Member
Member
Member
কিছু কিছু কথা ভুল আছে।হানাফি বনাম সালাফির মৌলিক পার্থক্য কি।
১. নির্দিষ্ট ইমামের অনুসরণঃ
আহলে হাদিসরা নির্দিষ্ট কোনও ইমামের অনুসরণ করেন না। আহলে হাদিস মতের কোনও প্রতিষ্ঠাতা নেই এবং প্রতিষ্ঠাকালও নেই। তারা একমাত্র মুহাম্মদ (সাঃ) কেই চূড়ান্ত অনুসরণযোগ্য মনে করেন এবং দ্বীনের ব্যাখ্যাদাতা হিসাবে গণ্য করেন। আর দ্বীন বুঝার ক্ষেত্রে সরাসরি সাহাবীদের বুঝটাকে তারা গ্রহন করেন।
হানাফি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাকাল ৪০০ হিজরি বা ১০৫০ খ্রিষ্টাব্দের পর। হানাফিরাও একমাত্র মুহম্মদ (সাঃ) কেই চূড়ান্ত অনুসরনযোগ্য মনে করেন এবং সাহাবীদের বুঝটাকেই গ্রহণ করেন। তবে সাহাবীদের বুঝটাকে ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) যেভাবে বুঝেছিলেন হানাফি মাযহাবের অনুসারীরা সেভাবে বুঝতে চান। তাই রাসুল (সাঃ) থেকে সরাসরি কোনও হাদিস তারা গ্রহন করেন না। এই হাদিস যদি ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) গ্রহণ করে থাকেন তবেই তারা সেই হাদিস গ্রহণ করেন। অন্যথায় নয়।
উদাহরণঃ সালাতে রফউল ইয়াদায়েন করার ৪০০ এর অধিক সহিহ হাদিস থাকলেও শুধুমাত্র ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) সমর্থন না করায় হানাফি মাযহাবের অনুসারিরা এই হাদিসের উপর আমল করেন না। কিন্তু আহলে হাদিসরা আমল করেন।
২. হাদিস গ্রহণের সীমারেখাঃ
হাদিসের মান চার ধরনের হয়। যথা (১) সহিহ (২) হাসান বা সুন্দর (৩) যঈফ বা দূর্বল (৪) জাল। সালাফি বা আহলে হাদিসরা শুধুমাত্র সহিহ এবং হাসান হাদিসের উপর আমল করেন। কিন্তু হানাফি মুসলিমগণ সহিহ, হাসান এবং যঈফ হাদিসের উপরও আমল করে থাকেন এবং এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে উক্ত হাদিসের উপর ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) এর সমর্থন থাকতে হবে। তবেই সেটা আমলযোগ্য। হোক সেটা সহিহ, হাসান কিংবা যঈফ।
উদারহণ: আহলে হাদিসগণ সালাতে বুকের উপর হাত বাঁধেন। তাদের দলীল আবূ দাউদ-৭৫৯। হাদিসটি সহিহ। হানাফিগণ নাভীর নীচে হাত বাঁধেন। তাদের দলীল আবূ দাউদ-৭৫৬। এই হাদিসটি যদিও সর্বসম্মতক্রমে যঈফ।
৩. মাসলা-মাসায়েলের উৎসঃ
মাসলা মাসায়েলের উৎস হিসাবে আহলে হাদিসদের কাছে দলীল হচ্ছে শুধুমাত্র কুরআন এবং সহিহ ও হাসান মানের হাদিস। হানাফি মাযহাব মতে কুরআনকে সরাসরি অনুসরণ করা হলেও হাদিস মানার ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মতকেই তারা চূড়ান্ত হিসাবে গন্য করেন। অর্থাৎ ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) এর জীবদ্দশায় যে হাদিসগুলো তাঁর কাছে পৌঁছেছিলো এবং তার ভিত্তিতে তিনি যে মাসলা-মাসায়েল দিয়ে গিয়েছেন সেগুলোকেই হানাফি মত অনুযায়ী চুড়ান্ত আমলযোগ্য হাদিস হিসেবে মানা হয়ে থাকে। এছাড়া আর কোন সহীহ হাদিস পাওয়া গেলেও সেটার উপর তারা আমল করে না।
