• আসসালামু আলাইকুম, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ফোরামে মেজর কিছু চেঞ্জ আসবে যার ফলে ফোরামে ১-৩ দিন মেইনটেনেন্স মুডে থাকবে। উক্ত সময়ে আপনাদের সকলকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানাচ্ছি।
‼️ পোস্টটি সুন্দরভাবে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।‼️

প্রবন্ধ সুন্নাহ অনুসরণে ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এর অবস্থান

উসূল শাস্ত্রের প্রবর্তক ইমাম মুহাম্মাদ বিন ইদ্রীস আশৃশাফেয়ী (১৫০-২০৪ হিঃ) রহ.। সুন্নাহকে সচ্ছ ও নিস্কলুষ রাখার নীতিমালা (মুতালাহুল হাদীস) এর আবিস্কারক এবং অসূলুত তাফসীর ও উসূলুল ফিকহ এর রূপকার, ভাষাবীদ ইমাম শাফেয়ী (রহ.) একই ভাবে অন্ধ অনুস্বরণের দাফন করে ইসলামী জীবনে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর নির্ভরশীল আদর্শ গড়ার লক্ষ্যে যে সব মূল্যবান উপদেশ প্রদান করেছেন নমুনা স্বরূপ নিম্নে কিছু প্রদত্ত হল:

১। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন :

إِذَا صَحَ الْحَدِيثُ فَهُوَ مَذْهَبَي​

“কোন বিষয়ে যখন সহীহ হাদীস পাওয়া যাবে জেনে রেখ সেটাই (সহীহ হাদীসই) আমার মাযহাব বা মত ও পথ ।”১৬৮

২। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন :

إِذا وَجَدْتُمْ فِي كِتَابِي خِلَافَ سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ ، فَقُولُوا بِسُنَّةِ رَسُوْلِ الله ودَعُوا مَا قُلْتُ، وفي رواية: فَاتَّبِعُوهَا، وَلاَ تَلْتَفتوا إلى قَوْلِ أَحد​

“যখন তোমরা আমার কোন কিতাবে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিপরীত কিছু পাবে তখন রাসূলুল্লাহর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সুন্নাহ অনুযায়ী ফাত্ওয়া দাও এবং আমার কথা প্রত্যাখ্যান কর। অন্য বর্ণনায় রয়েছে : তোমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ অনুসরণ কর, অন্য কারো কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপ কর না।" নিশ্চয়ই যার আল্লাহ তা'আলা ও আখিরাতের প্রতি পূর্ণ ঈমান রয়েছে এবং রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি রয়েছে পূর্ণ শ্রদ্ধা ও অনুসরণ, তিনিই কেবল এরূপ ঘোষণা দিতে পারেন।

এরূপ ঘোষণার পরও যদি কেউ সুন্নাহ বর্জন করে ইমামদের অন্ধ অনুসরণ করে থাকে নিশ্চয়ই এটা এক অহমিকা এবং ইমামদের প্রতি যুগ্মপূর্ণ আচরণ ছাড়া কিছুই নয়। আল্লাহ তা'আলা আমাদের হিদায়াত দান করুন, আমীন!

৩। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) ইমাম আহমাদকে (রহ.) বলেন :

أَنتُمْ أَعْلَمُ بِالْحَدِيثِ وَالرِّجَالِ مِنِي، فَإِذَا كَانَ الْحَدِيثُ الصَّحِيحُ فَأَعْلِمُونِي بِهِ أَيُّ شَيْءٍ يَكُونُ كُوْفِيًّا أَوْ بَصْرِيًّا أَوْ شَامِيًّا، حَتَّ أَذْهَبَ إِلَيْهِ إِذَا كَانَ صَحِيحًا​

“আপনারা আমার চেয়ে হাদীস এবং সনদ সম্পর্কে বেশী অবগত রয়েছেন, অতএব কোন সহীহ হাদীসের সন্ধান পেলে আমাকে জানাবেন কুফী, বাসরী ও শামী যেই হোক না কেন সহীহ হাদীসের জন্য আমি তার কাছে যেতে প্রস্তুত। কুফী, বাসরী ও শামী- যে স্থান এবং যে গোষ্টিরেই হোকনা কেন? তা লক্ষনীয় নয়, লক্ষনীয় হলো হাদীস সহীহ কি না? সহীহ হলে অপর দল, গোত্র ও দেশ থেকে হলেও তা গ্রহণ করতে হবে। আর সহীহ না হলে নিজের মত ও দলের হলেও পরিত্যাজ্য কখনও গ্রহনীয় নয়। এ নীতিই হলো ইমামুস সুন্নাহ ইমাম শাফেয়ী (রহ.) এর সুন্নাহ অনুসরণে সঠিক ও দৃঢ় অবস্থান। এরূপই হওয়া উচিত সকল আল্লাহভীরু মুসলিমের অবস্থান । আল্লাহ তাওফীক দান করুন। আমীন!

৪। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন :

كُلِّ مَسْأَلَة صَحَ فِيهَا الْخَبْرُ عَنْ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم عِندَ أَهْل النَّقْ بخلاف ما قُلْتُ، فَأَنَا رَاجِعٌ عَنْهَا فِي حَيَاتِي وَبَعْد مَوْتِي​

আমার জীবদ্যশায় অথবা মৃত্যুর পরে যে সমস্ত মাসআলায় আমার ফাতওয়ার বিপরীত মুহাদ্দিসগণের নিকট সহীহ হাদীস প্রমানিত হয়েছে ঐসব মাসআলায় আমার মত প্রত্যাহার করে (হাদীস গ্রহণ করে) নিলাম ।”

মহামতি ইমামদের এরূপ স্পষ্ট ঘোষণার পরও নির্বোধ ব্যক্তি ছাড়া কেও তাঁদের হাদীস বিরোধী ফাতওয়ার অন্ধঅনুসরণ করতে পারে না।

৫। ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন :

كُلُّ مَا قُلْتُ فَكَانَ عَنِ النَّبِي خِلَافَ قَوْلِيَ مِمَّا يَصِحُ، فَحَدِيْتُ النَّبِي صلى الله عليه وسلم أَوْلى فَلَا تُقَلِّدُوْنِي
“আমি যে সব ফাতওয়া দিয়েছি এর বিপরীত নাবী (সঃ) হতে সহীহ হাদীস প্রমাণিত হলে নাবী (সঃ) এর হাদীসই গ্রহণযোগ্য ও প্রাধান্য পাবে, অতএব আমার কোন অন্ধানুকরণ কর না।”
ইহা ছাড়াও ইমাম শাফেয়ীর (রহ.) আরো অনেক মূল্যবান উপদেশ রয়েছে, বরং ইমাম শাফেয়ীর (রহ.) এরূপ বক্তব্যই সবচেয়ে বেশী ও স্পষ্ট। ইহা প্রমাণ করে যে, তাঁর কোন ফাতওয়া সহীহ হাদীস বিরোধী হলে তা অবশ্যই তাঁর অজানাবস্থায়। এর পরেও সে ফাতওয়ার কেউ যেন অন্ধানুসরণ কারী না হয় এ জন্য সে সমস্ত ফাতওয়া হতে অগ্রীম তাঁর মত প্রত্যাহার করেছেন এবংঅন্ধানুসরনের তিব্র প্রতিবাদ করেছেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে পূর্ণ জাযায়ে খাইর দান করুন এবং আমাদের সঠিক হিদায়াত দান করুন। আমীন!


কিতাব: সুন্নতে রাসুল ও চার ইমামের অবস্থান
আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী​
 

Share this page