহিলা উত্তরে বললেন, ভালো আছি, হে আল্লাহর রসুল আমার মা-বাবা আপনার উপর কুরবান হোক।
অতঃপর বৃদ্ধা মহিলা বিদায় নিলে আমি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললাম, “হে আল্লাহর রসুল, আপনি এত গুরুত্বের সাথে এ বৃদ্ধার খোঁজ-খবর নিলেন!” (এর কারণ কী?)
তিনি বললেন, খদিজা রা.-এর সময় (খাদিজা রা. বেঁচে থাকা অবস্থায়) এ মহিলা আমাদের নিকট আসতেন। আর “অতীত সম্পর্ক ও পুরনো ভালবাসার যত্ন নেওয়া ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।” [মুসতাদরাকে হাকেম, হা/৪০, সিলসিলা সহীহা-১/৪২৪-শাইখ আলবানি]
উল্লেখ্য যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীর সাথে তো সুন্দর আচরণ করতেনই, স্ত্রীর পরিবার ও স্বজনদের প্রতিও সুন্দর ও উত্তম আচরণ করতেন। এমনকি তার স্ত্রীর বয়োবৃদ্ধ সঙ্গিনীদের প্রতিও সদয় ও যত্নবান ছিলেন৷ তাদের খোঁজখবর নিতেন৷ প্রয়োজনে সাহায্য করতেন৷ উপরোক্ত হাদিসটি তার একটি উদাহরণ।
◆ ২. অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عن عبد الله بن عمرو قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- لرجل: "كيف أصبحت يا فلان؟". قال: أحمد الله إليك، يا رسول الله. فقال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: "ذلك الذي أردت منك"
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলেন, হে অমুক, তুমি কীভাবে সকাল করলে? (অর্থাৎ তোমরা রাত কেমন কেটেছে?)
তিনি বললেন, আলহামদু লিল্লাহি ইলাইকা (আমি আপনার নিকট (বা সাথে) আল্লাহর প্রশংসা করছি) হে আল্লাহর রসুল!
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আমি তোমার এটাই প্রত্যাশা করেছি।” [হায়সামি বলেন, হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ত্ববারানি। এর সনদ হাসান। শাইখ আলাবানি বলেন, হাদিসটি সহিহ। সহিহ-সিলসিলা সহীহা ৬/১০৯৭, হা/২৯৫২]
এখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিকে বলেন নি যে, “আল্লাহ তোমার রাত কেমন কাটিয়েছেন?”
◆ ৩. অন্য একটি হাদিসে এসেছে,আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলেন, হে অমুক, তুমি কীভাবে সকাল করলে? (অর্থাৎ তোমরা রাত কেমন কেটেছে?)
তিনি বললেন, আলহামদু লিল্লাহি ইলাইকা (আমি আপনার নিকট (বা সাথে) আল্লাহর প্রশংসা করছি) হে আল্লাহর রসুল!
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আমি তোমার এটাই প্রত্যাশা করেছি।” [হায়সামি বলেন, হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ত্ববারানি। এর সনদ হাসান। শাইখ আলাবানি বলেন, হাদিসটি সহিহ। সহিহ-সিলসিলা সহীহা ৬/১০৯৭, হা/২৯৫২]
এখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিকে বলেন নি যে, “আল্লাহ তোমার রাত কেমন কাটিয়েছেন?”
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ: أَنَّهُ سَمِعَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَسَلَّمَ عَلَيْهِ رَجُلٌ فَرَدَّ السَّلَامَ، ثُمَّ سَأَلَ عُمَرُ الرَّجُلَ: كَيْفَ أَنْتَ؟ فَقَالَ: أَحْمَدُ اللَّهَ إِلَيْكَ، فَقَالَ عُمَرُ: “هَذَا الَّذِي أَرَدْتُ مِنْكَ”.
আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি শুনেছেন যে, এক ব্যক্তি উমর ইবনুল খাত্তাব রা. কে সালাম দিলে তিনি সালামের উত্তর দেওয়ার পর লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কেমন আছো?”
তিনি বললেন, “আলহামদু লিল্লাহি ইলাইকা।” (আমি আপনার নিকট (বা সাথে) আল্লাহর প্রশংসা করছি)।
উমর রা. বললেন, আমি তোমার এমনটাই প্রত্যাশা করেছি।” [শাইখ আলাবানি বলেন, হাদিসটি সহিহ-সিলসিলা সহীহা ৬/১০৯৯, ও সহীহুল আদাবুল মুফরাদ ১/৪৩৭, হা/৮৬৬]
তাছাড়া যুগে যুগে মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুসলিম মনিষী, আরবি কবি, সাহিত্যিক ও সাধারণ মুসলিমগণ এই বাক্যগুলো ব্যবহার করেছেন। এর ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু পূর্ববর্তী কোনও বিজ্ঞ আলেম এগুলোকে হারাম, নাজায়েজ, বিদআত, আশআরি আকিদা ইত্যাদি বলেছেন প্রমাণ পাওয়া যায় না।
সুতরাং মানুষকে দীন সম্পর্কে নতুন কিছু শেখানোর নামে অথবা সব কিছুর মধ্যে শিরক-বিদআত খোঁজার নামে সম্পূর্ণ বৈধ একটি বিষয়ে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছাড়ানো মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি শুনেছেন যে, এক ব্যক্তি উমর ইবনুল খাত্তাব রা. কে সালাম দিলে তিনি সালামের উত্তর দেওয়ার পর লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কেমন আছো?”
তিনি বললেন, “আলহামদু লিল্লাহি ইলাইকা।” (আমি আপনার নিকট (বা সাথে) আল্লাহর প্রশংসা করছি)।
উমর রা. বললেন, আমি তোমার এমনটাই প্রত্যাশা করেছি।” [শাইখ আলাবানি বলেন, হাদিসটি সহিহ-সিলসিলা সহীহা ৬/১০৯৯, ও সহীহুল আদাবুল মুফরাদ ১/৪৩৭, হা/৮৬৬]
তাছাড়া যুগে যুগে মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুসলিম মনিষী, আরবি কবি, সাহিত্যিক ও সাধারণ মুসলিমগণ এই বাক্যগুলো ব্যবহার করেছেন। এর ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু পূর্ববর্তী কোনও বিজ্ঞ আলেম এগুলোকে হারাম, নাজায়েজ, বিদআত, আশআরি আকিদা ইত্যাদি বলেছেন প্রমাণ পাওয়া যায় না।
আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের ভ্রান্ত কথাবার্তা এবং দীন সম্পর্কে ভুল বুঝ ও ভুল ব্যাখ্যা থেকে হেফাজত করুন। আমিন। আল্লাহু আলম।
শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল حفظه الله