উদাহরণঃ মাগরিবের ফরয সালাতের পূর্বে ২ রাকাত সুন্নত সালাত আহলে হাদিসরা পড়ে থাকেন। কিন্তু হানাফিরা এই সালাতকে আমলযোগ্য মনে করেন না, কারণ এ ব্যপারে ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) এর সমর্থন নেই। অথচ এটি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। [বুখারী-১১৮৩]
৪. ফিকহের কিতাব অনুসরণঃ
হানাফি মাযহাবের ফিকহের নির্দিষ্ট কিছু বই আছে যেমন-(১) আল-হেদায়া (২) কুদুরী (৩) শারহে বেকায়া (৪) ফতোয়ায়ে আলমগীরি (৫) ফতোয়ায়ে শামী ইত্যাদি। এই বইগুলো ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) এবং তার ছাত্রদের দেয়া বিভিন্ন ফতোয়ার কালেকশন। এই বইগুলো রচিত হয়েছিলো ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) এর মৃত্যুর ২৫০ থেকে ৪০০ বছর পর। হানাফি মুসলিমদের মতে ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) এবং তার শিষ্যগণ এই কিতাবগুলির ফতোয়াগুলো কুরআন এবং হাদিস থেকেই সংগ্রহ করেছেন। তাই হাদিসের উপর পরবর্তী যুগের আলেমদের গভীর অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা কম। এই ফতোয়াগুলো অনুসরণ করলেই যথেষ্ট।
আহলে হাদিসদের নিকট ফতোয়া সমৃদ্ধ নির্দিষ্ট কোনও ফিকহের বই নেই। তারা দৈনন্দিন যে কোনও সমস্যায় কুরআন এবং মোলিক হাদিস গ্রন্থগুলো (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ইত্যাদি) থেকে মাসলা মাসায়েল খুঁজে থাকেন।
উদাহরণঃ ফিকহের কিতাব অনুযায়ী অযূর সময় সূতি মোজার উপর মাসেহ করা যাবে না। কিন্তু সহিহ হাদিস (তিরমিযী-৯৯) অনুযায়ী চামড়া, সূতিসহ যে কোনও মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয। আহলে হাদিসরা দ্বিতীয় মতের অনুসারি।
৫. নতুন মাসালায় করনীয়ঃ
যদি এমন কোনও নতুন সমস্যা পাওয়া যায় যার পরিষ্কার নির্দেশনা পবিত্র কুরআন ও সহিহ হাদিসে পাওয়া যাচ্ছে না, এক্ষেত্রে আহলে হাদিসরা সাহাবীদের জীবনী থেকে খুঁজে দেখেন। সেখানে না পাওয়া গেলে তাবেঈদের মতামত নেন। সেখানেও না পাওয়া গেলে বিজ্ঞ ইমামদের মতামত খুঁজেন যেমন-ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ), ইমাম মালিক (রহঃ), ইমাম শাফেঈ (রহঃ), ইমাম হাম্বল (রহঃ) প্রমূখ। সেখানেও না পাওয়া গেলে তারা কিয়াস করেন অর্থাৎ বর্তমান আলেমরা মতামত দেন।
নতুন সমস্যার ক্ষেত্রে হানাফিরা ফিকহের বই সমূহের মধ্যে এর কাছাকাছি কোনও একটা ফতোয়াকে খুঁজে নিয়ে এর উপর বর্তমান আলেমগণ সরাসরি কিয়াস করেন। এই বিষয়ে কোনও সহিহ হাদিস পাওয়া গেলেও তা গ্রহণ করা হয় না।
৬. পীর এবং সুফিবাদে বিশ্বাসঃ
আহলে হাদিসগণ পীরতন্ত্র, সুফিবাদ ইত্যাদির ঘোর বিরোধী। তাই বাংলাদেশের কোনও পীর আহলে হাদিসদের পছন্দ করেন না। কিন্তু হানাফি মতে পীরতন্ত্র, সুফিবাদ এগুলো যায়েজ।
উদাহরণঃ হানাফি মাযহাবের বর্তমান প্রধান প্রতিষ্ঠান ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা চিশতীয়া তরিকার অনুসরণ করে। তাবলীগ জামাত, চরমোনাই পীরও এই তরিকার অনুসারী।
৭. উৎপত্তিঃ
হানাফি মাযহাবের উৎপত্তি ইরাকের কূফা শহরে। তবে বর্তমানে এর প্রধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা এবং মিশরের আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়। সালাফি মতের উৎপত্তি মক্কা এবং মদিনায়। বর্তমানে এর প্রধান গবেষনা প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবের মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়।
৮. বসবাস এলাকাঃ
হানাফি মাযহাবের মূল অনুসারীদের বসবাস ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিশর, সিরিয়া, তুরস্ক, কাজাখিস্তান, উজবেকিস্তান। এছাড়াও পৃথিবীর প্রায় সব মুসলিম দেশেই কিছু কিছু অনুসারী রয়েছেন। সালাফি বা আহলে হাদিসদের বসবাস সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, আমিরাত, সিরিয়া, মিসর, জর্ডান, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, উগান্ডা। এছাড়াও ভারত, পাকিস্তান বাংলাদেশেও উলেখযোগ্য সংখ্যাক আহলে হাদিস অনুসারি রয়েছেন। বাংলাদেশে বর্তমানে আনুমানিক ২ থেকে ২.৫ কোটি আহলে হাদিস মুসলিম রয়েছেন।
৯. কোনটা অনুসরণ করবো-হানাফি নাকি আহলে হাদিস?
হানাফি মাযহাব অনুসরণ করা দোষের কিছু নয়। এতে আপনি একটা প্যাকেজের মধ্যে থাকবেন। দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব ফতোয়া ফিকহের কিতাব সমূহে লেখা আছে। এক্ষেত্রে কুরআন হাদিসের ব্যাপক অধ্যয়ন খুব একটা প্রয়োজন নেই। অসুবিধা হচ্ছে ফিকহের কিতাবের অনেক মাসালা সহিহ হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক। আরেকটি বড় অসুবিধা হচ্ছে, মাযহাবের কিতাবের সমর্থন না থাকায় ফজিলতপূর্ণ অনেক সহিহ হাদিসের উপর আমল করার সুযোগ পাবেন না। মাযহাবের আলেমরা এ ব্যাপারে খুবই কঠোর।
আহলে হাদিসগণ এ ব্যাপারে সবাই স্বাধীন। তারা সহিহ এবং হাসান মানের যে কোনও হাদিস স্বাধীনভাবে আমল করতে পারেন। প্যাকেজগত কোনও বিধি-নিষেধও নেই। রাসুল (সাঃ) কে অনুসরণ করার জন্য মাঝখানে কোনও ইমামও প্রয়োজন নেই। আহলে হাদিস মতে এটাই বিশ্বাস করা হয়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন। আমীন।
|
Asking আহলে হাদিস বনাম হানাফী
|
|
Asking সালাফি আলেমদের তালিকা
|
|
Asking সালাফিদের সম্পর্কে
|
|
Asking সালাফিবাদ ও ওয়াহাবিজম কি?
|
|
Asking সালাফি ফোরাম সম্পর্কে
|
We use cookies and similar technologies for the following purposes:
Do you accept cookies and these technologies?
We use cookies and similar technologies for the following purposes:
Do you accept cookies and these technologies?